#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৩০.
#WriterঃMousumi_Akter
মারাত্মক লজ্জা পেয়ে শুভ ভাইয়া অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো।আমি বিহান ভাই এর পিছনে দাঁড়িয়ে আছি আমাকে অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না।লজ্জা আমার ও লাগছে কারণ নিজের আপণ ভাইয়ের প্রেম কাহিনী এভাবে সামনে আসলে ভাইয়া আর আমি দুজনের ই লজ্জা।
বিহান ভাই বললেন,কিস করার কথা ভাবতে ভাবতে এক যুগ কাটিয়ে দিলে কিস এর ইন্টারেস্ট থাকে শুভ।আর হ্যাঁ প্রেমিকাকে কিস করতে মোটেও লেট করিস না তাহলে দেখবি অন্য কেউ দিয়ে চলে যাবে বুঝতেও পারবি না।আমি এর ভুক্তভুগী।
“শুভ ভাইয়া মাথায় হাত চালাতে চালাতে বললেন,,আসলে ও আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলো সেটাই শুনছিলাম।”
“আচ্ছা এই যুগে বুঝি মানুষ মুখ দিয়ে শোনে।শোনার জন্য কান না এগিয়ে মুখ এগিয়ে আনছিলি বাহ।ডিজিটাল যুগে আর কি দেখতে হবে তার ঠিক নেই।আমি আগে থেকেই জানি ইয়াং ম্যান।”
মেহু আপু লজ্জায় লাল হয়ে আছে।আমি বিহান ভাই এর পকেট থেকে মানিব্যাগ টা টুপ করে এনে দোকানের টাকা গুলো দিয়ে দিলাম।যাক শান্তি এখন উনি আমাকে যা ইচ্ছা বলুক টাকা তো দিয়েছি।তাছাড়া ভাইয়ার ওখানে থাকা টাও আমার ঠিক বলে মনে হচ্ছিলো না।বিহান ভাই এর মনোযোগ ওদের দিকে ছিলো এক ঢিলে দুই পাখি ব্যাপার টা মারাত্মক না।
কিছুক্ষণের মাঝেই শুভ ভাইয়া,মেহু আপু আর বিহান ভাই এর আগমন হলো।সবার মুখে হাসি থাকলেও আমার মুখে নেই কারণ আমি জানি উনি মানিব্যাগ চুরর জন্য আমাকেই দায়ী করবেন।কারণ উনি এটা সিওর যে আমিই মানিব্যাগ নিয়েছি।
ব্রিজে লাল,নীল,হলুদ আলো জ্বলছে।চাঁদের হাট মিলিয়েছি আমরা।বিভোর ভাই বলে উঠলেন,বিহান টাকা টা নিজের ইচ্ছায় দিলেই তো হতো তাহলে দিয়ার এত কৌশল করে আনা লাগতো না।
বিহান ভাই ভ্রু কুচকে বললেন,কিসের কৌশল টাকা তো শর্ত সাপেক্ষ আমি ই দিলাম।
আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম শর্ত আমি টাকা এনেছি আপনি জানেন।এখন স্মার্ট সাজার জন্য বলবেন জানেন তাইনা।
জানি মানে টাকা আমি না দিলে কিভাবে আনলি।তোকে না শর্ত দিলাম যে টাকা দিতে পারি কাল আমার সব গুলা জুতা পরিষ্কার করে দিবি আর জিন্স গুলা ধুয়ে দিবি।তুই তো শর্তে রাজি হয়েই টাকা টা হাতে নিয়ে নিলি দিয়া।এখন অস্বীকার করছিস।মেহু তার সাক্ষী।কি হলো মেহু বলো সবাইকে দিয়া এই শর্তে রাজি হয়েই না টাকা টা আনলো।
মেহু আপু বলে উঠলো হ্যাঁ দিয়া তুই তো শর্তেই রাজি হয়েই টাকা টা আনলি তাইনা?নিষ্পাপ বিহান ভাই এর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছিস কেনো?
