এক চিলতে রোদ ২ পর্ব -২১+২২

#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila

১৭.

জোরে ধাক্কা খেয়ে সামনে ঝুঁকে পরলাম। ফল স্বরূপ সামনে সিটে ধপাস করে বারি খেলাম কপালে। সাথে সাথে আমার ঘুম ছুটে গেলো। আমি কপাল ঠলতে ঠলতে চোখ মেলে তাকালাম। ভালো জোরে আঘাত পেয়েছি। কপাল কুঁচকে সামনে তাকালাম। আমি গাড়িতেই আছি। ইহানের সাথে রাগ করে কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম খেয়াল নেই। পাশ থেকে হো হো করে হাসির আওয়াজ আসতেই পাশে তাকিয়ে দেখি ইহান দাঁত কেলিয়ে হাসছে। আমি চোখ মুখ কঠিন করে তাকালাম। খচ্চর ছেলে একটা। আমি এভাবে ব্যথা পেলাম আর উনি হা হা করে হাসছে। মজা নিচ্ছে। দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,

‘ হাসছেন কেন?’

আমার কথা শুনে ইহান হাসির গতি বাড়িয়ে দিলো। তার এমন অসভ্যের মত হাসি দেখে আমার সারা শরীর জ্বলে উঠলো। আশ পাশের সিটের কয়েকজন উঁকি মেরে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল বোকার মতো।

‘ অন্যের আঘাতে দেখে সবসময় নিজের মুখে শয়তানের মতো হাসি ফুটিয়ে রাখে শয়তান একটা।’ বিরবির করে বললাম।

ইহান হাসি থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘ কি বললে বিরবির করে?’

‘ কিছু না।’ বলেই ভেংচি কেটে ঘাড় বাঁকিয়ে নিলাম। ঘুমের ঘোর এখনো কাটেনি।আমি আমার কাঁধের ব্যাগ থেকে বোতল বের করে চোখে মুখে পানি দিলাম জানালা দিয়ে। টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে নিলাম। হাঁটুর উপর বোতল ছিলো ব্যাগে ঢোকাতে যাব তার আগেই টান দিয়ে ইহান সেটা নিয়ে নিলো। আমি কিছু বলার আগেই বোতলে মুখ লাগিয়ে পানি খেতে লাগলো। আমি চোখ বড় করে তাকিয়ে আছি। আমিও একটু আগে মুখ লাগিয়ে খেয়েছি এখন ইহান। কি অবস্থা! রাগ লাগলো আমার আমি আবার কিভাবে পানি খাবো উনি মুখ কেনো লাগালো। রেগে হাত বাড়িয়ে বোতল নিয়ে নিলাম। আর গমগম গলায় বলে উঠলাম,

‘ আপনি কোন সাহসে আমার বোতলে মুখ লাগালেন! এটা কেমন ধরনের ভদ্রতা। এখন আমি কি ভাবে খাব এই পানি?’

‘ কেনো আমার মুখে কি আবর্জনা আছে নাকি যে মুখ লাগালে খাওয়া যাবে না? আমি মুখ না লাগিয়ে খেতে পারি না। না হলে আমার কোন ইন্টারেস্ট ছিলো না তোমার বোতলে মুখ লাগানোর।’

‘ একদম ভাব নিয়ে কথা বলবেন না। আপনার ইচ্ছা ছিলো না মানে কি আমি কি আপনাকে জোর করে দিয়েছি। আমার বোতল আমার কাছে পারমিশন না নিয়েই খেয়ে ফেললাম। আর এতোই যেহেতু মুখ লাগিয়ে খান তাহলে নিজে পানি নিয়ে আসতে পারে না। আমার টা নিলেন কেন?’

‘ সামান্য পানির জন্য এখন তুমি আমার সাথে ঝগড়া করবে? ছিঃ মেয়েরা এতো কৃপণ হয় জানা ছিলো না। যাও তোমাকে আমি ডাবল ওয়াটার কিনে দেবো।’

