এক খণ্ড কালো মেঘ পর্ব -৪২

#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_৪২
#নিশাত_জাহান_নিশি

“এই? বুঝা তোর ভাবিকে!”

জায়গা থেকে ঈষৎ নড়েচড়ে দাঁড়ালো আরিফ। টগর মগর দৃষ্টি ফেলে সে কিছুক্ষণ রাফায়াতের দিকে তাকালো তো কিছুক্ষণ অয়ন্তীর দিকে। গলা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে এক পর্যায়ে তার শুকনো কাশি ওঠে গেল৷ কোথায় এনে ফাঁসিয়ে দিলো রাফায়াত তাকে? আরিফের এহেন অস্বাভাবিক কার্যকলাপ দেখে বিরক্তবোধ করল রাফায়াত। দাঁতে দাঁত চাপল সে। ঝাঁঝালো গলায় পুনরায় বলল,,

“কী রে বল?”

শুকনো ঢোঁক গিলে আরিফ এবার অসহায়ের মত অয়ন্তীর দিকে তাকালো। অপারগ হয়ে অনর্গল গলায় বলল,,

“ভাবি বিশ্বাস করুন। ভাইয়ের এখানে কোনো ফল্ট-ই ছিলনা। অনেকদিন পর ভাইয়ের সাথে আমার দেখা। তাই অতিরিক্ত আবেগ আপ্লুত হয়ে আমিই প্রথমে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। তখনই ইতি আপু আসে সেলুনে। আমাদের ঐ অবস্থায় দেখে ফেলে৷ তারপর থেকে মুখ দিয়ে যা আসছে তাই কন্টিনিউয়াসলি তাই বলে চলছে। তাই বাধ্য হয়ে রাফায়াত ভাইয়াও মাঝেমধ্যে দু’একটা কথা শুনিয়ে দিয়েছে আপুকে। দেট’স ইট। ভাইয়াকে অযথা ভুল বুঝবেননা ভাবি প্লিজ।”

স্বস্তি ফিরে পেল রাফায়াত। অয়ন্তীর দিকে সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সে। নাক টেনে মিনমিনে গলায় বলল,,

“আরিফ যা বলেছে সব সত্যি বৌ। প্লিজ ট্রাস্ট মি। আমি ইচ্ছে করে মেয়েটির সাথে কথা বাড়াইনি। ইনফেক্ট মেয়েটিকে তো আমি চিনিও না। লাইফে ফার্স্ট টাইম দেখলাম। সো অযথা তর্কে জড়াতে যাব কেন বলো?”

রাফায়াতের থেকে রাগী দৃষ্টি সরিয়ে অয়ন্তী এবার ইতি মেয়েটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ভ্রু যুগল কুঁচকে শ্লেষাত্নক গলায় বলল,,

“কী ব্যাপার আপু? তুমি অকারণে ছেলেদের গাঁয়ের উপর পড়ে ঝ’গ’ড়া করো এই ব্যাপারটা তো আমার আগে জানা ছিলনা!”

পূর্বের তুলনায় খানিক হকচকিয়ে উঠল ইতি। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। সাহসী এবং ডানপিটে মনোভাব পাল্টে সে শান্তশিষ্ট হয়ে উঠল। অনৈতিক কিছু করে ফেলার অস্থিরতা কাজ করতে লাগল তার স্বীয় মুখমণ্ডলে। অধীর গলায় সে অয়ন্তীকে বলল,,

“আর বলিসনা অয়ন্তী। ঐ মুহূর্তে আমার মাথা গরম ছিল। তাই সামনে যাকে পেয়েছি তার সাথেই রুড বিহেভ করেছি! এরমধ্যে এই ছেলেটিও পড়েছে। যা হয়েছে ভুলে যা ওকে? মাঝেমধ্যে হয়ে যায়। সো চিল ওকে?”

“ছেলেটি আমার উডবি আপু। তাই বলব তুমি তার সাথে যা করেছ, একদমই ঠিক করোনি। আমার মাইন্ডে লেগেছে বিষয়টা! সরি সে টু সে আপু, আমি বিষয়টা ভুলতে পারছিনা!”

“সিরিয়াসলি অয়ন্তী? ছেলেটি সত্যিই তোর উডবি?”

অয়ন্তী তার হাতে থাকা এনগেজমেন্ট রিংটি উঁচু করে ইতির মুখের সামনে ধরল। আংটিকে দেখিয়ে নির্বিঘ্নে বলল,,

“এই যে দেখো আপু। আমার এনগেজমেন্ট রিং। এবার বিশ্বাস হলো?”

