এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব ৫৮+৫৯+৬০

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৫৮.
#WriterঃMousumi_Akter

সামনে তিন কেজি ছোট মাছ আর হাতে বটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।কয়েক হাজার মাথা হবে এই মাছের যদি বিহান ভাই এর একটা মাথা কাটতে পারতাম তাহলে আর এত গুলো মাছের মাথা আমার আর কাটা লাগতো না।উনার এই একটা মাথা কেটে কুচি কুচি করে মুড়িঘন্ট করে উনার গোরস্হানে রেখে আসলেই শান্তি পেতাম।মাছ আর বটি নিয়ে আমাকে ভাবান্তর দেখে বিহান ভাই বললেন কি ভাবছিস দ্রুত কাজ কর।

‘উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,ছাই কোথায়? ছাই ছাড়া মাছ কাটবো কিভাবে?’

‘দেখ কাজের খালা এনে রেখেছে খুজে দেখ পেয়ে যাবি।’

খুজতে খুজতে ছাই পেয়ে গেলাম।পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলসা হলাম আমি।যে কিনা এক গ্লাস পানি ও ঢেলে খেতে চাই না সেই আমাকে দিয়ে এখন এত কাজ করানো হচ্ছে।তাতে আবার বলে দিয়েছেন সুন্দর ভাবে মাছ কাটবি নাড়িভুড়ি কিচ্ছুই যেনো থাকে না।প্রায় বিশ মিনিট হয়ে গিয়েছে মাছের দশ ভাগের এক ভাগ ও কাটা হয় নি।হঠাত শুনি কানে বিড়ালের মিউ মিউ সাউন্ড হচ্ছে।এই দিকে বিহান ভাই বাইরে কিছু একটা আনতে গিয়েছেন।টুপ করে দরজা টা খুলতেই বিড়াল টা ভেতরে প্রবেশ করলো।বিড়ালের সামনে মাছ গুলো রেখে বললাম নে তোর পেট টা খালি মনে হচ্ছে দ্রুত খেয়ে নে বাপ।খেয়ে আমাক উদ্ধার কর।বিড়ালের দশ মিনিট ও লাগলো না মাছ খেয়ে ভেট ভর্তি করে আরাম করছে। বিড়াল টাকে আবার বাইরে বের করে দিয়ে মাছ ধুয়ে হাত ধুয়ে চুপটি মেরে বসে রইলাম আমি।কিছুক্ষণ পরে বিহান ভাই এসে বললেন মাছ কাটা শেষ তোর।

‘হেসে উত্তর দিলাম হ্যা সব মাছ কাটা শেষ।’

‘রিয়েলি কিভাবে সম্ভব এত মাছ এতটুক টাইমে কেটে ফেললি।কই দেখি।’

‘মাছ দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন বাকি মাছ কোথায়।এতো ৩০০ গ্রাম মাছ ও হবে না।কাটতে গিয়ে কি কাচাই খেয়ে ফেললি বুঝলাম না।মাছ কোথায় ফেলেছিস সত্যি করে বল।’

‘কি যে বলেন না আপনি?দেখেন এত গুলা মাছের এত গুলা মাথা এত গুলা হাত পা এসব কেটে কুটে ফেলার পর মাছ এতটুকুই আছে।’

‘সিরিয়াসলি?ওকে আবার মাছ কিনে আনি।দেখি হাত পা কাটলে কত টুকু থাকে।’

‘এই না না। আজকে না। অন্যদিন কিনে আনবেন তাতেই হবে।’

‘বিহান ভাই বললেন রান্না ঘরে আয় আমি রান্না করবো তুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকবি।’

এমন সময় টুং টাং শব্দে কলিং বেল বাজছে।বিহান ভাই বললেন দেখ তো দিয়া কে এসছে দরজা টা খুলে দে।দরজার কাছে গিয়ে দরজা টা খুলে দেখি উনার কাজের খালা এসছে।উনাকে দেখেই আমি উত্তেজিত হয়ে গেলাম আর বললাম কি সমস্যা খালা আপনি এত লেট করে এসছেন কেনো? জানেন না উনি ব্যাচেলর মানুষ উনার মাছ টাস এগুলা কে কাটে।খালা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন আরে বৌমা কেমন আছো তুমি?উনার দিকে তাকিয়ে অবাক আমি আমাকে এইভাবে বৌমা ডাকছেন কেনো উনি?আমি ভ্রু কুচকে বললাম বৌমা মানে।খালা আবার ও হেসে বললেন,বাবাজান ও তো বললো আম্মা যে খালা আপনার বাসার সামনে মাছ থাকলে তিন কেজি গুড়া মাছ নিয়ে আসুন আপনার বৌমাকে দিয়া মাছ কাটাবো আজ।খালার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,তো আমাকে বৌমা বলছেন কেনো?উনি আবার ও হেসে উত্তর দিলেন বাবাজান তোমার ছবি দেখিয়েছে আর বলেছে এটা আপনার বৌমা খালা বাসাটা ভালভাবে গুছিয়ে রাখুন এখন থেকে রোজ তার যাওয়া আসা হবে এ বাসায়।আমি উনার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম বিহান ভাই বলেছেন আমার কথা।রান্নাঘর থেকে বিহান ভাই এগিয়ে এসে বললেন,খালা আপনার বউমা পিচ্চি মানুষ হুটহাট রেগে যায় আর বোঝে কম।ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিন তো সংসার টা।খালা হেসে বললেন কোনো ব্যাপার না বাবা আমি সব বুঝিয়ে দিবো।বিহান ভাই খুন্তি নাড়াতে নাড়াতে বললেন কি ব্যাপার খালা হুট করেই আপনি এলেন যে কোনো দরকার আছে।খালা বললো বাবা একটা কথা বলতে এসছি আমার সাথে একজন এসছে।মেয়েটার বয়স খুব ই কম হার্ট ছিদ্র হয়ে গিয়েছে অর জামাই খুব কাঁন্নাকাটি করে টাকার অভাব।চিকিৎসা করতে পারে না আবার ভিক্ষা ও করতে পারে না।তুমি একটু দেখবা বাবা।বিহান ভাই বললেন ভেতরে নিয়ে আসুন খালা।খালা গিয়ে উনাদের ভেতরে নিয়ে আসলেন।উনাদের দেখেই আমি অবাক হয়ে গেলাম এরাই তো তারা রোজ যাদের বেলকনিতে দেখি।বিহান ভাই কে বেলকনির ঘটনা টা খুলে বললাম।বিহান ভাই মহিলাটিকে খুব ভালো ভাবে দেখে নিজের একটা কার্ড দিয়ে দিলেন। হয়তো উনার চিকিৎসার সব দায়িত্ব বিহান ভাই নিজেই নিবেন।খালা সহ মহিলাটা যেতেই বিহান ভাই জানালা দিয়ে দেখেন বিড়াল টা বমি করছে।উনি আমাকে ডেকে বললেন বিড়াল কে পেট ভরে মাছ খাইয়েছিস তো দিয়া।কথাটা শুনেই আতকে উঠলাম উনি জেনে গেলেন যে আমি বিড়াল কে মাছ দিয়েছি।আমি বলে উঠলাম আপনি মিথ্যা বললেন কেনো যে খালা আসবে না।অথচ খালাকে দিয়েই মাছ কিনিয়েছেন আমাকে কষ্ট দিতে।আমি কষ্ট পেলে কি খুব আনন্দ পান।উনি কপাল টান টান করে আমার দিকে তাকালেন তোয়ালে তে দুই হাত মুছে আমার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে এলেন।ভয়ে বুকে দুরুম দুরুম আওয়াজ হচ্ছে কি করবেন উনি।একদম আমার সাথে মিশে এসে দাঁড়ালেন।ভারী কন্ঠ নিয়ে বললাম ইয়ে কি হয়েছে।উনার হাতের আঙুল এগিয়ে এনে কপালে আঙুলের স্পর্শ করে বললেন এভাবে রোজ বাকা টিপ পরবি আর আমি ঠিক করে কপালে পরিয়ে দিবো।উনি টিপ টা তুলে ঠিক করে পরিয়ে দিলেন।কোমর জড়িয়ে ধরে বললেন কষ্ট দিতে কিছুই করিনি শুধু চোখের সামনে রাখবো বলে কাজ করালাম।আর একটা কারণ ও আছে সেটা হলো নির্বাণ এর সাথে চা খাচ্ছিলি কেনো?মিহি কন্ঠে বললাম প্রেম তো আর করছিলাম নাহ তাইনা?উনি গলায় চুমু দিয়ে বললেন আমি ছাড়া অন্য কারো প্রেমে পড়া বারণ তুমি জানোনা পিচ্চি।উনার দিকে তাকিয়ে বললাম যদিও করি তাহলে কি রেগে বিদায় দিবেন লাইফ থেকে।উনি হেসে বললেন উহু এই রাগ টা কখনো হবে না।এমন ক্ষমতা তোমার হবে না যে আমায় ছেড়ে অন্য কারো প্রেমে পড়বে।সেই সুযোগ আমি আসতেই দিবো না।এমন ভালবাসা কোথায় পাবে যেখানে আমার থেকে বেশী সুখ পাবে তুমি।ওই যে পাশের ওই রুমে যাও রুম টা তোমার গিয়ে দেখো ভাল লাগে কিনা।রুমটায় প্রবেশ করএ অবাক হয়ে গেলাম আমি।বিহান ভাই আমার গাল টানছেন এমন একটা পিক ওয়ালে টানানো আছে।সুন্দর একটা ফোমের খাট। একটা স্টাডি টেবিল।খাটের দুই সাইডে অনেক গুলো লাল সাদা গোলাপ।পাশেই একটা আলমারি।আলমারি খুলেই চমকে গেলাম আমি কম করে ৪০-৫০ টা শাড়ি হবে। আলমারির ড্র‍য়ার খুলে দেখি বিভিন্ন রকমের কসমেটিক্স।বাকি জীবনে হয়তো আমাকে আর কিছুই কেনা লাগবে না।এত্ত পরিমান অর্নামেন্টস।চুড়ির আলনা ভর্তি চুড়ি। এই রুম টায় একটা দোকানের সমান।চোখে ধাঁধা লেগে গেলো আমার।আমি বিহান ভাইকে বললাম এসব এতটুকু বলতেই উনি বললেন সব তোর জন্য।আমার পছন্দমতো গুছিয়েছি সব।উনি আমার জন্য এত কিছু ভাবতে পারেন।

‘খানিক টা দম নিয়ে বললাম জানেন আপনার বিয়ের কথা হচ্ছে?’