‘ দরকার নাই। অসহ্য কর একটা লোক।’ বিরক্তিকর মুখে বলে উঠলাম। ইহান কিছু বলবে সামনে থেকে কে যেনো ডেকে উঠলো চলে গেলো ইহান আমি উঁচু হয়ে দেখলাম তার ফ্রেন্ডের কাছে গিয়েছে আর কি যেনো বলে হাসাহাসি করছে।
রিসোর্টে গিয়ে পৌঁছালাম। ইহান আর আসেনি সিটে আমি শান্তিতে একা বসে ছিলাম। রিসোর্টের নাম মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট। দল বেঁধে সবাই ভেতরে ঢুকলাম। আমি খোঁজে খোঁজে তুলির হাত জাপ্টে ধরলাম। একেক রুমে পাঁচ ছয়জন করে থাকতে দিয়েছে। এক বেডে আমি আর তুলি নিলাম। বাকি গুলোতে ও আছে। এসেই বাথরুমে থেকে হালকা ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

তুলি এসে আমার উপর পরলো আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম উপর থেকে।

‘ আমার উপরে পরছিস কেন?’

তুলি এগিয়ে এসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ইহান ভাই কি করলে রে তোকে নিয়ে গিয়ে?’

আমি ভ্রু- কুটি করে বললাম, ‘ হোয়াট কি করবে কি সব বলছিস?’

‘ তোরা একসাথে বসেছিলি তাই না?’ ঠোঁট টিপে হেসে।

‘ হুম। তো কি হয়েছে?’

‘ কিছুনা। ভাই আমাকে তখন কি বলেছে জানিস?’

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম, ‘কি বলেছে?’

তুলি বললো, ‘ তুলি থ্যাঙ্ক ইউ। আমার ঊষার সাথে কিছু প্রাইভেট দরকার তাই ওকে ওই গাড়িতে নিলাম। মিথ্যে কথাতে সায় দেওয়ার ধন্যবাদ। তুই তখন মুক্তা আপুর সাথে চলে গেছিলি আমাকে তখন ভাইয়া এই কথা বলেছে। জিজ্ঞেস করেছি কি এসব তখন।’

‘ ওওও এতে কি সমস্যা? তুই এমন করে তাকিয়ে হাসছিস কেন তাহলে?’

‘ কি জানি আমার না খালি হাসি পাচ্ছে দোস্ত রাগ করিস না।’

‘ সব পাগল ছাগল আমার কাছে কেন আল্লাহ মাবুদ।’

বলেই পাশ ফিরে ঘুমিয়ে গেলাম। কাঁচা ঘুমে ষাঁড়ের মত চেঁচিয়ে টেনে তুললো তুলি। রাগে দুঃখে এখন আমার নিজের চুল টানতে ইচ্ছে করছে। সারা রাস্তা ঘুমাতে পারিনি। এতোটা জার্নি করে খুব ক্লান্ত আমি ঘুমাতে চাই কিন্তু না এই তুলির বাচ্চা আবার আমাকে টেনে তুললো কেন?

‘ সমস্যা কি তোর বলতো? এমন করছিস কেন? আমাকে কি একটু শান্তি তে ঘুমাতেও দিবি না। পার রাস্তা তো একা একা আড়ামসে ঘুমিয়ে এসেছিস আর আমি ওই হনুমান টার সাথে কতো কষ্ট এসেছি জানিস?’

‘ আরে ধুর আমার সাথে চিল্লাচিল্লি করছিস কেন? তারাতাড়ি উঠ। খাবি না খেতে ডেকে গেছে সবাই চলে ও গেছে। আমি আর তুই আছি খালি উঠ চল’

‘ আমি খাব না এখন আমার ঘুম পাচ্ছে।’

‘ দেখ ঊষা এখন এমন করিস না। পরে কিন্তু খিদে লাগলেও না খেয়ে থাকতে হবে। সারা রাত অবশ্যই না খেয়ে থাকতে পারবি না। তাই দয়া করে ঝামেলা না করে চল ডিনার করে আসি।’

‘ ধ্যাত।’

বিরক্তিকর মুখে উঠে চোখে মুখে পানি দিয়ে চুল আঁচড়ে ওরনা গলায় পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলাম। সবাই খেতে বসে গেছে আমাদের ই দেরি হয়ে গেলো। ম্যাম কে সরি বলে খাবার খেতে বসে গেলাম। ভালোই খিদে পেয়েছিলো পেট পুরে খেয়ে উঠে দাঁড়ালাম। সবাই আগেই শুরু করেছিল তাই আগেই চলে গেছে আমরা কয়েকজন আছি রেস্টুরেন্টে। আম্মুকে কল ও করিনি রিংটোন বাজতেই কানে ধরে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে এলাম। ইহান ও তার বন্ধুদের আমি দেখতে পেলাম তখন দল বেঁধে এগিয়ে আসছে আমাকে ক্রস করে চলে গেলো। আমি কথা বলতে বলতে ইহানের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ওরা চলে যেতেই চোখ সরিয়ে নিলাম। ফোন কেটে দিতেই হাতে টান পরলো ইহান আমার হাত টেনে ধরছে।

