এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব ৬১+৬২+৬৩

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৬১.
#WriterঃMousumi_আক্তের

বাড়িতে আমাদের দুই ভাই বোনের বিয়ে সীমাহীন হাসি আনন্দের মাঝ দিয়ে শুরু হলো বিয়ের সানাই।বাবা আমাকে ডেকে নিয়ে বিহান ভাই এর হাতে হাত ধরিয়ে দিলেন।এক পশলা সুখ যেনো গায়ে হাওয়া দিয়ে গেলো আমার।গহীন অন্ধকার থেকে ঝলমলে আলো এসে পড়লো মনের আঙিনায়।আমার সাথে বার বার কি হচ্ছে কিছুই বুঝলাম না। যেটা হচ্ছে সেটাই মেনে নিচ্ছি।বিহান ভাই আমার হাত চেপে ধরে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।উনার চোখে মুখে আনন্দের ছড়াছড়ি এত খুশি আগে দেখি নি আমি উনার মাঝে।বাড়িটা ফুলে ফুলে বেলুনে বেলুনে সজ্জিত ুকরা হয়েছে।বড় কার্ডে লেখা আজ বিহান দিয়ার গায়ে হলুদ,অপর পাশে লেখা আজ শুভ আর মেহনুবার গায়ে হলুদ।মেহু আপু আর আমাকে ভীষণ সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে।রিয়া আর তোহা আপু বিভা আপু আয়রা সবাই হলুদের শাড়ি পরেছে।সবার মাঝ থেকে মামিকে ডেকে বললাম একটু শোনো না মামি তোমার ছেলে কিভাবে উদয় হলো বলবে একটু প্লিজ।

মামি বললেন,তোর মামা তো ভয় ই পেয়ে গেছিলো রে দিয়া।আমি যখন তোর বিহান ভাই কে জানালাম এদিকের সব ঘটনা বিহান তোর মামাকে ফোন দিয়েছে সাথে সাথে।ছেলে রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলছে বাবা আমি বিয়ে করতে চাই আর আমার বিয়ে আজ ই ঠিক করবে তুমি সেটা আর কেউ না দিয়া।দিয়াকে বিয়ে করবো আমি।এটা আমার বহুবছর আগের সিদ্ধান্ত। দিয়ার বাবাকে গিয়ে এক্ষুণি বলো বিয়ে ভেঙে দিতে।

ছেলের মুখে এমন কথা শুনে তোর মামার যে অবস্থা। তোর মামা বললো কিন্তু দিয়ার যে বিয়ের সব ঠিক ঠাক।

ছেলে রেগে বললো ভেঙে যাবে দিয়ার বিয়ে।দিয়ার বিয়ে ভেঙে গেলে তোমরা আমার সাথে দিয়ার বিয়ের কথা বলবে।না হলে আমি সরাসরি বলবো দিয়ার সাথে আমার বিয়ের কথা।

তোর মামা ফোন কেটে মাথায় হাত দিয়ে ঠুস করে বসে পড়লো।কি করা যায় ভেবে পাগল তোর মামা।ওইদিকে প্রেয়সী বলেছিলো যে আঙ্কেল বিহান আমাকে পছন্দ করে কিন্তু লজ্জায় আপনাদের বলতে পারছে না তাই আমি বলছি।তোর মামা শুনেই বিশাল খুশি তার ছেলে কাউকে পছন্দ করে।উনি তো বুঝতেই পারে নি প্রেয়সী এত বড় মিথ্যা বলবে।প্রেয়সী বিভিন্ন ইমোশনাল কথা বললে তোর মামা বলেছিলো ঠিক আছে নিজের ছেলে যখন পছন্দ করেছে আপত্তির কি আছে?

মামিকে কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলাম আচ্ছা মামি প্রেয়সী আর বিহান ভাই এক সাথেই বিদেশ গেছিলো।

হ্যাঁ বিহান আমাকে আর বিভোর কে সবটা খুলে বলেছে।ঢাকা মেডিকেল থেকে সাতজন এক সাথে গেছিলো বিদেশ।বিহান ওর ফোন রেখে ইমারজেন্সি মিটিং এ ছিলো সেই সুযোগে প্রেয়সী তোকে উলটা পালটা বলেছে।বিহানের এক কলিগ প্রেয়সীর সব কথা শুনে নিয়েছিলো আর সে বিহান কে জানিয়েছিলো সব টা।বিহান সাথেই সাথেই তোকে কল ব্যাক করেছিলো তোর ফোন আর অন পাই নি।পরে আমার ফোন দিয়ে ইচ্ছাকৃত মজা করেছিলো।

অভিমান নিয়ে বললাম তোমার ছেলে সব সময় এমন করে মামি।আমাকে ইচ্ছাকৃত কষ্ট দেয় তোমার ছেলে।

আমার ছেলে তোকে খুব ভালবাসে দিয়া।নিজের বাবার মুখের উপর এভাবে কেউ বলে।

বিভোর ভাই ক্যামেরা নিয়ে ছোটাছুটি করছে।বিভোর ভাই আমাকে বলছেন দিয়া মাথায় ঘোমটা দিয়ে দাঁড়া ছবি উঠাবো।বিভোর ভাই কে বললাম নির্বান স্যার বিয়েটা কেনো ভাঙলেন জানেন বিভোর ভাই।