ভাজ্ঞিস মেহু তুমি ছিলে নাহলে এই দিয়া এখন ই সব অস্বীকার করতো।
দিয়া যা করবি প্রমান রাখার জন্য দেখছি ভিডিও করে রাখতে হবে।না হলে একদিন নির্ঘাত প্রমানের অভাবে আমাকে জেলের ভাত খাওয়াবি তুই।
মেহু আপুর দিকে তাকিয়ে রাগে চোখ ছুটে যাচ্ছিলো আমার।মানুষ এত মিথ্যা বাদী হয়।রেগে রেগে বললাম মেহু আপু আমার নামে মিথ্যা সাক্ষী দিলে আমি কিন্তু সবাইকে বলে দিবো শুভ ভাইয়া আর তোমার লাভ স্টোরি।প্রম করো আমি কি কাউকে বলেছি।তেড়িবেড়ি করলে বলে দিবো কিন্তু।
বিহান ভাই শুভ ভাইয়া আর মেহু আপু আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।ওদের গালে মাছি যাওয়া আসার মতো একটা ব্যাপার।ওদের এই তাকানোর মানে হলো বলেই তো দিলি বোন বাদ আর রাখলি কোথায়।
বিভোর ভাই লাফিয়ে উঠে বলেন,আচ্ছা এইজন্য তাহলে প্রায় টাইমে একই জায়গা দেখি দুজন কে।আমাদের দিয়া হলো সময় চ্যানেল সব নিউজ ই রাখে।আরে মেহু ভাবি আসসালাম আলাইকুম। মেহু আপু যেনো স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছে আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে।মনে হয় আমাকে এই ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দিবে।
বিহান ভাই বললেন,,সময় টিভি না ওর মতো কুটনি বুড়ি থাকলে শহরে আর টিভি থেকে নিউজ দেখা লাগবে না।মোড়ে মোড়ে গিয়ে সব নিউজ প্রচার করতে পারবে।
তিয়াস ভাইয়া,তোহা আপু আর রিয়া একটা শকড খেলো এতদিন তাহলে এই ছিলো তাদের মনে।তারা কেউ বুঝতেও পারে নি।শুভ ভাইয়াকে সবাই প্রশ্ন করলে বলে প্রেম করেছি বেশ করেছি আর কিছু তো করি নি।বিয়ে যখন করতেই হবে ফুফাতো বোন করাটাই বেটার।সুন্দরী ফুফাতো বোনদের প্রতি মামাতো ভাই এর হক আগে থাকে।এত সুন্দর ফুফাতো বোন বিয়ে করবে অন্য কেউ এটা তো হতে দেওয়া যায় না।
তিয়াস ভাইয়া বললো,শুভ ভাইয়া ফুপ্পিকে আবার বেবি নিতে বলো।এইবার মেয়ে হলে আমি বিয়ে করবো।
আমার শালী তোর জন্য বরাদ্দ নয় বুঝলি।
বিহান ভাই বললেন ফুফাতো বোন রা কি আসলেই সুন্দরী হয় তাহলে দিয়া এত পেত্নী কেনো।তাও মাখে নাইট ক্রিম।আজ ও তেমন একটা উন্নতি হলো না চেহারার।এখন এই নদী থেকে যদি ধুইয়ে নিয়ে আসি তাহলে মোটেও চেনা যাবে না।
পেত্নি তাইতো.. …
এটুকু বলতেই আমার মুখ চেপে ধরে খানিক টা দূরে নিয়ে এলেন।হাত চেপে ধরে আছে আরেক হাতে মুখ চেপে ধরে বললেন,একদম কথা বললে এখান থেকে ফেলে দিবো ফাজিল মেয়ে কোথাকার।
তুই কি বড় হবি না। মেহু আর শুভর প্রেম কাহিনী ফাঁশ করে বলছিস বলে দিবো।তাহলে বলার আর বাকি থাকলো কি শুনি।তোর যে মেঝ কাকার মেয়ে তোহা ওইটা কি ভালো।গিয়েই ওর আম্মুর কাছে গিয়ে বলে প্যাঁচ লাগাবে।এটা নিয়ে আমার ফুপ্পিকেই কথা শোনাবে এটা বুঝিস না তুই।আর আমাদের কথা কি বলতে যাচ্ছিলি।সবাইকে বলবি বাট ভুলেও তোহার সামনে নয়।মেয়ে সুবিধার না আমার আগেই বোঝা হয়ে গিয়েছে বুঝলি।তুই না পিচ্চি ই থেকে গেলি।
বলে দিয়েছি বেশ করেছি।আমার নামে মিথ্যা সাক্ষী।
ওইটা তো মেহু ভয়ে বলেছে ও ভাবছে নইলে ওর আর শুভর ব্যাপার টা আমি বলে দিবো।ও যে ভয়ে যা করলো তুই তো সেই বোম ব্লাস্ট করেই দিলি গাধী।
