এখানেই শেষ নয় পর্ব -০৭

#এখানেই_শেষ_নয় (০৭)

#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)

আমরা দুইজনে কফি খাচ্ছি আর গল্প করছি হঠাৎ টেবিলের অপর সাইডে পরিচিত একটা মুখ দেখে থমকে গেলাম। আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না ও এইখানে তাও আবার এই অবস্থায়। টেবিলের অপর সাইডে আর কেউ নয় স্বয়ং তাকিয়া বসে রয়েছে। শুধু তাকিয়া একা নয় ওর সাথে একটা ছেলে ও বসে রয়েছে। দুইজনে এমন ভাবে চিপকে রয়েছে যেন তারা স্বামী স্ত্রী। কিছু দিন আগে সামিরা আমাকে দেখিয়েছিল তাকিয়ার ছবি।যার কারনে আমার চিনতে অসুবিধা হয় নি যে , এইটা তাকিয়া।তার মানে আমার সন্দেহ ঠিক। তাকিয়া সু”ই”সা”ই”ড করার মিথ্যা নাটক করে শায়ানের থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।আর শায়ান সেইটা বুঝতে ও পারে নি।আম্মু ঠিকই বলেছিল শায়ান টা বড্ড অবুঝ।বয়সের দিক থেকে পরিপক্ক হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি বাড়ে নি। আমি ও ঝটপট কয়েক টা পিক তুলে নিলাম আমার জুনিয়র বরের লেখিকা গার্লফ্রেন্ডের। কিন্তু একটা বিষয় আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না। আমি যতটুকু জানি তাকিয়া একজন বড়লোক বাবার মেয়ে ,ওর তো টাকা পয়সার কোন অভাব থাকার কথা নয়। তারপর ও তাকিয়া শায়ানের থেকে কেন মিথ্যা কথা বলে টাকা নেয়??কি এমন কারণ থাকতে পারে?

একি কুয়াশা! কফি খাচ্ছো না কেন? ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।

এই যে খাচ্ছি তো।

তোমাকে কোন কারনে চিন্তিত লাগছে।কি হয়েছে কুয়াশা? আমাকে বন্ধু মনে করে বলতে পারো।

কিছু না স্যার । আজকে নবম শ্রেণীর তে আমার জাবেদার ক্লাস নিতে হবে।বাসা থেকে ও প্রিপারেশন নিয়ে আসিনি।তাই ভাবছিলাম ঠিক মতো পারব তো ক্লাস নিতে?

তুমি বরং এখন ব‌ইয়ের পাতায় একটু চোখ বুলিয়ে নাও। আমার এক্ষুনি ক্লাস শুরু হবে।আসছি আমি,বাই।

ঠিক আছে স্যার। মিনহাজ স্যারের সাথে কথা বলতে বলতে টেবিলের অপর সাইড কখন যে ফাঁকা হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি।ও শীট। সাপুড়ে বীণ বাজানোর আগেই সাপ হাত ছাড়া হয়ে গেল। কোন ব্যাপার না। গর্ত খুঁড়ে কিভাবে সাপ বের করতে হয় এই কুয়াশার খুব ভালো করে জানা আছে।ক্যাশ কাউন্টারে বিল পেমেন্ট করতে গিয়ে শুনি মিনহাজ স্যার বিল পরিশোধ করে গিয়েছে। আচ্ছা আঙ্কেল ৪ নাম্বার টেবিলে যারা বসে ছিল, আপনি কি তাদের কে চিনেন?

