#এক_বুক_ভালোবাসা
#আইরাত_বিনতে_হিমি
#পর্বঃ০৭
পূর্ণা এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। তার লম্বা চুলের খোপা খুলে পানিতে পড়ে গিয়েছে। কিছু চুল মুখে এসে বাড়ি খাচ্ছে। রাফাত এক ধ্যানে পূর্ণাকে দেখছে। পূর্ণার ভয়মিশ্রিত মুখখানী তাকে কাবু করে দিচ্ছে। হৃদয়ে ভালো লাগার দোলা বয়ছে। মাংসের পেছনে লুকিয়ে থাকে হৃদপিণ্ডটি দ্বিগুন বেগে চলছে। রাফাত হাত আলগা হয়ে আসছে। পূর্ণা এইবার রাফাতে শার্ট খামচে ধরে।রাফাতের হুশ আসে। সে পূর্ণাকে শক্ত করে ধরে বলে,
– বলো এইবার কি করবে। কাজটা করবে?
পূর্ণা মাথা উপর নিচ করে বলে,
– হুম।
রাফাত পূর্ণাকে টান মেরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। একটা বিষস্ত মাথা রাখার জায়গা পেয়ে পূর্ণা ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। পূর্ণার কান্না রাফাতের বুকে গিয়ে লাগে। সে পূর্ণার মুখটা উঁচু করে গালে আলতো করে হাত রেখে বলে,
– পূর্ণাবতি কেঁদো না প্লিজ। হুশ হুশ থামো থামো প্লিজ। আমি আর এমন করবো না থাম থাম প্লিজ। পূর্ণা পূর্ণা তুমি কাঁদলে কাঁদলে আমার।
কথাটা বলতে গিয়ে রাফাত আটকে যায়। পূর্ণা ছলছল চোখে রাফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। নাকটা টেনে বলে,
– আমি কাঁদলে কি বলেন থামলেন কেন?
রাফাত পূর্ণাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
– কিছু না। অনন্যা পূর্ণাকে নিয়ে যাও। তৈরি করে নিয়ে আসো।
অনন্যা রাফাতের এসেসটেন্ট। পূর্ণা এখনো রাফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। এই ছেলেটা কেমন সে বুঝতে পারে না। সারাক্ষণ রাগী রাগী ভাব নিয়ে থাকে। কিন্তু মনটা অন্যরকম পূর্ণা বুঝে। অনন্যা এসে পূর্ণার হাত ধরে বলে,
– ম্যাম চলুন।
পূর্ণা অনন্যার সাথে চলে যায়। রাফাত পুলের সাইটে একটা চেয়ারে বসে মাথা চেপে ধরে। মনে মনে বিরবির করে বলে,
– তোমার মধ্যে কি আছে পূর্ণা। কেন নিজেকে সামলাতে আমি হিমশিম খায়। তুমি সত্যি আগুন সুন্দরী। মাথা খারাপ করার মতো।
অনন্যা পূর্ণাকে সুন্দর করে একটা শাড়ি পড়িয়ে সাথে কিছু গহনা পড়িয়ে পূর্ণাকে রেডি করে দেয়। পূর্ণা এখনো মূর্তির মতো সামনে তাকিয়ে আছে। পূর্ণার সাজ সব কিছুই ঠিকঠাক আছে। কিন্তু কোথায় যেনো একটা কমতি আছে। অনন্যা পূর্ণাকে কীভাবে কি করতে হবে বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু পূর্ণা বার বার গুলিয়ে ফেলছে। কিছুতেই সবকিছু ঠিক মতো করতে পারছে না। অনন্যা এইবার বিরক্ত হয়ে যায়। সে রাগ করে পূর্ণাকে বলে,
– এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার কতক্ষণ ধরে একটা স্টেপ তোমাকে বোঝানোর ট্রাই করছি কিন্তু তুমি বুঝতে চায়ছো না। থাপড়িয়ে গাল লাল করে দিবো তোমার।
অনন্যায় কথায় পূর্ণার চোখে পানি চলে আসে। ঐ সময় ঐখানে রাফাত উপস্থিত হয়।রাফাত এসে দেখে পূর্ণার চোখে পানি। পূর্ণাকে কাঁদতে দেখে রাফাত বলে,
– একি পূর্ণা তুমি কাঁদছো কেন? অনন্যা কি হয়েছে এখানে।
– স্যার আমি অনেকক্ষণ ধরে এই মেয়েটাকে বোঝাচ্ছি কীভাবে কি করতে হবে। কিন্তু সে বুঝতেই চায়ছে না। স্যার আমি বিরক্ত হচ্ছি। কোথা থেকে কি তুলে আনলেন।
অনন্যা ভেবেছিল রাফাত কিছু বলবে না। কিন্তু হলো তার উল্টো। রাফাত অনন্যাকে ধমকে বললো,
– সাট আপ অনন্যা। তুমি ভুলে যাচ্ছো ওহ কোনো প্রফেশনাল মডেল নয়। ওর একটু সমস্যা হবেই। কিন্তু তুমি কোন সাহসে পূর্ণাকে হার্ট করো। হাউ ডেয়ার ইউ। তোমার সাহস তো কম না। তুমি আমার আর্টিস্টকে অপমান করো। নেক্সট টাইম নেক্সট টাইম তুমি যদি এমন করছো তাহলে আমার পিএ থাকা তো দূর আমার অফিসেই থাকা তোমার জন্য দুষ্কর হয়ে উঠবে। নাউ গেট লস।
– স্যার
রাফাত চিল্লিয়ে বলে,
– আউট।
অনন্যা মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে আসে।রাফাত পূর্ণার কাছে আসে। পূর্ণা মাথা নিচু করে আছে। রাফাত ওর কাছে গিয়ে বলে,
– পূর্ণা তুমি অনন্যার কথায় কিছু মনে করো না। এসো আমি তোমায় দেখিয়ে দিচ্ছি কীভাবে ছবিগুলো তুলবে।
রাফাত পূর্ণাকে দেখিয়ে দেয় কীভাবে ছবি গুলো তুলতে হবে। পূর্ণাও মনোযোগ সহকারে সবকিছু শিখে। শেষে পূর্ণা বলে,
– ঠিকাছে আমি বুঝেছি। এখন চাইলে শ্যুট করা যেতে পারে।
– কনফিডেন্ট পাচ্ছো।
– হুম।
– তাহলে চলো।
