#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-০৮
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
—-আমি যতোদূর জানতাম তোমার ঘাড়ের নীচে একটা জন্মদাগ ছিলো,সেটা উধাও হয়ে গেলো কিকরে?(নিজের স্ত্রীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেই আমি)
—কিইইই!আপনি আমার ঘাড় দেখেছেন, আপনি কি করলেন এটা…কেন করলেন?
—এই শোনো ন্যাকামো একদম কম করো,আমি জানি তুমি সব বুঝতে পারো,সব জানো তুমি, আমার সামনে বাচ্চাদের মতো আচরণ করে কোনো লাভ নেই,
—তার আগে আপনি বলুন আমার ঘাড় দেখলেন কেন,,,??
—কেন খুব সমস্যা হয়ে গেলো নাকি,ধরা পড়ার ভয়ে!!
—ধরা পড়া,কি বলছেন আপনি এসব,,কি করেছি আমি।
—আমার সাথে নাটক করো না, বলো তোমার দাগটা কোথায় গেলো,?
—আমি জানি না,
—জানো না,,,!এটা কোনো প্রশ্নের উত্তর হলো না।
—আমি সত্যি জানি না বললাম তো,আগে তো ছিলো,,
আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি শ্রেষ্ঠা আবারো মিথ্যা বলছে আমায়,এভাবে কারোর শরীর থেকে জন্মদাগ উধাও হয়ে যেতে পারে না।তাছাড়া এখন ওকে আর প্রশ্ন করে বিশেষ কোনো লাভ হবে না।এভাবে নাটক করে সবটা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবে।যা প্রমাণ জোগাড় করার নিজেকেই করতে হবে আমায়।এই মূহুর্তে আমার সবথেকে বেশী যেটা দরকার সেটা হলো ঐ মেয়েটার পর্যন্ত পৌঁছনো,কিন্তু কোথায় পাবো ওকে আমি?
এর আগে ওর সাথে কয়েকবার দেখা হয়েছে আমার,কিন্তু সেটা আমার ইচ্ছায় নয়,ওর ইচ্ছায়।এখন আমার নিজের প্রয়োজনে ওকে দরকার আমার।
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একটা বুদ্ধি আসলো আমার মাথায়,সেদিন বাবার ফোনে মেয়েটার ছবি দেখেছি আমি।আর আমি এটাও নিশ্চিত বাবার সাথে ওর কোনো যোগাযোগ আছে।
তার মানে বাবার ফোনে নিশ্চয়ই ওর contact নম্বর থাকবে।আবারো বাবার ফোনের প্রয়োজন আমার।নেহাত সেদিন সময় পাইনি,নয়তো সেদিন নম্বরটা ফোন থেকেই জোগাড় করে ফেলতাম।
আজ যেকরেই হোক ফোনটা আবারো আমার হাতে আসা চাই,কিন্তু সেটা কিকরে?বাবার কাছে গিয়ে কিছুতেই সরাসরি ফোনটা চাইতে পারি না আমি।এই সময়ে মিছিলটাও নেই বাড়িতে।ও থাকলে আগেরবারের প্লানটা অ্যাপ্লাই করা যেতো।এখন তার আর সুযোগ নেই।
বাবার রুমে গিয়ে দেখি সে শুয়ে শুয়ে একটা পত্রিকা পড়ছে,ফোনটা পাশেই রাখা।এখন তাকে যদি বুদ্ধি করে বিছানা থেকে তুলতে পারি তবে আমার কাজ অনেকটাই সম্পূর্ণ হয়ে যায়।কিন্তু কিভাবে করবো এই কাজ,ভাবতে ভাবতে আরো একটা নতুন প্লান ঠিক করে ফেলি।যথেষ্ঠ তাড়াহুড়োর ভান করে রুমের ভেতরে ঢুকলাম আমি।
—বাবা কি করছো,,??
—এইতো,তেমন কিছু না।কেন কি হয়েছে?
—আমার সাথে একটু বাইরে বেরোতে পারবে।
—এই দুপুরবেলা কোথায় যাবি?
—একটু বের হবো কাজ আছে,তুমি রেডি হও।
—কিন্তু কি কাজ?
—যেতে যেতে বলছি তোমায়,এখন এতো কথা বলার সময় নেই।
—আচ্ছা ঠিক আছে, তুই গিয়ে রেডি হ।
—হুম, আর একটা কথা আমাদের ফিরতে লেট হতে পারে। তুমি তো মনে হয় এখনো গোসল করো নি।গোসলটা সেরেই বের হই দুজন।
—সেকি,কেন দেরি হবে কেন?
