#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২৭.
#WriterঃMousumi_Akter
জীবনে অনেক মানুষের বয়ফ্রেন্ড দেখেছি কিন্তু আমার বয়ফ্রেন্ড এর মতো দুনিয়াতে দেখি নি।মনে হয় ওই এক পিছ ই ওপরওয়ালা সৃষ্টি করেছেন।প্রেমিকা পানিতে পড়ে গিয়েছে কোথায় ঝাপ দিয়ে গিয়ে কোলে করে তুলবে সেটা নয় ক্ষিপ্ত নয়নে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।উনার চাহনি দেখে হৃদপিন্ড কাঁপা শুরু হলো।আমি ভীতু ভীতু নয়নে উনার দিকে তাকালাম।অনেক বেশী পানিতে পড়িনি কোমর অবধি পানিতে পড়েছি।
“বিহান ভাই দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,পানি থেকে ওঠবি নাকি মৃগে রুগিদের মতো পানিতেই পড়ে থাকবি।”
“আমি আসহায় দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম হাইরে আমার বয়ফ্রেন্ড।এই ছিলো তোর মনে।বাহ মাসুদ বাহ!কোথায় টেনে তুলবি তা না রাগ দেখাচ্ছিস।”
“উঠার চেষ্টা করলাম, এমন সময় আলিপ ভাইয়া উনার হাত এগিয়ে দিলেন।আমি আলিপ ভাইয়ার হাত ধরতে যাবো এমন সময় বিহান ভাই আলিপের আগেই আমার হাত ধরে ফেললেন।রাগে দাঁত খিচে বলছেন,এই জন্য মাইয়া মানুষ নিয়ে কোথায় যেতে ইচ্ছা করে না।যেখানে যাবে ঝামেলা পাকাবে মানে পাকাবেই।আমি একশ বার বললাম এদের আনার দরকার নেই কিন্তু এদের না আনলে নাকি খাওয়া হজম হবে না।মেয়ে মানুষ সব কিছুতে বোঝে বেশী।”
“দেখুন চারপাশে মানুষ আছে তারা দেখছে,মানুষের মাঝে একটুও বকা ঝকা দিবেন না।আর বেশী বুঝলাম বা কি আর সমস্যা করলাম কি?”
“সিরিয়াসলি দিয়া এখনো প্রশ্ন করছিস। বেশী না বুঝলে পুকুরে আসতি তুই।সাঁতার জানিস তুই। যদি বেশী পানিতে পড়ে যেতিস তাহলে কি হতো কোনো আইডিয়া আছে তোর।একবিন্দুও তো সাঁতার জানিস না।”
“কি করবো টিউবওয়েল এ ভীড় ছিলো।”
“এটা স্বাভাবিক ব্যাপার দিয়া বিয়ে বাড়ি এখানে ভীড় থাকবেই।অস্বাভাবিক হলো তোর এই পুকুরে আসা।”
“ভুল টা আমি করেছি বুঝতে পেরে চুপ হয়ে রইলাম।”
“এমন সময় আমাদের দল বল সব হাজির। ”
শুভ ভাইয়া বলে উঠলো,দিয়া কিভাবে পড়ে গেলি তুই।কোনো সমস্যা হয় নিতো।ভাইয়া আমার গায়ে হাত দিয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠলো।
মেহু আপু বলে উঠলো ইস দিয়া আগে জানলে ভিডিও করতাম কিভাবে পড়ে গেলি।রিয়া, তোহা আপু ও কিছুটা ফান করে ক্ষ্যান্ত হলো।
“বিভোর ভাই বললেন,,ইস রিয়া পড়ে গেলে আজ হিরোর এন্ট্রি নিতাম।কোলে তুলে পানি থেকে তুলতাম। অতপরঃপ্রেম টা হয়েই যেতো আমার।রিয়া একটু পড়ে যাও তো।”
“”রিয়া বললো,খেয়ে কাজ নেই আপনার ভরসায় পানি তে পড়বো যাতে পানিতে ডুবে মরি তাইনা।আপনার মতো রোহিঙ্গা আমাকে তুলতে পারতো।”
“আমার মতো সুঠাম দেহের অধিকারী কে রোহিঙ্গা বলো রিয়া।বাসর ঘরে বাকিটা বুঝাবো।”
“সাইড থেকে একটা মেয়ে খুব জোরে হেসে উঠলো আমাকে ভেজা কাপড়ে দেখে।”
বিহান ভাই ক্ষীপ্ত নয়নে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো আপনি কি ছেলে?
মেয়েটি বললো আপনার কি দেখে মনে হলো আমি ছেলে?
আপনার ঢং দেখে মনে হলো।আমি কোনো মেয়েকে অসম্মান করি না।কিন্তু আপনি মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ে পড়ে গিয়েছে ভিজে গিয়েছে শরীরের ভাজ দেখা যাচ্ছে সেটা দেখে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের মতো হাসছেন।আপনার কি উচিত না মেয়ে হয়ে আরেক টা মেয়েকে হেল্প করা।
মেয়েটির মুখে আর কোনো কথা নেই।
বিহান ভাই টি-শার্ট এর উপরে শার্ট পরেছিলেন।উনি উনার শার্ট খুলে আমার কোমরে বেঁধে দিলেন।কোমর সহ শার্ট এ ঢেকে গেলো।আচ্ছা উনার এই বিশাল বকাঝকার মাঝে এত কেয়ারিং টা আমাকে মুগ্ধ করে।এই মানুষ টা এতটা চমৎকার কেনো?
