এক_বাক্স_ভালোবাসা পর্ব ১১+১২

#এক_বাক্স_ভালোবাসা
#পর্ব_১১
#লেখিকা_বন্যা_মৃধা।

ফোন হাতে নিয়ে হিমুকে কল দিলাম..হিমুর ফোনের রিং আমার কানে বেঁজে ওঠে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি রাস্তার সাইডে হিমুর ফোন পরে আছে..

হিমুর ফোন এখানে পরে আছে কেন হিমু কোথায়.. আশেপাশে ওকে অনেক খুঁজলাম কিন্তু ওকে কোথাও পেলাম না। বাসায় এসে বাবা মাকে জিজ্ঞেস করি হিমুর কথা কিন্তু তারা বলে হিমুকে দেখেনি অঃতপর আমরা সবাই মিলে দুই বাসার প্রত্যেকটা স্থানে খুঁজি কিন্তু কোথাও পাইনি। কোথায় যেতে পারে হিমু তাও আবার রাস্তায় ফোন ফেলে। পাড়ায় প্রত্যেক বাসায়, ওর সব ফ্রেন্ডদের বাসায় খোঁজা হয় কিন্তু হিমুকে কোথাও পাওয়া গেল না।

বাবা আর আঙ্কেল হিমুকে খোঁজার জন্য রাস্তায় চেক পোস্ট বসিয়ে দিল কিন্তু হিমুকে পাওয়া গেল না। সারারাত খুঁজেও হিমুকে পাওয়া গেল না। সকালে নিজেকে আবিস্কার করি আমার বিছানায়। চোখ খুলতেই দেখি মা আর হিমুর মা আমার পাশে বসে কাঁদছে আর বাকি সবাই আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।

আদি: আন্টি হিমু ফিরে এসেছে?

আন্টি আমার কথার উত্তর না দিয়ে অনবরত কাঁদতে থাকে।

মা: হিমুকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি তবে তোর বাবা খুব তাড়াতাড়ি হিমুকে খুঁজে তোর কাছে নিয়ে আসবে।

মায়ের উত্তর শুনে বেরিয়ে পরি হিমুকে খৌঁজার উদ্দেশ্যে। প্রতিটা যায়গায় খুঁজলাম কিন্তু হিমুকে কোথাও পেলাম না। আজ বাইকের পিছনে হিমুর থাকার কথা ছিল কিন্তু সেই স্থান আজ ফাঁকা পরে আছে।

কোথায় চলি গেলি আমাকে ছেড়ে আমার কথা কি তোর একবারও মনে পরে না..আদি যে তোকে ছাড়া বড় অসহায় প্লীজ হিমু একবার ফিরে আয়।

এভাবে কেঁটে যায় ৪ থেকে ৫ দিন কিন্তু হিমুর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। প্রতিটি স্থানে শতবার করে খোঁজ করি কিন্তু আমি ব্যার্থ হই।

নিজেকে রুমে আবদ্ধ করে সেই কাঠের বাক্স আর হিমুর ফোন বুকে আঁকড়ে ধরে বসে আসি আজ চোখের জলও পরছে না হিমুর সঙ্গে সঙ্গে আজ যেন আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলছি। হিমুকে এভাবে আমি হারিয়ে ফেলব তা কখনও ভাবিনি। হঠাৎ হিমুর ফোনে মেসেজ বেঁজে ওঠায় আমি থমকে উঠি। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও মেসেজ বক্সে গিয়ে মেসেজটা চেক করি। মেসেজ চেক করতে গিয়ে একটা মেসেজের উপর আমার নজর
পরে। মেসেজটা ওপেন করতেই আমি অবাক হই।

মেসেজে স্পষ্ট লেখা “অভিনন্দন হিমু। তোমার মুখের হাসিটা কিছু মূহুর্তের জন্য”। কল লিস্ট চেক করে দেখি যে নম্বর থেকে মেসেজ করা হয়েছিল সেই নম্বর থেকে ৩ বার কলও করা হয়েছে তবে হিমু রিসিভ করেনি। আমি পুনরায় অচেনা নম্বরে করি কিন্তু নম্বরটি বন্ধ পাই তারমানে হিমু কোথাও চলে যায়নি ওকে কেউ জোর করে নিয়ে গেছে কিন্তু কে নিয়ে যেতে পারে? জিসান এসব করেনি তো?

