এ কেমন ভালোবাসা পর্ব ২

#এ_কেমন_ভালোবাসা
পর্ব-০২
লেখিকা-#খেয়া

রাত বাজে দেড়টা।অথচ আমার ঘুম আসার নামই নেই।
আচ্ছা,রুদ্ধ ভাইয়া কাকে ভালোবাসে।তখন কেন রুদ্ধ ভাইয়াকে দেখে দীপ্ত চুপ করে গেলো।এখন এটা না জানা পর্যন্ত আমার ঘুম আসবেনা।
তবে একটা ব্যাপার আমি খেয়াল করেছি রুদ্ধ ভাইয়া আর দীপ্তর মধ্যে বেশিরভাগ সময় চোখে চোখে কথা হয়।জানিনা এদের কী সমস্যা।

রাতে দেরিতে ঘুম আসার ফলে সকালে উঠতেও দেরি হয়ে গেলো।ফলস্বরূপ আজ কোচিংয়ে যাওয়া হলো না।
খাবার খেয়ে একটু টিভি দেখতে বসেছিলাম।তখন আবার সেই হাতি মার্কা কুকুরটা লাফ দিয়ে আমার গাঁয়ে উঠতে এলেই আমি দিলাম এক দৌড়।সাথে সাথে গেলাম পড়ে।সামনে রুদ্ধ ভাইয়া ছিল তাকে নিয়েই পড়ে গেলাম।নিচে রুদ্ধ ভাইয়া আর তার ওপর আআমি।এবার কী হবে?
রুদ্ধ ভাইয়া রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল

—- এই যে স্টুপিট মেয়ে,উঠবে কী? নাকি সারাদিন এভাবেই থাকার শখ।

আমি তাড়াতাড়ি ওনার ওপর থেকে উঠে গেলাম।

—- সরি সরি।

—- এভাবে দৌড়াচ্ছিলা কেন?

—– মানে ঐ কুকুরটা বারবার আমার গাঁয়ে উঠছে তাই।

—- ওহ।আচ্ছা,আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।

—- হুম নিয়ে যান।

আজ যেন সময় কাটছেই না। মামনি দুপুরের রান্না করছে।আংকেল হসপিটালে।দীপ্ত বাসায় নেই।তবে রুদ্ধ ভাইয়া বাসায় আছেন।
একটু পর মামনি এসে বলল

—- রাত,তুই বলেছিলিনা তোর কিছু কেনার আছে।তুই রেডি হয়ে নে। রুদ্ধ ফ্রি আছে আজ তোকে নিয়ে যাবে।

—- আচ্ছা।

আমিও নাচতে নাচতে রেডি হতে চলে গেলাম।মনে তো লাড্ডু ফুটছে আমার।

——————-

রুদ্ধ ভাইয়া আর আমি একটা শপিংমলে গেলাম।এখন এগারোটা বাজে।লোকজনও প্রচুর।
রুদ্ধ ভাইয়া সামনে সামনে হাঁটছে আর আমি পিছনে।আমি একটা দোকান থেকে দুটো ওড়না আর একটা ড্রেস নিয়ে নিলাম।আরো কিছু টুকটাক কেনাকাটা করে ফুডকোর্টের কাছে গেলাম।রুদ্ধ ভাইয়া খাবার অর্ডার করতে যাচ্ছিলেন তখনই তার কাছে একটা মেয়ে এলো।
রুদ্ধ ভাইয়া আমাকে এখানে একটু বসতে বলে ঐ মেয়েটার সাথে চলে গেলো।আমার তো খুব রাগ লাগছে। মাথাটা একদম গরম হয়ে আছে। মাথা ঠান্ডা করার জন্য একটা কোল্ডকফি ওর্ডার করলাম।

কফি আসার পর সেটা নিতে যাওয়ার আগেই কেউ কফিটা খেয়ে ফেললো।সামনে তাকিয়ে দেখলাম দীপ্ত।এবার মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেলো।

—- আপনি অভদ্রের মতো কফিটা খেয়ে নিলেন কেন?

—-আবার আপনি।

—- আচ্ছা তুমি।তুমি এখানে কী করছিলে?