সবাই রওনা হলাম, সবাই আমার থেকে খানিক টা এগিয়ে গেলো।হঠাত খেয়াল করলো আমি নেই পেছনে।বিহান ভাই দ্রুত ছুটে এসে দেখেন আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।বিহান ভাই আমাকে বলেন তোর সমস্যা কি দিয়া এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?আমি হঠাত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে তুই কি কোথাও হারিয়ে গেলি নাকি।উফফ তোকে দেখার পর নিঃশ্বাস নিতে পারছি।বিহান ভাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম আমি হাটতে পারছি না বিহান ভাই।বিহান ভাই তাকিয়ে দেখলেন পা খানিক টা ফুলে গিয়েছে আর ছুলে গিয়েছে খানিক টা ক্ষত হয়ে গিয়েছে।বিহান ভাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো উনি কেঁদে দিবেন দিবেন একটা ভাব।মুখশ্রী ভীষণ মলিন হয়ে আছে।নিচু হয়ে বসে বলেন অনেক কষ্ট হচ্ছে তাইনা পায়ে হাত বুলোতে বুলোতে।উনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে আমার মুখের দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলেন,কি দেখছেন ওভাবে,যেনো বহুকাল দেখেন নি আমায়।অপলক নয়নে তাকিয়েই আছেন।
আমাকে বিহান ভাই এর কোলে দেখে বাকি সবাই অবাক হয়ে গেলো।ওরা এক সাথে প্রশ্ন করা শুরু করলো কি হয়েছে দিয়ার।বিহান ভাই শান্ত গলায় বললেন,পা মচকে গিয়েছে ছুলে ও গিয়েছে খানিক টা।বিহান ভাই বললেন আমি দিয়াকে নিয়ে বাইকে যাচ্ছি তোরা আয়।
সেদিন বাসায় আসার পর বিহান ভাই আমাকে কোলে তুলে আমার রুমে নিয়ে গেলেন।রাস্তা থেকে ওষুধ আর মলম ও এনেছেন।আম্মু বাজারে ছিলো বাসায় ছিলো না।বিহান ভাই উনার হাতের আলতো পরশ দিয়ে মলম আমার পায়ে লাগিয়ে দিলেন।বিছানায় বসে আছি আমি পা মেলে দিয়ে।বিহান ভাই কপালে চুমু দিয়ে বললেন,পিচ্চি অনেক কষ্ট হচ্ছে তাইনা।আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আসলে কিছু অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যায় না বিহান ভাই কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি আমার জন্য অনেক কষ্ট পাচ্ছেন।উনার হাত ধরে বললাম এত কষ্ট পাচ্ছেন কেনো বিহান ভাই আমি ঠিক আছি।
__________________________________
“”দুই মাস পরে বিহান ভাই আমাকে হোয়াটস এপ এ চার টা স্ক্রিনশট দিয়ে বললেন এই চারটা ছেলে কে বা কারা দিয়া।”
“রিপ্লে দিলাম চিনিনা বিহান ভাই।”
“তাহলে এক্সেপ্ট করেছিস যে”
“এমনিতেই,জাস্ট এমনি।ফেসবুক ফ্রেন্ড তারা।”
“একটা ছেলে তোকে কিস ইমুজি পাঠিয়েছে হুয়াই দিয়া।চিনে না জানেনা কিস ইমুজি বাহ।”
ইমুজি টা ডিলিট দিলাম দেখলো কিভাবে।এই ছেলে টা কি জ্বীন।
“বললাম আমি কিভাবে জানবো,,ওইটা জাস্ট ইমুজি তো তাইনা।এত সিরিয়াস হওয়ার কিছুই নেই।”
“জাস্ট ইমুজি,জাস্ট ফ্রেন্ড তাইনা দিয়া।ওয়েট এন্ড সি বেইবি।”
সেদিন রাতে ঘুমিয়ে গেলাম।পরের দিন ঘুম থেকে উঠে অবাক হয়ে গেলাম।
—ফ্রেন্ডসংখ্যা ৫০ থেকে পই পই করে ৫০০০ হয়ে গিয়েছে।বুঝলাম না একটা শূণ্য এর পরে আরো দুইটা যোগ হয়েছে কিভাবে।ঘুম থেকে উঠে মাথা হ্যাং হয়ে গিয়েছে আমার।গতকাল রাতেও ফ্রেন্ডলিস্ট দেখেছি যেসব পোস্ট এ ১৫-২০ টা লাইক ছিলো সেগুলো তে ৩০০ থেকে ৪০০ প্লাস লাইক।প্রফাইল লক করা ছিলো দেখি যে সেটাও আনলক।কাহিনী কী কিছুই বুঝলাম না।