_________________________________
আমার এইস এস সি পরীক্ষা সামনে।লেখাপড়ায় পূর্ণ মনযোগ দিলাম।মিষ্টার বিহান উনি আমার টিচার। প্রেমিক না টিচার আল্লাহ ই ভালো জানেন।আমাদের যে প্রেম ভালবাসা হয়েছিলো উনি মেবি ভুলে গিয়েছেন।যে মুডে থাকেন আমি যে উনার প্রেমিকা তেমন কোনো ভাব ই নেই।অনেক দিন ঘোরাঘুরি হয় না কোথাও।অনেক গুলো দিন কেটে গিয়েছে মাঝে।বিহান ভাই এর প্রথম ইয়ার শেষ প্রায় যখন তখন আমি ইন্টার প্রথম বর্ষে ছিলাম।এখন উনি ফাইনাল ইয়ার এর এক্সাম দিবেন অথচ আমাদের ইন্টার পরীক্ষায় এখনো হলো না।আমি ইংলিশ এ বেশ খানিক দূর্বল থাকার জন্য বিহান ভাই আমাকে এইস এস সি তে এক ইয়ার গ্যাপ দেওয়ালেন।আমার সাথে সাথে রিয়ার ও গ্যাপ থেকে গেলো।অতপর পরীক্ষার সময় এসেছে।
শহর থেকে খানিক দূরে নির্জন এক দ্বীপে আমরা পিকনিকে যাওয়ার প্লান করলাম।প্রায় মানুষ ই ওখানে পিকনিক এ যায়।সারারাত প্লান করে পরের দিন আমরা সবাই রওনা হলাম।বিহান ভাই একটু লেট করেই আসছেন উনার বাইকে।উনার ব্যাংকে কিছু কাজ পড়েছে হঠাত করেই।বাইক নিয়ে সবাই ছুটেছে ছেলেরা তাদের পেছনে আমরা।বিভোর ভাই এর বাইকের পেছনে আমি।তিয়াশ ভাই এর বাইকের পেছনে রিয়া।আলিপ ভাই এর বাইকের পেছনে তোহা আপু।শুভ ভাইয়ার বাইকের পেছেনে মেহু আপু।বিকালের দিকে রওনা হলাম কারণ রাতে ওখানে আজকে সাংস্কৃতিক অনুষ্টান আছে।সেটা দেখার জন্য ই যাওয়া।
হঠাত বিভোর ভাই এর বাইকের তেল ফুরিয়ে গেলো।বিভোর ওদের বললেন তোরা এগিয়ে যা বিহান তেল নিয়ে আসলে আমরা আসছি।বিহান ভাই কে ফোন দেওয়া হয়েছে উনি তেল নিয়ে আসছেন।
কিভাবে টাইম পাস করবো অনেক টাইম হয়ে গিয়েছে।সন্ধ্যার ললাট রূপ ও ধারণ করে ফেলেছে প্রায়।ফোন আর কতক্ষণ চালাবো বিরক্ত লাগছে খুব।বিভোর ভাই কে বললাম আসুন আমরা সেল্ফি নেই বিভোর ভাই।চারদিকের প্রকৃতি বেশ সুন্দর আছে।আমরা ভাই বোন সে ভাবেই একটু কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম।ঘর্ণায়মান সন্ধ্যার এমন রূপে আমাদের দুজন কে দেখে হুট করে দুজন মহিলা আর চারজন পুরুষ এসে বললো কি ব্যাপার নষ্টামি করতে এখানে এসেছো তাইনা?এই মেয়ের সাথে সারারাত এখানে কাটিয়ে কাল একে ছেড়ে দিবা তাইনা?আজকাল এসব ই ঘটছে চারদিকে।এসব ভন্ডামি চলবে না।প্রেমিকা নিয়ে ঘুরতে এসে সারারাত ফূর্তি করে পরের দিন কাশবনে ফেলে চলে যাবা।আমি আর বিভোর ভাই বিস্মিত হয়ে গেলাম উনাদের কথা শুনে।আমাকে আর বিভোর ভাই কে নিয়ে এমন কথা ভাবা যায় ছিঃ।বিভোর ভাই রেগে গিয়ে বললেন,দেখুন ও আমার বোন মোটেও বাজে কথা বলবেন না।একজন মহিলা বলে উঠলেন বোন কেমন বোন শুনি।বিভোর ভাই বললেন,ফুফাতো বোন কিন্তু আপন বোনের মতোই।একজন বলে উঠলেন,রসুল কাকাকে ডাক দাও উনার নামাজ পড়ানো হলে এসে বিয়ে পড়িয়ে দিয়ে যাক।এখন থেকে যেখানে এমন দেখবো ধরে বিয়ে করিয়ে দিবো।
কথাটা শুনেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো আমার।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৩১.
