ওগো বধু সুন্দরী পর্ব ১৯+২০+২১+২২+২৩+শেষ

#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-১৯
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—-কি হলো,ওপরের রুম থেকে চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসলো কার?

—কি যে বলো না,কার চিৎকারের আওয়াজ আসবে ওপর থেকে।এই বাড়িতে আমি আর তুমি ছাড়া আর কে আছে?

—কিন্তু আমি যে স্পষ্ট শুনতে পেলাম,

—আরে তুমি ভুল শুনেছে,না মানে ভুল বলতে হয়তো বুঝতে ভুল হয়েছে তোমার?

—কি বলছিস কি তুই?

—শব্দটা হয়তো পাশের বিল্ডিং থেকে এসেছে।কেন,সেরকম কিছু কি হতে পারে না?

—হ্যাঁ,ঠিক বলছিস।তাও হতে পারে।আচ্ছা,যাক সে কথা?এখন চলি ফ্রেশ হয়ে আসি একটু,

—-ঠিক আছে যাও,,

বাবা,এই সময়ে বাড়িতে চলে আসায় বিশাল ঝামেলায় পড়ে গেছি আমি।একবার স্টোর রুমে নকল শ্রেষ্ঠাকে বন্দী অবস্থায় দেখতে পেলে সর্বনাশ ঘটবে।জানিনা তখন আমি কিকরে সামাল দেবো।এই ভেবে সোফার ওপরে বসে পড়লাম আমি।

নাহ,একবার উপরে যেতে হবে।তখন না হয় কোনো একটা অজুহাত দিয়ে কাটিয়ে নিয়েছি নিজেকে,কিন্তু বারবার তো আর আমার এক অজুহাত শুনবে না কেউ।ভুলটা আমারই।ওর মুখটা বেঁধে রেখে আসলে এই ফালতু টেনশন বয়ে বেড়াতেই হতো না এখন।উপরে গিয়ে তাই করতে হবে।যাতে ও আর ঝামেলা না করতে পারে।এই ভেবে সোফা ছেড়ে উঠে পড়ি আমি।

উঠে দাঁড়াতেই দেখি বাবা পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।উনি হয়তো ভাবতে পারে নি,আমি দেখো ফেলবো তাকে।তার ডান হাতটা পেছনে লুকোনো,আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো… আমি তার এই আচরণে বেশ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি।তার মতিগতি ঠিক বুঝতে পারছি না।

—বাবা,কি হলো কিছু বলবে?কি হলো কোনো কথা বলছো না কেন,কিছু তো বলো।

আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই একেবারে আমার নিকটে চলে আসলো সে।ওনার এই আচরণে পুরো হতভম্ব হয়ে গেছি আমি।পেছন থেকে সে নিজের হাতটা বের করে আনলো একপর্যায়ে।তার হাতে একটা লোহার রড!!

আমাকে কিছু বুঝে ওঠার সুযোগ না দিয়েই রডটা দিয়ে সজোরে আমার মাথায় একটা আঘাত করলো।আঘাত করে মেঝেতে ফেলে দিলো আমায়।যদিও তখন আর কিছু ভাবার পরিস্থিতিতে নেই আমি,তবে এইটুকু বুঝতে পারছি বাবা নিশ্চয়ই নকল শ্রেষ্ঠাকে দেখে ফেলেছে।আর ওই হয়তো সবটা জানিয়ে দিয়েছে তাকে।এই লোহার রডটা স্টোর রুম ছাড়া আর কোথাও থেকে পাওয়ার কথা নয়,তার মানে আমার ধারণাই সত্যি।চারপাশটা অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো আমার,বুঝতে পারলাম জ্ঞান হারাতে চলছি আমি।এরপর আর কিছু মনে নেই,,



চোখ মেলে দেখতে পাই স্টোর রুমে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বন্দী হয়ে আছি আমি।নকল শ্রেষ্ঠা নেই রুমে,শুধু আমি একা।মেয়েটা আবারো ধোকা দিলো আমায়,ওকে বিশ্বাস করাটাই ভুল হয়েছিলো আমার।যদি ওর সামান্যতম পরিবর্তন আসতো ওর ভাবনায় আমার সাথে কিছুতেই এটা করতে পারতো না।টের পেলাম কেউ আসছে রুমের দিকে।একটু পরে দেখলাম সে আর কেউ নয়,বাবা এসে আমার সামনে একটা চেয়ারে বসলো।তার হাতে একটা পিস্তল।পিস্তলটা পকেট থেকে বের আমার সামনে টেবিলের ওপরে রাখলো।তারপরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।

—কি খবর,মিস্টার সৌহার্দ্য?তার মানে জ্ঞান ফিরেছে?

—তুমি আমার বাবা হয়ে এটা করতে পারলে আমার সাথে?বলো,এতো বড়ো প্রতারনা কিকরে করলে আমার সাথে?

—প্রতারণা করেছি,কিসের প্রতারণা করেছি আমি?

—আবার জিজ্ঞেস করছো কিসের প্রতারনা করেছো ,তুমি পিতা হয়ে নিজের এভাবে নিজের সন্তানকে পেছন থেকে ছুড়ি বসিয়ে দিলে,কোনো বাবা এতো বড়ো একটা জঘন্য কাজ কিকরে করতে পারে তার ছেলের সাথে,আমি সত্য ভেবে পাচ্ছি না।

—-একদম ঠিক বলেছো,কোনো বাবা তার ছেলের সাথে এমন কাজ করতেই পারে না।আর আমি তো ……

—কি তুমি…. কি হলো থেমে গেলে কেনো বাবা??

—এই থামো তো,বারবার কাকে এতো বাবা বলছো,তোমার মুখ থেকে এই ডাকটা শুনে শুনে বিরক্ত হয়ে গেছি আমি।

—তুমি নিজের ছেলেকে খুন করতে চাইতেই পারো, কিন্তু তাই বলে আমি তো আর আমাদের সম্পর্কটা অস্বীকার করতে পারি না।

—কে তোমার বাবা,কে ছেলে!!যদি সম্পর্কের এতোটাই গুরুত্ব তোমার কাছে,তবে শুনে রাখো না আমি তোমার বাবা,না তুমি আমার ছেলে।আমার ছেলে একটাই আর সে হলো মিছিল। আর কেউ নয়।

বাবার কথা শুনে রীতিমত চমকে গেলাম আমি,,

—কি বলছো তুমি এগুলো,আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ঘৃনা করো।সেকারণে এগুলো বলছো এখন,তাই না?

—যারা ঘৃনার বস্তু তাদেরকে কেবল ঘৃনাই করা যায়,আমার মনে তোমার জন্য ঘৃনা ছাড়া আর কোনোকিছুর স্থান নেই,না কোনোদিন ছিলো।আর আমি কোনো মিথ্যে বলছি না তোমায়, তোমার বাবা আমি নই‌।

—-কি বলতে চাও খুলে বলো আমায়,আর আমার প্রতি এতো কিসের ঘৃনা তোমার,সেটাও বলো?

—সত্যি শুনতে চাও তোমার প্রতি কিসের ঘৃনা আমার,সেটা জানতে পারলে দেখো তোমার নিজেরই হয়তো লজ্জা আর ঘৃনায় মরে যেতে ইচ্ছে করবে।অবশ্য এমনিতেও তোমায় আর বেশিক্ষণ বাঁচিয়ে রাখবো না আমি।মরার আগে এই শেষ ইচ্ছেটা পূরন করেই দেই।

—-হ্যাঁ,বলো।আমিও জানতে চাই।তুমি আমায় মারতে চাও তাই তো,মেরে ফেলো।কিন্তু তার আগে আমাকে বলো আমার ওপর কিসের এতো রাগ তোমার,কেন খুন করতে চাও আমায় তুমি?এই প্রশ্নের উত্তর না জেনে মরেও শান্তি পাবো না আমি।কি অন্যায় করেছি আমি তোমার সাথে বলো,যার কারণে এমন নিষ্ঠুর আচরণ করছো,

—-অন্যায় তুমি করো নি তো…অন্যায় করেছে তোমার নষ্টা মা….আর তার পরিবার,

—মুখ সামলে কথা বলো,তুমি আমার মৃত মায়ের ওপরে এতো বড়ো একটা আরোপ দিচ্ছো কোন সাহসে?

