“এখনো ভালোবাসি”
|৩৫|
দরজা খুলে কেউ রুমে প্রবেশ করলো।মাত্র ভোর হতে শুরু হয়েছে।তাই জানালার পর্দার আড়ালে কিছু আলো উকি দিয়ে রুমটার অন্ধকারকে কিছুটা হলেও দূর করার চেষ্টা করছে।আবছা আলোয় খুব সাবধানে আয়ন রুমে ডুকেই নিজের কোটটা খুলে বিছানার দিকে তাকালো।কিন্তু বিছানা খালি দেখে আয়নের ভেতরটা কেঁপে উঠলো।আয়নের মনে সর্বপ্রথম যে প্রশ্ন আসলো,”প্রিয়ু কোথায়।”
চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখার সময় রুমের এক কর্নারে কাউকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেলো।আয়ন দৌড়ে সামনে গিয়ে আরো একবার চমকে গেলো, কারণ মাটিতে পড়ে থাকা মানুষটি আর কেউ না, প্রিয়ু।আয়ন একটু খেয়াল করে দেখলো ও মাটিতে পড়ে নেই।বরং নামাযে সেজদা থাকায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।আয়ন খনিকটা বিস্মিত প্রিয়ুর এই অবস্থা দেখে।
–“তৎক্ষনিক প্রিয়ুকে কোলে তুলে,বিছানায় শুয়ে দিলো।পাশের টেবিলে রাখা পানির গ্লাশটি থেকে কিছু পানি নিয়ে প্রিয়ুর মুখে ছিটিয়ে দিলো।”
‘মুখে আচানক পানির ছিটায় প্রিয়ুর জ্ঞান ফিরে আসলো।চোখ পিটপিট করে খুলে সামনে তাকাতেই,নিজের সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে প্রিয়ু প্রথমে বিশ্বাস করলো না।নিজের হ্যালুসিনেট মনে করে,চুপ হয়ে পাশ ঘুড়ে শুয়ে পড়লো।কারণ প্রিয়ু জানে আয়ন আসে নি।এটা শুধু মাত্র ওর কল্পনা।নিশ্চয়ই আয়নকে স্পর্শ করতে গেলেই আয়ন ধোঁয়াশার মতো উড়ে যাবে।তাই আয়নকে হারানোর ভয়ে প্রিয়ু আয়নকে ধরবেই না।কল্পনাই হোক তবুও তো কিছু সময়ের জন্য মানুষটা ওর সামনে তো আছে।থাকুক না।’
–“প্রিয়ুর এমন আচরণ আয়ন একদমই আশা করেনি।ভেবেছিলো,জ্ঞান ফিরলেই আগে প্রিয়ুকে কিছু বকাঝকা করবে।নিজের এই কি হাল করেছে এই মেয়ে।এই মেয়েটি নাকি আবার পেগনেন্ট।একে সামলাতেই আমার ধম যায় আসে।আর এখন আমাকে জ্বালানোর জন্য আরো একটাকে নিয়ে আসতাছে।সব ওর প্লানিং। অল্প বয়সে মনে হয় আমাকে পাগলখানাই যেতে হবে অবশেষে।আয়ন নিজের মনেই কিছু গল্প গুঁজছে।প্রিয়ুকে কিছু বলতে নিবে,তার আগেই প্রিয়ু নিজেই বলা শুরু করে দিলো।”
“তুমি অনেক খারাপ আয়নদা,অনেক অনেক খারাপ”।প্রিয়ু নিরবে কেঁদে গেলো,ওর চোখের জলটি আয়ন দেখতে পেলো না।
–“আয়ন ব্যাভাচেকা খেলো,প্রিয়ুর মুখে আবার আয়নদা শুনে!আবার আয়নদা বলার মানে কি।দুদিন পর আমার বাচ্চার মা হবে যে,তার নাকি এখনো আমি আয়নদা লাগি।উফঃ ফাজিল মেয়ে একটা,মন তো চাইছে থাপ্পাড়াইয়া গাল দুটো লাল করে ফেলি।শুধু আমার সন্তান ওর মাঝে আছে বলে এই যাত্রায় বেঁচে গেলো,না হলে আজ সত্যিই এই কাজটি করেই দিতাম।এই মেয়ে আমাকে জ্বালাবার কিছু বাদ দেয়না।কাল আমার সন্তান হলে,নিশ্চিত এই মেয়ে আমারই সন্তানকে শিখিয়ে দিবে আমাকে মামা বলতে।শয়তান মেয়ে একটা।এসব ভাবতেই,হঠাৎ প্রিয়ুর ফোঁপানিতে আয়নের কপাল কুঁচকে গেলো।আয়ন বুঝতে পাড়লো না কি হয়েছে।আমি তো কথা গুলো মনে মনে বলেছি,তাহলে ও কাঁদছে কেনো।শুনেছে নিই কিছু এই মেয়ে।এমনেই তো ছিঁচকাঁদুনী,শুনলে তো বন্যা বয়ে যাবে আমার রুমে।সন্দিহীন চোখে তাকালো প্রিয়ুর দিকে।”
-কিন্তু প্রিয়ু এখনো আয়নের দিকে একবারও তাকায়নি আর,পাশ ঘুড়ে শুইয়ে থেকেই,আয়নের কাছেই আয়নের অভিযোগ নিয়ে বসলো,”তুমি একদম খারাপ,খুব বাজে লোক।আমাকে কষ্ট দিতে তোমার খুব মজা লাগে তাই না।তাহলে এসে দেখো আমি অনেক কষ্টে আছি।আমি বারবার চলে গিয়ে তোমাকে কষ্ট দিতাম বলে,তার প্রতিশোধ নিচ্ছো তাইনা।তাইতো নিজেও চলে গেলে আমাকে ফেলে।দেখতে চাইছো আমি কষ্ট পাই কিনা।প্রিয়ু মুখ ঘুড়িয়ে আয়নের দিকে অশ্রুনয়নে তাকিয়ে বললো,”দেখো আমি অনেক কষ্ট পাচ্ছি।আমি আর কখনো কোথাও যাবোনা তোমাকে ছেড়ে।প্রমিজ।তবুও ফিরে আসো।”
“আয়ন বিস্মিত হয়ে প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কি হয়েছে।আর ফিরে আসো মানে কি?আমি কোথায় গেলাম।আর আমি তো ওর সামনেই বসে আছি।পাগল নি।আগে তো হাফ মেন্টেল ছিলো,এখন মনে হয় পুরো মেন্টেল হয়ে গেছে।আল্লাহ আমার সন্তানগুলোকে রক্ষা করো।আয়ন মনে মনে দোয়া চেয়ে নিলো একবার।”
–“আমার আর ভালো লাগছে না আয়নদা।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।আমি বাঁচবো না তোমাকে ছাড়া।বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়।এখন তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না,কিছুতেই চলবে না।প্লিজ ফিরে আসো।আমি তোমার সব কথা শুনবো।কখনো তোমার অবাধ্য হবো না।তোমাকে অনেক ভালোবাসা দিবো।প্লিজ ফিরে আসো।এসব বলেই প্রিয়ু ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো।
সত্যিতো!কিছুক্ষণ পর আবার মত পাল্টাবি নাতো।হঠাৎ পরিচিত কন্ঠ শুনে প্রিয়ু শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।ওর বিশ্বাস হচ্ছে না সত্যিই কি আয়ন ওর সামনে,নাকি ও ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে এখনো।
–“আয়নের কোনও রিয়েকশন নেই,ও সিউর প্রিয়ু আজ মাতাল।তবে কিছু না খেয়েই।আয়ন নিরলস ভঙ্গিতে শার্টের টাইটা খুলতে খুলতে প্রিয়ুরকে জিঙ্গেস করছে।কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো।আমি কি আগের থেকে আরো বেশি হ্যান্ডসাম হয়ে গিয়েছি।নাকি আমার রুপ ঝলঝল করছে।”
“ত তু মি সত্যি আ আমার সামনে বসে আছো।”
‘-আয়নের চেহারায় এবার ভীষণ বিরক্ত ফুটে উঠেছে।কি সব আবল তাবল বকছিস।ঠিক আছিস তো।আর সত্যি কি?এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস মনে হয় ভূত দেখতে পেয়েছিস।এমনেই সারারাত জেগে মাথাটা খারাপ,আরো খারাপ করিস না তো প্রিয়ু।তুই বরং ঘুমা,তোর এখন ঘুমের খুব প্রয়োজন বলেই আয়ন উঠে দাঁড়ালো।প্রিয়ুর সাথে তর্ক করার সত্যিই ওর এনার্জি নেই এখন।তাই নিজের শার্টটা খুলে আলমারি থেকে কাপড় বের করে ঘুড়তে নিলেই আচানক প্রিয়ু এসে ওকে জড়িয়ে ধরে।আকস্মিক ঘটনায় আয়ন সামলাতে না পেড়ে দুকদম পিছে আলমারির সাথে লেগে যায়।হঠাৎ প্রিয়ুর কান্নার শব্দ ওর কানে আসে।আয়ন এবার ভয় পেয়ে যায়।ব্যস্ত হয়ে প্রিয়ুকে সামলাতে লাগে।কি হয়েছে প্রিয়ু এমন করছিস কেনো।আয়নের মনের সংশয়,বেবির কোনও সমস্যা হয়নি তো।তাই প্রিয়ুকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে জিঙ্গেস করে পেট ব্যাথা করছে নাতো,শরীর খারাপ লাগছে নাতো।
প্রিয়ু মাথা দুপাশে নেড়ে আয়নকে আবার জড়িয়ে ধরে।আয়ন এবার একটু স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে প্রিয়ুকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে।কি হয়েছে সোনা,এমন কেনো করছিস।’
–“তুমি একটা বাজে লোক।”
আয়নও হেসে হা জবাব দেয়।হুম,আমি জানিতো,আমি একটা বাজে লোক,খারাপ লোক।এ আর নতুন কি।আমি সব জানি।কিন্তু এই বাজে লোকটি আবার কি করছে যার জন্য আমার বউটা কাঁদতে কাঁদতে সমুদ্র বানিয়ে ফেলছে।
