#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila
১৮.
‘ এই ঊষা এমন হাপাচ্ছিস কেন? কি হয়েছে?’ তুলি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো।
আমি বার কয়েক শ্বাস নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম। তুলি আমার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমি শান্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ কিরে এমন ঢাবঢাব করে তাকিয়ে আছিস কেন?’
‘ কোথায় গেছিলি। আর হাঁপাতে হাঁপাতে কোথা থেকে আসলি?’
‘ বলছি এতো পাগল হচ্ছিস কেন? এতো অধৈর্য কেন তুই!’ বিরক্ত হয়ে বললাম।
তুলি আমাকে ঠেলে বিছানায় জায়গা করে বসে বললো, ‘ আচ্ছা বল তুই কোথায় ছিলি?’
‘আমি ইহানের সাথে ছিলাম।’
‘বলিস কি? কোথায় ছিলি তোরা?’ চোখ বড় করে বললো তুলি।
আমি সব খুলে বললাম। ও শুনে হা করে বললো, ‘ ওই মাইয়ার সাথে ঝগড়া করছে তোরে না। ওরে খেলা তো জমে উঠেছে।’
‘ ধুর ওই ফারিয়া আমার দিকে যে ভাবে তাকায় আমার তো ভয়ে বুক ধুকপুক শুরু হয়ে যায়। চোখ দিয়ে আমাকে গিলে খাবে যেন।’
‘ এতো ভয় পাওয়ার কি আছে। ইহান তো আছেই তোর জন্য। শুধু শুধু চলে এসেছিস।’
‘ আমার ঘুম পাচ্ছে আর আমি কিনা ওখানে বসে তাদের পেছাল শুনবো।’ বিরক্ত মুখ করে বললাম।
তুলি আর কিছু বললো না। আমার পাশেই শুয়ে পরলো। ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করতে লাগলো। আমি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। চোখ বুজে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরলাম। ফোনের রিংটোন এ আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ঘুমঘুম চোখে ফোনে কানে তুলে নেয়। হ্যালো বলেই অপরপাশে থেকে বকা খেয়ে ঘুম উবে যায় আমার। চোখ কচলে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি ইহানের কল। বারোটা বাজে। এতো রাতে কল করেছে কেন? পাগল নাকি এই লোকটা।
আমি ফোন কানে নিতেই গম্ভীর গলায় ইহানের কথা শুনলাম। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে খট করেই ফোন কেটে দিলো। কল লিস্ট এ গিয়ে আমার চোখ চড়কগাছ হয়ে গেলো। ইহানের অনেক কল দেখা যাচ্ছে। আমি না ধরা পর্যন্ত থামবে না ভেবেছিলো বোধহয়।
পরদিন তুলির ধাক্কায় উঠে বসলাম। এতো ভোরে কে উঠিয়েছে আমাকে ওকে জিজ্ঞাস করলাম,
‘ এখনো তো সকাল হয়নি ঠিকমতো। আমাকে এখনোই উঠালি কেন?
‘ তাড়াতাড়ি উঠ। ফ্রেশ হয়ে আয়।’
‘ কেন?’ সামনে তাকিয়ে দেখি বাকিরা ও উঠে গেছে। ওরা সাজু কাজু করছে দেখে বললাম, ‘ওরা রেডি হচ্ছে কেন?’