#WriterঃMousumi_Akter
মানুষের জীবনে সমস্যা কখনো বলে আসে না আজ নিজের জীবন দিয়ে সেটা বুঝতে পারছি।কখনো ভাবতেই পারি নি আমার জীবনে এমন বাজে কোনো সিসুয়েশন আসবে।বিভোর ভাই কে সবাই বাজে ভাবে কথা শুনিয়ে চলেছে।বিভোর ভাই কিছুতেই আমার সাথে বিয়ে কল্পনাও করতে পারেন না।আমাকে নিজের মায়ের পেটের বোনের বিকল্প কিছুই ভাবেন না উনি।বিভোর ভাই ফোন হাতে নিতেই ফোন টা কেড়ে নিলেন একজন ভদ্রলোক।আস্তে আস্তে লোকজনে ভরপুর হয়ে গেলো।চারদিকে অনেক গুলা মানুষ আমাদের জড়করে রেখেছে।তাদের ধারণা আমরা প্রেমিকা প্রেমিকা।বিভোর ভাই সোজা বলে দিলেন, তাকে মেরে ফেললেও সে বিয়ে করতে রাজি নাহ।
একজন ভদ্রলোক বললেন বিয়ে করবা না ফুফাতো বোন নিয়ে ফ্রিতে ঘুরতে এসেছো তাইনা।এসব বোন টোন সবাই বলে আসল বেলা অন্য কিছু পাওয়া যায় খুজতে গেলে।আমাদের এই বোন টোন বুঝাতে এসো না বুঝলে।
চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে যাচ্ছে আমার।বিভোর ভাই উনাদের বললেন আমাদের বাসায় ফোন দিন প্রয়োজনে।আমাদের গারজিয়ান কে জানান যা করার তারা করবে আমাদের ছেড়ে দিন।একজন মহিলা বলে উঠলেন, তোমাদের বাসায় জানালে কি হবে তাদের যা বুঝাবা তাই ই বুঝবে।তারা তো আর জানেনা এখানে কি করছো তোমরা।
এমন সময় টুপি মাথায় হাতে খাতা পত্র দাঁড়িওয়ালা একজন কে দেখলাম।উনাকে দেখে মাথা ফাঁকা হয়ে এলো আমার।মানে ইনি কাজি সাহেব।সত্যি সত্যি কি আমার জীবনে এত বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে এখন।কি এমন পাপ করেছিলাম আমি।কি ভুল করেছিলাম যার জন্য এত বড় শাস্তি পাবো আমি।এখন ই বিয়ে পড়ানো হবে আমাদের।
বিভোর ভাই এর সাথে ঝামেলা চলছে এখান কার মানুষ জনের।বিভোর ভাই এর গায়ে ও হাত তুলেছে কয়েকজনে।অচেনা জায়গা নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করেও লাভ নেই।হিতে বিপরিত ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।
আকাশ পানে তাকিয়ে চোখ দিয়ে দু’ফোটা হৃদয় ফাটা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললাম আল্লাহ তুমি তো জানো আমার মনে কি আছে।প্লিজ বাঁচাও আমাকে এমন বাজে কোনো জীবন আমি চাই না।এমন জীবন আমাকে দিও না।তাহলে আমি বাঁচতে পারবো না।প্লিজ কাউকে পাঠাও যে আমাদের এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।
রাস্তার সাইডে অনেক গুলা দিঘী কাটা।দিঘীর পাড় দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট ঘর।হয়তো এসব ঘরে থেকে মাছ পাহারা দেই এখান কার দিঘীর মালিক রা।কোনো উপায় না পেয়ে বিভোর ভাই বললেন আমাদের একটু আলাদা কথা বলতে দিন প্লিজ।আপনাদের সব কথা আমরা মেনে নিচ্ছি জাস্ট এটুকু করেন প্লিজ।তারা ভেবে চিন্তে অনুমতি দিলেন।দিঘীর পাড়ে অবস্হিত একটা ঘরে আমরা প্রবেশ করলাম। ঘরে প্রবেশ করে হাউমাউ করে আমি কেঁদে দিলাম।বিভোর ভাই প্লিজ কিছু করেন।এমন কিছু হলে আমি বাঁচবো না।বিভোর ভাই আমাকে বলেন বোন তুই চিন্তা করিস না।আমরা দুজনেই বাজে একটা জায়গা আটকে গিয়েছি।এখন আমি চাইলেই এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারবো বাট তোকে এদের মাঝে কিভাবে রেখে যাবো।এরা তোর সাথে যা কিছু করতে পারে।আমি কেঁদেই যাচ্ছি একভাবে।বিভোর ভাই আমাকে বলেন,কাঁদিস না দিয়া।বিহান কে মেসেজ করেছিলাম আদেও কি মেসেজ টা পেয়েছে জানিনা।বিহান এখানে আসলে কিছুটা স্বস্তি পেতাম।
“এমন কিছু হলে আমি বিহান ভাই এর সামনে মুখ দেখাতে পারবো না বিভোর ভাই।কারণ আমি বিহান ভাই কে ভালবাসি বিভোর ভাই।আমার রক্ত, শিরা, উপশিরায় ছড়িয়ে আছে বিহান ভাই।আমার মন প্রাণ আত্মা জুড়ে উনার বসবাস বিভোর ভাই।আমার জীবনের সব কিছুর সাথে জড়িয়ে আছে বিহান ভাই।ওই হৃদয়হীন নিষ্টুর মানুষ টার মনে আমি ভালবাসার বসন্ত ছড়িয়েছিলাম বিভোর ভাই।”
“বোন তুই এইগুলা কি বলছিস বিহান কে তুই……..”