আর ভাবতে না পেরে নিচে গিয়ে সবাইকে ব্যাপারটা জানাই অঃতপর বাবা, আঙ্কেল আমি জিসানের বাসায় রওনা হই। জিসানের বাসায় পোঁছে কাউকে পেলাম না শুধু কিছু দারোয়ান রয়েছে বাসা পাহারা দেওয়ার জন্য। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করায় তারা জানায় জিসানের পুরো পরিবার কিছুদিন আগে অ্যামেরিকা চলে গেছে তবে এদেশে ফিরে আসবে কবে তা তারা জানে না।

জিসানের চলে যাওয়ায় আমার মনে সন্দেহেরর ইশ্বারা দিচ্ছে কেন যেন মনে হচ্ছে হিমুর হারিয়ে যাওয়ার পিছনে জিসানের হাত রয়েছে। বাবাকে বলে হিমুর ফোনের সেই অচেনা নম্বর ট্রাক করার ব্যবস্থা করি কিন্তু আমি এটাতেও ব্যার্থ হই কারন অচেনা নম্বরটি কোনো ♥ লোডের দোকানের নম্বর। দোকানের আশেপাশে কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকায় কিছুই জানতে পারলাম না।

১০ দিন হয়ে যায় তবুও না হিমুর কোনো খবর মেলে না। নিজেকে আজ অসহায় লাগছে। কোথায় চলে গেলি আমায় একা করে একবারও আমার কথা তোর মনে পরে না.. এই হিমু তোকে ছাড়া আমি এক মূহুর্তও ভালো থাকতে পারব না প্লীজ একটিবার আমার কাছে ফিরে আয় আর কখনও তোকে আমার হাত ছাড়া করব না।

হিমুর সাথে কাঁটানো মূহুর্ত আর ওর দেওয়া টি-শার্টটি আমার কাছে পরে আছে কিন্তু হিমু নেই। এক বাক্স ভালোবাসার শুধু বাক্সটাই পরে আছে কিন্তু হিমু নেই।
আরো দুদিন পর নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিস্কার করি। চোখ মেলে দেখি আমার পাশে বাবা মা আর অভি দাঁড়িয়ে আছে..

আদি: মা হিমুকে পাওয়া গেছে?

মা: আদি এখনও হিমুকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। (কান্নাজরিত কন্ঠে)

আদি: মা হিমু কি সত্ত্যি আমার থেকে চলে গেছে, ওকি আমার কাছে আর কখনও ফিরবে না?

মা উত্তর না দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল।

আদি: কেঁদো মা হিমু ফিরে আসবে ওকে ফিরে আসতেই হবে। ও একদিন আমার কাছে ফিরে আসবেই এটা আমার বিশ্বাস। আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ওর জন্য অপেক্ষা করব।

হসপিটাল থেকে বাসায় এসে জানতে পারি হিমুর পরিবার বাসা ছেড়ে চলে গেছে মাকে জিজ্ঞেস করায় বলল আমি যেদিন অসুস্থ হয়ে পরি আমায় নিয়ে হসপিটালে যাওয়ার পর থেকে তারাও উধাও হয়ে যাও।
আঙ্কেল আন্টির এভাবে চলে যাওয়া আমি মেনে নিতে পারছি না। তাদের নম্বরে কল করে বন্ধ পাই অঃতপর অভির কাছে জানতে পারি হিমুর ছোট বোনের নম্বরও সেদিন থেকে অফ।

