ওই আকাশটা আমার ছিল
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-১৯
ফাহাদ চলে যাওয়ার পর অয়ন দরজার দিকে এগিয়ে ছিটকানিটা লাগিয়ে নেয়।তারপর পেছনে ঘুরে তার থেকে তিন ফুট দূরত্ব দাঁড়িয়ে থাকে পৃথীর দিকে এবার ক্ষীণ চোখে তাকায়।ক্ষীণ চোখের পলক পড়ছে না।তা দেখে পৃথী ভ্রু উঁচিয়ে ফেলে।বলে,
“কী হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন যে?”
“গোলাপী শাড়িটা তোমাকে বেশ মানিয়েছে।তারসাথে যুক্ত হয়েছে তোমার ওই দুই গোলাপী ঠোঁট!”
পৃথী এবার হালকা নড়ে উঠে।তার আর বুঝতে বাকি রইলো না অয়ন এখন কি চাইছে!কিন্তু পৃথী এখন তার দ্বারপ্রান্তে না।তাকে নিচে যেতে হবে।কিছু রান্নার ম্যানু সাজাতে হবে আরো কত কাজ!ভেবেই পৃথী বলে উঠে,
“আচ্ছা আপনি থাকেন আমি নিচে যাচ্ছি।দেখি কি রান্না করা যায়।”
বলেই পৃথী যে পা বাড়ায় আর তখনি ঘটে যায় একটা অঘটন।অয়ন পৃথীর পথ আঁটকাতে পৃথীর বামহাতটা খপ করে ধরার চেষ্টা করতে গিয়ে পৃথীর শাড়ির আঁচলে টান পড়ে যায়। আর তরতর করে পৃথীর উপরি স্থানে, অর্থাৎ বুকের উপর থেকে আঁচলটা নিচে নেমে যায়।পৃথী সাথে সাথে বুকের উপর তার বাহু যুগল টেনে এনে অপোজিট হয়ে ঘুরে দাঁড়ায়।আর অপ্রস্তুত গলায় বলে উঠুন,
“প্লিজ আমার আঁচল ছাড়ুন!”
অয়ন কি আঁচল ছাড়ার মতন ছেলে?যখন তার প্রিয়সীকে কাছেই পেয়েছে একটু আদর আদানপ্রদান না করলে কি আর তৃষ্ণা মিটবে?অয়ন পৃথীর শাড়ির আঁচলটা তার হাতে পেঁচাতে পেঁচাতে পৃথীর দিকে এগিয়ে আসে।এসেই পৃথীকে টানে তার দিকে ঘুরিয়ে নেয়।পৃথী চোখবুঁজা অবস্থায়!চোখ খোলার ত এখন তার সেই অবস্থা নাই ই।কীভাবে যে এখন এমন অর্ধনগ্ন অবস্থায় অয়নের সামনে দাঁড়িয়ে আছে পৃথী তা নিজেও জানে না।
“যদি না ছাড়ি?”
“প্লিজ আঁচলটা ছেড়ে দিন!আমি আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না!”
“স্বামী সব দেখে ফেললেও কোনো সমস্যা নাই!”
” আমার অনেক কাজ পড়ে আছে!”
“কাজ করা লাগবে না।”
বলেই অয়ন ঠোঁটের কোণে একটা রোমান্টিক হাসি টানে।এখন তার রোমান্স চাই।খুবই রোমান্স!উফস পৃথীর যে রাগ উঠছে খুব!এই লোকটা কি সময় অসময় বুঝে না?মাত্র ঘুম থেকে উঠলো এখন আবার হাঙ্গামা জুড়ে দিল!ভেবেই পৃথী এবার তার ডাগর চোখজোড়ার পাতা খুলে নেয়।
“চাচ্ছেনটা কী আপনি!?”
“ওই গোলাপী ঠোঁট।লম্বা একটা কিস করে তারপর ছেড়ে দিব প্রমিজ! ”
পৃথী চুপ করো রইলো।
“দিবা?”
