#এক_বাক্স_ভালোবাসা
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_বন্যা_মৃধা।
ইসান: কি বললে?
“হ্যাঁ এটা আমার দিদিভাই কিন্তু ওর ছবি কোথায় পেয়েছেন, মতলব কি আপনার?”
ইসান: তুমি কোথায় থাকো?
“আপনি আমার বাড়ি জেনে কি করবেন?”
ইসান: না কিছু না এমনি জানতে চাইলাম।
(মেয়েটি নানা প্রশ্ন করতে থাকে কিন্তু আমি উত্তর না দিয়ে আমি মেয়েগুলোর থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াই তবে তাদের নজরে রাখি। আদিকে কল করে এখানে দ্রুত আসতে বলি অল্প সময়ের মধ্যেই আদি আর অভি উপস্থিত হয়।)
আদি: হিমুর কোনো খোঁজ পেয়েছিস?
ইসান: হ্যাঁ ওই মেয়েগুলোর মধ্যে একটি মেয়ে হিমুর ছবি দেখে বলল ওর দিদিভাই হয়। মেয়েটিকে আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি আমি তো হিমুর বোনকে চিনি আর যদি সে হয় তাহলে চলে যেতে পারে তাই।
অভি: তার মানে ঐশী এখানে.. চলো তো দাদাভাই দেখে আসি।
আমরা সেখানে প্রবেশ করি। অনেকগুলোর মেয়ের মধ্যে একটি মেয়ে বলে ওঠে..
ঐশী: দাদাভাই তোমরা এখানে?
অভি: শুধু দাদাভাই নয় তোমার ভালোবাসা অভিও এসেছে। আমার ভবিষ্যৎ বউ তো আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গেছে।
আদি: ঐশী হিমু কোথায়?
ঐশী কিছু না বলে পাশ কাঁটিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় কিন্তু আমি হাত ধরে আঁটকে দেই।
আদি: কোথায় পালাচ্ছ? আজ আর আমার হাত থেকে পালাতে পারবে না হিমু কোথায়?
ঐশী: আমি জানি না দিদিভাইকে আমরা খুঁজে পাইনি।
আদি: তাহলে পালাচ্ছিলে কেন? আমি জানি হিমু তোমাদের সঙ্গেই আছে।
ঐশী কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে রইল।
আদি: প্লীজ ঐশী আমাকে হিমুর কাছে একটিবার নিয়ে চলো।
অভি: ঐশী এভাবে চুপ করে থেকো না এতো বছর দাদাভাই তিলে তিলে কষ্ট পেয়েছে আজও তার বিশ্বাস যে হিমু দিদিভাইকে সে খুঁজে বের করবেই। আজ তোমার দেখা পেয়ে নতুন করে বাঁচার আশা খুঁজে পেয়েছে সেই আশা তুমি নষ্ট করে দিও না। ঐশী প্লীজ বলো দিদিভাই কোথায়।
ঐশী: দিদিভাই আমাদের সঙ্গেই আছে কিন্তু ও কখনও বাড়ি থেকে বের হয় না। নিজেকে ঘরেই আবদ্ধ করে রেখেছে মনে হয় না যে দিদিভাই তোমাদের সঙ্গে দেখা করবে।
আদি: ঐশী হিমুর কাছে আমাকে নিয়ে চলো।
ঐশী: কিন্তু দিদিভাইয়ের বারন আছে।
আদি: ওর সব কষ্ট মুছে আমি দেব একটিবার ওর কাছে আমায় নিয়ে চলো।
এশী: আচ্ছা।
দিদিভাই আগের মতো নেই। আমরা যেদিন দিদিভাইকে পেয়েছি সেদিন থেকে নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে রাখছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া কখনও বাড়ি থেকে বের হয়না কারোর সঙ্গে তেমন কথা বলে না সবসময় মুখ কালো করে রাখে।( হাঁটতে হাঁটতে)
অভি: কোথায় ছিল, এখন কেন এমন করছে তা জানতে চাওনি?