‘ ম্যাম বলে গেছে সবাইকে ফ্রেশ হয়ে বের হতে। এখনি বের হবে।’
‘ ওহ। আচ্ছা।’
আকাশ পাতাল চিন্তা করে উঠে দাঁড়ালাম। ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম। চুল আঁচড়ে কাঁকড়া দিয়ে বেঁধে নিলাম। মুখে পাউডার মেখে নিলাম। তুলির ও রেডি হওয়া শেষ আমরা বেরিয়ে এলাম। সবাই বের হচ্ছে। রিসোর্টে এর সামনে এসে দাঁড়ালাম সবার সাথে । আমার সাথেই তুলি আছে।
সবাই একসাথে যাত্রা শুরু করলাম। এখন আমাদের হ্যালিপ্যাডে যেতে হবে সেখানে থেকে সকালে সূর্যদদোয় দেখা হবে। আর মেঘ দেখা যাবে খুব নিকট থেকে। ম্যাম এসব বললো। বিরক্ত লাগছিলো এমন সাতসকালে উঠার জন্য কিছু ম্যাম এর কথা শুনে দেখার জন্য ছটফট করছি।
সাজেক শব্দটা মনে পরলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে এক মেঘময় একটা পৃথিবী।এখানে ক্ষনে ক্ষনে পৃথিবী তার রুপ বদলায়।কখনো তীব্র শীত আবার কখনো বৃষ্টি। চোখের পলকে ঘোমটা টানে সাদা কালো মেঘ। এ যেন মেঘের এক উপত্যকা, মেঘেদের রাজ্য আর নিজেকে মনে হয় মেঘের রাজ্যে বাসিন্দা।
হাঁটায় আমি সবক্ষন কাঁচা। বেশি হাঁটতে পারিনা। একটু হেঁটে আমার পা ব্যাথা হয়ে গেছে।সবাই কি সুন্দর হেসে খেলে যাচ্ছে। আমি তুলিকেও হারিয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছি ওকে খোঁজতে। মারুফাকে পেলাম আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ দুই কদম এসেই হাঁপিয়ে গেলে ঊষা।’
আমি বললাম, ‘ না আসলে সকাল বেলা আমি কিছু করতে পারিনা অভ্যাস নাই।’
‘ আমাদের ও নাই তবুও তোমার মতো নেতিয়ে পরিনি।’
বলেই হেঁটে এগিয়ে গেলো। আমি কটমট করে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটা খুব বেয়াদব। সবার সাথে বাজে বিহেভ করে ও কি শান্তি পায় আল্লাহ জানে। কেউ আমার হাত শক্ত করে ধরলো। চমকে পাশে তাকিয়ে দেখি ইহান ও ওর ফ্রেন্ডরা। ইহান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ একা যাচ্ছ কেন? আমাকে রেখে এতো রাগ কেন তোমার?’
আমি হাঁ করে বোকা চোখে তাকিয়ে আছি ইহানের দিকে। মাথা গেলো নাকি উনার সাথে আমি রাগ করলাম কখন? আমি ঘাড় ঘুরিয়ে বাকিদের দিকে তাকালাম। তারা আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। ফারিয়া রাগে গজগজ করছে। আমি চোখ সরিয়ে ইহানের দিকে তাকিয়ে হাত ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে লাগলাম।
ইহান ছাড়লো না উল্টা আরো শক্ত করে ধরলো। তখন তুলি এলো আমার কাছে দৌড়ে। আর বললো, ‘ তুই খালি হারায় যাস কেন রে?
বলেই আমাদের হাতের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগলো। আমি ভয়ংকর চোখে ওর দিকে তাকালাম। ও তোয়াক্কা করলো না।আমরা চলে এলাম হ্যালিপ্যাডে এখানে এসেই আমার সমস্ত ক্লান্তি হাওয়া হয়ে গেল। ইহান এখনো হাত ধরে ছিলো আমি হাত ছাড়িয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতেছি মুগ্ধ চোখে।
সাদা মেঘ যেন আমার মাথার উপর। হাত বাড়ালেই তা আমি ছুঁয়ে দিতে পারবো। আমি হাত বাড়িয়ে বোকার মতো তা ছুয়ে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারিনি। তাই হাত বাড়িয়েছি। ফল স্বরূপ কিছু পাইনি। ইহানের ফিসফিস করে কথায় আমার হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলো। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো।
বদমাইশ টা আমার কানে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে কথা বলছে আমি চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিয়ে তাকানোর আগে কিছু অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করলাম।
চোখ মেলে আর ইহানকে কড়া কথা শুনাতে পারলাম না। চোখের সামনে সূর্য দদোয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে। সবাই মুগ্ধ নয়নে সেদিকেই তাকিয়ে আছে।
ফুরফুরে মেজাজে আমরা ব্যাক করলাম। এখনো যেন ওই সৌন্দর্যের মধ্যে যেন আমি আটকে আছি। এবার হাঁটতে আর আমার বিরক্ত লাগছে না চারপাশের উঁচু নিচু পাহাড়, সবুজ গাছ গাছালির দেখতে দেখতে চলছি। আমার হাত এখনো ইহানের হাতের মুঠোয়। আমি ছাড়াতে চাইলেও ছাড়ে না। তাই বাধ্য হয়ে তার সাথে আমার আটকে চলতে হচ্ছে।
ব্রেকফাস্ট করতে আজ ইহানদের টেবিলেই বসতে হলো। আমার একপাশে তুলি ও অন্য পাশে ইহান।
তুলি আমার কানে ফিসফিস করে বললো,
‘ দোস্ত ফারিয়া তোর দিকে কেমন রাক্ষসীর মতো তাকিয়ে আছে দেখ।’
আমি ওর কথা শুনে সামনে তাকালাম। ফারিয়া আমার সোজা সামনে বসেছে। আমি তাকাতেই তার কঠিন দৃষ্টিতে দেখলাম। আমি মুখ নিচু করে বললাম,
‘ আমাকে চিবিয়ে খাচ্ছে রে। একবার একা পেলে আমার কি অবস্থা করবে তাই ভাবছে।’
‘ইহান তো আমাদের সাথে আছেই টেনশন কি?’