______________________________________
পুরাতন একটা বাড়ি। বাড়ির ভেতরে নাচ গান হচ্ছে। বাদ্য যন্ত্র বাজছে। কেউ সেই গানের তালে নাচছে। আবার কেউ সেই নাচ দেখছে আর ড্রিংকস করছে। কখনো কখনো মেয়েদের নিজের বাহুডোরে আটকে ফেলছে। আবার পাশের ঘরে নিয়ে দেহের খায়েশ মেটাচ্ছে। ঠিকই ধরেছেন এইটা হচ্ছে একটা নষ্ট পল্লি। যেখানে থাকে কিছু প্রষ্টিটিউট মহিলা। তাদের একজন সর্দার আছে। ঝুমুর বাইজি। ঝুমুর বাইজি মুখে পান নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে বসে আছে। মাঝে মাঝে পানের পিক ফেলছে। তার সামনে খোদ্দের বসে আছে। একজন খোদ্দের বিদেশ থেকে এসেছে। তার সুন্দরী ভার্জিন মেয়ে চায়। কথাটা শোনার পর ঝুমুর বাইজি পানির পিক ফেলে লাল টুকটুকে ঠোটে দাঁত বের করে হেসে উঠে। সামনে বসে থাকা ব্যক্তি তার হাসি দেখে ভরকে যায়। সে বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে,
– আমি শুনেছি ঝুমুর বাইজি সব পারে। তাই এত দূর থেকে আসা। আমি আপনাকে অনেক টাকা দিবো।
ঝুমুর বাইজি হাসি থামিয়ে বলে,
– স্টিফেন সাহেব নষ্ট পল্লিতে এসে ভার্জিন মেয়ে খুজছেন। কথাটা হাস্যকর।
স্টিফেন বলে,
– পাঁচ লাখ দিব।
কথাটা শোনা মাত্র ঝুমুর বাইজির চোখ লোভে চিকচিক করে উঠে। সে শোয়া থেকে উঠে বসে স্টিফেনের দিকে তাকিয়ে বলে,
– কাজ হইয়া যায়বো। শুধু একটু সময় লাগবো আর কি? আমগো হাতে বানানো মাইয়া। কিন্তু এহান থিকা ভাগছে। ওরে ধইরা আননের ব্যবস্থা করবার লাগছি।
– আচ্ছা যা করার করেন কিন্তু এক মাসের মধ্যে আমার চাই।
– হইয়া যাইবো। এডফান্স দিয়া যান।
– বলতে হবে না। আমি আপনার শিষ্যের কাছে দিয়ে দিয়েছি। এখন আমি আসি।
– আইচ্ছা।
স্টিফেন চলে গেলে ঘরে প্রবেশ করে আহির। ঝুমুর আহিরকে দেখে বলে,
– টাকা আনসস বাজান।
আহির হেসে বলে,
– জ্বি খালা টাকা এনেছি। কিন্তু তুমি এত টাকা রাখলে মেয়ে পাবে কোথায়?
– কেন তোর লগে যেডা পিড়িত করতো ঐ টি কয়। আমি যে তোরে কইলাম আমার ওরে লাগবো।
আহির ঝুমুরের পাশে বসে বলে,
– খালা তুমি বললা দেখেই তো আমি সেই কার্তিকপুরে গিয়ে ঐ মেয়ের সাথে প্রেম করলাম। কথার জালে ফাসাইলাম। কিন্তু মেয়ে যে বড্ড চালাক। ওহ কোথাও আসবে না খালা। ওহ হাত ছাড়া হয়ে গিয়েছে।
ঝুমুর রাগী কন্ঠে বলে,
– হাত ছাড়ন হয়ে গেছে মানে কি? শোন আহির আমি তোরে আগেই কইছিলাম ঐ মাইয়া আমার দোলের একজনের মাইয়া ছিলো। ছোড বেলান থেহা ওর উপরে সবার নজর আছিলো। কিন্তু ওর মাইয়া মহা চালাক আছিলো। তাই তো পলাই লো মাইয়াডারে লইয়া। আমার নাগালের বাহির চইলা গেল। তহন ঝুমুর বাইজির ওত নাম ডাক না থাহলেও এহন আছে। ঐ মাইয়ারে আমার চাই। আমার ঘরের পাখি আমার কাছে লইয়া আবি কইয়া দিলাম।
– খালা শান্ত হও। সোজা আঙুলে না আসলে আঙুল যে বেকাতে জানে তোমার এই ছেলে তুমি জান না। আমার পাতা ফাঁদে ঐ মেয়ে পা দিয়েছে। আমার এক আত্মীয়ার বাড়িতে ওহ আছে। তুমি চিন্তা করো না আমি ওরে নিয়ে আসবো।
– কবে আনবি।
– যত দ্রুত সম্ভব।
– আইচ্ছা। স্টিফেন সাহেব এক মাস সময় দিছে।
– আচ্ছা খালা হয়ে যাবে।
– ঐ শোন।
– কি খালা।
– ওর কোনো ক্ষতি হইলে চলবো না কিন্তু। তুই কিন্তু নিজের খায়েশ মিটাইবার যাইস না। ওরে পিউর ভাবে নিয়া আসবি। মনে থাহে যেন।
– থাকবে খালা।
____________________________________
পূর্ণার শ্যুট শুরু হয়। খুবই দক্ষতার সাথে ফটোগ্রাফার ছবি তুলছে। পূর্ণাও প্রত্যেকটা স্টেপ ঠিক ঠিক ভাবে পালন করছে। ছবি তুলা শেষ হলে পূর্ণাকে রাফাত তার অফিসের রুমে নিয়ে আসে। পূর্ণা শাড়ি পড়ে হাপাচ্ছে এখন। রাফাত পূর্ণার নাজেহাল অবস্থা দেখে বলে,
– শাড়ি মেনেজ করতে কষ্ট হয়।
– খুব আই হেড শাড়ি।
রাফাত মুচকি হাসে। তারপর পূর্ণার কোমর জরিয়ে ধরে বলে,
– এতটুকু তেই এই অবস্থা। যদি তোমার বর শাড়ি পছন্দ করে তখন তুমি কি করবে পূর্ণাবতি।
লজ্জায় পূর্ণার মাটিতে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। এই লোকটা বড্ড অসম্ভ। মুখে কিছু আটকায় না পূর্ণা নিচে তাকিয়ে আছে। পূর্ণার এমন লজ্জা মিশ্রিত মুখ দেখে রাফায় হু হু করে হেসে দিয়ে পূর্ণাকে ছেড়ে দেয়। পূর্ণা রাফাতের হাসির দিকে তাকিয়ে বলে,
– আহ কত সুন্দর হাসি। যদি লোকটা সব সময় এমন করে হাসতো। তাহলে হয়তো ঐ রাগী লুকটা দেখে কেউ ভয় পেতো না।
রাফাত হাসি থামিয়ে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,
– কি দেখছো?
