এ তুমি কেমন তুমি পর্ব -০৪

#এ_তুমি_কেমন_তুমি
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-০৪

অনুর প্রশ্নে লিজা থতমত খেয়ে গেলো। কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না।

আমতা আমতা করেই বললো, “কই কীসের দাগ?”

অনু ভ্রু কুঁচকে বললো, “কীসের দাগ মানে? বাম গাল পুরো লাল হয়ে আছে।”

আরে আপু এটা এলার্জি। তুমি তো জানো আমার এলার্জি আছে।

অনু কিছুটা সন্দেহের চোখে তাকালো, ” সত্যি এলার্জি এটা?”

হ্যাঁ আপু সত্যি এলার্জি।

ঠিক আছে যা, তানিশা আমার রুমেই আছে।

অনু কথা না বাড়িয়ে নিজের গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হলো। গতকাল থেকে বাড়িতে দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। বাইরে গেলে একটু শ্বাস নিতে পারবে মন ভরে। বাইরে এসে গেটের কাছে রিকশার জন্য দাঁড়াতেই ফারহানকে দেখলো গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢুকতে। ফারহান যেনো অনুকে দেখেও দেখলো না। অনু সেদিকে একবার তাকিয়ে একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়লো তাতে। অনু জার্নালিজমে অনার্স করছে, ফাইনাল ইয়ার। সামনে অনুর ফাইনাল পরীক্ষা, তাই ফারহানের চিন্তা মাথা থেকে বের করা প্রয়োজন। সে চায় না, যা তার নয় সেটার জন্য নিজের ফিউচার নষ্ট করতে। অনু যখন নিজের ভাবনায় ডুবে আছে তখনই লাফিয়ে কেউ তার রিকশায় উঠে বসলো। অনু ভয়ে চিৎকার করে উঠলো।

আরে চিৎকার করছো কেনো, আমি তো।

অনু তাকিয়ে দেখলো তার ভার্সিটির সিনিয়র অয়ন। চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করলো।

তারপর রেগে অয়নের দিকে তাকিয়ে বললো, “এসবের মানে কী?”

অয়ন রিলাক্স মুডে বললো, “কীসের মানে কী?”

অনুর রাগ বাড়লো, “এভাবে কোথা থেকে উড়ে এসে আমার রিকশায় পড়লেন তালপাতার সিপাহি।”

অয়ন রেগে বললো, “এই একদম তালপাতার সিপাহি বলবে না।”

“তো আপনাকে কী বলবো জনাব? আন্ডারটেকার, জন সিনা নাকি রোমান রেইন্স?”

ভালো হবে না কিন্তু ধুলাবালি।

অনু তেতে উঠে বললো, “এই কে ধুলাবালি হ্যাঁ?”

কে আবার তুমি ধুলাবালি, অণু পরমাণু।

একদম আজেবাজে নামে ডাকবেন না আমাকে। আমার একটা সুন্দর নাম আছে, অনামিকা চৌধুরী।

তুমি মনে হয় ভুলে গেছো। আমারও একটা সুন্দর নাম আছে আহনাফ শিকদার। সুন্দর একটা ডাকনামও আছে অয়ন। তুমি আমাকে আমার নামে ডাকলে আমিও তোমাকে তোমার নামেই ডাকবো।

অনু রেগে বললো, আপনাকে আমি কোনো নামেই ডাকতে চাই না। আপনি এখনই আমার রিকশা থেকে নামুন।

অয়ন অবাক হয়ে বললো, “এটা বুঝি তোমার রিকশা? কবে কিনলে, কংগ্রাচুলেশন?”

অনু নিজের মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো। সে ভুলেই গিয়েছিলো কার পাল্লায় পড়েছে।

অয়ন চিন্তিত গলায় বললো, “এই তোমার মাথা ব্যাথা করছে নাকি?”