—তো কি বলবো আর,সে মহিলা বিয়ের আগে কোনো পরপুরুষের সন্তান গর্ভে ধারণ করে যে নষ্টা না তো,কে নষ্টা??আমার প্রশ্নের উত্তর তুমি…..

—-কি বলছো কি তুমি এগুলো, আমার মা এমন কাজ করতে পারে আমি মরেও গেলেও বিশ্বাস করি না তোমার কথা,নিজের দোষ ঢাকার জন্য আমার মৃত মাকে অপবাদ দিচ্ছো তুমি।আর সে তো শুধু আমার মা নয়,তোমারো স্ত্রীও সে….।অবশ্য তোমার মতো মানুষের পক্ষে সব সম্ভব, এইটুকু বুঝে গেছি আমি।

—তুমি যা বোঝার বুঝে নাও,কিন্তু তাই বলে সত্যিটা পাল্টে যাবে না।

—-সত্যি, কিসের সত্যি?

—যখন তোমার মায়ের সাথে বিয়ে হয় আমার,তুমি তার গর্ভে প্রতিপালিত হচ্ছো,তখন ঠিক মাত্র চার মাসের অন্তঃস্বত্তা তোমার মা।

—আমি এখনো জানি না তোমার কথা কতোটুকু সত্যি,যদি ভুলেও তাই হয়ে থাকে তবে আমার আসল বাবা কে বলো,কার ঔরসে জন্ম হয়েছিলো আমার…

—-কার ঔরসে জন্ম হয়েছে…. (হাহাহাহাহা)এই বলে বাবা হোহো করে হাসতে লাগলো….

—-কি হলো, হাসছো কেন তুমি….

—-(হাহাহাহাহা)সেটা তো নিজেও জানিনা না আমি….শুধু আমি কেন,পৃথিবীর কেউ জানে না তোমার বাবা আসলে কে,এমনকি তোমার মাও না !

—-মানে…??

—মানে কি শুনলে ,নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারবো তো?তুমি তো একেবারেই বিশ্বাস করো না আমায়,

—বলো,,

—মানে হলো এটাই,তোমার জন্ম সাধারণভাবে হয় নি।কারোর ধর্ষণের ফলে জন্মেছো তুমি!!তোমার মায়ের ওপর একদল পশু হামলা চালায়..সেই নরপশুদের ভেতর থেকে কারো একজনের অংশ থেকে যায় তোমার কুমারী মায়ের ভেতরে,আর আজ সেই অংশটা আর কেউ নয় তুমি নিজেই।যার না আছে কোনো পরিচয়,কোনো ধর্ম,কোনো বংশ।তবে বুঝে নাও কে তুমি…,তুমি তো কোনো মানুষের পর্যায়েই পড়ো না।রাস্তার পশু আর তোমার ভেতরে কি তফাত আছে একটু বলবে আমায়?এখনো জিজ্ঞেস করবে কেন ঘৃনা করি তোমায় আমি,,

বাবার কথাগুলো লোহার শেলের মতো বাঁধছে আমার বুকে,মনে হচ্ছে সেই শেলের আঘাত বুকটাকে রক্তাক্ত করে দিচ্ছে আমার,,,জীবনের এই পর্যায়ে এসে এতো বড়ো একটা তিক্ত সত্যের মুখোমুখি হবো কখনো ভাবতে পারি নি।অশ্রুসিক্ত চোখে আবারো বাবাকে প্রশ্ন করি,

—আমার মায়ের এতো বড়ো সর্বনাশ হলো কিকরে,কি ঘটেছিলো সেই দিন তার সাথে?বলো আমায়…..
#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—–২০
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—-আজ থেকে আটাশ বছর আগের কথা।তোমার মা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো।আর্থিক অবস্থার দিক দিয়ে তার পরিবার খুব একট স্বচ্ছল ছিলো না।তাই বাধ্য হয়ে এই পেশা বেছে নিয়েছিলো তোমার মা।অফিস থেকে ফিরতে তার অনেকদিন বেশ রাত হতো।কখনো নয়টা,কখনো দশটা।তো একদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে।সেদিন আবহাওয়াটা বেশ প্রতিকূলে ছিলো।ভারী বৃষ্টি, সাথে ঝড়ো বাতাস বয়ে চলেছে ক্রমাগত।এই সময়ে গাড়ি পাওয়া মুশকিল।

বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো তোমার মা,কিন্তু ভাগ্য তার সদয় হলো না।এরপর সে নিরুপায় হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হেঁটেই রওনা হয়।বেশ কিছু পথ অতিক্রম করার পরে তার মনে আশার আলো সঞ্চার করে একটা ট্যাক্সি এসে উপস্থিত হলো।তোমার মা দেখতে পায় ভেতরে দুইতিন ভদ্রমহিলা বোরখা পরে বসে আছে।পুরুষ বলতে ড্রাইভার একজনই।

বিষয়টা বেশ ইতিবাচক মনে হলো তার কাছে,তারপর সে ট্যাক্সিতে চেপে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে ছুটে চললো।কিন্তু দুর্ভাগ্য,তোমার মা নিজেও জানতো না সে সেদিন যেচে নিজের কতো বড়ো সর্বনাশ ডেকে এনেছিলো।তোমার মা একপর্যায়ে বুঝতে পারল বোরখা পরা মহিলারা বাস্তবে কতোগুলো পুরুষ।যারা একপ্রকার ছদ্মবেশ নিয়ে আছে।বাইরে ঝড়ো বৃষ্টি, তার ভেতরে নিজেকে এতোগুলো পুরুষের মাঝে একটা আটকা জায়গায় একলা দেখে ঘাবড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক।সে চেষ্টা করে গাড়ি থেকে নেমে যাবার,কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেয়া হলো না।

একজন লোক তোমার মাকে টান দিয়ে নিজের ওপর ফেলে দিলো।

—কি অসভ্যতা হচ্ছে,ছাড়ুন বলছি আমায়, ড্রাইভার তুমি কি দেখতে পাচ্ছো না এসব।গাড়ি থামাও বলছি, কথা না শুনলে আমি কিন্তু চিৎকার করবো,

—চিৎকার করবি,তোর চিৎকার কে শুনবে এতো রাতে?

—নাহ!তোমরা এটা করতে পারো না আমার সাথে।আমি কোনোরকম একটা চাকরী করে
বাবার সংসার চলাই,ভদ্রঘরের মেয়ে আমি।দয়া করে আমার ইজ্জত নষ্ট করো না, তোমাদের পায়ে পড়ি।ছেড়ে দাও।

—আর কতোকাল বাবার সংসারে খাটবি, এবার না হয় আমাদের জন্য একটু খাট।নে খুশি কর আমাদের সবাইকে।

—নাহ,আমি এসব করতে পারবো না।মরে গেলেও পারবো না।

—তুই পারবি না,কিন্তু আমরা তো পারবো।চল,তোকে কিছু করতে হবে না।যা করার আমরাই করছি,

তোমার মা গুন্ডাগুলোদের নোংরা কথা সহ্য করতে না পারে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো একজনের গালে।এতে ওরা আরো বেশী ক্ষেপে যায় এবং হিংস্র হয়ে ওঠে।তারপর যা হবার তাই হয়েছে,
চলন্ত গাড়িতে বসে তোমার মা সেদিন কতোগুলো গুন্ডাদের হাতে ধর্ষণ হয়,গাড়ির ড্রাইভারও ওদের দলেরই ছিলো।তার হাত থেকেও ছাড় পায়নি তোমার মা।আর তুমি সেদিনের সেই গুন্ডাগুলোদের ভেতরেরই কারোর পাপের ফল,হয়তো সেই ড্রাইভারের, নয়তো তার যাকে চড় মেরিছিলো তোমার মা, নয়তো অন্য কারো।

কথাগুলো শুনছি আর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো আমার।যে ছেলেকে নিজের কানে তার মায়ের ধর্ষণ হবার গল্প শুনতে হয়, জানিনা কোন পাপ করেছিলাম যার জন্য সৃষ্টিকর্তা এতো বড়ো শাস্তি দিচ্ছেন আমায়।তবে যাই ঘটুক না কেন,আমার মৃত মায়ের ওপর থেকে এতোটুকু সম্মান বা শ্রদ্ধাবোধ কমে যায় নি আমার,বিপরীতে এখন আফসোস হচ্ছে আমার,তার এতো বড়ো ত্যাগের উপযুক্ত মর্যাদা দিতে পারি নি তাকে।তার আগেই মা ছেড়ে চলে গিয়েছেন আমায়।তথাকথিত আমার বাবা বলে ডাকা লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলি :

—তুমি এতো সুন্দরভাবে আমার মায়ের সাথে ঘটা অন্যায়ের বর্ননা করলে আমার কাছে, আবার তাকে নষ্টা বলছো কোন মুখে।বিবেক বুদ্ধি কি সব বিসর্জন দিয়ে ফেলেছো?আর তুমি সবকিছু জেনেও কেন বিয়ে করতে গেলে আমার মাকে,যদিও তোমার চোখে এতোটাই খারাপ সে,

—নাহ!আমি তো প্রথমে কিছুই জানতাম না।হ্যাঁ,তবে আমার বুড়ো বাপ আর মা ঠিক জানতো।ওরা বাধ্য করলো আমায় বিয়েটা করতে।তখন তাদের কথা পালন করা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না আমার কাছে,

—কেন উপায় ছিলো না,যখন আমার মাকে মন থেকে মেনে নিতেই পারো নি।পালিয়ে গেলে না কেন তুমি?