পূর্ণা চোখ সরিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
– কই কিছু না তো।
– বললেই হলো আমি ঠিক দেখলাম তুমি আমায় দেখছিলে।
পূর্ণা কথা ঘুরানোর জন্য বলে,
– আমি বাড়ি যাব।
– এইভাবেই যাবে। কেউ দেখলে ভাববে তোমায় বিয়ে করে ঘরে তুলছে।
এইবার তো পূর্ণার লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। শরীর মৃদু কাঁপছে। অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে। রাফাত পূর্ণার অবস্থা দেখে বলে,
– থাক আর লজ্জা পেতে হবে না চলো।
চৌধুরী বাড়ি রাফাত পূর্ণা একসাথে বাড়ি ফিরেছে। বাড়ির সবাই এখন গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। রাফাত ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে বাসায় প্রবেশ করেছে। পূর্ণা নিজের ঘরে গিয়ে শাড়ি চেন্স করে একটা নীল রঙের জামা পড়ে নেয়। রাফাত আর পূর্ণা দুজনেই বাহির থেকে খেয়ে এসেছে।। পূর্ণা বিছানায় গাটা এলিয়ে দিলে তার মনে হয় কোথাও যেনো একটা আওয়াজ হচ্ছে। খুব নিকটেই আওয়াজ টা হচ্ছে। পূর্ণা উঠে বসে। আশেপাশে সর্তকতার সাথে চোখ বুলিয়ে দেখে কেউ আছে কিনা। কিন্তু না কেউ নেয়। পূর্ণা বেলকনিতে যায় গার্ডেন সাইটা দেখে না এইখানেও তো কেউ নেয়। তাহলে আওয়াজ টা কোথা থেকে আসছে। পূর্ণা চোখ বন্ধ করে আওয়াজ শোনার চেষ্টা করে। কোনদিক থেকে আসছে। হ্যা আওয়াজ টা কৌশিকের ঘরের দিক থেকে আসছে। পূর্ণা দরজা খুলে বেড়িয়ে যায়। কৌশিকের ঘরের কাছে গিয়ে কৌশিককে ডাকে পূর্ণা। কিন্তু কোনো সাড়া নেয়। পূর্ণা অনেক বার কৌশিককে ডাকে কিন্তু কোনো সাড়া নেয়। পূর্ণা দরজাটা জোরে ধাক্কা দিতে গেলে দেখে দরজা খুলা। পূর্ণা ভেতরে প্রবেশ করে। কোথায় কৌশিক কোথায়। কোথাও তো কৌশিক নেয়। পূর্ণা ঘর থেকে বেড়িয়ে আসতে নিলে সে বুঝতে পারে এই ঘরের কোথাও ই আওয়াজ টা হচ্ছে। পূর্ণা এইবার বেলকনির দিকে তাকায়। কিন্তু না এখন তো আওয়াজ টা হচ্ছে না। পূর্ণা ঘরের আলো জ্বালিয়ে দেখে খাটের পেছনে ছোট একটা দরজা। খাট টা আপাদত সরানো আছে। পূর্ণা অবাক দৃষ্টিতে সেইখানে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বলছে,
– গুপ্ত কক্ষ। পূর্ণা ঐদিকে যেতে নিলে সেইখান রাফাত উপস্থিত হয়। রাফাতকে দেখে পূর্ণা ভয় পেয়ে যায়। সে বলে,
– আপনি?
– হ্যা আমি। পূর্ণা আমার মনে হলো কোনো একটা আওয়াজ হচ্ছে। কিন্তু তুমি এইখানে কি করো।
– আমিও আওয়াজ শুনে এসেছি। ঐ দেখুন গোপন কক্ষ।
পূর্ণার হাত দেখানো ইশারা দেখে রাফাত ঐ দিকে তাকায় দেখে কৌশিকের বিছানার পেছনে একটা ছোট্ট দরজা। সেইখান দিয়ে নিচে সিড়ি গিয়েছে। রাফাত ভ্রু কুচকে নিজের বাড়িতে গোপন কক্ষ আছে আর সেটা সে নিজে জানে না। রাফাত পূর্ণাকে বলে,
– পূর্ণা ঘরে যাও। আমি দেখছি।
– কিন্তু আপনার যদি কিছু হয়।
– আমার কিছু হবে না। তুমি ঘরে যাও।
– নাহ আমি যাব না। আমি আপনার সাথে যাব।
– পূর্ণা কেন জেদ করছো। কেন বুঝতে চাইছো না ঐখানে কোনো বিপদ লুকিয়ে থাকতে পারে।
– আপনি যদি যান তাহলে তো আপনিও বিপদে পড়বেন তাই না। তাই আমি আপনাকে একা যেতে দিবো না।
– পূর্ণা তোমার কিছু হলে আমি শেষ হয়ে যাব। প্লিজ পূর্ণা পাগলামি করো না। তুমি ঘরে যাও।
– আমি তো ঘরেও সেভ না হতে পারি।
– ঠিকাছে আমি বুঝছি তুমি শুনবে না চলো।
কথাটা বলে দুজনে ঐ ছোট্ট দরজার ভেতরে ঢুকে পড়ে। রাফাত মোবাইলের লাইট টা জ্বালিয়ে নেয়। অনেক অন্ধকার চারদিকে।রাফাত পূর্ণা সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই দেখে এইখানে কেউ নেয়। রাফাতের সন্দেহ হয়। সে আশে পাশে চোখ রাখতেই পেছন থেকে কেউ তার মাথায় জোরে কিছু দিয়ে বাড়ি মারে। পূর্ণা তা দেখে চিৎকার করে বলে,
– রাফাত।
রাফাত মাথায় হাত দিয়ে পেছনে তাকিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পূর্ণা এখনো চিৎকার করে কাঁদছে। মুখোশ ধারি কেউ পূর্ণার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রাফাত ঝাপসা চোখে সেটা দেখছে। কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। সবকিছু কেমন দুর্বল লাগছে। মাথার পেছনে চিনচিন ব্যথা করছে। কিন্তু তার থেকেও বেশি ব্যথা হচ্ছে বুকে। কলিজার পাখিটা যে কেউ ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাফাত আর তাকিয়ে থাকতে পারে না জ্ঞান হারায়। আর পূর্ণা বলছে,