অনু বিরক্ত হয়ে বললো, “আপনি নিজেই আমার জন্য একটা মাথা ব্যাথা।”

অয়ন মলিন হাসলো, “সেটা তোমার একার জন্য না। আমি সবার জন্যই মাথা ব্যাথার কারণ।”

অনু এবার তাকালো অয়নের দিকে, “মানে?”

অয়ন নিজেকে সামলে বললো, “কিছু না। আচ্ছা তুমি এমন করছো কেনো? আমি হ্যাংলা পাতলা মানুষ তোমার সাথে তো টাচ লাগছে না। এদিকে চেপেই বসেছি তো। আসলে রিকশা পাচ্ছিলাম না।”

অনু দেখলো অয়ন একদম চেপে বসেছে। একটু ঝাঁকি লাগলেও পরে যাবে। এমনই তালপাতার সিপাহি, পরে হাড়গোড় ভেঙ্গে গেলে বিপদ।

অনু গম্ভীর গলায় বললো, “ঠিক হয়ে বসুন। পরে গেলে আপনাকে আর খোঁজে পাওয়া যাবে না।”

অনুর কথায় অয়ন মুচকি হাসলো। অয়ন মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে আছে। এই বছরই ভার্সিটিতে তার শেষ বছর। গত চার বছর সে অনুকে অনেক জ্বালিয়েছে। মেয়েটাকে বিরক্ত করতে তার ভালো লাগে।

আর মাত্র কয়েকটা দিন ধুলাবালি। তারপর আর তোমাকে জ্বালাবো না প্রমিস।

অনু অবাক হয়ে বললো, “কেনো?”

ফাইনাল এক্সাম শেষে আমি অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছি মামুনির কাছে আর হয়তো ফেরা হবে না।

আপনার নাকি বিদেশে ভালো লাগে না। এখন আবার যাচ্ছেন কেনো তাহলে?

এই দেশে মায়ের স্মৃতি ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই নেই। এতদিন মায়ের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে ছিলাম। কিন্তু এখন আর সেটাও সম্ভব হচ্ছে না, দম বন্ধ হয়ে আসছে। এই দেশের বাতাসে আমার জন্য অক্সিজেন দিন দিন কমে আসছে যেনো।

অনু অয়নের কথার মানে বুঝতে পারছে না। তাই কী বলবে সেটাও খোঁজে পাচ্ছে না।

অনু বললো, “থেকে গেলে পারতেন?”

অয়ন অদ্ভুত দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে বললো, “রেখে দিলেও পারতে।”

অনু চমকে তাকালো অয়নের দিকে, “মানে?”

অয়ন মলিন হাসলো, “ভার্সিটি চলে এসেছি।”

অনুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অয়ন নেমে চলে যেতে যেতে বললো, “ভাড়াটা দিয়ে দিও। আমি তোমার কাছে ঋণ থাকতে চাই। কে যেনো বলেছিলো, যদি চাও কেউ তোমাকে মনে রাখুক তাহলে তার থেকে টাকা ধার নাও।”

অয়ন চলে গেলে অনু বিড়বিড় করে বললো, “অদ্ভুত লোক।”

৭.
তুই এখানে কী করছিস লিজা? ফারহান সেই কখন থেকে তোর জন্য ড্রয়িংরুমে বসে আছে।

লাবণির কথায় লিজা বিরক্ত হয়ে তাকালো লাবণির দিকে। মায়ের উপর সে প্রচন্ড বিরক্ত।

লাবণিকে উপেক্ষা করে লিজা তানিশাকে বললো, “তানিশা বোন আমার, চল না আমার সাথে।”

তানিশা চোখ বন্ধ করেই বললো, “আপু তোমাকে বললাম তো আমার মাথা যন্ত্রণা করছে। এখন শপিংমলে গেলে নিশ্চিত মাথাটা ব্লাস্ট হয়ে যাবে।”

লাবণি গম্ভীর গলায় বললো, “ও যেতে চাইছে না ওকে জোর করছিস কেনো লিজা? তোকে আমি যেতে বলেছি তো। তুই উঠবি নাকি আরও একটা থাপ্পড় লাগবে?”