এই লোকটার পাল্লায় আমাকেই পরতে হলো। এর জন্য আমি একজনের চোখের বিষ হতে হলো। দোষ না করেও দোষী হলাম হায় কপাল আমার।
খাবার আসতেই সবাই খাওয়া শুরু করে দিলো। আমি সবার পরে খেতে শুরু করলাম। রিমার হাতে মেসেজ এ কথা বলছিলাম তাই। খাওয়ার মাঝে মুক্তা আপু বললো,
‘ হে ঊষা তোমার ভাই বোন কয় জন?’
আমি মুখের খাবার ফিনিশ করে বললাম, ‘ আব্বু আম্মুর একমাত্র মেয়ে আমি আপু। আমার ভাই বোন নাই।
‘ ওহ আচ্ছা। তাহলে তো তুমি খুব আদরের মেয়ে।’
‘ হুম।’
আর কেউ কোনো কথা বললো না। খাওয়া শেষে আমরা আবার বেরিয়ে পরলাম।
হাজাছড়া ঝর্না, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার গুলো ঘুরতে।
#চলবে.#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila
১৯.
‘ কাল তুমি ওইভাবে পালিয়ে গেছিলে কেন?’ রাগী গলায় বলল ইহান।
আমি ঢোক গিলে বললাম, ‘ আপনি আমাকে ওখানে কেন নিয়ে গেছিলেন?’
‘ সব ভুলে গেছো। এইভাবে যদি আমার থেকে দূরে থাক তাহলে ফারিয়া বুঝবে কি করে আমার সাথে তোমার সম্পর্ক আছে। এতো টুকু কমন সেন্স ও নাই দেখছি তোমার।’
‘আপনার তো দেখছি সেন্সের অভাব নাই তাই না। খবিশ লোক একটা। আমার নূপুর দেন অনেক নাটক হয়েছে আর না।’
‘ তুমি আমার কোন হেল্প ই করোনি। উল্টা সব গন্ডগোল পাকিয়ে দিছো। এখন তুমি নূপুর চাচ্ছ। এটা আমি এই ঝুলন্ত ব্রিজে থেকে ফেলে দেবো।’
বলেই ইহান পকেট থেকে নূপুর বের করে আনলো। আমি চোখ বড়বড় করে হাতের দিকে তাকিয়ে আছি।
কি ডেঞ্জারাস ছেলে! মন চাচ্ছে উনাকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেই। কিন্তু উনার সাথে তো আমার জিনিসটা চলে যাবে। তাই নিজের রাগকে কন্ট্রোল করলাম।
‘ আচ্ছা প্লিজ ফেলবেন না। আমি আর তর্ক করবো না এবার আপনার কথা মতোই চলবো।’
‘ সিউর তো আবার পাল্টি খাবে না তো?’
