এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব -১০

#এক_প্রহর_ভালোবাসার
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#দশম_পর্ব

সানা বেক্কলের মতো বসে আছে। সাফোয়ান সানার টক দিয়ে ফের দুটো ফুচকা খেয়ে চ্যালেঞ্জ জিতে গেলো। সানা এখোনো কিছুক্ষণ আগে ঘটা কাহিনী নিয়েই ভাবছে। আগেরবার যা ভেবেছিলো তখন হয় নাই, এবার যখন ভেবেছিলো কিছু করবেন না আর তখন ই।

-বোকারানী এভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেনো?।

– আপনি আপনি একটা অসভ্য।

– বাহ এর আগে নিজে যখন বলেছিলে তখন নিজেকে অসভ্য লাগে নি আর আজ যখন আমি করলাম তখন আমি অসভ্য হয়ে গেলাম।যাইহোক আমি কিন্তু চ্যালেঞ্জ জিতে গেছি।

– কিসের চ্যালেঞ্জ কবে কার চ্যালেঞ্জ?

– কি পাল্টিবাজ তুমি সানা?

সানা শেষে কিনা পালটি খেয়ে গেলো হেরে। সাফোয়ান ভাবতেও পারেনাই যে সানা এভাবে পালটি খেয়ে যাবে। সানা অবাক হওয়ার ভান করে তাকিয়ে আছে সাফোয়ানের দিকে। সানা জানেই না সাফোয়ান কি সম্পর্কে কথা বলছে।

– শুনেন আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমালাম।

– এখন যদি তুমি ঘুমাও তোমার জন্য আনা সারপ্রাইজ তুমি কিভাবে পাবে?

– কি সারপ্রাইজ।

– আচ্ছা চলো তোমাকে আমি তোমার সারপ্রাইজ দেখিয়ে নিয়ে আসি।

সানার এক হাত নিজের হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে নিলো সাফোয়ান। নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আরেক রুমের দিকে হাটা দিলো সে। রুমের দরজা খুলতেই তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে সানা। নিজের চোখ কে বিশ্বাস হচ্ছে না এটা সত্যি নাকি। পুরো রুম কে সানার পছন্দের রঁঙের দ্বারা সাজানো হয়েছে। ডিপ পারপেল রঙ সানার অতি প্রিয় একটি রঙ। খাটের মাঝখানে রাখা আছে সেই দিনে মলে পছন্দ করা বড় টেডিবিয়ার টা। সাফোয়ানের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে লাফিয়ে উঠে খাটে। আর টেডি বিয়ারের উপরে সুয়ে পরে। টেডি বিয়ার টা কে জরিয়ে ধরে আছে সানা।খুশিতে চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে আছে তার।সাফোয়ানের খুব ভালো লাগছে মেয়েটাকে অনেক দিন পর খুশি করতে পারছে।

এরপর শুরু হলো তাদের জিবন যাত্রা, স্বাভাবিক নিয়মেই সাফোয়ান আর সানার জিবন চলছে। সানা নিজের পড়ালেখা নিয়ে বিজি আর সাফোয়ান নিজের মমন্ত্রীসভা নিয়ে। দেখতে দেখতে যে চোখের পলকে ৩ টে বছর কিভাবে কেটে গেলো সানা টের পেলোনা।তার মন্ত্রীমশাই এর সাথে আজ তার কত দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কেউ প্রয়োজন ব্যাতিত কোন কথা বলেনা।

টেবিলে বসে আগের কথা ভেবে যাচ্ছিলো সানা একমনে তখন দরজায় টোকা পরলো।

– রেহানা আপা তুমি যাও আমি আসছি।

-তাড়াতাড়ি আসো সানা সবাই চলে এসেছে।তোমার জন্য সবাই নিচে অপেক্ষা করে আছে।বড় ম্যাডাম কেমন জানোই তো বোন।

সবাই আসার কথা শুনেও সানার মধ্যে আর সেই আগের মতো এক্সাইটমেন্ট কাজ করে না। ১৫ বছরের সে কিশোরী আজ অষ্টাদশীতে পা দিয়েছে। সময়ের সাথে সাথে সানাও অনেক বুঝদার হয়ে উঠেছে। সেই চঞ্চল সানা যেনো কবে কোথায় হারিয়ে গেছে।