—পালিয়ে কোথায় যেতাম আমি, আমি পালিয়ে গেলে না খেয়ে মরতে হতো আমায়।বাবার সম্পত্তির কানাকড়িও জুটতো না ভাগ্যে।তাই বাধ্য হয়ে বিয়েটা করছিলাম।আর ঠিক সেইদিন মনে মনে শপথ নিয়েছিলাম তুমি জন্মানোর পরেই শেষ করে দেবো তোমায়।যাতে তোমার ঐ নোংরা,দূষিত মুখ রোজ দেখতে না হয় আমার।কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য আমি বহুবার সুযোগ পেয়েও তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারি নি।বার বার আমার হাত ফসকে বেরিয়ে গেছো তুমি।

তোমায় মারতে না মারার যন্ত্রণা রোজ তাড়িয়ে বেরাতো আমায়,রাতে ঘুমাতে পারতাম না কখন তোমার লাশটা নিজের চোখের সামনে দেখবো আমি।

—আমার মাকেও তুমি মেরেছো তাই না, আমি এবার বুঝতে পেরেছি আমার মায়ের মৃত্যুর পেছনে নিশ্চয়ই তোমার হাত আছে?

—-নাহ!আমি কাউকে কিছু করি নি,

—মিথ্যে বলছো তুমি,তুমি আমাকে মারতে পারো,যেটা নিজের মুখে স্বীকার করেছো তুমি।আমার মাকে তুমিই মেরেছো।তোমার মতো জানোয়ারের পক্ষে সব সম্ভব,পৃথিবীর সবথেকে জঘন্য কাজটাও তোমার পক্ষে করা সম্ভব,

—বললাম না,আমি কিছু জানি না।তোমার মাকে মারি নি আমি,এমনিতেই তোমায় একটু পরেই মেরে ফেলবো আমি,আমার বন্দুকের গুলি তোমার বুক ঝাঝড়া করে দেবে,তোমায় মিথ্যে বলবো আমি কিসের ভয়ে? তাছাড়া এতো কেন জানতে চাইছো তুমি,তুমি জিজ্ঞেস করলেই আমি সব তো গড়গড় করে বলে দেবো না তোমায়,

আমি মনে মনে ভাবছি,সত্যিই তো।যে আমাকে একটু পরেই পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।যে নিজের সমস্ত কৃতকর্মের কথা স্বীকার করলো নিজের মুখে,মাকে খুন করলে সেটা বলতে সমস্যা কোথায়।তবে কি মায়ের খুন অন্য কারোর হাতে হয়েছে।যদিও আমার সেদিন একটি মেয়ের সাথে ধস্তাধস্তি হয়েছিলো আমার, কিন্তু তাকে তো আর আমি সরাসরি মাকে খুন করতে দেখি নি। সে আমার মায়ের খুনি এটা ধারণা মাত্র আমার।তবে কি এটা হতে পারে, মায়ের খুন নকল শ্রেষ্ঠার কাজ,যার কানের দুল পেয়েছিলাম আমি।কিন্তু ও আমার মাকে কেন মারতে যাবে শুধু নকল শ্রেষ্ঠা নয়,মাকে যদি এই লোকটা খুন না করে অন্য কেউ খুন করে থাকে তবে তার কারণটা কি,আমার মায়ের সাথে কি যোগাযোগ তার !!

—কি এতো ভাবছে,এখন আর এতো ভেবে কি হবে।আমার হাতটা যে বড্ড নিশপিশ করছে,সে চাইছে কখন আমি পিস্তলটা তুলে তোমার মাথা বরাবর শেষ গুলিটা চালিয়ে দেই…আজ যখন সব জেনেই গেছো তুমি,আর কিছুতেই বাঁচিয়ে রাখা যাবে না তোমায়।

—তুমি আমায় অনেক আগেই মেরে দিয়েছো, তোমার এই গুলি আর কি মারবে আমায়।মরতে ভয় পাই না আমি।তবে একটাই আফসোস রয়ে গেলো, মায়ের খুনি কে জেনে যেতে পারলাম না।

—জানো তো,এক জীবনে সব ইচ্ছে পূরণ হয় না মানুষের।শুভকাজে আর দেরী করতে চাই না, গুড বাই মাই সন….

এই বলে সে আমার মাথা বরাবর পিস্তলটা তাক করলো আমার,নিজের মৃত্যুকে যেন সাক্ষাৎ থেকে দর্শন করছি আমি।চোখ বন্ধ করে, মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি। কারণ আমি ভালো করেই জানি, আজ এই নরপশুর থেকে রক্ষা নেই আজ আমার।

হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার তথাকথিত বাবা চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।আমি লক্ষ্য করলাম তার বাহুতে একটা ছুড়ি বিঁধে আছে।স্টোর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শ্রেষ্ঠা আর নকল শ্রেষ্ঠার মা…সাথে নকল শ্রেষ্ঠাও আছে…তবে ছুড়িটা কার হাত থেকে ছুটে এসেছে বুঝতে পারছি না আমি…
#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-২১
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার তথাকথিত বাবা চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।আমি লক্ষ্য করলাম তার বাহুতে একটা ছুড়ি বিঁধে আছে।স্টোর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শ্রেষ্ঠা আর নকল শ্রেষ্ঠার মা।সাথে নকল শ্রেষ্ঠাও আছে।তবে ছুড়িটা কার হাত থেকে ছুটে এসেছে বুঝতে পারছি না আমি…..

—-তোমার সমস্ত খেলা শেষ,আজ তোমায় নিজের হাতে শেষ করে ফেলবো আমি।

এই বলে নকল শ্রেষ্ঠা বাবার দিকে এগিয়ে গেলো।শ্রেষ্ঠা ওকে পেছন থেকে বাঁধা দেয়।

—নাহ,প্রজ্ঞাকে ওকে কিছুই করবে না তুমি।ওর যা ব্যবস্থা করার আইন করবে।আমরা আইন হাতে তুলে নিতে পারি না।

প্রজ্ঞা শ্রেষ্ঠার কথায় কিছুটা শান্ত হলো,এদিকে শ্রেষ্ঠা আমার দিকে এগিয়ে আসলো… তারপর আমার বাঁধন খুলে দেয়।

—তুমি ঠিক আছো তো,

—হ্যাঁ,আমি একদম ঠিক আছি।আমার কথা কথা চিন্তা করো না।

—নাহ,ও ঠিক নেই।দেখো শয়তানটা ওর মাথার কি অবস্থা করেছে,রক্তের দাগ এখনো শুকোয়নি,,(আমাকে উদ্দেশ্য করে প্রজ্ঞার বক্তব্য)

আমি প্রজ্ঞাকে উদ্দেশ্য করে বলি…..

—-থামো থামো এক মিনিট,তোমাকে তো আটকে রেখেছিলাম আমি এই ঘরে।তারপরে তুমি একটা সিনক্রিয়েট করে ফাঁসিয়ে দিলে আমায়।আবার এখন এসে নাটক করছো।আর তোমাকে এখান থেকে মুক্ত করলো কে??