‘ ন না একদম না।’
‘ ওকে শেষবার বিশ্বাস করলাম যাও।’
ফারিয়াকে আসতে দেখা গেলো। ইহান তারাতাড়ি নূপুর পকেটে পুরে আমার দিকে এগিয়ে এলো। আর মুখ নিচু করে বললো,’ হেসে হেসে কথা বলো। আর আমার হাত ধরো।’
আমি দাঁত কিড়মিড় করে এক পা এগিয়ে এলাম। আর কথা না বলে দাত কেলাতে লাগলাম। নিজেকে কেমন জোকার লাগছে আমার। ইহান ও হাসছে। ফারিয়া কাছে আসতেই আমার হাত টেনে মুঠোয় বন্দি করে নিলো।
কিছু বলতেও পারছি না সহ্য ও করতে পারছি না। সবকিছু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে রেখেছি। ফারিয়া এসেই আমার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে ইহানের দিকে তাকালো।
‘ ইহান আমার তোর সাথে ইমপর্টেন্ট কথা আছে।’
‘ হুম বল।’
ফারিয়া বললো,’ এখানে না। তোর সাথে পার্সোনালি বলতে চাই। আমার সাথে আয়।’
বলেই ফারিয়া ইহানের ডান হাত ধরলো। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।
ইহান বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ যা বলার এখানেই বল।’
‘ আমি যারতার সামনে বলবো না। শুধু তোকে বলবো আয় আমার সাথে।’
বলেই ইহান কে টানতে লাগলো আর ধপাস করে পরে গেলো। পায়ে ফারিয়ার উঁচু হিল ছিলো। আমি ফারিয়ার কান্ড দেখে ফিক করে হেসে উঠলাম। আমার হাসির শব্দ এ ফারিয়া অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। ইহান আমার হাত ছাড়িয়ে ফারিয়াকে টেনে তুললো। ফারিয়া ক্রোধ নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ You smile so much when you see me.’
রাগে চিৎকার করে উঠলো। আমি সাথে সাথে হাসি থামিয়ে ফেললাম। ইহান এগিয়ে এসে ফারিয়াকে বললো,
‘ চল শুনি কি বলবি!’
‘ এই মেয়ে আমাকে ইনসাইড করলো তুই কিছু বললি না!’
‘ কি বলবো। তুই এমন ভাবে পরে গেছিস। আমার ই তো হাসি পেয়ে গেছে।’
‘ এই মেয়েকে পেয়ে তুই ফ্রেন্ড ভুলে গেলি ছিঃ।’
বলেই ফারিয়া চলে গেলো।
আমি ইহানের দিকে তাকিয়ে বললাম,’ ফারিয়া আপু আপনাকে অনেক ভালোবাসে। শুধু শুধু তার সাথে আপনি এমন করেন। তাকে একসেপ্ট করে নিলেই তো হয়।’
‘ও যে পরিমাণ পাগল। আমি ওকে এক্সেপ্ট করলে দুই দিনে আমাকে পাগল করে ফেলবে। আর ওকে আমি বন্ধু ছাড়া কিছুই ভাবি না আমার পক্ষে অন্য কিছু ভাবা সম্ভব না।’
‘ আপনার এই ঝামেলায় আমাকে না টানলে কি হতো না। উনি আমাকে কতো শত অভিশাপ দিচ্ছে আল্লাহ জানে। এই নূপুর হারিয়ে গেলে আমি সব চেয়ে খুশি হতাম। প্যারা একটা।’
বলেই চলে এলাম।
বিকেলে সূর্যস্ত দেখে রিসোর্টে ফিরলাম সবাই।কালকের দিনটায় আছে। রাতে ঢাকা ব্যাক করবে।
আম্মুকে কল দিলাম রুমে এসে। আজ সকালেও কথা বলতে পারিনি এখানে বেশি নের্টওয়ার্ক ও নাই। ফোন হাতে নিয়ে দেখেছি আম্মুর কয়েকটা কল কিন্তু আমি রিসিভ করতে পারিনি। সকালের কল সারাদিন আমি আজ ফোন হাতেই নেই। কয়েকবার কল দিলাম রিসিভ হলো না। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কোন রকম ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন হাতে বেরিয়ে এলাম। বারবার করে কল দিতাছে রিসিভ হলো না। মুখটা মলিন করেই দাঁড়িয়ে রইলাম। তখন ইহান আর ফারিয়াকে দেখলাম কি নিয়ে যেনো দুজন কথা কাটাকাটি করছে আমি শুনার ইচ্ছে টাকে দমাতে না পেরে এগিয়ে গেলাম।