–প্রিয়ুর এবার মেঝাজ বিগড়ে গেলো,আয়ন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আয়নের খোলা বুকে এলোপাথাড়ি কিল মারতে লাগলো,অসভ্য লোক,কাল সারারাত কোথায় গিয়ে মুখ কালা করেছো।সারারাত কতো টেনশনে ছিলাম জানো।বাড়ীর সবাই অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তোমার হদিস পায়নি কেনো বলো।
আয়ন প্রিয়ুকে থামাতে ওর হাত দুটো ধরে ফেলে,এবার বুঝতে পারছে ম্যাডাম ওর এমন পাগলামো কেনো করছে।আসলেই বড় ভুল হয়ে গেছে।একবার ফোন করে জানানো উচিৎ ছিলো।আয়ন নিজেই এখন প্রিয়ুকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলো।আম সরি সোনা।সত্যি খেয়াল ছিলো না।অনেক ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম।আর তার সাথে এতো বৃষ্টি।তাছাড়া আমি ভাবতেই পারিনি আমার জন্য যে তুই এতো টেনশন করবি।
–আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,আমার মনে হলো তোমার দোয়া কবুল হয়ে গিয়েছে।প্লিজ আর এমন করো না।আমি টেনশনে মরে যাবো।
‘-আয়নের এখন মনে পড়লো,প্রিয়ু এতোটা কেনো ঘাবড়ে গিয়েছে।আয়ন প্রিয়ুকে বিছানায় বসিয়ে ওর সামনে হাটু গেড়ে বসলো,”একটা কথা মনে রাখবি প্রিয়ু হায়াত মরণ সব উপরওয়ালার হাতে।তোর আর আমার সামান্য মুখের কথায় কিছুই হবে না।যতোদিন আমার হায়াত থাকবে,আমাকে কেউ তোর থেকে আলাদা করতে পারবে না।তাই এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা করা একদম বাদদিয়ে রিলেক্স।এখন এসব চিন্তা এমনেও তোর জন্য ঠিক না,তাই আজকের পর থেকে এমন আর করবি না ঠিক আছে।
–“এমন ভাবে বলছো মনে হয়,আমি কতো অসুস্থ।আমি একদম ঠিক আছি।তুমি ফ্রেস হয়ে আসো।
আয়ন মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো আবার আলমারির সামনে গিয়ে প্রিয়ুর রিপোর্টটা বের করলো।আয়নের মতে এটাই উপযুক্ত সময় প্রিয়ুকে সব বলার।দেরি করা একদম উচিত হবে না।এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।আয়ন ফাইল হাতে,প্রিয়ুর সামনে দাঁড়ালো।প্রিয়ুর মুখের দিকে একবার ভালো করে তাকালো,মুখটা একদম শুকিয়ে আছে।নিশ্চয়ই কিছু খাওয়া হয়নি।আয়ন প্রিয়ুর হাতে ফাইলটা ধরিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো।
“–প্রিয়ু দেখলো,এটা সেদিনের টেস্টের রিপোর্ট।প্রিয়ু ভয় পেয়ে গেলো,ওর আবার কোনও রোগশোক হয়নি তো।তাই আয়ন নিজের মুখে বলতে পাড়ছে না বলে রিপোর্ট ধরিয়ে দিয়েছে।কাপাকাপা হাতে ফাইলটা খুলতেই,সামনে পেগনেন্সির রিপোর্ট টা চোখে পড়লো প্রথমে।প্রিয়ু অবাক হয়ে রিপোর্ট টির দিকে তাকিয়ে থাকে।”
আয়ন ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে প্রিয়ু গম্ভীর মুখ করে রিপোর্ট টির তাকিয়ে আছে।মুখের ভঙ্গিমা দেখে বুঝা বড় দায় খুশী হয়েছে কিনা,নারায।আয়ন দীর্গ একটা শ্বাস ছেড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো,ও ভেবেই নিয়েছে প্রিয়ু হয়তো এই বাচ্চার আগমণে খুশি না।মনটা কেনো জানি ভারী হয়ে গেলো।স্বপ্নগুলো আবার ভেঙ্গে যাবে নাতো।
………………….
তিতির বিধ্বস্ত হয়ে শুয়ে আছে,এখনো ওর হুস নেই।তিতিরকে কন্ট্রোল করতে গিয়ে দিনেশকে সারারাত জাগতে হয়েছে।ক্লান্ত তিতির এখন চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে।দিনেশ বিছানা ছেড়ে বালকানিতে এসে একটা সিগেরেট ধরালো।টেনশনে ওর আর ঘুম হবে না।কারণ দিনেশ জানে,এই ঘুমপড়ী এখন শান্ত হয়ে আছে,ঘুম থেকে উঠে না জানি কি এলাহি কান্ড করে।ঘূর্ণি ঝড় শুরু করে দিবে।
–সিগেরেট এর ধোঁয়ার সাথে নিজের টেনশন গুলো উড়িয়ে দিতে চায় দিনেশ এই মুহুর্তে।কিন্তু এতোই কি সহয সব কিছু।হলেতো জীবন কতো সহয হয়ে যেতো।দিনেশের কালরাতের কথা মনে পড়তেই মুখে একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে।ও কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি তিতিরকে এতো কাছে পাবে।এখন যখন পেয়েই গেছি ছাড়ার তো প্রশ্নই আসেনা।তিতি চাইলেও না।দিনেশ বুঝতে পারছে,যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি,কিন্তু হয়ে গেছে।মানুষ বরারবই তার প্রিয় মানুষগুলোর প্রতি দূর্বল থাকে।আর মাঝেমাঝে এই দূর্বলতা এতো বেশি গ্রাস করে যে ঠিক বেঠিক চিন্তা করতেও সায় দেয়না মন।দিনেশের সাথেও তেমন ঘটেছে।তিতিরকে পাওয়ার অকুলতায় একটা ভুল করে বসে।কিন্তু এই ভুলের মাশুল দিতে হবে এখন ওকে।জীবনের এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।নিজের জীবনের এই সিদ্ধান্তটি জানাবার জন্য ফোন করলো কলকাতায় থাকা ওর বড় ভাই অরুপদার কাছে।পরিবার বলতে তো,শুধু এই একজন লোকই আছে দিনেশের।মা বাবা তো বছর পাঁচেক আগেই গত হয়েছেন।তাই নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে ফেললো ভাইয়ের কাছে।
-“অরুপ দিনেশ আর তিতিরের ব্যাপারটা জানতো।নিজের এই ভাইটিকে তিতির নামের এই মেয়েটির জন্য পুড়তেও দেখেছে।ভাইয়ের কষ্ট নিবারণের কোনও মলম তার কাছে ছিলো না।কিন্তু প্রতি মুহুর্তে শান্তনা দিতে ভুলে নি।আজ সেই ভাইয়ের ধারা এতো বড় ভুল, না না ভুল না,পাপ হয়ে গিয়েছে।যতোটুকু অরুপ দিনেশের মুখ থেকে তিতির সম্পর্কে জেনেছে,তার মতে তিতির এই কলঙ্কের দাগ কিছুতেই মেনে নিতে পাড়বে না,না পাড়বে দিনেশকে মেনে নিতে।নিজের আত্মগ্লানিতে তিতির নিজেকে শেষ করে দিবে।আর তিতির কিছু হলে দিনেশও যে মরে যাবে।অরুপ পরিস্থিতির গম্ভীরতা খুব ভালো করে বুঝতে পাড়ছে।তাই দিনেশকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা বললো,
“দেখ দিনেশ আমি ধর্ম সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না।জানিসই তো আমি ধর্মে নয় কর্মে বিশ্বাসী।আমি মনে করি আমার কর্মই আমাকে স্বর্গ নরকের পথ দেখাবে।তাই আমি তোকে এই বিষয় জ্ঞান দিতে যাবো না।তোর যেটা ভালো মনে হয় তুই কর।আমি বাধা দেবো না।আমি মনে করি মানুষকে নিজের সুখের কথা আগে চিন্তা করা উচিত।পর জীবনে আবার মানুষ হয়ে জন্ম নিবো কিনা তারই তো গেরান্টি নেই।(পর জীবন সনাতন ধর্মে আছে যাকে পূর্ণজীবনও বলো,কিন্তু মুসলমানদের পর জীবন বলতে কিছু নেই।এটা বিশ্বাস করাও গুনাহ। তাই পাঠক বিভ্রান্ত হবেন না)তাহলে এই জীবনে যতো পারিস নিজেকে সুখে করে রাখ,আর অন্যকেও সুখে থাকতে দে।তোর ডিসিশন যাই হোক,আমি তোর ভাই কালও ছিলাম, আজও আছি।”
–ভাইয়ের সাথে কথা বলে দিনেশের মন থেকে অনেক বড় বোঝ সরে গেলো।মনের সকল বিভ্রান্ত দূর হয়ে গেলো।এখন শুধু তিতির জাগার অপেক্ষিকা।
“দুজন হুজুর আর দিনেশের এখানে থাকা কয়েকজন পরিচিত বন্ধুদের সামনে দিনেশ আর তিতির বসে আছে।দিনেশ প্রথমে হুজুর দুজন থেকে আল্লাহর কলিমা পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলো,এর পর বন্ধুদের সাক্ষী রেখে তিতিরকে ইসলাম ধর্মমতে বিবাহ করলো।”
