#এটা_গল্প_হলেও_পারতো
পর্ব—-১৩ (অন্তিম পর্ব)
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
রাত্রিদের বাড়িতে সেই বৃদ্ধ এসে হাজির হয়।তার সাথে একটা মেয়ে।আমান সাহেবের স্ত্রী মেয়েটাকে দেখে বেশ অবাক হলো।
—এ কে,কাকে নিয়ে এলে আমার বাড়িতে?
—ও আমার সাথেই থাকে,দেখো ওর চেহারা টা দেখো।অনেকটা রাত্রির মতোই।তাই না।
—অনেকটা অবশ্যই না,কিছুটা রাত্রির মতো, কিন্তু এ এখানে কেন?
—মাথার বুদ্ধি কি ধার দিয়ে এসেছো তুমি?এতোদিন রাত্রিকে দিয়ে যে কাজ করাতে ওকে দিয়ে এখন সেটা করাবো আমরা।ব্যস মাস শেষে হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিলেই চলবে।দেখতে রাত্রির মতো হওয়াতে কেউ কিছু বুঝতেও পারবে না।এবার আমি বুঝতে পেরেছি সেদিন তোমার স্বামী আমার বাসায় গিয়ে ওকেই দেখতে পেয়েছিলো।আর তখন তার নিজেরই মাথা ঘুরে যায়।ওকে রাত্রি ভেবে বসেছিলো,তাই বলছি মানুষকে ধোঁকা দিতে সমস্যা হবে না আমাদের।
—এটা তো খুব ভালো প্রস্তাব,আচ্ছা ও কি রাজি হবে?
—রাজি হবে না মানে,রাজি না হলে জোর করে করাবো।সেসব তুমি আমার ওপরে ছেড়ে দাও।এই নিয়ে চিন্তা করো না।
—হুমম,ঠিক আছে।আমার একটা ভয় হচ্ছে যদি বুড়োটা চলে আসে তখন কি করবো আমরা,
—কি করবো সেটা এখনো জিজ্ঞেস করছো আমায় তুমি,ও এই বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথে শেষ করে দেবো।এবার এই কাজ করতে আর দেরি করবো না আমি।তাতে যা হয়ে যাক।
একটু পরে রাত্রির মায়ের কাছে একটা অচেনা নম্বর থেকে কল আসলো।ক্লাইন্ট ভেবে ফোনটা রিসিভ করলো সে,আর তাই হলো।
—কি ম্যাডাম,ভালো আছেন তো,?
—হ্যাঁ, বলুন কি বলবেন।
—বলছি আজ রাতে হবে….?এক ঘন্টার জন্য,
—হবে না মানে,জব্বর হবে।তবে টাকাটা একটু বেশী লাগবে।এখন আর পুরনো রেট নেই না।টাকা বাড়িয়েছি।
—-টাকার কথা চিন্তা করবেন না।কখন আসতে হবে বলেন,
—রাত দশটার পরে আসলে ভালো হয়,চাইলে তার আগের আসতে পারেন।
—ঠিক আছে,রেডি করে রাখবেন।আমি যথাসময়ে পৌঁছে যাবো।
—হ্যাঁ,আসুন।
—আর শুনুন, একটা কথা,
—কি কথা আবার,
—আপনার বাসায় বেশী লোকজন নেই তো,যদি তাই হয় তবে আমি পরে আসবো,
—না আপাতত আমরা তিনজন আছি,আপনি আসতে পারেন।সমস্যা নেই।
—ওহহ,তিনজন মানে আপনি,আপনার মেয়ে আর আপনার স্বামী!তাই তো?