বিভোর ভাই হেসে দিয়ে বললেন সব বিহান কা কামলা।বিহানের সাথে বুদ্ধিতে কেউ কোনদিন পারবে না দিয়া।আমরা অহেতুক চিন্তা করেছিলাম।তোদের যে গ্রামে বিয়ে হয়েছিলো ওখানের কয়েকজনের সাথে বিহানের যোগাযোগ ছিলো।বিহান তাদের কাছে নির্বাণ এর নাম্বার দিয়ে দেয়।আর তারাই নির্বাণ কে জানায় যে তুই আর বিহান বিবাহিত। নির্বাণ বিলিভ না করে ওই গ্রামে যায় খোজ খবরের জন্য তোদের ছবি দেখালে সবাই তোদের চিনতে পারে।সেখানে নির্বাণ প্রমান পেয়ে যায়।অতপরঃবিহান কে ফোন দিয়ে সে ভীষণ ভাবে সরি বলে।বাকিটা তোর উনি মানে বিহান বলবে এখন ঠিক হয়ে দাঁড়া তো দিয়া।

লেবু গাছের ডাল ধরে দাঁড়িয়ে আছি পেছন থেকে বিহান ভাই এসে আমার দুই গালে হলুদ লাগিয়ে দিলেন।পেছনে তাকিয়ে দেখি বিহান ভাই।উনাকে দেখে ইচ্ছাকৃত একটু ভাব নিলাম তাছাড়া প্রচন্ড টেনশন দিয়েছেন উনি আমার।এর শাস্তি আমি দিয়েই ছাড়বো।বিহান ভাই আমার গালে হলুদ লাগিয়ে নিজের মুখ দিয়ে আমার মুখে ঘষে নিজের মুখেও হলুদ লাগালেন।খানিক টা হলুদ আমার গলায় লাগিয়ে দিলেন।

গায়ে হলুদের পর্ব শেষ রাতে মেহেদী অনুষ্টান চলছে।বাড়িময় আত্মীয়ের মাঝে কাজিন দের বিভিন্ন নাচ গানের অনুষ্টান চলছে।রিয়া আর বিভোর ভাই গল্প করছে,আয়রা ছোটাছুটি করছে,তোহা আপুর মন একটু খারাপ হলেও নিজেকে সাম লে নিয়েছে,তিয়াশ ভাইয়া মেয়েদের সাথে মজা করেই যাচ্ছে।।আমি আমার রুমে চেঞ্জ করতে এসছি সারদিন ভারী শাড়িতে খুব অসহ্য লাগছে।রুমে এসছি থ্রি পিছ পরে গায়ে শিতের কাপড় পরতে।আমার পিছ পিছ বিহান ভাই এসেই আমার মুখ চেপে ধরে ওয়াশ রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন।আমার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু উনার ওই শক্ত পক্ত হাত ছড়াতে পারছি না।

–উনি আমাকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিয়ে বললেন এত রাগ কেনো বউ?

-কোনো রাগ নেই আমাকে ছেড়ে দিন আপনি? বলেই উনার কোল থেকে নামার চেষ্টা করছি।

-উনি বললেন রাগ করেছো ভাল কথা তাই বলে কি কোলে তুলতে পারবো না।

-খানিক টা রাগ নিয়ে ছল ছল চোখ নিয়ে আধ কাঁন্না গলায় বললাম ছাড়ুন আমাকে। কেনো এসছেন আপনি?

-এই অভিমানি মুখটার অভিমান ভাঙাতে।বিয়ের দিন এইভাবে কেউ অভিমান করে।

-আপনি অনেক কষ্ট দিয়েছেন আমাকে?জানেন আরেক টু হলেই হার্ট ফেইল হয়ে যেতো আমার।

-হার্টের ডাক্তার আমি।আমার বউ এর কিচ্ছুই হতে দিতাম না।তুমি কি জানো আমাদের এই বিয়েটা গোপন রাখতে কতটা পরিশ্রম করে তোমার ফ্যামিলিতে তোমার সম্মান রেখেই তোমাকে আরেকবার আমার জীবনে স্বাগতম জানাচ্ছি।এই কষ্টের পর কোথায় আমার ক্লান্তি দূর করবে তা নয় শুধু অভিমান করছো।

-আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো জানেন।

-জানতাম না এত ভালবাসে আমার বউ আমাকে।আই প্রমিজ দিয়া আজকের পরে আর কোনদিন তোমাকে কষ্ট পেতে হবে না।ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে চুমু দিয়ে বললেন এখন থেকে প্রতিটি সকালে এই আমার উষ্ণ ছোয়া পাবে।গালে,চোখে,ঠোঁটে আদরের ছোয়া দিয়ে ঘুম ভাঙাবো রোজ সকালে।

-উনার বুকে মাথা গুজে বললাম এবার ছাড়ুন কেউ আসবে না হলে।

পরের দিন হাসি আনন্দের মধ্য দিয়ে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো।মেহু আপু আর ভাইয়া বাড়িতেই থেকে গেলো।আমি চলে আসলাম বিহান ভাই এর বাড়িতে।মামা বাড়িতে ছোট বেলা থেকে রোজ যাতায়াত কিন্তু আজকের আসাতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো আমার।প্রকৃতির কি কঠিন নিয়ম একটা সাক্ষর এ নিজের জীবন অন্যর হয়ে যায়।