হিমু ফিরে আসবে এই বিশ্বাস নিয়ে আবার পথ চলতে শুরু করি। বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেই যে আমি কলেজ যাব।

আজ কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামতেই বাবা মায়ের মুখে হাসি ফিরে এলো। নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হই তবে আজকে থেকে বাইকে নয় রিক্সায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই কারন বাইকের পিছনে হিমুর থাকার কথা ছিল। আজ যখন হিমু আমার পাশে নেই তাই বাইককে নিজের থেকে দূরে রাখলাম। কলেজে প্রবেশ করতেই ফ্রেন্ডরা আমার কাছে ছুটে এলো একে একে সবাই হিমুর ব্যাপারে জানতে চাইল কিন্তু আমি ওদের কোনো উত্তর না দিয়ে ক্লাসে চলে এলাম। ক্লাসরুমে প্রবেশ করতেই হিমুর স্মৃতি আমায় আঁকড়ে ধরল।

নিজেকে সামলে ক্লাসে মনোযোগ দেই। ক্লাসের শেষে হিমুর বেস্ট ফ্রেন্ড শ্রুতিকে দেখতে না পেয়ে আমার ফ্রেন্ডেদের কাছে শ্রুতির ব্যাপারে জানতে প্রশ্ন করি। ওরা উত্তরে বলে কিছুদিন যাবৎ শ্রুতিও কলেজে আসছে না। তাই বাসায় না ফিরে শ্রুতির বাসায় চলে যাই সেখানে পৌঁছে শ্রুতির থেকে জানতে পারি ওর নাকি কিছুদিন পরে বিয়ে তাই ও কলেজে আসছে এক রাশ কষ্ট নিয়ে বাসায় চলে আসি।

হিমুর স্মৃতি নিয়ে পথ চলতে শুরু করি প্রতিনিয়ত জিসানের বাসায় গিয়ে খবর নিতাম তারা এখনও ফিরেছে কিনা কিন্তু প্রতিবার আমি ব্যর্থ হই। আঙ্কেল আন্টিকে অনেক খুঁজেছি তাদের খোঁজ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

রোজ বিকেলে হিমুর পছন্দের যায়গায় গিয়ে হিমুকে অনুভব করতাম আমার বিশ্বাস আছে যে হিমুকে আমি একদিন ঠিক খুঁজে বের করব সেদিন আর আমাদের মধ্যে কোনো দুরত্ব থাকবে না আর কোনো মূল্যে আমার থেকে ওকে হারিয়ে যেতে দেব না। মাঝে মাঝে রাত দিন আমার রাস্তায়ই কেঁটে যায়।
কিছুদিন পরে আমার এক্সাম চলে আসে তাই পড়াশুনায় মনোযোগ বসিয়ে এক্সাম কমপ্লিট করি।

হিমুর স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে কেঁটে যায় ৭ বছর এদিকে আমার পড়াশুনাও কমপ্লিট হয় পাশাপাশি একটা জবও করছি তবে আজও সবাইকে খুঁজে বেড়াই আজও হিমুর জন্য রাস্তায় ওয়েট করি, ওর বার্ডেতে একা একা কেক কাঁটি। ওর প্রতিটি বার্ডের গিফট যত্ন সহকারে রেখে দেই। নিজেকে এটা বলে সাত্বনা দেই যে হিমু পাশে নেই তাতে কি হয়েছে হিমুর স্মৃতিগুলো তো আমার কাছে আছে আমি নাহয় ওর স্মৃতিগুলোকে নিয়ে ওর জন্য ওয়েট করব।

প্রায়ই কলেজের ক্যাম্পাসে গিয়ে একা একা বসে থাকতাম কিন্তু কিছুদিন যাবৎ কলেজে যাওয়া হয়না তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ কলেজে যাব। কলেজে পৌঁছে আমাদের সেই ক্লাসরুমে বসে হিমুর সঙ্গে কাঁটানো খুনসুটি মূহুর্তগুলো আমায় হিমুর কথা আরো বেশি মনে করিয়ে দেয়। প্রায় ২ ঘন্টা পর বাসায় ফেরার জন্য আমি কলেজ প্রস্থান করি।

