#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-১৮
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
—-জীবনে একবারের জন্য হলেও মা বলে ডেকেছিলাম তোমায় আমি,সেই তুমি আমার এতো বড়ো সর্বনাশ কিকরে করলে?
(প্রজ্ঞার মাকে উদ্দেশ্য করে বললো শ্রেষ্ঠা)
—আমি যা করেছি,নিজের মেয়ের ভালোর জন্য করেছি।ওর সুখের জন্য তোমার বিরুদ্ধে এতো বড়ো ষড়যন্ত্র করেছি আমি।
—ভালোর জন্য,সুখের জন্য।কিসের ভালো করলে তুমি নিজের মেয়ে?কেউ এসে তার ছেলের সাথে তোমার বিয়ের প্রস্তাব দিলো, সেটাও এইরকম ছলনার আশ্রয় নিয়ে,আর তুমি কিনা তার কথা মেনে নিলে?
—আমি জানি না,তখন কি ভেবে ওনার কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলাম আমি।কিন্ত নিজের মেয়েকে সুখী করা ছাড়া ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না আমার।
—না,মিথ্যে বলছো তুমি।শুধু নিজের মেয়ের সুখের জন্য না।আমাকে দুঃখ আর কষ্ট দেবার পৈচাশিক আনন্দ তোমার বিবেক বুদ্ধি লোপ পাইয়ে দিয়েছিলো।তাই এতো বড়ো একটা অন্যায় করলে তুমি।আর সুখ,কিসের সুখ?তুমি জানো,তুমি নিজের অজান্তে মেয়ের কতো বড়ো সর্বনাশ করে দিয়েছো?
—-সর্বনাশ,কিসের সর্বনাশ করেছি আমি!?দেখো তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
—আমি সৌহার্দ্যের বাবার কথা বলছি,তুমি নিশ্চয়ই জানো না।ঐ লোকটার মুখ্য উদ্দেশ্য কি?কি ভেবেছো উনি সেদিন এমনি এমনি তোমার মেয়েকে ছেলের বৌ করে নিয়েছেন।ওনার উদ্দেশ্য কখনোই নিজের ছেলের বা তোমার মেয়ের ভালো করা ছিলো না,
—তাহলে কি ছিলো তার উদ্দেশ্য?
—খুন….নিজের ছেলেকে খুন করাই একমাত্র উদ্দেশ্য তার।তোমার মেয়ে অর্থাৎ প্রজ্ঞাকে সৌহার্দ্যের সাথে বিয়ে করানো ওনার ষড়যন্ত্রের একটা অংশ ছিলো,আর কিছুই না।এতে শুধু ওনার নিজের ব্যক্তি স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।
শ্রেষ্ঠা মুখে খুনের কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো প্রজ্ঞার মা।
—-খুন…. ??এসব কি বলছো তুমি,আর উনি ওনার নিজের ছেলেকে খুন কেন করতে যাবেন? তোমার কথা বিশ্বাস করতে পারছি না আমি,
—হ্যাঁ,এটাই সত্যি।আর তার প্রমাণ আমি নিজে। উনি এতোদিন আমাকে ব্যবহার করেছেন নিজের ছেলের সর্বনাশের জন্য।ভাগ্যিস সেই জঘন্য পাপটা করার আগে,ঐ বুড়োর আসল রুপটা চলে এসেছে আমার সামনে,নয়তো অনেক বড়ো অনর্থ হয়ে যেতো।
—-তোমার কথা শুনে ভয়ে হা পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার,ঐ লোকটা এতোটা মারাত্মক সত্যি আগে স্বপ্নেও ভাবতে পারি নি আমি।তা নাহলে নিজের সন্তানকে কেউ খুন করার কথা ভাবতে পারে!
—হ্যাঁ,
—আচ্ছা,একটা কথা বলো।আমার মেয়ে কোথায়?ও ভালো আছে তো?
—নিজের মেয়ের জন্য খুব চিন্তা তোমার তাই না?