– আমি যাব না ছাড় আমায় রাফাত। রাফায় উঠো। আমায় নিয়ে যাচ্ছে উঠো প্লিজ রাফাত রাফাত।
#চলবে
বিঃদ্র ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।#এক_বুক_ভালোবাসা
#আইরাত_বিনতে_হিমি
#পর্বঃ৮
গ্রামের পথ। কাঁচা রাস্তা। চারপাশে ধুলোমায়। রাস্তার একপাশে ধান খেত। অন্যপাশে বড় বড় পুকুর। বড় বড় পুকুরকে আলাদা করতে মাঝখানে আছে ছোট্ট কাঁচা রাস্তা। রাস্তার দুইপাশে নারিকেল গাছে। সেই রাস্তায় ছোট্ট ছোট্ট পায়ে দৌড়ে আসছে একটি মেয়ে। তার পেছনে আর একটা মহিলা হাতে খাবার নিয়ে দৌড়াচ্ছে আর বলছে,
– পূর্ণারে দাড়া দাড়া বলছি। এই পূর্ণা এইভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন। পুকুরের পড়ে যাবি তো। পূর্ণা থাম থাম বলছি।
কিন্তু পাঁচ বছরের এই দস্যি মেয়ে মায়ের কথা শুনছে না। সে সুতি কাপড়ের একটা জামা পড়ে দৌড়ে পালাচ্ছে আর বলছে,
– না মা আমি খাব না। আমাকে তুমি জোর করো না।
হঠাৎ পূর্ণার পা পিছলে গেলে সে পুকুরে পড়ে যায়। পূর্ণার মা আসমা বেগম চিৎকার করে বলে,
– পূর্ণারে।
পূর্ণাও কেঁদে দিয়ে বলে,
– আহ মা বাঁচাও। আমি ডুবে যাচ্ছি মা।
পূর্ণা ডুবে যাচ্ছে। নাক মুখ দিয়ে তার পানি ঢুকছে। পানি খেতে খেতে তার পেট ফুলে যাচ্ছে। নিজের শরীর টা আস্তে আস্তে ভার হয়ে যাচ্ছে। পূর্ণার মা পুকুরে ঝাপ দেওয়ার আগে একটা ছেলে পুকুরে ঝাপ দেয়। পূর্ণাকে নিয়ে সে পাড়ে ফিরে আসে। অনেক মানুষের ভিড় এখানে। পূর্ণাকে পাড়ে নিয়ে আসলে আসমা বেগম মেয়েকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দেয়,
– পূর্ণা পূর্ণা চোগ খুল মা। পূর্ণা এই পূর্ণা তাকা তাকা আমার দিকে।
পূর্ণা চোখ খুলছে না। যেই ছেলেটি পূর্ণাকে বাচিয়েছে সে বলে,
– আন্টি আপনি সরুন আমি দেখছি।
আসমা বেগম সরে আসলে ছেলেটি পূর্ণাকে উপুর করে ওর পেটের মধ্য থেকে পানি ফেলে। পূর্ণা পিট পিট করে চোখ মেলে তাকায়। পূর্ণার জ্ঞান ফেরা দেখে আসমা মেয়ের উপর ঝাপিয়ে পড়ে,
– পূর্ণা আমার মা।
পূর্ণাও মাকে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়,
– মাহ মা গো।
ছেলেটি ঐখান থেকে চলে যেতে নিলে আসমা বেগম জিঙ্গাসা করে,
– দাড়াও বাবা।
ছেলেটি দাড়িয়ে পড়ে। আসমা বেগমের কাছে এসে বলে,
– বলুন কি বলবেন।
– তোমার কাছে আমি ঋনী বাবা। আজ তুমি না থাকলে আমার মেয়ের যে কি হতো।
– এইভাবে বলবেন না। মানুষ হিসেবে একজনকে সাহায্য করা আমার কর্তব্য।
– বাহ কত সুন্দর শিক্ষা তোমার। তোমার নাম কি বাবা? কোন এলাকায় থাকো?
– আমার নাম রাফাত। রাফাত চৌধুরী। আমি থাকি ঢাকায়। এইখানে আব্বুর সাথে ফুপি বাড়ি এসেছি।
– আচ্ছা। কোন বাড়ি আসছো?
– মেম্বার বাড়ি।
– ওহ রহিম মেম্বার তোমার কি হয়?
– আমার ফুপা হয়। ওহ শহীদা বু তোমার ফুপি হয় বুঝি।
– জ্বি।
– কিসে পড়ো।
– আমি এসএসসি দিয়েছি।
– আচ্ছা ভালো ভালো। আমার বাড়ি হচ্ছে মেম্বার বাড়ির পাশে তুমি তোমার ফুপিরে নিয়ে এসো। আসলে খুব খুশী হবো। আর তাড়াতাড়ি জামাটা পাল্টে নিয়ো।
– আচ্ছা। আসছি তাহলে। যাই পিচ্চি।
রাফাতের মুখে পিচ্চি ডাক শুনে পূর্ণা ভেঙচি কাটে। পূর্ণার ভেঙচি কাঁটা দেখে রাফাত হাসে। তারপর সেখান থেকে চলে যায়। আসমা বেগম পূর্ণাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে। কলপাড়ে নিয়ে মেয়েকে গরম পানি দিয়ে গোসক করিয়ে দেয়। মরব্বিদের কাছে শুনেছে ভয় পেলে গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ভয় কমে যায়। তারপর ঘরে নিয়ে এসে শুরমা খায়িয়ে দেয়। নিজে হাতে ভাত বেড়ে খায়িয়ে দেয়। পূর্ণা মাকে জরিয়ে ধরে বলে,
– মা আমি আর কখনো তোমার অবাধ্য হবো না।
আসমা বেগম মেয়ের মাথায় চুমু খেয়ে বলে,
– পাগলি মেয়ে।
আসমা বেগম মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে নিজে গোসল করে নামাজ পড়ে কিছু খেয়ে নেয়।তারপর সেলাইয়ের কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঐ সময় বাসায় শহীদা আসে। সাথে রাফাত আর রশীদ চৌধুরী। শহীদা বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বলে,
– কোথায় আসমা আপা। কোথায় আপনি?