—আমরা তিনজনই আছি।এর বেশী না।আর আপনি এতো কেন জানতে চাইছেন বলুন তো?কাস্টমার হয়ে পুলিশের মতো জেরা শুরু করেছেন দেখছি,
—সরি ম্যাডাম,আপনি না চাইলে বলতে হবে না। আমি এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
তিয়াশ ফোনটা রেখে চিন্তিত হয়ে পড়লো।
—এসব কি বলছেন উনি,রাত্রি তো আমাদের সাথে।তাহলে উনি কাকে রেডি করে রাখার কথা বললেন।আবার বলছে বাসায় নাকি তিনজন আছে।তারমানে আরো কেউ আছে,
—হ্যাঁ, এগুলো জানার জন্যই তো তোমায় ক্লাইন্ট সাজিয়ে ফোন করালাম।আমি ভালো করেই জানি বাসায় ওর সাথে এখন কে আছে।কিন্তু কথা হলো ও ক্লাইন্টকে কথা দিলো কার ভরসায়।আবার কার কোন অনর্থ করতে চলেছে মহিলা!(আমান সাহেব)
—উনি মিথ্যে বললো না তো,?(তিয়াশ)
—না,এই বিষয়ে সে মিথ্যে বলবে না কিছুতেই।তাছাড়া এটা নিয়ে মিথ্যে বলে কি লাভ ওর।ক্লাইন্ট তো ওর চেহারা দেখে টাকা দিবে না।তার জন্য কাজটা হওয়া চাই।
—হুমম, ঠিক।তবে আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে।সেভাবে কাজ করতে পারলে আজ রাতেই সবাইকে হাতে নাতে ধরা যাবে।
—-প্ল্যান,কিকরম প্ল্যান বলো,
এরপর তিয়াশ আর তার পরিকল্পনা নিয়ে আমান সাহেবের সাথে আলোচনা করে।আমান সাহেবও রাজি হলো ওর কথায়।যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারে আজ রাতেই রাত্রির মা আর তার সঙ্গীকে জব্দ করা যাবে।
–
–
–
একটু পরে তিয়াশ আবারো রাত্রির মাকে ফোন করে,
—ম্যাম আপনাকে আমি ডবল টাকা দেবো, কিন্তু একটা কাজ করতে হবে আপনাকে!
ডবল টাকার কথা শুনে লোভী মহিলা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।ভীষণ খুশি হলো সে।
—কি করতে হবে বলুন,
—আজ রাতে আমি আসবো ঠিক,তবে আমার সাথে আমার এক সঙ্গীও আসবে।আমাদের দুজনকেই সুযোগ দিতে হবে আজ।
—অ্যা….দু’জন একসাথে!কি বললেন, আবার বলেন।
মহিলা তিয়াশের অদ্ভুত দাবি শুনে সত্যি ভরকে গেলো।
—হ্যাঁ, আমার সাথে আমার এক বন্ধুও আসবো। আজ রাতটা আপনার মেয়ের আমাদের দুজনকেই দিতে হবে!
—না না,সেটা কিকরে হয়।আমার ছোট মেয়ে দুজনকে একসাথে সহ্য পারবে না,
—আপনি টেনশন করবেন না,আমরা যা করার বুঝেশুনেই করবো,আপনার মেয়ের কোনো ক্ষতি হবে না।পুরোটাই আমরা দুজন ডিল করে নেবো।
—দেখুন,একদম বাড়াবাড়ি যেন না হয়।আমি এই শর্তে রাজি হতে পারি।তবে দ্বিগুণ নয় চারগুন টাকা চাই আমার,
—আচ্ছা আমি রাজি।তাই হবে।
—ঠিক আছে।তবে আবারো বলছি যা করার সাবধানে।বাড়াবাড়ি কিছু হলে কিন্তু আপনাকে আর আপনার বন্ধুকে দেখো নেবো আমি।
এই বলে সে ফোনটা কেটে দিলো।
এরপর রাত দশটার পরে….
রাত্রিদের বাড়িতে তিয়াশ সাথে একজনকে নিয়ে ঢুকে পড়লো।রাত্রির মা ওকে দেখে চিনে ফেলবে তাই একটু অন্যরকম সাজে আসলো।এসে মহিলার হাতে টাকার বান্ডেল ধরিয়ে দিলো।সে ওদের ঘরের বাইরে রেখে ভেতরে চলে যায়।তিয়াশ আর তার বন্ধু স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে মেয়েটা ভেতরে বসে কান্না করছে,সে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।আমান সাহেবের স্ত্রী তাকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে।এক পর্যায়ে মহিলা মেয়েটাকে মারধর শুরু করে দিলো। একটু পরে সে চুপ হয়ে যায়।তাকে ভয় দেখিয়ে রাজি করানো হলো।কাজ শেষ হলে মহিলা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
—-এবার আপনারা ভেতরে যেতে পারেন,আমরা দরজার বাইরেই অপেক্ষা করবো।
তিয়াশ আর তার সাথে থাকা লোকটা মহিলার কথামতো ঘরের ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।আমান সাহেবের স্ত্রী আর সেই বৃদ্ধ বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে।ঠিক তখন তাদের অবাক করে দিয়ে বাড়ির ভেতরে আমান সাহেব ঢুকে পড়েন।তার স্ত্রীকে তাকে দেখে ভীষণ ক্ষেপে যায়।ড্রয়িং রুমে চলে গেলো তারা।
—এই বুড়ো,এতোদিন কোথায় ছিলে,এখন কেন এসেছো এই বাড়িতে?