অয়ন্তীর থেকে মুখ ফিরিয়ে ইতি এবার সূক্ষ্ম দৃষ্টি ফেলল রাফায়াতের দিকে। উপর নিচ পর্যন্ত রাফায়াতকে যতটা সম্ভব সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। বিষয়টায় বিব্রতবোধ করল রাফায়াত। শাণিত দৃষ্টি ফেলল সে ইতির দিকে। রাফায়াতের দিকে তাকানো থাকা অবস্থাতেই ইতি সিক্ত গলায় অয়ন্তীকে লক্ষ্য করে বলল,,

“বাই দ্যা ওয়ে অয়ন্তী। তোর চয়েজ কিন্তু ভালো!”

মুহূর্তেই রাফায়াতের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো ইতি। ফিকে হেসে অয়ন্তীকে বলল,,

“ওকে বাই অয়ন্তী৷ সময় পেলে তোর উডবিকে নিয়ে আমাদের বাসা থেকে ঘুরে আসিস ওকে?”

জোরপূর্বক হেসে অয়ন্তী হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। ইতির চাহনি, ভাবভঙ্গি, হঠাৎ পাল্টে যাওয়ার মনোভাব স্বাভাবিক লাগল না অয়ন্তীর! সন্দেহজনক মনে হলো। হুট করেই রাফায়াত রাগে গিজগিজিয়ে উঠল। ইতির যাওয়ার পথে তাকিয়ে সে রাগী গলায় অয়ন্তীকে বলল,,

“মেয়েটাকে তুমি এভাবে যেতে দিলে অয়ন্তী? দোষ করল অথচ সরি বলল না?”

ইতোমধ্যেই অয়ন্তী, রাফায়াত এবং আরিফকে একদফা অবাক করে দিয়ে ইতি হঠাৎ পেছন থেকে রাফায়াতকে লক্ষ্য করে মৃদু হেসে বলল,,

“সরি মিস্টার রাফায়াত! প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।”

হাসতে হাসতেই জায়গা পরিত্যাগ করল ইতি। অয়ন্তীর সন্দেহ এবার গাঢ় থেকে গভীর হতে লাগল। কোঁমড়ে হাত গুজে সে গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ইগু সেটিজফাইড হওয়া রাফায়াতের দিকে। তটস্থ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“আপনি কি এখনও এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন?”

“চুল, দাঁড়ি কা’ট’ব না?”

“আহামরি বড়ো তো হয়ে যায়নি চুল, দাঁড়ি। আজই যে কা’ট’তে হবে এমন না।”

“এসব কোন ধরনের কথা অয়ন্তী? তুমি আর কতদিন আমাকে এভাবে চার দেয়ালের মাঝে আটকে রাখবে বলো? আমিও তো মানুষ তাইনা? আমারও দম বন্ধ লাগে।”

“তিক্ত হয়ে উঠছেন, না? বিরক্তি করে ফেলছি এই কয়েকদিনে?”

“আমি এটা বুঝাতে চাইনি অয়ন্তী। সহজ বিষয়টা আমি তোমাকে সহজভাবেই বুঝানোর চেষ্টা করছি। আমাকে নিয়ে এত ভ’য় পাওয়ার তো কিছু নেই অয়ন্তী৷ আমি এখন যেমন আছি মৃ’ত্যুর আগ অবধিও ঠিক তেমনই থাকব। তুমি অযথা আমাকে নিয়ে এত এত টেনশন করো অয়ন্তী। এত ভ’য়ে ভ’য়ে থাকো।”

“ওকে। তাহলে চুল, দাঁড়ি কেটেই আসুন।”

গম্ভীর ভাব নিয়ে অয়ন্তী পিছু ঘুরল। রাস্তা পাড় হয়ে সোজা তার বাড়ি চলে এলো। বেড রুমের দরোজা আটকে সে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো। আড়ালে দাঁড়িয়ে থেকে দূর থেকে মিহিভাবে রাফায়াতকে দেখতে লাগল! অহেতুক অভিমান নিয়ে ভরাট গলায় বলল,,

“আমি জানি, আমি আপনার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছি রাদিফ। কিন্তু কী করব বলুন? আপনাকে নিয়ে আমার ভ’য় হয়! সাং’ঘা’তিক রকম ভ’য় হয়। দম বন্ধ হয়ে আসার মত ভ’য় হয়। কখনো কখনো তো মনে হয় এই বুঝি আমি আপনাকে হারিয়ে ফেললাম! চোখের আড়াল হলেই সেই ভয় আরও দ্বিগুন হয়। কোনো মূল্যেই আমি আপনাকে হারাতে চাইনা রাদিফ। আমার দেহের প্রতিটি শিরায় শিরায় আপনি বইছেন। কোনোভাবে আপনি থেমে যাওয়া মানেই হলো আমার নিঃশ্বাস ও থেমে যাওয়া। কীভাবে আপনাকে বুঝাই আমার ভেতরের এই হাহাকার?”

