এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব -০৯

#এক_প্রহর_ভালোবাসার
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#নবম_পর্ব

মুখ গোমড়া করে গাড়িতে বসে আছে আমাদের সানা। এতো কাহিনীর করেও সে স্কুলে ভর্তি হওয়া আটকাতে পারলো না। সাধারনত ১৫ এ সবাই এস এস সি দেয়। সানা ১৫ বছরে নবম শ্রেনীতে ভর্তি হতে হচ্ছে কেনো? কারন সানা jsc তে ১ বার ফেইল করে দ্বিতীয় বারের টাইমে পাস করে। পড়ালেখা এতো কঠিন কেনো?।

– এইভাবে চেহারা গম্ভির করে রাখলে তোমাকে ভুতুম পেচা লাগে সানা।

– আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না। আপনার সাথে আমার কোনো কথা নাই।

– সানা তুমি কি জানো তুমি ত্যাড়ামি করছো?

– না আমি জানতাম না তো।

– শুনো লেখাপড়া না করলে কেউ তোমাকে ভালো জানবে না। শপিং মলের কথা মনে আছে? মিথীলা যদি তোমাকে পড়াশুনা করো না বলে অপমান করে তোমার কি ভাল্লাগবে?.

– না তো আমার ভালো লাগবে না। অই আপুটা পচা অনেক আপনি তার সাথে কথা বলবেন না।

– যাইহোক সানা আমি ওর সাথে কথা বলিনা।

স্কুলে গিয়ে সানাকে দশম শ্রেনীতে ভর্তি করলো।ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হয়েছে আজকে সাফোয়ান কে। নাহলে নবম শ্রেনীর ছাত্রীকে কখোনোই দশম শ্রেনীতে ভর্তি করানো যায়না। অনেক কথা বুঝানোর পর সানা মানবিক শাখায় ভর্তি হলো। এমনি পড়তে চায় না। তার উপর যদি সাইন্স নিতে বলতো তাহলে তো পড়তোই না। এই মেয়েকে আল্লাহ কি দিয়ে বানিয়েছে সেই জানে।

– তা মিস্টার সাফোয়ান কে হয় আপনার মেয়েটি ?

হেডমাস্টার এর কথায় সাফোয়ান একবার তাকায় সানার দিকে। সানা অধির আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে উত্তর শোনার জন্য।সাফোয়ান মুচকি হেসে বলে।

– আমার কাজিন লাগে।

কাজিন লাগে শব্দ টা সানার কান অব্দি পৌছানো মাত্রই তার ছোট্ট হৃদয় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। কি এমন হয়ে যেতো তাকে স্ত্রী বলে পরিচয় দিলে? সাফোয়ান কে পিছনে রেখেই আগে আগে গাড়ির কাছে চলে গেলো সানা। অভিমান হয়েছে তার অনেক।সবসময় এমন অভিমান মানার মত না। সাফোয়ান কপাল চাপরাবে এমন দশা। কারন এই মেয়ে কথায় কথায় অভিমান করে৷ স্কুল হোক কিংবা কোনো যায়গা হোক যদি সানা কে তার স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয় তাহলে সানার উপর অনেক বিপদ আসবে। ভোট অব্দি অনেক সাবধানে থাকতে হবে তার।সাফয়ান হেডমাস্টারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজেও গাড়ির কাছে চলে গেলো। গাড়িতে বসে সানাকে সীট বেল্ট বেধে দিলো।

– শুনো রাগ করো আর যাই করো তোমাকে সেদিন ই আমি আমার স্ত্রী বলে সবার কাছে পরিচয় দিবো যেদিন তুমি আমার যোগ্য হবে। আর আমার যোগ্য হতে হলে তোমাকে পরিক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হবে।

– আমার লেখাপড়া করতে ভাল্লাগতো না। যদি আমাকে আপনি লেখাপড়া করলে নিজের যোগ্য মনে করেন তবে আমি কথা দিলাম আমি পরিক্ষায় ভালো মার্কস এনে দেখাবো।

সানার মধ্যে এক জিদ তৈরি হয়েছে পড়ালেখা করে নিজেকে যোগ্য প্রমান করার। এটাইতো সাফোয়ান চেয়েছে যেভাবেই হোক ওকে পড়াশুনা করাতে হবে।সানার এমন খামখেয়ালিপনা সহ্য করা যাবেনা। এইরকম থাকলে যেকউই তাকে ঠকিয়ে যাবে।

– আচ্ছা সানা তোমার না ফুচকা অনেক পছন্দের?

