আমি আপনাকে ভালোবাসি রুদ্ধ ভাইয়া।
রাত! এবার কিন্তু সবটা বেশি বেশি হচ্ছে। নিজের পড়াশোনায় মন দাও।মাথা থেকে উল্টোপাল্টা চিন্তা বাদ দিয়ে এটা মাথায় ঢোকাও যে তোমাকে একটা ভালো জায়গায় চান্স পেতে হবে।
—- কিন্তু আমি তো আপনাকে,,
—- আমি হসপিটাল যাচ্ছি। তুমি বাসায় থাকবা।আম্মু একটু পরই চলে আসবে।
—- হুম।
” চলে গেলো রুদ্ধ ভাইয়া।আমি আরাত্রি রহমান।সবাই রাত বলে ডাকে।আমি এবার এডমিশন দিব।আমাদের বাড়ি গ্রামে হওয়ায় আমি ঢাকায় বাবার এক বন্ধু রাহাত আংকেলের বাড়িতে থেকে কোচিং করি।রুদ্ধ ভাইয়া হলো রাহাত আংকেলের বড় ছেলে। তার একটা ভাইও আছে।যদিও তাকে আমি কখনো দেখিনি।
রুদ্ধ ভাইয়ার মাও খুব ভালো।সেই এসে থেকে রুদ্ধ ভাইয়ার পিছনে পড়ে আছি আমি।কেন জানি খুব ভালোলাগে আমার উনাকে কিন্তু উনি আমাকে একদম পাত্তা দেয়না।”
—- আরে রাত,কী ভাবছিস।
—- না কিছু না, মামনি।( মামনি হলো রুদ্ধ ভাইয়ার মা।)
—- ওহ! তুই ফ্রেশ হয়ে আয়, আমি খেতে দিচ্ছি।
—- আচ্ছা।
খাওয়া দাওয়া করে কোচিং এর জন্য বেরিয়ে গেলাম।রুদ্ধ ভাইয়াদের বাড়ি থেকে কোচিং বেশ দূরেই হয়।বেশির ভাগ দিন রুদ্ধ ভাইয়া আমাকে ড্রপ করে দিয়ে যায়। আজ সে একটু আগেই বেরিয়ে গেছে।রুদ্ধ ভাইয়া ঢাকা মেডিকেল থেকে পড়েছেন।আপাতত উনি ইনর্টান করছে।ভাইয়াদের নিজের হাসপাতাল আছে।
আমি এই বাসায় এসেছি তাও মাসখানের কিন্তু রুদ্ধ ভাইয়ার ছোট ভাইকে দেখিনি সেও আমার মতো এডমিশন দিবে এবার।তবে সে নাকি এক্সাম শেষে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেছে।
আজ হাতে অনেক টাইম আছে তাই রিক্সা না নিয়ে হেঁটেই যাচ্ছিলাম।আর অনমনে এসব ভাবতে ভাবতে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলাম।প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি একটা ছেলে।তারর সাথে বিশাল ব্যাগ।চোখে সানগ্লাস।অথচ এখন সকাল সাড়ে আটটা বাজে।রোদ নেই বললেই চলে।তাও সানগ্লাস!
