#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৬.
#WriterঃMousumi_Akter
বেদনার পরিপূরক আর আপনসঙ্গি বোধহয় অন্ধকার।একমাত্র অন্ধকারেই বেদনা কে প্রকাশ করা যায়।মনের মাঝে বেদনা,দুঃখ,কষ্ট দানা বাঁধলে তখন অন্ধকার কেই আপন করে নিতে ইচ্ছা করে আমার।আলো আমি সহ্য করতে পারি না।নিজেকে অন্ধকারে মুড়িয়ে নিকশ কালো অন্ধকারে নীল বেদনা ঢেকে ফেলতে ইচ্ছা করে।মনের মাঝে ভয়াবহ যন্ত্রণা হচ্ছে।কিন্তু কেনো হচ্ছে এই যন্ত্রণা। যতবার নিজের মন কে প্রশ্ন করেছি ততবার ই একটায় কথা মনে হয়েছে বিহান ভাই।আমার মন আমাকে একটাই উত্তর দিয়েছে বিহান ভাই কে আমি ভালবাসি।এক তরফা ভালবাসা গুলো বড্ড যন্ত্রণা দেয় মানুষ কে।এই কষ্ট ধীরে ধীরে মনের কোণে জমতে জমতে পাহাড় সমান অভিমান জমা হয়।বার বার সেই ছোট বেলা থেকে আমার একবার না হাজার বার মনে হয়েছে বিহান ভাই হয়তো আমায় ভালবাসেন।যখন ই সেই হয়তো টা সত্য কিনা যাচাই করতে গিয়েছে ঠিক ততবার ই কষ্ট পেয়ে ফিরে এসেছি।বিহান ভাই এর কাছে কখনো যদি উনার কথার মানে খুজতে চেয়েছি ততবার ই আমাকে ইগনোর করে আমার হাতে লেখাপড়ার ইয়া লম্বা এক লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছেন।কি চান উনি কেনো আমন করেন আমার সাথে।আমি ছাড়া পৃথিবীর কাউকে উনি বিরক্ত করেন না।এই পৃথিবীতে আমাকেই কি একমাত্র শত্রু মনে করেন। আমি ছাড়া কারো সাথে রাগারাগি ও করেন না।আবার আমি ছাড়া কাউকে পাত্তা ও দেন না।আমাকে রাগিয়ে দেওয়া কথা বলবেন ই আবার সেই রাগ ভাঙিয়েও ছাড়বেন।কখনো উনাকে বুঝতে পারিনা আমি।নিজেকে প্রকাশ ও করেন না।যদি কখনো ডাকি পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকে হোক ছুটে আসবেন ই কিন্তু এসেই বকা দিবেন।উনার ভয়ানক রাগের জন্য কখনো জোর করে প্রশ্ন করতে পারি না কি চান কি আপনি।এমন প্রশ্ন করলেই ঠাসস করে কয়েক টা থাপ্পড় দিবেন তার ঠিক নেই।আমিও ভয়ানক ভাবে বিরক্ত হই উনার প্রতি কিন্তু দিন শেষে ঘুমের মাঝে আবার উনাকেই স্বপ্ন দেখি।সব সময় মনে হতো ধীরে ধীরে বিহান ভাই আমার জীবনে আসবেন।আজ বিহান ভাই রিলেশন এ গিয়েছেন এটা আমি মেনে নিতে পারছি না।কেনো বিহান ভাই আপনি আমায় ভালবাসলেন না।ক্যানো অন্য প্রেমিক দের মতো সারাদিন ধমক না দিয়ে একটা কাঠগোলাপ দিয়ে বলেন না ভালবাসি দিয়া।বিহান ভাই যে আমার সাথে সত্যি মজা করেন তার প্রমান আজ পেয়েছি।উনার জীবনে অন্য কেউ আছে সেটা হয়তো তোহা আপুই হবে।এয়ার ফোন কানে গুজে আমার ফেভারিট গান টা প্লে করলাম।গান টার ফিমেল ভারসন টা আমাফ হৃদয় ছুয়ে যায়।এই গান টা শুনলে মনে হয় বিহান ভাই কে আমার পক্ষ থেকে ডেডুকেট করা।