‘এটা আর নতুন কি?সেতো হয়েই থাকে।’

‘আমার ভাল লাগে না শুনলে।ভীষণ কষ্ট হয়।কেনো হবে আপনার বিয়ের কথা।’

‘আচ্ছা আর হবে না। দুই মাস পরেই নিয়ে আসবো আমার কাছে।আম্মুকে পাঠাবো তার ননদের কাছে।’

‘সত্যি পাঠাবেন।।।’

‘আমি কি মিথ্যা বলি।আর হ্যাঁ নির্বান থেকে দূরে থাকবি।শালা কে কেমন সন্দেহ হচ্ছে।এইজন্য বউ এর পরিচয় বন্ধুদের সাথে করাতে নেই এরা হলো কালসাপ টাইপের।’

‘এত্ত জেলাস আপনি ভাবা যায়।’

‘হুম ভাবতে হবে।’

‘আপনার প্রেয়সী আমাকে আজ অনেক বাজে কথা বলেছে।’

‘কি বলেছে? ‘

লাইব্রেরির বলা সব কথা উনাকে বললাম।বিহান ভাই চট করেই রেডি হয়ে নিয়ে বললেন চল আমার সাথে।উনাকে বললাম কোথায় যাবো?বিহান ভাই বললেন আগে চল তুই।এখানেই বিহান ভাই এর বাইক আছে উনি হলেন বাইক লাভার।বাইকে স্টার্ট দিয়ে বললেন ওঠ দিয়া।চুপচাপ উনার বাইকে উঠলাম। বাইক নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন জানিনা।মুড ভীষণ অফ উনার।আমি যে এত প্রশ্ন করছি কোনো কথা বলছেন না উনি।কয়েক মিনিট পরেই একতা বাড়ির সামনে বাইকে থামিয়ে আমার হাত ধরএ বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন।বাড়িটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক রাজকীয়। আমাদের দেখেই প্রেয়সী আপু এগিয়ে এসে বললো বিহান তুই দিয়াকে সাথে নিয়ে।প্রেয়সী আপুর বাবা মা ও ছিলেন।বিহান ভাই প্রেয়সী আপুর গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললেন মানুষের মিনিমাম লজ্জা থাকা উচিত যেটা তোর নেই।আঙ্কেল আপনার মেয়েকে কি শিক্ষা দিয়েছেন? প্রেয়সী আপুর বাবা বললেন কেনো বাবা কি হয়েছে।বিহান ভাই বললেন,আপনার মেয়ে একটা সাইকো রুগি। তাকিয়ে দেখুন এই পিচ্চি মেয়ের দিকে আপনার মেয়ের কিসের প্রতিযোগিতা ওর সাথে।আপনার মেয়ে নিজেকে তো ছোট করছেই সাথে আপনাদের ও।আপনার মেয়েকে বলে দিন আগে যায় হোক ফ্রেন্ড এর চোখে দেখতাম এখন থেকে সেটাও আর দেখবো না।দিয়ার চোখে পানি আসলে আমি কাউকে ছেড়ে দিবো না।নেক্সট আপনার মেয়ে যদি আর এমন কিছু করে আমার সব থেকে খারাপ রুপ দেখবেন আপনারা।

এইভাবে কারো বাড়িতে গিয়ে তার মা বাবার সামনে মেয়ের গায়ে হাত দেওয়াটা কম সাহসের কথা নয়।বিহান ভাই এতটা রাগী আর জেদী আগে জানতাম নাহ।উনি আমাকে এত টা ভাল কেনো বাসেন?

সেদিন বাসায় আসার পরেই দেখি আম্মুর মন ভীষণ খারাপ।আম্মুকে বললাম কি হয়েছে আম্মু।আম্মুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আম্মু কোনো কথায় বলছে না
।রিয়ার মুখে শুনলাম ভাইয়া আর মেহু আপু নাকি পালিয়ে গিয়েছে।কথাটা শুনে চমকে গেলাম আমি।ভাইয়া এটা কি করলো আর পালিয়ে বা কোথায় গেলো।বাবা নাকি আম্মুর সাথে ভীষণ রাগারাগি করছে।আম্মুকে কি বলে শান্তনা দিবো সেটা বুঝছি না।চারদিকে এটা নিয়ে সবার মুখে মুখে রটে গিয়েছে।মুহুর্তের মাঝে বিহান ভাই ও চলে এলেন।বিহান ভাই আম্মুকে বুঝিয়েই যাচ্ছে।বিহান ভাই বলে উঠলেন এখানে শুভ আর মেহুর কোনো দোষ নেই।আমার মতে যেটা করেছে ঠিক ই করেছে।ফুফা নিজেই তো আত্মীয়ের মাঝে বিয়ে দিবে না বলে জিদ ধরলো।ফুফার বোঝা উচিত ছিলো বিয়ে দুটো মনের ব্যাপার। এমন করলে কবে মেয়েও ভেগে যাবে।আম্মুও বললো ঠিক ই বলেছিস বাবা সব শুভর বাবার দোষ। ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে এখন তাদের ইচ্ছার গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

বেশ কয়েকদিন কেটে গিয়েছে আম্মু আর কাকি মনিও নড়াইল ফিরে গিয়েছে।ভাইয়া আর মেহু আপুর ঘটনা টা নিয়ে দুই ফ্যামিলির মাঝে অনেক অশান্তি যাচ্ছে।বাবা হঠাত কেমন নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছেন।ফোন দিলেও তেমন একটা কথা বলেন না।আজ কতদিন হয়েছে ভাইয়ার মুখ টা দেখি না মেহু আপুকে দেখি না ভীষণ মিস করছি।ভাইয়ার ফোন ও অফ।ভাইয়া কি আর মিস করেনা আমাকে। ভাইয়াকে ভেবে মন ভীষণ খারাপ আজ।কেটে গিয়েছে আজ তিন তিন টা মাস।আজ ভাইয়ার জন্মদিন প্রতিবছর এ দিনে অনেক মজা করি।আম্মুও আজ খুব কাঁদছে।

ফুপ্পির সাথে যদি বাবার সম্পর্ক খারাপ হয় সেই ভয়ে বাবা বিয়েতে রাজি ছিলো না।ফুপ্পিকে ভীষণ ভালবাসে বাবা।ভালোর জন্য বাবার চিন্তা আজ অনেক কিছু বদলে দিয়েছে।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৫৯.
#WriterঃMousumi_Akter

প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে আজ কলেজে গেলাম মুখে হাসি নেই মনের মাঝে গুমট কালো মেঘ জমেছে।ভাইয়াকে ভীষন মিস করছি ছোট বেলা থেকেই ভাইয়া ছাড়া কোথাও গিয়ে থাকিনি।আজ তিনটা মাস ভাইয়া ছাড়া আছি।এই শহরের অলি গলিতে ভাইয়াকে খুজে চলেছি কিন্তু কোথাও ভাইয়ার দেখা পাই নি আমি।আর কোনদিন কি দেখা হবে না আমাদের।মেহু আপু ও কি ভুলে গিয়েছে আমাকে।ভাবতে ভাবতে রিয়ার সাথে কলেজে গেলাম।কলেজে ঢুকতেই অনিকা বললো এই দিয়া শোনো।অনিকা মেয়েটার শত শত মেসেজ আমি বিহান ভাই এর ফোন থেকে পরেছি।মেসেজ রিকুয়েষ্ট এ মেসেজের শেষ নেই।তাই এই মেয়েটাকে আমার একটুও পছন্দ না।দাঁড়িয়ে গিয়ে বললাম যা বলবা দ্রুত বলো।
“অনিকা আমার দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে বললো বিহান স্যার এর সাথে এত কি কথা বলো।উনি কারো সাথে কথা বলেন না।তোমার সাথে এত কথা কি বলে?”

“এটা বলার জন্য আমাকে ডেকেছো?”

“হুম সতর্ক করতে।বিহান স্যার আমার সো ভুলেও উনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখো না।তোমাকে দেখেছি স্যারের কেবিনে রেগুলার যাও। আমাকে দেখো আমাকে তাই পাত্তা দিচ্ছে না তুমি অহেতুক সময় নষ্ট করো না।”

“বিহান স্যার তোমার সিরিয়াসলি?আচ্ছা তুমি কি সেই মেসেজ করো স্যার আপনাকে ক্লাসে দেখলে আমি একভাবে তাকিয়ে থাকি।আপনাকে নিয়ে কল্পনার জগতে পাড়ি জমায় আমি।”

“তুমি কিভাবে জানলে?”