– তুমি গিয়ে সবাইকে খেতে দাও আমি আসছি আপু।

– তুমি জানোই তো তোমাকে সব পরিবেশন করে দিতে হবে নাহলে কেউ খাবেনা আর তোমাকেই কথা শুনাবে।

– তুমি রান্না ঘরে গিয়ে সব রেডি করো আকি ফ্রেশ হয়ে এসে সার্ভ করবো।

সানার কথা শুনে রেহানা রান্নাঘরে চলে গেলো। সানাও নিজের বইখাতা গুছিয়ে টেবিলে রেখে দিলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো সানা।সানা ও সাফোয়ান আলাদা থাকে অনেক আগে থেকে। সানাও নিজের মতো করে থাকে। আগের থেকে অনেকটা মোটা হয়েছে সানা। দেখতে অনেক সুন্দরী হয়েছে সে।আলমারি থেকে স্বর্নের চেইন,দুল,আংটি নাকফুল বের করে পরে নিলো সে। হাতে চুরি পরে আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলো। আজ অনেকদিন পর সে এই জিনিস গুলো পরলো। নাহলে তো সবাই জানে যে সানা সাফোয়ানের কাজিন আর অবিবাহিত। ভাবলেই হাসি পায়,সেই যে ছোটবেলায় খেলা তার পুতুলের ঘর হয়ে আছে সংসার তার। চোখের নিচে একটু কাজল দিয়ে শাড়ির ঘোমটা টেনে বেরিয়ে পরলো সানা। সবাইকে দেখাতে হবে এখন সে একজন আদর্শ পুত্রবধূ।তবে আজও সে শাশুরির মন জয় করতে পারেনি৷ ড্রয়িংরুমে গিয়ে দাড়ালো সানা।সবার উদ্দেশ্যে বললো।

– আসসালামু আলাইকুম,মামা মামি।কেমন আছেন আপনারা?

– ওয়লাইকুমুস সালাম মামনি তুমি কেমন আছো?

– আলহামদুলিল্লাহ মামু।

মামুর কথায় মুচকি হাসি উপহার দিলো সে। এই মামুই তার সব এখন।

– থাক থাক এখন আর ঢং করে আমাদের অবস্থা জানতে হবে না। এখন আসছি আমরা আর মমহারানী আসার সময় হয়েছে এখন। তা এতোক্ষন উপরে কি করছিলে।

শাশুড়ির এইরুও ব্যাবহারে কোনো হেলদোল দেখালো না সানা। মহিলা এমন ই সবসময়।

– পড়তে বসেছিলাম মামি।

-পড়াশুনা করে আর কি হবে,প্রথমেই তোমাকে বলে পাঠিয়েছিলাম আমার ছেলের খেয়াল রাখবে আর কি করলে আম্ব্র বংশের প্রদীপ দুনিয়া দেখার আগেই তাকে মেরে ফেললে।

পুরানো ক্ষতে আঘাত লাগলে সেই আঘাত আবার সক্রিয় হয়ে উঠে৷ সানার চোখ ছলছল করে উঠলো পুরানো স্মৃতি মনে পরতেই। আর কত এভাবে সবাই আঘাত করবে তাকে।

– আহ মম কোন কথা থেকে কোন কথায় যাচ্ছো। যাওতো তোমরক ফ্রেশ হয়ে আসো তাড়াতাড়ি আমার ক্ষুদা পেয়েছে। আর ভাবি ভাইয়া কোথায়?

– তোমার ভাইয়া আর কই থাকবে বলো?