Dheere Dheere Se Meri Zindagi Mein Aana
slowly slowly u come into my life
Dheere Dheere Se Mere Dil Ko Churaana
slowly slowly u steal away my heart
Tum Se Pyaar Humein Kitna Hai Jaane Jaana
how much love i have for u my dear
Tumse Milkar Tumko Hai Bataana
meeting you i need to tell you
Dheere Dheere Se Meri Zindagi Mein Aana
Dheere Dheere Se Mere Dil Ko Churaana
Tum Se Pyaar Humein Kitna Hai Jaane Jaana
Tumse Milkar Tumko Hai Bataana
Jabse Tujhko Dekha Dil Ko Koi Aaraam Nahin
from the time i have seen you my heart is not at rest
Mere Hothon Pe Ek Tere Siva Koi Naam Nahin
on my lips there is no other name than yours
Apna Bhi Haal Tumhare Jaisa Hai Saajan
my condition is the same as your darling
Bas Yaad Tujhe Karti Hoon Aur Koi Kaam Nahin
i just remember you and have no other work
Ban Gaya Hoon Main Tera Deewana
i have become your crazy lover
Dheere Dheere Se Dil Ko Churaana
Dheere Dheere Se Meri Zindagi Mein Aana
Dheere Dheere Se Mere Dil Ko Churaana
Tune Bhi Aksar Mujhko Jagaya Raaton Mein
you have always woken me in the night
Aur Neend Churayi Meethi Meethi Baaton Mein
and my sleep was stolen by the sweet sweet words
Tune Bhi Beshak Mujhe Kitna Tadpaya
u also have troubled me alot
Phir Bhi Teri Har Ek Ada Par Pyaar Aaya
even then with each of your style i fell in love
Aaja Aaja Ab Kaisa Sharmaana
come come now dont feel shy
Dheere Dheere Se Dil Ko Churaana
Dheere Dheere Se Meri Zindagi Mein Aana
Dheere Dheere Se Mere Dil Ko Churaana
Tum Se Pyaar Humein Kitna Hai Jaane Jaana
Tumse Milkar Tumko Hai Bataana .
গান টা শেষ হলেই আরেক বার প্লে হচ্ছে।মামাদের বাড়ির এক্সট্রা রুমে গিয়ে সুয়ে রইলাম।রাতে মামি বার বার খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও খেতে পারলাম না আমি।মামাদের বাড়ির তথাকথিত এক আত্মীয় এসে আমার পাশে সুয়ে আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলেন।কারো কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো মুডে ছিলাম না আমি।বিরক্ত হয়ে উঠে বেলকনিতে রাখা ডিভাইন এর উপর গিয়ে ঘুচিমুচি করে সুয়ে পড়লাম।অজান্তে কখন ঘুম চোখে ধরা দিয়েছে আমি জানিনা।