—নাহ,সৌহার্দ্য।তুমি ভুল ভাবছো।আসলে প্রজ্ঞা বাইরে গিয়ে ফোন করে আমাদের। যাতে আমরা যতোদ্রুত সম্ভব এখানে চলে আসি।আর আসল কার্লপিটকে হাতেনাতে ধরে ফেলতে পারি।(শ্রেষ্ঠা)

—-সে বুঝলাম,কিন্তু এখান থেকে ওকে মুক্ত করলো কে, আগে সেটা বলো আমায়।

—যখন তোমার বাবা স্টোররুমে ঢুকে পড়ে। আমাকে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায় সে।আমি তাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেই,বিনিময়ে সে ছেড়ে দেয় আমাকে।আমি জানতাম আজ অনেক বড়ো অনর্থ ঘটবে তোমার সাথে।তাই এই বুড়োর সাথে নাটক করে বাড়ির বাইরে গেলাম, কিন্তু ও নিজেও জানতো না ওর যম নিয়ে ফিরবো এই বাড়িতে আমি।(প্রজ্ঞা)

—একদম ভালো করলে না এটা তোমার সাথে আমরা।আমাকে ধোঁকা দেবার শাস্তি সবাই পাবে..একে একে সবাইকে শাস্তি দেবো আমি।
(মেঝে থেকে নিজের মাথা তুলে বাবা বলতে লাগলো)

—-একদম চুপ থাকো তুমি,তোমার এতোটুকু ভয় হচ্ছে না আমাদের সবাইকে একসাথে দেখে তোমার নিজের চোখের সামনে।যাদের সবাইকে নিজের হাতের পুতুল বানিয়ে রেখেছো তুমি।আমাদের সবাইকে ঠকিয়েছো তুমি,শুধুমাত্র নিজের স্বার্থে।আজ তো নিস্তার নেই তোমার।দেখো কি করি তোমার সাথে আমরা….
(শ্রেষ্ঠা বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,)

আমি দেখতে পাচ্ছি শ্রেষ্ঠার চোখে ক্রোধের আগুন,শুধু শ্রেষ্ঠা নয় প্রজ্ঞার চোখ বেয়ে যেন আগুনের লাভা বেরিযে আসবে।সত্যিই তো, আমার কথা বাদ দিলাম,ওদের দুজনের জীবন নষ্ট হয়েছে শুধুমাত্র এই একটা লোকের জন্য।পৃথিবীতে মানুষ সবকিছুর সাথে আপোষ করতে পারে,তবে নিজের জীবনের সাথে নয়।শ্রেষ্ঠা আর প্রজ্ঞাকে দেখে মনে হচ্ছে ওরা বাবাকে গিলে খাবে।
প্রজ্ঞার মাও পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখে কোনো কথা নেই।

—তোমরা আমার কিছুই করতে পারবে না,আর আজকে যেটা সবাই মিলে করলে আমার সাথে এর ফল ভোগ করতে হবে তোমাদের।

—আগে নিজেকে তো বাঁচাও,তারপরে আমাদের কথা ভেবো।এমন অবস্থা করবো তোমাদের সারাজীবন জেলে পঁচে মরেও শাস্তির শেষ হবে না তোমার।তুমি নিজে জানো কতোগুলো অপরাধ করেছো তুমি,এর শাস্তি কি হতে পারে ধারণা আছে তোমার।

শ্রেষ্ঠার কথায় বাবা চুপ করে রইলো,কারণ সেই মুহূর্তে বলার মতো কিছুই ছিলো না তার।আমি তার মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।নিজের দূর্বলতা ঢাকতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিচ্ছে সবাইকে।আর কিছু না।এতো এতোকিছুর পরেও লোকটা এতোটুকু শুধরালো না,এটাই আফসোস।যে অপরাধ করেছে যদি তার ভেতরে অনুশোচনা বোধের জন্ম না হয়, আমরা কিই বা করতে পারবো,আর আইনই বা কি পারবে।

এরপর বাসায় পুলিশ ডাকা হলো,আমাকে বন্দী করে খুনের চেষ্টার অপরাধে পুলিশ গ্রেপ্তার করলো তাকে।তবে শুধু এটাই তার অপরাধ নয়।একটা মেয়েকে প্ররোচিত করে অন্ধকার জগতের দিকে ঢেলে দেওয়াও আইনের চোখে অন্যতম জঘন্য অপরাধ।এরও বিচার হবে বাবার।সব অপরাধের বিচার হবে,যা শুধু এখন সময়ের অপেক্ষা।।




এর দুইদিন পরে,তখন বিকেল বেলা।বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছি আমি।দেখতে পাচ্ছি মাথার ওপর থেকে ধবল বক সারিবেঁধে উড়ে যাচ্ছে।কতোটা শৃঙ্খলাবোধ ওদের সবার ভেতরে,যে যার জায়গায় স্থির থেকে উড়ে চলছে।দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।পৃথিবীতে মানুষ নামক প্রানীর ভেতরেই বোধহয় ন্যায় আর শৃঙ্খলাবোধের বড্ড অভাব।

আমার তথাকথিত বাবা জেলে তার কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করছে,বাবার সমস্ত রহস্য আমার কাছে জলের মতো পরিষ্কার।এবার আমার মায়ের খুনির রহস্য ভেদ করার অপেক্ষা।জানিনা কখন আর কবে সেই সত্যি আমার সামনে আসবে।মায়ের মৃত্যুতে বাবার কোনো হাত আছে কিনা,এখন পর্যন্ত জানি না আমি।যদি সত্যি তাই থেকে থাকে তবে আমার কাজ আরো বেশী মুশকিল হয়ে যাবে।অন্যদিকে নকল শ্রেষ্ঠা অর্থাৎ প্রজ্ঞা সেও আমার সন্দেহর বাইরে ছিলো না কোনোদিন।কিন্তু সমস্যা হলো,যাকেই সন্দেহ করি না কেন।কারোর বিরুদ্ধেই উপযুক্ত প্রমাণ নেই আমার কাছে।জানিনা কিকরে মায়ের খুনি পর্যন্ত পৌঁছবো আমি।

হঠাৎ ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দে আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো।পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই দেখি গেট দারোয়ানের কল।বেশ কিছুদিন গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলো ও।গতকালকেই ফিরে এসেছে।কলটা রিসিভ করলাম,

—স্যার,একটু নিচে আসেন?

—কেন,কি হয়েছে?

—একটা পার্সেল এসেছে?

–পার্সেল এসেছে,কিসের পার্সেল?

—সেটা তো না খুলে বলতে পারবো না আমি। আপনি নিচে এসে নিয়ে যান।

—ঠিক আছে,তুমি ওয়েট করতে বলো আমি এক্ষুনি আসছি।

ফোনটা রেখে দ্রুত গ্রাউন্ড ফ্লোরের দিকে গেলাম।গিয়ে দেখি গেট দারোয়ান একটা খাম হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে আমার দিকে এগিয়ে এলো সে।

—স্যার, এই যে চিঠিটা?

—কি এটা,এটা পার্সেল?

—হ্যাঁ স্যার,এটাই তো দিয়ে গেলেন,

—দিয়ে গেলেন মানে,যে এটা নিয়ে এসেছে সে কোথায়,

—সে তো চলে গেছে স্যার,

—চলে গেছে,এভাবে হয় নাকি।পার্সেলের ডেলিভারির ক্ষেত্রে কিছু প্রটোকল থাকে তো,উনি সেগুলো না মিটিয়ে চলে গেলেন, অদ্ভুত!

—আমি বলেছিলাম তাকে,আর স্যার ওনাকে দেখে মনে হলো না উনি প্রফেশনাল কেউ।

—আচ্ছা যাই হোক,ছাড়ো।তবে তোমার তাকে চলে যেতে দেওয়া ঠিক হয়নি।

চিঠিটা দারোয়ানের সামনে বসে খুলতে মন চাইলো না,তাই আবারো চিঠিটা নিয়ে ছাদে গেলাম।

চিঠিটা খুলতে খুলতে বুকটা ধুকধুক করতে লাগলো।না জানি কি আছে এটার ভেতরে।তারোপর এরকম একটা উড়ো চিঠি।

চিঠিটা খুলে নিজের সামনে ধরলাম,তারপর চোখের সাহায্যে পড়তে থাকি…..