“তোমার বিহান স্যার আমাকে বলেছে?আর একটা সিক্রেট কথা শুনবা?”

“কি সিক্রেট।।”

“এই রিয়া সিক্রেট টা বল তো।”

“তাহলে দিয়া বলেই ফেলি।”

“হ্যাঁ বল”

“না থাক।”

রিয়া আর আমি একটু খানি মজা নিয়ে ক্লাসে চলে গেলাম।

ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসে আছি।প্রথম ক্লাস টা বিহান ভাই এর আজ।পাশের বেঞ্চে বসে থাকা অনিকা বলছে বিহান স্যার কে এক হাজার মেসেজ করেছি উত্তর দেয় না। উনি এতটা ডিমান্ডি কেনো?আবার ওই দিয়াকে নাকি আমার মেসেজ দেখিয়েছে।আমার প্রেজটিজ যা ছিলো তা আর নেই।অনিকার বেষ্ট ফ্রেন্ড বলছে এত সুন্দরী হয়ে কি করলি জীবনে একজন প্রফেসরের থেকে যদি রিপ্লে না পাস।দিয়ার প্রতি স্যারের অন্যরকম ফিলিংস আছে দেখে বুঝিস না।স্যার ক্লাস নেওয়ার ফাকে বার বার দিয়াকে লক্ষ করে।অনিকা বলে উঠলো,কতদিন রিপ্লে দিবে না একদিন না একদিন ঠিক ই রিপ্লে দিবে।সাইড থেকে আরেক টা মেয়ে বলছে প্রেয়সী ম্যাম আর বিহান স্যারের মাঝে অনেক ঝামেলা। প্রেয়সী ম্যাম নাকি বিহান স্যার কে ভালবাসেন কিন্তু বিহান স্যার পাত্তা দেন না শুনেছি বিহান স্যার এর প্রেমিকা আছে। অনিকার বেষ্ট ফ্রেন্ড আছে প্রেয়সি ম্যাম যেখানে পাত্তা পান না সেখানে আমরা ভাবা যায়।

রিয়াকে বললাম,রিয়া এই অনিকাকে চুপ করতে বল আমার কিন্তু এমনি আজ মুড অফ।ক্লাস করতে এসছে নাকি স্যারের সাথে প্রেম করতে এসছে।

সাথে সাথেই বিহান ভাই ক্লাসে প্রবেশ করলেন।উনি পড়াচ্ছেন আর আমি মাথা নিচু দিক দিয়ে বসে আছি।বিহান ভাই আমার কাছে এসে বললেন,

“মিস দিয়া নিচু হয়ে বসে আছেন কেনো?কিছুক্ষণ আগে কি পড়িয়েছি বলুন তো?”

“জানিনা।”

“মন কোথায় ছিলো?”

“জানিনা।”

“আপনি কিছুই জানেন না সমস্যা কি আপনার?আমার ক্লাসে মনোযোগী হতে হবে না হলে ক্লাসে আসা যাবে না।”

অনিকা বললো স্যার দিয়াকে ক্লাস থেকে বের করে দিন।আপনার সাথে আমরা কেউ এমন বেয়াদবি করি নাহ।কিন্তু দিয়া করে দেখেছেন স্যার।

বিহান ভাই অনিকার দিকে তাকিয়ে বললো,আপনাকে কথা বলতে কে বলেছে মিস অনিকা।আপনি কোন রাইটে আমাকে ডিসিশন নিতে বলছেন।কারো কথা শুনে আমি ডিসিশন নেয় না।নেক্সট এমন ভুল করবেন না।

সো দিয়া ক্লাসে মনোযোগী হতে হবে।সময় চলে গেলে সে সময় আর ফিরে পাওয়া যাবে না।তাই প্রতিটি মিনিট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাস শেষে দেখে করবেন আমার চেম্বারে।

ক্লাস শেষে নির্বাণ স্যারের সাথে দেখা।স্যার আমাকে দেখলেই যেনো কেমন কেমন করেন।হয়তো বিহান ভাই বলেছেন খেয়াল রাখতে।

“স্যার এগিয়ে এসে বললেন দিয়া কেমন আছো?”

“স্যার আলহামদুলিল্লাহ।”

“দিয়া ভাবছি বিয়ে করবো।”

“স্যার করূন না।এটা ভালো কথা।”

“হুম বাট সে কি আমায় গ্রহন করবে সেটাই ভাবছি।”

“কে স্যার।”

“যাকে খুব বেশী পছন্দ করি।”

“আপনার মতো ছেলেকে অপছন্দ করে এমন মেয়ে কোথাও নেই স্যার।হয়তো সে আপনার প্রপোজ এর অপেক্ষায় আছে। প্লিজ স্যার দেরি না করে ডিরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব টা দিয়েই দিন।”

“তুমি বলছো?”

“হ্যাঁ স্যার।”

“ধন্যবাদ দিয়া। আমাকে টেনশন মুক্ত করলে তুমি?”

“বিহান ভাই এর কেবিনে গিয়ে মুড নিয়ে বললাম আমাকে ডাকা হয়েছে কেনো?”

“আমার বউ কি আমাকে রেখে প্রেম করছে তার ক্লাসে কোনো মনোযোগ নেই।”

“আপনার ক্লাস আর একদিন ও করার ইচ্ছা নেই বুঝেছেন।ওই অনিকা আপনাকে ভালবাসে।ইচ্ছা করে ওর গলা টিপে দেয় আমি।কিন্তু পারি নাহ।ভদ্র লোকের মতো যদি আমার আইডির সাথে রিলেশনশিপ স্টাটাস না দেন আজকে যদি ব্রেক আপ না করি আমার নাম দিয়া না বলে রাখলাম।”

“রিলেশনশিপ স্টাটাস?”

“হ্যাঁ রিলেশনশিপ স্টাটাস। আপনাকে তো লয়াল ভাবতাম বিহান ভাই আপনি তো কম না। মেয়েদের ইমপ্রেস করতে আইডির স্টাটাস সিঙ্গেল দিয়ে রেখেছেন।ক্যানো এক মেয়েতে মন ভরে না আপনার।”

“আমি এক মেয়েতেই আসক্ত মিসেস বিহান।দুনিয়াতে আর কোনো মেয়ে আছে কিনা খেয়াল নেই আমার।”

“এসব পাম মারলে কাজ হবে না।রাগে হাত পা জ্বলছে পুড়ছে? এক্ষুণি আমার সামনে স্টাটাস দেন।”

“ম্যারেড স্টাটাস দিয়ে দেই।তাহলে সবাই বুঝবে তুই আমার ঝগড়ুটে বউ।”

“এখন তো আমাকে ঝগড়ুটে মনে হবেই তাইনা।আপনার যে মনের ভিতর জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।কার না ভাল লাগে রোজ রোজ নতুন নতুন মেয়ের মুখ থেকে ভালবাসি কথা শুনতে।আই লাভ ইউ জান,পরাণ, কলিজা ঢং।এইসব কারণে আমাকে পাত্তা দেওয়া হয় না।পাত্তা দিবেন ই বা ক্যানো?জানেন যে দিয়া তো আছেই দিয়া আমাকে ভীষণ ভালবাসে আমি যেটাই করি না ক্যানো দিয়া আমাকে ছেড়ে কিছুতেই যাবে না তাই ফাউ ফাউ মানুষের ভালবাসা গুলো ইগনোর করবো ক্যান?”

“বউ তো নয় যেনো সিসি ক্যামেরা।এত সিরিয়াস কেনো শ্বশুরের মেয়ে আজ।”

“শুনেন আপনি আগে রিলেশনশিপ স্টাটাস দিবেন মানুষ বুঝবে বিহান স্যার প্রেম করে তারপর ম্যারেড স্টাটাস দিবেন।তাহলে মেয়েরা ভাল ভাবে বুঝতে পারবে আমার সাথে রিলেশন করে বিয়ে আপনার।”

“আজ কি প্রতিজ্ঞা করেছো আমার সাথে ভীষণ ঝগড়া করবে তুমি?বাট আমার আজ ঝগড়ার মুড নেই মিসেস বিহান।”

“আজ যে নিজের ভুল তাই চুপ আছেন।আপনাকে কি আর আমি চিনি না।আপনি কি আর চুপ থাকার বান্দা।নিশ্চয়ই ভেবেছেন দিয়া যা বলছে সব ই ঠিক।আমার চরিত্র হুইল দিয়ে ধোয়া দরকার।”

“আচ্ছা তুমি যেটাই বলেছো আমি কি কোন কিছু না বলেছি?তাহলেও এমন রণচন্ডী মুডে তুমি।যদি রাজি না হতাম তাহলে কি ছিলো কপালে আল্লাহ জানে।আমি যে এর আগে কতবার বলেছি স্টাটাস দেই আপনি তো নিষেধ করেন যে না না ভুলেও না।সবাই দেখবে কে কি ভাববে এখন সব দোষ আমার।”

“তখন আর এখন কি এক হলো।”

“আচ্ছা দিচ্ছি নটিফিকেশন চেক করেন।”

“আহ শান্তি মেয়েদের ফিলিংস হার্ট ব্রোকেন।”

বিহান ভাই এর টেবিলে দেখি এত্তগুলা লোশন আর ক্রিম আর লিপিস্টিক ওয়াও?আমি দেখে লোভ সামলাতে না পেরে বললাম আমাকে একটা লিপিস্টিক দিবেন বিহান ভাই?