“হ্যাঁ বিহান ভাই। উনাকেই আমি ভালবাসি। ”
“বিহান এটা জানে দিয়া।”
“সব জানেন। উনিও আমাকে ভালবাসেন বিভোর ভাই।এমন কিছু হলে উনি এটা সহ্য করতে পারবেন না।”
“সত্যি বিহান ও তোকে ভালবাসে দিয়া।ও নিজে মুখে বলেছে তোকে কখনো।”
“আমি কোনো কথা না বলে হুহু করে কেঁদে উঠলাম।”
এমন সময় দুজন লোক এসে আমাদের বললো দ্রুত উঠে এসো।বাকি গল্প বিয়ের পর করো।
এই বিয়ে কথাটা যেনো পৃথিবীর সব থেকে বিশ্রি কথা আমার কাছে।বিয়ে মানে একটা অভিশাপের নাম।বিয়ের থেকে বাজে কোনো অভিশাপ পৃথিবীতে আর কোনো কিছুতে হতে পারে না।মৌলভী বিয়ে পড়াচ্ছেন।বুকের মাঝে অশান্তির তুফানে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে আমার।এক্ষুনি মরে যেতে চাই আমি।এর চেয়ে মৃত্যু ভালো আমার।জীবন টা এভাবে এলোমেলো হয়ে যাবে আমার।চারদিক থেকে সবাই প্রেসার দিচ্ছে কবুল বলার জন্য।বিভোর ভাই চুপ হয়ে নিচু দিকে তাকিয়ে আছেন।নিজের বোন কে কি কেউ কবুল বলতে পারে।উনার কাছে আমি উনার বোন ই।পনেরো বিষ বার বিভোর ভাই কে প্রেসার দেওয়া হয়ে গিয়েছে কবুল বলার জন্য।কিন্তু উনি চুপ হয়েই আছেন।
এমন সময় ভীড়ের পেছন থেকে কেউ একজন কবুল বলে উঠলো।সবার দৃষ্টি পেছনে যেতেই অবাক হয়ে গেলো সবাই।হ্যান্ডসাম একটা ছেলে এসে অন্যর বিয়ের আসরে কবুল বলছে।চিরচেনা কন্ঠস্বর টা শুনে আমি আর বিভোর ভাই দুজন দুজনের দিকে তাকালাম।এখানে অত লম্বা কোনো ছেলেই নেই।সবার উপর থেকে উনার মাথাটা দেখা যাচ্ছে।উনাকে দেখে যেনো আরো ভীষণ কাঁন্না পেয়ে গেলো।মানুষ ভীড়ের পেছনে উনাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম।বিভোর ভাই দ্রুত উঠে গিয়ে বিহান ভাই কে জড়িয়ে ধরলো।বিহান ভাই বিভোর ভাই কে বললেন চিন্তা করিস না আমি আছি তো।
“একজন ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন,,আপনি কে?আর কবুল বললেন যে।”
“আপনারা যাকে বিয়ে দিচ্ছেন আমি তার হাজবেন্ড।”
“কথাটা শুনে সবাই চমকে গেলো।তাহলে উনি কে?বিভোর ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললেন।”
“আমার শালা বাবু উনি?আমার বউ এর মামাতো ভাই।”
“উনি আপনার বউ সত্যি।”
“বউ না হলে কি আরেকজনের বউ কে বউ দাবি করছি। তাই মনে হয় আপনাদের।”
“কেউ একজন বলে উঠলো আপনি উনার হজবেন্ড তার প্রমাণ কি?এমন তো হতে পারে এখনকার পরিস্হিতি দেখে সুযোগ নিতে চাইছেন।আপনি বললেই কি আমরা মেনে নিবো।”
“আপনারা মেনে না নিলেও এটাই সত্যি।রাস্তাঘাটে ছেলে মেয়ে দেখলে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এভাবে বিয়ে দিয়ে দেন আপনারা।এগুলা আইনত অন্যায়।”
“আমাদের এলাকায় এসব ভন্ডামি চলে না।আপনার বউ হলে এখানে আরেক বার বিয়ে করুন দেখি আপনি কেমন সত্য বলছেন।বিয়ে না করলে তিনজন কেই ভিডিও করো এসব ভন্ডামি হতে দিবো না।”
“আমার কাছে এসে আস্তে করে বললেন আমাকে বিয়ে করতে কি আপত্তি আছে।”
“আমি হালকা হেসে সম্মতি জানালাম।”
“বিহান ভাই কাজিসাহেব কে বললেন বিয়ে পড়ান। কাজি সাহেব আমাদের বিয়েটা পড়িয়ে দিলেন।”