হঠাত ঘুমের মাঝে স্বপ্ন তে বিহান ভাই এর দেখা পেলাম।বিহান ভাই আমাকে ডিভাইন থেকে কোলে তুলে নিলেন।আমিও ঘুমের মাঝে উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম।আধো আধো কন্ঠে বললাম আপনি আজ আবার এসেছেন আমার স্বপ্নে।আপনি রোজ ক্যানো আসেন বিহান ভাই আমার স্বপ্নে।স্বপ্নে এস এত ভাল ব্যাবহার করেন আর বাস্তবে এত খারাপ ব্যাবহার ক্যানো করেন।সারাক্ষণ কেনো এত বকাবকি করেন বিহান ভাই।সব সময় ক্যানো বকেন আমায়।
উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন দিয়া তুই কেনো বুঝিস না তুই অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বললে আমার খুব খারাপ লাগে।সেদিন বিভা আপুকে দেখতে আসলে আমি ইচ্ছা করেই রুমে আটকে রেখেছিলাম তোকে। কারণ ওখানে ছেলেরা ছিলো।আর তোকে মারাত্মক সুন্দর লাগছিলো।ওরা তোকে দেখে ক্রাশ খেয়ে ফেলতো।আমি সেটা সরাসরি প্রকাশ করতে পারি না বলেই আমার রাগের কারন হয়ে যাস।তুই কি জানিস ক্যানো কারণে কারণে এই বদ রাগি বাজে ছেলেটা ঢাকা থেকে সপ্তাহে সপ্তাহে ছুটে আসে শুধু তোকে দেখার জন্য।তোকে না রাগালে আমার ভাল লাগে না দিয়া।তোকে বিরক্ত করার অজুহাতে বার বার কথা বলি।সারাক্ষণ যদি কানের কাছে গিয়ে ভালবাসি ভালবাসি বলি তুই তখন আরো বেশী বিরক্ত হয়ে যাবি।এই আমার কদর যদি কমে যায় তোর কাছে।অবহেলা আমি মেনে নিতে পারি না দিয়া।তোর অবহেলা আমি সহ্য করতে পারবো না দিয়া।যেদিন ডাক্তার হবো আমার শ্বশুরের থেকে তোকে চেয়ে নিয়ে সারাদিন ভালবাসি ভালবাসি বলবো।
আমি আবার ও আধো আধো গলায় বললাম আপনার খুব ইগো তাইনা বিহান ভাই।ভালবাসার কথা প্রকাশ করলে বুঝি আপনার প্রেজটিজ যাবে।
ইগো না দিয়া।তুই বুঝবি না আমার অপ্রকাশিত ভালবাসা।আমার ইগো আছে দিয়ে সেটা অন্যর ক্ষেত্রে।আমি বার বার তোর কাছে ছুটে আসি ইগো থাকলে আসতাম না।ভালবাসা বেশী প্রকাশ করলে যদি সস্তা হয়ে যায় তোর কাছে।খুব ভয় করে।
স্বপ্নে বিড় বিড় করতে করতে দেখি যেখানে বিহান ভাই এর গলা জড়িয়ে ছিলাম সেখানে কোলবালিশ।ঘুম ভাঙতেই শিউরে উঠলাম আমি।আজ আবার বিহান ভাই কে স্বপ্ন দেখেছি।এত মিষ্টি করে কথা উনি বলতে পারেন ভাবা যায়।এসব ভাবতে ভাবতেই রিয়া এসে আমাকে বলে কি ব্যাপার মহারাণি আজ মহারাজ এর ঘরে ব্যাপার কি।রিয়ার কথা শুনে ভড়কে গেলাম আমি আমি মহারাজ এর ঘরে মানে।চোখে মেলে তাকিয়ে দেখি ওয়ালে সাদা এপ্রোন পরা গালে এক শুভ্র হাসির পিকচার ওয়ালে টাঙানো।ওএমজি আমি বিহান ভাই এর রুমে।
রিয়া আমাকে বললো দ্রুত নিচে আয়।হলুদের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে।সবাই উঠে পড়েছে।
আমি অবাক হয়ে গেলাম আমি এখানে কেনো?আমি তো বাইরে ডিভাইন এর উপর সুয়ে ছিলাম এখানে কিভাবে এলাম।কে নিয়ে এসছে আমায়।আমার ওড়না বা কোথায়?
