#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_৩১
#নিশাত_জাহান_নিশি
মধ্যরাত তখন। ঘড়িতে ভোর রাত তিনটার কাছাকাছি প্রায়। রাফায়াতকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রে’ফ’তা’র করে নিলো পুলিশ! জোর করে তাকে টেনে হেছঁড়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
হাজার জো’র জব’রদ’স্তি করে,আইনের সূত্র ধরে লি’গ্যা’লি কথাবার্তা বলেও রাফায়াতের পরিবার রাফায়াতকে আ’ট’কে রাখতে পারেনি! সন্দেহজনক ভাবে তারা রাফায়াতকে গ্রে’ফ’তার করে নিয়ে যায়। কোনো শক্তপোক্ত প্র’মা’ণ ব্যতিরেকেই! প্রমাণের কথা বললেই তারা প্রসঙ্গ পাল্টে জ’ঘ’ন্য ব্যবহার করে রাফায়াতের পরিবারের সাথে। এই নিয়ে কথা বললেই রাফায়াতের বড়ো ভাই এবং বাবাকে গ্রেফতার করার হুমকিও দেয় পুলিশ! তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই রাফায়াত কথা আর বাড়ায় নি। কোনো প্রকার ঘাড়ত্যাড়ামি ও করেনি। পুলিশের কথা মতো আত্মসমর্পণ করে তাদের কাছে। শুধু যাওয়ার সময় বলে যায় মির্জা ফখরুল হককে ফোন করে খবরটা একবার জানিয়ে দিতে। যা করার মির্জা ফখরুল হক নিজেই করবেন।
রাফায়াতের কথা মতো রাফায়াতের বাবা এই ভোর রাতেই মির্জা ফখরুল হককে ফোন করেন। দুইবার কল বেজে যাওয়ার পর তিনবারের বেলায় তিনি কলটি তুলেন। ঠাণ্ডা মাথায় রাফায়াতের বাবা মির্জা ফখরুল হককে সবকিছু বুঝিয়ে বলেন। শান্ত মেজাজে তিনি রাফায়াতের বাবাকে শান্তনা দেন। আশ্বস্ত করে বলেন সকাল হলেই ব্যাপারটা তিনি ভেবে দেখবেন। যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়া তো কেউ কাউকে এভাবে গ্রে’ফ’তা’র করতে পারেনা। যে কাজ রাফায়াত করেনি সে কাজের শাস্তি তিনি রাফায়াতকে পেতে দিবেন না।
রাফায়াতকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার খবরটি চঞ্চলের কানে পৌঁছাতেই চঞ্চল মরিয়া হয়ে উঠল। ঘুম নিদ্রা ছেড়ে সে ভোর রাতেই রাফায়াতের বড়ো ভাইকে নিয়ে পুলিশ স্টেশন চলে যায়। জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে রাফায়াতকে। তার সাথে কথা বলার বা দেখা করার সুযোগটিও অবধি দেওয়া হচ্ছেনা কাউকে। দুদিন পর রাফায়াতকে কোটে চালান করা হবে। রায় অনুযায়ী কোট থেকে থানায় হস্তান্তর করা হবে। রাফায়াতকে গ্রেফতার করা দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারের সাথেও নানান কথা কাটাকাটি হয় চঞ্চল এবং রাফায়াতের বড়ো ভাই রায়হানের। পুলিশদের সেই একই কথা, “কোটে দেখা হবে।” কোট যা রায় দিবে তাই হবে। পুলিশের এই কথার বিপরীতে তর্ক বেড়ে গিয়ে পরিস্থিতি খারাপের দিকে এগুতেই তারা রায়হান এবং চঞ্চলকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে পুলিশ স্টেশন থেকে বের করে দেয়। তবুও তারা তাদের লক্ষ্য থেকে পিছপা হয়নি। পুলিশ স্টেশনের বাইরে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। সকাল হওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