– হ্যাঁ আমার ফুচকা অনেক পছন্দের।

ফুচকার কথা শুনতেই সানা অনেক এক্সাইটেড হয়ে গেলো। সানার মুখে অটোমেটিক হাসি এসে পড়লো। মেয়েটা অল্পতেই কত এক্সাইটেড হয়ে পর। মেয়েটার একটু আগে করা অভিমান এখন কেটে গেছে। বয়স টা এমন আবেগের।

– তাহলে চলো আজকে বাসায় ফুচকা পার্টি হবে ঝাল ঝাল ফুচকা পার্টি।

– সত্যি?
– হ্যাঁ তিন সত্যি

সানা সাফোয়ান কে জরিয়ে ধরে তার গালে চুমু খেয়ে নিলো। হঠাৎ এমন হওয়ায় সাফোয়ান গাড়ি থামিয়ে ফেললো। সানার দিকে তাকিয়ে আছে সে৷ মেয়েটার এমন কান্ড গুলা যে সাফোয়ান কে এলোমেলো করে দেয়। সানা আবারো সাফোয়ানের আরেক গালে চুমু দিলো৷ গাড়ির পিছন সীটে যে কুদ্দুস বসা তা তাদের খেয়াল ই নাই। সানার কান্ডে পিছনে বসা কুদ্দুস চোখ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। সানা যখন কপালে চুমু দিলো সাফোয়ানের তখন কুদ্দুস কেশে উঠলো। কুদ্দুসের কাশি আওয়াজে দুজন পিছনে তাকিয়ে দেখে। সানার খেয়াল ই নাই যে কুদ্দুস পিছনে বসা৷ সানা লজ্জা পেয়ে দ্রত সামনে দিকে ঘুরে চুপচাপ বসে পরলো। সাফোয়ান তো বেচারা নিজেই শকড হয়ে আছে। বেচারা কুদ্দুসের সামনে কতোটা লজ্জা পেলো। সানার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। কুদ্দুস মিটিমিটি হেসে যাচ্ছে,আর মনে মনে বলছ্র বাসায় গিয়ে রেহানাকে এসব জানাতে হবে।

বাড়িতে পৌছে সানা উপরে চলে গেলো আর সাফোয়ান কুদ্দুস কে ফুচকা আনতে পাঠিয়ে দিলো। যেহেতু বলেছে তখন খাওয়াতে হবে। এই ফুচকার জন্য সাফোয়ানের মান সম্মানে টান লাগছে।

সানা গোসল সেরে চুল শুকাতে ব্যাস্ত, বেলকনিতে বসে। বাড়ির চারোদিকে কত গার্ডস কতো নিরাপত্তা দেওয়া। দিবেই না কেন হবু মন্ত্রীর বাড়ি যে। ভোটে দাঁড়িয়েছে এবার সাফোয়ান নতুন করে। কিভাবে চাপছে এই ভুত কেউ জানেনা। বাসায় কথা বলার জন্য মন আকুবাকু করছে সানার। কতদিন বড় আপা, মা,বাবার সাথে তার কথা হয় না।এখন মায়ের প্রতিটি কথা হারে হারে টের পাচ্ছে সানা। মা যখন বলতো যে শশুর বাড়ি গেলে মেয়েদের বাপের বাড়ির কথা খেয়াল ই থাকেনা। সানাকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে সাফোয়ানের ও খারাপ লাগছে তাই সানার কাছে গিয়ে দাড়ালো।

– কি হয়েছে তোমার?
– আমার না আম্মু আর আব্বুর কথা খুব মনে পড়ছে। তাদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে অনেক।

– কেনো তোমার ফোন কই? কল দিয়ে কথা বলো৷

– আমার ফোন নাই,দেখছেন কি আমার হাতে ফোন আছে কি না?