বাসর ঘরে বসে আছি গাড় লাল লেহেঙ্গা পরে গা ভর্তি গহনার ছড়াছড়ি। অপেক্ষা করছি কাঙ্খিত সেই মানুষ টার জন্য।আজ দীর্ঘ দিন পর অবসান ঘটলো সকল প্রকার অশান্তির।গায়ে সোনালী কালারের পাঞ্জাবি পরে ঘরে প্রবেশ করলেন বিহান ভাই।পুরা রুম তাজা ফুলে সাজানো।মিষ্টি ঘ্রাণে ভরপুর ঘর।উনি রুমে প্রবেশ করে বুকে হাত বেধে এক হাত থুতনি তে ঠেকিয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।চোখ তুলে উনার দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়াতেই ভীষণ লজ্জা পেলাম আমি।উনি রুমের বড় লাইট অফ করে ডিম লাইট অন করলেন।ডিম লাইটের সাদা আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে উনি এগিয়ে আসছেন আমার দিকে।আজ মনে হয় শীতের মাত্রা অনেক বেশী পড়েছে আমি ঠক ঠক করে কাঁপছি শীতে।উনি বেডের উপর বসে একটা কাশি দিয়ে বললেন,আমার দিকে তাকাবে না আজ তুমি।উনার কথার ধরণ পুরোটা চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে।উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার দুই হাত মুঠো করে ধরে বললেন,এই রাগী,বদ মেজাজী, জেদী ছেলেটা কে সত্যি তুমি ভালবাসলে দিয়া।তুমি কিভাবে আমাকে সহ্য করো দিয়া।বাকি জীবন আমাকে সহ্য করার দায়িত্ব নিলে।আমিও কি করবো বলো আমার যে ঘুরে ঘুরে তোমাকেই জ্বালাতে ভাল লাগে।

-উনার দিকে লাজুকতা নিয়ে তাকিয়ে বললাম,এই রাগি আর জেদী ছেলেটার ভাল বাসাতেও এতটা জিদ আগে জানতাম না।আমার মতো আনম্যাচুরিটি সম্পন্ন একটা মেয়েকে সারাজীবন কিভাবে সহ্য করবেন।

-সহ্য করবো কজ উই আর মেড ফর ইচ আদার।রোজ বকবো আর রাত হলে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘুমোবো।

-এই প্রচন্ড শীতে হঠাত বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হলো।বিহান ভাই গায়ের সেরওয়ানি খুলতে খুলতে বললেন,তোমার আমার শুভক্ষণে বৃষ্টির আগমন হয় বার বার।বৃষ্টি আমাদের ভালবাসার এক বিশাল সাক্ষি তাইনা দিয়া।আমাদের ভালবাসার প্রতিটি মুহুর্তে ওদের আগমন।

-উনাকে বললাম ভিজবেন বৃষ্টিতে?

-উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলবেন ভিজবো তোমার ভালবাসায়।বাইরের বৃষ্টিতে নয়।পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট নারী কে আজ অসংখ্য ধন্যবাদ মিসেস বিহান হওয়ার জন্য।

আমি উঠে গিয়ে উনার সামনে দাঁড়াতেই উনি এক ঝটকায় আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে গেলেন।নিজেও বিছানায় কম্বল টেনে সুয়ে পড়লেন।ভীষণ আদরের সাথে আমাকে আলিঙ্গন করলেন উনার বুকের সাথে।কপালে চুমু দিয়ে উন্মুক্ত পেটে হাতের আঙুল ডুবাচ্ছেন উনি।আমি বার বার বিদ্যুতের ন্যায় শিউরে উঠছি।গা ভর্তি গহনা একটা একটা করে খুলে দিলেন।সমস্ত গহনা খুলে একটা রিং পরিয়ে হাতে চুমু দিলেন।প্রচন্ড শীতে উনি আরো ঘনিষ্ট ভাবে আলিঙ্গন করে নিলেন আমাকে।ধীরে ধীরে আলতো পরশ দিচ্ছেন উনার ঠোঁট দিয়ে পেটে, গালে,মুখে।বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির থেকে উনার চুম্বনের বৃষ্টি আমার শরীরে বেশী গতি বেগে পড়ছে।ক্রমশ বাড়ছে উনার পাগলামি।উনার প্রতিটি স্পর্শতে অনুভব হচ্ছিলো নেশাক্ত এক ভালবাসা।যে নেশার ডুবসাগরে ডুব দিয়ে পাড়ি জমালাম দুজনে গভীর ভালবাসার তুফানে।ভালবাসাময় রাতের গভীর ভালবাসার সাক্ষী এই শীততাপ রাত।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৬২.
#WriterঃMousumi_Akter

দিয়া আজ সাদা আর পিংক কালার মিক্সড করা শাড়িটা পরবা প্লিজ।রোজ তো থ্রি পিছ পরাই দেখি আজ শাড়ি পরা দেখতে মন চাইছে বলতে পারো এটা আমার আবদার।উনার ফোন টা কেটে ছুটে আলমারির কাছে এলাম।আলমারির উপরে ওয়ালে উনি আমার গালে হলুদ লাগাচ্ছেন সেই ছবিটা টাঙানো।ছবিটা রোজ দেখি আমি ছবিটা কত জীবন্ত।গতকাল ই আমরা ঢাকাতে এসছি। বিহান ভাই উনার বাড়ি,গাড়ির, আলমারি সব কিছুর চাবি আমার হাতে তুলে দিয়েছেন।উনার নিজ হাতে সাজানো এই সংসার টা আমাকে উপহার দিয়েছেন।আমি আলমারি টা খুলে হন্য হয়ে খুজছি সাদা রঙের শাড়ি।অনেক গুলো শাড়ির ভিতর থেকে সাদা আর পিংক কালার মিক্সড শাড়িটা পরে সুন্দর করে কাজল পরে চুল ছেড়ে রুমময় পায়চারী করছি উনার জন্য।কিছুক্ষণের মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠলো আমি ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।পড়ন্ত বিকালের সোনালি হালকা সূর্যের কিরণ আমার মুখের উপর পড়লো।প্রিয় মানুষ টার জন্য অপেক্ষা করার পর তার আগমণ হলে মনে হয় যেনো একটা সাগর পাড়ি দেওয়ার পর তার সাথে দেখা হলো।বিহান ভাই দরজায় এক হাত বাঁধিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আমার দিকে স্নিগ্ধ নয়নে তাকিয়ে।এক গুচ্ছ সাদা ফুল আমার হাতে দিয়ে বললেন শুভেচ্ছা মিসেস বিহান আমার এই ছোট্ট বাড়িতে তোমার আগমনের জন্য।ফুলের তোড়া টা হাতে নিয়ে ফুলের সুবাস নাকে নিয়ে মাটির বড় ফুলদানিতে রেখে দিলাম।উনি আমার হাত দুটো ধরে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন আই লাভ ইউ পিচ্চিটা।উনার হাতে থাকা সদ্য তুলে আনা বেলি ফুলের গাজরা টা আমার চুল নিজ হাতে খোপা করে পরিয়ে দিলেন।হাত ধরে আস্তে ধরে আজকে আনা নতুন কাঁচের লাল সাদা চুড়ি পরিয়ে দিলেন।আমি চুড়ি গুলো উনার মুখের উপর ধরে রিনিঝিনি শব্দে বাজালাম উনি মুগ্ধ হয়ে দেখছেন আমার বাচ্চামো।আমাকে বললেন,একদিন ও আমার শার্টের বোতাম আর আমি খুলতে পারবো না।আমার সমস্ত কাজ তোমাকে করতে হবে, না বললে হবে না আমি তোমাকে দিয়েই করাবো।মিহি কন্ঠে বললাম কি কাজ বলুন।আমার হাত দুটো ধরে উনার বুকের কাছে নিয়ে বললেন বোতাম খুলে দাও।রোজ শার্টের বোতাম তুমি খুলে দিবা, আমি সাওয়ার থেকে আসলে শার্ট পরিয়া দিবা,রেগুলার খাইয়ে দিবা এগুলোর দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে।আমি শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললাম এতটুকুই চাওয়া।উনি হেসে বললেন,রোজ রাগাবো আগের মতোই সেগুলো ও সহ্য করতে হবে।আমিও হেসে সহমত দিলাম।
আগের মতোই উনার বকুনি রাগ জিস আর ভালবাসা নিয়েই চলছে আমাদের সুখের জীবন।