–তিতির এখনো অনেকটা শোকড এর মধ্যে আছে।সেই দুপুড়ে ওর নিদ্রা ভেঙ্গেছিলো।আর জাগ্রত হয়ে নিজের অবস্থা দেখেই তিতির বুঝে গিয়েছিলো,কালরাত কি হয়েছে।তখনই দিনেশকে ওয়াসরুম থেকে বের হতে দেখে ক্রোধে মাথা ভেটে যাওয়ার অবস্থা তিতির।দিনেশ ওর সাথে এমন করবে তিতিরের কল্পনার বাহিরে ছিলো এসব।কিন্তু দিনেশের ভাবলাহিন রিয়েকশন দেখে তিতির কি বলবে বুঝে উঠতে পাড়ছিলো না।তিতিরের ভাবনার মাঝেই দিনেশ পায়জামা পান্জবী পড়ে রেডি হয়ে গেলো।
তিতির বুঝতে পারছে না,”আমার এতো বড় সর্বনাশ করে এই লোক জামাই সেজে কোথায় যাচ্ছে।”
–তিতিরকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেই দিনেশ নিজের কাজ করছিলো।আসলে তিতিরের সাথে চোখ মিলাতে এখন নিজেরই লজ্জা লাগছে দিনেশের।কালরাতে আবেশের বসে পড়ে যে ও কাপুরুষের মতো কাজ করেছে,যা ও আজ সকালে বুঝতে পাড়ছে।আসলে ওর আর সুজেতের মধ্যে কোনও পার্থক্য খুঁজে পেলো না।সুজেত যেমন তিতিরকে ভোগ করতে চেয়েছিলো।দিনেশও তো কাল রাত তাই করলো।তাই বর্তমানে ও ভীষণ অনুতপ্ত।নিজের এই অনুতপ্ত থেকে ওকে মুক্তি পেতেই হবে।
আয়নায় দাঁড়িয়ে পান্জাবীর হাতা ফোল্ড করতে করতে তিতির দিকে চোখ পড়লো।দিনেশ এখান থেকেই তিতিরের চোখে নিজের জন্য একরাশ ঘৃর্ণা দেখতে পাচ্ছে।প্রিয় মানুষটির চোখে ঘৃর্ণা দেখার মতো কষ্ট কি আর আছে দুনিয়াতে দিনেশের এই মুহুর্তে জানা নেই।
–দিনেশ একটা পেকেট হাতে নিয়ে তিতির সামনে গিয়ে বসলো,তিতিরের হাতদুটো ধরতে নিলে,তিতির এক ঝটকায় সরিয়ে ফেলে।দিনেশ দেখলো তিতির কাঁপছে,এটা যে ক্রোধে তা বুঝার আর কি বৈকি।দিনেশ তবুও শান্ত দৃষ্টিতে তিতির দিকে তাকিয়ে,”তিতির আমি জানি তুমি রেগে আছো।আর রাগারই কথা।আমি এখন তোমাকে কোনও এক্সপ্লেইন দিতে চাই না,আমি জানি এটা দিলেও কোনও লাভ হবে না।তুমি যা হারিয়েছো তা ফিরে পাবে না।কিন্তু বিশ্বাস করো তিতির আমি তোমাকে সমাজের চোখে কলঙ্ক হতে দেবো না।যে পাপ আমার ধারা হয়েছে,তার শুদ্ধও আমিই করবো।শুধু আর একবার আমার উপর বিশ্বাস করো।আই প্রমিজ সব ঠিক করে দিবো এবার।শুধু এবার কোনও প্রশ্ন ছাড়া আমার সাথে চলো।তার আগে ফ্রেস হয়ে এগুলো পড়ে আসো তারাতারি।আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।প্লিজ তিতির।”
–তিতির তখনও জানতো না,দিনেশ কি করতে চাইছে।কিন্তু ও দিনেশকে কিছু বলতেও পাড়ছিলো না।দোষতো ওর নিজেরও ছিলো।নিজের বেকুবির কারণেই আজ নিজের সতীত্ব হারাতে হলো ওকে।তিতির আর কিছু ভাবতে পাড়ছে না,এই মুহুর্তে দিনেশের কথা না শুনা ছাড়া আর কোনও উপায়ও নেই তিতির কাছে।তিতির দেখতে চায় দিনেশ কি করবে,তারপর নিজের সিদ্ধান্ত নিবে তিতির।
“তিতির ভাবতেও পারেনি দিনেশ এমন একটা কাজ করবে।দিনেশকে তিতির ভালোবাসে এটা সত্যি,কিন্তু কোনও দিন দিনেশকে নিজের ধর্ম ত্যাগ করার কথা একবারও বলেনি।এটা বলা অনিবার্য তিতির জানে।ভালোবাসা মানুষটির জন্য নিজের ধর্ম,অস্থিত্ব ত্যাগ করার জন্য বিশাল একটা মন থাকতে হয়।এতোক্ষণ দিনেশের জন্য রাগ থাকলেও,এখন দিনেশের প্রতি একটা রিসপেক্ট কাজ করছে তিতির মনে।”
“এখনো ভালোবাসি”
|৩৬|
খাবার হাতে করে আয়ন রুমে প্রবেশ করে দেখে,প্রিয়ু মুখ ভার করে বসে আছে।না চাইতেও আয়নের মুখ দিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে গেলো।প্রিয়ুর এমন গোমড়া মুখ,আয়নের ভেতরে অনুতপ্ত বাড়াচ্ছে।হয়তো ব্যাপারটা অনেকটা জলদি হয়ে গিয়েছে।প্রিয়ুকে সময় দেওয়া দরকার ছিলো ওর।মাত্রই তো আমাদের সম্পর্ক ঠিক হলো,আর এখনই এতো বড় দায়িত্ব ওকে সোপে দেওয়া খুব কি অন্যায় না।ওর বয়সই বা কি।আয়ন নিজেই এখন কিছুটা টেনশড হয়ে পড়ছে প্রিয়ুর বিষণ্ণ মুখটা দেখে।কিন্তু নিজের টেনশনের ঝুড়িটা লুকিয়ে প্রিয়ুর সামনে স্বাভাবিক হয়ে বসলো।
খাবার মাখতে মাখতে আয়ন প্রিয়ুকে প্রশ্ন করে,”চিন্তায় তো মনে হয় কিছু মুখেই দিস নাই।সারারাত তো মনে হয় পেটে কিছুই যায়নি।কবে যে তুই বড় হবি।কিছুদিন পর নিজে বাচ্চার মা হবি,আর এখন তোকে আমাকে খাইয়ে দিতে হয়।নে হা কর।”
–কেনো করলে তুমি এমন।প্রিয়ুর ভেজা কন্ঠ আয়নের কানে আসতেই ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
হতাশা মনে আয়ন প্রিয়ুর দিকে তাকালো,ওর কাতর নয়নজোড়া দেখে আয়ন স্থদ্ধ হয়ে গেলো।বুকের ভেতর হঠাৎ যেনো একটা ভারী পাথর জমা হয়ে গেলো।নিজেকেই এখন দোষী মনে হচ্ছে।প্রিয়ুর পারমিশন নেওয়া উচিৎ ছিলো ওর।ও বাচ্চার জন্য রেডি কিনা জানা দরকার ছিলো।আমি কেবল স্বার্থপরের মতো নিজের দিকটাই দেখেছি।অনুতপ্ত আয়ন,খাবার রেখে বাহাতে প্রিয়ুর মুখটা ধরে,”সরি সোনা,বুঝতে পারিনি।আমি জানি তোর জন্য এটা সম্পূর্ণ নতুন।অনেকটা তারাতারি হয়ে গিয়েছে সব কিছু।আমি বুঝতে পাড়ছি তুই রেডি ছিলি না এটার জন্য,ব্যাপারটা হয়তো তোর জন্য অনাঙ্কাকিত।কিন্তু বিশ্বাস কর,এই বাচ্চার কারণে তোকে কখনো আপসোস হতে দিবো না।এটা আমাদের অস্থিত্ব তাই না,আমরা দুজন মিলেই সামলিয়ে ফেলবো।প্লিজ সোনা রাগ করিস না।আমি সত্যি আশা করিনি এমন কিছু।এখন যখন হয়ে গেছে প্লিজ এই বাচ্চাটাকে নিয়ে মন খারাপ করিস না।”
–প্রিয়ু আয়নের এতোক্ষণের কথাবর্তার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারেনি,কি সব বলছে আয়ন।ভ্রুজোড়া কুঁচকিয়ে তাই আয়নকে জিঙ্গেস করলো,”মন খারাপ, কার?আমার!তোমাকে কে বলেছে।আর কি সব আজগুবি কথা বলছো।”
“তোর মন খারাপ হয়নি,বাচ্চার কথা শুনে।”
–না তো!মন খারাপ করবো কেনো।আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পারছিলাম,এমন কিছু হবে।
“কি?আয়ন একটু না অনেক বেশি বিস্মিত হয়ে
তাহলে আমাকে কেনো বলিস নি।”
–কি বলবো তোমাকে।আমার জাস্ট সন্দেহ হয়েছিলো।গতো মাস হঠাৎ করেই পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।ভেবেছি এই মাসে ঘরেই টেস্ট করে দেখবো।তার আগেই তো এতো ঝামেলা শুরু হয়ে গেলো।আর আমার মাথা থেকে এটা গায়ব হয়ে গেলো।আমি বুঝতে পারিনি।সত্যিই এটাই হবে।
“তার মানে এই তুই নারায না,এই বাচ্চার কথা শুনে।তার মানে তুই খুশি।”
–হে আমি নারায।
“আয়নের উৎফুল্ল মুখ খানি ক্ষণিকেই চুপচে গেলো।”
–কিন্তু আমি বেবির প্রতি নারায না।
“তাহলে?আয়নের উৎসুক মুখখানি এখন বিস্ময়ের চরম সীমায়।”
–আমি তোমার উপর নারায,তুমি কবে জানতে পারলে এই খবর।আমাকে এতোদিন বলোনি কেনো।আর আমি আমার বেবির উপর নারায কেনো থাকবো।এটা আমার বেবি।আমি খুশি।
“আয়ন প্রিয়ুর জন্য আনা পানিটুকু ঢকঢক করে নিমিষে শেষ করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।যাক বাঁচা গেলো।না হলে আমার কপালে যেনো কি ছিলো আল্লাহই জানে।”
–কি হলো।
“কি হবে আমি বলবো কি করে।এটার জন্য সময় লাগবে।তার পর সোনওগ্রাফ করতে হবে,তাহলে জানতে পারবো,কি হলো।আর এখন হবার কোনও চান্স নেই।তার জন্য আরো কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হবে”।
–কিসব বলছো তুমি।তোমার মাথা কি গেছে।আমি কি জিঙ্গেস করছি আর তুমি কি উত্তর দিচ্ছো।
“আসলেই মনে হয় আমার মাথা ঠিক নেই।বাদ দে তো,আগে খেয়ে নে,তারাতারি”।
–আয়নকে খুব টায়ার্ড লাগছে তাই প্রিয়ু লক্ষী মেয়ের মতো খেয়ে নিলো।তাছাড়া প্রিয়ুর সত্যিই অনেক খিদে পেয়েছিলো।
…………………..