লিজা মায়ের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে উঠে এলো তানিশার পাশ থেকে। লিজা বেরিয়ে যেতেই লাবণি তানিশার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।

গাড়িতে পাশাপাশি বসে আছে ফারহান আর লিজা। দু’জনের কারো মুখে কোনো কথা নেই।

ফারহান প্রশ্ন করলো, “কোন শপিংমলে যাবি?”

লিজা দায়সারা ভাবে উত্তর দিলো, “তোমার যেখানে ভালো লাগে যাও।”

ফারহান লিজার দিকে একবার তাকিয়ে বললো, “তুই কী কাউকে পছন্দ করিস? এমন কিছু থাকলে আমাকে বল আমি বিয়ে ক্যান্সেল করার ব্যবস্থা করছি।”

লিজা তাকালো ফারহানের দিকে, “আমি জানি ভাইয়া তুমি একটা মেয়েকে ভালোবাসো।”

ফারহান চমকে উঠলো লিজার কথায়, “কী বলছিস এসব?”

লিজা সামনে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললো, “তখন বয়স কম হলে এতোটা ছোট ছিলাম না যে বুঝতে পারবো না।”

অনুর কথা একমাত্র ইরফান ছাড়া কেউ জানে না। তাহলে লিজা কীভাবে জানলো বুঝতে পারছে না ফারহান।

ফারহান স্বাভাবিক গলায় বললো, “আমি কাউকে ভালোবাসি না।”

তাহলে ডায়েরির পাতায় কার এতো প্রশংসা করেছিলে।

কোন ডায়েরির কথা বলছিস? ডায়েরি লেখা ছেড়ে দিয়েছি চার বছর আগে।

দুই বছর আগে তোমাদের বাসার স্টোররুম থেকে একটা পুরনো ডায়েরি পেয়েছিলাম। ডায়েরিটা যে তোমার তাতে তোমার নাম দেখেই বুঝেছি।

সেটা ভালোবাসা নয়, আবেগ ছিলো। ভালোবাসা থাকলে তার জায়গা নিশ্চয়ই ধুলাবালি জমা স্টোররুমে হত না।

লিজা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, “মেয়েটা কে ছিল?”

কিছু প্রশ্নের উত্তর না জানাই উত্তম।

লিজা কথা বাড়ালো না আর। কারণ তার ভালো করেই জানা আছে ফারহান একবার যেহেতু বলতে চায়নি তাহলে আর বলবেও না।

ফারহান শপিংমলের সামনে গাড়ি থামিয়ে বললো, “তুই ভেতরে যা আমি গাড়িটা পার্ক করে আসছি।”

লিজা নেমে গেলো গাড়ি থেকে। ফারহান পার্কিয়ের দিকে যেতে লাগলো। গাড়ি পার্ক করে সেখানেই বসে রইলো কিছুটা সময়।

হঠাৎ বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “ভালোবাসা, ভালোবাসা আর ভালোবাসা। ভালোবাসা ছাড়া কী আর কোনো শব্দ নেই পৃথিবীতে? সবাই এই একটা শব্দ নিয়েই পরে আছে কেনো? আমি ভালোবাসি না কাউকে, আমার মনে কারো জন্য কোনো অনুভূতি নেই।”

লিজা ধীর পায়ে মলের ভেতরে যেতে লাগলো। সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে তার কাছে। ডায়েরির প্রতিটা শব্দ বলে দিচ্ছিল ফারহান মেয়েটাকে কতটা ভালোবাসে। তাহলে সে অস্বীকার করছে কেনো? আর যদি ভালোই বেসে থাকে তাহলে লিজাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে কেনো? লিজা জানে না আদৌও কোনোদিন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সে পাবে কিনা। নাকি সময়ের গভীরে হারিয়ে যাবে প্রশ্নগুলো।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here