বাসায় ফিরে দেখি বাবা মা খুশিতে মেতে উঠেছে কারনটা অজানা আগ বাড়িয়ে কারনটা জানতে চাইলাম না। রাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি এটা নতুন কিছু নয় হিমু চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাই। যে বারন করত সেই আমায় একা রেখে চলে গেছে তাই আর সিগারেটা বন্ধ করিনি যেদিন ও নিজে এসে বন্ধ করতে বলবে একমাত্র সেদিনই বন্ধ হবে এর আগে নয়।

আজ হিমুকে বড্ড বেশি মনে পরছে। মুখ দিয়ে যতটা সিগারেটের ধোঁয়া বের হচ্ছে ততটাই চোখ বেয়ে জল পরছে। নিজেকে সামলে সিগারেট ফেলে দিয়ে ঘুমাতে চলে আসি হিমুর স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে পরি।

সকালে মায়ের ডাকে আমার ঘুম ভাঙে। মায়ের জোরাজোরিতে দ্রুত ফ্রেস হয়ে রুম প্রস্থান করি। নিচে নামতেই দেখি বাবা মায়ের সঙ্গে কিছু লোক বসে আছে হয়তো কোনো রিলেটিভ হবে তাই মাথা না ঘামিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসি। অঃতপর একটা মহিলা বলে ওঠে…

অচেনা মহিলাটি: ছেলে আমাদের পছন্দ হয়েছে।
#এক_বাক্স_ভালোবাসা
#পর্ব_১২
#লেখিকা_বন্যা_মৃধা।

অচেনা মহিলাটি: ছেলে আমাদের পছন্দ হয়েছে।

মহিলাটির কথা শুনে আমি বাবা মায়ের দিকে তাকাই কিন্তু তারা আমায় কেয়ার না করে তাদের সঙ্গে কথা বলেই যাচ্ছে। মা আমার হাত ধরে আছে না পরছি সবার সামনে থেকে উঠে চলে যেতে আর না পারছি কিছু বলতে। হয়তো আমি সবার সামনে রিয়াক্ট করতে পারি কিন্তু তাতে বাবার সম্মান নষ্ট হবে তাই কিছু না বলে সবার সঙ্গে বসে রইলাম। কিছুক্ষন পর মা আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল..

মা: ও ইশিতা.. অনেক সুন্দর এবং খুব ভালো মেয়ে আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে।

আমি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি সবাই মিলে আমার সঙ্গে এমন করছে কেন..

মা: আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? ঐশীকে দেখ কত ভদ্র মেয়ে আমার আদির সঙ্গে অনেক ভালো মানাবে।

মায়ের জোরাজোরিতে অচেনা মেয়েটির দিকে তাকাই একবার তাকাতেই চোখ অন্যদিকে নিক্ষেপ করি। আমার চোখ আজও শুধু হিমুকে দেখতে চায় হিমুর স্থানে অন্য কোনো মেয়ে থাকবে এটা আমি কখনও ভাবতে পারব না। সবার সঙ্গে বসে ছিলাম কাউকে কিছু বলতে পারছিলাম না। তারা আরো কিছুক্ষন বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলে চলে যায় অঃতপর মায়ের দেওয়া আমার মুখের বাঁধন খুলে ফেলি…

আদি: কি হচ্ছিল এসব? আমাকে না জানিয়ে আমার সঙ্গে এত বড় অন্যায় কেন করা হচ্ছে?

মা: আদি আমরা তোর ভালোর জন্যই এসব করছি আর কতদিন হিমুর জন্য ওয়েট করবি?