আমি তো খেয়াল করি নি মা। আচ্ছা তুমি দুই মিনিট অপেক্ষা কর আমি সিসি ক্যামেরা চেক করে বলছি।

ঠিক আছে আঙ্কেল।

মা এই মেয়েটার নাম তাকিয়া।আর সাথে ওর হাজব্যান্ড রিয়ান। কিছুদিন আগেই এদের বিয়ে হয়েছে। তাকিয়ার বাবা আমার পরিচিত। আমি ও উপস্থিত ছিলাম ওদের বিয়েতে।

ঠিক আছে আঙ্কেল ধন্যবাদ। ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে সোজা ক্লাসে চলে আসলাম। কিন্তু মনোযোগ দিতে পারছি না।তাকিয়ার ব্যাপার টা আমার মস্তিষ্কে গেঁথে গেছে। আমি ভেবেছিলাম সাধারণ সাপ হবে। কিন্তু এখন তো দেখছি সাক্ষাৎ কালনাগীনি।তাজা একটা বর থাকতে ও আমার ভুলোভালা জুনিয়র বরের থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ব্যাপার কেমন এক ফুল দো মালি টাইপের হয়ে গেল।তাকিয়ার ব্যাপার টা নিয়ে ছক কষছিলাম এর‌ই মধ্যে স্টুডেন্টরা বলে উঠলো,ম্যাম আমরা জাবেদার ডেবিট ক্রেডিট হিসাব টা কিভাবে নির্ণয় করবো বুঝতে পারছি না।

সমস্যা নেই। আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।হিসাব পাঁচ প্রকার এইটা নিশ্চয় তোমরা জানো।

জ্বি ম্যাম।

পাঁচ প্রকার হিসাব হলো:
১.সম্পদ
২.দায়
৩.মালিকানাস্বত্ত্ব
৪.আয়
৫.ব্যয়
এর মধ্যে সম্পদ আর ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ডেবিট আর হ্রাস পেলে ক্রেডিট।অপর দিকে দায়,মালিকানা স্বত্ব ,আয় বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট আর হ্রাস পেলে ডেবিট। যেমন একটা উদাহরণ দেই:নগদ ১০০০০ টাকা দিয়ে একটা আলমারি ক্রয় করা হলো। এইখানে আলমারি ক্রয় করার ফলে আমাদের সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে‌,আর নগদ অর্থ হ্রাস পেয়েছে। তাহলে আমাদের জাবেদা হবে সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ায় জন্য আলমারি হিসাব ডেবিট আর নগদ অর্থ কমে যাওয়ায় জন্য নগদান হিসাব ক্রেডিট।
অন্য একটা উদাহরণ দেই , কামালের নিকট নগদে বিক্রয় ৫০০০ টাকা। এইখানে নগদে বিক্রয় করার ফলে নগদ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে আর বিক্রয় করার ফলে আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।তাহলে এইখানে জাবেদা হবে নগদ টাকা বৃদ্ধির কারনে নগদান হিসাব ডেবিট অপরদিকে আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কারণে বিক্রয় হিসাব ক্রেডিট।এই এক‌ই নিয়মে সব জাবেদা করতে হবে।আগে বুঝতে হবে কোন হিসাব টা বৃদ্ধি পেয়েছে আর কোনটা হ্রাস পেয়েছে।আশা করি তোমারা বুঝতে পেরেছ?

জ্বি ম্যাম।পারব আমরা।

লাঞ্চের পর আরো দুইটা ক্লাস শেষ করে আমি আম্মু বাসায় ফিরে এলাম। রুমে এসে দেখি শায়ান ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। শায়ান আমার জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত করে নিয়ে আসো তো। খুবই ক্লান্ত লাগছে। একটু তাড়াতাড়ি যাও। আমি ততোক্ষণে ফ্রেশ হয়ে আসি।

আমাকে বলছো?

আমার কি দ্বিতীয় বর আছে যে তাকে বলবো?

আমি নিজে কখনো জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খাই না। ‌আর তোমাকে আমি শরবত করে এনে খাওয়াবো?হাও ফানি।

শায়ান তোমাকে কিছু দেখানোর আছে আমার।

আমার কিছু দেখা লাগবে না সিনিয়র বেবি। তোমার কিছু দেখানো মানেই আমার মানসম্মান নিয়ে টানাটানি করা।তার থেকে বরং আমি তোমার জন্য শরবত করে নিয়ে আসছি।

এইতো ব‌উয়ের বাধ্য গুলুমুলু বর একটা গাল টেনে দিয়ে বললাম।

এই একদম আমার গাল টানবে না।বিরক্ত লাগে এইটা আমার।

আমার সেই ছোটবেলার অভ্যাস। বাচ্চাদের দেখলে গাল টানতে না পারলে ভালো লাগে না।এইটা কে আদর করা বলে বুঝলে‌।