সবার কানে খবরটা পৌঁছালেও অয়ন্তী এখনো এই ব্যাপারে কিছু জানতে পারেনি। রাতভর তারা ফ’রেন’সিক ল্যা’বের আশেপাশে ছিল। অনিকের লা’শে’র কাছে। অনিকের বাবা-মা এখনো ডুবাই থেকে আসতে পারেনি। দুপুরের পরে হয়ত তারা দেশে এসে পৌঁছাবে। অনিকের এই খু;নে বিন্দুমাত্র আফসোস নেই অয়ন্তীর মা এবং বাবার! র’ক্তের সম্পর্কের হওয়া সত্ত্বেও অনিকের মৃ”ত্যু”তে কোনো শোক নেই অয়ন্তীর বাবার! থাকবেই বা কী করে? অনিক উনার এবং উনার পরিবারের সাথে যা যা করেছে তারপরেও অনিকের প্রতি মায়াবোধ আসাটা সত্যিই বেমানান। এতগুলো বছর ধরে অনিক তাদের ঠকিয়ে এসেছে। সম্পত্তির লো’ভে পড়ে তাদের বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে এসেছে। সর্বোপরি তাদের উপর শারীরিক এবং মানসিক অ’ত্যা’চার করেছে। এর ফলই হয়ত আল্লাহ্ তাকে কোনো না কোনোভাবে দিয়েছে! এতে অবশ্য আফসোস করার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেনা তারা। উল্টে ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে আছে তারা অনিকের মা-বাবার উপর। কীভাবে এই কু-সন্তান পেটে ধরেছে তারা? যে ছেলে তার চাচা-চাচী, চাচাতো বোনের উপর পা’শ’বিক নি’র্যা’তন করে? স’ন্ত্রা’সের হাতে এমন নির্মমভাবে খু’ন হয়?
অনিকের এই মর্মান্তিক খু’নে অনিকের দলের নেতা এবং সহযোগীদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে প্রায়! তাদের মনের মধ্যে এখন যেমন প্রুচর ভয় কাজ করছে তেমনি রাফায়াত এবং তার দলের প্রতিও আক্রোশ কাজ করছে। রাফায়াতকে তারা আজীনের জন্য থানায় ঢুকাতে পারলেই যেন জানে বাঁচে। মিথ্যে কিছু এলিগেনচ এনে তারা রাফায়াতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। প্রশাসনকে ঘু’ষ খাইয়ে তারা রাফায়াতকে জে’লে ব’ন্দি করে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যে কিছু প্রমাণও জোগাড় করতে থাকে। পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। যেভাবেই হোক রাফায়াতকে এবার ধ্বংস করে ছাড়বেই তারা।
যদিও যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়া আ’সা’মী’কে জেলে মা’র’ধ’র করার কোনো নিয়ম নেই তবুও ঘু’ষ খাওয়া পুলিশ ভোররাত থেকে রাফায়াতকে বিভিন্নভাবে ট’র্চা’র করতে শুরু করে! একের পর এক চ/ড়, থা/প্প/ড়, ঘু/ষি, লা/ঠি চার্জ করা হয় রাফায়াতের উপর। মা’রতে মা’রতে তাকে এক পর্যায়ে র’ক্তা’ক্ত করে ফেলা হয়। দাঁতে দাঁত চেপে রাফায়াত সব সহ্য করছিল। বিপরীতে একটাও টু শব্দ করেনি। এত অ’ত্যা’চা’র সহ্য করেও মুখ ফুটে স্বীকার করেনি অনিককে রাফায়াতই খু;ন করেছে! তার মুখ থেকে শুধু একটি কথাই বের হয়েছে,,
“আমাকে যতই মা’রু’ন কা’টু’ন কোনো লাভ নেই এতে। যা আমি করিনি তা কখনো আমার মুখ দিয়ে বের করতে পারবেন না। আর একটা কথা, যার কাছ থেকে আপনারা মোটা অঙ্কের টাকা ঘু/ষ নিয়েছেন না? তাকে বলে দিবেন রাফায়াত যদি কোনোভাবে তার এই ষ’ড়’য’ন্ত্র থেকে বের হয়ে আসতে পারে তবে কিন্তু সেদিনই তার জীবনের শেষ দিন হবে!”