প্রজ্ঞার মা কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে রইলেন।
—কি হলো কথা বলছো না কেন,আমি জানি মেয়ের জন্য অনেক চিন্তা তোমার।ভেবো না,সে সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায়ই আছে।এই যেমন তুমি রয়েছো এখানে।
—তোমরা আমার মেয়েকেও বন্দী করে রেখেছো তাই না….?দেখো আমি তো সব স্বীকার করেই নিয়েছি।আর কি জানবার আছে আমার থেকে তোমার,দয়া করে ছেড়ে দাও।
—-তোমাকে বন্দী করে ফেলে রাখার কোনো উদ্দেশ্য নেই আমার।সম্পর্কের অমর্যাদা তুমি করতে পারো,কিন্তু আমি জেমিন রহমানের মেয়ে।সে আমার সম্পর্কে আমার মামী হলেও মায়ের থেকে কোনো অংশে কম নয়।আমাকে সে এমন কোনো শিক্ষা দেয় নি,যা কাছের মানুষকে আঘাত করতে সাহায্য করে।তুমি আমায় নিজের মেয়ে নাই ভাবতো পারো।কিন্তু তাই বলে তুমি আমার বাবার স্ত্রী এটা অস্বীকার করতে পারি না আমি।
—-আমায় ক্ষমা করে দে মা,আমি জানি তোর সাথে যা করেছি আমি তার সামনে পৃথিবীর কোনো ক্ষমাই পর্যাপ্ত নয়।কিন্তু এ ছাড়া আর কি উপায় আছে আমার কাছে,তুই বল কি করলে আমায় ক্ষমা করে দিবি তুই?(অশ্রুসিক্ত নয়নে)
—আমি তোমায় ক্ষমা করার কেউ নেই,তাছাড়া শুধু ক্ষমালাভ মানুষকে কখনোই পরিশুদ্ধ করে না,পরিশুদ্ধ করে তার অন্তরের পরিবর্তন,তার অনুতপ্ত উপলব্ধি।যে অন্যায় করেছো জীবনে, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রতিজ্ঞা করো তার পুনরাবৃত্তি হবে না আর কখনো।সেটাই হবে আমার তরফ থেকে তোমার আসল ক্ষমা,,এবার চলো,,
—কোথায় যাবো আমি…?
—নিজের মেয়ের কাছে,তাকে মুক্ত করতে হবে না তোমায়?
—কিন্তু….???
—-কোনো কিন্তু নয়,তবে এখানেই শেষ নয়। আমাদের আরো একটা বড়ো কাজ বাকি এখনো,সেটা বলো সৌহার্দ্যের বাবার পর্দা ফাঁস করা।ওনার সকল রহস্য খুঁজে বের করা।ঠিক কোন কারণে নিজের ছেলেকে খুন করতে চাইছেন তিনি,সেটা জানতে হবে আমাদের।ওনার এই ভালোমানুষির আড়ালে চালানো ষড়যন্ত্র আর বেশিদিন চলতে দেয়া যাবে না।আমিও এর শেষ দেখতে চাই।
—ঠিক আছে মা চল,আর আমি তোকে কথা দিচ্ছি।তোকে যথাসাধ্য সাহায্য করবো আমি।ঐ লোকটার একটা শাস্তি হোক আমিও চাই।যথেষ্ট খেলা করে নিয়েছে আমাদের সকলকে নিয়ে, এবার ওর মুখোশ টেনে খুলে ফেলার সময়।
শ্রেষ্ঠা বুঝতে পারে প্রজ্ঞার মায়ের সত্যিই বদল ঘটেছে,নিজের কৃতকর্মের জন্যে সে যথেষ্ট অনুতপ্ত।এরপর শ্রেষ্ঠা তার সকল বাঁধন খুলে দিলো।একটু পরে দুজনে মিলে শহরের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
–
–
–
এদিকে আমার বাড়িতে….
প্রজ্ঞার সামনে বসে আছি আমি।ওর সামনে শ্রেষ্ঠার রেখে যাওয়া খাবারগুলো এখনো পড়ে আছে।এখনো কিছুই মুখে তোলেনি।আমি প্রজ্ঞাকে নিজের বাবার সকল ষড়যন্ত্রের কথা খুলে বলি।সে যে আমাকে খুন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।এটা শুনে বেশ অবাক হয়ে যায় প্রজ্ঞা।অবশ্য ও সেদিন একটা ভুল করেছিলো আমার সাথে।আর সেই কাজটা অনেকটা নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার জন্যই হয়েছিলো।প্রজ্ঞা এখন নিজের সমস্ত কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত।ও সত্যিই আমার ক্ষতি কখনোই চায়নি,শুধুমাত্র সংসার করতে চেয়েছিলো আমার সাথে।তবে ও শ্রেষ্ঠার সাথে যা করেছে তার জন্য হয়তো কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না ওকে।এর উপযুক্ত শাস্তিও ওকে দেবো আমি,তবে সেটা এখন নয়।
—কি হলো,এভাবে না খেয়ে থাকলে তো মরে যাবে!খেয়ে নাও কিছু।(প্রজ্ঞাকে উদ্দেশ্য করে আমি বলি)
—আমি খাবো না কিছুই,আর আমি তো মরেই যেতে চাই।এই অভিশপ্ত জীবন নিয়ে আর কি হবে?