বিহান ভাই হেসে দিয়ে বললেন কিভাবে বাচ্চাদের মতো চাইছো দিয়া।একটা কোম্পানী থেকে দিয়েছে।আমি রাখি না কোম্পানির জিনিস।বাট আমার ফ্রেন্ড রেনেটা কোম্পানীর ম্যানেজার। অনেক রিকুয়েষ্ট করলো বউ কে দিস কি আর করা রেখে দিলাম।একটা ক্যানো সব গুলাই তোমার।খুশিতে বললাম ওয়াও বিহান ভাই থ্যাংক ইউ সো মাস বলেই এক্সসাইটেড হয়ে উনার গালে চুমু দিয়ে দিলাম।চুমু দিয়েই চোখ গোল গোল হয়ে গেলো আমার আমি উনাকে এইভাবে চুমু দিয়ে ফেলছি।উনি উনার গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।হুট হাট রিয়ার গালে চুমু দিতে দিতে উনাকেও দেওয়া হয়ে গিয়েছে।তো তো করে বললাম রি রিয়া ভেবে দিয়েছি।বিহান ভাই মনে হয় কারেন্ট শকড খেয়েছেন গাল থেকে হাত ই নামছে না উনার।

“আমার গালে আরেক টা চুমু দিয়ে বললেন আমি ভেবে দিলে কি ক্ষতি হতো মিসেস বিহান।”

“লজ্জা নিয়ে উনার দিকে তাকালাম।”

“লজ্জা পেতে হবে না চলো একটা জায়গা নিয়ে যাবো।”

কোথায় তা আর জিজ্ঞেস করলাম না।গাড়ি বের করলেন সামনে আমি পেছনে রিয়া বসছে।কোথায় যাচ্ছি জানিনা।শুনলেও বলবেনা।রিয়াকে কয়েক টা লিপিস্টিক দিলাম।

গাড়ির আয়নায় বসে লিপিস্টিক লাগাচ্ছি।বিহান ভাই বার বার তাকিয়ে দেখছেন আমার দিকে।বিহান ভাই আড়চোখে তাকিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং কেমনে যে ঘুরালো ঝাঁকি লেগে পুরা লিপিস্টিক চোখে মুখে লেগে গেলো।এটা উনার ইচ্ছা কৃত কাজ সেটা আমি ভাল ভাবে জানি।আয়নআয় তাকিয়ে দেখি পুরাই পেত্নি আমি।উনি মুখ চেপে হেসে যাচ্ছেন।ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিয়ে বললাম এটা কি করলেন অসভ্য ড্রাইভার।বিহান ভাই কানের কাছে এগিয়ে এসে বললেন টিস্যু দিয়ে দ্রুত মুছে নে। তা না হলে মানুষ বলবে,এই লিপিস্টিক এর এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী।আমি মুখ মুছতে মুছতে বললাম আপনি ই তো করেছেন।এমন সময় ট্রাফিক সিগনালে লাল বাতি জ্বলাতে গাড়ি থেমে গেলো।কাচের সাইড থেকে একটা ছেলে বললো আপু আপনার মুখের লিপিস্টিক এর এই অবস্থা কেনো?আমি বিহান ভাই এর দিকে আঙুল দিয়ে দেখালাম উনি করেছেন।ছেলেটা বিহান ভাই কে বললো এই যে ভাইয়া যা করার বাড়ি গিয়ে করবেন এইভাবে রাস্তাঘাটে কি শুরু করেছেন।আমি ছেলেটাকে বললাম জানেন ভাইয়া উনি বাড়িও সব সময় এমন করেন এটা তো রাস্তা বলে একটু কম করেছেন।ছেলেটা মাথায় হাত দিয়ে বললো ওহ মাই গড।বিহান ভাই আমার হাত চেপে ধরে মুখের লিপিস্টিক মুছে দিয়ে বললেন উনি কি ভাবছেন জানিস।

যা করেছেন তাই ভাবছে।

উনি যা ভাবছে আমি তা করিনি।রাস্তাঘাটে গাধির মত কথা বলবি না।

বিহান ভাই গাড়ি নিয়ে একটা বাড়ির সামনে গেলো।বাড়িতে প্রবেশ করে,,
ভাইয়া আর মেহু আপুকে দেখে আমি আর রিয়া দুজনেই অবাক।ভাইয়া কে দেখেই কেঁদে দিয়ে জরিয়ে ধরলাম।তুমি এখানে ভাইয়া।কেনো ছেড়ে এলে আমাদের বলো।ভাইয়া আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারি না।আমাকে একটুও ভালবাসো না তুমি।আমাকে কেনো ফোন করো নি তুমি বলো।আম্মু অনেক কাঁদে।

দিয়া আমি আর মেহু একটা দিন ও ভালো নেই।তোদের ছাড়া সেই আড্ডা ছাড়া ভাল থাকতে পারি।বাবা তো আমাকে মেনে নিবে না বলেছে।

এই মেহু আপু এই নিষ্টুর আমাকে ভুলে গিয়েছো।কথা নেই তোমার সাথে।আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদলো।রিয়া ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ভীষণ কাঁদলো।অনেক দিন পর মনে হলো প্রাণ ফিরে পেলাম।ভাইয়া মেহু আপুকে নিয়ে সারাদিন ঘুরলাম।ভাইয়ার জন্মদিন সেলিব্রেশন করলাম।আম্মুকে ভিডিও কল দিলাম।আম্মু আর ভাইয়া আজ অনেক কথা বললো।আম্মু বলেছে বাবাকে বুঝিয়ে খুব শিঘ্রই ভাইয়াকে বাড়ি ফিরিয়ে নিবে।

“মেহু আপুকে বললাম,তোমার চোখ মুখ এভাবে শুকানো কেনো?”

“আমি প্রেগন্যান্ট দিয়া।”

“সত্যি?”

“হ্যাঁ দিয়া তুই ফুপ্পি হতে চলেছিস।”

এই কথা টা শুনে আনন্দে আত্মহারা আমি।আমার ভাইয়া বাবা হতে চলেছে।

সাতদিন পর ————–

দিয়া আমি একটু বিদেশ যাচ্ছি সাত দিনের জন্য।সাবধানে থাকবি পুচকি।নো মন খারাপ দিয়া।আমি অনেক ঝামেলায় থাকবো ফোন করার সুযোগ না পেলে কিন্তু একটুও মন খারাপ করবি না।সাত দিন পর ফিরে এসে আমি তোর বাবাকে বলে ধুম ধুম করে পরিচয় করাবো তুই মিসেস বিহান।উনার মেসেজ টা ঘুম থেকে উঠে পড়েই মন টা খারাপ হয়ে গেলো উনি নেই। সাত টা দিন উনাকে দেখতে পাবো না।কলেজ ও সাত দিনের জন্য অফ হয়ে গিয়েছে।ফোন থেকে উনার ছবি বের করে দেখছি আর অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ছে।সাজ সকালে দেখি বাবা আমাদের বাসায়।বাবাকে দেখে রিয়া আর আমি অবাক হয়ে গেলাম।বাবা তো এ সময়ে ঢাকায় আসার কথা না।আর আসলেও তো বলে আসবে।বাবাকে বললাম তুমি এত সকালে কারো কি কিছু হয়েছে বাবা।বাবা বললেন না দিয়া মা শুনলাম কলেজ বন্ধ তাই তোমাকে আর রিয়াকে নিতে এসছি।দ্রুত দুজনে ব্যাগ গুছিয়ে নাও।রিয়া আর আমি দুজনেই বুঝে উঠতে পারলাম নাহ বাবা এত সকালে ঢাকা কেনো আর নিতেই বা এসছে কেনো?দুজনের কাছেই সন্দেহ লাগছে ব্যাপার টা।ব্যাগ গুছিয়ে রিয়া আর আমি রওনা হলাম ঢাকা ছেড়ে।বাবা প্রাইভেট কার নিয়ে এসছে নড়াইল থেকে।ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার সময় বুকতা ফেটে যাচ্ছে আমার ভালবাসা, আমার বিহান ভাই সব টা এই ঢাকাতেই।আমি নড়াইলে গেলেও আমার মন পড়ে আছে এই ঢাকা শহরেই।বিহান ভাই আর আমার অনেক স্মৃতি এই ঢাকাতেই।বিহান ভাই এর ফোন অফ বিদেশে কি পৌছে গিয়েছে নাকি কিছুই জানিনা।মন টা বিহান ভাই এর দিকেই পড়ে আছে।সাত ঘন্টা পর নড়াইলে পৌছালাম।বাড়িটা বেশ সাজানো গোছানো বিভিন্ন আত্নীয়েরা এসেছে বাড়িতে।আমি রিয়া কিছুই বুঝছি না কাহিনী কি?বাড়িতে ঢুকে আম্মুকে বললাম আম্মু এত মানুষ জন কেনো বাড়িতে কি হয়েছে।আম্মু বললো আগে ফ্রেশ হয়ে নাও দুজনে অনেক টা জার্নি করে এসেছো।বাড়িতে মনে হচ্ছে কোনো উৎসব।বিহান ভাই এর বাবা মানে মামা আমাকে বললো কেমন আছিস মা।মামাকে বললাম ভালো মামা আপনি।মামা আমাকে বললো তোর বিহান ভাই এর বিয়ে ঠিক হয়েছে দিয়া মা।মামার কথা শুনে মাথার মাঝে চক্কর দিয়ে ঘুরে উঠলো।নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম বিহান ভাই জানে মামা উনার বিয়ে।মামা বললেন না বিহান এখনো জানেনা।বিদেশ থেকে আসলে সোজা বিয়ের পিড়িতে বসাবো।মেয়ে ডাক্তার বিহানের সাথেই পাশ করে বেরিয়েছে।এইদিকে তোর মামি বলছে তোমার ছেলে অন্য কাউকে পছন্দ করে এই বিয়ে করবে না শুধু শুধু বিয়ে ঠিক করো না।ভেতর থেকে কাঁন্না বেরিয়ে আসছে।দম বন্ধ লাগছে।সামনে কি সব উলটা পালটা হবে।তবে বিশ্বাস আছে বিহান ভাই কে দিয়ে জোর করানো যাবে না।