—এইদিকে ছ্যাচড়া ছেলেরা কেউ মেসেজ দিছে ওই।এর আগে পরে কখনো কথা হয় নি অথচ মেসেজ দিচ্ছে ওই।যেনো তাদের ঘরের বউ।
—ছ্যাচড়ার চরম লেভেল গুলা তো একটা হাই হ্যালো না লিখে প্রথমেই ভিডিও কল দিচ্ছে।কন্টিনিউ ভিডিও কল অডিও কল দিচ্ছে কিছু পাব্লিক।বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি আমি জাস্ট।
–কেউ কেউ অশালিন ভিডিও দিচ্ছে রিপ্লে দিচ্ছি না বলে।
–কেউ কেউ মেসেজ দিচ্ছে জান কেমন আছো।আমি তুমাকে ভালবাসতে চাই পাখি।
—অনেকে মনে হয় জীবনে স্কুলেই যায় নি কারো থেকে একটা আইডি খুলে নিয়েছে।ভয়েজ মেসেজ দিচ্ছে কল ধরো আমি লিখতে পারি না।
—ফোন একভাবে হ্যাং হয়ে আছে।আমার মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাচ্ছি।
—আম্মু রান্নাঘর থেকে এসে বলছে,কেউ ফোন দিলে প্রয়োজনেই ফোন করে দিয়া।এতবার ফোন দিচ্ছে রিসিভ করছিস না ক্যানো?এক্ষুণি ফোন রিসিভ কর।তুই আমার আত্মীয়রা কেউ ফোন দিলে ঠিক ভাবে রিসিভ ই করিস না।নেটে কল দিলে নাকি টাকা কম কাটে তাই তারা নেটে কল দেয়।অথচ তুই রিসিভ ই করিস না।আমার কাছে সবাই নালিশ দিছে।তাছাড়া তারা আমাকে একটু দেখতেও চাই বলে কল দেয়।
–দেখো আম্মু তোমার ওই কিপটা আত্মীয়ের কথা বাদ দাও।ওসব দেখা ফেকা সব মিথ্যা।সব ই টাকা বাঁচানোর ধান্দা।তাদের তোমার জন্য পরাণ পুড়লে তোমার নাম্বারেই ফোন দিবে।মানুষ যে এত ছ্যাচড়া ক্যান বুঝি না।আমার মা জননী ছেড়ে দেওয়া পাত্রী না।তার জাত পাত তুলে কিছু বললে আর আস্ত রাখে না।মানে মামা, খালা বা মায়ের সাথে জড়িত কোনো আত্মীয়ের নামে কোনো বদ নাম সে সহ্য করতে পারে না।
—মা জননী ক্ষেপিদের মতো বলে উঠলো,তোর মতো নবাব তো আর সবাই না।মানুষ হিসাব করে তোর মতো দাতাগার না কেউ।
—এইদিকে আমার ফোন অতিরিক্ত কল মেসেজে হ্যাং করে আছে।কতক্ষণ বা বসে থাকবো সারারাত ওয়াশরুম যায় নি।পানি কম খাই ওয়াশরুম যাওয়ার ভয়ে।ফোন টা রেখে ওয়াশ রুম গিয়ে ট্যাবের পানি ছাড়লাম।ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখি রিয়া হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে,রিয়ার আম্মু ও হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে আর আম্মুর হাতে খুন্তি।খুন্তি হাতে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে পিটানির জন্য।আম্মুর রনচন্ডি মুড দেখে অবাক হয়ে গেলাম।মারবে মারবে ভাব কিন্তু মারলো না।বিশ্রি ভাবে বললো,তোকে ফোন কিনে দিয়েছি কি এসব অসভ্য লোকের সাথে কথা বলতে।এরা কারা বল আগে।এরা কি তোর ক্লাস ফ্রেন্ড।আজ থেকে ফোন ই চালানো বন্ধ তোর।
—রিয়ার আম্মু নাকি ফোন রিসিভ করেছিলো কোনো এক ভদ্রলোক নাকি তার জামা কাপড় খুলে দেখিয়ে দিয়েছে।রিয়ার আম্মু নাকি ভয় পেয়েছে আর সেটা আম্মুকেও দেখিয়েছে।কাকি মনি নাকি বার বার বলছিলো আপা এটা আমি কি দেখলাম।আসলেই দেখলো কি সেটাই ভাবছি?বাবাহ আমার আম্মু যে আম্মু।
—হাজার বার বুঝালাম আম্মু এটা ফেসবুক এর পাব্লিক আমি চিনি না।আম্মু কি আর তা মানে।তার ধারণা ফোন নাম্বার না পেলে কিভাবে ফোন দিবে।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২৮.
#WriterঃMousumi_Akter
🍁.
