ওই_আকাশটা_আমার_ছিল পর্ব ১৭

#ওই আকাশটা আমার ছিল
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-১৭

২৫.
অয়ন,পৃথী এবং রিফাত একঘন্টার মধ্যেই কাজী অফিসে পৌঁছায়।পৌঁছেই দেখে ফাহাদ তার দশ মিনিট আগেই এসেছে।ফাহাদকে দেখে পৃথী খুব বড়সর একটা ধাক্কা খায়।ওমনি চোখ দুটো বড় বড় করে অয়নের দিকে তাকায়।অয়ন তার মুখটা তার কানের কাছে এনে বলে,

“ফাহাদকে দেখে এত অবাক হবার কিছু নেই।ও তোমাকে নিতে আসে নি।আমাদের বিয়ে পড়াতে এসেছ।বুঝতে পেরেছ?”

পৃথী এ’কথার পিঠে কি জবাব দিবে নিজেও জানে না।বা ফাহাদ যে এখানে আসবে এটা হয়তো তার মাথায় কেন ভাবনাতেও ছিল না!আর ভাবনাতে থাকার কথাও না।যে মেয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে আবার সেই বরের সামনে পড়বে এবং সেই বরই তাকে তার প্রেমিকের সাথে বিয়ে পড়াতে আসবে এটা যে কারো পক্ষে মানা একদমই অসম্ভব!তারপরও পৃথী তার রিয়াকশনটা আর বাড়ালো না।পরে এর কারণ অয়নের থেকে জেনে নিবে ভেবে তা আপাতত মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেললো।তারপর স্বাভাবিক চোখে সামনে তাকালো।তাকাতেই ফাহাদ বলে উঠলো,

“আহা ভাবি,এত কী ভাবছেন,হু?কবুলটা তাড়াতাড়ি বলে আমাদের বিদেয় করুন তো!”

ফাহাদের কথায় পাশে থাকা অয়ন আর রিফাত খিলখিল করে হেসে উঠলো।দুজনের হাসি দেখে পৃথী মনে মনে খুব রাগ হয়!ব্যাসিকেলি রাগটা অয়নের উপরই।রিফাত হাসছে তাই বলে উনারও হাসতে হবে?আর এটা কি কোনো হাসির কথা হলো?পৃথীর ভাবনার মাঝে ফাহাদ আবারো বলে,
“অয়ন আর দেরী করা যাবে না।তাড়াতাড়ি কর দোস্ত।”
“হুম।”

তারপর কাজীর সামনে পৃথী আর অয়ন দুটো কাঠের শক্ত চেয়ারে বসে পড়লো।কাজী বিয়ে পড়ানোর প্রসেস শুরু করলো। তারপর কবুল বললো।তারপর একটা কাবিন নামার দলিলে সই করে দুজনে নতুন একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গেল!আলহামদুলিল্লাহ!

২৬.

পৃথী চুপচাপ বাসর ঘরে বসে আছে।বাসর ঘরটা কে সাঁজিয়েছে পৃথী জানে না।না জানারই কথা।এই বাড়িতে কাজের লোকের আবার অভাব নেই!এদের মাঝে কে সাজিয়েছে কে জানে!হুলমতির মা,টোপা,আদুরী,রূপা,ফুলমতি আরো কত কি কি অদ্ভুত নাম এদের!তবে এরা সাঁজানোর সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।বাইরে থেকে ডেকোরেটর এনেই হয়তো সাজিয়েছে।নাহলে সাজানোটা এতটা চমক প্রদক হত না।এই মুহূর্তে পৃথীর সেই চমকের দিকে তাকানোর মন নেই।তার মনে চেপে আছে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরর মতন দাউদাউ রাগ যা অয়ন আসলেই সে অয়নের ওপর ঝাঁলতে এক সেকেন্ডও সময় নিবে না।এখন শুধু অপেক্ষা!বেচারী অয়ন এরইমধ্যে বাসর ঘরে চলেও আসে।মনে খুব আশা,আনন্দ,স্বপ্ন নিয়ে পৃথীর সামনে গিয়ে বসে।অয়ন হাত বাড়িয়ে পৃথীর ঘোমটা টা সরাবে অমনি পৃথী তিন ফুট দূরত্বে পিছিয়ে পড়ে।তারপর সে নিজেই নিজের হাত দিয়ে মাথার ঘোমটা টা এক টানে সরিয়ে এবার কড়মড় চোখে অয়নের দিকে ফেরে।তা দেখে অয়ন বলে,

“উফফ,বেইবি তুমি এভাবে তাকাচ্ছো কেন আমার দিকে!আমি ত তোমার ওই চোখের আগুনে জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি!”

পৃথী চোখদুটো আরো কঠিন করে আনে।
“প্লিজ এভাবে তাকিও না।নিজেকে আর কন্ট্রোলে রাখতে পারছি না।”
“মজা করছেন আমার সাথে?”
“হোয়াই আমার বউ?”
“ডাঃ ফাহাদ ওখানে কেন গিয়েছে?!!!কেন!?”
“ওহ এটাই তোমার কারণ রাগ করার?”
“উত্তর দিন!”
“বলছি বউ।আবে একটু ফ্রেশ হয়ে আসি?এমনিতেই আজ সারাদিন দৌড়াতে দৌড়াতে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি।”
“নাহ,আমার এখন উত্তর চাই!ফ্রেশের পর নয়!”