আসমা ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বলে,
– শহীদা বু আসছো। আসো আরে রাফাত যে এসো এসো।
রাফাত আসমা বেগমকে সালাম দেয়। শহীদা আসমার কাছে গিয়ে বলে,
– আসমা তোমার মেয়ে নাকি পানিতে পড়ে গিয়েছিল। আমাদের রাফাত নাকি বাঁচায়ছে।
– হুম। রাফাতই আমার মেয়েকে বাঁচিয়েছে।
– এখন কোথায় তোমার মেয়ে কোথায়। আমার ভাই তোমার মেয়েকে দেখতে আসছে।
রশীদ চৌধুরীকে দেখে আসমা সালাম দেয়।তারপর ঘরে নিয়ে বসতে দেয়। আসমা পূর্ণাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ওদের সামনে নিয়ে আসে। রশীদ চৌধুরী পূর্ণাকে দেখে বলে,
– কেমন আছো মা। এখন কেমন লাগছে।
পূর্ণা শুধু বলে,
– ভালো।
তারপর বড়রা অনেক কথা বলে। আসমা মেহমানদের হালকা নাস্তা দেয়। পূর্ণা ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলে। তার পেছন পেছন রাফাতও আসে। রাফাত পূর্ণাকে পেছন থেকে ডাকে,
– এই পিচ্চি।
পূর্ণা বিরক্তি নিয়ে বলে,
– খবরদার আমায় পিচ্চি বলবেন না। আমি পিচ্চি নয়।
রাফাত পূর্ণার কাছে এসে বলে,
– আচ্ছা তুমি পিচ্চি নও। তাহলে কি বুড়ি।
পূর্ণা এইবার আরও ক্ষেপে যায়।সে রাফাতের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
– আপনি বুড়ো আপনার বাড়ির সবাই বুড়ো।
রাফাত হাসতে হাসতে বলে,
– আচ্ছা ঠিকাছে হলো। তুমি কি আমায় গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাবে।
– কেন কেন? আপনাকে কেন গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাবো।
– তুমি যদি আমায় গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাও তাহলে আমিও তোমাকে একটা জিনিস দিবো।
– কিহ।
– চকলেট। ( হাতে কিছু চকলেট নিয়ে বলে)
পূর্ণা চকলেটগুলো নিয়ে বলে,
– তাহলে চলুন আপনাকে গ্রাম ঘুরিয়ে দেখায়।
– চলো।
দুজন বেড়িয়ে পড়ে গ্রাম ঘুরে দেখতে। প্রথমে পূর্ণা রাফাতকে স্কুর মাঠে নিয়ে চলে,
– এইটা আমাদের স্কুল এইখানে আমি পড়ি। জানেন আমার ক্লাসে আমার রোল এক। যখন এই গ্রামে বন্যা হয় তখন সবাই আমাদের স্কুলে থাকে। এইটা হলো এই স্কুলের সব থেকে সুন্দর জায়গা আমতলা। এই আমতলায় আমরা সবাই বসে আড্ডা দেয়। আম ভর্তা বানিয়ে খায়। গরমের দিনে যখন বিদুৎ থাকে না। তখন আমরা সবাই এইখানে বসে বাতাস খায়।
– আচ্ছা তুমি কোন ক্লাসে পড়ো পূর্ণা।
– আমি আমি তো ক্লাস ওয়ানে তে পড়ি।
– ওহ।
– চলেন আপনাকে নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। এই গ্রামে ছোট্ট একটা নদী আছে। ঐখানে সবাই মাছ ধরে চলেন চলেন।
রাফায় পূর্ণা একসাথে হাটছে। পূর্ণার হাতে কাশফুল। সে কাশফুল উড়াচ্ছে আর হাটছে। মাঝে মাঝে মন ভোলানো একটা হাসিও দিচ্ছে। রাফাত পূর্ণাকে নিক্ষুত ভাবে দেখছে। মেয়েটা অদ্ভূত সুন্দরী। পিচ্চি মেয়ে। খুব বেশী কথা বলে। হাসতে ভালোবাসে। পূর্ণা যখন হাসে রাফাতের তখন কলিজায় লাগে। ছোট্ট এই মেয়েটির ভেজা মুখশ্রী দেখেই সে পাগল হয়ে গিয়েছে। নিজের ভিতরের কিশোরী সত্তা জেগে উঠেছে। কেমন যেনো অন্যরকম অনুভূতি যেই অনুভূতির সাথে রাফাত অপরিচিত। সারাটা বিকেল রাফায় পূর্ণা একসাথে ঘুরে। সন্ধ্যায় দুজনে একসাথে বাড়ি ফিরে। পূর্ণা বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে রাফাতের গল্প বলতে শুরু করে। আর রাফাত পূর্ণার দৃষ্টির অগোচরে তার তোলা ছবির দিকে অপলক নয়নে তাকিয়ে থাকে। রাফাতরা গ্রামে এসেছে আজ পাঁচদিন হলো। প্রতিদিন সকালে পূর্ণা রাফাতকে ডাকতে যায়। তারপর সারাদিন দুজনে একসাথে ঘুরে। এখন আর দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয় না। দুজন দুজনকে খুব পছন্দ করে। পূর্ণা রাফাত বলতে পাগল। আর রাফাত পূর্ণার প্রেমে হাবুডুবু। কিন্তু পূর্ণার অনুভূতি অন্যরকম। সে শুধু জানে রাফাতের সাথে ঘুরলে সে চকলেট পাবে তাই সে ঘুরে। রাফাত ঢাকা চলে যাওয়ার দুদিন আগে ওরা দুজনে নদীর ঘাটে বসে ছিলো। সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়। দুজনেই পানিতে পা ভিজিয়ে সূর্য অস্ত যাওয়া দেখছে। হঠাৎ রাফাত পূর্ণাকে বলে,
– পূর্ণা।
– বলো।
– আমাকে বিয়ে করবে।
রাফাতের এমন কথায় পূর্ণা খিলখিল করে হেসে দেয়। সেই হাসির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। পূর্ণা হাসি থামিয়ে বলে,
– বিয়ে কি রাফাত ভাই।
রাফায় হেসে বলে,
– কেন তুমি জানো না।
– কই না তো।
– আচ্ছা আমি বলছি। তোমার আব্বু যে তোমার আম্মুকে বিয়ে করে এই বাড়িতে নিয়ে আসছে। সেইদিন তোমার আম্মু বউ সেজেছিল আর তোমার আব্বু বর। তারপর তাদের বিয়ে হয়। তারা একসাথে থাকতে শুরু করে। তোমার আম্মু রান্না করে আর তোমার আব্বু সেই খাবার খায়। একসাথে দুজনে সুখ দুঃখের কথা বলে। তোমার আব্বু অসুস্থ হলে তোমার মা তার সেবা করে। আম্মু অসুস্থ হলে আব্বু সেবা করে। কিছুদিন পর বাচ্চা হয়।সেই বাচ্চা নিয়ে তারা কত স্বপ্ন দেখে।
পূর্ণা ভ্রু কুচকে বলে,
– বাচ্চা হয় কীভাবে আবার।
রাফাত এইবার কপাল চাপড়ে হাসে। এই মেয়ে এত বোকা। অবশ্য বোকা তো হবেই ওত এখনো বাচ্চা।রাফাত বলে,
– আমাদের বিয়ে হলে সেইদিন বলবো। আজ থাক। আগে বলো আমায় বিয়ে করবে কিনা।
– মাকে জিঙ্গাসা করে বলবো। বিয়ে করবো কিনা।মা বলছে না জিঙ্গাসা করে কোনো কাজ করা যাবে না।
রাফাত ভয় পেয়ে বলে,
– এই না এখনি মাকে কিছু বলো না। আগে বড় হও তারপর আমিই তোমার মাকে সব বলবো।
– ঠিকাছে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে এখন আমি যাই।
পূর্ণা উঠতে নিলে পূর্ণা রাফাতের হাত ধরে বলে,
– পূর্ণা।
– আবার কি?