ঠাসসস শব্দে কেঁপে উঠলো রুম।আম্মুর হাতের পাঁচ আঙুল আমার গালে লেগে গেলো।আম্মুর যথেষ্ট বকাবকিতেও মন ভরে নি।তার ধারণা তার মেয়ে অন্য জগতে প্রবেশ করেছে।তার মেয়ে এমন মানুষদের সাথে ফোনে কথা বলে তারা ভিডিও কলে অশালীন জিনিস দেখায়।আম্মুর ধারণা তার মেয়ে শুধু অসভ্য হয়েছে সেটা নয় কয়েক হাজার মানুষ কে ফোন নাম্বার দিয়েছে।আর ভিডিও কলের নিম্ন জগতে প্রবেশ করেছে।লজ্জা আর অপমানে মরে যাচ্ছি আমি।চড়ের থেকে বেশী লজ্জা পাচ্ছি আম্মু আর কাকি আমাকে নিয়ে কি ভাবছেন।ছোট খাটো একটা ভূমিকম্পণ হয়ে গেলো আমার জীবনে।আম্মুর মন থেকে এই ধারনা বের করাও সম্ভব নয়।
টেনশনে আম্মুর প্রেসার বেড়ে গিয়েছে।বাবা আর ভাইয়া এসে বাড়ির গম্ভীর ভাব দেখে প্রশ্ন করলো কি হয়েছে।আম্মু বললো আমি নাকি সবাই কে ফোন নাম্বার দিয়ে বেড়াচ্ছি।ভাইয়া জিজ্ঞেস করলে বললাম,ফেসবুকের কথা।ভাইয়া আম্মুকে হাজার বার বোঝালেও কোনো কাজ হলো না।আম্মু বললো তোর লাই পেয়েই তোর বোন এত খারাপ হচ্ছে।দুইটা ছেলে মেয়ে মানুষ করতে পারলাম না।ভাইয়া আর আমি দুজনেই হতাস।
–এই সব কিছুর পেছনে বিহান ভাই এর হাত আছে।উনি ছাড়া এই কাজ আর কেউ করে নি।কারণ আইডির পাসওয়ার্ড তো উনার কাছেই আছে।উনি ছাড়া আর অন্য কারো কাছে আইডির পাসওয়ার্ড নেই।
একটা মানুষ কত বড় অসভ্য হলে এমন করতে পারে ভাবা যায়।মানুষ দেখেছেন এমন অসভ্য মানুষ দেখেছেন।এই রকম বয়ফ্রেন্ড থাকার থেকে না থাকাই অনেক ভালো।উনার সাথে আজ ই ব্রেক আপ আমার।
–আম্মু তো ফোন নিয়েই নিয়েছে উনার জন্য শুধু মাত্র উনার জন্য।আমার কাছে গোপন একটা সিম আছে।রিয়ার ফোনে সিম টা অন করে বিহান ভাই কে কলের উপর দিয়েই যাচ্ছি একবার ও রিসিভ করে না।সকাল থেকে বিকাল গড়ালো সে ফোন ই রিসিভ করে না।কত বড় অসভ্য হলে এইভাবে ফোন রিসিভ না করে থাকতে পারে।রাতে রিয়ার ফোনে আমার আইডি লগ ইন দিয়ে আইডির পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দিলাম।আইডির পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করার দুই মিনিট পর দেখি কল ব্যাক দিয়েছেন।এবার উনি কল এর উপর কল দিয়েই যাচ্ছেন। আমি কোনোভাবেই রিসিভ করছি না।টুপ করে নাম্বার টাও ব্লক করে দিলাম।এই মুহুর্তে আমি কোনো বিহান টিহান কাউকেই চিনি না।রিয়ার ফোনেও ফোন দিচ্ছেন আমি রিয়ার ফোন ও অফ করে রাখলাম।
–সন্ধ্যার পর পর ই তোহা আপু খুশিতে নাচতে নাচতে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করলো।রিয়া আমাকে বলছে এই দিয়া তোহা আপুর এত খুশির কারণ কিরে।রিয়াকে বললাম সেটাই তো ভাবাচ্ছে আমাকে।তোহা আপু রুমের ভেতরে এসেই বিশাল ডান্স শুরু করেছেন কিন্তু কেনো?প্রশ্ন করলে ১৫ টা মিস কল দেখালো।নাম্বার সেভ মাই ক্রাশ নাম্বার টা বিহান ভাই এর।বিহান ভাই এর কল পেয়ে সে এতটাই খুশি।খুশিতে আত্মহারা হয়ে তোহা আপু কল ই রিসিভ করে নি।নিভৃত নয়নে তাকিয়ে ছিলো ফোনে ভেষে আসা নাম্বারের দিকে।আদিক্ষেতা দেখে যা রাগ হচ্ছিলো ঢং করে নাম্বার ই রিসিভ করা হয় নি।আবার ক্রাশ দিয়ে সেভ।দুনিয়াতে আর মানুষ পেলো না ক্রাশের জন্য।
–তোহা আপু ভেবেছে বিহান ভাই নিশ্চিত কোনো রোমান্টিক কথা বলতেই এতবার ফোন দিয়েছেন।বিহান ভাই এর রোমান্টিক কথা গুলো আমাকে আর রিয়া শোনাবে বলেই ছুটে এসেছে।