রাফায়াতকে বেধড়ক মা’র’ধ’র করতে করতে কনস্টেবলদের সাথে থাকা বড়ো পুলিশ অফিসারটি এবার ক্লান্ত হয়ে এলেন। হাতে থাকা লা/ঠি/টি তিনি হাত থেকে ছুঁড়ে ফেললেন। পা দুটি ভাজ করে মেঝেতে আ’হ’ত রাফায়াতের মুখোমুখি বসলেন। ব্যগ্র হেসে বিদ্রুপের স্বরে বললেন,,
“খুব হে’ডা’ম দেখাচ্ছিস না? খুব হে’ডা’ম? এখান থেকে যখন রি’মা’ন্ডে নিয়ে যাওয়া হবে, গরম পানি গাঁয়ে ছুঁ’ড়ে চা’ম’ড়া শুদ্ধু উঠিয়ে নেওয়া হবে তখন ঠিকই ফড়ফড় করে সত্যিটা স্বীকার করবি। তোর মত কত জা’দ’রেল ক্রি’মি’না’ল’কে যে আমি শায়েস্তা করেছি তার লিস্ট দেখালে তুই নিজেই বেহুশ হয়ে যাবি!”
পৈশাচিক হাসল রাফায়াত। নাক-মুখ থেকে গড়িয়ে পড়া র’ক্ত’গুলো দু’হাত দ্বারা মুছল সে। হাতের ফি’ন’কি বেয়েও র’ক্ত ঝড়ছিল তার! তবুও যেন শরীরের সমস্ত যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে সে জা’লি’ম অফিসারের দিকে সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। একরোখা গলায় বলল,,
“সময় সব বলে দিবে কার সাথে কী হবে না হবে। পাশার চাল যেকোনো মুহূর্তে ঘুরে যেতে পারে। তখন না আবার বরখাস্ত হওয়ার ভয়ে আমার পায়ে এসে হামাগুড়ি খান সেদিকটাও একটু খেয়াল রাখবেন।”
চটে গেলেন পুলিশ অফিসার। উগ্র মেজাজী হয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। রাফায়াতের তলপেট বরাবর জোরে এক লা’থ মারলেন। ঝাঁজালো গলায় বললেন,,
“তুই ম’র”বি শা’লা!”
সঙ্গে সঙ্গেই তলপেটে হাত রেখে রাফায়াত মাগ্গো মা বলে এক বুক ফাঁটা চিৎকার দিয়ে উঠল। তার জান শুদ্ধু বের হয়ে গেল এমনটিই মনে হলো! খালি পেটে থাকার দরুন তলপেটের আঘাতটি রাফায়াত সহ্য করতে পারলনা। গোঙাতে গোঙাতে সে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল! রাফায়াতের এই করুন অবস্থা দেখে পুলিশ অফিসারটি হু হা শব্দে হেসে উঠলেন! হেয় স্বরে বললেন,,
“একটা লা/থি খেয়েই এই অবস্থা তোর। যখন রি’মান্ডের মা/র খাবি তখন তোর কী অবস্থা হবে রে চাঁদু? বড়ো বড়ো কথা থাকবে তো তখন?”
সেলের দরজায় তালা ঝুলিয়ে পুলিশ অফিসার বেশ বদরাগী ভাব নিয়ে বাইরে থেকে সেলের দরজাটি তালা বদ্ধ থেকে করে দিলেন। ক্লান্তি দূর করার জন্য চেয়ার টেবিলে হাত-পা ছুঁড়ে বসলেন। গোঁফ উঁচিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলেন! পূণ্যের কাজ করে এসেছেন এমনটিই মনে হলো। তখনই চারিদিকে ফজরের আযান পড়ল। রাফায়াতের মা কাঁদতে কাঁদতে নামাজে দাঁড়ালেন। ফজরের নামায পড়ে তিনি মোনাজাতে বসে ছেলের জন্য ডুকড়ে কাঁদতে লাগলেন। এই প্রথম রাফায়াতের বিরুদ্ধে খু’নের অভিযোগ এলো। খু’নি সাবস্ত করে তাকে জে’লহাজুতে নিয়ে যাওয়া হলো। একজন চিহ্নিত খু’নিকে নিশ্চয়ই জেলের ভেতর স্বাচ্ছন্দ্যে রাখা হবেনা? বে’ধ’ড়ক মা’র’ধ’র করা হবে। এসব ভাবতেই যেন জান বের হয়ে যাচ্ছিল রাফায়াতের মায়ের। মায়ের মন তো? এমনিতেও আর বুঝতে বাকী নেই রাফায়াত জে’লহাজুতে ভালো নেই। নিশ্চয়ই তাকে পা’শ’বি’কভাবে অ’ত্যা’চা’র করা হচ্ছে। রাফায়াতের মায়ের এহেন গগনবিদারী কান্না দেখে রাফায়াতের ভাবি সুমাও এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। কোনো রকমে রাফায়াতের মা’কে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করল।