– হ্যাঁ ভাইয়ার তো শুধু কাজ আর কাজ।

– যাও তুমিও ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার দেই টেবিলে।

সানার শাশুড়ি একবার তাত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজেদের জন্য করা বরাদ্দকৃত রুমে ঢুকে গেলো।সবার চলে যাওয়ার পর সানার চোখ থেকে গড়িয়ে পরলো এতোক্ষন ধরে আটকে রাখা বৃষ্টিকণা। বাম হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে সবার খাবার সাজাতে চলে গেলো।

সাফোয়ান আজকে জলদি চলে আসলো মা-বাবার আসার খবর পেয়ে। তারাহুরো করে ঢুকতে গিয়ে সানার সাথে ধাক্কা খেলো। সানাকে দেখেও না দেখার ভান করে সোজা বা-মায়ের রুমের দিকে চলে গেলো। সানাও সেদিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। টেবিলে বসে অপেক্ষা করছে সবার জন্য। সবাই আসার পর সানা সবাইকে খাবার বেরে দিতে লাগলো। যখন যার যেটা লাগছে সে দিচ্ছে। সব খাবার আজকে সানা নিজের হাতে রান্না করছে।

– ভাবি তুমিও আমাদের সাথে খেতে বসো।

– না ও এখন খেতে বসলে আমাদের কে খেতে দিবে ও বরং সবার শেষে বসুক।

লামিয়া সানাকে খেতে বলায় সানার শাশুরি না করলো। সানার এতে খারাপ লাগলো না।

– আমার বাসায় কাজ করার জন্য ই আমি মেইড রেখেছি মম।সানা খেতে বসলে ওরা বেরে দিবে।

– বাহ বেশ ভালোই বউ ভক্ত হয়েছিস দেখছি সাফু?

মায়ের কথায় বিরক্তি প্রকাশ করলো সাফোয়ান। করবেই না কেন সারাদিন পার্লামেন্টের কাজ সামলিয়ে বাসায় এসে কার এসব দেখতে ভালো লাগবে।

– বউভক্ত না মা আমরা সবাই এখন খাচ্ছি ও একা কার সাথে খাবে?

– আমি রেহানা আপার সাথে পরে খাবো আপ্নারা খেয়ে নিন।

এতোদিন সানা খেয়েছে কি না সেই খোজ নেওয়ার কেউ ছিলো না আজকে এতো দরদ কেউ দেখাতে বলে নাই। মনেমনে আওরাচ্ছে সানা একা দাড়িয়ে। সবাই খাওয়া শেষ করে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলো। টেবিলের সব এটো থালাবাসন রেহানা আর সানা মিলে গুছিয়ে নিলো। রেহানা আর সানা মিলে খেতে বসলো একসাথে।

– আর কত দিন এভাবে চলবে সানা, কবে নিজেদের মধ্যে সব ঠিক করবে তোমরা? কতোটা দূরত্ব ততৈরি হয়েছে তোমাদের মাঝে। তোমাদের এভাবে দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না সানা।

– বাদ দেও আপু কিছু কিছু জিনিস এভাবে ছেড়ে দেও আমার কপালে যা আছে হবে। আল্লাহ যা ভেবে রেখেছেন তা হবে আমার সাথে।

সানা নিজের প্লেট নিয়ে উঠে চলে গেলো বেসিনে৷ ধুতে নিবে তখ৷ রেহানা বললো সে করে নিবে সব সানাকে করতে হবে না। সানাও ড্রয়িংরুমে গিয়ে দাড়ালো। সেখানে কথা হচ্ছে সাইফ আসা নিয়ে। কতগুলো বছরপর ছেলে দেশে ফিরবে তা নিয়ে অনেক এক্সাইটেড সাফোয়ানের মা৷

– আমার ছেলের জন সাফোয়ানের অপর দিকের রুমটা গুছিয়ে রেখো সানা৷ সাইফ একদম অপরিছন্নতা পছন্দ করে না।

শাশুড়ির কথা কানে আসতেই আতকে উঠে সানা। সেই রুমে তো এতোবছর যাবত সানা থাকে। এখন সাইফ আসলে সে কোথায় থাকবে।সাফোয়ানের দিকে একবার তাকায়। সাফোয়ান সানাকে চোখ বুঝে বুঝায় হ্যাঁ বলতে।

-ঠিক আছে মামি আমি গুছিয়্র রাখবো৷

কিছুক্ষন গগল্পগুজব করে যে যার কাজে চলে গেলো। সানাকে সাফোয়ান নিজের রুমে ডেকেছে। আজ এতোগুলো দিন পর আবার সাফোয়ানের মুখোমুখি একান্তে দাড়াতে হবে।

#চলবে?

(গল্পের রিসপন্স কমে যাচ্ছে পাঠকমহল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here