–তোহা আপু বিহান ভাই কে কল ব্যাক করতেই বিহান ভাই কল টা কেটে নিজে ব্যাক করলেন।বিস্মিত হয়ে গেলাম দেখে অথচ আমি কল দিলেই রিসিভ করেন।এইদিকে তোহা আপুর কল কেটে দিয়ে ব্যাক দেওয়া হচ্ছে।তোহা আপু উত্তেজিত মনে খুশি হয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশের মানুষ টা বলে উঠলেন,তোহা ইমারজেন্সি একটু দিয়াদের বাসায় যাও তো।দিয়ার কাছে গিয়ে ফোন টা দাও।বলবা ওর এক্সাম এর বিষয়ে ইমারজেন্সি কথা আছে।তোহা আপুর মুখটা চুপসে গেলো তার ক্রাশ এটা বলার জন্য ইমারজেন্সি কল দিয়েছিলো।তোহা আপু বললো,বিহান ভাই দিয়া আমার সামনেই আছে নিন না কথা বলুন।আমি জোরে বললাম,তোহা আপু আমি কোনো বিহান ভাই টিহান ভাই কে চিনি না বলে দাও।আর আমি কথা ও বলবো না।বলেই তোহা আপুর হাত থেকে ফোন টা নিয়ে কেটে দিলাম।
–তোহা আপু,রিয়া আর আমি তিনজনে সুয়ে আছি বিছানায়।সকালের ঘটনার রিপিট করে তোহা আপু আর রিয়া হেসে যাচ্ছে।ওদের হাসি দেখে আমার আরো রাগ হচ্ছে।আমি তো আর বলতে পারছি না আমার আইডির পাসওয়ার্ড বিহান ভাই এর কাছে আছে।
তোহা আপু মহা চিন্তায় আছে,,বিহান ভাই আসলে কার সাথে রিলেশন করবেন।মেয়েটা কি তার থেকেও সুন্দর হবে।বিহান ভাই এর বিয়ের দিন সে কিভাবে সহ্য করবে।ব্যাপার টা খুব ই ভাবাচ্ছে তাকে।তোহা আপুর চিন্তা দেখে ডিপ্রেশন এ চলে গেলাম আমি।
___________________________________
লাল স্কার্ট আর লাল টি-শার্ট পরে ঠোঁটে খানিক টা লাল লিপিস্টিক পরে রওনা হলাম মামাদের বাসায়।বিহান ভাই নেই নিশ্চিন্তে যেতেই পারি।কারণ মামির শরীর খুব খারাপ রান্না করে দেওয়ার মানুষ নেই।বিভোর ভাই এর আম্মু মাঝে মধ্য রান্না করে খাবার দিয়ে আসছেন।বাসার ভেতরের সব কাজে তো আর একজন কে ডেকে ডেকে আনা যায় না।এইজন্য মামি অনেক রিকুয়েষ্ট করেছে আমি যেনো যায়।ব্যাগে কয়েক সেট জামা কাপড় নিয়ে রওনা হলাম।১৫ মিনিট পরে মামাদের বাসায় পৌছালাম।
মামা আজ বাড়িতেই আছেন?মামা কে দেখেই বললাম মামা কেমন আছেন?মামা স্বভাব সুলভ হাসি দিয়ে বললেন,, তুই এসছিস মা।তুই থাকলে আমি একটু নিশ্চিন্ত হই।তোর মামির পায়ের ব্যাথা বেড়েছে আমি কি আর সব সময় বাসায় থাকতে পারি।মামাকে বললাম একদম চিন্তা করবেন না মামা এমি এসে গেছি।মামির কাছে গেলাম গিয়ে দেখি সুয়েই আছে।মামিকে বললাম তোমার ছেলে নেই তাই এসছি থাকলে আর আসতাম না বুঝলে।মামি বললো,আমার ছেলে কিন্তু তোর জন্যই বাড়িতে আসে।
তোমার ছেলের নাম ও শুনতে চাই না।এখন কি কাজ করতে হবে সেটা বলোতো।
ঘর ঝাড়ু দেওয়া হয় নি ঠিক ভাবে।পারলে কর না পারলে থাক মা।
সব গুলা রুম ঝাড়ু দিয়ে বিহান ভাই এর রুমে প্রবেশ করলাম।বিহান ভাই এর ঘর অনেক দিন মনে হয় ঝাড়ু দেওয়া হয় না।রুম টা ঝাড় দিয়ে বিছানা ঝেড়ে বিছানায় রেস্ট নিচ্ছি।
আমার জীবনের সব শান্তির বিনাশ ঘটাতে দেখি আমার মহা শত্রু হাজির।এটা কিভাবে সম্ভব বিহান ভাই এখন বাড়িতে।চোখ মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করেই রুমের দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দিয়েই শার্ট এর বোতাম খোলা শুরু করলেন।ঘাড় থেকে ল্যাপটপের ব্যাগ টা নামিয়ে বিছানায় রাখলেন।আমার দিকে একবার আড়চোখে তাকালেন,তাকিয়ে আবার শার্ট এর বোতাম খুলতে লাগলেন।শার্ট খুলে আলনায় মেলে দিয়ে টাওয়াল কাঁধের উপর দিলেন।উনাকে দেখেই এক দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করতে উনি আমার দুই হাত দরজার চেপে ধরলেন।ভয়ে হৃদপিন্ড থর থর করে কাঁপছে আমার।প্রচন্ড রেগে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
–খানিক সময় তাকিয়ে থেকে বলেন,খুব সাহস হয়েছে তাইনা? খুব সাহস বেড়ে গিয়েছে তাইনা শ্বশুরের মেয়ে!