– পরশু আমি চলে যাব।
পূর্ণার মনটা খারাপ হয়ে যায়। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
– কেন যাবে। এই গ্রাম কী ভালো না। নাকি আমি ভালো না।
– এই না তুমি ভালো তোমার গ্রাম ভালো সব ভালো। শুধু আমায় যেতে হবে। কিন্তু আমি আবর আসবো সেইদিন এসে তোমাকে আমি আমার বউ করে আমার সাথে নিয়ে যাব।
পূর্ণা আরেক দফা হাসে তারপর সেখান থেকে দৌড়ে বাড়ি চলে যায়। পিচ্চি এই মেয়েটার হাসি রাফাতের এত ভালো লাগে।পাগল করা হাসি। কিছুক্ষণ পর রাফাতও বাড়ি চলে আসে। পূর্ণা বাড়ি এসে ওর মাকে জরিয়ে ধরে,
– মাহ।
আসমা মেয়ের সামনে বসে বলে,
– ওরে আমার মারে কোথায় ছিলে রাফাত ভাইয়ের সাথে নাকি।
– জ্বি মা। জানো রাফাত ভাই নাকি চলে যাবে।
– তাই।
– হুম।মা জানো রাফাত ভাই আমাকে কি বলছে।
– কি বলছে।
– বলছে আমার নাকি বিয়ে করবো। আচ্ছা মা বিয়ে কি? রাফাত ভাই বললো তুমি আর আব্বু নাকি বিয়ে করে এই বাড়ি আসছো। এইটা কি সত্যি।
মেয়ের কথা শুনে আসমা বেগমের ভেতরটা হু হু করে উঠে। বিয়ে এই শব্দটির আগমন কি আজও তার জীবনে হয়েছে। কথাটি ভেবেই আসমা বেগমের কান্না চলে আসে। চোখের সামনে ভেসে উঠে কিছু নোংরা অতীত। তবুও নিজেকে শান্ত করে বলে,
– রাফাতের কাছে তুমি আর যাবে না। এখন ঘরে যাও। আমি আসছি।
কথাটা বলে আসমা বেগম শহীদাদের বাসায় আসে। এসে দেখে রাফাত উঠানে পাটিতে বসে ছোট্ট ছোট্ট ভাই বোনদের সাথে গল্প করছে। আসমা সোজা রাফাতের সামনে গিয়ে দাড়ায়। রাফাত আসমা বেগমকে দেখে বলে,
– আন্টি আপনি। আসুন বসবেন আসুন।
আসমা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বলে,
– নাহ আমি বসতে আসেনি। রাফাত তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
– কি কথা বলুন।
– পুকুর পাড়ে আসো।
রাফাত আসমা বেগমের পেছন পেছন পুকুর পাড়ে যায়। আসমা বেগম ভনিতা না করে সোজাসুজি বলে,
– তুমি আমার মেয়েকে কি বলছো।
আসমা বেগমের কথা শুনে রাফাত একটু ভয় পায়। তবুও সাহস করে বলে,
– পূর্ণা আপনাকে কি বলেছে?
– প্রশ্নটা আমি আগে করেছি রাফাত।
– দেখুন আন্টি বেয়াদবি নিবেন না। আমি যা বলেছি সত্যি বলেছি এক চুলও মিথ্যে ছিলো না কোথাও।
– তুমি ভেবে বলছো রাফাত। তুমি জানো পূর্ণার পরিচয় পূর্ণা কে?
– কেন জানবো না ওহ আপনার মেয়ে।
– না রাফাত পূর্ণা আমার মেয়ে হলেও আমাদের মা মেয়ের পিছনে অনেক বড় অতীত আছে যেটা শোনার পর তোমার মা বাবা কখনোই পূর্ণাকে তাদের ঘরে তুলবে না।
– আমি জানি না আপনাদের অতীত কি। তবে রাফাত চৌধুরী যা বলে তাই করে কারো কথা শুনে না। আমি পূর্ণাকে ভালোবাসি বিয়ে করতে চায়। আমার ভালোবাসায় কোনো মিথ্যে নেয়। আমি ওকে সত্যিই ভালোবাসি। কথাটা আপনার কাছে পাগলামো লাগলেও সত্য।
– কি করে মানি বলো। তোমাদের মতো এই বয়সী ছেলে মেয়েরা অনেক পাগলামি করে রাফাত। তাই আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
– একবার না হয় বিশ্বাস করেই দেখুন। আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। শুধু পূর্ণাকে আমার জন্য তৈরি করে রাখবেন। আমি আমার পূর্ণাবতির কিছু হতে দিবো না। কথা দিচ্ছি।
– শোন রাফাত। যেই সত্য আমি গত পাঁচ বছর ধরে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছি কাউকে জানতে দেয়নি। সেই সত্য আজ আমি তোমায় বলছি। যদি সত্যি শোনার পর তোমার মনে হয় পূর্ণাকে তুমি ভালোবাস তাহলে আমি কথা দিচ্ছি পূর্ণা তোমার।
– আমি কি ভাবার জন্য সময় পাবো।
– অবশ্যই পাবে।
– বলুন আন্টি।
– পূর্ণা বাইজির মেয়ে। আমি একজন বাইজি কন্যা আসমা বাইজি। নষ্ট পল্লীতে আমার বাস ছিলো। পূর্ণা কার সন্তান আমি জানি। তবে পূর্ণার স্বীকৃতি সে দেয় নি। তাই তার কাছে কখনো যাইনি আমি। তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছিলাম আমার মেয়ে মারাত্মক সুন্দরী হবে। এই মেয়েকে এইখানে রাখলে কুকুর বেড়ালে ছিড়ে খাবে। তাই আতুরঘর থেকে এক মাসের বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে এই কার্তিকপুরে চলে আসি। তারপর থেকে সবাই আমাকে আসমা বেগম নামে চিনে। কিন্তু আমার আসল পরিচয় আমি একজন বাইজি। আমার মেয়ে বাইজি কন্যা। তুমি কি আমার মেয়েকে বিয়ে করবে এতকিছু জানার পর।