ছুটে গেলাম বেলকনিতে, বেলকনিতে গিয়ে দেখি ডিভাইন এর উপর বিহান ভাই সুয়ে আছেন।আমার ওড়না উনার পিঠের নিচে পড়ে আছে।তার মানে উনি আমাকে এখান থেকে নিয়ে উনার বিছানায় সুইয়ে দিয়েছিলেন।রাতে আমি যা স্বপ্ন দেখেছিলাম সেটা কি তাহলে সত্য।মাথা দুই একটা ঝাকি দিয়ে নিলাম।যে এটা হয়তো মিথ্যা।আজ বিহান ভাই এর খবর আছে।উনি আমার সাথে রিতীমত নাটক করে যাবেন। এই নাটকের কইফত দিতে হবে।আমার চাচাতো বোনের সাথে রিলেশন করে আবার আমাকে কেনো?কোলে তোলা হয়েছিলো সেটা উনাকে বলতেই হবে।
রাগি রাগি চোখ নিয়ে বিহান ভাই কে ডাকাডাকি শুরু করলাম।উঠলেন না দেখে আমার ওড়না ধরে টানাটানি শুরু করলাম।অতঃপর উনার ঘুম ভাঙলো।
ঘুম ভাঙতেই উনার বিশ্রি সেই চিরচেনা রূপে ফিরে এলেন।রাগি রাগি চোখে তাকিয়ে রইলেন কপালে বিরক্তির চিহ্ন ফুটে আছে।উনার রাগ দেখেই রিতীমত ভয় পেয়ে গেলাম।কিন্তু উনি রাগি চোখে তাকিয়েই আছেন কোনো কথা বলছেন না।ওড়না টা ছেড়ে দিয়ে আবার চোখ বুজে গেলেন।
আমি ওড়না টা গায়ে জড়িয়ে বললাম কি ব্যাপার আমি এখান থেকে আপনার রুমে গেলাম কিভাবে।
বিহান ভাই আবার চোখ মেলে তাকালেন রাগে যে দাঁতে দাঁত চেপে আছেন সেটা বোঝা যাচ্ছে।এতক্ষণে মুখ খুললেন।
দিয়া রাতে এমনি মুড সুয়িং ছিলো ভালো ঘুম হয় নি।ঘুমের ঘাটতি থাকলে মাথায় পেইন হয় আমার।এখন যদি ডিস্টার্ব করিস সিরিয়াসলি বলছি চড় একটাও অন্য কোথাও যাবে না।সব গুলো তোর দুই গালে পড়লে।আমার চড় লাস্ট কবে খেয়েছিস মনে আছে তো।
উনার কথা শুনেই মুখ চুপসে গেলো আমার।উনার চর থাপ্পড় খুব ই ভয়ানক জিনিস।এখন আর বিরক্ত না করে পরে আসবো ভেবেই চলে আসলাম।
তোহা আপু,মেহু আপু,শুভ ভাইয়া,তিয়াস ভাইয়া,আলিপ ভাইয়া সবাই চলে এসেছে।তোহা আপুকে দেখেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো আমার।
সকাল আট টা বাজে আমাদের কাজিন গুষ্টির বিশাল সভা বসেছে কে কেমন সাজবে,কে কি করবে। আমাদের বিশাল আড্ডার মাঝে হাজির হলের বিহান ভাই।তোহা আপু বিহান ভাই কে দেখেই বললো কেমন আছেন বিহান ভাই।বিহান ভাই স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বললেন ভালো।আমার সি আই ডি র চোখ সম্পূর্ণ তাদের দুজনের চোখের দিকে।
আমরা সবাই চেয়ার নিয়ে বসে আছি বিহান ভাই ও একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলেন।বিহান ভাই শুভ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন কিরে মফিজ কি অবস্থা। শুভ ভাইয়া মেহুর আপুর মাথায় একটা চাটি মেরে বললো কিরে তুই আমাকে ট্যাগ দিয়ে এসব পোস্ট দিয়েছিস কেনো?বিহান আমাকে এখন মফিজ ডাকছে।তিয়াস ভাইয়া হাতে ক্লাপ দিয়ে স্ব-জোরে হেসে দিয়ে বললেন আজ কিন্তু সত্যি শুভ দাঁত ব্রাশ করে নি।বিহান ভাই তিয়াস ভাইয়ার দিকে ভ্রুক্ষেপ করে তাকিয়ে বললেন এনি ওয়ে তুই আমার সিনিয়র কে মেসেজ করিস ক্যানো তিয়াস।সে তো তোর নিক নেইম ছ্যাঁচড়া দিয়ে সেভ রেখেছে। তিয়াস ভাইয়া বিহান ভাই এর দিকে হাত জোড় করে বললো বিহান ভাই আপনার পায়ে ধরি বাকি টা এই হাটের মাঝে প্রকাশ করিয়েন না।বিহান ভাই মুখ বাকা করে একটা হাসি দিলেন।
বিভোর ভাই আর রিয়া আমার দিকে বললো দিয়ার মুড অফ মনে হচ্ছে।
বিহান ভাই ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন কাল রাতে দিয়া ঘুমের ঘরে আমার রুমে গিয়ে আমাকে ডেকে তুলে বলেছে সে আমার রুমে ঘুমোতে চাই।এবং বলেছে বিহান ভাই আপনার বিছানায় একদিন ঘুমোতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম।কি আর করা প্রথম বারের মতো কাউকে বেড শেয়ার করলাম।বাট দিয়ার যে মেমরি লস হয়েছে জানা ছিলো না।এখন থেকে দিয়া যেটা করবে ভিডিও করে রেখে দিবো।তার দাবি আমি তাকে কোলে তুলে হয়তো আমার বিছানায় সুইয়ে দিয়েছি।রিয়া বিলিভ হয় এত মোটা একটা মহিলা আমি কোলে তুলতে পারি।
মনে চাইছে উনাকে খেয়ে ফেলি।এত গুলা মানুষের সামনে এগুলা না বললেই কি হচ্ছিলো না।আজ সত্যি উনার খবর আছে।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৭.