ছেলেটা প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে চোখ মুখ কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
—- এই যে রাতপাখি, একটু দেখে চলতে পারো না।
” আজব তো লোকটা আমার নাম জানল কী করে।তাও আবার রাতের সাথে পাখি।”
—- সরি,বাট আপনি আমায় কী নামে ডাকলেন।
—- উফ! সরি,সরি। তুমি আরাত্রি, রাইট।আমি দীপ্ত।
—- আপনি আমাকে চিনতে পারেন কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনি না।
—- হোয়াট! তুমি আমাকে চিনো না।এই এলাকার ক্রাশ বয় আমি।
—- সো হোয়াট,,আমি এত ক্রাশ টাসের খবর রাখিনা।বাই দ্যা ওয়ে, আমার লেট হচ্ছে আমায় যেতে হবে।সো সাইড প্লিজ,,,এন্ড সরি ফর এভরিথিং।
” লোকটাকে কিছু বলতে না দিয়েই চলে এলাম।উনি সুন্দর ঠিক কিন্তু আমার ক্রাশ একজনই রুদ্ধ ভাইয়া।”
একেই রাস্তায় এসব হওয়ায় মেজাজটা খারাপ হয়ে ছিল। এখন কোচিং এ এসে মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেলো।আসতে দেরি হয়ে গেছে তাই বসার মাত্র একটাই জায়গা আছে। তাও ফারহানের পাশে।ফারহান ছেলেটা বড্ড গাঁয়েপড়া।আমার একদম পছন্দ না ওকে।
অগত্যা গিয়ে তার পাশেই বসতে হলো।
প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে কোচিং শেষ করে বাইরে দাঁড়িয়ো আছি।রুদ্ধ ভাইয়া নিতে আসবে বলেছেন।কিন্তু এখনো আসেনি।মোটামুটি সবাই চলে গেছে।আমি একসাইডে দাড়িয়ে ছিলাম তখন ফারহান আমার কাছে এসে বলল
—- আরে রাত এখানে দাড়িয়ে আছো কেন।রুদ্ধ ভাইয়া নিতে আসবে বুঝি।
—- হুম।
—- আচ্ছা সামনে একটা কফিশপ আছে।চলো আমরা এখানে গিয়ে বসি।
—- না না, এখানেই ঠিক আছি।
তখনই রুদ্ধ ভাইয়া চলে এলো।গাড়ির জানালার গ্লাস খুলে আমায় বলল
—- চলে এসো, রাত।
আমিও ফারহানকে বাই বলে চলে এলাম।গাড়িয়ে বসতেই রুদ্ধ ভাইয়া বললেন
—- ছেলেটা মোটেও ভালোনা।ওর সাথে বেশি কথা বলবেনা।
আমিও কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ালাম।রুদ্ধ ভাইয়া ড্রাইভিং শুরু করলেন।রুদ্ধ ভাইয়ার সামনে আমি বেশি কথা বলিনা।উনি বেশি কথা বলা পছন্দ করেননা,বিরক্ত হন।আমিও নিজেকে উনার সামনে বিরক্তিকর হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইনা।
—————
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে ছিলাম।আংকেল আর রুদ্ধ ভাইয়া হাসপাতালে।আংকেলও ডাক্তার। বাসায় এখন আমি আর মামনি।এখন বাজে দুপুর সাড়ে তিনটা।মামনি তার রুমে ঘুমাচ্ছে।আমি বেলকনিতে দাড়িয়ে ছিলাম তখনই কিছু একটা আমায় আক্রমন করল।মানে আমার গায়ে লাফিয়ে উঠল।আমিও তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলাম।জিনিসটা খুব ভারী ছিল।আমার মনে হয় সবগুলা হাড় ভেঙে গেলো।আমি ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলাম।অনেক কষ্টে সামনে তাকিয়ে দেখি একটা হাতির বাচ্চা।তবে কুকুরের মতো দেখতে।মানে এটা আসলে কুকুরই তবে সাইজটা হাতির মতো।