প্রিয়ু শুয়ে আছে আয়নের বুকে।আয়ন প্রিয়ুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে প্রিয়ুকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু প্রিয়ুর ব্যাটারি আজ একটু বেশি চার্জ।সেই কখন ধরে বকবক করেই যাচ্ছে।আয়ন জানে প্রিয়ু ঘুমানো না পর্যন্ত নিজেও ঘুমাতে পাড়বে না।তাই তো চেষ্টা করছে,প্রিয়ু যদি একটু ঘুমায়।
–“প্রিয়ু ঘুমানা সোনা।সকাল তো হয়েই গিয়েছে।তবুও শরীরের জন্য ঘুমানো দরকার।তোর টেপ রেকর্ড আজকের জন্য আপাততে বন্ধ করে একটু ঘুমানো চেষ্টা কর।”
“আচ্ছা,একটা লাস্ট কথা।”
–আয়ন বিরক্ত কিন্তু,মুখে হাসি টেনে তবুও বললো,ঠিক আছে,বল।
“বেবি হবার পরও কি তুমি আমাকে এতোটাই ভালোবাসবে।নাকি ভালোবাসা কমে যাবে তখন তোমার।দেখো বেবি হলেও আমি এভাবেই তোমার বুকে ঘুমাবো।আর বেবির আগে আমাকে তোমার বেশি প্রায়োরিটি দিতে হবে।আমার ভালোবাসার ভাগিদার কাউকে হতে দেবো না।এমনকি বেবিকেও না।আর যদি করো তাহলে আমি তোমার বাচ্চাকে চিমটি মেরে লাল করে ফেলবো।আর তোমার বাচ্চাকে শিখিয়ে দেবো,তোমাকে মামা বলে ডাকতে।এতেও কাজ না হলে,তোমাকে ভাগিয়ে নিয়ে যাবো।”
–আয়ন এবার সিরিয়াস হয়ে প্রিয়ুর দিকে তাকালো,প্রিয়ু ওটা শুধু আমার না,তোরও বেবি।নিজের বেবিদের কেউ হিংসে করে।এ কেমন কথা।
“হিংসে কোথায় করলাম।ওদের দুনিয়ার সব কিছু এনে দিবো।এমনকি আমি তো এতো,না এতো…এতো ভালোবাসবো।হাত দুটো দুদিকে প্রসারিত করে দেখালো।তুমিও বাসবে।নো প্রোবলেম।কিন্তু আমাকে ভালোবাসতে কৃপটামি করলে তোমার আর তোমার বেবির খবর আছে বলে দিলাম।”
–আয়ন প্রিয়ুর মাথাটা বুকে আবার টেনে চেপে ধরলো,বিস্ময় কন্ঠে বললো,প্রিয়ু ঘুমা শোনা।আমাদের আবার সকালে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।আই থিংক তোকে ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।তোর হরমন চেন্জ মনে হয় এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
“প্রিয়ু আড় চোখে একবার আয়নের দিকে তাকিয়ে আবার শুয়ে পড়লো।মুখে ওর বিশ্বজয় হাসি।ওর ঠ্রেড কাজে লাগছে।আয়ন ব্যাচারা ভয় পাইছে।তাই বেবি হবার পর অন্যান্য হ্যাসবেন্ড এর মতো দায়সারা ভাব কিছুতে করতে পারবে না প্রিয়ুর প্রতি।বরং নিজের সন্তানের মঙ্গলের জন্য বউকে বেশি বেশি ভালোবাসা বিলিয়ে দিবে।”
–আয়ন এখনো শোকড এর মধ্যে।ব্যাচারা আয়ন প্রিয়ুর কাজকর্মে একদিন সত্যিই হার্ট ফেল করবে।
……………………….
প্রতিদিনের মতো আজও তিয়াশ অফিস থেকে এসেই সেজেগুজে বের হতে নিলো।হাতে ওর রোলেক্স এর ওয়াচটা পড়তে পড়তে নিজেকে আরো একবার আয়নায় দেখতে গিয়ে চমকে গেলো।কারণ পিছনে দিশাও সেজেগুজে রেডি।
–তিয়াশ ভ্রুজোরা কুচকিয়ে দিশাকে জিঙ্গেস করলো”,তুমি কোথায় যাচ্ছো এতো সেজেগুজে।”
‘দিশা নিজের চশমাটা ঠিক করে,বললো।ওমা কোথায় আবার ফ্রেন্ডসদের সাথে আড্ডা দিতে।’
–মানে!মানে কি?
“এই এতো মানে মানে করছো কেনো।বিয়ে হবার পর এই সংসারের ঝামেলায় ফ্রেন্ডসদের টাইমই দিতে পারিনি।ওরাও বারবার ফোন দিয়ে জ্বালাচ্ছে।তাই ভাবলাম গিয়েই আসি।সমস্যা কোথায়।তুমিও তো রোজ রোজ ফ্রেন্ডসদের সাথে দেখা করতে যাও।আমি কি কিছু বলি।বিয়ে হবার পর তুমি যদি এখনো তোমার ব্যাচেলার লাইফ মেইন্টেন করে চলতে পারো।আমি পাড়বো না কেনো।দুটোই আড়ামে চলে যাবে,সমস্যা কি আর।”
–সমস্যা কি? তুমি জানো না,দিশা।রাত সাতটা বাজে এখন।এতোরাতে….
“ওমা সাতটা বেজে গেছে।ওরা নিশ্চয়ই আমার জন্য ওয়েট করছে।এই দেখি সরোতো।আমার ফেবেরেট পারফিউম টা লাগাতেই ভুলে গেছি তোমার সাথে বেকার কথা বলতে গিয়ে।
-আর শোনও এই নও ঘরের চাবি।আমি দশটার মধ্যে এসে পড়বো।আর আজকের রাতের খাবারটা তুমি বানিয়ে রেখো প্লিজ।তুমি তো জানোই লক্ষীটি, আমি বাহিরের খাবার খেলেই পেটে সমস্যা হয়।তুমি নিশ্চয়ই চাইবে না আমি অসুস্থ থাকি।ঠিক বললাম তো।আমি চললাম এখন, বায়।”
“-তিয়াশের বিশ্বাস হচ্ছে না।দিশা ওর সাথে এমন কিছু করবে।কেমন ঘোরের মধ্যে আছে ব্যাচারা।”
–ঠিক তখনই,অনিক কল করলো।তিয়াশ ওর ভেঙ্গে চূরমার হওয়া মনটা নিয়ে ফোনটা রিসিভ করার সাথেসাথেই ওপাশ থেকে,কতোগুলো মিষ্টি গালি কানে এলো।মুহুর্তেই,তিয়াশের বিষাদ মনটা আরো বিষাদ হয়ে গেলো।আর নিজের এই বিষাদ মনটাকে অনিক আরো গেল ঘি ঢেলে বিষাদ করে তুললো,যখন শুনলো ও আসতে পারবে না আজ।
“ওই হারামি,কেনো আসবি না তুই।নাকি বউ পাইয়া সব ভুলে গেছিস।বউয়ের আঁচলে আঁচলে থাকতে খুব ভালা লাগে তাই না।শোন,বউয়ের আঁচলে যতো থাকবি,বউ তোরে মেউমেউ করতে শিখাইবো।আর এভাবে মেউমেউ করতে থাকলে,একদিন বউয়ের পোষা বিড়াল হয়ে যাবি,বুঝলি।তখন না ঘরের থাকবি, না ঘাটের।তাই বউয়ের আঁচল ছেড়ে চলে আয় আমার শের।”
অনিকের এতোগুলো কথা তিয়াশের কানে গেলেও মগজে মনে হয়না ঢুকেছে।তাই তিয়াশ মুখটা ভার করেই বললো,সম্ভব নারে ভাই।দিশা আমাকে ধোকা দিয়েছে।আমার মনটা ভেঙ্গে চূরমার করে দিয়েছে।
“কি?বিয়ে হইলো কয়দিন।এখনি দিশা পালিয়েছে।কার সাথে,কখন!তুই আগে টের পাছনি বউ যে তলে তলে এতো বড় কুয়া করছে তোর জন্য।আর এতো তারাতারি করলো কেমনে।আমার মনে হয়,তুই বউরে ভালোবাসতে নিশ্চয়ই কৃপটামি করছোস।তাইতো বউ ভাগছে।”
শালা চুপ থাকবি।পুরো কথা শুইনা,নাচা শুরু করে দিছোস।এরপর সব বললো,”দিশা কিভাবে ওকে ফাঁসিয়ে নিজেই ঘুরতে চলে গেলো।”
–ব্যাস,এতোটুকু।এটা কোনও সমস্যা।শোন চুপচাপ ভালো কোনও রেস্তরাঁ থেকে খাবার ওর্ডার করে ফেল।এতো এতো রেস্তরাঁ আছে কেনো।আমাদের মতো অপদার্থ স্বামীগুলোর জন্যইতো।
“নারে!দিশা রেস্তোরাঁর কিছু খেতে পারেনা।পেট ব্যাথা করে।”
–এটা ও কোনও বড় সমস্যা না।খাবারের পর একটা পেট ব্যাথার ওষুধ খায়িয়ে দিবে।ব্যাস,ব্যাথাটেথা দেখবি চোরের মতো পালিয়েছে।এবার তারাতারি আয়তো।বাকি কথা পরে বলবো।
তিয়াশ ভাবলো,আজকের দিনটাই তো।দিশাতো আর রোজ রোজ বাহিরে যাবে না।খাবার অর্ডার দিয়েই ফেলি।এটাই বেস্ট আইডিয়া।তিয়াশ ফোনটা হাতে নিয়ে ওর পরিচিত রেস্তোরাঁ থেকে খাবার অর্ডার দিতে নিবে,তার আগে অনিকের আবার ফোন এলো।
কিরে,আবার কি?মাত্রই তো ফোন রাখলাম বাকি কথা এসে বলবো।এখন রাখ,খাবার অর্ডার করতে হবে।
“কি?তুই তোর একমাত্র বউয়ের জন্য বাহিরে থেকে খাবার অর্ডার করবি।এই হারামি তোর মনে কি দয়ামায়া নাই।ওই খাবার খেলে যে তোর বউ অসুস্থ হয়ে পড়ে জানিস না।কেমন স্বামী তুই।তোর জন্য আমাদের মতো ভালো মাসুম স্বামীদের বউরা দাম দেয়না।”
–ভাই,তুই কি কস।মাথা কি তোর খারাপ,নাকি আমি পাগল জয়ে গেছি।এক এক সময় ফোন দিয়ে একেক কথা বলছিস।
“কেনো কি করছি আমি।”
–শালা কনফিউজড কেনো করছিস আমায়।কি করুম কেবল ওটা বল।বাকি কথা চাপায়ই রাখ।বাহির করলেই লাথি মারুম।
“বউয়ের কথা শুন।বউ তকে যা বলছে তাই কর।না হলে,ব্যাচারী খাবে কি।বউ আগে বুঝছিস। বাকি সব পরে।আর নতুন বিয়া হইছে,এখন থাকবি বউয়ের পিছে পিছে,তা না করে বন্ধুদের লগে তোর এতো কিসের আড্ডা।ওই তোর পার্সটার্স সব ঠিক আছে তো।আবার কোনও ডিফেক্টিভ নাইতো।”
–কি বলছিস ভাই।দিশা শুনলে বেহুশ হয়ে যাবে।সংসার করার আগেই তালাক হয়ে যাবে।রেহাই দে আমার।আমার কি মনে হয় জানিস।আমার মায়ের কারণে না,লাস্টে তোর জ্বালায় আমার বউ পালাবে।
“তা তো এমনেই পালাবে।এতো নিরামিষ কেনো তুই।এখন এতো কথা না বলে,চুপচাপ গিয়ে বউ যা করতে বলছে কর।আমার মাথা খাসনা।”