“কি ব্যপার,কেমন আছো?ভালো নেই নিশ্চয়ই।খুব চিন্তার ভেতর দিয়ে যাচ্ছো,তাই না।আমি জানি কি নিয়ে এতো চিন্তা তোমার।এই চিন্তা মাথা থেকে দূর না হওয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছো না তুমি।তবে জানো কি,আমার কাছে তোমার চিন্তার উপশম আছে।আজ রাতেই চলে আসো, ঠিক পৌনে দশটার পরে ।চিঠির অপর প্রান্তে ঠিকানা লেখা আছে। আশা করি জায়গা এখনো ভুলে যাওনি।আর ভুলে যাবারো কথা নয় ”

লেখাগুলো দেখে বেশ অবাক বনে গেলাম,বেশ আগ্রহভরে চিঠির অপর প্রান্তে চলে যাই।সেখানে মোটা কালিতে এখানে ঠিকানা লেখা আছে…

ঠিকানাটা দেখতেই চোখজোড়া কপালে উঠলো আমার, সারা শরীর যেন অদ্ভুত ঝাঁকুনি দিলো।এ আর অন্য কোনো জায়গা নয়,আজ থেকে এক বছরের বেশী সময়ের আগে যে জায়গায় আমার মায়ের খুন হয়েছিলো সেই জায়গার ঠিকানা।আর সময়টা….পৌনে দশটা।সেইরাতে পৌনে দশটার দিকেই আমার মায়ের খুন হয়েছিলো!!!
তার মানে এই চিঠির সাথে আমার মায়ের খুনের কোনো না কোনো যোগাযোগ আছে,তা না হলে এতোগুলো পয়েন্ট এভাবে মিলে যাবে কেন!?

একপ্রকার আশ্চর্যরকমের উত্তেজনা কাজ করতে লাগলো আমার ভেতরে,এক্ষুনি শ্রেষ্ঠার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে হবে।এই ভেবে শ্রেষ্ঠার রুমের দিকে ছুটে গেলাম।আমি জানি ও আমার মতোই অবাক হয়ে যাবে চিঠিটা দেখে।আর তাছাড়া আমার মায়ের খুনিকে শনাক্ত করতে পারলে আমার থেকে শ্রেষ্ঠাই বেশি খুশি হবে আমি জানি।ওর থেকে বড়ো শুভাকাঙ্ক্ষী আমার জীবনে আর কে আছে….

কিন্তু এসে দেখতে পাই শ্রেষ্ঠা নেই ওর রুমে,পুরো বাসা তন্নতন্ন করে খুঁজলাম,কেউ কোথাও নেই ।

—কি হলো ব্যপারটা বুঝলাম না,শ্রেষ্ঠা আমাকে না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যাবার পাত্রী তো নয়।ওর এই আচরণে অবাক না হয়ে পারছি না।
একটা কাজ করা যায়,ও বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে গেট দারোয়ানের নিশ্চয়ই তো জানার কথা,ওকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো কিছু জানতে পারবো।শ্রেষ্ঠার ফোনে একটু সমস্যা করছে,তাই ফোন দিয়ে লাভ হবে না।তাছাড়া প্রজ্ঞা আর ওর মা একটু বাইরে গিয়েছে দুপুরের পর।

গ্রাউন্ড ফ্লোরে যাবার জন্য দরজার দিকে পা বাড়ালাম,ঠিক তখন শ্রেষ্ঠা ঘরে ঢুকে পড়লো।আমাকে আচমকা সামনে দেখেই যেন অবাক হয়ে গেলো ও।

—কি হলো শ্রেষ্ঠা,কোথাও গিয়েছিলে?সেই কখন থেকে খুঁজে মরছি তোমায়।

—একটু বাইরে গিয়েছিলাম,কাজ ছিলো।….(ইতস্ত করে)

শ্রেষ্ঠার এই আচরণে কারণ বুঝতে পারছি না, কেমন জানি একটা ভয় পেয়ে আছে আমাকে দেখে।তাছাড়া কিছু একটা লুকোচ্ছে এমন মনে হলো আমার।

—কি হলো শ্রেষ্ঠা,ঠিক আছো তো তুমি,তোমাকে বিচলিত লাগছে কেন?

—কি যে বলো না,আমি ঠিক আছি।

—আচ্ছা বসো,একটা জরুরী কথা বলার আছে তোমাকে?

—কি জরুরী কথা,বলো।

—এই চিঠিটা দেখো,এই চিঠির লেখাগুলোর সাথে আমার মায়ের মৃত্যুর একটা অদ্ভুত কানেকশন আছে।পড়ে দেখো এটা তুমি….এইমাত্র চিঠিটা হাতে এলো আমার।মনে হচ্ছে মায়ের খুনিকে খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলতে পারবো আমরা,

এই বলে চিঠিটা শ্রেষ্ঠার দিকে এগিয়ে দিলাম, কিন্তু এ যেন খুব একটা অবাক হলো না চিঠিটা দেখে যতোটা হবার কথা ছিলো।আমার এমন মনে হচ্ছে এই চিঠির ব্যপারে ও আগে থেকেই অবগত।তাই এতোটা স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছে….কিন্তু সেটা কিকরে সম্ভব..??

কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো অতিরিক্ত টেনশন আর উত্তেজনাবশত আমি বোধহয় একটু বেশিই ভাবছি শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে,আর যাই হোক,পৃথিবী উল্টে গেলেও আমার মায়ের খুনের ব্যপারে শ্রেষ্ঠাকে সন্দেহ করতে পারি না আমি।আসলে পাশের মানুষদের সন্দেহ করতে করতে আমার মনে সন্দেহর বীজ দানা বেঁধে আছে।যাকে তাকে যখন খুশি সন্দেহ করে ফেলছি।
তবে যাই হোক না কেন,এটা ঠিক আজ রাতে ঐ জায়গায় কিছু একটা ঘটতে চলেছে আমার সাথে,হয়তো ভালো কিছু,নয়তো অন্যরকম।কিছু একটা তো অপেক্ষা করছে……
#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—২২(সমাপ্তির সূচনা)
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

রাত দশটার দিকে….
আজ থেকে এক বছর আগে যেখানে আমার মায়ের খুন হয়েছিলো সেই স্থানে উপস্থিত হলাম। জানিনা এখানে কে ডেকেছে আমায়।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার অপেক্ষা করে যাচ্ছি…

একটু পরে দেখতে পাই আমার অদূরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।শীতের রাত।কুয়াশার চাদরে চারদিক ঘিরে আছে।তাই দূর থেকে তার ছায়া ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।

সেই ব্যক্তি কোনোপ্রকার শব্দ উচ্চারণ করছে না,নিরবে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।তার এই আচরণ আরো বেশী অবাক করে দিচ্ছে আমায়।

—কে তুমি,কথা বলছো না কেন…??
এই বলে এগিয়ে যেতে শুরু করি তার দিকে, অমনি সে আমাকে আটকে দেয়।নিজের হাত দিয়ে আমাকে তার কাছে যেতে বারণ করে।

—ঠিক আছে,আমি আসছি না তোমার কাছে। কিন্তু তুমি আমাকে এখানে কেন ডেকেছো সেটা তো বলো?

—মনে পড়ে এই জায়গার কথা,আজ থেকে এক বছরের কিছু দিন আগে কি হয়েছিলো এই জায়গায়?

(নারী কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলাম আমি।এতো শ্রেষ্ঠার কন্ঠস্বর,তবে শুধু শ্রেষ্ঠার নয়।কন্ঠস্বরটা অনেকটা প্রজ্ঞার মতোও বটে।বুঝতে পারছি না ঠিক কে কথা বলছে আমার সাথে।তবে ওদের দুজনের কন্ঠস্বর অনেকটাই এক রকম।তাই বোঝা যাচ্ছে না।)

—-হ্যাঁ,মনে আছে।আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে,এই জায়গায় আমার মাযের খুন হয়েছিলো।তাকে খুন করে এই ব্রিজের ওপর দিয়ে নিচে নদীর জলে ফেলে দেয়া হয়েছিলো।

—বাহহ….কিছুই ভুলো নি দেখছি।

—সেদিন যে খুন হয়েছিলো,সে আমার মা হয়।যার গর্ভ থেকে জন্ম হয়েছিলো আমার।তোমার কি মনে হয় কেউ নিজের মায়ের মৃত্যুর ঘটনা এতো সহজে ভুলে যেতে পারে?

