#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭
কেওক্রাডং পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায় থরথর করে কাঁপছে রাদিব। সূর্য এখন ঠিক মাথার উপরে বরাবর। তপ্ত রোদ্দুরে স্বেদগ্রন্থি থেকে স্বেদকণা নিঃসৃত হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু একরাশ ভীতি যেনো আরও গ্রাস করে নিয়েছে। রাদিব আবারও শুনতে পায়,
“রাদিব! তোমাকে আমি নিয়ে যেতে এসেছি। চলো আমার সাথে!”
খুব পরিচিত মেয়েলি কন্ঠস্বরটি কিছু ধ্বনি অদূরে পাহাড়ের সাথে ঠেকে প্রতিফলিত হচ্ছে আবার কিছু হচ্ছে না। রাদিব কানে হাত দিয়ে হাপাচ্ছে। পাহাড়ের এক ঢাল নিচে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটেছে। রাদিব চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
–প্লিজ আমায় মাফ করে দেও মিলি। কেনো কাল থেকে আমাকে এভাবে ভয় দেখাচ্ছ? চলে যাও।
মারসাদ আবারও রেকর্ডারটা অন করে। রেকর্ড করা ভয়েসটা মিলিরই। মিলির সাথে যখন রাদিবের সম্পর্ক ভালো ছিল তখন হানিমুনে রাদিব ও মিলি বান্দরবানে এসেছিল। মারসাদ ও মাহিও সাথে এসেছিল। মিলি সেদিন পাহাড়ের উপর উঠে উপরোক্ত বাক্যটা চিৎকার করে বলেছিল। বলার উদ্দেশ্য ছিল বিশাল অন্তরিক্ষের হয়ে রাদিবের জন্য। মারসাদ সেটা রেকর্ড করে নিয়েছিল।
মারসাদ গতকাল রাতে কাউকে দিয়ে রাদিবের হোটেল রুমের দরজার নিচের সামান্য ফাঁকা অংশের মাধ্যমে বাহির থেকে এই রেকর্ডারটা অন করিয়েছিল। রাদিব তখনও ঘুমায় নি বলে কন্ঠস্বরটা শুনে খুব ভয় পেয়েছিল। মিলির ভয়েসের সেই রেকর্ডারের সাথে মিলির কান্নার একটা রেকর্ডও জুরে দেওয়া। যা মারসাদ মিলিকে রাগাতে রেকর্ড করেছিল আগে।
মারসাদ নিচে নেমে আহনাফদের কাছে আসে। আহনাফ বলে,
–কাজ হয়েছে?
মারসাদ বাঁকা হেসে বলে,
–রাদিব কাঁদছে। কাঁদুক। আরও মে*ন্টালি ট*র্চার করাবো। আপিলির সাথে তার কিছু ছবিতে র*ক্ত লাগিয়ে ওর কাছে পার্সেল যাবে। সাথে বাচ্চাদের কিছু খেলনা।
রাহিন এক্সসাইটেড হয়ে বলে,
–আরও দুইদিন থেকে যাই না? জা*নো*য়া*রটার করুণ পরিনতি দেখার জন্য চোখদুটি আমার অধীর আগ্রহে আছে।
মৃদুল বলে,
–এরপর কী হবে? এটুকুতে কী সে ট্র*মাতে যাবে?
মারসাদ বলে,
–আপিলি তার হানিমুনে যেসব শাড়ি পড়ে এই বান্দরবান ও পাহাড়ে বেরিয়েছিল তার সব আমি নিয়ে এসেছি। একটু পর একটা মেয়েকে হালকা আকাশি শাড়ি পড়ে চুল খোলা অবস্থায় পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে দেখবে রাদিব। আবার সন্ধ্যায় কালো শাড়ির সাথে চুল খোলা মেয়েকেও দেখবে। ও যা খাবার অর্ডার দিবে তার বদলে ওর কাছে যাবে যা আপিলি তার হানিমুনে এসে খাবারের জন্য অর্ডার করেছিল। ওকে মানসিকভাবে এমনভাবে আঘাত করা হবে যে ও ভাবতে থাকবে ওর আশেপাশে আপিলির আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আপিলির কান্নার রেকর্ডটাও আলাদা করে শোনানো হবে।
রাহিন মিনতি করে বলে,
–থেকে যাই আজ?
মারসাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–না। ঝামেলা হবে। ঢাকায় গিয়ে রাদিবের বাড়িতেও যাবো। আর দুইদিন পর আপিলির মৃ*ত্যুবার্ষিকী।
ওরা আস্তে আস্তে পাহাড় থেকে নেমে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই অফিসার শফিকের অফিশিয়াল গাড়িতে করে ওরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে।
__________
পরেরদিন সকালে চেয়ারম্যান সাহেব আদিরার বাবাকে তার বাড়িতে ডাকায়। আদিরার বাবা গিয়ে সালাম দিলে চেয়ারম্যান সাহেব পান চিবুতে চিবুতে বলেন,
–তা আলেক ব্যাপারি? তোমার কর্জ জানি কতো বাকি?
আদিরার বাবা মিনমিন স্বরে বলেন,
–দুই লক্ষ টাকা চেয়ারম্যান সাব।
চেয়ারম্যান সাহেবের চোখ চিকচিক করে উঠে। সে ভনিতা করে বলেন,
–তা কবে পরিশোধ করবা? তোমার জন্য তো কর্জের সুদ ধরি নাই। তুমি গরিব মানুষ আর আমার দয়ার দিল! দুই বছর ধইরা এই কর্জ ঝুলতাছে। সুদ ধরলে এর দ্বিগুন দেওন লাগতো তোমার।
আদিরার বাবা গামছা দিয়া কপালের ঘাম মুছেন। চেয়ারম্যান সাহেব এবার নরম স্বরে বলেন,
–তুমি যদি চাও তয় তোমার একটা টাকাও দেওন লাগবো না!
আদিরার বাবা ভিষণ অবাক হলেন। চেয়ারম্যান সাহেব কারও দেনা মাফ করেন না। আর সুদ তো কড়ায়গণ্ডায় বুঝে নেন। তার বেলায় কেনো এর বৈপরীত্য দেখা গেলো তার বুঝে আসলো না। আদিরার বাবার কৌতুহল মিশ্রত চাহনি দেখে চেয়ারম্যান সাহেব পানের পিক ফেলে বলেন,
–তোমার মাইয়ার সাথে আমার সুপুত্র দেলোয়ারের বিয়া দিবা। দেলোয়ার তোমার মাইয়ারে খুবই পছন্দ করে। সেই তো তোমার মাইয়ারে বিয়ার কথা কইলো। এমনেও আমার তোমার মাইয়ারে নিয়া সমস্যা নাই। লক্ষি মাইয়া তোমার। তবে টাকা-পয়সা আসবো না এই একটু।
আদিরার বাবা দ্বিমনায় পরে গেলো। কী করবেন বুঝতে পারছেন না। আদিরার বাবাকে চুপ থাকতে দেখে চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,
–কী এমন ভাবো আলেক ব্যাপারি? লাভ কিন্তু তোমারই। মাইয়া তোমার সুখেও থাকবো।
আদিরার বাবা বললেন,
–আমি ওর মায়ের লগে একটু কথা কইয়া লই। তারপর আপনেরে জানামু নে। আইজকা তয় আসি।
চেয়ারম্যান সাহেব সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তার মতে এতো ভালো প্রস্তাবকে হেলাফেলা করাটা পছন্দ হয় নি। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,
–যাও তয়। জলদি জানাইয়ো।
আদিরার বাবা সালাম দিয়ে চলে আসলেন। বাড়িতে এসে সে চিন্তিত হয়ে ঘরের ভিতর বসে রইলেন। আদিরার মা স্বামীর জন্য পানি নিয়ে আসেন। স্বামীকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞাসা করেন,
–কী হইছে আপনের? এতো চিন্তিত লাগতেছে কেন?
