#এটা_গল্প_হলেও_পারতো
পর্ব—০৯
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
ভদ্রমহিলার বুঝতে আর বাকি রইলো না কেউ চোখে ধূলো দিয়ে তার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।ফোনটা ছুড়ে ফেলে টাকার ব্রিফকেসের দিকে ছুটে গেলো সে।অমনি সেই ব্যক্তি এসে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লো।সেও তার সাথে ছুটে গেলো।
রাত্রির মা হা হুতাশ করতে করতে ব্রিফকেসটা হাতে নিলো তারপর মেঝেতে বসে পড়ে।লোকটা ব্রিফকেস থেকে একটা টাকার বান্ডেল তুলে পরখ করতে লাগলো,
—-সর্বনাশ,এগুলো তো সব ফেইক টাকা।
—কি বলছো তুমি এগুলো,এগুলো আসল টাকা নয়।
—নাহ,এখানের একটা নোটও আপনি কাজে লাগাতে পারবেন না।কে দিয়েছে আপনায় এগুলো,
—বললাম না,একটু আগে একটা লোক টাকা দিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে আমার থেকে,সেই দিয়েছে।
—আপনাকে চূড়ান্ত বোকা বানানো হয়েছে ম্যাডাম,এটা কি করলেন আপনি?নিজের সর্বনাশ তো নিজেই করলেন সাথে আমারো, এবার আমি বসকে কি জবাব দেবো,
—ভুল করেছি আমি,তাকে বিশ্বাস করে ভুল করেছি আমি।আমার টাকা তো গেলোই সাথে মেয়েও।এবার কি করবো আমি,
—কি আর করবেন,বসে বসে কপাল চাপড়ান।আসলে আপনাদের মতো অতি লোভী মানুষদের সাথে এমনটাই হয়।টাকার লোভে হিতাহিতজ্ঞানশুন্য হয়ে পড়েন আপনারা।
—আমি ছাড়বো না,কিছুতেই ওকে ছাড়বো না।একবার খুঁজে পাই।তারপর কি অবস্থা করবো ও নিজেই ভাবতে পারছে না।
—সেই আশাতেই প্রহর গুনতে থাকেন।একটা সত্যি কথা বলতে কি জানেন আপনি নিজেকে যতোটা চালাক মনে করেন ততোটাই বোকা।বাই দ্যা ওয়ে,আমি গেলাম।ভালো থাকবেন।নিজের খেয়াল রাখবেন।
এই বলে লোকটা চলে গেলো।এদিকে টাকা আর মেয়ে হারানোর শোকে হতবিহ্ববল ভদ্রমহিলা।পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে যাবে,সেটা করতে গেলে সে নিজেই আগে ফাঁসবে এটা ভালো করেই জানা তার।তাই এই মুহুর্তে হাত পা গুটিয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় দেখতে পাচ্ছে না সে।
–
–
এদিকে রাত্রির জ্ঞান ফিরে এসেছে।ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাতে লাগলো সে।ঠিক তখন আমান সাহেব ওর সামনে থেকে সরে পড়ে।কারণ সে চায় না রাত্রি এই মুহূর্তে তাকে দেখে ফেলুক।নিজেকে একটা অপরিচিত জায়গায় দেখে বেশ ভরকে গেলো রাত্রি।
—একি,আমি এখানে….?আর আপনি কে বলুন তো,(তিয়াশকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন)
—আপনি আমাকে চিনবেন না।আমার নাম তিয়াশ।আর এটা আমারই ঘর।
—মানে,আপনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?আর আমি….
রাত্রির সবটা মনে পড়তে লাগলো।মায়ের সাথে চা খেতে খেতে গল্প করা,(এখানে খেতে খেতে বলতে পান করা বুঝানো হয়েছে)তারপর হঠাৎ করে মাথায় যন্ত্রণা অনুভব করা।এরপর আর কিছু মনে নেই রাত্রির।তবে সে এইটুকু বুঝতে পেরেছে চা টা খেয়ে নিশ্চয়ই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু তারপরে এই লোকটার সাথে এখানে এলো কিকরে বুঝতে পারছে না।
—কি হলো,কিছু মনে পড়লো কি?