—আমি সিওর না, হতেও পারে।
—কি যে বলছিস বুঝতে পারছি না আমি কিছুই, আচ্ছা যাই তবে গোসলটা করেই আসি।তাছাড়া এমনিতেও গোসল করতে হতো একটু পরে।
আমার কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেলো,বাবা গোসল করার জন্য বাথরুমে ঢুকে পড়লেন।আমি সুযোগ বুঝেই আবারো রুমে ঢুকে পড়ি তার।ফোনটা বিছানার ওপরেই রাখা আছে।হামলে পড়ি সেটার ওপর।ভাগ্যিস মিছিলের কল্যানে পাসওয়ার্ড জানা ছিলো আমার,প্রথমেই contact লিস্টে ঢুকে চিরুনি তল্লাশি চালাই।সকল নম্বর একে একে চেক করতে থাকি।হঠাৎ একটা অদ্ভুত ব্যপার চোখে পড়লো আমার,আমার নামে একটা নম্বর সেইভ করে রাখা।কিন্তু ঐ নম্বরটা আমার নয়।কিছু তো একটা গন্ডগোল আছে এই নম্বরে।তা নাহলে নামের সাথে নম্বরের মিল থাকবে না কেন?নম্বরটা চট করে নিজের ফোনে টুকে নিলাম।সন্দেহর লিস্টে আর যতোগুলো নম্বর ছিলো সবগুলো টুকে নিলাম।তারপর তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে পড়ি।
বাবা এমনিতেই ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ,তাই তাকে আমায় সন্দেহ করার সুযোগ দিলাম না।দুপুরের পরে কাজের বাহানায় বাইরে বেরিয়ে পড়লাম দুজনে।আবার সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসি।এতোক্ষণ বাবা সাথে থাকাতে নিজের প্লানের কোনো কাজ করা হয়নি,কিন্তু এইবার আর সময় নষ্ট করা চলবে না।নতুন একটা সিমকার্ড দিয়ে একে একে সমস্ত নম্বর ডায়াল করতে থাকি।যদিও আমি নিজের কন্ঠস্বর শুনতে দেই নি কাউকে।শুধুমাত্র ওপাশের কন্ঠস্বর শুনে আইডিনিটিফাই করতে থাকি।এর ভেতরে নারী কন্ঠস্বর কারোরই ছিলো না।এরপর কিছুক্ষণ পরে একটা নম্বর কানেক্ট হতেই ওপাশ থেকেই নারী কন্ঠ ভেসে আসে।হুবহু সেই মেয়েটার কন্ঠ।ওর গলার আওয়াজের সাথে কিছুটা হলেও আমি পরিচিত,তাই চিনতে দেরি হলো না।আমি এখন কথা বললেই চিনে ফেলবে ও আমায়,তাই কলটা দ্রুত কেটে দিলাম।তারপর একটা মেসেজ করি।
“আমি সৌহার্দ্যের বাবা,আজ রাত দশটায় দেখা করতে চাই তোমার সাথে।জরুরী কথা আছে।লোকেশন(……..)।আমার ফোনটা সৌহার্দ্যের কাছে,তাই বাধ্য হয়ে এই নম্বর দিয়ে মেসেজ দিলাম।এখন কথা বলার সুযোগ নেই,আর হ্যাঁ ভুলেও কিন্তু আমার নম্বরে কল দিতে যেও না না।তবে দুজনেই ধরা পড়ে যাবো,ঠিক আছে! ”
মেসেজটা সেন্ড করে দিলাম,এবার শুধু রাত দশটার অপেক্ষা।সন্ধ্যার পরে বাবাকে নজরে নজরে রেখেছি,যাতে সে মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ না পায়।কারন আজকে ওর সাথে বাবার একবার কথা হলে আমার সব খেলা শেষ।
রাত দশটার আগে নির্দিষ্ট গন্তব্যে গিয়ে উপস্থিত হলাম,একটু পরে মেয়েটাও এলো।যথারীতি মুখ ওড়না দিয়ে ঢেকে রেখেছে।এমনিতে চেনার উপায় নেই।
আমি ওকে একটা রুমের ভেতরে ডাকি, সেখানেই দেখা করার কথা ছিলো।সে এসে রুমে ঢুকতেই দরজা বন্ধ করে দেই আমি।আমাকে দেখে বেশ ঘাবড়ে গেলো সে।সবাইকে যে ধোঁকা দিয়ে বেড়ায়,আজকে তার সাথেই এতো বড়ো একটা গেম খেলবে কেউ নিজেও বুঝে উঠতে পারে নি।আমি মাস্ক,কালো চশমা আর কোর্ট পরিহিত এক প্রকার ছদ্মবেশ নিয়ে আসাতে চিনতে পারছে না আমায় তবে আমি যে সৌহার্দ্যের বাবা নই এইটুকু বুঝতে পেরেছে।
—একি,কে আপনি?আপনি আমায় এখানে ডেকেছেন কেন…. ?আপনি তো সৌহার্দ্যের বাবা নন।
আমি আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওর পেছন থেকে মুখটা চেপে ধরি,
একটা মেয়ের সাথে যার সাথে এমন আপত্তিকর আচরণ করতে হচ্ছে,আসলে আমার জন্য বিষয়টা আরো বেশি দুঃখজনক।কিন্তু এই মুহুর্তে এ ছাড়া কোনো অপশন নেই আমার কাছে।একবার এই মেয়েটার শরীরে যদি দাগটা আইডিনিটিফাই করতে পারি,আমার ধারণা ভুল প্রমাণ হলে ক্ষমা চেয়ে নেবো তার কাছে।তাতে সে যতোবড়ো অন্যায় করুক না কেন আমার সাথে।
মেয়েটার ঘাড় থেকে কাপড়টা নামাতেই মুহুর্তেই চমকে উঠি আমি….!!কারণ আমার চোখের সামনে সেই জন্মদাগটা জ্বলজ্বল করছে,যা শ্রেষ্ঠার শরীরের ওপর দেখেছিলাম আমি!হুবহু সেই একই জায়গা,সেই একই দাগ।তার মানে এই আসল শ্রেষ্ঠা!!
তাহলে আমার বাড়িতে যে আছে সে কে,তার শ্রেষ্ঠা সেজে থাকার উদ্দেশ্য কি……????আর বাচ্চাসুলভ সেই সহজ সরল শ্রেষ্ঠারই বা হঠাৎ করে এমন পরিবর্তন হলো কিকরে….??
চলবে,,,,