#WriterঃMousumi_Akter
সমগ্র কাজিন গুষ্টির সামনে মান সম্মান এর বারোটা বাজিয়ে দিলেন বিহান ভাই।কি জানি সবাই আমাকে কোন চোখে দেখছে।কোনো কথা না বলে ওখান থেকে উঠে চলে গেলাম আমি লজ্জায়।
বিয়ে বাড়ি মানেই আনন্দ উল্লাস আর আমেজের শেষ নেই।একদিকে হলুদের জন্য উঠানেই প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে।বাড়ির ছেলেগুলো সেখানেই বিজি।এইদিকে মেয়েরা ভীষণ বিজি আছে শাড়ি আর গহনা নিয়ে।সবার গালে মুখে হলুদের ভীষণ ছড়াছড়ি।আমি দুই হাত ভরে হলুদ নিয়ে বিভা আপুর গালে লাগিয়ে দিলাম।সবাই অনুষ্টান দেখছে কিন্তু এলিয়েন বিহান ভাই ই নেই।উনি খানিক টা দূরে চোখ মুখ ঘুচিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।মারাত্মক আকারের সুন্দর লাগছে উনাকে।ইস মেয়েগুলো হা করে তাকিয়ে আছে উনার দিকে।এ্যাশ কালারের পাঞ্জাবী তে মারাত্মক সুন্দর লাগছে উনাকে।আচ্ছা একটা ছেলেকে এতটা সুন্দর হতে হবে ক্যানো?এত সুন্দর ই বা ক্যানো উনি।হিংসা হচ্ছে আমার মেয়েগুলা হা করে তাকিয়ে আছে উনার দিকে।উনাকে দেখে অনিচ্ছাকৃত ভাল লাগার হাসি ফুটে ওঠে আমার ঠোঁটের কোণায়।বুকে হাত বেঁধে মারাত্মক বিরক্তি নিয়ে তাকিগে আছে।বিভা আপুর এক গাদা বান্ধবী এসে বিহান ভাই কে ফলো করছে।একজন রিতীমত এগিয়ে গেলো বিহান ভাই কে আবির মাখাবে।মেয়েটি এগিয়ে যেতেই মেয়েটি কোনো কথা বলার আগেই বিহান ভাই ফোন বের করে কানে দিয়ে অন্য দিকে রওনা হলো।মেয়েটি কে পুরাই ইগনোর করলো।যেনো ভীষণ বিরক্ত হচ্ছেন উনি।এইদিকে আবির মাখানোর জন্য আমার পিছে ছুটছে রিয়া আর মেহু।মেহু আর রিয়ার দৌঁড়ানিতে ছুটতে গিয়ে বিহান ভাই এর গায়ের উপর পড়লাম গিয়ে।বিহান ভাই এর এ্যাশ কালারের পাঞ্জাবীর বুকের কাছে হলুদে লেপ্টে গেলো।পড়েই যাচ্ছিলাম উনার পাঞ্জবির বুকের কাছে খামছি দিয়ে ধরে নিজেকে আটকালাম আর বিহান ভাই ও আমার কোমর জড়িয়ে ধরলেন।বিহান ভাই এর ভয়ানক বিরক্তির চোখ মুখ একবার আমাকে দেখছে আরেক বার পঞ্জাবীতে লেগে থাকা হলুদের দিকে।এই পাঞ্জাবীর জন্য কি আমাকে আজ ঘরে আটকে রাখবেন উনি।