আদি: আমি ওর জন্য শেষ নিশ্বাস অবধি ওয়েট করব কারন আমি ওকে সত্ত্যি ভালোবাসি আর আমার বিশ্বাস হিমু একদিন আমার কাছে ফিরে আসবে।

মা: হিমু বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তা আমরা কেউ জানি না ওর জন্য নিজেকে কেন কষ্ট দিবি?

আদি: হিমু অবশ্যই বেঁচে আছে আমার জন্য বেঁচে আছে ওকে আমার জন্য বেঁচে থাকতেই হবে।

মা: আমরা তোর মা বাবা বছরের পর বছর তোর কষ্ট দেখে যাচ্ছি কিন্তু আর দেখতে চাই না দিন বদলাচ্ছে কিন্তু এখনও নিজেকে বদলাসনি। অন্য মায়েদের মতো আমি আমার ছেলের মুখে হাসি দেখতে চাই।

আদি: হাসি.. আমার হাসি খুশি তো হিমুকে ঘিরে।(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)

মা: আমি তোকে এভাবে আর দেখতে পারব না তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইসিতার সঙ্গে তোর বিয়ের ডেট ফিক্সড করব।

আদি: হিমুকে ছাড়া অন্য কাউকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পার না।

সেখানে আর এক সেকেন্ড না দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরি অফিসের উদ্দেশ্যে। অফিসের কাজের শেষের দিকে আমার ফ্রেন্ড ইসানের কল আসে..

ইসান: আদি তোকে একটা খবর দেওয়ার আছে।

আদি: কি বল।

ইসান: জিসান আজ দেশে ফিরে এসেছে।

আদি: কি??

ইসান: হ্যাঁ আদি আমি সত্ত্যি বলছি জিসান দেশে আসছে আমি এখন জিসানের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

আদি: তুই দাঁড়া আমি এখুনি আসছি।

খুব দ্রুত গাড়ি নিয়ে জিসানের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই পৌঁছে দেখি জিসানের বাসার সামনে ইসান দাঁড়িয়ে অঃতপর ইসানকে নিয়ে জিসানের বাসায় প্রবেশ করি। বাসায় প্রবেশ করতেই দেখি জিসান সোফায় বসে আছে। এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে ওর দিকে এগিয়ে যাই আমাদের দেখে বলে..

জিসান: আদি ইসান তোরা?

আদি: জিসান হিমু কোথায়?

জিসান: মানে?

আদি: হিমুকে কোথায় রেখেছিস?

জিসান: পাগলের মতো কি সব বকছিস, আমি হিমুকে কোথায় রাখব..

আদি: একদম ন্যাকামি করবি না। আমি জানি জিসান সেদিন রাস্তা থেকে তুই হিমুকে জোর করে নিয়ে গেছিস।(জিসানের শার্টের কলার ধরে)

জিসান: আদি তুই হয়তো ভুলে গিয়েছিস যে এটা আমার বাসা চাইলে আমি তোকে পুলিশে দিতে পারি।

আদি: জিসান প্লীজ হিমুকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে তার বিনিময়ে তুই যা বলবি আমি তাই শুনব তবু আমার হিমুকে ফিরিয়ে দে।(কলার ছেড়ে হাটু গেড়ে)

জিসান: আমি সত্ত্যি বলছি হিমুর ব্যাপারে কিছু জানিনা তবে আমি হিমুকে…

জিসান কথাটা ক্লিয়ার করে না বলেই থেমে গেল।

ইসান: প্লীজ জিসান থেমে থাকিস না এতো বছর আদি নিজেকে একটু একটু করে শেষ করে দিচ্ছিল শুধু বেঁচে আছে হিমু ফিরে আসবে সেই আশা নিয়ে।

জিসান: হ্যাঁ আদি সেদিন রাতে আমি হিমুকে কিডন্যাপ করেছিলাম।

আদি: জিসান আমার হিমু কোথায়?