ঐশী: অনেকবার জানতে চেয়েছি কিন্তু আমায় কিছুই বলেনি তবে মা বাবাকে কিছু বলেছে কিনা তা জানি না।
কিছুক্ষন হাঁটার পর আমরা পৌঁছে যাই। বাড়িটা কিছুটা পুরানো তবে দেখে মনে বাড়িটা অনেকটা বড়। ঐশী দরজায় নক করে কয়েক সেকেন্ড পর দরজা খোলা হয়। দরজার অপর প্রান্তে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটির মুখ ওরনা দিয়ে আঁটকানো শুধু চোখ দুটি দেখা যাচ্ছে। তার চোখে জলের ছাপ দেখা যাচ্ছে মনে হচ্ছে চোখ দুটো আমার চিরচেনা।
মেয়েটি ঐশীকে ঘরে টেনে দরজা দেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু আমরা বাহির থেকে ধাক্কা দিতে দরজা আটকাতে ব্যর্থ হলো।
আমরা দরজা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করতেই মেয়েটি দৌঁড়ে চলে গেল আমি এবার নিশ্চিত হই যে এটা হিমু। আমি হিমুর পিছনে ছুঁটে আসি এসে দেখি হিমু জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। আমি ওর পিছনে দাঁড়াতেই আমার দিকে ঘুরে তাকাল। এখন ওর মুখে ওরনা নেই স্পষ্ট হিমুর মুখ দেখা যাচ্ছে।
হিমু: কেন এসেছো এখানে?
ওর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমি ওকে জড়িয়ে ধরি কিন্তু হিমু আমাকে ছাড়ানোর জন্য ব্যর্থ চেষ্টা করছে।
আদি: এভাবে কেন আমার থেকে দূরে সরে আছো? কেন আমায় এতো কষ্ট দিচ্ছো?
হিমু: আদি আমাকে ছাড় বলছি।(চিৎকার করে)
আদি: এতো বছর পর তোকে খুঁজে পেয়েছি আর তোকে আমার থেকে হারাতে দেব না আজই তোকে নিয়ে যাব।(ছেড়ে দিয়ে)
হিমু: কোন অধিকারে?
আদি: আমি তোকে ভালোবাসি তুই আমার বিয়ে করা বউ।
হিমু: কিন্তু আমি যে তোকে ভালোবাসি না আর বিয়েও আমি মানি না।
আদি: তুই মিথ্যে বলছিস।
হিমু: এটাই সত্ত্যি আদি চলে যা এখান থেকে। কিছুক্ষনের মধ্যে বাবা মা এসে পরবে আমি চাই না এসে তোকে এখানে দেখুক।
আদি: আমায় যখন ভালোবাসিস না তাহলে কাঁদছিস কেন?
হিমু: কই নাতো। (চোখের জল মুছে)
আদি: আমার থেকে চোখের জল লুকাচ্ছিস.. আচ্ছা আঙ্কেল আন্টি আসুক আমি সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব। আমরা আবার পাশাপাশি থাকব আর তুই আমার বাসায় আমার বউ হয়ে।
হিমু: আমরা কখনও ফিরব না অর ফিরতেও পারব না প্লীজ আদি এখান থেকে চলে যা।
আদি: তোকে না নিয়ে আমি কোথাও যাব না প্রোয়োজনে আমি তোর সঙ্গে এখানেই থাকব।
হিমু: বললাম তো আমি তোর কাছে চাইলেও ফিরতে পারব না চলে যা এখান থেকে।
আদি: কেন ফিরতে পারবি না তুই?
হিমু: কিছু কিছু মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে তার জন্য তারা স্থীর হয়ে যায়। তাদের জীবনে হাসি সুখ বলে কিছু থাকে না।
আদি: কি হয়েছে?
হিমু: আমি তেমন একজন মানুষ পরিস্থির সঙ্গে মোকাবেলা করে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছি।
আমি: হিমু কি হয়েছে আমাকে বল প্লীজ হিমু আমাকে সব খুলে বল..
হিমু: শুনতে চাস সেদিনের রাতের কথা তাহলে শোন…
এটা নিশ্চয়ই জানিস যে সেদিন রাতে আমাকে জিসান কিডন্যাপ করেছিল। আমায় ৭ দিন একটা পুরোনো বাড়িতে আটকে রাখে আর ৭দিন পর আমাকে ছেড়েও দেয় আমাকে ছাড়ার কারনটা অজানা ছিল। সেই সময়টা ছিল গভীর রাত আশেপাশে কেউ ছিল না তাই কাউকে কল করতে পারিনি। সেখান থেকে আমি কিভাবে ফিরব বুঝতে পারছিলাম না।
রাস্তাটা অচেনা হলেও পা বাড়াই বাসার উদ্দেশ্যে কিন্তু কিন্তু কোন রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করলে আমার বাসা খুঁজে পা সেটাই বুঝতে পারছিলাম না শুধু হাঁটতে থাকি। কিছুক্ষন হাঁটার পরে একটি গাড়ির আলো আমার চোখে বিঁধে।
গাড়িটি দেখে কিছুটা মনে সাহস পাই। চলন্ত নয় গাড়িটি সাইড করা খুব দ্রুত গাড়িটির দিকে এগিয়ে আসি। এগোতেই আবার দু-পা পিছু হাঁটি কারন গাড়িতে কিছু ছেলে বসে আছে। ভয়কে দূরে সরিয়ে গাড়িটির পাশে দাঁড়াই অঃতপর সেখান থেকে একটি ছেলে বলে ওঠে..