কিছুক্ষণ পরে স্বাভাবিক হলাম আমি।দ্রুত নিজের ওড়না দিয়ে পাঞ্জাবীর হলুদ মুছে দেওয়ার চেষ্টা করলাম।বিহান ভাই আমার হাত ধরে সরিয়ে দিলেন আর বললেন,সারাজীবন কি গভেট ই থেকে যাবি নাকি ঘটে বোধ বুদ্ধি কিছু আছে।পাঞ্জাবীর তো বারোটা বাজিয়েছিস এখন আবার নিজের ওড়না টা নষ্ট করতে চাস তাইতো।নিজের জিনিসের প্রতি তো কোনোমায়া দয়া নেই তোর।থাকবে কিভাবে চিটারির টাকায় এসব কেনা যে।উনার কথা শুনেই সাথে সাথে রেগে গেলাম আর বললাম দেখুন এটা আমাকে মামি কিনে দিয়েছে।এবার উনি কথার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন।ওহ আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে আমাদের ফ্যামিলির টাকা মানে হালাল। হালাল মানে পুরাই হালাল এই টাকায় কোনো ভেজাল নেই।একটু রাগি মুডে বললাম,,আমার বংশ নিয়ে রোজ খোটা দেন আপনার কপালেও এমন শ্বশুর বাড়ি জুটবে।
‘একদম ই ঠিক বলেছিস তোর বংশেই বিয়ে হবে আমার।’
‘কথাটা শুনেই বুক কেঁপে উঠলো তার মানে তোহা আপুর সাথে ব্যাপার টা একদম ই সত্য।’
‘জাস্ট ডিজগাস্টিং আর নেওয়া যাচ্ছে না।’
‘কি হলো বিহান ভাই।’
‘তোদের এইসব ন্যাকামি কখন শেষ হবে।’
‘এইগুলা কি ন্যাকামি।’
‘ন্যাকামি ছাড়া কি।তোরা মেয়েরা পারিস ও বটে।আর এগুলা কি গানে নাচ গান করছে মেয়েগুলা।আমার এই দামি কানের প্রেজটিজ নষ্ট হয়ে গেলো এই গানের অত্যাচারে।সিরিয়াসলি এই অত্যাচার আর নেওয়া যাচ্ছে না।’
‘গানের মাঝে খারাপ কি?’
‘এগুলা কি গানে নাচ হচ্ছে বধূবেশে কন্যা যখন এলোরে।ওয়েডিং এর যে এত্ত ভালো ভালো গান আছে সেটা রেখে ওহ গড কার রুচিতে এই গান প্লে হচ্ছে।’
‘বিভাপুর বান্ধবীদের।’
‘এই মেয়ে গুলো এত গায়ে পড়া স্বভাব এর কেনো রে?বার বার কথা বলার জন্য এগিয়ে আসছে।’
‘কি কাহিনী কি?আপনার না গফ আছে বিহান ভাই।’
‘হুম আছে তো।লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনের কথা শোনার অভ্যাস হয়েছে তাইনা।’
‘আপনি যে জোরে কথা বলছিলেন এমনিতে নড়াইল শহরের সবাই শুনেছে।এনি ওয়ে আপনার গফ আছে মেয়ে গুলা জানে।’
‘হুম জানে তো!’