পৃথী এবার ঘনঘন চোখের পাতা ফেলতে থাকলো।
এবারও কোনো উত্তর দিলো না।এভাবে কয়েক সেকেন্ড চলতে থাকে।এমন সময় মনের অজান্তে অয়নের চোখ পড়ে পৃথীর প্রশস্ত বুকের ঠিক উপরস্থানে।সেখানে কালো কুচকুচে একটা তিল গুঁটিসুঁটি মেরে বসে আছে।ফর্সা চামড়ায় তা বেশ জোৎস্না আলোর মতন ঝলমল করছে।কী না নেশালো সেই তিল।টানছে অয়নকে খুব কাছে টানছে সেই তিল।অয়ন আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলো না।সাথে সাথে মুখটা এগিয়ে এনে সেই তিলে একটা উষ্ণ চুম্বন এঁকে দিলো।ওমনি পৃথীর সারাশরীর শিরশির করে কেঁপে উঠলো।আর চোখবুঁজে এনে অয়নের গেন্জির পেছনের অংশটা খাঁমচে ধরে ফেললো।অয়নও এবার আর পৃথীকে দূরে রাখলো না।মাতালের মতন নিজের খুব ভেতরে নিয়ে গিয়ে গরুর জিহ্বার মতন সে পৃথীর বুক,গলা,গাল,কপাল,চুলে ছাঁটতে থাকলো!পৃথী ঘোরের মাঝে থেকেই বললো,
“ছাড়ুন….!”
বলেও লাভ নেই।অয়ন তার ভালোবাসার সাগরে পৃথীকে হাবুডুবু খাওয়াচ্ছে!হাবুডুবু শেষ না করে সে আর কিছুই শুনবে না!
২৮.
আজ ছয়টা মাস পার হলো।সবকিছুই স্বাভাবিক মতন চলছে।কিন্তু পৃথী ই যেনো অস্বাভাবিক হয়ে গেলো।ওর মাঝে কিছুটা শারিরীক পরিবর্তন এসেছে!এই যেমন শরীরের ওজন বেড়ে গেছে। পেট ফুলে গেছে।মাথা ঘুরচ্ছে।এটাওটা মুখে তুললেই সাথে সাথে তা বমি করে ফেলে দিচ্ছে আরো কত কি!পৃথীকে এখন একদম বড় মানুষের মতন দেখা যাচ্ছে।তার মতন বাচ্চা একটা মেয়ের পেটের ভ্রূণেও আরেকটা ছোট্ট বাচ্চা বসবাস করবে এটা যেনো খুবই স্বাভাবিক।অবশ্য মা হবার পেছনে সবচে বড় জেদটা পৃথীরই ছিল।অয়ন কতবার বারণ করলো এত তাড়তাড়ি এমন সিদ্ধান্ত না নিতে।কারণ পৃথী মা হবার জন্যে এখনো যথেষ্ট উপর্যুক্ত নয়।মা হতে ধৈর্য্য লাগে। ম্যাচিউরড হওয়া লাগে।ওই যে ছোট্ট সোনার কুহুতান মুখে “মাম্মাম মাম্মাম” ডাক শুনার ইচ্ছেটা আর দমাতে পারে নি সে।না তার বাচ্চা চাই ই চাই!সে বাচ্চাকে আদর করবে।চুমু খাবে।গোসল করাবে।খাওয়াবে।তারসাথে ছুটি ছুটি কথা বলবে আরো কত কি করবে!তাই পৃথীর একপ্রকারে জেদের কাছে হেরেই অয়ন রাজি হয়ে যায়!রাজি হয়েই অয়নের দায়িত্ব শেষ নয়।সার্বক্ষণিক সে পৃথীর পাশেই থাকে।পৃথীর কখন কী লাগবে কী খাবে কী করবে সবকিছুতে নজরদারি রাখে।বাসায় এত এতগুলো কাজের লোক অথচ তাদের একবারও আদেশ করার প্রয়োজন বোধ করে না পৃথীর দিকে নজরে রাখতে।যেনো সবটাই সে একাই করতে পারবে।হ্যাঁ,অয়ন সব নিজেই একা হ্যান্ডেল করছে এখন।এই যে অফিসে যায় না।অফিসের যতরকম কাজ আছে সব সে বাসায় বসে ল্যাপটপেই সম্পূর্ণ করে। অয়নের এত এত ভালেবাসায় পৃথী বাকরুদ্ধ প্রায়।একজন গ্যাংস্টারও যে এতটা কেয়ারিং,লাভিং এবং রেসপন্সিবিলিটিজ হয় তা অয়নকে না দেখলে পৃথী বুঝতোই না!এখন পৃথী বিছানার উপর বসে আছে।আর বসে বসে ফোন টিপছে।অয়ন বাসায় নেই।সে মিনিট দশেক আগে বাইরে যায় কে নাকি তার সাথে দেখা করতে এসেছে সেজন্যে।পৃথী মনোযোগ সহকারে নিউজফিড স্ক্রল করছে।নিউজফিড ঘাটতে ঘাটতে এমন সময় কারো কল আসে।পৃথী স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে তার রহিমা কল করেছে!হঠাৎ রহিমার কল দেখে পৃথী অনেকটা ভড়কে যায়।তিনমাস হলো অয়ন পৃথীকে এই ফোনটা কিনে দিয়েছে,আর সাথে একটা নতুন সিমও এড করে দিয়েছে।তাই রহিমার কাছে এই নাম্বারটা নাই।আর থাকার কথাও না। তাদের বিয়ের ব্যাপারটা রহিমা এখনো জানে না।অয়ন সারপ্রাইজ দিবে বলে বলে এখনো প্রকাশ করে নি।তাই পৃথীও চুপ করে ছিল।কিন্তু এখন ত ঘটনা অন্যকিচু বলছে!অয়ন কি সব বলে দিছে নাকি পিয়ারা নানু!নাহলে কল কেন!ভেবেই পৃথী বার দুয়েক ঢোকর গিলে।তারপর মনে এক সাহস এনে কলটা রিসিভ করে।রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে,
“একদম থাপড়াবো বেয়াদব মেয়ে!খুব চালাক হয়ে গেছিস না?পালিয়ে ত বিয়ে করলি ই এখন আমি নানু হতে যাচ্ছি তাও আমাকে বললি না?আমি খুব পর হয়ে গেলাম?”