—ঠিক বলেছো,জীবনে মানুষের সাথে কখনো কখনো এমন কিছু ঘটে,যা চাইলেও সে ভুলতে পারে না।তার ভিতরে তোমার মায়ের মৃত্যুর ঘটনা অন্যতম।

—তুমি আমাকে এখানে কেন ডেকেছো বললে না কিন্তু….

—বলবো,আজকে সবকিছু বলার জন্যেই তো ডেকেছি তোমায়।

—-তো এতো সময় নিচ্ছো কেন,বলো কেন ডেকেছো আমায়?

—তোমার মায়ের সেদিন খুন কিভাবে হয়েছিলো, কেন হয়েছিলো আর কার হাতে হয়েছিলো।এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার জন্য মনটা বড্ড ছটফট করছে তোমার তাই না?

মেয়েটার কথাগুলো শুনে আবারো বিষ্ময় আর উত্তেজনায় ঘিরে ধরলো আমায়।মনে মনে যা ভেবেছিলাম,তাই হতে চলেছে!ওর সাথে আমার মায়ের মৃত্যুর সম্পর্ক আছে নিশ্চিত।কিন্তু মেয়েটার পরিচয় না জেনে আমি ওর সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে চাইছি না।

—কে তুমি…তুমি এতোকিছু কিকরে জানো, আগে নিজের পরিচয় দাও।

—আমার পরিচয় জানাটা জরুরী নয়,তবে হ্যাঁ তোমাকে আমার পরিচয় নিশ্চয়ই দেবো।

—না,এখন বলতে হবে কে তুমি…তুমি আমার মায়ের মৃত্যুর রহস্য জানাতে এসেছো তাই না?তবে শুনে রাখো,আমি আগে তোমার আসল পরিচয় জানবো, তারপরেই তোমার সকল কথা শুনবো।তার আগে নয়।

—যদি এমনটা হয়,তবে শোনো আমিই সেই মানুষ যার হাতে তোমার মায়ের খুন হয়েছিলো!!

—তুমি কি মজা করছো আমার সাথে,এগুলো কি বলছো তুমি?

—হ্যাঁ,সত্যি বলছি।সেদিন আমার হাতেই তোমার মায়ের খুন হয়েছিলো।দীর্ঘ একটি বছর ধরে জীবনের এই চরম সত্যিটা বয়ে বেরাতে বেরাতে বড্ড ক্লান্ত আজ আমি।তাই তোমার কাছে ছুটে এসেছি আসল সত্যিটা তোমাকে জানাতে!এই বোঝা ক্রমাগত ভারী থেকে ভারীতর হয়ে উঠছে আমার কাছে, যা বহন করা অসম্ভব।

—আমার মায়ের খুন তোমার হাতে হয়েছিলো, দেখো আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না কিছুই।যদি তাই হয়ে থাকে…তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে,আর এতোদিন পরেই বা কেন এলে…

—-বলবো, আজকে সব বলবো তোমায়।আমিও চাই নিজের ভারাক্রান্ত মনকে হালকা করতে, নিজেকে অন্তর্দহন থেকে নিস্তার দিতে।তবে এই সমস্ত কিছু তখনই সম্ভব হবে যখন তুমি আমার দেয়া শর্তটা মানবে…

—শর্ত,কিসের শর্ত??(ফের বিষ্ময়ের সুরে)

—আগে কথা দাও তুমি আমার শর্ত পালন করবে।কোনো প্রশ্ন করবে না।আর আমি জানি সেটা সম্ভব তোমার কাছে।

—তুমি হয়তো এখনো বুঝতে পারছো না,মায়ের খুনের রহস্য জানার জন্য কতোটা মরিয়া হয়ে আছি আমি,দীর্ঘ এক বছর ধরে।বলো কি শর্ত তোমার, তোমার সকল শর্ত মানতে আমি রাজি…

—কথা দিয়েছো কিন্তু…

—হ্যাঁ, দিলাম। এবার বলো,

—এই পিস্তলটা টা নাও,
(এই বলে মেয়েটা আমার দিকে একটা পিস্তল ছুড়ে দিলো,আমি লুফে নিলাম)

—পিস্তল কেন,পিস্তল দিয়ে কি হবে?

—যখন আমার সমস্ত ঘটনা বলা শেষ হবে…তুমি যদি চিনতেও পারো আমায়,আমি তোমার যতোই কাছের লোক হই না কেন আমি আদেশ করা মাত্রই এই পিস্তলটা আমার মাথা বরাবর চালিয়ে দিতে হবে তোমায়।এমন ভাবে চালাবে যাতে টার্গেট মিস না হয়, কারণ তোমার টার্গেট মিস হলে আর মরতে পারবো না আমি…

মেয়েটার শর্ত শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো আমার।এটা কি বলছে,ও এমন একটা শর্ত দিবে আমায় ভাবতে পারি নি।

—তোমার মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেছে কি বলছো এসব,আমি তোমাকে খুন করতে যাবো কেন… যদি তুমি কোনো অন্যায় করেই থাকো, তবে আইন বিচার করবে তোমার।আমি নই।

—বিশ্বাস করো,যে অন্যায় করেছি আমি,কোনো আইন আমার জন্য পর্যাপ্ত নয়।সেদিন তোমার মাকে খুন করেছি আমি,আজ আমায় খুন করে তুমি তোমার মাতৃহত্যার প্রতিশোধ নেবে।আমি জানি প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাবী নও তুমি।কিন্তু নিজের জন্য না হোক,আমার জন্য এই কাজ করতে হবে তোমায়।আজকে তোমার হাতে মরতে পারলে সেটাই হবে আমার উপযুক্ত বিচার,তোমার হাতে মরে আজ চিরশান্তি লাভ করতে চাই আমি। নয়তো মরেও আমার আত্মা শান্তি পাবে না।

—তুমি যেগুলো বলছো কিছুতেই সম্ভব নয়। এভাবে হয় না,

—তাহলে নিজের মায়ের মৃত্যুর রহস্যের ব্যপারে ভুলে যাও।আমি কিছুই বলতে পারবো না তোমায়,

অগ্যতা মেয়েটার শর্তে রাজি হলো আমায়, আসল সত্যিটা এভাবে সামনে পেয়ে হাতছাড়া করতে চাই না আমি।সত্যিই তো,এই সত্যিটা জানতে পারলে আমার অভিশপ্ত জীবনে আর কিছুই অপ্রাপ্তি থাকবে না।যদি কাউকে খুন করার পরিবর্তে জীবনের শেষ উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারি,তবে সেটাই আমার সার্থকতা।

—ঠিক আছে, তোমার শর্তে রাজি আমি,এবার বলো।সেদিন কেন আমার মাকে খুন করেছিলে তুমি…?মায়ের সাথে কি এমন যোগাযোগ ছিলো তোমার,,

—শর্তের রাজি হবার জন্য ধন্যবাদ, শোনো তবে এবার….

সেই রাতে এই ব্রিজের নিচে একটা বড়ো বইমেলা হচ্ছিল।আমিও এসেছিলাম সেই মেলায়।কোনো কারণে আমার বেশ দেরী হয়ে যায়!তাই তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে পারি নি।একপর্যায়ে বুঝতে পারি কেউ বা কারা পেছন থেকে ফলো করছে আমায়।ভীষণ অস্বস্তিকর পরিস্থিতির ভেতরে পরে গেলাম আমি।যদিও তখন আমি নিশ্চিত ছিলাম না পুরোপুরি এই বিষয়ে।

যখন বাসায় ফেরার জন্য নিজের মনস্থির করলাম,তখন আমার ধারণা সত্যি প্রমাণিত হয়..দেখতে পাই চার পাঁচজন লোক পেছন থেকে আমার ওপরে নজর রাখছে।তখন মেলা শেষের পর্যায়ে।একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছিল।বেশীরভাগ মানুষ সেই অনুষ্ঠান দেখতে ব্যস্ত ছিলো।
যখন আমি মেলা থেকে বেরিয়ে আসতে যাবো ঠিক তখন আমায় কিছু বুঝে ওঠার সুযোগ না দিয়েই লোকগুলো ধাওয়া শুরু করলো,আমি আদৌ জানতাম না,তারা কারা,আর ঠিক কোন কারণে ধাওয়া করছে আমায়….এরপর….
#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—২৩(অন্তিম পর্ব)
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