—আমার বাড়িতে আমি কখন আসবো না আসবো সেই কৈফিয়ত কি তোমায় দেবো,তার আগে বলো এখন পাঠাবে লোকটার সাথে তুমি এতো রাতে কি করছো,ইনি এখন আমার বাড়িতে কেন?
—তোমার ফালতু প্রশ্নের জবাব দেবার সময় একদম নেই।ভেতরে কাজ চলছে।একদম চিৎকার চেঁচামেচি করবে না।
—কাজ চলছে,কিসের কাজ চলছে ভেতরে,
—সেসব পরে জানলেও চলবে, আগে বলো রাত্রি কোথায়,ওকে কি করেছো তুমি?
—আমি ওকে তোমার কবল থেকে মুক্ত করে নিয়ে গেছি।কারণ ও তোমার কাছে থাকলে এতোদিনে হয়তো অন্যের অত্যাচারে মরেই যেতো,
—দেখেছো,আমি বলেছিলাম না সব এর কাজ। এই বুদ্ধি করে তোমার মেয়েকে সরিয়েছে।আজকেই শেষ করো একে।নয়তো তোমার আরো বড়ো সর্বনাশ করবে এই লোক।(বৃদ্ধ)
আমান সাহেবের স্ত্রী বৃদ্ধের কথা শুনে আরো বেশী রেগে যায়।
—একদম ঠিক বলেছো তুমি,আজ ওকে শেষ করেই ছাড়বো আমি।দেখি কে বাঁচায় ওকে।
এই বলে মহিলা আর বৃদ্ধ আমান সাহেবকে আঘাত করতে উদ্যত হয়,ঠিক তখন তিয়াশ তার সাথে থাকা লোকটাকে সাথে নিয়ে ড্রয়িং রুমে হাজির হয়।
—ইন্সপেক্টর,অ্যারেস্ট করুন এই মহিলাকে সাথে এর সঙ্গীকেও!!!
এই বলে তিয়াশ ওর ছদ্মবেশ খুলে ফেললো।আমান সাহেব স্ত্রী তিয়াশকে দেখে যেন একটা হাই ভোল্টেজের শক খেলো।
—একি,তুমি?তুমি কেন এসেছো আবার আমার বাড়িতে।আর ইন্সপেক্টর কে?
—আমায় তাহলে চিনতে পেরেছেন ম্যাডাম।গুড।তাহলে এবার আমার বন্ধু আপনার আরেক ক্লাইন্টকেও চিনে নিন।ইনিই হচ্ছেন ইন্সপেক্টর তাজ।আপনার সমস্ত কুকর্মের কথা আমরা জানলেও আইন তো জানে না। তাই আইনের চোখে আজকে সবটা পরিস্কার করে দিলাম। স্যার দেখুন মহিলা কিভাবে বাড়িতে মেয়েদের দিয়ে দেহব্যবসা করায়,এমনকি নিজের স্বামীকে পর্যন্ত শেষ করতে হাঁত কাঁপলো না এর।একে গ্রেফতার করুন।
এরপর তিয়াশ রাত্রি আর কান্না রহমানকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে এলো।কান্না রহমানকে দেখে আমান সাহেবের স্ত্রী আবারো ভরকে গেলো।চোখের পলকে কোথা থেকে কি হয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।ইন্সপেক্টর অবশেষে তাকে আর তার বৃদ্ধ সঙ্গীকে গ্রেফতার করলো।তারপর তাদের দুজনকে বেঁধে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালতে নিজেদের সমস্ত কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে আমান সাহেবের স্ত্রী আর তার সঙ্গী।বিশ বছর আগে যখন সে জানতে পারে একটা মৃত বাচ্চার জন্ম দিয়েছে,অথচ তার পাশের কেবিনে একজন সুস্থ বাচ্চার জন্ম দিয়েছে।ভদ্রমহিলা নার্স ডাক্তারদের মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে বাচ্চা বদল করে নেয়।অবশ্য তখন হাসপাতালে ডক্তর ইরান ছিলেন না।উনি উপস্থিত থাকলে এই কাজ কিছুতেই হতো না।এরপর আমান সাহেব আর তার স্ত্রী রাত্রিকে নিজের মেয়ের মতো করেই লালন পালন করতে পারে।আমান সাহেব নিজের স্ত্রীর কৃতকর্মের কথা কিছুই জানতেন না।এরপর হঠাৎ এক বিপত্তি ঘটলো।মাত্র একমাসের মাথায় রাত্রিকে কেউ চুরি করে নিয়ে যায়।