জিসান: হিমুকে কিডন্যাপ করে আমাদের পুরোনো বাসায় ৭দিন বেঁধে রেখেছিলাম। একটু একটু করে অনেক বুঝিয়েছি হিমুকে যে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি কিন্তু হিমু সবসময় একটা কথাই বলতো ও আমাকে নয় তোকে ভালোবাসে। হিমুকে কিডন্যাপ করার ঘটনা বাবা জেনে ফেলে বাবার কথায় আমি ওকে ছেড়ে দেই অঃতপর আমি আমার ভালোবাসার থেকে দূর চলে যাই তবে আমি হিমুর কোনো ক্ষতি করিনি। আদি আমি ভেবেছিলাম আমার ভালোবাসা ও বুঝবে কিন্তু ও বুঝেনি তাই আর জোর করিনি। হয়তো আমার রাগ তোর উপর ছিল তবে আমার ভালোবাসার উপর নয়।

আদি: তুই মিথ্যে বলছিস। এই জিসান একটিবার বলনা হিমুকে কোথায় রেখেছিস!

জিসানের বাবা: আদি জিসান সত্ত্যি কথা বলছে। আমি ওকে বলেছিলাম হিমুকে ফিরিয়ে দিতে তাই হিমুকে ছেড়ে দেয়।

আদি: কিন্তু আঙ্কেল হিমু তো আজও ফিরে আসেনি আমরা আজও খুঁজে পাইনি ওকে।

জিসান: কি হিমু ফিরে যায়নি, তাহলে ও কোথায় গিয়েছে?

আদি: জানি না জিসান ও আমাকে একা করে কোথায় চলে গিয়েছে। আজও হিমুকে খুঁজি কিন্তু ওর দেখা এখনও আমি পাইনি।

আর কিছু না বলে আমি আর ইসান জিসানের বাসা থেকে প্রস্থান করি। ইসান চলে যায় তার বাসায় আর আমি আমার বাসায়। রুমে এসে হিমুর দেওয়া টি-শার্টটি হাতে নিয়ে বসে আছি। বিকেল গড়িয়ে রাত হয় তবু হিমুকে নিয়ে আমার ভাবনার শেষ হয়না। হিমুকে ফিরে পাওয়ার একটাই পথ ছিল সেটা হল জিসান কিন্তু জিসানের থেকে সব শুনে সেটাও আজ হারিয়ে ফেললাম।

এই হিমু কেন এভাবে আমার থেকে হারিয়ে গেলি.. আমার জন্য কি তোর একটুও কষ্ট হয় না? কবে আমার কাছে ফিরে আসবি, কবে আমার সব কষ্ট তোর ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিবি? দেখ আদি আজও তোর জন্য অপেক্ষা করছে প্লীজ এক বার আমার কাছে ফিরে আয়।

অভি: দাদাভাই তুমি আজও হিমু দিদিয়াকে জন্য কাঁদছো?

আদি: কই না তো চোখে কি যেন পরেছে। (চোখ মুছে)

অভি: জানো দাদাভাই আমিও কাঁদি আমার দ্বিতীয় ভালোবাসার জন্য কিন্তু পাই না। আচ্ছা দাদাভাই তুমি হিমু দিদিয়াকে অনেক ভালোবাসতে তাইনা?

আদি: ভালোবাসতাম কিনা জানি না তবে আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওকে ভালোবাসব।

অভি: আমিও তোমাদের মতো এমন লায়লা মজনুর প্রেম শিখতে চাই। আমায় একটু শেখাও তো আমিও আমার লায়নাকে খুঁজে হাত ধরে ঘুরতে চাই।

আদি: হয়েছে আর তোকে ন্যাকামি করতে হবে না কত টাকা লাগবে সেটা বল।

অভি: আমার দাদাভাই এতোগুলো ভালো। না বলতেই সব বুঝে ফেলে মাত্র ৫ হাজার টাকা লাগবে কাল ফ্রেন্ডদের সঙ্গে ঘুরতে যাব।