পৃথীর দুইচোখ এবার ছলছল করে উঠে।সাথে বুকের বাম পাশটায় একটা চিনচিন ব্যথা অনুভূত হয়।ব্যথাটা খুব কষ্টের।দীর্ঘ সাতমাস পর সে আজ তার মায়ের সুকোমল কন্ঠ শুনতে পেলো।তার মা যে তারউপর খুব অভিমান করে কথাগুলো বলেচে তা সে বেশ বুঝতে পেরেছে।প্রচন্ড ভার বুকে বলে উঠেে,
“মা?”
“ডাকবি না আমাকে মা।আমি তোর কেউ না।ওরে মা হলে ত একটিবার আমার খবর নিতিস।তা নেস নি!”
বুকটা আবার ভার হয়ে যায় পৃথীর।কিছু বলতে যেয়েও পার নি।ওপাশ থেকে রহিমা আবার বলেন,
“ভেবেছিস কিচুই জানি না, তাই না!আমি সবকিছুই জানি।তোদের বিয়ের একমাস পর থেকেই জানি।তবে যেই শুনলাম আমি নানু হতে যাচ্ছি তখন আর নিজেকে সংযত রাখতে পারি নি।এই দ্যাখ সব অভিমান,রাগ,কষ্ট সব একপাশে ফেলে বেহায়ার মতন নিজেই কল করেছি।যাইহোক ওসব বাদ।তা বল তোর শরীরের কি অবস্থা?ঠিকমতো খাচ্ছিস ত?”
“হ্যাঁ মা শরীর ভালো।ঠিক মতো খাচ্ছি।”
“শুধু খেলে হবে না।প্রতিদিন সকালে হালকা হালকা হাঁটবি।সকালে খালি পেটে পানি খাবি।ফল খাবি।লেবুর শরবত খাবি।”
“খাই মা সব খাই।”
“খেতে সমস্যা হয় না ত?”
“মাঝেমধ্যে বমি হয়।”
“ওটা হবেই।ওটা কিছু না।তবে সাথে সবসময় বমির টেবলেট রাখবি।”
“রাখি।”
“খুব খুশি হলাম।তোকে কতটা দিন দেখি নি জানিস?মনটা খুব ছটফট করছে দেখবে। আমি কালই আসবো তোকে দেখতে।”
“সত্যি মা আসবে?”
“হ্যাঁ,আসবো।”
“আমি অয়নকে এখনই কল করে জানিয়ে দিচ্ছি তুমি যে আসবে।”
“জানাতে হবে না।তোদের বিয়ের ব্যাপারটা ও আমাকে জানিয়েছে?জানায়নি।তাহলে আমি যে যাবো এটাও জানাবি না।”
“তারমানে তোমাকে অয়ন বলে নি। পিয়ারা নানু বলেছে আমাদের বিয়র ব্যাপারটা? ”
“যার থেকে শুনেছি.. শুনেছি ত।এবার রাখ।নিজের খেয়াল রাখিস।”
“জ্বী,আচ্ছা। ”
রহিমা কল রাখার পর পৃথীর চোখমুখে তৃপ্তির হাসি ফুঁটে ওঠে।বিয়ের পর এই প্রথম বোধহয় একটু তৃপ্তির হাসি হাসলো।
চলবে…