সত্যিই তো সানা ফোন চালায় না। সাফোয়ানের এই বিষয়টি খেয়াল ছিলো না৷ সাফোয়ান নিজের মোবাইল এগিয়ে দিলো সানার কাছে। সানা মোবাইল পেয়ে খুশি হয়ে গেলো সে তার বাবার নাম্বক্র উঠিয়ে কল দিলো তাড়াতাড়ি। সানার সব এক্সাইটমেন্টে পানু ঢেলে দিয়ে ফোন নাম্বার বন্ধ এলো। প্রায় কয়েকবার কল দিলো কিন্তু প্রতিবার সেম।

– সানা গ্রামে তো ঠিকঠাক নেট পাওয়া যায়না কারেন্ট থাকেনা,মেবি তাই ফোন লাগছেনা কাল সকালে আবার চেষ্টা কইরো.।

– হয়তো আপনি ঠিক বলছেন।

– হ্যাঁ আর শুনো আমি তো আবার গ্রামে যাবো কিছুদিন পরে তখন তোমার মা-বাবা আর বোন কে নিয়ে আসবো৷

সাফোয়ানের কথা শুনে একটু আগে গোমড়া করে রাখা চেহারায় খুশির বন্যা বইতে লাগলো। মা-বাভা এমন এক জিনিস। মা-বাবার মতো কেউ নাই দুনিয়াতে। এখন সে অপেক্ষায় দিন গুনবে কবে আসবে তারা ।

রুম থেকে বেরিয়ে সাফোয়ান ফুচকা নিয়ে আবার রুমে হাজির হয়েছে। সানাকে ডেকে খেতে বললো।

সানা আর সাফোয়ান একসাথে ফুচকা খাওয়া শুরু করলো এজ আ কম্পিটিশন।

– শুনেন আমি জিতলে আমার একটা কথা আপনাকে শুনতে হবে। আর আপনি জিতলে আপনার একটা কথা আমি শুনবো।

– ওকে সানা কিন্ত চিটিং করবে না।

-আচ্ছা

সানার টকে একটু ঝাল বেশি দেওয়া হয়েছে। রেহানা জানেই সানা কেমন ঝালখোর৷ তাই একটু কেন অনেকটাই দিয়েছে। নাগা মরিচ আর চিলি পাউডার।কিন্তু সাফোয়ান কম ঝাল খায় তাই আলাদা টক এনেছে শুধু। সানা আর সাফোয়ান খাওয়া শুরু করেছে। সানা খুব দ্রুত নিজের ফুচকা শেষ করছে৷ সানাকে এতো ফুচকা খেতে দেখে সাফোয়ান অবাক হয়ে যায় ।

-সানা ধীরে খাও গলায় আটকে যাবে কিন্ত।

– আমার কিছু হবেনা৷

সানা দ্রুত খেতে গিয়ে সত্যি ফুচকা গলায় আটকে ফেলে। সানার অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায় সাফোয়ান। তাড়াতাড়ি পানি খাইয়ে দেয় সানাকে। সাফোয়ান যখন সানাকে নিয়ে ব্যাস্ত সেই ফাকে সানা নিজের টকের সাথে সাফোয়ানের টক পালটে দেয়।

– এইজন্য বলছিলাম ধীরে সুস্থে খাও কথা শুনলে না। আর খাওয়া লাগবেনা যাও.।
– এটা হবে না আমি এখন ঠিক আছি আবার শুরু করেন৷

সানার জেদের কাছে হার মানতে হলো সাফোয়ান কে। আবারো তাদের সেই ফুচকা কম্পিটিশন শুরু করা হলো। ঝালওয়ালা টক দিয়ে যেই সাফোয়ান ফুচকা খেলো তখনই সাফোয়ানের মুখের রিয়েকশবন চেঞ্জ হয়ে গেলো। চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেলো। কোনোরকমে মুখে থাকা ফুচকা গিলে সানার দিকে তাকালো। সানা তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়েই মুচকি হাসছে। সাফোয়ানের রীতিমতো ঝালে গলা জ্বলে যাচ্ছে। টেবিল থেকে পানি নিয়ে গরগর কর গিলে যাচ্ছে সাফোয়ান কিছুতেই কমছে না ঝাল। সানার কাছে চকলেট ছিলো সে সাফোয়ান কে দেখিয়ে পুরো চকলেট খেয়ে ফেললো। চকলেট খেয়ে সানা জোরে জোরে হাসতে লাগলো। সাফোয়ান একটানে সানাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে । ঝালের জন্য সাফোয়ান ফোপাচ্ছে। এতো ঝাল সে জিবনেও খায় নাই। সানাকে তার এখন পি*টা*তে ইচ্ছা করচছে। শক্ত করে সানার কোমড় চেপে ধরে৷ সানা গতবারের কাহিনী মনে করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সাফোয়াব সানাকে অবাক করে দিয়ে সানার অধরযুগোল নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়৷ সানার চোখ দুটি বড় বড় হয়ে যায়।।

…#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here