মেহু আপুর প্রেগ্ন্যাসির খবর শুনে বাবার মন নরম হয়ে গিয়েছে।ফুপ্পিকে ডেকে বাবা খুব কেঁদেছে।ফুপ্পি ও খুব কেঁদেছে।ভাইয়ারা কাল ই ফিরে আসছে বাড়িতে।বাড়িতে খুশির অন্যরকম আমেজ।

বাট আমি এখনো সিওর না আমাদের বাড়িটা এত সাজানো কেনো?ভাইয়ার ফিরে আসার জন্য নাকি অন্য কোনো কারণ।একটা দিন বিহান ভাই নেই আমি এক গোলক ধাঁধায় ফেসে গেছি।কেউ আমাকে কিছুই বলছে না।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৬০.
#WriterঃMousumi_Akter

বাড়িতে ক্রমশ আত্মীয়ের সংখ্যা বেড়েই চলেছে সবাই আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।আমাকে কি সবাই নতুন দেখছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না।গতকাল কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করে ঘুমিয়ে গেছিলাম।ঘড়িতে দুপুর বারোটা দুইদিন হয়ে গিয়েছে বিহান ভাই এর ফোন আসে নি। ফোন হাতে নিলেই ওনার একটা না একটা মেসেজ আমার ফোনে দেখতে পাই।সারাক্ষণ উনার একটা মেসেজ বেশী দেখি আমি “এত অন লাইনে কি তোর দিয়া” আমি রাগানোর বলি সারাদিন সুন্দর সুন্দর ছেলেদের ফটো দেখি বিহান ভাই।উনি রেগে রেগে বলেন আমি ছাড়া কোনো সুন্দর ছেলের দিকে তাকানো নিষেধ তোর।ফোন টা হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছি কখন উনার ফোন আসবে।

বাইরে বেরিয়ে দেখি বাবার কিছু আত্মীয়েরা আম্মু আর কাকিমনি শপিং থেকে এসছে।শপিং গুলো এনে আমার বেডের উপর রাখলো। আমার রুমের বেডের উপর রাখা অনেক গুলো হলুদের শাড়ি আর গহনা।বড় করে একটা কার্ডে লেখা আজ দিয়ার হলুদ সন্ধ্যা। দিয়া মানে তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই।আমার হলুদ সন্ধ্যা মানে আমার বিয়ে।দ্রুত বিছানায় রাখা জিনিস পত্র গুলো ধরে ধরে দেখছি।চোখে পানি ছল ছল করছে আমার। বিছানায় রাখা জিনিসপত্রের উপর চোখের পানি টুপ টাপ করে পড়েই যাচ্ছে।জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি বাবা খুব হাসছেন বাবার চোখে মুখে আনন্দ আর প্রাপ্তির হাসি।বাবা তার বন্ধুদের বলছে আমার দিয়ার জন্য এত ভালো পাত্র পাবো বুঝতেই পারি নি ছেলে একজন এমবিবিএস ডাক্তার।আমার দিয়াকে নিজে পছন্দ করেছে।আমার ছেলে টাও আমার বিরুদ্ধে যেতো না আমার জিদের জন্য ভুল করে ফেলেছে কিন্তু আমার মেয়ে এমন ভুল আর করবে না।বাবার বন্ধু বলছেন দুঃখ করো না শুভর মতো ছেলে এখনের যুগে হয় নাকি একটা ভুল করেছে ক্ষমা করে দাও একটাই ছেলে তোমার। বাবা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,ছেলেকে ছাড়া অনেক কষ্ট পেয়েছি এতদিন।আমার মেয়ে কোনো ভুল করুক এটা আর আমি চাই না।তাই দিয়ার হুট করেই বিয়ের সিদ্ধান্ত।কাল দিয়ার গায়ে হলুদ পরশু বিয়ে।মানে কাল আমার গায়ে হলুদ আর পরশু বিয়ে।আম্মুকে ডেকে নিয়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে বললাম,আম্মু আমি এসব কি শুনছি বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।

“আম্মু বললো এভাবে আকাশ থেকে পড়ছিস কেনো দিয়া?তোর বাবা তোকে পৃথিবীতে সব থেকে বেশী ভালবাসে।সে তোর বিয়ে ঠিক করবে নাতো কি অন্য কেউ ঠিক করবে।”

“আম্মু তাই বলে এক্ষুণি বিয়ে।আমি চিনি না জানিনা এমন একটা ছেলেকে কিভাবে বিয়ে করি।আমি বিয়ের জন্য এখন প্রস্তুত না আম্মু।”

“বিয়ের আগে কেউ কাউকে চিনে না দিয়া।বিয়ের পর সবাই চিনে যায়।তোমার বাবা কি তোমার খারাপ চাইবে?”

“না আম্মু বাট আমার মেডিকেল টা শেষ করতে দাও।”

“ছেলে তোমার কলেজের প্রফেসর নির্বাণ।তোমাকে খুব পছন্দ করে।মেডিকেল পড়তে কোনো অসুবিধা হবে না তোমার।”

“হোয়াট আম্মু নির্বাণ স্যার?আমি আমার স্যার কে বিয়ে করবো এটা ভাবলে কিভাবে।আমি কিছুতেই উনাকে বিয়ে করতে পারবো না আম্মু।প্লিজ বিয়েটা ভেঙে দাও আম্মু।আমার পক্ষে কিছুতেই বিয়ে করা সম্ভব নয়।”

তুমি ভুলেও একথা তোমার বাবার সামনে বলো না দিয়া।সব আত্মীয়দের দাওয়াত দেওয়া হয়ে গিয়েছে।তোমার বিয়ের জন্য তোমার বাবা শুভ আর মেহু কে মেনে নিয়েছে।তুমি জানোনা তোমার বাবার হার্ট এট্যাক করেছিলো।তুমি কি চাও এখন তুমি বাড়াবাড়ি করো আর তোমার বাবার অবস্থা আরো খারাপ হোক।শুভর জন্য তোমার বাবা কোথাও মুখ দেখাতে পারেনি এমন আছে রাস্তাঘাটে ও যায় নি তোমার বাবা।মানুষ টা কত কষ্ট পেয়েছে আমি দেখেছি।এখন সব কিছু ঠিকঠাক হয়েছে তুমি দয়াকরে উলটাপালটা আর কিছুই বলো না।সব থেকে আনন্দের বিষয় এটা তোমার সাথেই শুভ আর মেহুর বিয়ে দিবে তোমার বাবা।এখন যদি তুমি উলটা পালটা করো তোমার ভাইয়া আর মেহু কোনদিন এ বাড়িতে আসতে পারবে না।ভাইয়া আর বাবার মাঝের দূরত্ব দূর হোক এটা আমি সব সময় চেয়েছি।এমন সময় গাড়িতে করে ভাইয়া আর মেহু আপু প্রবেশ করলো বাড়িতে।বাড়ির সব আত্মীয় ভাইয়া আর মেহু আপুকে জড়িয়ে ধরে আবেগঘন একটা মুহুর্তের সৃষ্টি হলো।ভাইয়া বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো সরি বাবা আমাকে ক্ষমা করে দাও।বাবা ভাইয়ার কপালে চুমু দিয়ে বললো বাবা অনেক খারাপ তাইনা শুভ।মেহু আপু আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো।ফুপ্পি ভাইয়াকে জড়িয়ে নিলো নিজের ভালবাসায়।আজ সব হাসি আনন্দ আমার পরিবারে আচড়ে পড়েছে।নিমিষেই সব আনন্দ মিলিয়ে গেলো কোথায় জনিনা।বুকের মাঝে আচমকা বাড়ি মেরে উঠলো।

আম্মু তো আমাকে আমার কথা বলার সুযোগ ই দিলো না।এখন কি করি আমি। ফোন নিয়ে হোয়াটস এপ এ বিহান ভাই কে নক দিলাম।মেসেজ ডেলিভারি হচ্ছে কিন্তু সিন করছেন না।বার বার কল দিয়েই যাচ্ছি উনাকে।কম করে হলেও হাজার বার কল দিয়েছি। একটা রিপ্লে দিলেন তুই কি মেন্টাল দেখছিস ফোন রিসিভ করছি না এতবার কল দিয়ে যাচ্ছিস।আমি ইমারজেন্সি কাজে বিজি সো ডোন্ট কল মি নাউ।ফ্রি হয়ে ব্যাক দিচ্ছি।উনি তো বিদেশ থেকে বুঝতেই পারছেন না এখানে ঠিক কি হতে চলেছে।আমার হাতে তো একটুও সময় নেই।আমি তবুও কল আর মেসেজ করেই যাচ্ছি কিন্তু কোনো রেসপন্স নেই।কি করবো আমি কাকে কি বলবো।এইদিকে বাবার জীবন অন্যদিকে বিহান ভাই।