আদিরার বাবা পানি ভর্তি গ্লাসটা এক শ্বাসে ফাঁকা করে স্ত্রীর হাতে দিয়ে বলেন,
–চেয়ারম্যান তার পোলার লগে আদিরার বিয়ার প্রস্তাব দিছে। সাথে কইছে আমার দুই লক্ষ টাকার কর্জ মাফ করে দিবো। কী করমু বুঝতেছি না। দুই বছর ধইরা কর্জ পরিশোধ করতে পারতেছি না।
আদিরার মা আঁতকে উঠেন। উনি কাল থেকে যেই ভয়ে ছিলেন তাই সত্য হতে চলেছে। আদিরার মা উৎকণ্ঠা নিয়ে বললেন,
–আপনে কী রাজি হয়ে গেছেন নাকি?
আদিরার বাবা হতাশ স্বরে বলেন,
–না। এখনও হই নাই কিন্তু ভালো প্রস্তাব। চেয়ারম্যান সাহেবের পোলার নিজেরই কাঠের কারবার। পোলা একটু উড়ন স্বভাবের কিন্তু বিয়ার পরে ঠিক হইয়া যাইবো। চেয়ারম্যান সাহেব আমাগো কতো সাহায্য করছে তুমি তো জানোই। সে সুদও ধরে নাই।
আদিরার মায়ের হাত-পা কাঁপতে থাকে। হাত থেকে খালি গ্লাসটা মাটিতে পরে ঝনঝন ঝংকার তুলে। তিনি দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে মেয়ের ঘরে যান। আদিরার বাবা জানেন তার স্ত্রী মেয়েকে পড়াতে চান কিন্তু এখন কিছু করার নেই তার হাতে।
আদিরার মা আদিরার ঘরে গিয়ে আদিরাকে শোয়া থেকে তুলে তড়িঘড়ি করে বলেন,
–আজকে রাতেই তুই ঢাকা চলে যাবি। এখানে তুই আসবি না। ব্যাগ গুছা জলদি।
আদিরা কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে তার মাকে জিজ্ঞেস করে,
–কেনো মা? কী হইছে? আমি পরশু যাবো তো। আজই কেনো?
আদিরার মা মেয়ের মুখখানি দুই হাতের আদলে আগলে নিয়ে বললেন,
–চেয়ারম্যান তার ছেলের সাথে তোর বিয়ের প্রস্তাব দিছে তোর বাপের কাছে। তোর বাপের সব কর্জ মাফ করে দিবে বিনিময়ে বলছে। তোর বাপে রাজি হয়ে যাইবোরে মা। তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাইবো ওই দেলোয়ারের ফাঁদে পরলে। আমি এখনি তোর গনিত স্যারেরে ফোন কইরা কমু যাতে একটা বাসের টিকেট কে*টে রাখে। তুই আজকেই ঢাকা চলে যাবি।
আদিরা হতভম্ব হয়ে যায়। ওই দেলোয়ারকে বিয়ে সে কখনওই করতে চায় না। শেষ পর্যন্ত তার বাবাকে টোপ হিসেবে ব্যাবহার করলো ওই দেলোয়ার! আদিরার চোখে নোনাজলেরা ভীড় করেছে। যেকোনো সময় স্রোতধারা হয়ে গড়িয়ে পরবে। আদিরার মা নিজের কোমড়ের কাছে গুজে রাখা ফোন নিয়ে আদিরার গনিত স্যারকে ফোন করে রাতের বেলার বাসের একটা টিকিট কাটতে বলেন। আদিরা ভীত হরিণির মতো কুঁকড়ে আছে। আসন্ন কি বিপদ আসতে চলেছে তার কিছুটা তার ধারণা আছে। আজকে সে ঢাকা চলে যেতে পারলে এই বিপদ টলানো গেলেও যেতে পারে।
#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
আদিরার গনিতের শিক্ষক খুব হতাশ হয়ে আদিরার মাকে ফোন করে জানান, দেলোয়ার নাকি বাস কাউন্টারে তার লোক লাগিয়েছে। প্রতিটা বাস সাতক্ষীরা ছাড়ার আগে দেলোয়ার চিরুনি তল্লাশির মতো খুঁজে। আদিরাকে কোনোমতেই ঢাকা যেতে দিবে না।
আদিরা ও তার মায়ের মনোবল শূণ্যের কোঠায়। আদিরার মা আদিরার বাবার কাছে গেলেন। আদিরার বাবা চোখ বুজে শুয়ে আছেন। আদিরার মা ভাবলেন হয়তো ঘুমিয়ে আছেন। ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে নিলে আদিরার বাবা ডাক দিলেন,