সকাল আটটা কী নয়টা বাজতেই অয়ন্তীর কানে রাফায়াতের গ্রে’ফ’তা’রে’র খবরটি গেল। চঞ্চলের থেকে মাত্রই খবরটি জানতে পারা তার। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল অয়ন্তীর। তার বাবা-মাকে অনিকের লা’শে’র কাছেই রেখে সে বিধ্বস্ত হয়ে ছুটে চলল পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে। রাত থেকে যে ভয়টা পাচ্ছিল সে ভয়টাই এখন সত্যি প্রমাণিত হলো। রাফায়াতকে সে বার বার বলেছিল বাসায় না ফিরতে। কয়েকদিনের জন্য হলেও কোথাও একটা গাঁ ঢাকা দিয়ে থাকতে। পরিস্থিতি শান্ত হলে আবারও ফিরে আসতে। রাফায়াত শুনেনি তার বারণ৷ পাপ নেই শরীরে ভয় নেই বলে অয়ন্তীকে বার বার শান্তনা দিয়েছে। সকাল থেকে তার মনটাও বড্ড কুহ্ গাইছিল। যেভাবে বিরোধী দলের নেতারা রাফায়াতের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আছে নিশ্চয়ই জেলহাজুতে নিয়ে গিয়ে রাফায়াতকে আস্ত রাখেনি তারা! ভাবতেই অন্তর্আত্তা কেঁপে উঠল অয়ন্তীর। হাত-পা থরথর করে কাঁপতে লাগল। রিকশার মধ্যেই তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মত উপক্রম হলো। যাও এতদিন পর সুখের মুখ দেখতে পেল সে তাও আবার সেই সুখ উপর ওয়ালা এতটা নি’ষ্ঠুর’ভাবে ছিনিয়ে নিতে যাচ্ছেন।
এদিকে রাফায়াতের মায়ের অবস্থা হয়ে গেল মুমূর্ষু! প্রেশার বেড়ে ঘাড়ের রগ ফুলে ফেঁপে একাকার অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে সুমা একা কী করবে তাই ভেবে সে জেলখানার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা রায়হানকে ফোন করে বাসায় ডেকে আনল। খবরটা পেয়েই রায়হান হন্ন হয়ে ছুটে এলো বাসায়। সুমার সাহায্যে তার মাকে নিয়ে হসপিটালে গেল। জানে পানি নেই কারোর। যেদিকে যাও সেদিকেই বিপদ। কোনো রকমেই বিপদ তাদের পিছু ছাড়ছেনা।
অন্যদিকে, রাফায়াতের বাবা ভোররাত থেকেই অসহায়ের মত মির্জা ফখরুল হকের বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করছেন! কখন মির্জা ফখরুল হকের দেখা পাবেন সেই আশায়। অবিশ্রান্ত ভাবে টানা চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বাড়ির সামনে আপ ডাউন করার পর তিনি মির্জা ফখরুল হকের দেখা পেলেন। সব দিক বিবেচনা করে বিষয়টা ফখরুল হক আপোষে শেষ করতে চাইলেন। বিরোধী দলীয় নেতা মিন্টু খানের সাথে তিনি জরুরী মিটিংয়ে বসলেন। সেখানে অবশ্য রাফায়াতের বাবাও উপস্থিত আছেন। দেখা যাক মুখোমুখি বসে উভয় পক্ষেরই ভালো হয় এমন একটি মিমাংসায় আসা যায় কি-না। যেহেতু অনিকের বাবা-মা এখনও দেশে এসে পৌঁছাতে পারেননি। অনিকের পরিবার থেকে কোনো কে’ই’সও এই পর্যন্ত ইস্যু করা হয়নি। সেক্ষেত্রে হয়ত বা বাইরের লোক হিসেবে রাফায়াতের বিরুদ্ধে করা মিন্টু খানের কে’ই’সটি হালকাভাবে দেখা গেলেও যেতে পারে! যেকোনো মুহূর্তে কে’ইস’টি উঠিয়ে নেওয়া কঠিন কিছু নয়।