কিছুক্ষণের মাঝেই বিভোর ভাই আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করলেন।বিভোর ভাই এর চোখে মুখে ভীষণ চিন্তা।এই চিন্তার একটাই কারণ সেটা আমার বিয়ে নিয়ে।বিভোর ভাই আর রিয়া চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে।কেননা আমার আর বিহান ভাই এর ব্যাপারে বিভোর ভাই, রিয়া সবটা জানেন।

ভাইয়া মেহু আপুকে নিয়ে পালিয়ে যাবার পর বাবার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়।ডাক্তার বাবাকে ২৪ ঘন্টার গ্যারান্টি দিয়েছিলেন।বিহান ভাই এর ট্রিটমেন্ট এ সুস্থ হয়েছিলেন বাবা।বাবাকে নিয়ে সবাই অনেক দুঃচিন্তায় আছে অনেকদিন থেকে।বাবা যে হুট করে আমার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবে সেটা কেউ ভাবতেও পারে নি।বাবা বিভোর ভাই এর হাত ধরে বলেছেন,বিহান তো দেশে নেই তোমার হাতে সব দায়িত্ব রইলো।সব কিছু যেনো ঠিকঠাক থাকে বাবা।আমার মান সম্মান যেনো ক্ষুন্ন না হয়।বিভোর ভাই সাহস পাচ্ছেন না বাবার মুখের উপর কিছু বলতে।বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আমার বিয়ের কথা জানালে বাবার যদি কিছু হয়ে যায়।

বিভোর ভাই আমাকে বললেন,দিয়া আমি যখন আছি কোনো চিন্তা করিস না।বিহান এর ভালবাসা আমি হারাতে দিবো না।কিন্তু দিয়া বিহান তো ফোন ই রিসিভ করছে না।
জীবনে কখনো এমন সংকটময় পরিস্হিতিতে আমি পড়ি নি।মাথার ভিতর দুঃচিন্তা আর অশান্তি শিরা উপশিরা দিয়ে বইছে।মাথায় প্রচন্ড পেইন শুরু হয়েছে।চারদিকে সবাই এত খুশি সবার আনন্দ আমার ভিতরে আরো তীব্র যন্ত্রণার সৃষ্টি করছে।কি এমন পাপ করেছিলাম জীবন টা এভাবে শেষ হতে চলেছে।মনে মনে ভেবে নিয়েছি নির্বাণ স্যার কে আমি জানিয়ে দিবো তাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।একমাত্র সেই পারবে সব কিছু সামলে নিতে।

ফোন হাতে নিয়ে আবার ও বিহান ভাইকে মেসেজ দিলাম।আবার ও কল করলাম কল টা রিসিভ হতেই মনের মাঝে যেনো এক অদ্ভুত তৃপ্তি পেলাম।ফোন রিসিভ হলো ঠিক ই কিন্তু কথা বললো প্রেয়সি আপু।প্রেয়সী আপু ফোন রিসিভ করেই বললেন,এভভান্স হ্যাপি ম্যারেজ লাইফ দিয়া।আমি আর বিহান সো সরি বিয়েতে থাকতে পারলাম না।কেননা আমরা প্রি হানিমুনে এসছি।বিহান আর আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে দিয়া।তুমি এত মেসেজ করছো বিহান দেখেও রিপ্লে করছে না তুমি কি বুঝছো না ও এই ব্যাপার টা কেয়ারফুলি নিচ্ছে না।মানে বিহান চাইছে তোমার বিয়ে টা হয়ে যাক।তুমি তো কয়েক হাজার মেসেজ করেছো বিহান সিন করেছে অথচ রিপ্লে করছে না।তুমি অতিরিক্ত ডিস্টার্ব করছো বলে বিহান আমার কাছে ফোন দিয়েছে।

-বুক চেপে ধরলাম মনে হচ্ছে এক্ষুণি দম বন্ধ হয়ে যাবে আমার।ঘণ ঘণ কয়েক টা শ্বাস টেনে বললাম,আপনার একটা কথা ও বিশ্বাস করিনা আমি প্রেয়সী আপু।

-বিশ্বাস না হলে বিহানের বাবার কাছে শুনে দেখো বিহানের বিয়ে কার সাথে ঠিক।

-কল টা কেটে দিয়ে মামার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম মামা বিহান ভাই এর যার সাথে বিয়ে তার নাম কি।

-প্রেয়সী।তোর বিয়েটা হলেই বিয়ে মা।ছেলে যখন পছন্দ করে আমি আর আপত্তি করে কি করবো।

-সব কিছুই যেনো কেমন দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে।মাত্র একদিনে এতকিছু কিভাবে বদলে গেলো।প্রেয়সী আপু না হয় মিথ্যা বলেছে কিন্তু মামা তো আর মিথ্যা বলছে না।মামার সামনে নিজেকে সামলে নিয়ে রুমে যেতেই দেখি বিহান ভাই এর কল। উনার কল দেখেই ফোন টা ফ্লোরে কয়েকটা আছাড় মেরে ফেলে দিলাম।মানুষ এতটা বেঈমান হতে পারে কিভাবে? এই প্রেয়সী প্রেয়সী প্রেয়সী এতকিছুর পরেও এই প্রেয়সী নাম টা কেনো বিহান ভাই এর জীবনে কাটার মতো আটকে আছে।আমি আপনাকে কোনদিন ক্ষমা করবো না বিহান ভাই কোনদিন না।আই হেট ইউ ঘৃণা করি আপনাকে আমি।সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব কি আমার একার।আপনার কোনো দায়িত্ব নেই।অনেক হয়েছে এই প্রেয়সী কে নিয়ে বাড়াবাড়ি আপনি আপনার মতো আমি আমার মতো।রুমের দরজা আটকে ফ্লোরে বসে ভীষণ কাঁদছি।বুকের ভেতরএ সব দুমরে মুচড়ে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।
মনের ভেতরে জ্বলছে পুড়ছে আশান্তির আগুনে ছাই হয়ে যাচ্ছে সব কিছু।ভালবাসা কেনো তুমি এত পুড়াচ্ছো আমাকে।ভালবাসার এত যন্ত্রণা কেনো?বার বার উনার স্মৃতি মনে পড়ছে দম আটকে আসছে।মন চাচ্ছে নিজেকে শেষ করে দেই।আমার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।কেনো আমাকে এভাবে ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিলেন। আমার মুখ আর কোনদিন দেখাবো না আপনাকে।

বিকালে মামি আমাদের বাড়িতে এসছে।রুমের মাঝে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি আমি।মামি এসে আমার গায়ে হাত দিতেই মামির দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলাম আমি।মামি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো দিয়া মা চেহারার এ কি হাল হয়েছে তোর।আমি বাবার বাড়িতে গেছিলাম এসেই দেখি এত কিছু ঘটে গিয়েছে।এই দিয়া কিছু বল এভাবে ভেঙে পড়েছিস কেনো?বিভোর না বললে তো কিছুই জানতে পারতাম না আমি।

চোখের কোয়া ফুলে গিয়েছে আমার।মামির দিকে তাকিয়ে বললাম তোমার ছেলের বিয়ে মামি প্রেয়সীর সাথে।

আমার ছেলেকে কি তুই চিনিস না।তোর মামা যদি জানে যে বিহান তোকে পছন্দ করে তাহলে কি আর প্রেয়সীর সাথে বিয়ে ঠিক করতো।বিয়ে ঠিক আর বিয়ে হওয়া কি এক পাগলি।তুই একদম ভাবিস না দিয়া।

-তোমার ছেলে একটা বেঈমান মামি অনেক বড় বেঈমান।কেনো এমন করলো মামি।আমি তোমার ছেলেকে খুব ভালবাসি। কিন্তু তোমার ছেলে আমাকে চাই না মামি।

-আমার ছেলে যদি তোকে না চাইবে তাহলে এতবার ফোন দিচ্ছে কেনো শুনি।নে কথা বল বিহান লাইনে আছে।

-উনি কি বলেছেন যে আমার সাথে কথা বলবে?

-আরে হ্যাঁ আমি বাইরে যাচ্ছি তুই কথা বল।

-ভিডিও কলে আছেন বিহান ভাই।আমাকে কাঁদতে দেখে বললেন এভাবে কাঁদছিস কেনো তুই।

-আপনি জানেন নির্বাণ স্যারের সাথে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন।

-যাক তোর বাবা এবার ঠিক কাজ করেছেন।আমাকে লুকিয়ে নির্বাণ এর সাথে প্রেম করে বেড়াস তুই। বিয়ে নির্বাণ ছাড়া কি আমার সাথে ঠিক করবে?

-আপনি কি এখনো মজা করবেন বিহান ভাই?

-উহু কোনো মজা না।কিছুক্ষণ আগেই নির্বাণ আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে।আমি আর প্রেয়সী আসবো তোর বিয়ে খেতে চিন্তা করিস না।

বেঈমান কোথাকার,চিটার আমার সাথে বিয়ের নাটক করে প্রেমের নাটক করে এখন আমার বিয়ে খেতে আসবেন?