–রেবেকা! এইহানে বসো।
আদিরার মা ডাক শুনে থামলেন তারপর বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে বসলেন। আদিরার বাবা লম্বাশ্বাস ফেলে বলেন,
–চেয়ারম্যানের বাড়ি থিকা আসার সময় শুনছিলাম বাস কাউন্টারে চেয়ারম্যানের পোলা তার লোক লাগাইবো। আগেরবার তো আদিরারে বিয়া করার কথা দেলোয়ার নিজে আমারে কইছিল। তার তিন-চারদিনের মধ্যে আদিরারে ঢাকায় পাঠায় দিলা। আমার সত্যি নিজের মাইয়ার লাইগ্যা গর্ব হইছিল। কিন্তু মাইয়া আমার এহানে আইয়া বড়ো বিপদে পইরা গেছে। ঘরে যুবতি মাইয়া আর বাইরে যদি শ*কুন উৎ পাইত্তা থাকে তো কেমনে চিন্তা মুক্ত থাকি কও? দেলোয়ার যদি সারা গ্রাম জানায়ে আদিরারে বিয়া করে তয় আদিরার সম্মান বাঁচবো। আল্লাহ্ না করুক আমার মাইয়ার কোনো ক্ষতি কইরা লাইলে? এর লাইগ্যা আমি আদিরারে বিয়া দিতে চাইছিলাম অন্যখানে। যাতে মাইয়া আমার দেলোয়ারের কুনজর থেকে বাঁচতে পারে। এহন আর কিছু করার নাই। আল্লাহর কাছে কও যেন দেলোয়ার শোধরায় যায়। দেলোয়ার তো বিয়া করবই যেনতেন উপায়ে।
আদিরার মা স্বামীর কস্ট উপলব্ধি করতে পারলেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অশ্রুজল বিসর্জন দিচ্ছে। এদিকে আদিরা রিন্তিকে ফোন করে অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে। রিন্তিকে সব বলার পর রিন্তি সিদ্ধান্ত নিলো মাহিকে জানবে। করলোও তাই। মাহি সবটা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। তার দাভাইয়ের জীবনে সুখ আসতে চলেছে তা এভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে না। মাহি মারসাদকে ফোন করে। মারসাদরা সকালের আগেই হোস্টেলে এসেছে। তারপর পাঁচজনেই ঘুমোচ্ছে সারাদিন ধরে। ফোনের চিৎকারের শব্দে মারসাদ হাতরে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে কানে ধরে।
–হ্যালো।
–দাভাই তুই কোথায়?
–হোস্টেলে। ঘুমাচ্ছি। ফোন রাখ।
মারসাদ ফোন কান থেকে নামিয়ে নিতে নিলে মাহি হড়বড়িয়ে বলল,
–না। না। রাখিস না। ইম্পরট্যান্ট কথা আছে দাভাই।
মারসাদ ঘুম ঘুম ক্লান্ত স্বরে বলল,
–বল। জলদি বলে ফোন রাখবি। টানা দুইদিন জার্নি করে শরীর খুবই ক্লান্ত। ঘুম দরকার আমার।
মাহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–তোর ঘুমানোর সময় নেই এখন। ঘুমালে যে তোর হৃদয়হরণী সারাজীবনের জন্য অতল অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
মারসাদের এই সময় এরকম উদ্ভট হেয়ালি কথার মানে বের করার মতো চিন্তাশক্তি নেই। ঘুমের ঘোরে মানুষ হ্যাঁ কেও না বলে। মারসাদ বিরক্ত হয়ে বলে,
–যা বলার ক্লিয়ারলি বল। হেয়ালি বাদ দে।
মাহি এবার কাটকাট কন্ঠে বলে,
–আদিরার বিয়ে। একটা খারাপ লোকের সাথে। সেই খারাপ লোকটা সাতক্ষীরার বাস কাউন্টারে নিজের লোক লাগিয়ে রেখেছে তাই আদিরা ঢাকাও আসতে পারছে না। এখন তুই কী করবি?