হুট করেই এলোমেলো দিকে এগোচ্ছিলো জীবন টা।আর সেখান থেকেই বিহান ভাই এসে আটকে দিলেন।এইভাবে আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি।এইভাবে বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।কিভাবে কি হয়ে গেলো বুঝতেও পারলাম না।কিছুক্ষণ আগেও অবিবাহিত ছিলাম আমি আর এখন বিবাহিত।ভাবতেই কেমন একটা লাগছে।জীবনে সব থেকে যাকে বেশী ভালবেসেছি আজ আমি তার ই বউ।একজন মহিলা এখানকার দিঘীতেই থাকেন উনার ফ্যামিলি নিয়ে।আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে বললেন,এই যে নতুন বউ এদিকে এসো যতই আগে বিয়ে থাকুক আজ আবার ও বিয়ে হয়েছে তোমাদের তাই আজ আবার ও ফুলসজ্জা হবে।বার বার ফুলসজ্জার সুযোগ কজনে পায় শুনি।ফুলসজ্জা কথাটা শুনেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি।
“ক্রামশ মানুষ জন কমে গেলো।এই দিঘীর পাড়ে বসে আছি আমরা তিনজন।কিছুক্ষণ আগে আমার সাথে যে কথা বলেছিলো উনার নাম রমলা। নিজের স্বামিকে ছেড়ে নাকি এখানে পালিয়ে এসছেন অন্য একজন পুরুষের সাথে।এই দিঘী লিজ নিয়ে এখানে মাছ চাষ করে খাচ্ছেন উনারা।”
“বিভোর ভাই বললেন বিহান তুই কিভাবে এলি এখানে।”
“তোর মেসেজ টা দেখে মাথা নষ্ট হয়ে গেছিলো আমার।আমি যে কি দ্রুত বাইক চালিয়েছি আলাহ জানেন।আমি বাইকে থাকলেও মন এখানে ছিলো।আমার মনে হচ্ছিলো তোদের কোনো ক্ষতি না হয়।”
“এখন কি করবি বিহান।বিয়ের কথা কি সবাই কে জানাবি।”
“এভাবে জানালে আমাদের নিয়ে বাজে কিছু ভাবতে পারে।দিয়ার বাবা ফুপ্পিকে প্রেসার দিতে পারে।ফুপ্পির কোনো অসম্মান হোক সেটা চাই না আমি।১৫ দিন পরেই আমার এক্সাম শুরু এর পর ছয় মাসের ইনটার্ণ করেই সবাই কে জানাবো।দিয়া ও ইন্টার পাশ করুক।এডমিশন নিয়ে নিক আগে তারপর।”
“বিহান অতপরঃবিয়ে উপলক্ষে ট্রিট চাই আমার।”
তোকে আর তোর বোন টা উদ্ধার করেছি আমি।তাই ট্রিট আমার চাই।
রমেলা আন্টিকে বিদায় দিয়ে আমরা চলে আসার কথা ভাবতেই প্রচন্ড ঝোড়ো হাওয়া শুরু হলো।ধুলাবালি চোখে মুখে ভরে গেলো।গাছের ডল ভেঙে পড়ছে।এক্ষুণি ঝড় শুরু হবে। এইভাবে বেরোনো ও সম্ভব নয়।রমেলা আন্টি আমাকে বললেন এইযে নতুন বউ এই ঘর টায় তোমরা থাকো।কুপি ধরিয়ে রেখেছি আমি।বিভোর ভাই কে বললেন আমার সাথে এসো তুমি।ওরা সময় কাটাতে লাগুক।#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৩২
#WriterঃMousumi_Akter
প্রকৃতির প্রচন্ডে তান্ডবে উন্মুক্ত খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছি আমরা দুজন সদ্য বিবাহিত নব দম্পতি।উথাল পাথাল বাতাসে আমার গাড় লাল জরজেট ওড়ণা উড়ে গিয়ে উনার মুখে ছেয়ে গেলো।প্রচন্ড বাতাসে উনার সিল্ক চুল গুলো উড়ছে আমার সামনে এই মুহুর্তে যেনো পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্যুৎ এর আলোকরশ্মি মিনিটে মিনিটে জ্বলে উঠছে, সেই আলোতে উনার মুখে ছেয়ে থাকা আমার ওড়ণা টা চকচক করছে।ঝোড়ো হাওয়া,ঠান্ডা প্রকৃতি এমনিতেই প্রেমিক হৃদয়ে ভালবাসার বাসনা সৃষ্টি করে সেখানে ওনার জীবনের একমাত্র নারী যাকে সদ্য বিয়ে করেছে সে সামনে দাঁড়িয়ে সেই মুহুর্তে উনার মনে প্রেমের নেশা অতিরিক্ত ভাবে উনাকে মাতাল করবে এটাই স্বাভাবিক।নেশাক্ত নয়নে এগোচ্ছিলেন আমার দিকে।আমি লজ্জা ভয় দুটো মিলিয়ে একাকার করে ফেলছিলাম।উনার দিকে তাকাতেই পারছিলাম না।যেমন উথাল পাথাল ঝড় তেমন বৃষ্টি এক মিনিটেই ভিজে একাকার হয়ে গেলাম।উনি এক পা দু পা করে এগিয়েই আসছেন।