চোর সুবিধে করতে না পেরে ওকে একটা ময়লার বাক্সে ফেলে রাখে।সেখান থেকে একজন ওকে কুড়িয়ে পায়।নিজের নিঃস্বন্তান স্ত্রীর হাতে তাকে তুলে দেয়।তাদের ঘরেই রাত্রি ধীরে ধীরে বড়ো করতে থাকে।একসময় ভদ্রলোকের স্ত্রীও দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলো।মেয়ের ভালোর কথা ভেবেই রাত্রির বাবা পালিত মেয়েকে বড়োলোক পরিবারের কাছে বিক্রি করে দিলো।অদ্ভুতভাবে আবার নিজের পরিবারে আবার আগের বাবা মায়ের কাছে এসেই পড়লো রাত্রি।সেখানে জীবনের বাকিটা জীবন কাটতে লাগলো তার।রাত্রির পরিবার এক পর্যায়ে ভীষণ অর্থসঙ্কটে পড়ে।এই থেকে বাঁচতে রাত্রির মা মেয়েকে দেহব্যবসায় নামিয়ে দিলো।
এরপর যখন দীর্ঘ বছর পরে সেই বৃদ্ধ রাত্রির লকেট নিয়ে হাজির হলো,রাত্রির মা তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে নিজের দলে পটিয়ে নিলো।রাত্রি যেহেতু তার আসল মেয়েই ছিলো না কোনোদিন,তাই ওর পরিচয় উদ্ঘাটনের মাহাত্ম্য আমান সাহেবের কাছে থাকলেও তার কাছে ছিলো না।রাত্রি আমান সাহেবের নিজের মেয়ে এটা জানার পরে আমান সাহেবের সামনে নিজের অর্থ উপার্জনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।অথচ তখন এটাও বলা মুশকিল ছিলো ভদ্রমহিলার কাছে যে সে রাত্রিকে একজনের কোল খালি করে চুরি করে নিয়ে এসেছে।বাধ্য হয়ে স্বামীকে শেষ করে দেবার চেষ্টা করে সে।এরপর রাত্রিকেও মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিতে চায়।পরের ঘটনা আমরা সবাই
জানি।
সমস্ত সাক্ষী প্রমাণ পেয়ে আদালত সেই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়,আমান সাহেবের স্ত্রীকে সন্তান চুরি এবং মেয়েকে যৌন নির্যাতনের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষনা করলো,স্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য রাত্রির বাবাকেও কিছু সময়ের জন্য কারাদন্ড দেয়া হয়।এমনকি সেই বৃদ্ধও ছাড় পেলো না।তাকেও একবছরের কারাদন্ড দেয়া হয়।
–
–
–
এর একমাস পরে…..
তিয়াশ রাত্রির সমস্ত অতীত সম্পর্কে নিজের পরিবারকে অবগত করে,তারা একজন ধর্ষিতার সাথে নিজের ছেলের বিয়েতে প্রথমে রাজি না হলেও পরে তিয়াশের প্রচেষ্টা সফল হয়।সে তার পরিবারকে বোঝাতে সক্ষম হয় একজন নারী সত্যিকারের কুমারী না ধর্ষিতা সেটা মুখ্য বিষয় নয়,মূখ্য বিষয় তার চরিত্র তার চিন্তাধারা।রাত্রিকে হাজার পুরুষ ভোগ করলেও তাতে তার চরিত্র বিন্দুমাত্র কলুষিত হয় নি।কারণ রাত্রি নিজের দিক থেকে সবসময়ের জন্য সৎ ছিলো, তার চিন্তাভাবনা সৎ ছিলো।এমন একজনকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করে তিয়াশ।এবং সে চেষ্টা করে আর কোনো কারণে যেন রাত্রিকে দুঃখ বা কষ্ট পেতে না হয়।এরপর মহাধুমধামে তিয়াশ – রাত্রির বিবাহ সম্পন্ন হয়।কান্না রহমানও নিজের মেয়েকে ফিরে পেয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করে।।
(🥀শুভ সমাপ্তি🥀)