‘জেনেও এমন করছে।’
‘আই থিংক তারা আমাকে দেখে ক্রাশ খাচ্ছে।’
‘আপনার মাঝে কি এমন বিশেষত্ত্ব আছে যা দেখে ওরা ক্রাশ খাবে।’
‘তুই মেয়ে না অন্য কিছু।তা না হলে চোখের সামনে একটা হ্যান্ডসাম ছেলে বড় হয়ে গেলো তুই কখনো ক্রাশ খেলি না।এর থেকে প্রমান হয় সুন্দর জিনিস তোর নজরে পড়ে না।’
বিহান ভাই এর কথা শুনে ওখান থেকে চলে গেলাম।উনি হলের জাস্ট একটা অসহ্য মানুষ।
বিভা আপুকে গোসলের সময়ে গোলাপ এর রজনীগন্ধার গহনা দিয়ে হলুদ মাখানো হবে।আর হলুদের পরে আর্টিফিশিয়াল ফুলের সুন্দর গহনা পরানো হবে।এমন টাই প্লান করা হয়েছে।এই ফুলের গহনা টা নড়াইল ভাল গুলো পাওয়া যায় না।তাই বিভা আপু বিহান ভাই এর কাছে আবদার করেছে বিহান ভাই যেনো ঢাকা থেকে যে কোনো ভাবে গহনা আনিয়ে দেয়।বলতে গেলে গহনা টা বিভা আপুর জন্য বিয়ের গিফট হিসাবে দিয়েছেন বিহান ভাই।গহনা টা বিহান ভাই এর বিছানার উপর রাখা আছে আমাকেই পাঠানো হলো আনার জন্য।গহনা টা খুলেই চোখে তাক লেগে গেলো আমার।দেখে বোঝার উপায় নেই এগুলা আর্টিফিশিয়াল ফুল।বেলি আর গোলাপের ফুল দিয়ে বানানো গহনা টা।সময় থাকলে ঠিক ই বিভোর ভাই কে বলতাম আমাকে এমন একটা গহনা আনিয়ে দিতে।বিভোর ভাই ঠিক ই আমাকে আনিয়ে দিতো।কিন্তু বিহান ভাই কে বললে বলবে বিয়ে কি তোর না বিভা আপুর।তুই সাজবি ক্যানো?ছেলেদের ইমপ্রেস করতে চাস তাইতো।ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম গহনার দিকে।বাইরে সবাই সাজুগুজু নাচ গানে বিজি আছে।আমি এসেছি গহনা নিতে।যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত পোহায় আমাকে বার বার যে কোনো কারণে বিহান ভাই এর রুমেই আসতে হয়।
হঠাত মনে হলো যেনো মনের মাঝে বিস্ফোরণ ঘটলো।মাথার এক গোছা চুল টেনে ধরে বিহান ভাই বলেন,এভাবে গহনার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো?উনাকে দেখেই দুঃচিন্তা দানা বাঁধলো মনের ভেতরে।এক্ষুণি কি আজে বাজে কথা শুরু করবে উনি।কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরোনোর চেষ্টা করলাম আমি।উনি সাথে সাথে আমার সামনে দুই হাত মেলে দাঁড়ালেন।আমাকে আটকানোর চেষ্টা করছেন।আমি চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে বললাম দেখুন আমি বিয়ে করতে চায় না।
‘বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন আমাকে বিয়ে করতে চাস না তাইতো।কিন্তু কে তোকে প্রেসার দিয়েছে বিয়ে করার জন্য।’
‘না মানে আপনি এক্ষুণি বলতেন গহনার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলি কি জন্য।বিয়ে কি তোর নাকি।তুই গহনার লোভ করছিস কেনো?’
‘উনি আমার সামনে একটা সেইম গহনা ধরে বললেন এটা নে।’
‘আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম উনি মানে বিহান ভাই গহনা দিচ্ছেন কিন্তু হুয়াই?উনি বিহান ভাই তো। ‘
‘আমাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলেন কি হলো নে।তোর জন্য এক্সট্রা আট হাজার টাকা দিয়ে এটা আনিয়েছি।গহনা টা দেখেই আমার পছন্দ হয়েছিলো আর আমি জানতাম এটা তোর ও পছন্দ হবে তাই ষোল হাজার টাকা দিয়ে এনেছি।এখন যদি এটা না পরিস তাহলে তোর খবর আছে মারাত্মক খবর।এই টাকা তোর মামা মামি দেয় নি।একদম ই আমার হালাল উপার্জন এর টাকা।আমার টাকার মূল্য অনেক।যদি এই গহনা না নিস তাহলে এই দো’তলা থেকে ফেলে দিবো।’