‘ ইহান আই রিয়েলি লাভ ইউ। তুই ওই মেয়েটাকে ভালোবাসতে পারিস না। আমি জানি সব নাটক ওই মেয়ে তোর গার্লফ্রেন্ড হতেই পারেনা। তোদের নাটক আমি ধরে ফেলেছি। আমাকে একদম বোকা বানানোর চেষ্টা করবি না বলে দিচ্ছি।’
‘ তোকে আমি বোকা কেন বানাবো। সব সত্যি এটা ঠিক ঊষা আমাকে তেমন ভালো বাসে না কিন্তু আমি ওকে ভালোবাসি। এটা মিথ্যা না। আর আজ ওকে আমি প্রপোজ ও করবো তোর চোখের সামনেই। তারপর প্রেম করবো। তোকে আমি আগেই বলেছি আমি তোকে বন্ধুর বেশি ভাবতে পারি না তাই এমন আবদার আমাকে করবি না প্লিজ।’
আমি আরো কিছু শুনতে কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু আর কোন শব্দ আসছে না দেখে মাথা তুলে দেখি দু’জনে ঝগড়া বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি থতমত খেয়ে গেলাম। সোজা হয়ে দাঁড়ালাম।
ফারিয়া ছুটে এসে আমার বাহু চেপে ধরে বললো, ‘ এই মেয়ে তুমি এখানে কি করছ বলো। লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছিলে তাই না। শয়তান মেয়ে।’
‘ না তো, আমি আপনাদের কথা শুনতে যাব কেন? আমি তো ফোন করছিলাম। নের্টওয়ার্ক নাই তাই এদিকে এসেছি। আর আপনি আমাকে শয়তান বললেন কেন?’
কিছুটা ঝাঁঝ নিয়ে বললাম।
‘ কি মিথ্যা কথা? লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছিলে আমি জানিনা বুঝেছ তাই না।’
‘ বুঝেছেন ভালো কথা হাত ছাড়ুন আমার। বলেই হাত ছাড়াতে লাগলাম। ফারিয়া আমার কথা শুনে রেগে গিয়ে চিৎকার করে উঠলো। আমি ভয়ে আতকে উঠলাম। কি পাগল মেয়ে রে বাবা। ইহান জোর করে আমাকে ছাড়ালো।
তারপর ফারিয়াকে ধমক দিয়ে আমাকে নিয়ে চলে এলো।
‘ ওখানে গেছিলা কেন?”
‘ বললাম ই তো ফোন করতে পারছি না তাই। কিন্তু আপনি উনাকে ওসব কি বললেন?’ ইহানের দিকে তাকিয়ে বললাম।
‘ কি বলেছি?’
‘ আপনি আমাকে ভালোবাসেন?’
আমার কথা শুনে ইহান হো হো করে হেসে উঠলো। আমি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বললাম, ‘ হাসির কি হলো। আপনি এসব বলেছেন কেন?’
‘ আরে আমি এসব বলেছি যাতে ফারিয়া আমার কথা বিশ্বাস করে তাই।’
‘ আরো অনেক কিছু বলেছেন আমি শুনেছি।’
‘ সব মিথ্যে বলেছি। আমার মনে হচ্ছে তুমি আমাদের কথা শুনতেই গেছিলাম।
আমি হতচকিয়ে গেলাম। আমতা আমতা করে বললাম,
‘ না তা না। আমি আম্মুকে কল করছিলাম। রুমে নেটওয়ার্ক কম তাই এই দিকে এসেছি সত্যি এই দেখুন আমার ফোন কতো বার কল করেছি। কিন্তু আম্মু আব্বু কেউই রিসিভ করছে না আমার দুঃচিন্তা হচ্ছে।’
ইহান ফোন দেখে বিশ্বাস করলো।
‘ চিন্তা করো না তারা হয়তো বিজি আছেন। ফোনের কাছে নাই পরে ফ্রী হলে কল করবে। ‘
‘ সারা দিন আজ কথা হয়নি।এখন কিসের ব্যস্ততা। যে দুজনেই একসাথে বিজি হয়ে গেলো!”
ইহান কি বলবে বুঝতে পারলো না।আমি মুখ কালো করে চলে এলাম। রাতের খাবার ও ঠিক মতো খেতে পারলাম না। এগারোটার দিকে আব্বুর নাম্বার থেকে কল দিলো। আর যা বললো তাতে পায়ের নিচ থেকে আমার মাটি সরে গেলো। আমি একটা চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আমার চিৎকার এ রুমের সবাই ছুটে এলো আমার কাছে।
#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila
২০.