–ক ক কোন সাহস।
–আমার ফোন রিসিভ করা হয় না,ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ আমি সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।
–দেখুন আপনার এখন এগুলা নিয়ে মাথা না ঘামালেও হবে।কারণ আপনি এখন আমার প্রাক্তণ বয়ফ্রেন্ড?
–হোয়াট দ্যা জোকস। প্রাক্তন হলাম কখন।
–হয়েছেন।আমি ব্রেক আপ করেছি আপনার সাথে।সো আমাদের ব্রেক আপ।
–বাহ!বাপ দাদার মতো বাটপার।বংশের কোনো গুন ই বাদ যায় নি তোর।ব্রেক আপ করেছে শ্বশুরের মেয়ে।অথচ তার জামাই জানেই না।ব্রেক আপ কি তুই নিজে নিজে করেছিস।
–তাহলে কি আর দশজন কে নিয়ে করবো।
–বাহ নাইস ব্রেক আপ।প্রেমিকা ব্রেকাপ করেছে প্রেমিক সেটা জানেই না।
–কিসের প্রেমিক হ্যাঁ।আপনি আমার ভাই।মামাতোওওওওও ভাই।
–ওয়াও ফুফাতো বোন ফোন টা কি তোর।
উনার হাতে আমার ফোন দেখে অবাক আমি।
–খুব অবাক হচ্ছিস তাইনা?আমাকে কি মফিস আর মাসুদ পেয়েছিস।আমার সাথে বাড়াবাড়ি করলে তার ফলস্বরুপ কি হবে বলি শোন তাহলে?ব্রেকাপ তোর কোনদিন ই হবে না।তোর ফোন এভাবেই আমার হাতে চলে আসবে টের ও পাবি না।বেশী বাড়াবাড়ি করে আমাকে স্টুডেন্ট লাইফে বিয়ে করতে বাধ্য করিস না বুঝলি।
–উনার কথা শুনে অসহায় নয়নে তাকিয়ে রইলাম।মানে উনি আমি যায় করি কখনোই ব্রেকাপ করবেন না।উনার দিকে তাকিয়ে বললাম আপনি তোহা আপুর কল কেটে দিয়ে ব্যাক করেন আর আমার কল রিসিভ করেন ব্রেকাপ করবো না কি করবো।মানুষ নিজের প্রেমিকার কল কেটে দিয়ে ব্যাক করে আর আপনি।
–আমি আর অন্য মানুষ এক না তাই।তোর কলেজের যাবতীয় আপডেট আমি দেই তোকে।লেখাপড়া জনিত সব আপডেট আমার কাছেই থাকে।তোর ফোনে টাকা থাকলে আমার বাড়তি চিন্তা হয়।কখন কাকে মিস কল দিয়ে কথা বলবি তার ঠিক নেই।এ কারণে ইচ্ছা করেই আমি কল রিসিভ করি।কারণ আমি ঠিক ই আমার সময় বুঝে সকালে থেকে ঘুমোনোর আগে পর্যন্ত তোর খোজ রাখি।
–দেখুন এত কথা শুনতে চাই না।আমাকে ছাড়ুন আপনি এক্ষুণি ছাড়ুন।
–এমনি তে অনেক সাহস দেখিয়েছিস, ছেলেরা তোকে কিস ইমুজি পাঠায়।
–আমি চার জনের ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করেছি বলে আপনি সবার টা করবেন।জানেন কত বিরক্ত করেছে আমাকে।
–কারন তোর এটাই ভাল লাগে।
যারা কিস পাঠায় তাদের খুব ভাল লাগে তাইনা?কিস খুব ভাল লাগে।
–রাগে বললাম হ্যাঁ লাগে।
কথাটা মুখ থেকে বের হতেই দেখি উনার হাব ভাব ভালো না।এমনইতেই হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।এবার মুখ এগিয়ে আনছেন।মুহুর্তের মাঝে আমার ওষ্ট ওনার আয়ত্ত্বে চলে গেলো।আমি শুধু উমম উমম সাউন্ড করছি।কেটে কয়েক মিনিট।অসভ্য মানুষ টা এতক্ষনে ছাড়লেন আমাকে।দম বেরিয়ে যাচ্ছিলো আমার।উনি কি ইমরান হাশমি হয়েছেন।দুষ্টুদের মতো হাসছেন।আমাকে রাগ্ব ফুঁশতে দেখে আমার দিক্ব খানিক টা ঝুঁকে এসে বললেন,,”যদি তুমি চাও রিভেঞ্জ নিতে পারো পিচ্চি।আমি বাঁধা দিবো না।”#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২৯.