‘ আরে কি করছেন ছাড়ুন আমার হাত।’ হাত ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলাম। সবাই মিলে যাচ্ছে কোথায় আর আমাকেই বা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আল্লাহ এ কোন পাগলের পাল্লায় পরলাম। নিশ্চিত উনার মাথায় সমস্যা আছে।
বাগানে এসে বাকিরা গোল হয়ে বসেছে আমাকে ও তাদের সাথে নিয়ে গিয়ে বসালো ইহান নিজেও বসে পরলো।

আমি রেগেমেগে উঠে দাঁড়াতে যাব। ইহান আবার টান মেরে ঘাসের উপর বসিয়ে দিল।

ইহান আমার দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘ উঠছো কেন বসো!’

‘ না আমি এখানে বসবো কেন? ছাড়ুন দেখি আমার হাত। এমন অসভ্যের মতো আমাকে টেনে আনলেন কেন আপনি?’ ইহানের মতো আমিও ফিসফিস করে বললাম।

ইহান কিছু বলতে যাব তার আগেই ফারিয়ার ককর্শ আওয়াজ কানে এলো।‌দুজনে তার দিকে তাকালাম,

‘ এই তোরা দুজন কি গুজুর ফুজুর করছিস? আর এমন চিপকে বলেছিস কেন দুজন? ইহান ওই মেয়ে এখানে কি করছে?’

‘ আমি নিয়ে এসেছে কেন কোন প্রবলেম?’

‘ হুম প্রবলেম তো আছে। ওই মেয়ে আমাদের ফ্রেন্ডস আড্ডাতে কেন এসেছে বল?’

‘ বললাম ই তো আমি এনেছি।’

‘ তুই ওকে কেন আনবি?’

‘ তো কে আনবে?’

‘ আমি তোর কোন কথা বুঝতে পারছি না। ও খানে কেন?’

‘ আমাদের সাথে আড্ডা দিবে তাই। আর‌ আমি যেখানে থাকবে ঊষা তো সেখানেই থাকবে!’

‘ মানেএএএ

আমি কাচুমাচু মুখ করে তাকিয়ে আছি দুজনের দিকে।ওরা কথায় বিভোর এই সুযোগে আমি উঠে এক দৌড়ে ভেতরে চলে এলাম।

#চলবে……#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila
(কপি করা নিষেধ)

২২.

লিনা এসেছে দুইদিন হলো। আজ আমি, লিনা, তুলি
আর রিমা বেড়াতে যাব। পরিক্ষার পর এক সপ্তাহ হয়ে গেছে ওদের সাথেও দেখা হয় না‌। আর লিনা ও আসার পর থেকে বের হ‌ওয়ার জন্য পাগল প্রায় হয়ে গেছে। তুষারের সাথে দেখা করবে। তুষার হলো লিনার সেই ফেসবুক বয়ফ্রেন্ড। একা তো বের হতেই দেবে না আর আমি ওর সাথে একা কোন ছেলের সাথে দেখা করতে যাব ভাবতে কেমন লাগে। তাই তুলি আর রিমাকেও ফোন করে বলেছি চলে আয় আজ আমরা বেড়াতে যাব।
রিমা আর তুলি আসতেই চারজন বেরিয়ে পরলাম। আজ লিনা খুব সেজেছে। গায়ের রং শ্যামলা হলেও দেখতে খুব মিষ্টি। ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক চোখে মোটা করে কাজল পরেছে। গায়ে বাসন্তী রঙের গাউন ওরনা একপাশে ফেলে রেখে চুল খোলা রেখেছে। প্রথম দর্শন তার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে তাই ও সকাল থেকে সাজুগুজু করেছে। ‘আমাকে দশ বারের মত জিজ্ঞেস করেছে ওকে সুন্দর লাগছে কি না? সবকিছু ঠিক আছে কিনা?’
তুলি দের সাথে লিনাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। লিনা খুব মিশুক একটা মেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই তুলি আর রিমার সাথে মিশে গেল।