—হ্যাঁ,মনে পড়েছে খানিকটা।আমি আমার বাড়িতে জ্ঞান হারিয়েছিলাম।তখন তো মা ছিলো আমার সাথে,তারপর আপনার এখানে কিকরে চলে আসলাম আমি,একটু পরিষ্কার করে বলবেন আমায়?
—-আমিই আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছি।
—কেন আমাকে নিয়ে এসেছেন এখানে,আমাকে প্লিজ বাসায় পৌঁছে দিন।বাবা মা নিশ্চয়ই চিন্তা করছে আমার জন্য।
—না,এখন তো আর সেটা সম্ভব নয়,আপনার যে আর যাওয়া হবে না।
—হোয়াট!!আপনি কি জোর করে আটকে রাখতে চাইছেন আমায়,দেখুন একদম ভালো হচ্ছে না কিন্তু,
—আপনাকে জোর করে আটকে রাখতে কেন যাবো আমি,আপনার ওপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার।সেই অধিকার বোধ থেকেই বলছি কোথাও যাওয়া হবে না আপনার।
—অধিকার,কিসের অধিকার?
—আপনার মা একটা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আপনাকে আমার কাছে বিক্রি করেছে।এখন থেকে আপনি আমার সম্পত্তি।আমি যা চাইবো আপনাকে তাই করতে হবে।
তিয়াশের কথা শুনে মাথা ঘুরে গেল রাত্রির।সে কিছুতেই ওর কথা বিশ্বাস করতে চাইছে না।
—আমার মা আমাকে আপনার কাছে কেন বিক্রি করতে যাবে,একদম মিথ্যে বলার চেষ্টা করবেন না বলে দিচ্ছি।
—আমি মিথ্যা বলি না ম্যাডাম,আপনার মা সত্যিই আপনাকে আমার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।চাইলে প্রমাণ দিতে পারি আমি,
—-আপনার কোনো কিছুই বিশ্বাস করি না আমি,
—ঠিক আছে,আপাতত এক সেকেন্ডের জন্য হলেও এই ভিডিওটা বিশ্বাস করে দেখুন।আশা করি সবটা বুঝতে পারবেন।
এই বলে তিয়াশ তার ফোন থেকে টাকা ট্রান্সফারের ভিডিওটা রাত্রির চোখের সামনে ধরলো।পুরো ভিডিওটা দেখে মুখে হাত দিয়ে বিছানার ওপরে বসে পড়লো রাত্রি।
—নাহ!আমি এটা বিশ্বাস করি না,আমার মা কিছুতেই এটা করতে পারে না আমার সাথে,
—আমি বুঝতে পারছি একজন মেয়ের কাছে এটা বিশ্বাস করা কতোটা কষ্টদায়ক।কিন্তু সত্যি তো এটাই।আপনার মা টাকার জন্য নিজের মেয়েকে একটা পরপুরুষের হাতে তুলে দিতে দ্বিধাবোধ করে নি।আর শুধু এইটুকু না,আপনি ভাবতেও পারবেন না আপনার মা টাকার জন্য এতোদিন ধরে আর কি কি করে করে এসেছে আপনার সাথে?