রাফাতের মাথাটা ভো ভো করছে। সে স্বপ্নেও ভাবেনি পূর্ণার অতীতে এত ভয়াবহ হবে। পূর্ণা বাইজি কন্যা। তার পরিবার জানলে কোনোদিন মানবে না। ধোপের আগেও টিকবে না তার আবদার। রাফাত আসমা বেগমের সামনে দাড়িয়ে থাকতে পারে না চলে আসে এক ষোলো বছরের কিশোর। সেইদিন তার কিশোর মন বলেছি সে পারবে না। এইটা অন্যায় তাই সে ঢাকায় চলে এসেছিল। আর আসমা বেগম হেসে সব উড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ সে জানতো এই সত্য জানার পর কেউ তার মেয়েকে বিয়ে করবে না। রাফাত ঢাকা এসেছিল ঠিকই কিন্তু ক্ষণকালের জন্যও সে পূর্ণাকে ভুলতে পারেনি। দিন দিন পূর্ণা তার হৃদয়ের প্রত্যেকটা কোনা গ্রাস করে নিচ্ছিলো। পূর্ণার কল্পনায় সে ঘুমোতে পারতো না খেতে পারতো না। দেখতে দেখতে দুবছর চলে যায়। রাফাতের বাবার চাকরি চলে যায়। রাফাত নিজে নিজে ব্যবসায় শুরু করে। পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসায় চালায়। বর্তমানে সে এখন সাতাশ বছরের যুবক। একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। পরিবারও এখন তার কথায় চলে। আসলে এখন তার টাকা আছে। কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও সে পূর্ণাকে ভুলতে পারেনি। প্রতিরাতে পূর্ণার ছবির দিকে তাকিয়ে সে ঘুমায়। তার ঘরের দেয়ালে বড় করে পূর্ণার ছবি বাধিয়ে রাখা। সেই ছবিতে অবশ্য পর্দা টানিয়ে রাখা। এত সফলতাও সে শান্তি খুজে পেতো না। তাই সে নিজের শান্তিকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য কার্তিকপুর যায়। আজ তার মন অনেক ভালো। একটু পরেই সে তার কল্প পরীকে তার সামনে দেখবে। নিজে ড্রাইভ করে সে কার্তিকপুরে আসে। আসতে আসতে তার রাত হয়ে যায়। হঠাৎ কাঁচা রাস্তায় দেখতে পায় একজন মহিলা ধানখেতের পাশে পড়ে আছে। অন্ধকারে তার মুখ স্পষ্ট নয়। রাফাত দ্রুত গাড়ি থেকে নামে। ঐ মহিলার কাছে গিয়ে তাকে তার দিকে ফিরাতেই চেনা মুখ দেখে চমকে যায়। আসমা বেগম পেটে ছুড়ে ঢুকে রক্তে ভিজে যাচ্ছে। রাফাত আসমা বেগমের গালে আলতো থাপ্পর দিয়ে জাগিয়ে বলে,
– আন্টি আন্টি আপনি শুনতে পাচ্ছেন।
আসমা বেগম চোখ মেলে তাকায়। আস্তে করে বলে,
– কে?
– আমি রাফাত। আপনার এই অবস্থা কেন আন্টি। কে করলো এমন।
রাফাত নামটা শুনতে পেয়ে আসমা বেগম হাসে খুব কষ্টে তারপর দুর্বল স্বরে বলে,
– রাফাত আজও পূর্ণাকে ভুলতে পারোনি বুঝি।
– ঠিক ধরেছেন আন্টি আমি পূর্ণাকে ভুলতে পারিনি। আপনি চলুন আমি আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি।
– আমার চিন্তা ছাড়ো রাফাত। আমার সময় শেষ। তুমি তোমার পূর্ণাকে বাঁচাও। ওরা পূর্ণাকে নিয়ে যেতে এসেছে।
– কারা?
– ঝুমুর বাইজি ও তার লোক। আমি আটকাতে গিয়েছিলাম বলে আমাকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে।
– পূর্ণা কোথায় আন্টি।
আসমা ব্যথায় আর্তনাত করে উঠে। তারপর বলে,
– উত্তরের জঙ্গলে ওকে ধাওয়া করেছে ঝুমুর বাইজি।
রাফাত কথাটা শোনার পর উত্তরের জঙ্গলে যায়। কিন্তু পূর্ণাকে কোথাও পায় না। হন্নে হয়ে সেদিন সে পূর্ণাকে খোজে পুরো কার্তিকপুর গ্রাম সে পূর্ণাকে খোজে কিন্তু পূর্ণার দেখে সে কোথাও পায় না। পরেরদিন রাতে খালি হাতে সে বাড়ি ফিরে। যেই রাফাত কার্তিকপুর গিয়েছিল সেই রাফাতের সাথে বাড়ি ফেরা রাফাতের অনেক পার্থক্য ছিলো। রাফাত বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল। ওয়াশরুমে গিয়ে প্রচুর কান্না করেছিলো। সেদিন তার ভাইয়ের জন্মদিন থাকায় সে সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের হয়। আর বের হওয়ার পরই পূর্ণার সাথে ধাক্কা লাগে কিন্তু ধাক্কা লাগলে কি হবে সতেরো বছরী পূর্ণা আর পাঁচ বছরী পূর্ণার মধ্যে যে অনেক পার্থক্য ছিলো। তাই কেউ কাউকে চিনতে পারেনি। কিন্তু সেইদিন সন্ধ্যায় যখন রাফাত পূর্ণার কাছে আসে তখনই তার মনে পড়ে তার পিচ্চি পূর্ণার কথা। তাই সে দ্রুত ঘরে চলে আসে। আর আসার পর পিচ্চি পূর্ণার ছবির দিকে তাকিয়ে চোখ ভেজায়। আর কিশোরী পূর্ণা রাফাতের কাছে জানতে আসছিলো কেন রাফাত পূর্ণার সাথে এমন করলো আর এসেই দেখে রাফাত পূর্ণার ছোট্ট বেলার ছবির দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। রাফাতকে কাঁদতে দেখে পূর্ণা বলে,
– আপনি আমার ছবির দিকে তাকিয়ে কাঁদছেন কেন?