–অনিক ফোনটা কেটে দিলো।কিন্ত তিয়াশ এখনো ফোনটা কানে নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে।আসলে ও এখনো শোকড এর মধ্যে আছে।প্রথমে দিশা,আর এখন অনিক।কি হচ্ছেটা কি বুঝতে পারছে না।ও ওর বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পাড়ছে না।
ফ্লাশব্যাক,
অনিক তিয়াশকে রেস্তোরা থেকে খাবার আনার আইডিয়া দিয়ে ফোন কাটার সাথে সাথে দিশার কল এলো অনিকের কাছে।আর দিশা অনিককে ঠ্রেড দিয়েছে,তিয়াশকে উল্টাপাল্টা আইডিয়া দিলে,ও গিয়ে সারাকে বলে দিবে ওর আর তিয়াশের বিয়ের আইডিয়া অনিকই দিয়েছে।সব নাটেরগুরু অনিক।অনিক না থাকলে তিয়াশ সাহসই পেতো না এসব করতে।
“-ব্যাচারা অনিক দিশার কথা শুনে ভয় পেয়ে গেছে।কারণ সারা এই কথা জানলে,ওর বর্তমান,ভবিষ্যৎ কেল্লাফতে করে দিবে।সারা রোজ রোজ চে চে করে ওর জীবন নরকে পরিণত করবে।তাই ও অবার তিয়াশকে ফোন করে এসব বলে।”
আসলে দিশাও জানতো এমন কিছু হবে।দিশাতো তিয়াশকে একটু শিক্ষা দিতে চেয়েছে।কারণ তিয়াশ বিয়ে হবার পরও অফিস থেকে এসে,দিশাকে সময় না দিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসে পড়ে।এদিক দিয়ে দিশারও যে মন চায় তিয়াশের সাথে একটু সময় কাটাতে,কিন্তু তিয়াশের খবর নেই।একচুয়েলি,তিয়াশ এখনো আগের মতো ওর লাইফ চালাচ্ছে।দিশা শুধু ওকে বু”এখনো ভালোবাসি”
|সমাপ্তি|
রোহান বসে আছে আয়নের বাড়ীর ড্রয়িংরুমে।চোখেমুখে তার ফুটে উঠেছে উদ্বিগ্নতা।আশেপাশে বসে থাকা উৎসুক জনতার মধ্যে একজনকে দেখে মুখটা হঠাৎ বিবর্ণ হয়ে গেলো।শক্ত চোয়ালে দাঁতেদাঁত চেপে সামনে বসে থাকা আয়নকে উদ্দেশ্য করে বললো,আমাকে এখানে আনার কারণটা কি মিস্টার আয়ন।আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন,এটাকে কিডন্যাপিং বলে।আর আমি কিন্ত রাস্তায় চলা কোনও সস্তা মানুষ না,যাকে আপনি নিজের ইশারায় নাচাতে পারবেন।আমি চাইলে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারি।আপনি কি বুঝতে পারছেন।
–রোহানের কোনও কথায় আয়নের কোনও হেলদোল নেই।ওতো কেবল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে,রোহানকে মাপার চেষ্টা করছে।
‘এবার ড্রয়িংরুমে বসে থাকা সবার ধৈর্যের বাধ যেনো ভাঙ্গতে লাগলো।সবাইকে ডেকে এভাবে চুপ থাকার মানে কি কেউ বুঝতে পারছে না?কথা না বলার ওয়াদা মনে হয় করেছে আয়ন এমন ভাবে স্থির হয়ে বসে আছে।’
“-আয়নের পিতা ইরফাত ছেলের কিছুই বুঝতে পারছে না।এভাবে সবাইকে ডেকে চুপ থাকার মানে তারও বোধগম্য নয়।তাও আবার অপরিচিত একটা ছেলের সামনে।আর সব থেকে বড় কথা হলো,কে এই ছেলে,এখানে ওর কি কাজ।আয়ন কেনোই বা ওকে ধরে এনেছে।না!হিসেব মিলাতে পারছে না।এই ছেলের মতলোব না আগে বুঝতে পারছে উনি কখনো না এখন।তাই নিজের কন্ঠে যথেষ্ট গম্ভীরতা বজায় রেখে ছেলেকে প্রশ্ন করেই ফেললেন।সমস্যা কি আয়ন?তুমি কেনো আমাদের সবাইকে এখানে ডেকেছো।আর ডেকে এনে এভাবে চুপ হয়ে বসে আছো কেনো।এই ছেলেটাই বা কে?তুমি ওকে ধরে এনেছো কেনো।কিছু বলো,এখন কিন্তু খুব বিরক্ত লাগছে।”
আয়ন স্মীত হেসে মাথা ঝাঁকালো।মনে হয় কোনো হাসির কথা বলা হয়েছে এখানে।আয়নের আচরণে সবাই কিছুটা অবাক হলো।তবে কিছু জিঙ্গেস করার সাহস পেলো না।
–প্রিয়ু ভীতুমাখা মুখে আয়নের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।ও নিজেও জানে না আজ রোহানকে আয়ন কেনো এতো জামাই আদর করছে।যতোটুকু ওর মনে আছে,এ কয়েকদিন প্রিয়ু আয়নের একদম অবাধ্য হয়নি,আর রোহানের সাথে দেখা তো দূরে থাক কথাও বলেনি।তাহলে কেনো?
সবার ধীরতার পরীক্ষা নিয়ে এবার আয়ন তার সিরিয়াস লুকে চলে এলো।চেহারায় কঠোরতা এনে,রোহানের দিকে বাজের মতো তীক্ষ্ণ চোখ রেখে বলা শুরু করলো,”তো মিস্টার রোহান,বলবেন কি আপনার সাথে আমার কি এমন দুশমনি।আমি আপনাকে আগে দেখেছি বলে মনে হয়না।প্রিয়ুর মাধ্যমে আপনার সাথে আমার পরিচয়।তাই আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো প্রিয়ুর কারণে বারবার আমার জীবনে আপনার বা হাত ঢুকান।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো,গতো দুবছর আপনি একই শহরে থেকেও প্রিয়ুর কোনও খোঁজ নেন নিই।অথচ প্রিয়ু যখন আবার আমার জীবনে ফিরে এসেছে,তখন আপনিও অনাঙ্কাকিত হয়ে আবার ফিরে এলেন আমাদের জীবনে।প্রথমে মার্কেটে প্রিয়ুর সাথে দেখা।ব্যাপারটা প্রিয়ু আকষ্মিক ভাবলেও ঘটনাটি আকষ্মিক ছিলো না তাই না।আপনি প্লান করেই সেদিন প্রিয়ুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন।কারণ আপনি প্রিয়ুকে বেশ কিছুদিন ধরে ফোলও করে আসছিলেন।আই এম রাইট মিস্টার রোহান।আয়নের মুখে স্মীত হাসি।”
“কিন্তু সামনে বসে থাকা রোহানের চেহারর তেজ এবার কার্পূরের ন্যায় উবে গেলো।”
আয়ন আবার তার মুখ শক্ত করে বললো,”প্রিয়ুর কাছে মাপ চাওয়া,ছলেবলে কৌশলে তার কাছে আসা এসবই তো আপনার প্লান ছিলো।”
–এবার প্রিয়ু মুখ খুললো,”এসব কি বলছো।আমার মনে হয় কোথাও কোনও ভুল হয়েছে তোমার।প্রিয়ু আয়নকে বুঝানোর চেষ্টা করছে।আসলে ওর বিশ্বাস হচ্ছে না রোহান এমন কিছু করবে।আয়ন হয়তো জেলাসফিল করে রোহানের সাথে এমন কিছু করছে এটা প্রিয়ুর ধারণা।
এবার রাগটা পুরোপুরি মাথায় চড়ে বসলো আয়নের।এখনো এই মেয়ে রোহানের সাপোর্ট করছে।রাগে আয়ন বসা থেকে সোজা প্রিয়ুর সামনে এসে দাঁড়ালো,”বোকা মেয়ে,যা বুঝিস না তা নিয়ে বলতে আসবি না।তুই তো এতোটাই গাধা যে ওর কোনও চালাকি একবারও ধরতে পারিস নিই।দুবছর আগে কোনও কাকাতুয়া ভাবে ও তোর জীবনে আসেনি।পুরো প্লান করে তোর কাছে এসেছে।একবারও কি ইডিয়াট তোর মাথায় আসেনি।কে এই ছেলে, হঠাৎ কোথা থেকে উড়ে এসে ঝুড়ে বসেছে।যেখানে এলাকার কেউ তোর সাথে কথা বলার সাহস পেতো না,সেখানে ও তোর সাথে এতো ফ্রী হয়ে কথা বলতো কিভাবে।আর ও তখনই কোনো এলো যখন আমি ছিলাম না এই দেশে,ও জানতো আমি থাকলে ও তোর আশেপাশেও ঘেষতে পারতো না।ও পুরো ছক কেটে তারপর এন্ট্রি করেছে।তোর কাছে আসার চেষ্টা,তোকে প্রেম নিবেদন করা এসবই ছিলো ওর অভিনয়।এরপর কৌশলে তোর আর নিজের ছবি তুলে তোর অনাচারেই।সাথে একটা ভিডিও বানায় যেখানে তোর চেহারা মিলে এমন একটা মেয়েকে ব্যবহার করে। যাতে প্রথম দেখায় সবাই কনফিউজড হয়ে যায়।এসবই ওর প্লানিং ছিলো।”
আমার এখনো মনে হয় তোমার কথাও ভুল হচ্ছে।রোহান কেনো এমন করবে।ওর সাথে আমার কি এমন দুশমনি।আমিতো এর আগে ওকে চিনতামই না।তাহলে কিশের ভিত্তিতে তুমি এতো বড় অপবাদ দিচ্ছো ওর উপর।
“আয়ন রাগে পুরো লাল হয়ে গেলো,চোখ দুটো বন্ধ করে জোড়ে কয়েকটা শ্বাস নিলো।প্রিয়ু প্রেগন্যান্ট না থাকলে,ঠিকই মনে হয় কয়েকটা চড় মেরে দিতো আয়ন এখন।এই মেয়ে এতো কিছুর পরও কোন সাহসে এই কথা বলে।আমার থেকে প্রমাণ চায়।’ওকে তোর প্রমাণ চাইতো ঠিক আছে,তাও দেখতে পাবি।ওয়েট।’
–কিন্তু আয়ন,আমি বুঝতে পারছিনা,তোমার আর তোমার বউয়ের প্রেমিকের মাঝে তুমি আমাদের কেনো ডাকলে।এখানে আমাদের কি কাজ বলো।আয়নের মা কিছুটা তাচ্ছিল্যের সাথে কথাটি বলে।
হুম!তাইতে।সত্যি কথা বলেছো।আর এটার উত্তর তো মিস্টার রোহানই দিবে।কি মিস্টার রোহান বলবেন না,এখানে উনাদের কি কাজ।নাকি সবার সামনে তোমার পরিচয়,দিতে লজ্জা করে।ওকে বাদ দেও।বলতো রোহান।তোমার মায়ের নাম কি?