—কি করেছে আমার সাথে,বলুন আমায়।
—-সেটা শুনলে সহ্য করতে পারবেন না আপনি, হয়তো তখন আপনাকে বাঁচাতেই পারবো না আমি।
—নাহ,আপনি বলুন।আমি সহ্য করে নেবো।বলুন আমার মা আর কি কি করেছে আমার সাথে,
তিয়াশ দেখতে পাচ্ছে রাত্রির দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।আর একটু হলেই হাউমাউ করে কান্না করে এমন পরিস্থিতি।কিন্তু তারপরেও আজকে সত্যিটা বলতেই হবে রাত্রিকে।এতোগুলো বছর ধরে বাবা মা তাকে অন্ধকারে রেখে যে চরম সর্বনাশ করেছে ওর।রাত্রির চোখের ওপর থেকে সেই অন্ধকারের পর্দা সরাতে হবে।নয়তো নিজের প্রতি হওয়া সকল অন্যায়ের কারণ অনুসন্ধান আর তার যোগ্য জবাব কিকরে দেবে সে।
—কি হলো বলছেন না কেন,প্লিজ চুপ করে থাকবেন না।
—ঠিক আছে আমি বলছি।তুমি কিন্তু নিজেকে শক্ত রাখবে।ভেঙে পড়লে একদম চলবে না।
—হ্যাঁ,বলুন।আমি প্রস্তুত।
—তুমি অসুস্থ থাকতে মাঝে মাঝে তাই না?সেটা কেন হতো জানো,
—হ্যাঁ,আমি প্রায়ই অসুস্থ থাকি।বাবা মা এজন্য চিকিৎসাও করিয়েছে আমার, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
—মিথ্যে কথা,কেউ তোমার কোনো সঠিক চিকিৎসা করে নি,কারণ তোমার অসুস্থতার জন্য আর কেউ নয় একমাত্র তারাই দায়ী,
—আপনার কথা বুঝলাম না ঠিক,আমাকে অসুস্থ করে রেখে বাবা মায়ের কি লাভ?
—তোমার বাবা মা তোমাকে প্রতিরাতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে একপ্রকার অজ্ঞান করে রাখতো।তারপর প্রতিরাতে একেকজন করে ক্লাইন্ট আসতো তোমার ঘরে।তোমায় দিয়ে ইচ্ছোমতো শারিরীক তাড়না মেটাতো তারা।না কোনো চিৎকার,কোনো হাত পা ছোড়াছুড়ি,কোনো বাধা ছাড়াই একপ্রকার নীরব ধর্ষণ করে চলে যেতো তোমায়।যার বদৌলতে তোমার বাবা মায়ের ভাগ্যে জুটতো মোটা টাকার বান্ডেল!!!এভাবে চলতে থাকে,প্রতি রাতে একজন পুরুষ,একটা করে টাকার বান্ডেল বা কখনো তারও বেশি।
তিয়াশের মুখের কথাগুলো যেন লোহার শেলের মতো আঘাত করছে রাত্রিকে।নিজের কানে কোনোদিন এমন ভয়ংকর কথা শুনতে হবে সে কল্পনাও করতে পারি নি।কথাগুলো শেষ হলে চুপ করে বসে রইলো সে।শ্বাস প্রশ্বাস চলাচলের শব্দ পর্যন্ত যেন বন্ধ হয়ে এসেছে তার।তিয়াশ এই দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে গেলো।ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো ওর দিকে….
—আমি আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে পেরেছি,আর এটাও জানি কথাগুলো শুনে কোনো মানুষের ট্রোমায় চলে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক না।
—আমার নিজের বাবা – মা এটা করলো আমার সাথে,এটা শোনার আগে সৃষ্টিকর্তা আমার মৃত্যু কেন দিলো না।(ক্রন্দনরত স্বরে)
—একদম ভেঙে পড়বেন না।যা ঘটেছে আপনার সাথে এর জন্য বেশিরভাগ দায়ী আপনার মা।আপনার বাবা কখনোই এগুলো করতে চায়নি আপনার সাথে,
—আচ্ছা,একটা কথা বলুন তো,আপনি এতকিছু কিকরে জানলেন আমার বিষয়ে?
—সে না হয় পরে জানতে পারবেন,তার আগে আমাদের যে অনেক কাজ শেষ করতে হবে, আমাদের জানতে হবে আপনার মা কেন এই অন্যায়গুলো করলো আপনার সাথে,সে কি আদৌ আপনার মা নাকি অন্য কেউ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে আগে আমাদের।আপনি শুনে অবাক হবেন শুধু আপনি নন আপনার মা আপনার বাবাকে পর্যন্ত শেষ করে দিতে চায়।আপনার আর আপনার বাবার ওপরে তার কিসের এতো রাগ সেগুলো আমাদের যতদ্রুত সম্ভব জানতে হবে……
——–