রাফাত আড়ালে চোখের পানি মুঝে বলে,
– এইটা তুমি নও। এইটা আমার পিচ্চি পূর্ণা। আমার পূর্ণাবতি। আমার ভালোবাসা।
তখন পূর্ণার মাথায় কি যেনো খেলে সে বলে,
– রাফাত ভাই। আপনি রাফাত ভাই। শহীদা ফুপির ভাতিজা।
– হ্যা তারমানে তুমি পূর্ণা।
– হ্যা রাফাত ভাই আমিই পূর্ণা। সেই ছোট্ট পূর্ণা এখন কত বড় হয়েগেছি বলুন। কিন্তু আপনি এত গম্ভীর কবে থেকে হলেন।
– যবে থেকে তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছ।।
পূর্ণা হাসে। রাফাত পূর্ণাকে জরিয়ে ধরে বলে,
– পূর্ণা আর ইউ ওকে। সেইদিন তোমার কোনো ক্ষতি হয়নি তো।
– মানে আপনি কি করে জানলেন আমার ক্ষতি হতে পারতো।
– আমি গ্রামে গিয়েছিলাম। তারপর তোমার মা সব বলছে।
– মা কোথায় রাফাত ভাই। আর ওরা কেন আমাকে নিয়ে যেতে এসেছিল।
রাফাত মনে মনে বলে,
– তারমানে পূর্ণা জানে না ওর অতীত। ওর মায়ের অতীত।
রাফায় মলিন কন্ঠে বলে,
– আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছেন আন্টি।
কথাটা শোনার পর পূর্ণা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে নিলে রাফাত ধরে ফেলে। পূর্ণার জ্ঞান ফিরলে রাফাত পূর্ণাকে সব সত্য বলে। ওর আর ওর মায়ের অতীত বলে যেটা শোনার পর সে রাফাতকে ধরে অনেক কান্না করছিলো। তবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়।
____________________________________
বর্তমান,
ঝুমুর বাইজির সামনে আটসাট হয়ে বসে আছে পূর্ণা। ঝুমুর বাইজি পূর্ণার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। তারপর বিশ্রি একটা হাসি দিয়ে বলে,
– মায়ের থেইক্কাও বহুত সুন্দর হইছোস।
পূর্ণা কিছু বলে না। শুধু ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। এরা ওর মাকে মেরেছে। রাফাতকেও হয়তো। না না না রাফাতের কিছু হতে পারেনা। এইখান থেকে বেড়ুতে হবে। চৌধুরীর বাড়িতে অনেক রহস্য আছে। রাফাতকে ওরা চৌধুরীর বাড়ির গোপন ঘরেই আটকে রেখেছে নিশ্চয়। পূর্ণা দেখেছে ওরা কোনদিক দিয়ে সেই ঘর থেকে বেড়িয়েছে। রাফাতকে বাঁচাতে হলে এইখান থেকে তাকে বেড়ুতেই হবে। কিন্তু কিছুতেই কান্না চেপে রাখতে পারছে না। পূর্ণার এমন কান্না দেখে ঝুমুর বলে,
– কিলো ছেড়ি এত কান্দোছ কেন? শুধু চোখের পানি ফালাইছ না। একটু পরে সুখের কান্দন কান্দিস এহন থাম।
শেষের বাক্য শুনে ঘেন্নায় পূর্ণার গা রি রি করে উঠে। সে এক দোলা থুতু ঝুমুর বাইজির মুখে মেরে বলে,
– তুই মা জাতি নয়। মা জাতির কলঙ্ক তুই।
ঝুমুর রুমাল দিয়ে মুখের থুতু মুঝে। পূর্ণার চুলগুলো ধরে। রাগে কটমট করে বলে,
– বা**দীর বাচ্চা এত সাহস তোর। খারা দেখাইবার লাগছি। আহির এই আহির।
আহির ঝুমুরের ডাকে ঘরে আসে। তারপর বলে,
– বলো খালা।
– ওরে স্টিফেনে খাটে শুয়ায় দিয়া আয়।
পূর্ণা চিৎকার করে বলে,
– আল্লাহ্ গো বাঁচাও আমারে।
আহির টানতে টানতে পূর্ণাকে স্টিফেনের ঘরে নিয়ে যায়। পূর্ণার গায়ে সাজ নেয়। তবুও অনেক সুন্দর লাগছে তাকে। স্টিফেন পূর্ণাকে দেখে লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। পূর্ণা ভয়ে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে পড়ে। স্টিফেন এসে পূর্ণার গালে হাত রেখে বলে,
– ওহে সুন্দরী এত ভয় কিসের।
কথাটা বলে স্টিফেন পূর্ণার গলায় মুখ গুজতে নিলে সে স্টিফেন কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। অর্তকিত হামলার জন্য স্টিফেন প্রস্তুত ছিলো না। ফ্লোরে পরে যায়। পূর্ণা হাতে ফুল দানি নিয়ে টেবিলের মধ্যে আছাড় দিয়ে ভেঙে বলে,
– কাছে আসবি তো খুন করবো বলে দিলাম। আমায় রাগাবি না। চলে যা বলছি।
স্টিফেন উঠে দাড়িয়ে বলে,
– কুল কুল ঐটা আমার হাতে দাও। এমন কেন করছো। আমি কিন্তু ঝুমুর বাইজিকে ডাকবো। এমন করো না।
পূর্ণা ঘুরছে স্টিফেনও ঘুরছে। ঘুরতে ঘুরতে পূর্ণা দরজার কাছে চলে আসে।তখন তার পিঠ লাগে কারো বুকের সাথে। সে ভয় পেয়ে পিছে তাকিয়ে দেখে কৌশিক। কৌশিককে দেখে সে একটু সাহস পায়। সে কৌশিককে জড়িয়ে ধরে বলে,
– কৌশিক আমাকে বাঁচা দোস্ত ওরা আমাকে বাঁচতে দিবে না। প্লিজ দোস্ত।
পূর্ণা কাঁদছে আর এইসব বলছে। কৌশিক পূর্ণার মাথাটা তার বুকে থেকে উঠিয়ে কোমল কন্ঠে বলে,
– বাঁচাবো তো দোস্ত। আগে তুই কান্না বন্ধ কর। ঠাণ্ডা হো।
পূর্ণা কান্না থামিয়ে দেয়। কৌশিক পূর্ণাকে ধাক্কা দিয়ে স্টিফেনের কাছে ফেলে দেয়। তারপর বলে,
– তোর মতো একটা পিচ্চি মেয়েকে বাগে আনার জন্য কত প্লান। সেই ট্রেল স্টেশনের পাশে থেকে নাটক শুরু এখন নাটক শেষ। আমাদের কাজ শেষ তোকে ধরে এনে খালার হাতে তুলে দিয়েছি। এখন তুই তোর কাজ কর। তারপর না হয় স্টিফেনের কাজ শেষ হলে আমাদেরকেও একটু ইন্টারটেইন করবি।
পূর্ণা পৃথিবীটা থমকে যায়। বিস্মিত নয়নে সে কৌশিকের দিকে তাকিয়ে থাকে। সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ তার ভেতরটা ছিড়ে দিচ্ছে। কলিজাটা পুড়ে ছাই হচ্ছে। আবার ঠকলো সে। প্রথমে আহিরকে ভালোবেসে ঠকলো। এখন আবার কৌশিক। যদিও কৌশিক তার বন্ধু ছিলো। কার্তিকপুরে স্কুলে থাকাকালীন আহিরের প্রেমে পড়েছিলো সে। সেই আহির ঝুমুর বাইজির লোক বেড়ুলো। এখন আবার কৌশিক।পূর্ণা ধপ করে ফ্লোরৃ বসে পড়ে। চিৎকার করে বলে,
– রাফাত। আই মিস ইউ রাফাত। আমাকে কে বাঁচাবে। তোমার পূর্ণা যে বিপদে আছে রাফাত।
হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে পূর্ণা। কৌশিক দরজা লাগিয়ে চলে যায়।
#চলবে
বিঃদ্র ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।