বিমর্ষ হয়ে রাফায়াত সেলুনে চুল কা’ট’তে বসল। অয়ন্তীর অহেতুক রাগ, অভিমান, ভ’য় তাকে আরও দুর্বল করে তুলছে। এতটা ভ’য় কেউ পায়? যে ভয়ের আদোতে কোনো মানেই হয়না! কেন অয়ন্তী ভয় ভুলে স্বাভাবিক হচ্ছেনা? কেন সে সন্দেহ করা ছাড়তে পারছেনা?”

ঘণ্টা খানিক পর চুল, দাঁড়ি কা’টা শেষ হলো রাফায়াতের। তখন চারিদিকে মাগরিবের আযান ও পড়ে গেল। আরিফের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রাফায়াত ভাবল অয়ন্তীদের বাসায় যাবে। রাগ ভাঙাবে অয়ন্তীর। আজ রাতের ডিনারটা না হয় তারা বাইরে থেকেই করবে। একটু ঘুরলে ঘারলে হয়ত অয়ন্তীর উদাস মনটা ভালো হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। দুটি ডেইরি মিল্ক চকলেট হাতে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে রাফায়াত অয়ন্তীদের বাসায় গেল। সদর দরোজা খুলে দিলেন অয়ন্তীর মা। হবু মেয়ে জামাইকে দেখে তিনি তৎক্ষনাৎ খুশি হয়ে গেলেন। কৌশল বিনিময় করে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন চা-নাশতার জোগাড়ে।

ড্রয়িংরুমের সোফায় ভেজা চুল মেলে উদাস চিত্তে বসে আছে অয়ন্তী! হাতে তার ধোঁয়া উঠা চায়ের মগ। চায়ের মগে ঘন ঘন চুমুক দিচ্ছে আর টিভি ছেড়ে ডিয়ার কমরেড মুভিটি দেখছে! রাফায়াতকে দেখে সে বিন্দুমাত্রও খুশি হলোনা! বরং একবারের জন্য শুধু রাফায়াতের দিকে তাকিয়ে আবার সেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। কোনো অনুভূতি-ই যেন তার মধ্যে কাজ করছেনা! রাফায়াতকে চিনেও না এমন একটা ভান ধরল। বিষয়টায় বেশ অবাক হলো রাফায়াত। বুঝতে বেশী বেগে পেতে হলোনা অয়ন্তী ভীষণ রাগ করেছে তার উপর। গলা ঝাঁকিয়ে অয়ন্তীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইল রাফায়াত। কাজের কাজ কিছুই হলোনা! কিছুতেই যেন অয়ন্তীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা গেলনা। অতঃপর ভীরু পা ফেলে রাফায়াত অয়ন্তীর পাশে বসতেই অয়ন্তী নিমিষেই জায়গা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো! টিভি বন্ধ করে সে দ্রুত পায়ে হেঁটে সোজা তার রুমে চলে গেল। ফিক করে হেসে দিলো রাফায়াত! সে জানত ঠিক এমনটিই হবে। অয়ন্তীর রাগ ভাঙানো চাট্টিখানি কথা নয়। ভা’ঙবে তবু মচকাবে না। যাক ভালোই হলো! অয়ন্তীর রাগ ভাঙাতে ড্রয়িংরুমে যা করতে পারবেনা সে, তা বেডরুমে অনায়াসেই করতে পারবে!

রুমের দরজাটা অয়ন্তী ভেতর থেকে আটকানোর পূর্বেই রাফায়াত দরজায় এসে হা’ম’লা দিলো। রাফায়াতের অসীম শক্তির সাথে না পেরে অয়ন্তী হার মেনে নিলো! দরোজা থেকে সেরে এসে সে বিছানার উপর বদরাগী ভাব নিয়ে বসল। ভেতর থেকে দরোজাটা আটকে রাফায়াত চুপটি করে অয়ন্তীর পাশে এসে বসল। পাশ ফিরে কিছুক্ষণ অয়ন্তীর রাগে, অভিমানে মাখা বিবর্ণ মুখশ্রীতে তাকালো। অতঃপর অয়ন্তীর ভেজা চুলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কী ব্যাপার? এই সময়ে শাওয়ার?”

“একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনি জিজ্ঞেস করার কে?”

“কে আবার? তোমার জামাই।”

“এখনো হননি।”

“এত রা’গ?”

“আমি যার তার সাথে রাগ করিনা।”

“আমি যা তা?”

“হুম।”

“আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো!”

“কেন এসেছেন আগে সেটা বলুন?”

“বৌয়ের কাছে এসেছি। আবার কেন?”

“আমি আপনার বৌ না!”

“তো কী?”

“জানিনা।”

“কেন জানো না?”

নিরুত্তর অয়ন্তী। মাখো মাখো অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিলো সে। এক হাতে বিছানার চাঁদর খাঁমচাতে লাগল। ঝট করে রাফায়াত পেছন থেকে অয়ন্তীকে জড়িয়ে ধরল! আদুরে গলায় বলল,,

“কী হইছে হ্যাঁ? এত রাগ কীসের?’

নিশ্চুপ অয়ন্তী। নড়াচড়া বন্ধ করে কেবল শান্ত হয়ে বসে রইল। অয়ন্তীর এই মৌনতা যেন রাফায়াতকে আরও ভ’য়ের মুখে ফেলে দিলো। দিশা খুঁজে না পেয়ে সে অয়ন্তীর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো। নাক ঘঁষে আদুরে শুধালো,,

“বলো না কী করেছি আমি? কীসের এত রাগ?”

“ইতি আপু আপনার দিকে কীভাবে তাকিয়েছিল দেখেছেন?”

“এটা তো তোমার ইতি আপুর প্রবলেম। আমি তাকালে আমার প্রবলেম ছিল।”

“তাকাতে কতক্ষণ আপনার? ইতি আপু তো আমার চেয়েও অনেক বেশী সুন্দরি! যদি আপনার নজর আমার থেকে ইতি আপুর দিকে চলে যায়, তো?”

সঙ্গে সঙ্গেই অয়ন্তীকে ছেড়ে দাঁড়ালো রাফায়াত! রাগে টইটম্বুর সে। শিরা, উপশিরায় অদম্য জেদ বইতে লাগল। মনে হলো অয়ন্তী এবার তার সাথে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে! যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। জায়গা ছেড়ে দরোজার সামনে পা বাড়াল রাফায়াত। আর খিটখিটে মেজাজে বলল,,

“বায়।”

“কেন? ইতি আপুর কাছে যাবেন?”

মুহূর্তেই অয়ন্তীর দিকে তেরেমেরে এলো রাফায়াত। চোখ জোড়া অসম্ভব রকম লাল করে ধমকের স্বরে অয়ন্তীকে বলল,,

“এবার কিন্তু চ’ড় খাবা তুমি! মাথা মুথা একদম গরম করবে না আমার। এতে যেমন তোমার মঙ্গল, তেমনি আমারও। কু’কু’রের লেজ কিন্তু সোজা হয়না অয়ন্তী! আমাকে আর বাঁকা হতে বাধ্য করো না!”

হু হু করে কেঁদে দিলো অয়ন্তী। ভরাট দৃষ্টিতে রাফায়াতের রাগান্বিত মুখমণ্ডলে তাকালো সে। রাফায়াতকে আপোষে আনার জন্য রুক্ষ গলায় বলল,,

“হু’ম’কি দিচ্ছেন আমাকে না? রুড বিহেভ করছেন আমার সাথে? আবারও মেজাজ দেখাচ্ছেন? ছেড়ে যাবেন আমাকে তাই তো? আমি আপনাকে নিয়ে অতিরিক্ত ভাবী বলে আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন?”

“আশ্চর্য! আমি আবার এসব কখন বললাম?”

“বলা লাগেনা। ইশারাই যথেষ্ট!”

“তুমি একটু থামবা প্লিজ? মুডটাই নষ্ট করে দিলো! থাকো তুমি তোমার রাগ নিয়ে, সন্দেহ নিয়ে। আমি সত্যিই গেলাম।”

রাফায়াতকে আটকালো না অয়ন্তী! ক্ষোভ নিয়েই যেতে দিলো তাকে। একা ঘরে আবারও ফ্যাস ফ্যাস করে কেঁদে উঠল অয়ন্তী। বিছানায় কপাল ঠুকে বলল,,

“বুঝতেছিনা কী হচ্ছে এসব! এমন করছি কেন আমি? কী হয়েছে আমার? কেন অযথা আমি রাদিফকে নিয়ে ভ’য় পাচ্ছি? কেন এত সন্দেহ করছি? কেন তার সাথে রুড বিহেভ করেছি? কেন তাকে আটকাতে পারিনি?”