মারসাদ হুড়মুড় করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। হতভম্ব হয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
–মানে কী এসবের? বিয়ে কবে ঠিক হলো? আমাকে আদিরা সেদিন কিছু জানায় নি!
মাহি বলল,
–কী জানাবে? ও নিজে কী জানতো? ওর গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলের কু*নজর ওর উপর আগের থেকে ছিল। বিয়ের প্রস্তাব ছেলে নিজে আদিরার বাবার কাছেও দিয়েছিল। এখন ছেলের বাবাও ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। ছেলে এবার সব পথ রুদ্ধ করে রেখেছে। আগেরবার তো চুপিসারে ঢাকা চলে এসেছিল। এবার সেই পথটাও খোলা নেই।
মারসাদ খট করে ফোন কে*টে দিলো। মাহি অবাক হয়ে গেলো মারসাদের কান্ডে। মারসাদ রাগে চোয়াল শক্ত করে আদিরার নাম্বারে ডায়াল করলো। তার এখন আদিরার উপরেও রাগ উঠছে। নিজের গ্রামে বিপদ জেনেও এতো যাওয়ার জন্য পা*গল হওয়ার কি ছিলো? মারসাদের ভাষ্যমতে। আদিরা নিজের ঘরে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ফোনের শব্দে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মারসাদের নাম্বার থেকে কল এসেছে। আদিরা ফোনটা রেখে দিলো। তার খুব খুব কান্না পাচ্ছে। কান্নার সময় তার কথা বলতে কস্ট হয়। কিন্তু অধৈর্য মারসাদ কী ক্ষান্ত হবে? মোটেও না। সে ফোন রিসিভ না হওয়াতে আবারও ফোন দিলো। এবারও রিসিভ না হওয়াতে রেগে ফোনটা ফ্লোরে আ*ছাড় দিলো। যার বৌদলতে ফোনের স্ক্রিনে ফা*টল রেখা ফুটে উঠলো। বিছানায় কয়েকবার ঘু*ষি দিয়ে দুইপাশে ঘুমিয়ে থাকা আহনাফ ও রাহিন দুজনকেও ঘু*ষি দিলো। আহনাফ ও রাহিন দুজনেই হকচকিয়ে লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলো। রাহিন বুকে থু থু দিয়ে আশেপাশে নজর বুলিয়ে বলল,
–কী হইছে? কী হইছে? মা*র*লো কে?
আহনাফও বলল,
–আমাকেও তো? কিন্তু আমি কী করছি?
মারসাদ তার দুই বন্ধুর বোকা বোকা কথায় বেজায় বিরক্ত হলো। সে নিজের দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–আমি মা*রছি তোদের। কেনো? কম হইছে?
রাহিন ও আহনাফ অবাক হয়ে সমস্বরে বলল,
–কিন্তু কেনো?
মারসাদ রেগে বলল,
–আদিরাকে বল আমার ফোন রিসিভ করতে। এই মেয়ে এতো ঘারত্যা*রা কেন!
আহনাফ মুখ লটকে বলে,
–কেন কী করছে?