মুহুর্তেই রোহানের মুখটা একটা ক্ষতো বিক্ষতো হিংস্র প্রানীর মতো হয়ে গেলো।দাঁতেদাঁত চেপে আয়নকে বললো,”দিস ইস নোন ওফ ইউর বিজনেস।”
আয়ন এবার রোহানের দিকে কিছুটা ঝুকে,যে অতীত আমাকে নিয়ে ঘিরে সেখানে তো নাক গুলাতে হবেই তাইনা।
সবাই আবারও বিস্মিত দৃষ্টিতে আয়নের দিকে তাকায়।কি বলছে আয়ন।
………………………
রোহান কিছুদিন ধরে প্রিয়ুকে বারবার মেসেজ করছিলো,ওর সাথে একবার দেখা করার জন্য।প্রিয়ু প্রথমে বিষয়টি এভয়েড করলো।কারণ সেদিন আয়নের হুমকিতে রোহান ভয় না পেলে প্রিয়ু কিন্তু বেশ ভয় পেয়ে গেছে।কারণ আয়ন কেমন রোহান না জানলে প্রিয়ুতো জানে।আর প্রিয়ুর আশেপাশে রোহানকে আয়ন একদম সহ্য করতে পারবে না তাই,শুধু শুধু জঙ্গলে থেকে জঙ্গলের বাঘকে রাগান্বিত করা নেহাতি বোকামি।
কিন্তু এই রোহান একটু বেশিই ছেঁচড়া।প্রিয়ু মেসেজের রিপ্লাই না দেওয়ায়,সারাসরি ফোন করা শুরু করে দেয়।
কাল রাতেও একবার কল দিয়েছে।তখন আয়ন প্রিয়ুর সামনেই ছিলো।বারবার প্রিয়ুর ফোন বাজতে দেখে আয়ন নিজেই ফোনটা দেখতে নেয়।আর তখনই ফোনের স্কিনে রোহান নামটি ভেসে উঠে।এতে আয়ন কিছুটা রাগলেও প্রিয়ুর সামনে প্রকাশ করেনা।কারণ প্রিয়ুর পেগনেন্ট হবার পর আয়ন এখন একটু লাগাম রেখেই কথা বলে।কোনও প্রকার মেন্টালি স্ট্রেস প্রিয়ুকে দিতে চায়না।তাই খুব নরমাল হয়েই প্রিয়ু কে প্রশ্ন করলো,রোহান কেনো ফোন করছে।
“উত্তরে প্রিয়ু জানে না বললেও,আয়ন সন্তুষ্ট হলো না।তবে ওর মনের কথা প্রিয়ুকে বুঝতেও দেয়নি তখন”।আজ সকাল হতে না হতেই আয়নের লোক রোহানকে নূর ভিলায় তুলে এনেছে।
“প্রিয়ু ভাবছে হয়তো ফোন কলের জন্যই আয়ন এমন রিয়েক্ট করছে।”
–কিন্তু ব্যাপারটা তেমন না,আয়ন রোহান সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পাড়ছে।তাই এবার ও এটার কাহিনী শেষ করতে চায়, সবার সামনে।
রোহানের চুপ থাকা আয়নকে আরো বেশি বিরক্ত করে তুলছে।এদিক দিয়ে আয়ন কিছু বলবে ঠিক সে সময় নিলীমাও ওখানে এসে হাজির হয়।নিলীমাকে দেখে সবাই অবাক হয়।সবার মনে আবার একই প্রশ্ন জাগে নিলীমার এখানে কি কাজ।
ও!দেখুন,আপনার পার্টনারও এসে পড়েছে।নিলীমাকে দেখিয়ে কথাটা বললো আয়ন।নিলীমা আর রোহান দুজনেই চমকে গেলো।এই বিষয়টা আয়ন কিভাবে জানলো।
কি হলো,তোমাদের দুজনের মুখ বেলুনের মতো এমন চুপছে গেলো কেনো।ও বুঝতে পারছি,হয়তো এটা ভাবছো,এতো সতর্ক থাকার পরও আমি কিভাবে জানলাম,তোমরা দুজন দুজনার সাথে হাত মিলিয়েছো।
ওয়েট বলছি।
–তো নিলীমা নিজেকে খুব স্ম্যাট মনে করো তাই না।আমার কেবিনে দাঁড়িয়ে আমার আর দিনেশের সেদিনের কথাগুলো তুমি রেকর্ড করেছিলে তাইনা।নিলীমা নিজের সাফাই দিতে চাইলে আয়ন হাত উঠিয়ে বাধা দেয়।আমি কোনও সাফাই শুনতে চাইনা নিলীমা।আমার কেবিনের আশেপাশে কিছু গোপন সিসিটিভি ক্যামেরা আছে যা আমি ছাড়া কেউ জানে না।তাই মিথ্যা বলার চেষ্টা করোনা।আর সেই ফুটেজ তোমার লেপটপ থেকে প্রিয়ুকে সেন্ড করা হয়েছিলো।তাও আমি জেনে গেছি।সো ডোন্ট ইভেন ট্রাই টু ফুল মি।না হলে তোমার জন্য ভালো হবে না।আর তোমাকে এই আইডিয়াটা দিয়েছিলো রোহান।আই এম রাইট নিলীমা।
“নিলীমা চুপ।ওর মুখ দেখার মতো ছিলো।চোর ধরা পড়লে যেমন হয় আর কি।”
–তুমি কেনো করেছো তা আমি বুঝতে পারছি।আর তোমাদের সামনে আনার জন্যই আমিই প্রিয়ুকে কিছুদিন লুকিয়েও রেখেছিলাম সবার অগোচরে।নিজের মানসম্মানের কথা চিন্তা না করে,প্রিয়ুর গায়েব হবার রিপোর্টও করেছি থানায়।শুধু তোমাদের দুই ইঁদুরকে বের করার জন্য।তোমরা এতোটাই এগ্রিসেভ ছিলো যে,প্রিয়ু কোথায় চলে যাওয়ার খবর শুনে খুশিতে একে ওপের সাথে দেখা করতে চলে এলে।আর তখনই জানতে পারলাম তোমরা একসাথে আছো।
যাই হোক তোমার থেকে এমনই আশা করেছি নিলীমা।কিন্তু মিস্টার রোহান।এবার আর চুপ থেকে লাভ নেই। বলুন কেনো করেছেন আপনি।প্রিয়ুর সাথে আপনার এমন কি দুশমনি বলুন।আমি ভদ্র ভাবে জিঙ্গেস করছি বলেদিন।তা না হলে,আমার কঠিন রুপ আপনি সহ্য করতে পারবেন না।এখন আর লুকিয়ে কোনও লাভ নেই,আপনার অতিতের অনেক কিছুই আমার জানা,কিন্তু এমন কিছু আছে যা খুব সাবধানে আপনি লুকিয়ে রেখেছেন তা জানতে চাই।বলুন।
……………………………
আশিষ রহমান(প্রিয়ুর পিতা) আসমাকে বিয়ে দিয়েছিলো তারই অফিসের কলিগ হাসান কবিরের সাথে।লোকটি নম্র ভদ্র আর খুব সৎ ছিলেন।আর আশিষ রহমান এতেই মুগ্ধ ছিলেন।টাকা পয়সা কম থাকলেও বোন তার সুখে থাকবে এই ভরসায় হাসানের সাথে বিয়ে দেন।বিয়ের প্রথম দিকে আসমা আর হাসানের সংসার ভালোই চলছিলো।একবছরের মধ্যে কোল জুড়ে রোহানও এসে পড়ে।কিন্তু রোহান হবার পরই সেলিনা বেগম কেমন পালটে যেতে শুরু করে।হাসানের সংসারে কোনও কিছুতেই সন্তুষ্ট না।প্রতিদিন কিছু না কিছু জিনিসের জন্য ঝগড়া বেধেই থাকতো সংসারে।দিনদিন আসমা বেগমের চাহিদা যেনো বাড়তে থাকে।হাসান আসমার এমন পরিবর্তনের কারণ বুঝতে পারছিলো না।আসমাকে অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু কোন লাভও হলো না।একদিন সকালে ছেলে রোহানের কান্নার শব্দে হাসানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঘুম থেকে উঠে সারা বাড়ী খুঁজে আসমাকে পেলো না।মনের মধ্যে একটা অজানা ভয় হতে লাগে হাসানের।ছেলেকে কোলে নিতে গেলে বিছানার পাশে একটা চিঠি পায় হাসান।যা আসমাই লিখেছিলো।
“আমি চলে গেলাম হাসান।আমাকে খুঁজে লাভ নেই।তোমার অভাবী সংসারে আমার থাকা সম্ভব না।আমার অনেক বড় বড় স্বপ্ন যা তুমি কখনো পুরণ করতে পাড়বে না।খুব শীঘ্রই ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবো সাইন করে দিও।আর রোহানকে তোমাকে দিয়ে গেলাম।ওকে আমার কোনও প্রয়োজন নেই।
ইতি
আসমা।”
চিঠিটা পড়ে হাসান যেনো বোবা হয়ে গেলো।আসমা এমন একটা কাজ করবে হাসান ভাবতেও পারেনি।নিজের এতোটুকু একটা বাচ্চাকে একা ফেলে কোনও মা কি আসলেই চলে যেতে পারে,এমনও কি হতে পারে দুনিয়ায়,হাসানের জানা ছিলো না।
এতোটুকু বলেই,রোহান চুপ হয়ে গেলো,” বাকি কথা না হয় আপনার বাবা ইরফাত মাহমুদ কে জিঙ্গেস করুন।তার কারনেই তো,তার সম্পত্তির লোভে পড়ে মিসেস আসমা নিজের দুধের বাচ্চাটিকে একা ফেলে চলে এসেছিলো।