———————————————————-
আপনি আমাকে কাজের মহিলা রেখে দিন সারাদিন সংসারের কাজ সামলানোর জন্য বই নিয়ে বসতে পারি না। পরে আবার ক্লাসে গিয়ে আপনার ই বকা খেতে হয়।ক্যানো সব সময় সব কিছু আমাকেই কেনো খেতে হবে।বাসায় থাকলে আপনার অফুরন্ত চুমু খেতে হয় আর ক্লাসে গিয়ে পড়া না পারলে আপনার ই হাতের বকা খেতে হয় হুয়াই? এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে সোফার কুশন কভার গুলো চেঞ্জ করছি।উনার দিকে তাকিয়ে দেখি পা মেলে দিয়ে পায়ের উপর ল্যাপটপ রেখে চাপাচাপি করছেন।আমার মুখে এমন অদ্ভুত কথা শুনে উনি কপালের চামড়া ভাজ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।উনাকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললাম কি দেখছেন রাক্ষস দের মতো তাকিয়ে আছেন?আমার কাজের মহিলা চাই বুঝেছেন।

-উনি সন্দিহান ভাবে বললেন,বিয়ে হয়েছে আজ ২৬ দিন দিয়া এই ২৬ দিনে কি কি কাজ করেছিস তুই?সকালে ডেকে তুলে ব্রাশ করিয়ে গালে খাবার তুলে খাওয়াতে হয় সে কিনা কাজের জন্য বই পড়তে পারে না হাউ ফানি।নিশ্চিত আজ আবার পড়া রেডি করিস নি তুই তাইনা এইজন্য অগ্রিম একটা অজুহাত খুজে রেখেছিস।আজ পড়া রেডি না হলে সারারাত ঘুমোতে দিবো না বলে দিলাম।লেখাপড়ায় ফাঁকি দিলে আমি প্রশ্রয় দিবো না সেটা।আমি তোর বাবা না যে বলবো থাক মা আজ ঘুমোও।

-দেখুন সত্যি বলছি আমি কাজ করতে করতে সারাদিন দু দন্ড বসার ও টাইম পাই না।আমার একটা কাজের বুয়া চাই ই চাই।

-সিরিয়াল দেখা ছাড়া কোন কাজ করিস তুই।আমাকে কি অত্যাচারী হজবেন্ড প্রুভ করতে চাইছিস তুই।আমি বউ কে কাজ করিয়ে অত্যাচার করছি। বাসার সব কাজের জন্য তো খালা আছেই।খালা তো আছেই আরো এক্সট্রা কাজের লোক দিয়ে কি করবি? মাথার উকুন আনাবি নাকি।

-দেখুন উনি তো খালা হয় তাই আমার খারাপ লাগে কাজ করাতে।আমি বলতে পারি না কোনো কাজের কথা।তাই একজন কাজের বুয়া রেখে দিন যাকে বুয়া বলে ডাকতে পারি। খালা টালা হয় এমন মানুষ আর দেখবেন না।এনি ওয়ে আমার মাথায় উকুন হলো কবে।একদম বাজে কথা বললে গলা কেটে দিবো বলছি।কবে উকুন দেখেছেন আপনি?

-উকুন তো সারাজীবন ই ছিলো। উকুন এ ভরপুর তোর চুল। তোর নাম তো উকুনযুক্ত রাজ্যর রাণী দিয়া।

-দেখুন মেহু আপুর পাশে ঘুমোলে মাঝে মধ্য দুই একটা উকুন হয় আরকি?বাট একদিনেই আবার চলে যায় শ্যাম্পু করলে।

-ইয়াক দিয়া তোর পাশে আর ঘুমোবো না।আজ ই নাপিত ডেকে ন্যাড়া করে দিবো তোর মাথা।দুষ্টু গরুর থেকে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো।উকুনে ভরপুর চুলের থেকে শূন্য মাথা বেশী ভালো।

-বিহানের বউ টাক হলে সেটা কি ভালো দেখাবে বিহান ভাই?