মারসাদ আহনাফ ও রাহিনকে মাহির বলা কথাগুলো বলল। সব শুনে ওরা দুজনেই চুপ। তাদের মা*থায় কোনো কিছু আসছে না। মারসাদ আবারও আদিরার নাম্বারে ডায়াল করলো। এবারও রিসিভ হলো না। এবার মারসাদ মেসেজ করলো,
“এই মেয়ে তোমার সমস্যা কোথায়? ফোন রিসিভ করছো না কেনো? আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করলে খুব পস্তাবে বলে দিলাম। যদি এবারও ফোন রিসিভ না করো তবে তাহলে…”
আদিরা মেসেজ টোনের শব্দ ঝাপসা নজরে মেসেজটা দেখলো। মেসেজটা পড়ে তাচ্ছিল্য হাসলো। কারণ এখন সে লোকটার ধরাছোঁয়ার বাহিরে। মারসাদ এখন তাকে যতই হু*মকি ধ*মকি দেক না কেনো, আদিরার কাছেও তো আসতে পারবে না। আদিরার এবার আরও কস্ট হচ্ছে। সে তো মায়ায় পরে গিয়েছিল। মারসাদের হুটহাট কাজে তাকে চরম অবাক ও লজ্জাতে গ্রাস করলেও মনের মধ্যে এক অদ্ভুত শিহরণ হতো। মারসাদের বিপদের সময় পাশে দাঁড়ানো, কথার দ্বারা বাকরুদ্ধ করা, উদ্ভট কারণে ডাকা। সবটাই মিস করবে সে।
মারসাদ কালক্ষেপন না করে আহনাফ ও রাহিনকে বলল,
–ওই দুই কুম্ভকর্ণকে ঘুম থেকে তোল। আমরা এক্ষুণি সাতক্ষীরার জন্য রওনা করবো।
রাহিন চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো। কিছু বলতে নিবে তার আগেই আহনাফ তাকে চি*মটি কা*টে। রাহিন আহনাফের দিকে তাকালে আহনাফ ইশারা করে চুপ থাকতে। মারসাদ শার্ট পড়ে অফিসার শফিকের নাম্বারে কল করে। রাত ৮টার বেশি বাজে। অফিসার শফিক ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলে,
–হ্যাঁ মারসাদ বলো।
মারসাদ বলে,
–ভাই আপনার অফিশিয়াল গাড়িটা আবারও দেওয়া যাবে? সাতক্ষীরা যাওয়া লাগতো। খুব আর্জেন্ট। জীবন-ম*রন প্রশ্ন।
অফিসার শফিক বিনাবাক্যে রাজি হয়। গাড়িটা তাকে ডিপার্টমেন্ট থেকে দেওয়া হয়েছে। মারসাদ প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি নিয়ে তার বন্ধুদের নিয়ে রওনা করে। আহনাফ গাড়িতে উঠে বলে,
–মাইক্রোতে ছয় ঘন্টা লাগার কথা। তাহলে আমরা রাত ৩.৩০ বা ৪টার দিকে পৌঁছে যাবো। তুই আদিরাকে আবার ফোন করে বল যেনো ওই সময় কোথাও একটা লুকিয়ে আসে।
মারসাদ আদিরাকে মেসেজ করে দিলো। রাত ৯টার বেশি বাজে। গ্রামাঞ্চলে সচরাচর এতসময় সবাই ঘুমিয়ে যায় কিন্তু আদিরার চোখে ঘুম নেই। শুনশান নিস্তব্ধতার মধ্যে ফোনের শব্দে আদিরার ধ্যান ভাঙে। আদিরা মেসেজটায় দেখে,
“আমরা সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরেছি। তুমি কোথায় থাকবে জানাও। ভোর চারটার মধ্যে পৌঁছে যাবো আশাকরি। ”
আদিরা মেসেজের লেখাগুলো পড়ে হতবাক হয়ে গেলো। তার বিশ্বাস হচ্ছে না কিছু। এই উদ্ভট লোকটা তাকে এখান থেকে মুক্ত করতে আসবে! আদিরা থম মেরে কিছুক্ষণ বসে রইল। তারপর হুঁশ ফিরলে জলদি করে তার মায়ের ঘরের দিকে দৌড় দিয়ে নিচু শব্দে মাকে ডাকলো।
চলবে ইন শা আল্লাহ্,