—- গার্লফ্রেন্ডের সাথে এসেছিলাম।তবে ভাইয়াকে বলোনা।বাই দ্যা ওয়ে ভাইয়া কই গেছে।

—-আমি কী জানি।আচ্ছা তুমি কাল কেন বললে না তোমার ভাইয়া কাকে ভালোবাসে।

—- আসলে ভাইয়া যে একজনকে ভালোবাসে সেটা আমি জানি। তবে সে যে কে সেটা যে কে এটা আমি জানিনা।

—- ওহ।মেয়েটা মেবি খুব ভাগ্যবান হবে।

—- হুম।

” একটু পরে রুদ্ধ ভাইয়া দীপ্তকে ফোন করে বলল সে যেন আমায় বাসায় পৌঁছে দেয়।তার নাকি কী কাজ পড়ে গেছে।”

মল থেকে বেড়োনোর সময় দেখলাম রুদ্ধ ভাইয়া আর ঐ মেয়েটা একটা দোকানে চুড়ি দেখছিলো।এবার আমার সত্যি কান্না পাচ্ছে।এটাই তাহলে তার কাজ।

বাসায় এসে সোজা রুমে ঢুকে গেছি।দুপুরে খায়ওনি।মামনিকে বলেছি মাথা ব্যাথা করছে তাই সেও জোর করেনি। কিন্তু এখন বিকেল হয়ে গেছে।আর আমারও খুব খিদে পেয়েছে।আমি একদম খিদা সহ্য করতে পারি না।তাই খাওয়ার জন্য বাইরে গেলাম। কিন্তু কাউকে দেখলাম না। তখনই রুদ্ধ ভাইয়া এসে বললেন

—- তোমার খাবারটা টেবিলে রাখা আছে।হয়ত ঠান্ডা হয়ে গেছে একটু গরম করে নিয়ো।

—-মামনি কোথায় গেছে।

—-মামনি আর দীপ্ত বাজারে গেছে।

—- আচ্ছা।

—- এই মেয়ে কোথায় যাচ্ছো।

—- কেন, খাবার গরম করতে।

—-লাইফে তো কখনো রান্নাঘরে যাওনি।এখন গেলে নির্ঘাত হাত পোড়াবে।একটু দাঁড়াও আমি খাবার গরম করে নিয়ে আসছি।

” রুদ্ধ ভাইয়া খাবারটা গরম করে নিয়ে এলেন।আমিও বেশি কথা না বলে খেয়ে ঘরে চলে গেলাম।

বিকেলে বেলকনিতে দাড়িয়ে ছিলাম। তখনই কিছু কাগজ উড়ে এলো বেলকনিতে।কাগজগুলো উড়ে এসেছে দীপ্তর রুম থেকে। কাগজগুলোতে বেশ সুন্দর ড্রয়িং করা।
এত সুন্দর স্কেচ দীপ্ত করেছে।সবগুলোই একদম জীবন্ত লাগছে।
আমি অানমনে ছবি গুলো দেখছিলাম তখনই দীপ্ত এসে বলল

—-না বলে কারো জিনিস নেওয়াটা কিন্তু চুরি।

—- আমি না বলে কী নিলাম।এগুলো উড়ে এসেছে।

—- তবুও যে তুমি এগুলো দেখলে।

—- আচ্ছা সরি আর দেখবোনা।

আমি ওর জিনিসগুলো ওর হাতে দিয়ে দিলাম।

—- রাগ করো না কিন্তু।আমি এভাবেই কথা বলি।

—- হুম! সে তো দেখতেই পাচ্ছি।

—- আমি তো জানতাম কথা শোনা যায়।কথা আবার দেখাও যায় নাকি।

—- ধুর।

আমি তখন রুমে এসে বই নিয়ে বসলাম।এখন সিরিয়াসলি অনেক পড়া উচিৎ আমার।

একটু পরে রুদ্ধ ভাইয়া এসে একটা নোট দিয়ে গেলেন আমায়।আজ নাকি কোচিংয়ে এটাই পড়িয়েছে।ভাইয়া নাকি এটা ফারহানের কাছে থেকে নিয়ে এসেছেন।
আমিও খানিক পড়ে মামনির কাছে গেলাম।মামনিকে সন্ধ্যার নাস্তা বানাতে সাহায্য করে এসে মাত্র সোফায় বসেছি তখনই কলিংবেলটা বেজে উঠল।

আমি গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।শপিংমলের ঐ মেয়েটা ছিল দরজার ওপাশে।আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই সে ভিতরে ঢুকে রুদ্ধ ভাইয়ার ঘরে ঢুকে গেলো।

—- ওটা নিহা আপু।ভাইয়ার ফ্রেন্ড।

” দীপ্তর কথার উত্তরে আমি কিছু বললাম না।”

প্রায় ঘন্টাখানেক পর নিহা নামের মেয়েটা বেড়িয়ে এসে মামনিকে জিঙ্গেস করল

—- এটা কে আন্টি।

—-ও রাত।এডমিশনের জন্য ঢাকায় এসেছে।

” নিহা আপু আমার দিকে এগিয়ে এসে আমায় বলল”

—- ওহ।সো রাত জানোতো, আমার আবার এভাবে অন্যের বাড়িতে থেকে পড়াশোনাটা পছন্দ না।যতই হোক অন্যের বাড়ি তো অন্যের বাড়িই হয়।আমার বাপি অবশ্য আমাকে এভাবে যার তার বাড়িতে থাকতে দিতো না।তাও আবার যে বাড়িতে এমন দুটো ছেলে আছে।