-তুই আমাকে জাস্ট বিহান ডাকবি? বাট এই ভাই শব্দ টা শুনলে ফিলিংস হারিয়ে ফেলি।তাই ভদ্র মহিলাদের মতো স্বামিকে সেভাবেই ডাকবি যেভাবে অন্য মহিলারা ডাকে।

-নাম ধরে ডাকতাম বাট,,,,,,

-কি বল বল যে আমার বর আমার থেকে অনেক সিনিয়র তাই আপনি ছাড়া বলতে পারি নাহ।

-দেখুন অত সিনিয়র টিনিয়র বুঝি না।আমার বর কে আমি ভীষণ ভালবাসি আর সে আমার মানসিক শান্তির কারণ তাই ভালবাসি। মানসিক শান্তির জন্য তার কাছে থাকি আমি।

-ল্যাপটপের সাটার অফ করে ল্যাপটপ টা টেবিলে রেখে আমার উপর ঝুঁকে এসে বললেন,এই পিচ্চি এই ছোট্ট পাতলা ঠোঁটে এত মিষ্টি কথা কিভাবে বলো।এই মিষ্টি কথার যাদু দিয়ে আমাকে পাগল করেছো?আজ রাতে অনেক হিসাব মেটানোর আছে তোমার সাথে আমার।

-কিসের হিসাব।

-রোমান্সের?রেগুলার যে অভিনয় করো সেগুলো আমি বুঝি।আমি কাছে গেলেই বলো এখন পড়তো বসবো,আবার পড়ার টাইমে এত গুলা অজুহাত খোজো সো তোমার না খবর আছে পুচকি।

-বলেই উনি আমাকে চেয়ার টেবিলে বসিয়ে দিলেন।উনি আবার ল্যাপটপ এ কাজ করছেন আর আমি বই পড়ছি।আজ দেখতে দেখতে ২৬ টা দিন কেটে গিয়েছে আমাদের পারিবারিক ভাবে বিয়ের।বিয়ের এক সপ্তাহ পরেই আমরা আমরা ঢাকা চলে এসছি।আজ ও সেই রাগ,মান অভিমান খুনসুটির মধ্য দিয়ে চলছে আমাদের সংসার।বিয়ের পরের দিন ই প্রেয়সী আপুকে ভিডিও কল দিয়েছিলো বিহান ভাই।প্রেয়সী আপুকে বলেছেন শয়তানি আর চালাকির দ্বারা ভাল কিছু অর্জন করা যায় না।হোপ এর পরেও তুই আর আমাদের মাঝে আসবি না।কলেজে গেলে নির্বাণ স্যার আর লজ্জায় কথা বলেন না। আমিও লজ্জায় স্যারের সাথে আর কথা বলি না।

রিয়া আর কাকিমনি এখন আগের বাসাতেই আছে।আমাদের নতুন সংসার তাই রিয়াকে আমাদের সাথে কেউ আপাতত থাকতে দেয় নি।

মাঘ মাসের এই কড়া শীতে চেয়ার টেবিল সব ঠান্ডা বরফ হয়ে গিয়েছে।মন চাইছে আরামে কম্বলের নিচে গিয়ে টুপ করে ঘুমিয়ে পড়ি কিন্তু ওই অসভ্য মানুষ কি আর আমাকে এখন ঘুমোতে দিবেন।এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় বলা যায় না ওগো মোর প্রাণের প্রিয়া আসো তোমাকে আলিঙ্গন করে শান্তির একটা ঘুম দেই।তা তো বলবেন ই না পড়ার রুটিন করে দিয়েছেন।কোনো মানুষ যেনো আর এই টিচার বিয়ে না করে।একে তো সারাদিন আমার উপর ডাক্তারি প্রয়োগ করে তার উপর শিক্ষাকতা করেন।জীবন টা কড়া মাছ ভাজি বানিয়ে ফেলেছেন আমার।

টেবিলে মাথা রেখে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছি আমি।

খুব জোরে চেয়ার টেনে আমার পাশে বসলেন বিহান ভাই।চেয়ার টানার শব্দে আতকে উঠলাম আমি।উঠে দেখি গরম কফি মগ থেকে ধোয়া উড়ছে।উনি কফিটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন জিভ পুড়ে না যেনো সাবধানে খাবি।উনি কফি তে চুমুক দিয়ে বললেন কাল থেকে সন্ধ্যার আগে পড়তে বসবি। রেগুলার রাতে ঘুমের বাহানা শুরু হয় তোর।এত ফাঁকিবাজ তুই। ঘুম ঘুম চোখে কফিতে চুমুক দিয়ে বললাম আমার খুব ঘুম পাচ্ছে বিহান ভাই।উনি কাপে চুমুক লাগিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ঘুম তো পাবেই সারাদিন বসে বসে সিরিয়াস দেখিস তুই।সিরিয়াল এর কূটনীতিক কাহিনী ভাবতে ভাবতে ব্রেইন এর প্রেসার হয়ে যায় তোর।কাল ডিস লাইন কেটে দিবো এটাই ফাইনাল।আমি কফির মগ রেখে উনার কোলে ঢলে পড়লাম ঘুমের ভান ধরে।উনার পায়ের উপর মাথা রেখে ঘুমের ভীষণ ভান ধরলাম।উনি কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করে আমাকে কোলে তুলে বিছানায় ঘুম পাড়িয়ে দিলেন।

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি চিরকুট লিখে গিয়েছেন।শুভ সকাল পিচ্চি।ডায়নিং এ নাস্তা রাখা আছে খেয়ে কলেজে চলে আসবি।খুব সাবধানে আসবি।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৬৩.
#WriterঃMousumi_Akter