আমার চিৎকার শুনে মামনি চলে এলো।তার সাথে একটা ছেলেও এলো।এটা সকালের সেই ছেলেটা
সে এখানে কী করে।
মামনি আমাকে হাত ধরে টেনে তুলল।সিরিয়াসলি অনেক ব্যাথা পাইছি।আমাকে আমাকে বলল
—- কোথায় ব্যাথা পাইছো,মামনি।
আমি কিছু বলতে যাবো তখনই দেখলাম কুকুরটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে।আমিও দৌড়ে ঘরে গিয়ে খাটের ওপর দাড়িয়ে গেলাম।করুন মুখ করে মামনির দিকে তাকিয়ে বললা
—- এই কুকুরটাকে সরাও, মামনি।
তখনই দীপ্ত ছেলেটা বলল
—- কুকুর কোনটা? ওর নাম ক্যান্ডি।ওকে ক্যান্ডি বলে ডাকবা, ওকে।
মামনি বলল দীপ্ত নাকি রুদ্ধ ভাইয়ার ছোটোভাই।আমি অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম
—- সকালে আপনাকে চিনতে পারিনি বলে এই হাতির সাইজ ক্যান্ডিটাকে রিভেঞ্জ নিতে পাঠিয়েছেন।
—- মোটেও না।ওর মেবি তোমার গায়ের গন্ধটা ভালোলেগেছে তাই ওভাবে,,
—- তাই বলে এভাবে,,, আমার যদি কোমরটা ভেঙে যেতো তাহলে আমায় কে বিয়ে করত।
—- কেন, বিয়েটা নাহয় ক্যান্ডির সাথে দিয়ে দিতাম।নাহলে তো ওর বাবাও ছিল।
এন্ড আমাকে আপনি একদম বলবে না।আপনি শুনলে নিজেকে আংকেল টাইপ লাগে।তুমি বলবে সবসময়।চাইলে তুই ও বলতে পারো।
” আজব লোক তো।”
সন্ধ্যাবেলা বসে বসে বই ঘাটছিলাম।তখনই রুদ্ধ ভাইয়া এসে আমায় একটা প্যাকেট দিলেন।প্যাকেটটা খুলে দেখি ওর ভেতরে একটা নীল শাড়ি।রুদ্ধ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
—- শাড়িটা ভালোলেগেছিল,আমার তো কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই যে তাকে দেবো।তাই বাড়িতে তুমি আছো তাই তোমার জন্য নিয়ে এলাম।ছোট বোন হিসেবে তো নিতেই পারো এটা।
” গিফটটা পেয়ে যতটা খুশি হয়েছিলাম। এখন রুদ্ধ ভাইয়ার কথা শুনে ততটাই কষ্ট পেলাম।হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে আমার।”
—————-
রাতে সবাই মিলে একসাথে খাবার খাচ্ছিলাম তখনই আংকেল বলল
—- তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে মামনি।
—- জ্বী আংকেল, ভালো।
—-হুম।তবে শুধু কোচিং করে মেডিকেল এ চান্স পাওয়াটা খুব কঠিন।তোমার নিজেরও অনেক পরিশ্রম করতো হবে।
—-হুম।কাল থেকে আমি তোমাকো বাসায়ও কিছু এক্সট্রা পড়াবো।সাথে দীপ্তকেও।
রুদ্ধ ভাইয়ার কথা শুনে তো দীপ্তর কাঁশি উঠে গেলো।তবে আমি বেশ খুশি হলাম।
রাতে ঘুম না আসায় বলকনিতে দাড়িতে মোবাইল টিপছিলাম।আমাট পাশের বেলকনিটা দীপ্তর।সে ওখানেই ছিল।
খানিকক্ষন পর উনি আমায় ডাকলেন
—- রাত।
—- কিছু বলবেন।উফ সরি কিছু বলবে।
—- ভাইয়াকে কতটা পছন্দ কর?
” দীপ্তর কথা শুনে আমি অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।তাকে কী রুদ্ধ ভাইয়া বলেছে। রুদ্ধ ভাইয়া সবটাই জানে।”
—- অবাক হয়োনা।ভাইয়া আমায় কিছু বলেনি।আমি তোমার চাহনি দেখেই সব বুঝেছি।ভাইয়াও সবটা বোঝে।তবে সে কখনো তোমার অনুভূতির মূল্য দিবে না।কারণ সে অন্য কারো মায়ায় আবদ্ধ।সে হলো,,,
চলবে,,,,,, কী?
#এ_কেমন_ভালোবাসা
পর্ব-০১
লেখিকা-#খেয়া
(