#WriterঃMousumi_Akter
নিমিষেই মনে হলো খানিকটা থুতু আমার পেটে প্রবেশ করলো।ওয়াক থুঃনিজের থুতু তাই ফেলে দেই আমি।আর অন্য একজনের টা ভাবতেই কেমন বমি বমি পাচ্ছে আমার।দৌড়ে গিয়ে উনার জানালা দিয়ে সেকেন্ডে সেকেন্ডে থু ফেলছি আমি।বুঝলাম না ওই অসভ্য মানব টা কি অমৃত পান করেছে।উনার ঠোঁটের কোনায় যেনো মহা প্রশান্তি দুষ্টু হাসি।ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দেখছেন আমি কি করি না করি।টিস্যু দিয়ে ঠোঁট মুখ মুছেই যাচ্ছি উনার প্রায় এক বক্স টিস্যু শেষ করে ফেলেছি আমি।উনি অবাক হয়ে তাকিয়েই আছেন।
উনার দিকে তাকিয়ে বললাম, “আমি আপনার শরীর ভরে এবার বমি করে দিবো।ইয়াক এত বিশ্রি আপনি।আশ্চর্য ব্যাপার আপনার ঘেন্না লাগছে না বিহান ভাই।আর আপনিও চুমু টুমু খেতে জানেন খুব অবাক হয়েছি আমি। ”
“হুম আগে ঘৃণা লাগতো যখন প্রেমিকা ছিলো না।প্রেমিকার যেখানে চুমু ভাল লাগে সেখানে প্রেমিক কে তো চুমু দিয়েই রেকর্ড ভাঙতে হবে তাইনা দিয়া।ঘর আমার বসত করবে আরেকজন সেটা কি বিহান হতে দিতে পারে।প্রেমিকা আমার ছোট বেলা থেকে দেখে শুনে রাখছি আর বড় হয়ে চুমু পাঠাবে আরেকজন এত বড় অনর্থ বিহান হতে দিতে পারে না।”
“চুমুর ইমুজি তে এত রিয়্যাক্ট তাহলে চুমু দিলে কি করতেন।আমাকে কি মেরে ফেলতাম।”
“তোকে মেরে ফেললে আমার বেঁচে থাকা অসম্ভব।তাই আমার নিজের বেঁচে থাকার জন্য তোকে প্রয়োজন অক্সিজেন এর মতো।যে চুমু দেওয়ার মতো সাহস দেখাতো তাকে মেরে ফেলতাম ঝামেলা শেষ।”
“মানে একজন কে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছেন।”
“অন্য অপশন ও আছে দিয়া।তোকে মেরে নিজেও মরে যাবো এটাও বেটার আইডিয়া তাইনা।”
“উনার কথা শুনতে শুনতে ওয়াক করে বমি করে দিলাম।আর দ্রুত জানালার কাছে গেলাম।”
“বিহান ভাই আমার কাছে এসে বললেন,কি সমস্যা তোর এইভাবে বমি করছিস কেনো?”
“আপনি যা করেছেন তাতে কি করবো?”
“জাস্ট একটু চুমুতেই সুখবর শুনবো বাহ।”
“এই কিসের সুখবর শুনি।”
“যে সুখবরে আমি বাবা হবো।”
“রাক্ষস একটা।আপনার জন্য আম্মু আমাকে মেরেছে।আরো ভেবেছে আমি সব বাজে ছেলেদের সাথে রিলেশন করি।একটা ছেলে আরো কি করেছে জানেন।”
“হুম জানি ফুপ্পি আমাকে সব বলেছে।নে তোর ফোন। এইবার হ্যাপি।”
“ফোন টা পেয়ে প্রাণ ফিরে পেলাম আমি।ফোন টা আমার হাতে এনে দেওয়ার জন্য উনাকে মাফ করে দিলাম।”
“উনি আমার দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ দিয়ে বললেন, আমি সাওয়ার নিতে যাচ্ছি।যাবি।”
“খেয়ে আমার কাজ নেই তাইনা?”