বিহান ভাই এর গলার উপর পা দিয়ে ঘুমিয়ে আছি।ঘুমের মাঝে কখন পা উনার গলার উপর পড়েছে আমি বুঝতেই পারি নি।উনি বার বার পা সরিয়ে দিচ্ছেন তো আমি বার বার উনার গলার উপর ই পা দিচ্ছি।এমনি তে প্রচন্ড শীত তার মাঝে আমি কম্বল টেনে উনাকে আলগা করে দিচ্ছি বার বার।আর বেডময় ঘুরাঘুরি করতে করতে উনার পায়ের দিকে আমার মাথা চলে গিয়েছে এক পা উনার গলায় তো আরেক পা উনার পেটের উপর।পর পর দুই রাত উনার ওটি থাকায় ঠিক মতো ঘুমোতে পারেন নি উনি।ঘুমোনোর আগে আমাকে বলে দিয়েছে আজ যেনো তাকে মোটেও বিরক্ত না করি আমি।বিরক্ত করলে খবর আছে মানে বিশাল লম্বা খবর আছে।বার বার উনাকে বিরক্ত করার জন্য উনি আমার পা ধরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে নিজে কম্বল মুড়ি দিয়ে আরাম করে সুয়ে পড়লেন।উনি কি আমাকে ফুটবল ভেবে লাথি মারলেন।এই ঠান্ডায় আমাকে কিভাবে ফ্লোরে লাথি মেরে ফেলে দিলেন।আজ এর একটা হেস্ত নেস্তো করেই ছাড়বো।ফ্লোরে পরা স্যান্ডেল পরে গায়ে শাল জড়িয়ে নিয়ে রুমের বড় লাইট অন করে দিলাম।তাতেও দেখি উনার ঘুমের কোনো ডিস্টার্ব হচ্ছে না।উনার কানের কাছে বক্স রেখে ফোনে ব্লু টুথ অন করে জোরে গান চালিয়ে দিলাম বুক চিন চিন করছে হায় মন তোমায় কাছে চাই।তুমি ছুয়ে দিলে হায় আমার কিযে হয়ে যায়।বিহান ভাই আমার দিকে রক্তজবার ন্যায় লাল চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বক্স টা বন্ধ করে দিয়ে বললেন তোকে কিন্তু আমি চিড়িয়াখানা রেখে আসবো দিয়া।বার বার নিষেধ করেছিলাম আজ আমাকে একটুও বিরক্ত করবি না।তোর জন্য আজ একটুও ঘুমোতে পারিনি আমি।আমি কোমরে হাত বেঁধে বললাম আপনি আমাকে লাথি মেরেছেন কেনো আগে সেটা বলুন।

‘লাথি মারবো না অসভ্য দের মতো গায়ের উপর পা দিয়ে ঘুমোস কেনো তুই।আর কম্বল টেনে এক পাশ পিঠের সাইডে দিস আরেক সাইড গায়ে দিস আমি কি করবো?’

‘তাই বলে আমাকে নিচে ফেলে দিবেন?’

‘হাসের মতো প্যাক প্যাক না করে লাইট অফ করে আমার পাশে চুপ চাপ ঘুমো একটুও সাউন্ড করবি না।সাহস কি তোর সেটাই ভাবছি তুই এই মধ্য রাতে আমার কানের কাছে বক্স প্লে করেছিস।’

‘দেখুন আমি কাল ই মামি কে বলে দিবো?’

‘আমি কি তোর মামি কে ভয় পাই?যাকে ইচ্ছা বলিস বাট এখন একটা কথা ও বলবি না। বললে মুখে টেপ মেরে দিবো।আমার মাথায় পেইন করছে সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। ‘

‘আমি ঘুমোবো না আর আপনাকেও ঘুমোতে দিবো না।’

‘বাইরে ভূত আছে এই মধ্য রাতে বাইরে রেখে দরজা লক করে আমি ঘুমিয়ে যাবো বুঝেছিস।’

‘উনাকে দিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই।এখন উনার মাথা ঠিক নেই বাইরে রেখে আসার আগে চুপ চাপ সুয়ে পড়ি কাল দেখবো।লাইট অফ করে উনার পাশে গুটি সুটি মেরে সুয়ে পড়লাম।কিছুক্ষণ পরে উনি আমার চুলের গোছা টেনে ধরে বললেন,এই দিয়া ওঠ তো। আমি ঘুম ঘুম চোখে বললাম আহা চুল ছাড়ুন তো আমার ঘুম পাচ্ছে।’

‘আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে এখন তুই ঘুমোবি অসভ্য মহিলা ওঠ বলছি।’

‘উঠবো কেনো?’

‘আমার পা টিপে দে বলছি।সুন্দর ভাবে হাত পা ম্যাসাজ করে দে আমি ঘুমোবো।’

‘আমি এসব করতে পারবো না আর আমি এসব পারি না।’

‘বাইরে রেখে আসবো তাহলে, ভূত তোর পা টিপবে।’

‘প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে উনার পা টিপতে টিপতে ঘুমিয়ে গেলাম।’

পরের দিন ভোরে দেখি আমি উনার বুকের সাথে মিশে ঘুমিয়ে আছি।এখানে কখন এলাম আমি।উনি ঘুমোচ্ছেন ঘুমন্ত এই মানুষ টা ভালবাসার জন্য একদম পারফেক্ট।কখন যত্ন করে উনার বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছেন বুঝতেই পারি নি।আমার পায়ে আবার মোজা ও পরিয়ে দিয়েছেন।উনার নাক ধরে টেনে বললাম এই উঠবেন না।

‘উনি ঘুমের জড়তা নিয়ে আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন আজ উঠবো না এভাবেই থাকবো।’

‘হসপিটালে যাবেন না।’

‘না আজ ছুটি নিয়েছি আমি।’

‘কেনো?’