“-ইরফাত সাহেব ও আসমা বেগম লজ্জায় পারেনা মরে যাবে।এতো বছর পর নিজের ছেলে মেয়েদের সামনে নিজের অতিতে করা জগন্য কাজটি যে এভাবে সামনে আসবে ভাবতেও পারেনি।ইরফাত সাহেবকে চুপ থাকতে দেখে মহিনী বলা শুরু করলো পরের কাহিনী।”
–তোমার পিতা ইরফাত মাহমুদ ছিলেন আশিষ আর হাসানের অফিসের বস।তবে আশিষ রহমানের সাথে ছিলো বন্ধুসুলভ সম্পর্ক।তাই মাঝেমাঝে আশিষের বাসায় ইরফাতের যাওয়া আসা হতো।আর সেই বাসাই প্রথম আসমার সাথে ইরফাতের দেখা হয়।আস্তেআস্তে এই দেখা গভীর সম্পর্কে পরিণত হয়।ব্যাপারটা কেউ আন্দাজ করতে না পারলেও অন্তিকা বুঝে যায়।বলে না স্বামীর কুকির্তী বউয়ের কাছে লুকানো সম্ভব না।ইরফাতও পারেনি।
“অন্তিকা!কে উনি?”
মহিনী একবার ইরফাতের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে আয়নের দিকে আবার দৃষ্টি এনে বললো,অন্তিকা তোমার মা আয়ন।চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ড্রাসট্রির ওরিজিনাল মালিক অন্তিকা চৌধুরী।যার নামে তোমাদের অফিস,ফ্যাক্টরি সব কিছু।এসবের মালিক তোমার মা ছিলো।ইরফাতের নিজের না।তোমার মা তো বড় লোক বাপের একমাত্র সন্তান ছিলো।তোমার পিতাও একসময় এই অফিসের কর্মচারী ছিলেন।ওখান থেকেই তোমার মায়ের ইরফাতকে পছন্দ হয় এরপর বিয়ে।সবই ঠিক ছিলো।কিন্তু এই আসমা এসে মাঝখানে তোমার মায়ের সুখের সংসারে আগুন লেগে যায়।তোমরা ছোট ছিলে তাই মনে নেই।তোমার বাবার সাথে অন্তিকার আসমাকে নিয়ে রোজ ঝগড়া হতো।একসময় তোমার মা প্রচণ্ড ডিপ্রেশনএ পড়ে যায়।ডিপ্রেশন এতো মাত্রায় ছিলো যে একদিন রাতে অন্তিকা অনেকগুলো ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ফেলে।আর সেদিনই…..মহিনী আর বললো না।
এরপর রোহান আবার বলা শুরু করে”,আপনার মায়ের মৃত্যর পর আমার মায়ের পথের কাটা মনে হয় এমনেই সরে গেলো।তাই তো তিনি রোজ রোজ বাবার সাথে ঝগড়া করতো।আর একসময় বাড়ী ছেড়ে চলে যায়।আর গিয়েই কিছুদিন পর আপনার বাবাকে বিয়ে করে ফেলে।এই বাড়ীতে এসে উঠে।”
আসমা ভেবেছিলো,”অন্তিকা মৃত্যর পর এই সম্পত্তি ভোগ করতে পারবে।তোমাকে আর মায়াকে বোডিং স্কুলে পাঠিয়ে সারা জীবন শান্তিতে কাটাতে পারবে।তোমাদের এই বাড়ীর সীমানায় আর জায়গা দেবে না।কিন্তু তোমার মায়ের রেখে যাওয়া দলিল যখন উকিল পড়লো তখন ওদের পায়ের নিচের জমি সরে গিয়েছিলো।”
–তোমার মা তার সব সম্পত্তি তোমার সন্তানের নামে করে দিয়েছিলো আয়ন।আর মায়ার দায়িত্বও তোমার উপর দিয়ে গিয়েছিলো।মায়া চাইলে তোমার থেকে সম্পত্তির ভাগ নিতে পারবে।না হলে সব তোমাকে দেখাশুনার ভার দিয়েছে।সন্তান না থাকলেও তুমি এই সম্পত্তি কাউকে দান বা লিখে দিতে পারবে না।তার জন্য তোমার বউয়ের মর্জি আর সিগনেচারও লাগবে।আর বিয়ের আগে তোমার মৃতুও হলে তখনো সম্পত্তি কেউ পেতো না।শুধু মায়ার প্রতি মাসের খরচের টাকা আসবে তখন।তোমার মায়ের মৃত্যর পর জাতে তোমাকে কেউ হার্ম করতে না পারে,তাই এসব ব্যবস্থা আয়ন।তাইতো একপ্রকার বাধ্য হয়ে তোমাকে আর মায়াকে আসমা একসেপ্ট করে নেয়।আর তোমাদের কখনো বুঝতে দেয়না ও তোমাদের সৎ মা।আর সব থেকে বেশি মাথায় তুলে আয়নকে।কারণ এই বাড়ীতে রাজ করতে হলে আয়ন খুশি থাকাটা জরুরী।তাইতো আসমা এতো বছর প্রিয়ুর পিতার সাথে কোনও সম্পর্ক রাখেনি।আর কখনো চায়নি প্রিয়ু এই বাড়ীর বউ হয়ে আসুক।কিন্তু এই ছেলে(রোহানকে)তার মানে তুমি আসমার প্রথম ঘরের সন্তান।তাহলে আয়ন প্রিয়ুর পিছনে পড়েছিলে কেনো।তোমার দুশমনিতো তোমার মায়ের সাথে।
–মা!কে মা।আমার কোনও মা নেই।যে মা তার দুধের সন্তানকে ফেলে চলে যায়,শুধু মাত্র নিজের এসোআড়াম এর সুখে।সে কখনো কারো মা হতে পারেনা।কখনো না।আমি তো মিস্টার ইরফাত মাহমুদকে কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম।তাই আমি প্রিয়ুর মাধ্যমে আয়নকে কষ্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করি।কারণ ইরফাত মাহমুদ এর একটাই দূর্বলতা আর তা হলো তার প্রথম ঘরের ছেলে আয়ন।অন্তিকা চৌধুরীর জান ছিলো আয়ন,চোখে হারাতো আয়নকে।তাই অন্তিকা চৌধুরীর মৃত্যুর পর ইরফাত মাহমুদ নিজের ভুল শুধরাতে আয়নকে নিজের সব ভালোবাসা দিয়ে লালনপালন করে।কখনো কোনও কিছুর অভাবই দেয়নি।বহু বছর পর আমার পিতা আমাকে সব খুলে বলে।আর তখন থেকেই নিজের মায়ের উপর আর তার আশিকের উপর ঘৃর্ণা জন্মাতে লাগে।এরপর আস্তেআস্তে সব খোঁজ নেওয়া শুরু করি।আমার প্রথম টার্গেট আমি প্রিয়ুকে বানাই।আমি ভেবেছিলাম প্রিয়ুর মাধ্যমে আমি এই পরিবারে এন্ট্রি করবো।কিন্তু তার আগেই,আশিষ রহমান আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করে।আর আমার সম্পর্কে খোঁজ নিতে থাকে।তাকে আটকাবার জন্য আমি প্রথমে ছবিগুলো ভাইরাল করে দিই।কিন্তু আমি জানতাম ছবিগুলোতে প্রিয়ুর কেবল বদনামী হবে,কিন্তু এতো কিছুর পরও আয়ন প্রিয়ুকে ছাড়বে না।তাই একটা ফেক ভিডিও বানিয়ে আমি এই বাড়ীর কিছু সদস্যদের মোবাইলে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।আর আশিষ রহমানের মোবাইলেও।কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি ভিডিওটি দেখে যে উনি হার্ট এটাক করবে।সরি প্রিয়ু।আমি তাই ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাই।আমি ভেবেছিলাম,প্রিয়ুর শোকে আয়ন নিজেকে তিলেতিলে শেষ করে দিবে।আর ছেলের কষ্ট দেখে বাপও ছটফট করবে।যেমন আমার পিতা করেছিলো।আর এক তীরে দু নিশান করা ছিলো আমার উদ্দেশ্য।বাপ ছেলে দুজনই শেষ।আর আয়নের কিছু হলে,মিসেস আসমাকে পথে বসা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকতো না।কারণ বিবাহের আগে আয়ন মারা গেলে সম্পত্তি সব কোনও এতিমখানায় চলে যেতো।এতিম বাচ্চাদের নামে।