‘আমি আবার ও তাকিয়েই রইলাম কোনো কথা বললাম না।আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। এটা কি আসলেই বিহান ভাই।মানে এটা বিহান ভাই তো।’
‘বিহান ভাই আমাকে অবাক করে দিয়ে,নিজেই ফুলের গহনা টা আমায় পরিয়ে দিলেন।নিজের হার্টবিট অতিশয় দ্রুত চলাচল শুরু করেছে।’
‘বিহান ভাই একটা ধমক দিয়ে বললেন এত নড়ছিস কেনো?একটা দিবো কানের নিচে।চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাক।।’
আমার কোনো কথা বলার শক্তি থাকলো না।সবাই মাত্রই গোসল করে হলুদ তুলে এখন শাড়ি আর গহনা নিয়ে বিজি।আমিও মাত্রই শাড়ি পরে এসেছি। একটা হলুদ সিল্কের শাড়ি সাথে এই চমৎকার সুন্দর গহনা।বিহান ভাই ফোন বের করে একটা সেল্ফি নিলেন আমাদের দুজনের।উনার আইফোনে ছবিটা ভীষণ সুন্দর লাগছে।আমার এত সাজুগুজুর পরেও আমার থেকে বিহান ভাই কেই বেশী সুন্দর লাগছে।আসলে কি বলবো বুঝছিলাম না।রুমের মাঝে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।উনি পাঞ্জাবীর বোতাম গুলো এক হাত দিয়ে খুলতে খুলতে আরেক হাত দিয়ে আমার ছবি তুলছিলেন।বেশ শান্ত কন্ঠে বললেন পাঞ্জাবী চেঞ্জ করবো সেটা কি তোর সামনেই করবো।আমি উনার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতেই আমার ফোন বেজে উঠলো টুংটাং সাউন্ড এ।ফোন এর মেসেজ খুলে দেখি বিহান ভাই এর মেসেজ।
“এ শহর আজ ফুলে ফুলে সজ্জিত হোক
এ শহরে আজ ফুলের রাণী এসছে
তাকে আজ ফুল কণ্যায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে”
মেসেজ টা দেখে ভাল লেগেছে আবার খারাপ ও লেগেছে।গফ থাকতে আমাকে এসব দেয় কেনো?.
আমি বাইরে বেরোতেই চারদিক থেকে সবাই বলছে দিয়া তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।সবার প্রশংশায় মুখরিত চারপাশ।
সন্ধ্যায় আপুর হাতে মেহেদী পরাবো। আপুর ফ্রেন্ড রা সহ সবাই আমার সামনে হাত ধরেছে সবাই কে মেহেদী পরিয়ে দিতে হবে।এমন সময় রিয়া বলে উঠলো বিহান ভাই আপনি দিয়া কে গহনা এনে দিয়েছেন কাহিনী কি?
বিহান ভাই কাহিনী ইজ ভেরি ক্রিটিক্যাল রিয়া।এ কাহিনী মারাত্মক। সব দোষ দোকানদারের।আমি একটার অর্ডার করেছিলাম কিন্তু ওরা দুইটা পাঠিয়ে দিয়েছে।ওদের নাকি কমিশন চলছে তাই ভাবলাম দিয়েছে যখন একটা গফ কে দিয়ে দিবো।কিন্তু দিয়া বিভা আপুর টা আনতে গেছিলো গিয়ে দেখি দুইটা দেখে একটা নিজেই পরে বসে আছে।
আমি রাগি রাগি চোখে উনার দিকে তাকালাম।
আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো দিয়া এভাবে রিয়্যাক্ট করছিস ক্যানো?সবাই ভাববে আমি মিথ্যা বলছি।
তাহলে কি সত্যি বলছেন।
আচ্ছা সত্যি টা হলো আমি দিয়াকে গহনা পরিয়ে দিয়েছি গাইস।দিয়া তুই হ্যাপি এবার বলেই বাকা একটা হাসি দিলেন।
তোহা আপু বলে উঠলো আমি জীবনেও বিলিভ করি না বিহান ভাই পরিয়ে দিয়েছে।
বিহান ভাই বললেন,বিলিভ না করলে আর কিরার বইন।
রাগে যে কি অস্হির লাগছে আমার।এই মুহুর্ত ভীষণ প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছা করছে।
হুট করে বিহান ভাই এর ফোনে কল বেজে উঠলো,বুকটা ফাইট্যা যায় বুকটা ফাইট্যা যায়।বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া রঙ্গ কইরা হাইটা যায়।
বিহান ভাই এর মুখের যা অবস্থা। উনার ফোনে এমন রিংটোন ভাবা যায়।ইংলিশ,চাইনিজ হিন্দি ছাড়া যে শোনে না।
চলবে,,
(