পুলিশ স্টেশনের বাইরে বিক্ষুদ্ধ হয়ে থাকা অয়ন্তীর দেখা মিলল চঞ্চলের সাথে। সবেমাত্র চায়ে চুমুক দিয়েছিল চঞ্চল। সারারাত নির্ঘুম থাকার দরুন মাথাটা বড্ড ধরেছে তার। অয়ন্তীকে দেখে চা টা পুরোপুরি শেষ না করেই সে দৌঁড়ে এলো অয়ন্তীর দিকে। উত্তেজিত গলায় অয়ন্তীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,
“ভোররাতেই রাফায়াতকে বাড়ি থেকে গ্রে’ফ’তার করা হয়। আমি আর রায়হান ভাই রাফায়াতের পিছনে পিছনেই পুলিশ স্টেশান আসি। এক পর্যায়ে আমরা দুজন অফিসারের সাথে তর্কে জড়িয়ে যাই। আর তখনি তিনি আমাদের ধাক্কাতে ধাক্কাতে পুলিশ স্টেশান থেকে বের করে দেন৷ রায়হান ভাই এতক্ষণ আমার সাথেই ছিলেন। কিন্তু বাড়িতে আন্টির অবস্থা খুবই সূচনীয়। তাই আমি জোর করে রায়হান ভাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিই। আর আমি এখানেই থেকে যাই। আঙ্কেল গেছেন নেতার বাড়িতে নেতার সাথে দেখা করতে। দেখা যাক নেতাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আপোষে কিছু করা যায় কিনা।”
প্রচণ্ড জিদ্দি হয়ে চোখের জল মুছল অয়ন্তী। চঞ্চলকে উপেক্ষা করে সে পুলিশের স্টেশনের দিকে পা বাড়ালো। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা চঞ্চলকে ডেকে বলল,,
“ভেতরে চলুন।”
অয়ন্তীর পিছু পিছু চঞ্চলও ছুটল পুলিশ স্টেশনের ভেতরে। টেবিলে মাথা রেখে শুয়ে থাকা পুলিশ অফিসারের মুখোমুখি দাঁড়ালো অয়ন্তী। দ্রুত বেগে দৌঁড়ে আসার দরুন তার শ্বাস-প্রশ্বাস উর্ধ্বগতিতে পড়তে লাগল। কনস্টেবলরা তখন দৌঁড়ে এলো অয়ন্তীর দিকে। তার দিকে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন ছুঁড়তে লাগল। জে’লখানার ভেতর থেকে অয়ন্তীকে বের হয়ে যেতে বলল। তাদের তিন চারজনকে থামিয়ে অয়ন্তী বেশ তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় বলল,,
“আপনারা প্লিজ আমাকে জেরা করা বন্ধ করুন। মেইন অফিসারের সাথে আমার কিছু কথা আছে। কথা বলা শেষ হলে আমি নিজেই এখান থেকে চলে যাব।”
উভয় পক্ষের হাঁকডাকে পুলিশ অফিসারের ঘুম ভাঙল এবার! টেবিলে মাথা রেখেই তিনি চোখ মেলে অয়ন্তীর দিকে তাকালেন। ঝাপসা চোখে অয়ন্তীকে দেখামাত্রই তিনি টেবিল থেকে মাথা তুললেন। বিস্ফোরক দৃষ্টিতে অয়ন্তীর দিকে তাকালেন। খরতর গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,,
“কী ব্যাপার? এখানে কী আপনার?”
ক্ষুব্ধ গলায় অয়ন্তীর সহজ উত্তর,,
“রাফায়াতের সাথে দেখা করতে চাই আমি।”
“রাফায়াত কে?”
“ভোর রাতে যাকে বাড়ি থেকে তুলে এনেছেন সে।”
“কে হোন আপনি তার?”