ভেজা শরীরে উনার দিকে হাত বাড়ালাম উনার দিকে ওড়না টা নেওয়ার জন্য উনি ওড়না টা এক হাতে পেচিয়ে প্রচন্ড ঝুম বৃষ্টিতে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলেন।লজ্জায় মরি মরি অবস্থা, চোখ কোনো ভাবেই খুলতে পারলাম না।মনে মনে এটাই বললাম এই বৃষ্টি বার বার সর্বনাশ করে আমার।যত বার বৃষ্টিতে উনার মুখোমুখি হয়েছি ততবার ই কিছু না কিছু ঘটেছে।প্রচন্ড জোরে বজ্রপাত হওয়াতে ভয়ে মাথা উনার বুকে মিশিয়ে জড়সড় হয়ে রইলাম।কি অদ্ভুত শিহরন উনার এই নেশাক্ত স্পর্শ তে।নেশার কিছু না খাইয়ে একটু স্পর্শ করে কিভাবে একটা মানুষের শরীরে নেশা ধরিয়ে দেওয়া যায় সেটা বোধ হয় উনিই ভালো জানেন।
কুড়ে ঘরের ছনের চালের ছাউনি দিয়ে কি সুন্দর পানি ঝরে পড়ছে।চারদিকে দিঘীতে পানির ঝরণা বয়ে চলেছে।উনি কোলে তুলে নিয়ে ছাউনির নিচে গেলেন।প্রায় বিষ মিনিট হয়ে গিয়েছে কারো মুখে কোনো কথা নেই নিরবে দুজন দুজন কে অনুভব করছি।অপলক নয়নে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে, উনার চোখের পলক ই পড়ছে না।তার কিছুক্ষণ পরেই বিহান ভাই আমাকে উনার কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বললেন,,এত লজ্জা কেনো পাচ্ছো দিয়া।
উনার মুখে আমার নাম সহ তুমি সম্বোধন শুনে অবাক করা নয়নে তাকিয়ে রইলাম।ভেজা গায়ের সাথে লেপ্টে যাওয়া শার্টে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন উনি আর স্নিগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।এই চাওনি আর এই তুমি সম্বোধন দিয়া ডাকে কি এটাই বুঝালো তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী।
“এভাবে নেশাক্ত নয়নে তাকিয়ে আছো কেনো দিয়া?হয় আমাকে তোমার খুব কাছাকাছি আসতে দাও নয়তো কিল মি প্লিজ!উনার কথা আরো লজায় ফেললো আমায়।”
“আপনি তো আমাকে কখনো তুমি বলার সময় দিয়া বলেন না।”
“এখনের তোমাতে আমার বউকে খুজে পাচ্ছি দিয়া।আর বউ কে নাম ধরে তুমি বলে ডাকলেই আদর আদর মিষ্টি মিষ্টি ভাব থাকে।”
“লজ্জায় চিবুক নামলো আবার ও আমার।”
“তোমাকে ওই মহিলা কি বললো দিয়া।আজ ফুলসজ্জা আমাদের।”
“ফুলছাড়া ফুলসজ্জা কিভাবে শুনি।”
“ফুল আনলে ফুলসজ্জা করবে?”
“হ্যাঁ ফুলের বিছানায় সুয়ে থাকবো ফুলের সজ্জা হবে।”
“সাথে তোমার হজবেন্ড থাকলে তো অনেক কিছু হবে।”
“বার বার লজ্জা দিচ্ছেন কেনো শুনি?আপনি আমার হজবেন্ড এটা ভাবতেই লজ্জা লাগছে খুব।”
“এটা তো হওয়ার ই ছিলো ।এই কিশোর মনের ভালবাসা তুমি কি বুঝবে পিচ্চি।”
“এই বৃষ্টির সব দোষ। আপনার কিশোর মনে আমার আনাগোনা এই বৃষ্টি ই সৃষ্টি করেছে।”
“বৃষ্টি আমার জন্য অনেক লাকি।এই বৃষ্টি আমাকে দিয়েছে প্রথম প্রেমের অনুভূতি,, এই বৃষ্টি আমাকে দিয়েছে প্রেমিকাকে মনের কথা জানানোর সুযোগ।এই বৃষ্টি আমায় দিয়েছে তোমায় বউ বানিয়ে সোহাগ রাতে বৃষ্টিবিলাস করার সুযোগ।”
কপালে চুম্বন করে বললেন,
হে বৃষ্টিবিলাসী পিচ্চি,
তোমার বৃষ্টি বিলাসে কেনো আমাকে ভেজালে।আমাকে না ভেজালে তো তোমার প্রেমের অনলে পুড়তাম না।বার বার বৃষ্টি কন্যা রূপে আমার সামনে কেনো এসে আমাকে তোমার মনের মেঘ হতে বাধ্য করো।
দিঘিতে অনেক লাল লাল শাপলা ফুল ফুটেছে।বিহান ভাই কত গুলা লাল শাপলা এক ঝটকায় তুলে আনলেন।ফুল গুলো ঘরের মধ্যে ফেলে আমার কাছাকাছি এসে দাঁড়ালেন।