“কি মামনি বিয়ের পোশাকে রাস্তায়.. পালানোর ধান্দা আছে নাকি তুমি চাইলে আমি তোমায় নিয়ে পালাতে পারি খুব মজা হবে। (সবাই হাসতে শুরু করল)”
ছেলেগুলোর কথা আমার ঠিক লাগছিল না আমার শরীরের দিকে বার বার বাজে দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল তবুও সাহস করে আমার বাসার অ্যাড্রসে কোন রাস্তা দিয়ে যাব সেটা জানতে চাইলাম কিন্তু তারা না বলে আমায় বাজে মন্তব্য করতে শুরু করল।
তাদের কথা কথা বলার ধরন আর ভাষা জঘন্য মাত্রায় খারাপ ছিল সেখান থেকে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই ছেলেগুলো গাড়ি থেকে নেমে আমার পথ আটকাল অঃতপর সবাই আমার চারপাশ ঘিরে দাঁড়াল। আমি তাদের অনেক অনুরোধ করলাম আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু তারা আমায় ছেড়ে না দিয়ে উল্টে আমায় জোর করে গাড়িতে উঠায় আমি চিৎকার করতেই আমার মুখে কি একটা মেডিসিন দিতেই সঙ্গে সঙ্গে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।
আমার জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে একটা অন্ধকার রুমে আবিস্কার করি।
রুমটা অন্ধকার হলে সূর্যের আলো কিছুটা আসছিল তবে স্পষ্ট দেখা যচ্ছিল না। আমার সামনে থাকা সেই ছেলেগুলোকে দেখে যতটা অবাক হই তার থেকেও বেশি অবাক হই নিজেকে দেখে কারন আমার শরীরে এক টুকরো কাপড়ও ছিল না। আমার পরনে যে বেনারসি ছিল সেটা আমার পাশে পরে ছিল। দ্রুত পরে থাকা বেনারসিটা উঠিয়ে নিজের সঙ্গে পেঁচিয়ে নিলাম।
ছেলেগুলো হাসতে হাসতে স্থান ত্যাগ করল। শরীরের কিছু কিছু স্থানে কামরের আর নখের দাঁগ বসে গেছে। দাঁড়াতে গিয়ে পরে গেলাম কারন শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছিলাম তবুও উঠে এক পা এক পা করে রুমের বাইরে আসলাম।
বাইরে এসে দেখি এটা আমাদের কলেজ রোড তখন কি করব কিছু মাথায় আসছিল না। চোখ দিয়ে জল পরছে নাকি রক্ত পরছে সেটাই বুঝতে পারছিলাম আর এক মূহুর্তের জন্যও বাঁচার আশা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমার সঙ্গে এমন অন্যায় হবে তা কল্পনাতেও ভাবিনি। তবু মনকে শক্ত করে শাড়ি দিয়ে মুখ ঢেকে শ্রুতির বাসায় বাসায় যাই।
শ্রুতি আমাকে দেখে অবাক হলেও খুব খুশি হয় কারন আমি যে তার বেস্ট ফ্রেন্ড। শ্রুতি আমাকে ওর রুমে নিয়ে যাওয়ার পর ওকে সব খুলে বলি। আমার সঙ্গে এমন হওয়া ঘটনা শুনে ও খুব অবাক হয় অঃতপর নিজেকে সামলে মা বাবাকে কল করে শ্রুতির বাসায় ডেকে নেই। বাবা মা সব জেনে খুব ভেঙে পরে তবুও বাবা বলে ওই ছেলেগুলোকে শাস্তি দেবে কিন্তু তার কোনো উপায় ছিল না কারন আমি যে তাদের মুখ স্পষ্ট দেখিনি। সবাই আমাকে অনেক বোঝায় যে নিজেকে শেষ করে নয় নিজেকে নতুন করে বাঁচতে হবে।
চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দেখবেন।)