সেই রাতে এই ব্রিজের নিচে একটা বড়ো বইমেলা হচ্ছিল।আমিও এসেছিলাম সেই মেলায়।কোনো কারণে আমার বেশ দেরী হয়ে যায়!তাই তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে পারি নি।একপর্যায়ে বুঝতে পারি কেউ বা কারা পেছন থেকে ফলো করছে আমায়।ভীষণ অস্বস্তিকর পরিস্থিতির ভেতরে পরে গেলাম আমি।যদিও তখন আমি নিশ্চিত ছিলাম না পুরোপুরি এই বিষয়ে।

যখন বাসায় ফেরার জন্য নিজের মনস্থির করলাম,তখন আমার ধারণা সত্যি প্রমাণিত হয়..দেখতে পাই চার পাঁচজন লোক পেছন থেকে আমার ওপরে নজর রাখছে।তখন মেলা শেষের পর্যায়ে।একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছিল।বেশীরভাগ মানুষ সেই অনুষ্ঠান দেখতে ব্যস্ত ছিলো।
যখন আমি মেলা থেকে বেরিয়ে আসতে যাবো ঠিক তখন আমায় কিছু বুঝে ওঠার সুযোগ না দিয়েই লোকগুলো ধাওয়া শুরু করলো,আমি আদৌ জানতাম না,তারা কারা,আর ঠিক কোন কারণে ধাওয়া করছে আমায়….
এরপর,দেখতে পাই সেই গুন্ডাদলের সাথে একজন মহিলাও আছেন।যদিও অন্ধকারে তার ফেইসটা সেইভাবে দেখতে পাই নি আমি।
গুন্ডাগুলোদের ভেতরে একজন আমায় উদ্দেশ্য করে একটা ছুড়ি ছুড়ে মারলো, যদিও একটুর জন্য তাদের লক্ষ্য ব্যর্থ হয়। সাথে সাথে ছুড়িটা কুড়িয়ে নেই আমি..
তারপর ছুটতে ছুটতে এক পর্যায়ে একটা ঢিবির পেছনে লুকোই।আমি বহুবার চেষ্টা করেছি মেলার শো এর স্টেজের জায়গায় যেতে,কিন্তু গুন্ডাগুলো কিছুতেই যেতে দেয়নি আমায়।

এক পর্যায়ে সবার পায়ের আওয়াজ থেমে গেলো,আমি ভাবলাম হয়তো সবাই সরে পড়েছে।তাই ধীরে ধীরে ঢিবির পেছন থেকে বেরিয়ে আসি…অমনি একটা মহিলার সাথে ধাক্কা লাগে আমার।ভয় আর আতংকে সেই সময় মাথা কাজ করছিলো না আমার।আর কোনোকিছু না ভেবে ছুড়িটা সোজা সেই মহিলার পেট বরাবর চালিয়ে দিলাম।মূহুর্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সে।

তারপরেই বুঝতে পারি আমি,কতো বড়ো একটা ভুল হয়ে গেছে আমার দ্বারা,ইনি আসলে সে নন যে ঐ গুন্ডাদের দলে ছিলো।সে ছিলো তোমার মা।এই ঘটনা হতবিহ্বল করে দেয় আমায়।কি করবো বুঝতে পারছিলাম আমি,কিছুতেই মানতে পারছিলাম না আমার হাতে আমার হবু স্বামীর মায়ের খুন হয়ে গেছে।

এভাবে অনেক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দে ভোগার পরে সিধান্ত নিলাম আমি পালিয়ে যাবো,কারণ সেই মুহূর্তে সত্যটার মুখোমুখি হবার মতো সাহস হচ্ছিলো না আমার।যে ভাবনা সেই কাজ।তোমার মায়ের লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে গেলাম আমি।কাউকে কিছু জানতে দেয় নি বুঝতে দেই নি।এই সত্যটা দীর্ঘ একটা বছর লুকিয়ে রেখেছি আমি।আমি জানি,সজ্ঞানে না হলেও তোমার মায়ের খুনটা আমার হাতেই হয়েছে,আমিই সেই অপরাধী।সকল শাস্তি শুধু আমার প্রাপ্য।

এতোক্ষণ অবাক হয়ে শ্রেষ্ঠার কথাগুলো শুনছিলাম,এতোক্ষনে বুঝে গেছি আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে আর কেউ নয়,শ্রেষ্ঠা নিজেই।তার মানে আমার মায়ের খুন শ্রেষ্ঠার হাতেই হয়েছিলো সেদিন।হে সৃষ্টিকর্তা এ আবার কোন কঠিন পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করালে তুমি আমায়।আমি জানি না,আর কোন কোন কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে হবে আমায়।

শ্রেষ্ঠার মুখে এতোকিছু শোনার পরেও একটা খটকা থেকেই যায়।আর সেই খটকাটা হলো,সেদিন রাতে আমিও মাকে নিয়ে বই মেলায় এসেছিলাম।হঠাৎ করেই মাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।তাই তাকে খোঁজার জন্য শোএর স্টেজ এর বাইরে বেরিয়ে গেলাম।খুঁজতে খুঁজতে যখন ব্রিজের এখানে আসি তখন দেখতে পাই কেউ আমার মাকে ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দিচ্ছে…অন্ধকারে নিজের মাকে চিনতে ভুল করিনি আমি।অমনি ছুটে যাই ব্রিজের দিকে।ততক্ষণে ওরা ওদের কাজ করে দিয়েছে।আমাকে দেখে সবাই পালিয়ে গেলেও ব্রিজের ওপরে একটা মেয়েকে ধরে ফেলি আমি।তার সাথে প্রচন্ড ধস্তাধস্তি হয় আমার।এক পর্যায়ে মেয়েটি আমায় আঘাত করে পালিয়ে যায়,কিন্তু ধস্তাধস্তির জের ধরে তার একটা কানের দুল থেকে যায় আমার কাছে।

শ্রেষ্ঠার কথা যদি সত্যি হয়,তবে সেখানে সেইরাতে কার সাথে ধস্তাধস্তি হয়েছিলো আমার,কার কানের দুল চলে এসেছিলো আমার হাতে।এদিকে শ্রেষ্ঠা নিজের মুখে স্বীকার করছে খুনটা ওই করেছে,অন্যদিকে আমি নিজের চোখে যেটা দেখেছি সেটাও বা অস্বীকার করি কিকরে!?সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে…. না শ্রেষ্ঠার কথা অবিশ্বাস করতে পারছি,না নিজের চোখকে।

—কি হলো সৌহার্দ্য,এতো কি ভাবছো,এখনো কেন দাঁড়িয়ে আছো?শেষ করে দাও আমায়।তুমি কথা দিয়েছিলে আমায় আমি সত্যটা স্বীকার করার পরে আমার দেয়া শর্ত পালন করবে তুমি…

—এতো বড়ো পরীক্ষা কেন নিচ্ছো আমার তুমি শ্রেষ্ঠা…আমি জানি তুমি আমার মাকে খুন করেছো।কিন্তু সেটা নিজের ইচ্ছেতে নয়।মানুষ নিজের অজান্তে অনেক কাজ করে,কিন্তু সেটা পাপ বা অন্যায় নয়,সেটা ভুল।তুমি কোনো অন্যায় করো নি,ভুল করেছিলে।তোমায় খুন করে আমি আমার মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে চাই না!!

—তোমার কথায় সত্যিটা পাল্টে যাবে না,এই অসহ্য যন্ত্রণার বোঝা আর বয়ে বেড়াতে পারছি না।মৃত্যুদন্ড দাও আমায়, নিস্তার দাও আমায়… প্লিজ,তোমার পায়ে পড়ি…

—না,এটা হয় না শ্রেষ্ঠা,তুমি অযথা জেদ করো না।এইভাবে শাস্তি দিও না আমায়।

—তুমি কি চাও আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে দেই,তবে তাই হবে। দাও আমাকে পিস্তলটা দাও,তোমাকে কিছু করতে হবে না।

হঠাৎ আমাদের দুজনের ভেতরে ছেদ পড়লো।একটা টর্চের আলো ফেললো কেউ আমাদের ওপরে।মূহুর্তে ঝলমল করে উঠলো চারপাশ।আমি দেখতে পাচ্ছি আমার সামনে প্রজ্ঞা এসে দাঁড়ালো।ওর অনেকটা পেছনে শ্রেষ্ঠা।প্রজ্ঞাকে এই সময়ে এখানে দেখে অবাক হলাম আমি,

—প্রজ্ঞা তুমি….!!