হটাত মেঘের গর্জনে ছিটকে গিয়ে উনার বুকে পড়লাম।প্রচন্ড ঠন্ডায় কাঁপছি।উনাকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরলাম।কি হচ্ছিলো কিছুই জানিনা।মানুষ টা কখন ঠোঁটের খুব কাছাকাছি এসেছে জানিনা।ওষ্টের সাথে ওষ্ট মিলিয়ে মাদক নেশার মতো লেগে ছিলেন।প্রতিটা আদরের স্পর্শ ভীষণ ভাল লাগছিলো আমার।কখন ঝড় বৃষ্টি থেমেছে জানিনা।কত সময় পার হয়ে গিয়েছে তাও জানিনা।বেডের উপর লাল শাপলার পাপড়ির ছড়াছড়ি। বুঝতে বাকি রইলো না শাপলা দিয়েই ফুল সজ্জার খাট সাজিয়েছেন। হঠাত খেয়াল হলো গলায় ঠোঁট ডুবিয়ে সুয়ে আছেন বিহান ভাই আমাকে জড়িয়ে নিয়ে।বিছানায় কখন এসছি কিছুই জানিনা।এই ভেজা কাপড় নিয়ে বিছানায়।কখন বৃষ্টি থেমেছে আকাশ আবার পরিষ্কার,,আবার চাঁদ তারা ফুটেছে।আজ কি সত্যি দিন আর রাত টা আমাদের জন্য ছিলো।আমার বিয়ে,বৃষ্টি বিলাশ, উনার সাথে ফুলসজ্জা,আবার চাঁদনি রাত।ভীষণ লজ্জা লাগছে উনাকে মুখ দেখাবো কিভাবে।
বিহান এর ফোনে ফোন আসাতে বিরক্ত হয়ে বলেন,,ফোন মাই ফুট কোন ডাফার এমন টাইমে বিরক্ত করে।
“বার বার কল আসাতে রিসিভ করে বললেন,কি হয়েছে ভাই ”
“কি করিস ভাই?”
“ফুলসজ্জা করছি”
“বিয়ে করলি কখন।”
“দুই ঘন্টা আগে করেছি।”
“নাইস জোকস বাট তুইও পারিস।না মানে ফুলসজ্জা।”
“টাইমলি সব পারি।রাখ ফোন।”
কল টা কার ছিলো জানিনা।প্রশ্ন ও করি নি।আমি এক ঝটকায় বিছানা ছেড়ে উঠলাম।ভেজা কাপড়ে ঠান্ডা জমে গেছে শরীরে।আমার সাথে উনিও উঠলেন।
“বিহান ভাই উনার ব্যাগ থেকে লং একটা শার্ট বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,এটা পর ঠান্ডা লেগে যাবে।”
“নিচে কি পরবো?প্লাজু বা সালোয়ার টাইপ কিছু কই পাবো।”
“আন্ডারওয়্যার পরবি আমার।”
“কিহ!আমি ওসব পরতে যাবো কেনো?আর ওড়না ও নেই।কি ফাজিল ছেলে ভাবা যায়।”
“আগে এটা পরে নে।থ্রি কোয়ার্টার দিচ্ছি। পিচ্চি মেয়ের আবার ওড়না লাগে।যা দেখার তাতো দেখেই ফেলেছি।আমি উনার কথা লজ্জায় বাকশক্তি হারালাম।”
“ওনার সাদা শার্ট পরে নিলাম।হাঁটু অবধি পড়েছে আমার।ওই ছয় ফিট মানুষের সামনে আমি আসলেই পিচ্চি।কি অসভ্য একভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কাজুবাজু ভাবে বললাম।এভাবে তাকিয়ে থাকলে পরবো কিভাবে।”
উনি ঘরের বাইরে গেলে আমি থ্রি কোয়ার্টার পরে নিলাম।
“বেশ কিছুক্ষণ সময় পরে উনি ফিরে এলেন।আমাকে বললেন চোখ অফ কর তো।”
“অবাক হয়ে বললাম কেনো?”
“আহা!কর না।”
“চোখ অফ করে বললাম,বলুন কি?”
“হাতে কি যেনো একটা পরিয়ে দিয়ে বললেন হ্যাপি ফুলসজ্জা পিচ্চি বউ।”
আমি চোখ খুলে অবাক হয়ে যায়।হাতে চিক চিক করছে একটা রিং।রিং টা ঘাস আর ঘাস ফুল দিয়ে বানানো।প্রকৃতির বানানো জিনিস এতটা সুন্দর হয়।আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম।
উনি বললন,বাসর রাতে কিছু দিতে হয়।এখানে দামি জিনিস নেই দেওয়ার মতো।তাই এই প্রকৃতি থেকে নেওয়া জিনিস দিয়ে ফুলসজ্জার গিফট বানিয়ে ফেললাম।আমি যে অনেক খুশি হয়েছি উনি আমার চোখ দেখেই বুঝে গেলেন।
ব্যাগ থেকে ড্রেস নিয়ে নিজেও চেঞ্জ করে নিলেন।ছেলেটার ঢাকা যাওয়া আসার ব্যাগ টা ভাজ্ঞিস ছিলো।
চলবে,,
(
চলবে,,