জন্ম মৃত্যু এক আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। এখানে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কোন হাত থাকে না। কখন কার মৃত্যু কিভাবে ঘনিয়ে আসে কেউ বলতে পারে না। একদিন এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে সবাইকেই চলে যেতে হয় হবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। জন্ম নিলে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবেই। সবাই জানে এই কঠিন সত্যর কথা। তবুও কেউই আপনজনের মৃত্যু সহ্য করতে পারে না।
নানা জানের সাথে জীবন এ একবার আমার দেখা হয়েছে। তাও তার বদমেজাজি কথা আর আমাদের বাসায় থেকে বের করার জন্য তাকে আমি পছন্দ করিনি। সব সময় আমি একটা যৌথ পরিবারের জন্য হাহাকার করেছি। আমার পরিবার কেন দুজন মানুষ দিয়ে সম্পূর্ণ? আমি চাইতাম আমার দাদা- দাদি, নানা-নানি, কাকা- কাকি, মামা-মামি, খালা-খালু, ফুপা-ফুপি, চাচাতো মামাতো ভাই বোন সবাইকে নিয়ে হেসে খেলে কাটাবো। কিন্তু আমার সেই আসা কখনো পূরণ হয়নি। বাবা মাকে ঘিরেই আমার সব স্বপ্ন ছিলো। তারা ছাড়া আর কোন আপন জন আমি পাইনি। বন্ধু বান্ধবীরা যখন নানা বাড়ি নিয়ে গল্প করতো, আমারো করতে ইচ্ছে করতো কিন্তু আমার যে বলার মতো কিছু ছিলো না। কারণ আমি আমার নানা বাড়ির কাউকে চিনতাম ই না কখনো তাদের দেখি ও নি। আম্মু আব্বু কে দাদা বাড়ি নানা বাড়ি নিয়ে কিছু বললে কখনো উওর দিতো না।
কিন্তু অনেক দিন পর নানা বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে আবার অবজ্ঞা অবহেলা নিয়ে শূন্য হাতে ফিরে এসেছিলাম। তখন বুঝেছি তারা আমাদের পছন্দ করে না। তারপর আর কখনো জিজ্ঞেস করেনি তাদের নিয়ে। আজ চার মাস পর এমন খবর শুনে থমকে গেছি আমি। নানাজনের সাথে তেমন ভালো সম্পর্ক ও তৈরি হয়নি আমার। একদেখায় তাকে আমি বদরাগী ভেবেছি আজ তার মৃত্যুর কথা শুনে আমার বুকের ভেতরটা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে। তার আদর স্নেহ পাওয়ার আগেই তিনি কেন চলে গেলেন। এতো কষ্ট কেন হচ্ছে? তাকে তো ভালো মতো চিনতাম ও না তবুও তার কষ্টে আমি সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। একেই বোধহয় রক্তের টান বলে।
আব্বু কল করে আমাকে এই খবরটাই দিলো। আম্মু আব্বু এখন নানু বাসায় আছে। শেষবারের মতো ও নানাজানের মুখটা দেখতে পারলাম না। বেড়াতে আসার সমস্ত আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। এখন ভাবছি এখানে না এলে নানাজান কে শেষ বারের মত এক নজর দেখতে পেতাম। আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম সবাই ভয় পেয়ে স্যার ম্যাম কে ডেকে আনলো। আমার অবস্থা দেখে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করছে আমি অন্য জগতে থেকে শুধু নিজের ভাবনা ভাবছি আর কাঁদছি। দিন দুনিয়ার খোঁজ নাই।
তুলির ধাক্কায় খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম।
‘ তুলিরে আমার নানাজান আর এই পৃথিবীতে নাই। তার সাথে আমার একটু ভালো সময় কাটানো ও হলো না। শেষ বারের মত তাকে দেখার সুযোগ ও হলো না।’
বলেই ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। সবার বুঝতে আর সমস্যা হলো না। স্যার ম্যাম আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে গেলো। সবাই চলে গেলো। আমাকে তুলি বোতল এগিয়ে দিয়ে পানি খেতে বললো,