—হ্যাঁ,আমি।তোমাদের দুজনের সকল কথা শুনেছি আমি।

—তুমি এখানে আসলে কিকরে?

—তোমায় ফলো করতে করতে এসেছি…
আমি জানি শ্রেষ্ঠার কথাগুলো শোনার পরে ঠিক কোন কোন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তোমার মনে। সেদিন ব্রিজের ওপর তোমার সাথে যার ধস্তাধস্তি হয়,সে আর কেউ নয় আমিই ছিলাম। আমার কানের দুল ছিড়ে চলে গিয়েছিলো তোমার হাতে…

—-এটা কি বলছো তুমি, সেদিন বইমেলাতে তুমিও এসেছিলে??(বিষ্ময়ের সাথে প্রশ্ন)

—শুধু আমি নই,আমার সাথে আমার মাও এসেছিলো।সাথে একদল গুন্ডা।কিন্তু আমরা বইমেলায় আসলেও বই দেখতে বা কিনতে আসিনি সেদিন।এসেছিলাম খুন করতে…..!!

—খুন….!!!??তার মানে শ্রেষ্ঠাকে তোমরাই….

—-হ্যাঁ,আমরাই।আমি আর আমার মা চেয়েছিলাম শ্রেষ্ঠাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে।যাতে ওকে খুন ওর জায়গায় আমি বসতে পারি।ওর সকল সম্পত্তি আমরা আমাদের কুক্ষিগত করতে পারি।সেদিন মা গুন্ডা নিয়ে ধাওয়া করে শ্রেষ্ঠাকে।এরপর ওখানে দূর্ভাগ্যক্রমে তোমার মা চলে আসে,আমার মা ভেবে শ্রেষ্ঠা তোমার মাকে খুন করে ফেলে,আর সেটা মা এবং তার দলবল দেখে ফেললো।সাথে আমিও ছিলাম।

শ্রেষ্ঠা চলে যাবার পরে মা লক্ষ্য করে তার হ্যান্ডব্যাগটা খুঁজে পাচ্ছে না।হয়তো ছুটতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে।এখন পুলিশ এই জায়গায় খুন হয়েছে এটা জানতে পারলে নিশ্চয়ই তল্লাশি চালাবে,তখন মায়ের সেই জিনিসটা খুঁজে পেলে বিশাল ঝামেলা হতে পারে,এমনিতেও আমরা চাই নি শ্রেষ্ঠা জেলে যাক, কারণ ও জেলে গেলে আমাদের বিশেষ কোনো লাভ হতো না।দেখতে যেহেতু এক রকম ছিলাম আমরা দুজন তাই ওকে সরিয়ে নিজে শ্রেষ্ঠা সেজে সকল সম্পত্তি হস্তগত করতে চেয়েছিলাম,যা ও জেলে গেলে কখনোই সম্ভব হবে না।এই ভেবে আমরা সিধান্ত নেই লাশটা নদীতে ফেলে দেবো,যাতে কেউ এই খুনের ঘটনার কথা জানতে না পারে।

লাশ ফেলে দেবার সময়ে তুমিও কাকতালীয়ভাবে সেই জায়গায় এসে হাজির হলে,তারপরের ঘটনা আর কি বলবো,সবটাই জানা তোমার।।

—-এতো বড়ো একটা কথা তোমরা লোকালে কেন আমার থেকে,তখন তোমার মাও কিছু বললো না কেন আমায়,,

—ভয়ে,ভয়ে আমরা সবটা লুকিয়েছিলাম তোমার থেকে।আইনের ভয়ে আমরা লুকিয়েছিলাম,তবে এখন আর সেই ভয়টা নেই আমাদের।অন্যের ক্ষতি চাইলে যে সেটা শাস্তি হয়ে নিজের দিকেই ফিরে আসে সেই শিক্ষা তোমার বাবার থেকেই পেয়েছি আমরা।তুমি আর শ্রেষ্ঠা জীবনের মানে শিখিয়েছো আমাদের, তোমাদের ক্ষমাই আমাদের ভুলটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে।জীবনে যা পাপ করেছি তার শাস্তি পাবার সময় হয়েছে আমাদের সৌহার্দ্য।এমনিতেই সেদিনের ঘটনার পরে আমরা মা মেয়ে মিলে ঠিক করে নিয়েছিলাম তোমায় আর শ্রেষ্ঠাকে সকল ঘটনা খুলে বলবো,তারপর নিজেরাই আইনের হাতে ধরা দেবো।কিন্তু আজ এই মুহুর্তে আমি এখানে উপস্থিত না থাকলে হয়তো আরো একটা অনর্থ ঘটে যেতো।সেটা কিকরে হতে দেই আমি।

প্রজ্ঞার কথাগুলো যেন পাথর করে দিয়েছে শ্রেষ্ঠাকে।ওর মুখে কোনো কথা নেই…দীর্ঘ এক বছর ধরে মায়ের মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করে আসছি আমি,আজকে তার মৃত্যুর আসল রহস্য জানতে পারলাম।জীবনে নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরোতে পেরেতো নিজের মনটাও অজান্তে কখন যে পাথরের ন্যায় শক্ত পদার্থে রুপান্তরিত হয়েছে,বুঝতেই পারি নি।তাই হতো এতো নিষ্ঠুরতা নিজের কানে শোনার পরেও স্থির হয়ে থাকতে পারছি,প্রজ্ঞার প্রতি এখন আর কোনো রাগ বা ক্ষোভ নেই আমার।ও আর ওর মা নিজেদের ভুলটা বুঝতে পেরেছে,ওরা নিজেদের আইনের হাতে সোপর্দ করে দিয়েছে।ওদের দুজনের এই শোধরানোর পেছনে আমার আর শ্রেষ্ঠার ভূমিকা রয়েছে।এতো লোভী আর নিষ্ঠুর দুজন মানুষকে বদলে দিতে পেরেছি মন থেকে এর থেকে বড়ো প্রাপ্তি আর কি হতে পারে।




এর বেশ কয়েকমাস পরে…..

জেল গেট থেকে আমি আর শ্রেষ্ঠা বেরিয়ে এসেছি।আমাদের হাতে এক মাসের একটি বাচ্চা…কি ভাবছেন বাচ্চা নিয়ে জেল গেট থেকে কেন বের হলাম?
সমস্ত অপরাধ স্বীকার করার পরে আদালত প্রজ্ঞা আর ওর মায়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড জারি করে।এর কিছুদিন পরেই জানতে পারি প্রজ্ঞা প্রেগন্যান্ট।আমার সন্তান বড়ো হচ্ছে ওর গর্ভে।প্রজ্ঞা আমাদের অনুরোধ করে ওর বাচ্চা যেন আমরা দুজন প্রতিপালন করি,তাতে কিছুটা হলেও ওর পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে।সত্যি বলতে, বাচ্চাটা যে আমারই অংশ।ওর মা যেমনই হোক না কেন,আমি নিজের ঔরসকে অস্বীকার করতে পারি না।প্রজ্ঞার সাথে ডিভোর্সের পরে শ্রেষ্ঠাকে বিয়ে করে আমার ঘরের বৌ করে নিয়েছি অনেক আগেই।ও মন থেকেই মেনে নিয়েছে আমার সন্তানকে।আমাদের ছেলে সন্তানের নাম ‘পরিবর্তন’রেখেছি আমরা।নামটা অবশ্য আমার দেয়া নয়,ওর নতুন মায়ের দেয়া….😁

(শুভ সমাপ্তি)

অবশেষে একমাসের দীর্ঘ যাত্রার সমাপ্তি ঘটলো,🙂ভীষণ ব্যস্ততার ভেতরে গল্পটা কনটিনিউ করতে হয়েছে।তাই টাইমলি আপলোড করতে পারি নি।কেউ প্লিজ মনে কষ্ট পুষে রাখবেন না,পুরো গল্পটা কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন।আর নতুন গল্প নিয়ে ফিরে আসছি খুব শীঘ্রই।এভাবেই সাথে থাকবেন।🔥🙏
…….

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here