‘কারণ আজ শ্বশুরের মেয়ের কলেজ ছুটি তাই শ্বশুরের জামাই ও আজ ছুটি নিয়েছে তার মেয়েকে আদর করার জন্য।’

‘ছিঃলজ্জা নেই আপনার।’

‘লজ্জা থাকলে কি আর বাবাকে বলতাম বিয়ে করবো অনেক বছর আগে ভেবে রেখেছি সে হলো দিয়া।’

‘আপনি ঘুমোন আমাকে রান্না করতে হবে।’

‘এত কাজ করতে হবে না।রান্না আমি করবো তোমার দায়িত্ব আমার বুকের হার্টবিট এর স্পন্দন শোনা ওকে।’

‘এই পাগলটে মানুষ টা বড্ড অবুঝ হয়ে যায় মাঝে মাঝে।কোনো কথায় শোনানো যায় না।’

——————————————————
–মেহু তোমার শরীর ঠিক আছে তো?প্লিজ কোনো অসুবিধা হলে আমাকে বলো।এই টুকু বয়সে বাচ্চা হবে তোমার।আমার তোমাকে দেখলেই অনেক কষ্ট হয়। ভেতরে এক জন কে নিয়ে কিভাবে পারছো তুমি?

–শুভ তুমি এত চিন্তা করো না।আমি ঠিক আছি।তাছাড়া আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি ভীষণ কেয়ার করে আমার বুঝলে।তুমি এত চিন্তা করো কেনো?

–কেনো চিন্তা করবো না বলোতো?তোমাকে হারানোর ভয়ে সবার বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলাম।এখন তুমি অসুস্থ আমি বাইরে গেলে তোমার চিন্তায় অনেক খারাপ লাগে।

–কিচ্ছু হবে না আমার। আমার একটা ছেলে হোক শুধু। দিয়া বলেই দিয়েছে নাম কিন্তু সে রাখবে।

–হুম দিয়া তো সারাক্ষণ ফোন দিয়ে বলছে মেহু আপুর খেয়াল রাখবা ভাইয়া।আমাদের পুচকে যেনো ভাল থাকে।দিয়ার মন টা এখানেই পড়ে আছে।
——————————————————–
বিহান ভাই আজ ছুটি নিয়েছেন।আমার অধোয়া যত কাপড় আছে সব ধুয়ে ছাদে নেড়ে দিয়েছেন।সাথে নিজের কাপড় ও ধুয়েছেন।ভাগ্য করে এমন হজবেন্ড পেয়েছি।সব কাপড় ধোয়া হলে তেলের বোতল এনে আমাকে বসিয়ে মাথায় তেল দিয়ে বিলি কেটে দিচ্ছেন।

‘উনি মজা করে বলছেন একটা উকুন এনে দিলে দশ টা চুমু দিতে হবে কিন্তু রাজি।’

‘একটার সাথে দশ টা এ কেমন চাওয়া।সুদ খাবেন আপনি?জানেন না সুদ খাওয়া মহা পাপ।হারাম খাবেন।’

‘বউ আমার হালাল।বউ এর সব ই হালাল।’

‘সুন্দর ভাবে মাথায় তেল দিয়ে চুলে উকুন খুজে চলেছেন।অনেক খোজাখুজির পরেও কোনো উকুন পেলেন না।এবার হতাস হয়ে বললেন তাহলে কি আমি চুমু পাবো নাহ।’

‘উনার এই ভীষণ মন খারাপ দেখে গালে একটা চুমু দিয়ে দৌড় দিলাম।’

‘উনি অস্ফুটে হাসি দিয়ে বললেন তোমার সাথে আমার এই খুনসুটি আর দুষ্টুমিষ্টি ভালবাসা চলুক আমরণ।তোমার আমার যাত্রা হোক ভালবাসার মহাযাত্রা।একটা দীর্ঘ জীবন পাড়ি দিতে চাই তোমার সাথে।’

বিহান ভাই আমাকে ডেকে বললেন,বিভোর কিছুক্ষণের মাঝেই পৌছে যাবে।চলেই এসছে প্রায়।আমি রান্না করছি তুমি আমার পাশে থেকে হেল্প করলেই চলবে।রিয়া আর কাকিমা কে ফোন দাও এখানে আসতে।

এরই মাঝে আম্মুর ফোন। আম্মুকে বললাম বিভোর ভাই এর কাছে নাড়ু পাঠিয়েছো তো আম্মু।

হ্যাঁ দিয়া সব কিছুই পাঠিয়েছি।বিহানের সাথে কিন্তু একটুও ঝগড়া করবি না।ওর সব কথা শুনে চলবি।আম্মু মেহু আপুকে ডেকে বলছে এই মেহু হরলিক্স টা খেয়ে নে মা।আর যেনো খাওয়ার কথা বার বার বলতে হয় না।

আম্মুকে বললাম আম্মু মেহু আপু কি খাবার খেতে চাই না।

আম্মু বললো নারে দিয়া ওর শুধু বমি হয়।তোর বাবা তার একমাত্র ভাগনি কে কি কম ভালবাসেন।সারাক্ষণ মেহুর জন্য এটা সেটা নিয়েই আসছে বাট মেয়েটা খেতেই পারে নাহ।ওর শরীর টা অনেক শুকিয়ে গিয়েছে।

আম্মুকে বললাম একটুও চিন্তা করোনা আম্মু তুমি।মেহু আপু ঠিক ই সুস্থ হয়ে উঠবে।

‘বিহান ভাই এর হাতে হাতে রান্নায় হেল্প করছি।উনি খুন্তি চালাতে চালাতে বললেন,আচ্ছা তুই আমাকে ভাই ডাকা বন্ধ করবি কবে?’