আদি: আচ্ছা পেয়ে যাবি চল ডিনার করে আসি।

আমি আর অভি ডিনার করার জন্য নিচে নামতেই দেখি বাবা মা দুজনেই খাবার টেবিলে বসে আছে তাই আমরাও খাবার টেবিলে বসে পরি অঃতপর সবাই খেতে শুরু করি।

মা: আদি আমি আর তোর বাবা বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছি।

আদি: কি? আমার পারমিশন না নিয়ে বিয়ের ডেট ফিক্সড করে দিলে? (টেবিল থেকে উঠে)

মা: আমরা তোর মা বাবা তোর কিসে ভালো হবে আর কিসে খারাপ হবে সেটা আমরাই দেখব।

আদি: বাবা তুমি মাকে একটু বোঝাও এ বিয়ে আমি করতে পারব না কারন আমি হিমুকে ভালোবাসি ওকে ছাড়া আর অন্য কাউকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারব।

বাবা: আদি তোর মা এসব তোর খারাপের জন্য করছে না।

আদা: বাবা তুমিও এমন বলতে পারলে?

মা: হিমুর জন্য আর কত বছর অপেক্ষা করবি?

আদি: যতদিন এই আদি বেঁচে থাকবে ঠিক ততদিন আমি ওর জন্য ওয়েট করব। আমার বিয়ে নিয়ে যদি আর কখনও বাসায় কোনো কথা হয় তাহলে হয়তো আর কোনোদিন আমার মুখটাই দেখতে পারবে আর এটাই আমার শেষ সিদ্ধান্ত।

অভি: দাদাভাই শোনো.. না খেয়ে চলে যেয়ো না।
মা কেন তুমি এসব করছো দাদাভাই কতটা কষ্ট পাচ্ছে তা কি তুমি বুঝো না? এসবের জন্য দাদাভাই আমাদের থেকে দূরে চলে যাক সেটা চাও?
দাদাভাই যদি এবাসা থেকে চলে যায় তাহলে আমিও চলে যাব।

(বাসা থেকে বেরিয়ে সব ফ্রেন্ডদের কল করলাম সেই রাস্তায় মোড়ে আসতে। একটু পরে এক এক করে সবাই এলো অঃতপর সবাই মিলে আড্ডা দিতে শুরু করি। আমাদের সবাইকে সঙ্গ দিতে রয়েছে সবার হাতে একটা একটা সিগারেট। নিজেদের মতো সবাই সিগারেট টেনে যাচ্ছে আমি সবার থেকে কম নয় বরং অন্যদের থেকে কিছুটা এগিয়ে আছি। কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর অন্যরা চলে যায় আমি আর ইসান রাস্তা দিয়ে এক পা এক পা এগোতে থাকি। অঃতপর ইসান বলে ওঠে…

ইসান: হঠাৎ করে বাবা বোনের বিয়ে ঠিক করছে কাল গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে তুইও আমার সঙ্গে চল।

আদি: না ইসান আমি এই শহর ছেড়ে কোথাও যেতে পারব না এই শহরে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

ইসান: আদি আমরা দুদিন থেকে চলে আসব। গ্রামে গেলে তোর মনটাও ভালো হবে।

আদি: আমার মন ভালো হওয়ার কারনটা তুই জানিস।

ইসান: মা তোকে নিয়ে যেতে বলেছে তুই না গেলে আমায় বাড়িতে ঢুকতে দেবে না প্লীজ চল না নাহলে আমি গ্রাম ছাড়া হয়ে যাব।(পা জড়িয়ে ধরে)

আদি: আরে কি করছিস এসব পা ছাড়।

ইসান: আগে বল কাল আমার সঙ্গে গ্রামে যাবি হ্যাঁ না বললে কোনোদিন ছাড়ব না।

আদি: আচ্ছা যাব।

চলবে..

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here