-চিন্তা করিস না খালি হাতে আসবো না দিয়া।বিয়ে খেতে ছাড়া কি বিয়ে করতে আসবো।তোর শ্রদ্ধেয় বাবা আমার হাত ধরে বলুক বাবা বিহান আমার মেয়ের দায়িত্ব নাও তাহলেই তোকে বিয়ে করার কথা ভাবতে পারি।এনি ওয়ে দিয়া সামনে আমার বিয়ে আজ প্রচুর শপিং করবো কাল তোর হলুদের আগেই পৌছে যাবো।ইয়ে দেখিস যেনো সুইসাইড করিস না আবার।

-মামিকে ডেকে ফোনটা মামির হাতে দিয়ে দিলাম।মামিকে কিছুই বললাম না।রাগে আর অপমানে মনে চাচ্ছে এক্ষুণি নির্বাণ কে বিয়ে করি।বিয়ে করে এই অপমানের চরম শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো আমি।রাগে সমস্ত শরীর পুড়ে যাচ্ছে আমার।ওদিকে বিভোর ভাই রিয়া তোহা আপু তিয়াস ভাইয়া সবাই বাড়ি সাজানো নিয়ে বিজি।আমার দিকে কারো কোনো খেয়াল নেই।বাহ সবাই কি সুন্দর আনন্দে আছে।পৃথিবীর সবাই খুব নিষ্টুর।আজ বুঝলাম আসলে কেউ কারো না।

পরের দিন দুপুরে আমাকে গায়ে হলুদের জন্য রেডি করানো হয়েছে।বিহান ভাই ও উপস্হিত আমার গায়ে হলুদের অনুষ্টানে। উনি সকালেই চলে এসছেন।বিহান ভাই হলুদ পাঞ্জাবী পরে হলুদের খাট সাজাচ্ছেন।উনার মাঝে একবিন্দু দুঃখ কষ্ট কিচ্ছু নেই।আমার দিকে একটা বার তাকাচ্ছেন ও না।বাহ কি অদ্ভুত উনি।আমার চোখ উনার দিক থেকে সরছেই না অথচ উনি একবার ও তাকাচ্ছেন না।কাঁন্না চেপে ধরে উনার এই নিষ্টুরতআ দেখছি আমি।ঠিক সেই মুহুর্তে নির্বাণ স্যার ফোন দিয়েছেন তার পক্ষে এই মুহুর্তে বিয়ে করা সম্ভব নয়।কথাটা শুনেই বাবার মুখ টা শুকিয়ে গেলো।বাড়ি ভর্তি আত্মীয় এখন মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেলে সবাই কি বলবে।বাবার বুকে ব্যাথা প্রচন্ড বেগে বেড়ে গেলো।বাবা আম্মু আর মামা মামি দের ডেকে বললেন আমার বিয়েটা ভেঙে যাওয়ার কথা।সেই মুহুর্তে মামি বললেন ভাই আপনি সম্মতি দিলে একটা কথা বলতে চাই আমাদের বিহান তো ছেলে হিসাবে খারাপ না।যদি আপনার আপত্তি না থাকে দিয়ার সাথে বিহানের বিয়ে দিতে পারেন।বাবার মুখে যেনো আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো।বাবা আনন্দে বলে উঠলেন বিহান আমাদের বিহান কি রাজি হবে।মামি বললেন আমি বিহান কে ডাকছি।বিহান ভাই এলে বাবা বিহান ভাই এর হাত ধরে বললেন,বাবা বিহান তুমি কি আমার দিয়াকে বিয়ে করবে।না হলে ওর জীবন টা নষ্ট হয়ে যাবে।বিহান ভাই কিছুটা লজ্জা নিয়ে বললেন আপনাদের যেটা ভাল মনে হয় করূণ।আরেকবার ও সবার মুখে আনন্দের হাসি ফুটলো।

বিহান ভাই আম্মুকে ডেকে বললো ফুপ্পি আমি ডাক্তারি পাশ করলে বলেছিলে আমার কি চাই।আমি বলেছিলাম সময় মতো চেয়ে নিবো।আজ আমার চাওয়ার দিন ফুপ্পি।তোমার দিয়াকে উপহার হিসাবে দিবে ফুপ্পি আমাকে।আমি তোমায় কথা দিচ্ছি তোমার মতোই আগলে রাখবো দিয়াকে।

আম্মু তৃপ্তির হাসি দিয়ে আমাকে বিহান ভাই এর হাতে তুলে দিলেন।

এতকিছু যে আমার অগোচরে ঘটে গিয়েছে তার কিছুই জানিনা আমি।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৬১.
#WriterঃMousumi_আক্তের

বাড়িতে আমাদের দুই ভাই বোনের বিয়ে সীমাহীন হাসি আনন্দের মাঝ দিয়ে শুরু হলো বিয়ের সানাই।বাবা আমাকে ডেকে নিয়ে বিহান ভাই এর হাতে হাত ধরিয়ে দিলেন।এক পশলা সুখ যেনো গায়ে হাওয়া দিয়ে গেলো আমার।গহীন অন্ধকার থেকে ঝলমলে আলো এসে পড়লো মনের আঙিনায়।আমার সাথে বার বার কি হচ্ছে কিছুই বুঝলাম না। যেটা হচ্ছে সেটাই মেনে নিচ্ছি।বিহান ভাই আমার হাত চেপে ধরে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।উনার চোখে মুখে আনন্দের ছড়াছড়ি এত খুশি আগে দেখি নি আমি উনার মাঝে।বাড়িটা ফুলে ফুলে বেলুনে বেলুনে সজ্জিত ুকরা হয়েছে।বড় কার্ডে লেখা আজ বিহান দিয়ার গায়ে হলুদ,অপর পাশে লেখা আজ শুভ আর মেহনুবার গায়ে হলুদ।মেহু আপু আর আমাকে ভীষণ সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে।রিয়া আর তোহা আপু বিভা আপু আয়রা সবাই হলুদের শাড়ি পরেছে।সবার মাঝ থেকে মামিকে ডেকে বললাম একটু শোনো না মামি তোমার ছেলে কিভাবে উদয় হলো বলবে একটু প্লিজ।

মামি বললেন,তোর মামা তো ভয় ই পেয়ে গেছিলো রে দিয়া।আমি যখন তোর বিহান ভাই কে জানালাম এদিকের সব ঘটনা বিহান তোর মামাকে ফোন দিয়েছে সাথে সাথে।ছেলে রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলছে বাবা আমি বিয়ে করতে চাই আর আমার বিয়ে আজ ই ঠিক করবে তুমি সেটা আর কেউ না দিয়া।দিয়াকে বিয়ে করবো আমি।এটা আমার বহুবছর আগের সিদ্ধান্ত। দিয়ার বাবাকে গিয়ে এক্ষুণি বলো বিয়ে ভেঙে দিতে।

ছেলের মুখে এমন কথা শুনে তোর মামার যে অবস্থা। তোর মামা বললো কিন্তু দিয়ার যে বিয়ের সব ঠিক ঠাক।

ছেলে রেগে বললো ভেঙে যাবে দিয়ার বিয়ে।দিয়ার বিয়ে ভেঙে গেলে তোমরা আমার সাথে দিয়ার বিয়ের কথা বলবে।না হলে আমি সরাসরি বলবো দিয়ার সাথে আমার বিয়ের কথা।

তোর মামা ফোন কেটে মাথায় হাত দিয়ে ঠুস করে বসে পড়লো।কি করা যায় ভেবে পাগল তোর মামা।ওইদিকে প্রেয়সী বলেছিলো যে আঙ্কেল বিহান আমাকে পছন্দ করে কিন্তু লজ্জায় আপনাদের বলতে পারছে না তাই আমি বলছি।তোর মামা শুনেই বিশাল খুশি তার ছেলে কাউকে পছন্দ করে।উনি তো বুঝতেই পারে নি প্রেয়সী এত বড় মিথ্যা বলবে।প্রেয়সী বিভিন্ন ইমোশনাল কথা বললে তোর মামা বলেছিলো ঠিক আছে নিজের ছেলে যখন পছন্দ করেছে আপত্তির কি আছে?

মামিকে কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলাম আচ্ছা মামি প্রেয়সী আর বিহান ভাই এক সাথেই বিদেশ গেছিলো।

হ্যাঁ বিহান আমাকে আর বিভোর কে সবটা খুলে বলেছে।ঢাকা মেডিকেল থেকে সাতজন এক সাথে গেছিলো বিদেশ।বিহান ওর ফোন রেখে ইমারজেন্সি মিটিং এ ছিলো সেই সুযোগে প্রেয়সী তোকে উলটা পালটা বলেছে।বিহানের এক কলিগ প্রেয়সীর সব কথা শুনে নিয়েছিলো আর সে বিহান কে জানিয়েছিলো সব টা।বিহান সাথেই সাথেই তোকে কল ব্যাক করেছিলো তোর ফোন আর অন পাই নি।পরে আমার ফোন দিয়ে ইচ্ছাকৃত মজা করেছিলো।

অভিমান নিয়ে বললাম তোমার ছেলে সব সময় এমন করে মামি।আমাকে ইচ্ছাকৃত কষ্ট দেয় তোমার ছেলে।

আমার ছেলে তোকে খুব ভালবাসে দিয়া।নিজের বাবার মুখের উপর এভাবে কেউ বলে।

বিভোর ভাই ক্যামেরা নিয়ে ছোটাছুটি করছে।বিভোর ভাই আমাকে বলছেন দিয়া মাথায় ঘোমটা দিয়ে দাঁড়া ছবি উঠাবো।বিভোর ভাই কে বললাম নির্বান স্যার বিয়েটা কেনো ভাঙলেন জানেন বিভোর ভাই।

