#ওই আকাশটা আমার ছিল
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-১৫
একঘন্টার মধ্যে বিয়ের সব আয়োজন করা হয়। কাজীকেও আনা হয়। এখন শুধু বিয়ে পড়ানোটা বাকি।কিন্তু এখানে ফাহাদের আরেকটা বিপত্তি বেঁধে যায়।তা হলো অয়ন।অয়ন না আসা পর্যন্ত ফাহাদ কিছুতেই বিয়ে করবে না!তার বন্ধুর জন্যে এখানে তার বিয়ে হচ্ছে,বিয়েতে সে থাকবে না এটা কিছুতেই হবে না!কাজেই অয়ন আসবে তারপর বিয়ের কাজ আরম্ভ হবে।
২৪.
“অয়ন আজ যদি পৃথীর বিয়েতে না আসে সত্যিই আমার খুব মন খারাপ হবে!খুব!”
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে রহিমা কথাটা বলেন।ভেতরে পিয়ারা বেগম এবং পৃথী ছিল। পৃথীকে তখনই মেহমানমানদের সামনে থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়।অর্থাৎ রহিমার রুমে।এখান থেকে পৃথীর বিয়ের প্রসেস সম্পূর্ণ করা হবে।পিয়ারা বেগম বলেন,
“অয়ন কি আসবে না?”
“সেটাই ত বুঝতেছি না।ফাহাদ যতবার কল করে হয় কেঁটে দেয় নাহয় অনেকবার রিং হওয়ার পর যদি মন চায় কলটা রিসিভ করে বলে ‘ আমি ব্যস্ত।যেতে নাও পারি!’এটা কেমন কথা তুমিই বলো খালা?”
“তুই একবার কল করে দেখ ত?”
“করেছি।আমিতো সেই সকাল থেকেই চেষ্টা করতেছি।ফাহাদের যা-ই ফোন তুলছে আমার ত মোটেও না!”
“অয়ন হঠাৎ এরকম করছে কেন?”
“বুঝতেছি না কেন এরকম করতেছে ”
“হয়তো কোনো সমস্যায় আছে চলে আসবে।চাপ নিস না।”
এমন সময় কিচেন থেকে সাঁজুর ডাক আসে।রহিমা রান্নাবান্নাটাও সাঁজুকে দিয়েছেন।কারণ সাঁজু রান্নাবান্নাতে খুবই দক্ষ আর পঁটু।পাশের যতগুলো বাসায় অনুষ্ঠান হয় সবগুলো অনুষ্ঠানে সাঁজুকে দিয়েই সবাই রাঁধায়।ইদানীং ত সাঁজু আশপাশে একজন ভালো রাধুনি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
“খালা?মাংসের বোলটা ত পাচ্ছি না..!”
রহিমা সেদিকে তাকিয়ে বলেন,
“আমি আসছি সাঁজু। যাচ্ছি খালা পরে এসে আবার কথা বলবো।”
“আচ্ছা যা।”
রহিমা আবার বেরিয়ে যায়।পিয়ারা বেগম এবার দরজার থেকে চোখ সরিয়ে পৃথীর দিকে ফিরেন।তাকিয়ে দেখেন পৃথী নিচের দিকে তাকিয়ে ক্রমাগত চোখের পানি ফেলছে।তিনি পৃথীর বাম কাঁধে আলতো হাত রেখে বলেন,
“বোন রে সব মেয়েকেই বাপের বাড়ি ছেড়ে একদিন পরের বাড়িতে যেতে হয়। বাপের বাড়ি দুইদিনের।কিন্তু শ্বশুর বাড়িই মেয়েদের আসল বাড়ি।পৃথিবীর নিয়ম এটা। চাইলেও কেউ এটা এড়াতে পারবে না।তাই মন খারাপ করিস না বোন।আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
পৃথী এবার হালকা একটা ফুঁপানি দিয়ে রহিমার বুকে মাথা রাখে!কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠে,
“আমি ফাহাদকে বিয়ে করতে পারবো না নানু!প্লিজ তোমরা আমাকে ফাহাদের সাথে বিয়ে দিও না!”