দুই রিকশা করে রেস্টুরেন্টের সামনে এসে নামলাম। নেমেই লিনা আমার হাত খামচে ধরলো,

‘ আমার খুব নার্ভাস লাগছে রে ঊষা।’

‘ কেন এমন ছটফট করছিস কেন? চল তাড়াতাড়ি।’
বলেই ওর হাত ধরে ভেতরে হাঁটা ধরলাম।

লিনা আমাকে টেনে থামিয়ে বললো, ‘ আমার কেমন জানি লাগছে রে। এখন‌ কি করবো।’

বলেই অসহায় মুখে তাকালো। তুলিরা নেমেই আমাদের কাছে এসে বলল, ‘ কিরে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ভেতরে চল।’

‘ আচ্ছা দেখো তো সব ঠিক আছে কিনা।’ লিনা চুল ঠিক করতে করতে বললো। তা দেখে রিমা বললো,

‘ হায়রে কতো ভাব রে। এই শোন তোরে পছন্দ হ‌ওয়ার হ‌ইলে এমনেই হবে। এতো স্টাইল করার দরকার নাই। চল তো শরমে ও যেন মরে যাচ্ছে এতোক্ষণ খুব পটর পটর করছিলি এখন এমন মিইয়ে যাচ্ছিস কেনো?’

রিমাদের সাথে তুই করেই কথা বলা শুরু করেছে।

রিমা লিনাকে টেনে ভেতরে ঢুকলো। আমি আর তুলিও পেছনে পেছনে এলাম।
তুষার বসে আছে একটা সিন দখল করে। লাল পাঞ্জাবি পরা ক্লিন শেভ করা গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। তাল গাছের মতো লম্বা আমাদের দেখে দাড়াতেই বুঝতে পারলাম। দাঁত কেলিয়ে হাসলো আমাদের দেখে। লিনা লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। ছেলেটাও কেমন লজ্জা পেয়ে চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে। এদিকে লিনা ও সেম নতুন বর ব‌উ যেন!! রিমা সব চেয়ে চঞ্চল মেয়ে আমাদের মধ্যে ও বসেই একের এক কথা বলেই যাচ্ছে। ছেলেটার ইন্টারভিউ নিচ্ছে তা দেখে তুলিও কথা বলছে‌। আমি শুধু হা করে ওদের কান্ড কারখানা দেখছি।
ছেলেটার বাসা বনানী। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার কাপড়ের দোকানে বসে।
লিনা কে ছেলেটা কেমন আছো বললো। লিনা লাজুক মুখে বললো,’ ভালো। আপনি?’

ছেলেটা এতোক্ষণ শত লজ্জায় থাকলো এখন বলে উঠলো, ‘ ফোনে তো তুমি করে কথা বলতে এখন আপনি বলছো কেন?’

লিনা মিনমিন করতে‌ লাগলো তা দেখে রিমা বললো, ‘ এই তুই মিনমিন করছিস কেন? এতো লজ্জা তাহলে রুমে দরজা আটকে বসে থাকতি। দেখা করতে এলি কেন রে লজ্জা বতী লতিকা।’

রিমার কথায় এক দফা হাসিল রোল পরলো। রিমা এত্তো এত্তো খাবার অডার করে টেবিল ভরে ফেলেছে। লিনা আস্তে আস্তে অনেকটা স্বাভাবিক হলো। খাবার খাওয়া হলো তুষার বিল মিটিয়ে তারা দেখিয়ে চলে গেলো। তার আগে একটা কল‌ এসেছিলো। যাওয়ার আগে লিনাকে ইশারায় কি যেন বললো।

এবার আমরা চারজন ই বসে আইসক্রিম খাচ্ছি আর কথা বলছি। তখন কোথা থেকে ইহানের আগমন ঘটলো। কোন কিছু বুঝার আগেই আমার পাশে এসে বসে পরলো। আর সবার দিকে তাকিয়ে হাই দিলো।

রিমা বললো, ‘ ভাই তুমি এখানে কি করে?’

‘ এদিকেই এসেছিলাম। তোদের দেখলাম তাই এলাম।”

‘ ওহ ভালো করেছো।’

লিনা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ইহানের দিকে। আমি মুচড়া মুচরি করছি তা দেখে লিনা বললো,

‘ কি হয়েছে ঊষা এমন করছিস কেন?’

আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই ইহান লিনাকে বললো, ‘ হাই, তোমাকে তো চিনলাম না!’

লিনা বললো, আমি লিনা ঊষার মামাতো বোন।

ইহান আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে আমি জোর করেও হাত সরাতে পারলাম না। তাই বললাম, ‘পাগল নাকি আপনি এখানে আমার পাশে চপকে বসলেন কেন? আর আমার হাত ধরেছেন কেন ছারুন আমার হাত। ‘

ইহান হাত ছাড়লো আমি রাগী চোখে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। আইসক্রিম মুখে দিতে যাব ফট করা ইহান আমার আইসক্রিম খাওয়া শুরু করলো। আমি চিৎকার করে উঠলাম,

‘ এটা আপনি কি করলেন? আমার খাওয়া আইসক্রিম খেয়ে নিলেন ছি!’

রিমা, তুলি লিনা হা করে তাকিয়ে আছে।আমার লাগে দুঃখে এখন কাঁদতে ইচ্ছে করছে।আমার চিৎকার এ রেস্টুরেন্টের অনেকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছে।

ইহান ততক্ষণে বাই বলে উঠে দাড়ালো আর আমার দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললো,’ একটু টেস্ট করলাম মাত্র। তার জন্য এমন চিৎকার। উফফ কানটা গেলো।’

আমি রিমার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘দেখলি তোর ভাইটা কেমন খবিশের খবিশ। কিভাবে আমার আইসক্রিমটা খেলো। এই দেখ লাল হয়ে গেছে কেমন শক্ত করে হাত ধরেছিল।’

রিমা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে। লিনা তুলিও আমি কটমট করে ইহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। অসহায় মুখে আইসক্রিমের দিকে তাকালাম।

.
বাসায় আসার পর থেকেই আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে লিনা। কানের কাছে এক কথা ঘ্যানঘ্যান করছে। ইহান কি আমার বয়ফ্রেন্ড। আর এই এতো বড় কথাটা আমি কেন ওর থেকে লুকালাম।

‘ ওই কিউট হিরোর মতো দেখতে ছেলেটা তোর বয়ফ্রেন্ড তাই না। এই কথাটা তুই আমার থেকে কেন লুকালি বল। আমি তো প্রথম দিনেই তোকে আমার সব জানিয়েছি আর তুই সব কিছু আড়াল করে গেলি। সেদিন যখন বলেছিলাম তোর বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা, তুই কি বলেছিলি! বলেছিলি তোর এসব বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড নাই। ছেলেদের সাথে কথা বলা দূরে থাক কাছে ও ঘেঁষিস না। এখন কি হলো। খুব তো হাত ধরলো তোর খাওয়া আইসক্রিম অবধি খেয়ে গেলো। এই ভাবে আমাকে পর করে দিলি।’

রাগে এখন হয় নিজের মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে নাহলে এই ন্যাকা টার। সব কিছু ইহানের জন্য হয়েছে। এখন এই মাথা মোটা টাও আমার কথা বিশ্বাস করছে না।কতো বার বললাম ও আমার বয়ফ্রেন্ড না ও আমার চরম শত্রু। কিন্তু উনি আমার কথা বিশ্বাস করছে না উল্টা এখন প্রেম কি ভাবে হলো, প্রথম দেখা কোথায়? এসব ফালতু কথা বলছে।

‘ তুই যদি এই নিয়ে আমাকে আর একটু বিরক্ত করিস। তাহলে এই মুহূর্তে আমি মামুকে কল করে তোর ওই তুষাপাতের কথা বলে দেব মাইন্ড ইট।’

এই একটা‌ কথাই ছিলো লিনার মুখ বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট।
কয়েকদিন পর আমি, লিনা আর আবির ভাইয়া বিকেলে বেরিয়েছি ফুসকা খেতে। হেঁটে ফুসকা খেতে চলে এলাম। আবির ভাইয়া এসেছে সকালে ঢাকায় কি একটা কাজে এসেছিলো তাই আমাদের বাসায় ও এসেছে।
তিন প্লেট ফুসকা হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলাম। আমার খাওয়া সবার আগে হয়ে গেছে। লিনার আর ভাইয়ার রয়েছে এবার ওদের টায় আমি ভাগ বসালাম। ভাইয়া তাই নিজেই আমাকে খাইতে দিতে লাগলো তার প্লেট থেকে। ভাইয়ার একটা তোতলা গার্লফ্রেন্ড ছিলো তার কথা বলছে লিনা। আর সেসব শুনে তিনজন‌ই হাসাহাসি করছি।

ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ডের নাম ছিলো হুমাইরা। মেয়েকে ভাইয়া ভার্সিটিতে ভর্তি হ‌ওয়ার পর পছন্দ করে দেখতে মারাত্মক সুন্দর ছিলো। ভাইয়াদের সেম ব্যাস ছিলো। ডিপার্টমেন্ট আলাদা। মেয়েটাকে দূর থেকে দেখেই খুব পছন্দ করে ফেলে। তারপর একদিন হুট করেই প্রপোজ করে‌ বসে। মেয়েটা হ্যা না কিছু না বলে নাম্বার দিয়ে চলে যায়। তিনমাস দূর চেখে দেখতে দেখতে মেয়ে টাকে অনেকটাই পছন্দ করে ফেলেছিলো সাথে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। তারপর এই ভাবে মেয়েটার নাম্বার পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় কিন্তু ফোন করে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম।

কথা শুনে তার মাথা ঘুরে যায়। প্রথমদিন সালাম দিতেই 10 মিনিট কভার করে ফেলেছিল। এমন তোতলানো কন্ঠ শুনে আবির ভাইয়া ফোন কেটে বলে মাইয়া তো খুব পাজি কোন কার কোন তোতলা কন্ঠের বেটির নাম্বার দিসে আমারে। পরের দিন মুখোমুখি ধরে মেয়েটাকে কঠিন স্বরে বলে,

‘এই মেয়ে তুমি আমাকে কার নাম্বার দিয়েছো? আমি তোমার নাম্বার চাইছি! আমি তোমাকে পছন্দ করেছি। প্রপোজ করেছি আর। তুমি কোন তোতলা বেটির নাম্বার দিয়েছিলা আমাকে হ্যাঁ।তোমার তো সাহস কম না তোমার আমাকে পছন্দ না। তাহলে আমাকে না করে দিতা এমন ঢং করার কী আছে অসভ্য মেয়ে।’

আবির ভাইয়া রেগে চেচিয়ে উঠলো। আবির ভাইয়ার কথা শুনে তো মেয়েটা চোখ মুখ লাল হয়ে ওঠে আর ঠাস করে গালের মধ্যে একটা থাপ্পড় দিয়ে বসে। আবির ভাইয়া গালে হাত দিয়ে হতভম্ব মুখ করে মেয়েটার দিকে তাকায়। তারপর মেয়েটা ফোনের কন্ঠে তোতলাতে তোতলাতে আবির ভাইয়াকে বলে,

‘ কিইই ববলললি তুওওই আমি তোতততলা বেবেবেটি?’

আবীর ভাইয়া কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারে এই মাইয়ার কন্ঠ এই রকম। ভয়ে এক দৌড়ে মাঠের ওপারে চলে যায়‌। আর জীবনে মেয়েটার সাথে কথা দূরে থেকে আশেপাশে দেখলেও মুখ লুকিয়ে পালায়।’
তিনজন গলা ফাটিয়ে হাঁটতে লাগলাম আর এই হাসি আমার কাল হলো। আমার কাশি উঠে গেলো। চোখ মুখ লাল হয়ে উঠলো চোখে ও পানি চলে এসেছে আমার। ভাইয়া ও লিনা ভয় পেয়ে গেলো।
ফুসকা ওয়ালার কাছে পানি নাই। কিছুটা দূরে চায়ের দোকান আছে ভাইয়া দৌড়ে চলে গেলো। লিনা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমার গলা ব্যাথা করছে কাঁশতে কাঁশতে। এতো হাসা উচিত হয়নি। ফুসকা মুখে দিয়ে হেসেছি তাই এমন বাজে পরিস্থিতে পরতে হলো।

হঠাৎ কেউ পানির বোতল এগিয়ে দিলো। আমি কোন দিকে না তাকিয়ে ঢকঢক করে অনেকখানি পানি খেয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। এখনো কাশি আসছে কিন্তু কম আগের থেকে। মাথায় কারো হাতের স্পর্শে চোখ তুলে তাকিয়ে চমকে উঠলাম‌। ইহান আমার মাথার হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর পলক হীন চোখে তাকিয়ে আছে‌ আমার মুখের দিকে। তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here