‘ পানি খা একটু।’
পানি খেয়ে নিলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছিলো।
‘ কাঁদছিস না আর শান্ত হ। যা হবার হয়ে গেছে। তা নিয়ে কেঁদে কি হবে বল সে তো আর ফিরে আসবে না। এখন তার জন্য দোয়া কর যেন আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করে।’
‘ চাইলেই কি শান্ত হওয়া যায়। আমার বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে চল না একটু খোলা জায়গায় বসি আকাশের নিচে।’
তুলি আমাকে নিয়ে কটেজের বারান্দায় মতো স্থানে নিয়ে এলো। খোলা আকাশ আর নিচে পাহাড়। বসার জন্য চেয়ার পাতা সেখানে এসে বসলো ওরা। টেবিলে হাত ভাঁজ করে থুতনি ঠেকিয়ে বসে আছি আমি বিষন্ন মুখে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে আমার।
আধা ঘন্টার মতো বসে থাকে ওইখানে। তারপর রুমে চলে আসে। তুলি আমার সাথেই ছিলো। রুমের কাছে আসতেই ইহানকে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি তাকাতেই এগিয়ে এসে বলল,
‘ তুমি কান্না করলেই সব কিছু পাল্টে যাবে না। তাই কান্না না করে নানার জন্য প্রার্থনা করো। এখন মাথা ঠান্ডা করে ঘুমিয়ে পরো। কাল তো ফিরেই যাব। একটা রাতই আর। রাতে আর জেগে থেকে শরীর অসুস্থ করো না।’
আমি জল ভরা চোখে ইহানের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ইহান কথা বলা শেষ করে আচমকা আমার চোখের জল মুছে দিলো। তারপর বড় বড় পা ফেলে আমাকে পাস করে চলে গেলো। আমি কিছু ভাবলাম না। অন্য সময় হলে চমকাতাম বা অন্য রকম এক অনুভূতির সৃষ্টি করতাম কিন্তু এখন আমার ধ্যান ধারণা অন্য জায়গায় তাই তো রোবট নাই বিছানায় শুয়ে পরলাম। আব্বুর কল এলো আবার নিজের খেয়াল রাখতে বললো। আমি বললাম,
‘ আব্বু আম্মুকে দেখে রেখো। আমি কাল বাসায় আসবো তারপর নানু বাসায় যাব। তোমাদের খুব মিস করছি। নানা জানের জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।’
‘ এজন্য তোমাকে জানাতে চাইনি। কান্না কাটি করে নিজেকে অসুস্থ করে তোল না আবার।’
‘ ওকে আব্বু। ‘
পরদিন
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ব্রেক ফাস্ট করতে এসে ও ঠিক মতো খেতে পারি না। কোন রকম একটু খেয়ে রুমে এসে শুয়ে পরি। রাত জেগে কান্নার ফলে মাথাটা ভার হয়ে আসছে। তুলি এসে জানায় এখন সাজেকের সব চেয়ে উঁচু কংলাক পাহাড়ে যাবে তাই রেডি হতে বলে। আমার এখন আর বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছা নাই। আমার জন্য তো আর সবাই তাদের আনন্দ মাটি করতে পারে না। তাই আমি ম্যামের কাছে এসে বলি,
‘ ম্যাম আমার ভালো লাগছে না। আমি কোথাও যাব না। আপনারা যান আমি রুমেই থাকতে চাই।’
ম্যাম আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি কিন্তু এভাবে একা তোমাকে রেখে কি করে যাই বলো।’
‘ আপনারা আমার জন্য চিন্তা করবেন না। আমি কোথাও যাব না। রুমেই থাকবো প্লিজ ম্যাম আমাকে জোর করবে না। আমি গেলেও মন থেকে আনন্দ করতে পারবো না। বিষন্ন মন নিয়ে কোথাও যেতে চাই না।’
ম্যাম কিছু ভেবে বললো,’ আচ্ছা ঠিক আছে। জোর করছি না। কিন্তু নিজের খেয়াল রাখবে। কোথাও একা চলে যেও না। দুপুরের পরই চলে আসবো আমরা।টেক কেয়ার ফর ইউ!’