“হঠাৎ কি বলছিস তুই এসব!?”
“হ্যাঁ,নানু,আমি সত্যি বলছি।আমাকে ফাহাদের সাথে বিয়ে দিও না।”
“কিন্তু কেন?”
“নানু আমি অয়নকে ভালোবাসি।অয়নকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।”
বলেই পৃথী এবার পিয়ারা বেগমের বুকের থেকে মাথা উঠায়।তারপর দুই হাত জোড় করে আবার বলে,
“আমার অয়নকেই চাই।নাহলে সত্যিই আমি মরে যাবো!”
পিয়ারা বেগম এই সিচুয়েশনে কি জবাব দিবেন ভেবে পাননা।পৃথী হঠাৎ বিয়ে মাথায় এমন কিছু বলবে পিয়ারা বেগম স্তব্ধ যেন হয়ে যান।আর সবথেকে আরো বেশি স্তব্ধ হোন পৃথীর মুখে অয়নকে ভালোবাসার কথা শুনে।কিন্তু কীভাবে এটা সম্ভব!অয়ন ত নিজেই পৃথীর জন্যে ফাহাদকে সাপোর্ট করেছে।মোটকথা অয়নের জন্যেই বিয়েটা হচ্ছে।তাহলে পৃথী এখন এসব কী বলছে?ভেবেই পিয়ারা এবার গলা ছেড়ে বলেন,
“অয়নের সাথে তোর যদি প্রেম থেকে থাকে তাহলে অয়ন কেন তার বন্ধুকে এত এত সাপোর্ট করবে?”
“তা আমি জানি না।তবে আমার বিশ্বাস অয়ন আমাকে খুব ভালোবাসে।ওর গভীরতা দিয়ে ভালোবাসে।যেটা ও কখনো আমাকে বুঝতে দেয় না নানু!”
“এটা ভালোবাসা না পৃথী!এটা তোর পাগলামো!তুই পাগলামো করছিস!খামোখা বিয়ের আসরে এসব কি শুরু করছিস বলতো?সবাই যদি এখন এসব শুনে তাহলে মান আর থাকবে আমাদের?”
“নাহ নানু পাগলামো না।আমি সত্যি অয়নকে ভালোবাসি।প্লিজ তুমি একটু বুঝার চেষ্টা করো!”
“আমি আর বুঝতে চাই না।শুনতে চাই না।রহিমা তোর এসব কান্ড দেখলে ব্যাপারটা কোনদিকে গড়ায় কে জানে।চুপ থাক।আর কথা বাড়াস না। ফাহাদ খুবই ভালো ছেলে।ফাহাদ আমাদের মতন গরীবদের ঘরে এসে বিয়ে করবে এটা ত আলহামদুলিল্লাহ। শুকরিয়া আদায় কর!”
বলেই রহিমা বিরক্তি মুখ নিয়ে চলে যেতে উদগ্রীব হতেই পৃথী এবার পিয়ারা বেগমের পায়ের তলায় এসে লুঁটিয়ে পড়ে।দুই হাত উঁচিয়ে বলে,
“তুমি না আমাকে সবসময় বুঝতে?আমার যত সমস্যা,যত বাঁধা-বিপত্তি সবকিছুর তুমি সমাধান করতে?আজ কেন আমাকে এভাবে তুচ্ছ করছো?কেন আমাকে বুঝতেছো না নানু!কেন!”