_______________________________

রাত তখন বারোটা প্রায়। পরিবেশ ক্রমাগত নিস্তব্ধ হয়ে উঠছে। রাত যেন তার নিজস্বতা ফিরে পাচ্ছে। চাঁদ, তাঁরার দেখা মিলছে আকাশে। নিকষ কালো অন্ধকার কেটে জোছনা নেমেছে আকাশ জুড়ে। সব মিলিয়ে মায়াবী এক রাত। অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও রাতের খাবার না খেয়েই রাফায়াত শুয়ে পড়েছে। মন ভালো নেই তার। অসম্ভব রকমের মন খারাপ। অয়ন্তীর বাসা থেকে ফিরে এসেই সে প্রথমে লম্বা এক শাওয়ার নিয়েছে। অতঃপর চাকরীর বই নিয়ে পড়ার টেবিলে পড়তে বসে গেছে। বারোটা বাজতেই পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠেছে। ব্যালকনি থেকে রাতের আকাশে তাকাতেই রাফায়াতের মন পূর্বের তুলনায় আরও অধিক খারাপ হয়ে উঠল। এই মায়াবী জোছনা ভরা রাতে অয়ন্তীকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা চেপে বসল। হৃদয়ে বেড়ে ওঠা সুপ্ত অভিমানে বেহায়া মনকে সে সন্তপর্ণে সামলে নিলো! আকাশ সমান বিমর্ষতা নিয়ে ব্যালকনি ত্যাগ করল। কাঁথা টেনে বিছানার উপর লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল সে। ভুলবশত দরোজার ছিটকিনি লাগানো হয়নি। দরোজা খোলা রেখেই ঘুমানোর চেষ্টা করল সে। অস্থিরতা নিয়ে বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে লাগল। এভাবে মিনিট কয়েক অতিবাহিত হয়ে গেল। অলক্ষুণে ঘুম যেন কিছুতেই তার চোখে ধরা দিলোনা। ব্যাপারটায় বেশ বিরক্ত বোধ করল রাফায়াত। উদোম শরীরে উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। বালিশটা মাথার উপর চেপে ধরল। এই করতে করতে তার প্রচণ্ড মাথাব্যথাও শুরু হয়ে গেল!

ইতোমধ্যেই তার মনে হলো পিঠের উপর টগবগে গরম জাতীয় কিছু পড়ল! মানুষের দেহ বলে মনে হলো। তৎক্ষনাৎ রাফায়াত বিস্ফোরিত দৃষ্টি ফেলল তার পিঠের দিকে। অমনি ভড়কে উঠল সে। অয়ন্তীর আবার জ্বর হলো কখন? জ্বরে তো তার সমস্ত শরীর জ্ব’লে পু’ড়ে যাচ্ছে। উদ্বিগ্ন হয়ে রাফায়াত অয়ন্তীকে তার পিঠের উপর থেকে উঠালো। ঘুরিয়ে সোজা করে শোয়ালো তার পাশে। অতিরিক্ত জ্বরের প্রভাবে অয়ন্তীর সমস্ত শরীর নেতিয়ে পড়েছে। চোখ মেলে তাকানোরও শক্তিটুকু অবশিষ্ট নেই। চোখ বুজেই সে মিনমিনে গলায় রাফায়াতকে বলল,,

“আমাকে ক্ষমা করে দিন রাদিফ। আ’ম সো সরি। আই ডোন্ট নো আমার কী হয়েছে! কেন আমি অবিবেচকের মত আচরণ করছি। কেন আমি এত অশান্ত। কেন এতটা ভীরু আপনাকে নিয়ে। কেন অহেতুক সন্দেহ করছি আপনাকে।”

চক্ষুজোড়া আতঙ্ক নিয়ে রাফায়াত অয়ন্তীকে তার বুকের মাঝে চেপে ধরল। অনুশোচনায় জর্জরিত হয়ে উঠল সে। ভরাট গলায় বলল,,

“তুমি কেন সরি বলছ পরাণ? সরি তো আমার বলার কথা। আমার ঐসময় বুঝার উচিৎ ছিল তুমি আমাকে নিয়ে টু মাচ পসেসিভ। উটকো রাগ দেখালাম আমি। এখন এসব বাদ দাও প্লিজ। আগে বলো তোমার এত জ্বর হলো কখন?”

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here