নিহা আপুর কথায় খুব কষ্ট পেলাম।দৌড়ে ঘরে চলে গেলাম।খুব কান্না পাচ্ছে আজ।

আমার পেছনে মামনিও এলো।মামনি আমাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল

—- আমি কিন্তু তোর ওপর খুব রেগে আছি, রাত।ও বলল আর তুই শুনলি।তুই তো বলতে পারতি এটা তোরও বাড়ি।

—- এটা তো সত্যি আমার বাড়ি না,মামনি।

—- আজ তোর বাড়ি না ঠিকই তবে দেখিস খুব শীঘ্রই এটা তোর বাড়ি হবে।তোর পুরো অধিকার থাকবে এই বাড়িতে।

—- মানে?

—- মানে কিছুনা।তুই এখন ফ্রেশ হয়ে পড়তে বস।

—- আচ্ছা, মামনি।

” আমার মন খারাপ দেখে আজ আর রুদ্ধ ভাইয়া আমায় পড়াতে এলেন না।”

——————

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই নিজের পাশে বেশ বড় কিছুর অস্তিত্ব টের পেলাম।তাকিয়ে দেখলাম সেই হাতি মার্কা ক্যান্ডিটা। এ ঘুমানোর কন্য আমার বেডটাই পেলো।

আমি রুম থেকে বেড়িয়ে দীপ্তর রুমে নক করলাম।ভেতর থেকে দীপ্ত আর রুদ্ধ ভাইয়া বেড়িয়ে এলো।আমি কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে সরাসরি বললাম

—- আপনার হাতি মার্কা ক্যান্ডিটা আমার রুমে আছে।ওকে গিয়ে নিয়ে আসুন প্লিজ।

দীপ্ত এসে ক্যান্ডিকে নিয়ে গেলো।
আমিও খাবার খেয়ে কোচিংয়ের জন্য গেলাম রুদ্ধ ভাইয়ার সাথে।রুদ্ধ ভাইয়াও আজ আমার সাথে গেলো।তার নাকি স্যারের সাথে কী কথা আছে।খানিক দূর এগোতেই ফারহান বলে উঠল

—- চিঠিটার ব্যাপারে কী ভাবলে,আরাত্রি।

” চারদিন আগে ও আমায় একটা চিঠি দিয়েছিল।যাকে লাভলেটার বলে আরকী।আমি তো ভয়ে শেষ।পাশে তাকিয়ে দেখি রুদ্ধ ভাইয়া ভয়ানক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে”।

—- এখানে এগুলো করতে আসো, রাত।

—- না মানে ভাইয়া,আমি ওকে অনেকবার নিষেধ করেছিলাম তাও ও,,,

পুরো কথা শেষ করার আগেই রুদ্ধ ভাইয়া আমার হাত ধরে গাড়ির দিকে হাঁটা ধরলেন।
এজন্মে হয়ত আমার আর কোচিং কর হলোনা।মেডিকেলেও চান্স পাওয়া হলোনা।

রুদ্ধ ভাইয়া আমায় বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন হাসপাতালে।মামনিকেও উনি কীযেন বুঝিয়েছে।
একটু পরে আমায় মেসেজ করে বললেন–
” ফাস্ট দুটো চ্যাপ্টার রেডি করে রেখো আমি এসে পড়া নিবো।আর ফারহানের দেওয়া চিঠিটার একটা ছবি তুলে এখনই পাঠাও আমায়।কুইক।”

এখন আমি কী করব।আমি নিজেও এখনো চিঠিটা খুলে দেখিনি। নাজানি কী লেখা আছে ওটায়।এখন কী হবে।

আমি চিঠিটার ছবি আর পাঠালাম না ভাইয়াকে।রুদ্ধ ভাইয়া অনেক কল করেছে ধরিনি আমি।

মাত্রই চিঠিটা হাতে নিয়ে ছিলাম পড়ার জন্য।কিন্তু পড়ার আগেই কেউ আমার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে নিলেন।
রুদ্ধ ভাইয়া! এবার কী হবে।

উনি চিঠিটা খুলে পড়লেন।না জানি ওটাতে কী লেখা ছিল।তবে উনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি প্রচুর রেগে আছেন।

—-কী এমন লেখা ছিল ওটায়?একটু দেখাবেন ভাইয়া।

ভাইয়া রাগী মুখে চিঠিটা আমায় দিলেন।চিঠিটা পড়ে তো আমার চক্ষু চরকগাছ। ওখানে লেখা ছিল,,,

(চলবে)

( আজ যদি গঠনমূলক মন্তব্য না পায় তবে নেক্সট পার্ট সত্যি দিবনা।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here