পিয়ারা বেগম এবার টানা চোখে পৃথীর দিকে তাঁকান।খুবই টানা চোখে।অনেকক্ষণ এভাবেই তাকিয়ে থাকেন।তাকিয়ে থাকার মাঝে হঠাৎ পিয়ারা বেগমের খুব ভেবে পড়েন।উনার কেনজানি মনে হচ্ছে পৃথী পাগলামো করে বলছে না।পৃথী পাগলামো করার মতন মেয়েও না।পৃথীকে ছোট্টকাল থেকেই দেখে আসছেন!পৃথী যা বলছে সব সত্যি বলছে!পৃথী অয়নকে সত্যিই ভালোবাসে।অয়নও তাই।নাহলে রহিমার চিকিৎসায় ওতগুলো টাকা কেউ কাউকে এমনি এমনি দেয় না।কোনো একটা টান থেকেছিলো বিধায় অয়ন ওতগুলো টাকা পৃথীকে দিয়েছে।আর সবথেকে বড় কথা হলো অয়ন আজকে আসছে না। তার একমাত্র বন্ধুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তাও আসছে না।এই সবকিছুই কি পৃথীর জন্যে না?হ্যাঁ পৃথীর জন্যে।অবশ্যই পৃথীর জন্যে।ভেবেই পিয়ারা বেগম আর দেরী করলেন না।পৃথীকে একটানে নিচের থেকে উপরে তুলেন
“অয়নকে ভালোবাসিস তাই না?”
“হ্যাঁ,নানু!হ্যাঁ!!
” তাহলে আর দেরী করছিস কেন?যা অয়নের কাছে চলে যা!তোর অয়ন তোরজন্যে অপেক্ষা করছে!”
পিয়ারা বেগমের মুখে এহেন কথা শুনে পৃথী অবাক হয়ে যায়!পিয়ারা এরকম কিছু বলবে পৃথীর বিশ্বাস হচ্ছে না।
পৃথী একদম হা হয়ে তাকিয়ে থাকে!
“আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না তোর,তাই না?পৃথী এ তোর সেই পিয়ারা নানু যে তোর সবসময় পাশে থেকেছে।যত বিপদ ছিল সব শক্ত হাতে সমাধান করার চেষ্টা করেছে এবং আজও তা থেকে পিছপা হবে না এই পিয়ারা তোকে কঠিন আদেশ করছে তুই তোর অয়নের কাছে যেতে। তাড়াতাড়ি যা।আর দেরী করিস না বোন!”
পৃথী এবার এবার এতটা বেশিই যে খুশি হয় খুশির আবেশে একদম কেঁদই ফেলে।পিয়ারাকে খুব শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তুমি এত ভালো কেন নানু?বলো ত আমাকে?পৃথিবীর সব মানুষ যদি তোমার মতন ভালো হত!”
পিয়ারা বেগম পৃথীর আর কোনো কথা শুনলেন না।পৃথীকে তাড়াতাড়ি ছাড়িয়ে দরজা টা টপ করে বন্ধ করে ফেলেন যাতে কেউ না দেখে ফেলে।তারপর পেছনে ছোট্ট একটা দরজা আছে।দরজাটাকে অন্দর দরজা বলা হয়।এটা দিয়ে বাইরে চলাচল করা যায়। এটা মেইন দরজার একদম অপোজিটে।দরজার বাইরে দিকটা একদম নির্জন। লোকজন তেমন হাঁটাচলা করে না।রহিমা অনেক সময় দোকান থেকে সদাইপাতি আনতে গেলে এই দরজাটা ই ব্যবহার করেন লোকজনের দৃষ্টি এড়াতে।পিয়ারা ওই দরজা দিয়েই পৃথীকে টেনে এনে বের করে দেন!
“ভালো থেকো নানু!মাকে বলো না আবার তুমি যে আমাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছ! আমি পৌঁছালে তোমার সাথে যোগাযোগ করবো!”
“তাড়াতাড়ি যা।ওসব পরে ভাবা যাবে।”
পৃথী কাঁদো মুখে পিয়ারাকে মুঁচকি একটা উপহার দিয়ে চিপাচাপা রাস্তা দিয়ে দ্রত পা চালাতে থাকে!
চলবে…