“উডবি হই! তার সাথে আমি এক্ষণি এই মুহূর্তে দেখা করতে চাই।”
“এলাউড না! তাকে কোটে তোলা না অবধি কেউ তার সাথে দেখা করতে পারবে না।”
“কোথাকার নিয়ম এটা হ্যাঁ? কোন আইনের নিয়ম? তাছাড়া তার নামে কে’ই’স কে করেছে হ্যাঁ? আমরা তো তার নামে এখনও কোনো কে’ই’স করিনি।”
উত্তেজিত হয়ে উঠলেন পুলিশ অফিসার। চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালেন তিনি। তটস্থ গলায় অয়ন্তীকে শাসিয়ে বললেন,,
“আপনি তার নামে কে’ই’স করার কে হ্যাঁ? কীসব অদ্ভুত কথাবার্তা বলছেন আপনি? এক্ষণি এখান থেকে বের হয়ে যান বলছি। নয়ত আমি বাধ্য হব আপনাকেও জেলের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে।”
অয়ন্তীর ক্ষুব্ধতা পালাক্রমে বাড়তে লাগল। ঘাড়ের রগ টান টান করে সে পাল্টা অফিসারকে শাসিয়ে বলল,,
“দিন না দিন। জেলের ভেতর ঢুকিয়ে দিন। আমি তো এটাই চাই। আমার উডবির সাথে আমি জেলের ভেতরেই থাকতে চাই। যাকে খু’ন করার মিথ্যে অভিযোগে আপনি আমার উডবিকে গ্রে’ফ’তার করেছেন না? সেই খু’ন হয়ে যাওয়া ছেলেটিই হলো আমার কাজিন! আমার পরিবার থেকে এখনো কোনো কে’ই’স-ই ইস্যু করা হয়নি। তো কীসের ভিত্তিতে আপনি তাকে গ্রে’ফ’তা’র করেছেন হ্যাঁ?”
ভড়কে উঠলেন পুলিশ অফিসার। অয়ন্তীর দিকে উৎকণ্ঠিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন তিনি। ঘাবড়ে ওঠে কপালে জমতে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো মুছলেন। বেফাঁস গলায় বললেন,,
“দলীয় ব্যাপার স্যাপার এসব। আপনি বুঝবেন না। আমরা কে’ই’স পেয়েছি বলেই আ’সা”মিকে গ্রে’ফ’তার করেছি। এ’রে’স্ট ও’য়া’রেন্টও আছে আমাদের কাছে। এই বিষয়ে কিছু বুঝতে হলে সাবেক মন্ত্রী মিন্টু খানের কাছে গিয়ে যা বুঝার বুঝে নিন, যান।”
অহেতুক কথা বাড়াতে চাইল না অয়ন্তী। বুকে অদম্য সাহস নিয়ে সে সেলের দিকে রওনা হলো। তার পেছনে ছুটতে লাগল কনস্টেবল এবং সেই জা’দ’রে’ল পুলিশ অফিসারও। পেছন থেকে চঞ্চল দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে অয়ন্তীর পাশাপাশি এসে দাঁড়ালো। ১০২ নম্বর সেলের সামনে গিয়ে অয়ন্তী হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। চোখে ঘুরিয়ে সে তার ডান পাশের সেলটিতে বিস্ফোরিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। অমনি তার চোখ দুটো আতঙ্কে জর্জরিত হয়ে উঠল। র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় সে মেঝেতে পড়ে থাকা রাফায়াতের অবচেতন দেহটি দেখতে পেল! সঙ্গে সঙ্গেই অয়ন্তী ‘রাদিফ’ বলে জোরে এক আর্তনাদ করে উঠল। টলমল চোখে সে পেছনে ঘাবড়ে ওঠা পুলিশ অফিসারের দিকে গোলন্দাজ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল৷ শাণিত গলায় বলল,,
“কু’ত্তা’র বাচ্চা! কী করেছিস তুই আমার হাজবেন্ডকে? মে’রে ফেলেছিস তাকে?”
বিক্ষুব্ধ হয়ে অয়ন্তী গটগট করে হেঁটে গিয়ে সেই পুলিশ অফিসারের শার্টের কলার চেপে ধরল!
#চলবে…?