“রাগলে খারাপ লাগে না কিন্তু তোকে।ভালোই লাগে দিয়া।”
_______________________________
সন্ধ্যার পর পর ই বিভোর ভাই,তিয়াস ভাই,রিয়া, আর তোহা আপুর আগমন ঘটলো।মামি অসুস্থ এটা শুনেই তারা এসছে।বিহান ভাই বিছানায় বসে ল্যাপটপ এ পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছেন।কি করছেন তা কি জানি।আমি কফি বানিয়ে তোহা আপুদের খেতে দিলাম আর এক কাপ কফি বিহান ভাই এর জন্য নিয়ে গেলাম।উনার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম কিন্তু খেয়াল ই করছেন না।উনাকে আমার দিকে মনোযোগ করানোর জন্য ছোট ছোট কাশি দিচ্ছি তবুও তাকাচ্ছেন ই না।চোখ কপাল ভাজ করে মন দিয়েছেন ল্যাপটপ এ।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বেডের পাশে থাকা টি-টেবিলে কফিটা রেখে রওনা হতেই পেছন থেকে টি-শার্ট টেনে ধরলেন বিহান ভাই।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি,কফি হাতে নিয়ে কফি তে চুমুক দিয়েছেন।কফি খেতে খেতে বললেন বাহ সুন্দর কফি বানানো শিখেছিস তো তুই।হেসে দিয়ে বললাম,দেখতে হবে কে কফি বানিয়েছে।
উনি আমাকে এক টান দিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করলেন,,
“হলদেটে কিছুক্ষণ আগের সন্ধার সেই অপরূপ সৌন্দর্য্যের রুপ যদি ধরে রাখতে পারতাম তাহলে সে সন্ধ্যার রক্তিম আভায় লাল তোমার ওই মুখের বদন বন্দি করে রাখতে পারতাম।বন্দি রেখে এক জনম কাটিয়ে দিতাম দেখতে দেখতে।লজ্জা পাচ্ছো শ্যামাপাখি।এই লাজুকতা কখনো অন্য কাউকে দেখিও না নির্ঘাত তার আমার মতোই সর্বনাশ হয়ে যাবে।আর সেটা আমার সহ্য হবে না।এই মিষ্টি লাজুক মুখ টা শুধু আমার। আমি শুধু দেখতে চাই।এই লাজুক মুখের চাহনি তে কি আছে বলোতো আমি ঢাকায় মন দিতে পারি না।এখানে ছুটে আসতে হয় বার বার তোমারি টানে।”
এমন সময় কারো পায়ের শব্দ শুনেই উঠে দাঁড়ালাম আমি।রুমের ভেতরে প্রবেশ করলো কাজিন দের গুষ্টি।
তোহা আপু লাফিয়ে উঠলো,”বিহান ভাই আপনি এসেছেন।ইয়াহু লায়লা মে লায়লা। ”
বিহান ভাই ভ্রু কুচকে বললেন, “হয়ার ইজ ইওর মজনু।”
“তোহা আপু লাজুক ভাব নিয়ে বললো আছে আছে।”
“বিভোর ভাই বললেন,,বিহান অনেক দিন বাইরের কিছু খাই না।চল খাওয়াবি।”
“বিহান ভাই ভ্রু নাচিয়ে বললেন,আমার বউ কফি বানিয়েছে ওটা খেয়ে নে।”
“রিয়া সন্দিহান ভাবে বললো,আপনার বউ।”
“আপাতত বোন বানিয়েছে, ফিউচারে তো বউ ই হবে তাইনা।”
“বউ? কথাটা বলেই ভ্রু কুচকালেন বিভোর ভাই।”
“বউ ছাড়া কি ভাই?আজ বউ নেই তাই দিয়া।বউ থাকলে তো বউ ই বানিয়ে দিতো।”
উনার যুক্তি শুনে আমরা সবাই ই ভড়কে গেলাম।
______________________________
সন্ধার পর ব্রিজে সবাই মিলে আড্ডা দিতে গেলাম।অনেক দিন একসাথে ঘোরা হয় না আমাদের।বিভোর ভাই এর দাবি আজ বিহান ভাই কে আমাদের খাওয়াতেই হবে।এইদিকে বিহান ভাই এর কথা আমাদের মতো অপদার্থ দের সে খাওয়াবে না।মানে কিছুতেই খাওয়াবে না।।
বিহান ভাই এর নামে ১৫০০ টাকা বাকি খেলাম বসে বসে। বিহান ভাই জানেন ও না উনার নামে এত কিছু খেয়েছি আমরা।দোকান দার বিহান ভাই এর টাকা চাইতেই বিহান ভাই বললেন কিসের টাকা।
দোকান দার বললেন,তোমার ভাই বোনেরা খেয়েছে বললো তুমি টাকা দিয়ে দিবে।
সরি কাকু আমি তাদের চিনি না।যারা খেয়েছে তাদের থেকে টাকা নিন।আমি তো আর বলি নি আপনাকে দিতে তাইনা।এর আগে পরে ওদের দেখি নি আমি।বলেই বিহান ভাই ব্রিজের নিচের দিকে রওনা দিলেন।
আমরা পড়লাম মহা সংকটে টাকা না দিতে পারলে ইজ্জত যবে।বিভোর ভাই আমাকে পাঠালেন দ্রুত ওর পিছ পিছ যা দিয়া।যেভাবেই হোক টাকা নিয়ে আসবি।উনার কাছে দৌড়ে গিয়ে বললাম,,কোথায় যাচ্ছেন?হঠাত দেখি মেহু আপু আর শুভ ভাই।ওরা তো এত সময় আমাদের কাছেই ছিলো এখানে এলো কিভাবে।
বিহান ভাই আমাকে বললেন চুপ।দেখতে দে ব্যাপার টা।শুভ ভাইয়া মেহু আপুকে কিস করার ট্রাই করছে কিন্তু পারছে না।এই নিয়ে কয়েক বার ট্রাই করেও ফেইল হলেন।
বিহান ভাই বলে উঠলেন,,”শুভ মেহুকে যদি এইভাবে কিস করতে যাস ২০৫০ সাল কেটে যাবে তাও কিস হবে না।”
উনার কথা শুনে ভাইয়া আর মেহু আপু চমকে গেলেন।আর দুজনেই মারাত্মক লজ্জা পেয়ে গেলো।
চলবে,,
(