সবই ঠিক ছিলো,প্রিয়ু আয়ন থেকে দূরে চলে গেলো।আয়ন এসব সহ্য করতে না পেরে বিদেশ চলে গেলো।পরিবারের সাথেও কোনও সম্পর্ক রাখলো না।আমিও চুপ হয়ে গেলাম।আর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগে গেলাম।আর একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম।কিন্তু আমার সব প্লান ভেস্ত করে আয়ন আবার ফিরে এলো,আর প্রিয়ুকেও খুঁজে বের করে বিয়ে করে ফেললো।আমার কিছু করার আগেই।বাড়ীতে ঢুকার কোনও পথ পাচ্ছিলাম না।তাই প্রিয়ুর সাথে বন্ধুত্ব করার অভিনয় আবার শুরু করলাম।
রোহান আসমার দিকে তাকিয়ে,আমি এই মহিলাকে চরম ঘৃর্ণা করি।পথে ভিখারীর মতো ভিক্ষা করতে দেখতে চাই।আর আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো।
-“নিজের মায়ের সম্পর্কে এমন নোংরা কথা অনিক আর শুনতে পারলো না,চলে গেলো সেখান থেকে।মা লোভী তা জানতো কিন্তু এতোটা নিচু মন মানসিকতা হবে তা জানতো না।”
ইরফাত মাহমুদ করুন চোখে আয়নের দিকে তাকালো,আমাকে ক্ষমা করে দিস আয়ন।আমি সত্যি অনুতপ্ত।আমি জানতাম না অন্তিকা এমন পদক্ষেপ নিবে।আমি ওকে বলেছিলাম আমি এসব থেকে দূরে সরে যাবো।কিন্তু তোমার মায়ের সন্দেহ কিছুতেই দূর হচ্ছিলো না।আর এসব করে বসলো।আসমাকেও আমার তখন বিয়ে করতে হয়েছিলো অনেকটা বাধ্য হয়ে,কারণ আসমা তখন পেগনেন্ট ছিলো।কিন্তু ভাগ!বিয়ের পর সেই বাচ্চাটা মিসক্যারেজ হয়ে যায়।আয়ন…..ইরফাত সাহেবের আর কোনও কথা শুনলো না আয়ন উঠে চলে গেলো নিজের রুমে।ওর যা বুঝার বুঝে গিয়েছে।এখন আর কারো কথা শুনার কোনও ইচ্ছা নেই।
–আয়ন জানতো আসমা বেগম ওর আসল মা না।কিন্তু তবুও মায়ের আসনে বসিয়ে ছিলো।কিন্তু সেই মা যে ওর নিজের মায়ের মৃত্যর জন্য দায়ী তাতো সপ্নেও ভাবেনি।এতোদিন শুধু উনি অভিনয়ই করে গিয়েছে,শুধু সম্পত্তির জন্য।আয়ন চুপচাপ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।মানুষ কতোটা জগন্য আর নোংরা হতে পারে,আয়ন আজ নিজের বাবা নামের মানুষটিকে দেখে বুঝলো।প্রিয়ু এসে আয়নের কাধে হাত রাখে।আয়ন নিজেকে এতোক্ষণ শক্ত রাখলেও এখন প্রিয়ুর সামনে আর নিজেকে আটকাতে পাড়লো না।প্রিয়ুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।নিজের মাকে আজ খুব মনে পড়ছে ওর।তাই প্রিয়ুকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে কাঁদতে বলছে,”প্রিয়ু আমার মা লাগবে,একটা মা এনে দিবি।যে মা আমাকে সত্যি ভালোবাসবে।অভিনয় করবে না।আমাকে ধোকা দিবে না।প্লিজ প্রিয়ু দেনা এনে আমাকে একটা মা।”
প্রিয়ুর চোখেও পানি এসে পড়েছে।মা হারানোর বেদনা প্রিয়ু জানে।তাই আয়নের কস্টগুলো খুব ভালো করেই অনুধাবন করতে পারছে।প্রিয়ু কখনো ভাবতেও পারেনি,ওর আপন ফুফু এমন কাজ করেছে।আয়নকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই আজ ওর।কেবল আয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
………………….
রোহান যে শাস্তি ওর মাকে আর ইরফাত মাহমুদকে দিতে চেয়েছিলো,তা আয়ন দিয়ে দেয়।আয়ন প্রিয়ুকে নিয়ে বাড়ী ছেড়ে চলে যায়।অনিকেও ছাড়তে চেয়েছিলো।এমন মায়ের সাথে ও নিজেও থাকতে চায়না।কিন্তু আয়ন বাধা দেয়।ইরফাত মাহমুদ আর আসমা বেগম আয়নের অপরাধী কিন্তু অনিকের সাথে তারা এমন কিছু করেনি।আর আয়ন এতোটাই নির্দয় না,এই বয়সে উনাদের ঘর ছাড়া করবে না।তাই অনিককে রেখে গেলো উনাদের খেয়াল রাখতে।
–প্রিয়ু আর আয়ন নতুন সংসার শুরু করছে।রোহানও ওদের থেকে দূর চলে গিয়েছে।আসমা বেগম অনেকবার ক্ষমা চেয়েছিলো রোহানের কাছে।কিন্তু রোহান করেনি।তবে রোহান প্রিয়ুর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলো।এবার ও সত্যি অনুতপ্ত ছিলো।
দিনেশ তিতিরের বিয়েটা প্রথমে ওর পরিবার মেনে না নিতে চাইলেও পরে মেনে নেয়।তিতির নিজের পরিবারকে বুঝিয়ে বলে,দিনেশ ওর জন্য কতো বড় সেক্রিফাইজ করেছে।অবশেষে দিনেশকে তিতিরের পরিবার সদরে গ্রহণ করে নিলো।
–এভাবেই কেটে গেলো কয়েক মাস।আয়ন এখন হসপিটালের করিডোর এ বসে আছে। টেনশনে ওর হাতপা কাঁপছে।দিনেশ,অনিক আর তিয়াশ বেশ কয়েকবার এসে রিলেক্স থাকতে বললেও নিজেকে কিছুতেই রিলেক্স রাখতে পারছে না আয়ন।আয়ন শুধু ওটির বাহিরে লাল বাতিটির দিকে তাকিয়ে আছে।ঘন্টা খানিক পর নার্স দুহাতে দুটো বাচ্চা নিয়ে আয়নের সামনে দাঁড়ালো।সবাই এগিয়ে আসলো বাচ্চাদুটো দেখে।আয়ন প্রিয়ুর টুইন বেবি হয়েছে।তার থেকেও বেশি আশ্চর্য হলো,একটি ছেলে, একটি মেয়ে হয়েছে।আয়ন বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে,কি নিষ্পাপ বাচ্চাগুলো।কাপাকাপা হাতে বেবিগুলোকে ধরার আগে নার্সকে জিঙ্গেস করলো,প্রিয়ু কেমন আছে।
বিশ বছর পর,
তুই এখনো এতো সুন্দর কেনো বলতো।আমি আজও তোর থেকে নযর সরাতে পারছি না।এখন কিন্তু তুই কেবল আমার স্ত্রী না,শ্বাসুরীও।তোর মেয়ে প্রিয়তার বিয়ে হয়েছে আজ জানিস।আয়ন চোখের চশমাটা একটু মুছে আবার পড়ে নিলো।হয়তো চোখের পানিতে কিছুটা ঝাপসা হয়ে গিয়েছে বলে।
আমি কিন্তু বুড়ো হয়েগিয়েছি প্রিয়ু,আমার সাথে তুইও একটু বুড়ো হলে খুব কি দোষের হতো বল।
“হঠাৎ পিয়ুষের কন্ঠ ভেসে আসলো,বাবা তুমি আজও মায়ের সাথে কথা বলছো।”
কি করবো বল,বিশ বছর ধরে আমিতো বলেই যাচ্ছি,তোর মা তো কিছুই বলে না।শুধু হাসে।এই মেয়েটা বেঁচে থাকতেও আমাকে জ্বালিয়েছে।আর দেখ এখন মরে গিয়েও আমাকে জ্বালাচ্ছে।আমার সুখ,হাসি,রাতের ঘুম সব কেড়ে নিয়েছে।আমি জানি,আমাকে এভাবে দেখে খুব আনন্দ পাচ্ছে।সত্যি বলতে আমাকে শাস্তি দিয়ে গেলো তোদের মা,বেঁচে থাকার শাস্তি।ওর পেগনেন্সিতে রিস্ক থাকার পরও আমাকে জানায় নিই একটিবার।অনেক বড় অন্যায় করেছে ও জানিস।আমি ওর থেকে একটা মা চেয়েছিলাম।কিন্তু ওর জীবনের বিনিময় না।ও আমাকে তোদের রুপে মা বাবা দুজনতো দিয়ে গেলো,কিন্তু নিজে চলে গেলো আমাকে একা ফেলে।
আমাকে বেঁচে থাকার অভিশাপ দিয়ে,নিজে নিদ্রায় চলে গেলো।এ কেমন ভালোবাসা বলতে পারিস।
“বাবা তুমি মাকে অনেক ভালোবাসতে তাই না।”
আয়ন মুচকি হেসে পিয়ুষের দুকাধে হাত রেখে বললো,
আমি কালও তোদের মাকে খুব ভালোবাসতাম,#এখনো_ভালোবাসি।
যতোদিন এই হ্রদয়ে প্রাণ থাকবে,ভালোবেসে যাবো।
সমাপ্তি।
–সুখ একটা অচিন পাখি কেউ পায়তো,কেউ পায়না–
শেষ হলো গল্পটি।নিজের অনুভূতি অবশ্যই জানাবেন।
রিবিউ তো আমি আশা করতেই পারি,কি বলেন।
❌কপি নিষিদ্ধ।