‘ থ্যাংকস ম্যাম।’
ম্যাম আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
রুমে এসে দেখি তুলি রেডি হয়ে নিয়েছে। আমি পা খাটে তুলে বসে আছি দেখে ও আমাকে বলল,
‘ রেডি না হয়ে বসে আছিস কেন?’
‘ আমি যাব না ম্যামকে বলে এসেছি।’
‘ যাবি না কেন? দেখ ওই জন্য না করিস না প্রতিদিন কি আমরা এখানে আসবো বল। গেলে তোর মনটাই ভালো হয়ে যাবে।’
‘ আমি যাব না তোরা যা।’
অনেক জোরাজুরি করেও রাজি করাতে না পেরে বললো। তাহলে আমিও যাব না।তোকে একা রেখে।
আমি জোর করে ওকে পাঠিয়ে দিলাম। আমার জন্য ও কেন আনন্দ মাটি করবে। আমি বেলকনিতে এসে বসে রইলাম। গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ওদের যাওয়া দেখছি।সবাই চলে গেলো। আমি একবার আম্মুর সাথে কথা বললাম। তারপর দূরের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। দশ মিনিটের মতো পার হতেই ইহানের দেখা মিললো।
‘ উঠো।’
আমি কপাল কুঁচকে তার দিকে বললাম, ‘ আপনি এখানে কি করছেন? সবাই না চলে গেলো!’
‘ তারাতাড়ি উঠো সবাই চলে যাওয়ায় আগে বের হতে হবে।’
‘ আরে কি সব বলছেন? আমি কোথাও যাব না ম্যামের থেকে পারমিশন নিয়েছি। আপনি তারাতাড়ি যান।”
বিরক্তকর নিঃশ্বাস ফেলে ইহান আমাকে টেনে দাঁড় করালো।আমার আমার হাত শক্ত করে ধরেই বাইরে নিয়ে এলো।
‘ আরে করছেন কি আমি যাব না বললাম তো। তাও জোর করে আমাকে নিয়ে কেন যাচ্ছে। উফ হাত ছাড়ুন আমার।’
ইহান আমার কথার তোয়াক্কা করলো না। আমাকে টেনে বাইরে নিয়ে এলো। রিসোর্ট থেকে অনেকটা দূরে এসে হাত ছাড়লো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ড্রেস তো ঠিকি আছে।’
বলেই আমার মুখের দিকে তাকালো। আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমার গায়ে মেরুন স্কার্ট আর সাদা ফতুয়া ও গলায় পেঁচিয়ে রাখা সাদা স্কাপ। চুলটাও বাধা হয়নি এই অবস্থা উনি আমাকে তুলে আনলো। রাগ হজম হচ্ছে না।
‘ আপনার মতো শয়তান লোক তো আমি কখনো দেখিনি। এমন করে জবরদস্তি করে আমাকে তুলে আনলেন। আমি যাব না বলেছি তাও জোর কেন করলে? বলেন?’
আমার কথার উত্তর না দিয়ে ইহান আমার পেছনে চলে গেলো আর আমার মাথার এলোমেলো চুল গুলোতে হাত দিলো আমি ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ালাম।
কি বেহায়া লোকটা বলছি যাব না। তাও আমাকে জোর করলো এখন কথার উত্তর দিচ্ছে না উল্টা চুলে হাত দিচ্ছে।
‘ এই আপনি করছেন কি হ্যা আমার চুলে হাত দিচ্ছেন কেন?’
ইহান পকেট থেকে একটা ছোট চিরুনি বের করে আমাকে শক্ত করে ধরে চুল আছড়ে দিতে লাগলো। আল্লাহ এই ছেলে পাগল হলো নাকি আমি নিজেই নিজের চুল আঁচড়ে নিলাম চিরুনি নিজের হাতে নিয়ে। তা দেখে ইহান বাঁকা হাসলো। চুল আঁচড়ানো হলে বাঁধতে গেলে বললো,
‘ চিরুনি ছিলো তাই হেল্প করলাম এখন রাবার বা কাটা কিছুই দিতে পারবো না এসব আমার কাছে নাই। যেমন আছে এই ভাবেই চলো।
‘ আপনাকে আমার আজ এতো অসহ্য লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।’
এখন না গিয়ে উপায় ও নাই তাই ইহানের সাথে যেতে লাগলাম।
#চলবে…..
#চলবে…..