বিভোর ভাই হেসে দিয়ে বললেন সব বিহান কা কামলা।বিহানের সাথে বুদ্ধিতে কেউ কোনদিন পারবে না দিয়া।আমরা অহেতুক চিন্তা করেছিলাম।তোদের যে গ্রামে বিয়ে হয়েছিলো ওখানের কয়েকজনের সাথে বিহানের যোগাযোগ ছিলো।বিহান তাদের কাছে নির্বাণ এর নাম্বার দিয়ে দেয়।আর তারাই নির্বাণ কে জানায় যে তুই আর বিহান বিবাহিত। নির্বাণ বিলিভ না করে ওই গ্রামে যায় খোজ খবরের জন্য তোদের ছবি দেখালে সবাই তোদের চিনতে পারে।সেখানে নির্বাণ প্রমান পেয়ে যায়।অতপরঃবিহান কে ফোন দিয়ে সে ভীষণ ভাবে সরি বলে।বাকিটা তোর উনি মানে বিহান বলবে এখন ঠিক হয়ে দাঁড়া তো দিয়া।

লেবু গাছের ডাল ধরে দাঁড়িয়ে আছি পেছন থেকে বিহান ভাই এসে আমার দুই গালে হলুদ লাগিয়ে দিলেন।পেছনে তাকিয়ে দেখি বিহান ভাই।উনাকে দেখে ইচ্ছাকৃত একটু ভাব নিলাম তাছাড়া প্রচন্ড টেনশন দিয়েছেন উনি আমার।এর শাস্তি আমি দিয়েই ছাড়বো।বিহান ভাই আমার গালে হলুদ লাগিয়ে নিজের মুখ দিয়ে আমার মুখে ঘষে নিজের মুখেও হলুদ লাগালেন।খানিক টা হলুদ আমার গলায় লাগিয়ে দিলেন।

গায়ে হলুদের পর্ব শেষ রাতে মেহেদী অনুষ্টান চলছে।বাড়িময় আত্মীয়ের মাঝে কাজিন দের বিভিন্ন নাচ গানের অনুষ্টান চলছে।রিয়া আর বিভোর ভাই গল্প করছে,আয়রা ছোটাছুটি করছে,তোহা আপুর মন একটু খারাপ হলেও নিজেকে সাম লে নিয়েছে,তিয়াশ ভাইয়া মেয়েদের সাথে মজা করেই যাচ্ছে।।আমি আমার রুমে চেঞ্জ করতে এসছি সারদিন ভারী শাড়িতে খুব অসহ্য লাগছে।রুমে এসছি থ্রি পিছ পরে গায়ে শিতের কাপড় পরতে।আমার পিছ পিছ বিহান ভাই এসেই আমার মুখ চেপে ধরে ওয়াশ রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন।আমার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু উনার ওই শক্ত পক্ত হাত ছড়াতে পারছি না।

–উনি আমাকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিয়ে বললেন এত রাগ কেনো বউ?

-কোনো রাগ নেই আমাকে ছেড়ে দিন আপনি? বলেই উনার কোল থেকে নামার চেষ্টা করছি।

-উনি বললেন রাগ করেছো ভাল কথা তাই বলে কি কোলে তুলতে পারবো না।

-খানিক টা রাগ নিয়ে ছল ছল চোখ নিয়ে আধ কাঁন্না গলায় বললাম ছাড়ুন আমাকে। কেনো এসছেন আপনি?

-এই অভিমানি মুখটার অভিমান ভাঙাতে।বিয়ের দিন এইভাবে কেউ অভিমান করে।

-আপনি অনেক কষ্ট দিয়েছেন আমাকে?জানেন আরেক টু হলেই হার্ট ফেইল হয়ে যেতো আমার।

-হার্টের ডাক্তার আমি।আমার বউ এর কিচ্ছুই হতে দিতাম না।তুমি কি জানো আমাদের এই বিয়েটা গোপন রাখতে কতটা পরিশ্রম করে তোমার ফ্যামিলিতে তোমার সম্মান রেখেই তোমাকে আরেকবার আমার জীবনে স্বাগতম জানাচ্ছি।এই কষ্টের পর কোথায় আমার ক্লান্তি দূর করবে তা নয় শুধু অভিমান করছো।

-আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো জানেন।

-জানতাম না এত ভালবাসে আমার বউ আমাকে।আই প্রমিজ দিয়া আজকের পরে আর কোনদিন তোমাকে কষ্ট পেতে হবে না।ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে চুমু দিয়ে বললেন এখন থেকে প্রতিটি সকালে এই আমার উষ্ণ ছোয়া পাবে।গালে,চোখে,ঠোঁটে আদরের ছোয়া দিয়ে ঘুম ভাঙাবো রোজ সকালে।

-উনার বুকে মাথা গুজে বললাম এবার ছাড়ুন কেউ আসবে না হলে।

পরের দিন হাসি আনন্দের মধ্য দিয়ে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো।মেহু আপু আর ভাইয়া বাড়িতেই থেকে গেলো।আমি চলে আসলাম বিহান ভাই এর বাড়িতে।মামা বাড়িতে ছোট বেলা থেকে রোজ যাতায়াত কিন্তু আজকের আসাতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো আমার।প্রকৃতির কি কঠিন নিয়ম একটা সাক্ষর এ নিজের জীবন অন্যর হয়ে যায়।

বাসর ঘরে বসে আছি গাড় লাল লেহেঙ্গা পরে গা ভর্তি গহনার ছড়াছড়ি। অপেক্ষা করছি কাঙ্খিত সেই মানুষ টার জন্য।আজ দীর্ঘ দিন পর অবসান ঘটলো সকল প্রকার অশান্তির।গায়ে সোনালী কালারের পাঞ্জাবি পরে ঘরে প্রবেশ করলেন বিহান ভাই।পুরা রুম তাজা ফুলে সাজানো।মিষ্টি ঘ্রাণে ভরপুর ঘর।উনি রুমে প্রবেশ করে বুকে হাত বেধে এক হাত থুতনি তে ঠেকিয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।চোখ তুলে উনার দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়াতেই ভীষণ লজ্জা পেলাম আমি।উনি রুমের বড় লাইট অফ করে ডিম লাইট অন করলেন।ডিম লাইটের সাদা আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে উনি এগিয়ে আসছেন আমার দিকে।আজ মনে হয় শীতের মাত্রা অনেক বেশী পড়েছে আমি ঠক ঠক করে কাঁপছি শীতে।উনি বেডের উপর বসে একটা কাশি দিয়ে বললেন,আমার দিকে তাকাবে না আজ তুমি।উনার কথার ধরণ পুরোটা চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে।উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার দুই হাত মুঠো করে ধরে বললেন,এই রাগী,বদ মেজাজী, জেদী ছেলেটা কে সত্যি তুমি ভালবাসলে দিয়া।তুমি কিভাবে আমাকে সহ্য করো দিয়া।বাকি জীবন আমাকে সহ্য করার দায়িত্ব নিলে।আমিও কি করবো বলো আমার যে ঘুরে ঘুরে তোমাকেই জ্বালাতে ভাল লাগে।

-উনার দিকে লাজুকতা নিয়ে তাকিয়ে বললাম,এই রাগি আর জেদী ছেলেটার ভাল বাসাতেও এতটা জিদ আগে জানতাম না।আমার মতো আনম্যাচুরিটি সম্পন্ন একটা মেয়েকে সারাজীবন কিভাবে সহ্য করবেন।

-সহ্য করবো কজ উই আর মেড ফর ইচ আদার।রোজ বকবো আর রাত হলে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘুমোবো।

-এই প্রচন্ড শীতে হঠাত বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হলো।বিহান ভাই গায়ের সেরওয়ানি খুলতে খুলতে বললেন,তোমার আমার শুভক্ষণে বৃষ্টির আগমন হয় বার বার।বৃষ্টি আমাদের ভালবাসার এক বিশাল সাক্ষি তাইনা দিয়া।আমাদের ভালবাসার প্রতিটি মুহুর্তে ওদের আগমন।

-উনাকে বললাম ভিজবেন বৃষ্টিতে?

-উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলবেন ভিজবো তোমার ভালবাসায়।বাইরের বৃষ্টিতে নয়।পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট নারী কে আজ অসংখ্য ধন্যবাদ মিসেস বিহান হওয়ার জন্য।

আমি উঠে গিয়ে উনার সামনে দাঁড়াতেই উনি এক ঝটকায় আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে গেলেন।নিজেও বিছানায় কম্বল টেনে সুয়ে পড়লেন।ভীষণ আদরের সাথে আমাকে আলিঙ্গন করলেন উনার বুকের সাথে।কপালে চুমু দিয়ে উন্মুক্ত পেটে হাতের আঙুল ডুবাচ্ছেন উনি।আমি বার বার বিদ্যুতের ন্যায় শিউরে উঠছি।গা ভর্তি গহনা একটা একটা করে খুলে দিলেন।সমস্ত গহনা খুলে একটা রিং পরিয়ে হাতে চুমু দিলেন।প্রচন্ড শীতে উনি আরো ঘনিষ্ট ভাবে আলিঙ্গন করে নিলেন আমাকে।ধীরে ধীরে আলতো পরশ দিচ্ছেন উনার ঠোঁট দিয়ে পেটে, গালে,মুখে।বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির থেকে উনার চুম্বনের বৃষ্টি আমার শরীরে বেশী গতি বেগে পড়ছে।ক্রমশ বাড়ছে উনার পাগলামি।উনার প্রতিটি স্পর্শতে অনুভব হচ্ছিলো নেশাক্ত এক ভালবাসা।যে নেশার ডুবসাগরে ডুব দিয়ে পাড়ি জমালাম দুজনে গভীর ভালবাসার তুফানে।ভালবাসাময় রাতের গভীর ভালবাসার সাক্ষী এই শীততাপ রাত।

চলবে,,
চলবে,,,,
()

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here