অয়ন এবার আরেকটু নড়ে বসে।পৃথীর দিকে কিছুটা ঝুঁকে,
“স্বামীকে মারতে চাও নাকি?দয়া দরদ নাই নাকি?”

বলেই অয়ন বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে যায়।তারপর লম্বা একটা হাই তুলে কাবার্ডের দিকে এগিয়ে যায়।ওখান থেকে একটা গেন্জি, একটা জিন্স আর সাথে একটা টাওয়াল বের করে।তারপর সবগুলো একসাথে কাঁধে ঝুঁলিয়ে নিয়ে মুখে “সখী গো আমার মন ভালা না” গানটা ধরে তা গাইতে গাইতে বাথরুমে ঢুকে যায়।পৃথী সেই আগুন চোখে তাকিয়েই! পঁচিশ মিনিট পার হতেই তারপর অয়ন একটা ফ্রেশনেস ফ্রেশনেস ভাব নিয়ে বাথরুম থেকে বের হয়।বের হয়েই,

“বউ আমার শার্ট এবং জিন্স বালতিতে ভিঁজিয়ে রেখেছি পরে উঠে গিয়ে ধুঁয়ে দিও!”

পৃথী নিজেও জানে না তার রাগটা এখন কোনদিকে গড়াচ্ছে!মন চায় এখুনি একে কাবাব বানিয়ে খেতে আর সাথে এর ওই বন্ধুটাকেও!এরা কি শুরু করেছে তার সাথে?মনের তেজটা প্রকাশ করে ফেলে,

“নাটক করতে কি আমাকে বিয়ে করেছেন?কি প্লান ছিল আমাকে নিয়ে আপনাদের দুজনের, বলুন তো আমাকে ?”

অয়ন এবার লম্বা করে মুখে একটা মৃদু হাসি টানে।এদিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,

“বউ রাগ তোমার এখনো কমে নি?আচ্ছা তোমাকে আমার জামাকাপড় ধুঁতে হবে না।এতগুলা ধোপা-ধোপানী থাকতে তুমি কেন ধুঁবে!তুমি ত আমার লক্ষী!আমার লক্ষীকে দিয়ে কি আমি কিছু করাতে পারি?”
“রাখুন আপনার নাটক!আগে আমার উত্তর দিন!”
“কি উত্তর যেন?ও হ্যাঁ হ্যাঁ এবার মনে পড়েছে!”

পৃথী আর পারলো না নিজেকে কন্ট্রোল করতে।বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে।
“এবার সত্যিই এই ফুলদানিটা দিয়ে আপনার মাথা ফাঁটিয়ে ফেলবো!”

অয়ন এবার স্ট্রেট দাঁড়ায়।তারপর তার দুইহাত দু’পাশে ভাঁজ করে নেয়।আর সরু চোখে পৃথীর দিকে তাকায়।খুবই মনোযোগ সহকারে তাকায়!এই মেয়েটির বাচ্চামো,রাগারাগি সব এবং সবই কেন তার এত ভালো লাগে?এরমাঝে কি এমন আকর্ষণ ক্ষমতা আছে যে এর যা কিছুই দেখছে ততই সে মুগ্ধ হচ্ছে!ততই পাগল হয়ে হচ্ছে!বুঝছে না অয়ন কিছুতেই বুঝছে না।তবে বারবার বুঝছে এই মেয়েটা তার আশপাশে থাকলে সে খুবই ভালো থাকবে।খুবই!ভাবতে ভাবতে অয়ন এবার পৃথীর দিকে এগিয়ে আসে।এসেই বলে ফেলে,

“ভালোবাসি পৃথী!”

পৃথীর রাগ মুখটা মুহূর্তে চুপ হয়ে যায়!
“তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি পৃথী!প্লিজ কুল!ফুলদানিটা পাশে রেখে আমার পাশে বসো।”

পৃথী তাই করে।অবশ্যি অয়নের খুব কাছে বসে নি।কয়েক ইঞ্চি দূরত্ব বজায় রেখে ই বসে।
“এবার বলুন!”
অয়ন সব ধীরে ধীরে ক্লিয়ার করতে থাকে।পৃথী মনযোগ দিয়ে শোনে।পৃথী শোনার মাঝেই হঠাৎ খেয়াল করে অয়ন যে কথাগুলো তকে বলছে ধীরে ধীরে তার মুখভাবটা খুবই নিষ্পাপ হয়ে আসছে।একদম বাচ্চাদের মতো।এই নিষ্পাপত্ব বাচ্চা মুখের ভেতরে কতই না অপ্রকাশিত ভালোবাসার,আবেগ,মায়া,স্নেহ,মমতা সব জড়িয়ে আছে।পৃথী তার অন্তঃকান দিয়ে অনুভূতিগুলো খুবই অনুভব করছে। এরইমাঝে দুজনের দূরত্বটা ভেঙ্গে পড়ে।পৃথী এখন অয়নের কাছে।খুবই কাছে।পৃথী মাথাটা অয়নের দিকে তুলে এবার টুপ করে বলে উঠে,

“আমি আপনাকে ভালোবাসি মিস্টার গ্যাংস্টার!”

অয়ন কথার মাঝেই থেমে যায়।আর ছলাৎ চোখে পৃথীর দিকে তাকায়।ছুঁইয়ে দেয় কপালে একটা স্নেহের চুম্বন!তারপর সেই চুম্বন টুকু শুধু কপালেই বর্ধিত থাকে নি।ধীরে ধীরে তা প্রসারিত হতে থাকে সারা শরীরের প্রতিটি অঙ্গে অঙ্গে!.

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here