লাগবে না আমার এমন আদরের ।

ঠিক আছে। তুমি তাড়াতাড়ি শরবত নিয়ে আসো।

ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি শায়ান সত্যি সত্যি শরবত নিয়ে আসছে।এই নাও তোমার শরবত। এখন আবার মুখে তুলে খাইয়ে দিতে বলো না যেন।

অবশ্য তুমি চাইলে দিতে পারো ‌। আমি কিছু মনে করব না।

তুমি ভেবো না সিনিয়র বেবি আমি তোমাকে ভালোবেসে শরবত করে নিয়ে আসছি। শুধু মাত্র ভিডিও টার জন্য ব্লাকমেইলের শিকার হয়ে আমাকে এতো কিছু করতে হচ্ছে।

তোমার মতো কতো ঘাড়ত্যাড়া পোলাপাইন এক চুটকি তে সোজা করে দিয়েছি ।আর তুমি কি না বাসর রাতে আমার গলায় ছুরি চালিয়ে দিয়েছিলে? সত্যি শায়ান তোমার সাহসের প্রশংসা করতে হয়। তুমি যার কারনে আমার গলায় ছুরি ধরেছিলে তোমার সেই লেখিকা গার্লফ্রেন্ড যে বিবাহিত তুমি কি জানো?তাকিয়ার বিয়ের কথা জানার পরেও শায়ানের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেল না। আমি তো ভেবেছিলাম হয়তো গার্লফ্রেন্ডের বিয়ের সংবাদে বেচারা কান্নাকাটি করে রুমে মধ্যে হাঁটু পানি বানিয়ে দিবে।বাট সেরকম কিছু হলো না।

তুমি কিভাবে জানলে?আর তুমি যে সত্য কথা বলছো তার ও তো কোন প্রুফ নেই।

প্রুফ আছে শায়ান। এতোটা কাঁচা খেলোয়াড় আমি ন‌ই। আমি জানতাম মুখের কথায় তুমি বিশ্বাস করবে না।তাই প্রমাণ সঙ্গে করে নিয়ে আসছি।লুক এট দ্যা ফোন। প্রথমত স্বামী স্ত্রী না হলে কখনো কেউ এইভাবে চিপকে থাকবে না। আর দ্বিতীয়ত এই রেকর্ডটা যা আমি ক্যাশ কাউন্টারের আঙ্কেলের মুখে শুনেছি।দেখ শায়ান অনেক হয়েছে আর নয়। তোমাকে আমি বারবার বলেছি তাকিয়া ভালো মেয়ে নয়।ওর থেকে ফিরে এসো প্লিজ। আমি বলছিনা আমাকে ভালোবাসার জন্য স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার জন্য তুমি তাকিয়ার থেকে ফিরে এসো। এসবের কোন প্রয়োজন নেই আমার। তবু ও তুমি তাকিয়ার থেকে ফিরে এসো। এইটা শুধু আমার একার ন‌ই আম্মুর ও অনুরোধ।

সরি আমি তোমাদের অনুরোধ রাখতে পারব না। আমি চাইলেও তাকিয়া আমাকে মুক্তি দেবে না। আমার যে তাকিয়ার কাছে হাত পা বাঁধা রয়েছে।

কেন শায়ান?চুপ করে থেকো না শায়ান। আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি।

আমি বলতে পারবো না সিনিয়র বেবি।

চুপ করে থাকা কোন সমস্যার সমাধান নয়। তোমার জন্য প্রতিনিয়ত আম্মু কষ্ট পাচ্ছে। আমি চোখের সামনে আম্মুর কষ্ট সহ্য করতে পারব না। তুমি প্লিজ বল শায়ান। এরপর শায়ান যা বলল তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।তাকিয়ার সত্য উদঘাটন করতে এসে যে এতবড় একটা সত্যের মুখোমুখি হতে হবে আমি কখনো ভাবিনি।

চলবে ইনশাআল্লাহ
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here