—নাটক করো না আমার সামনে, তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।
—আমি নাটক করি বলে মনে হচ্ছে তোমার?
—তো কি মনে হবে আর,তোমার আপাদমস্তক নাটক আর ছলনায় পরিপূর্ণ।আমার ভাবতেই ঘৃনা লাগছে তোমার সাথে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক করেছি আমি।কিভাবে পারলে এটা আমার সাথে করতে?
—কেন,এক কথা বার বার বলে কি আনন্দ পাচ্ছো তুমি,আমায় বলবে?এর থেকে বরং মেরে ফেলো আমায় তুমি!
—বাহহহ,এতো এখন পুরো সিনেমা দেখছি।এতোক্ষন তাও ছিলো শুধু নাটকের পর্যায়ে,
—আমায় ছাড়বে না তাই তো,
—ছাড়বো না বলি নি,তবে তোমায় এখানে যে বন্দী করেছে তোমাকে মুক্ত করার কাজটাও তো তার হওয়া উচিত।তাই না,আমি শুধু পাহারা দিচ্ছি তোমায়,
—শ্রেষ্ঠার কথা বলছো?
—হ্যাঁ,
—আচ্ছা,তোমার বাবা যদি সন্দেহ করে ওকে।বা ধরে ফেলে ও আমি নই,তখন কি হবে?
—কেন,তোমার খুব চিন্তা হচ্ছে বুঝি ওর জন্য?এতো দরদ আগে কোথায় ছিলো,
—বলো বলো,যতো খুশি বলে নাও আমায়।কিন্তু আমার সত্যি ওর জন্য চিন্তা হচ্ছে এটা তুমি বিশ্বাস না করলেও আমার চিন্তা পাল্টে যাবে না।
—ভাট কম বকো,যা দিয়েছি খেয়ে উদ্ধার করো। তোমায় মেরে জেলে যেতে চাই না আমি।
—তুমি যতক্ষন আমায় ক্ষমা না করবে, আমায় বিশ্বাস না করবে কিছু খাবো না আমি। না খেয়ে মরে যাবো দরকার হলে।
—আবার নতুন নাটক,ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি তোমার নাটক দেখতে দেখতে….
—করে নাও,এখন তো অপমান ছাড়া আর কিছুই জুটবে না আমার ভাগ্যে,আমি জানি।
আমি তখন কিছু বলতে যাবো ঠিক তখন কলিং বেল বেজে উঠলো।নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠা এসেছে।এই সময়ে ও ছাড়া আর কারোর আসার কথা নয় এখানে।
স্টোর রুমের দরজা বন্ধ করে ড্রয়িং রুমের দিকে চলে গেলাম আমি।তারপর দরজা খুললাম।
দরজা খুলতেই দেখি সামনে বাবা দাঁড়িয়ে আছে।বাবাকে এই সময়ে বাড়িতে দেখে প্রচন্ড ভয় হতে লাগলো আমার।এই সময়ে ওনার বাড়িতে আসাটা মোটেও ঠিক হলো না।এখন নকল শ্রেষ্ঠা অর্থাৎ প্রজ্ঞাকে বাড়িতে বন্দী অবস্থায় দেখে ফেললে কি হবে সেই ভয়ে হা পা কাঁপছে আমার।
—কি হলো,আমাকে দেখে যেনো ভয় পেয়ে গেলি।কি ব্যপার,
—ভয় পাবো কেন,কি যে বলো না।ভেতরে আসো।
—শ্রেষ্ঠা ফিরবে কবে কিছু বলে গেছে তোকে?
—না,কিছু বলে যায় নি।
—ওহহ,
আমাদের কথা শেষ হতে না হতেই উপরের রুম থেকে একটা চিৎকারের শব্দ ভেসে আসলো।আমি বেশ বুঝতে পারলাম কন্ঠস্বরটা প্রজ্ঞার, আর কারোর নয়।বদমাইশ মেয়েটা ঠিক একটা অঘটন ঘটিয়ে ছাড়লো।এদিকে বাবা হকচকিয়ে উঠলেন শব্দটা শুনে…
—-কি হলো,ওপরের রুম থেকে চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসলো কার?
(আমাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো বাবা)
চলবে…..