‘আপনার নামের পাশে ভাই ছাড়া বড্ড বেমানান বুঝলেন।এটা এক প্রকার মুখস্থ বিদ্যার মতো হয়ে গিয়েছে।ভেবেছি আজন্ম এই ভাই বলেই যাবো।’

‘হ্যাঁ দুইদিন পর বাচ্চার মা হয়ে যাবি তখন ও ভাই ডাকিস।’

‘আরে শুনেন না মেহু আপু চাইছে তার একটা ছেলে সন্তান হোক।’

‘মেহুর ছেলে ই হবে দেখে নিস।’

‘ভাবছি ভাইয়ার ছেলে হলে আর আমার মেয়ে হলে আর জীবনেও বাবার বাড়ি যাবো নাহ।মেয়ে বিয়ে দিয়ে তার পর যাবো।’

‘কেনো?’

‘যে ভুল আমি করেছি আমার মেয়েকে সে ভুল করতে দিবো নাহ।আমার মা ঘন ঘন যদি বাবার বাড়ি না যেতো তাহলে কি আর তার ভাতিজা আমার সাথে প্রেম করার সুযোগ পেতো।হিসাব করে পেয়েছি মামাতো ভাইয়েরা সারাজীবন ভাই সেজে থেকে যায় আবার ফ্রিতে ফুফাতো বোনদের সাথে প্রেম ও করে যায়।’

‘আমি আবার কবে প্রেম করলাম।প্রেম আমার উপর পড়েছিলো।আমি প্রেমের উপর পড়িনি।’

‘আপনি প্রেমে পড়েন নি?’

‘নাহ আমি কোনো প্রেমে ট্রেমে পড়িনি।বাট ভয়ানক ভাবে ভালবেসে ফেলছিলাম। ভয়ানক মায়ায় পড়েছিলাম সেখান থেকে আর বেরোনোর চেষ্টা ও করি নি।’

‘আচ্ছা উনি এমন ম্যাজিকের মতো কথা জানেন কিভাবে?সব কথায় প্রচুর ম্যাজিক।যা শুনেই প্রেমে পড়ে যায় বারেবার আমি।’

‘রিয়া কাকিমনি আর আয়রা এসছে।আয়রা এসেই বিহান ভাই কে জড়িয়ে ধরে বলছে তোমার বউ আছে তুমি কাজ করছো কেনো?’

‘পাক্কা বুড়ি।আমার বউ কালো হয়ে যাবে তাই রান্না করতে দেয় না বুঝলে।’

‘তুমি তোমার বউ এর চেয়ে সুন্দর জানো বিহান ভাই।’

‘আমি আয়রা কে বললাম তোর না খবর আছে।আমি কালো বলে আমাকে পছন্দ হয় না তাইনা?’

কিছুক্ষণের মাঝেই বিভোর ভাই প্রবেশ করলেন।বিভোর ভাই এর হাত থেকে জিনিস পত্র গুলো নিয়ে গল্প শুরু করলাম।রান্না শেষ হলে সবাইকে খেতে দিলাম।

বিভোর ভাই কাকিমনিকে বলছেন শ্বাশুড়ি এবার তো আমার জব হয়েছে মেয়ে দিবেন না।কাকিমনি হেসে বললো মেয়ে তো দিয়েছি তুমি নিয়ে নাও।

বিভোর ভাই কে বললাম মামি কি কি পাঠিয়েছি বিভোর ভাই।

রিয়া বললো মা না ডেকে এখনো মামি।

বিহান ভাই বললেন বর কে ভাই ডাকে আর শ্বাশুড়ি কি ডকবে মা।

কাকিমনি হেসে বললো বিহান আর দিয়া বড় হবে কবে যে।

আমাদের বেডরুমে বসে গল্প করছি আমরা।অনেক দিন পর আমাদের আড্ডা জমে উঠেছে।বিহান ভাই কে বললাম,ওগো শুনছেন।উনি চোখ উলটে পালটে আমার দিকে গোল গোল চোখ করে কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলেন।

‘আমি আবার ও বললাম ওগো ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো গো স্বামি।’

‘কিছু খেয়েছিস দিয়া?’

‘পতিপরমেশ্বর আমাকে কি খাওয়ার কথা বলছেন গো।আমি কি খাবো।’

‘বিভোর -রিয়া দেখ তো দিয়াকে কি জ্বীনে ধরেছে কিনা?এমন অদ্ভুত ভাবে কথা বলছে কেনো?’

‘ক্যানো স্বামি এমন মনে হচ্ছে কেনো আপনার?’

‘বিভোর রিয়া না থাকলে তোর এখন খবর ছিলো সিরিয়াসলি বলছি।’

‘বিভোর ভাই আর রিয়া মুখ চেপে হেসেই যাচ্ছে।আমি ক্ষীপ্ত হয়ে বললাম ভাই ডাকলে বকে আবার ওগো হ্যাগো বললেও বকে।’

‘উনি আশ্চর্যজনক ভাবে বললেন তুই ভাল হবি কবে দিয়া।’

‘ভাল হবো আমাকে আগামি বছর মহিলা মেম্বার প্রার্থি হিসাবে ভোটে দাঁড়িয়ে দিবেন।’

‘হোয়াট দ্যা জোকস।’

‘কিসের জোকস শুনি।আমি যদি বলি আমার স্বামি আপনাদের ফ্রি চিকিৎসা করবে আপনারা আমাকে ভোট দিন।তাহলে কি আমি ভোট পাবো না বলুন।’

উনি মনে হয় এক্ষুনি জ্ঞান হারাবেন আমার কথা শুনে।উনি ভ্রু যুগল কুচকে বললেন হাইরে আমার বউ।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here