“কলেজের বড় আপু ১৪ তম পর্ব

0
1166

কলেজের বড় আপু

Sumon Al-Farabi

১৪ তম পর্ব
⬇⬇

আমি আর দরজার দিকে না তাকিয়ে আবার অধরার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম । । এমন সময় মনে হলো বাবা কে তো ফোন করা হয় নি আজ। তাই তাড়াতাড়ি ফোন করলাম ।

– কি খবর

– এই তো ভালো। তোমার ?

– ভালোই ।

– কি করছিস?

– অধরার সাথে গল্প করছি

– ওহহ। দে কথা বলি

– আচ্ছা । আম্মু তোমার ঐ দাদু কথা বলো

– হ্যালো দাদু কেমন আছো

– ভালো তুমি

– আমিও ভালো আছি । কি করো

– বাপির সাথে খেলি

– ওহহ। তুমি আমার কাছে চলে আসো

– কেন

– আমরা একসাথে খেলবো

– তাই

– হুম ।

– তোমাল ওখানে খেলনা আছে

– হুম অনেক । তুমি আসলে আরো কিনবো

– সত্যি

– হুম । কবে আসবে

– আমি তো একা যেতে পালবো না

– তাই তো

– তুমি এসে নিয়ে যাও

– তোমার বাপির সাথে আসিও। কেমন?

– আচ্ছা ।

– তোমার বাপিকে দাও

– বাপি নাও

– হ্যালো

– তাড়াতাড়ি আয়

– কেন?

– একটা প্রোজেক্টের অফার আছে । ওটা আমাদের নিতে হবে

– আচ্ছা । বাই

– আর শোন

– হুম

– বাসার সবাই কে নিয়ে আসবি

– সবাই বলতে ?

– তোর আব্বু আম্মু বউ

– কেন?

– কেন মানে কী ? ওরা আসবে না ?

– এখন না। পরে ।

– পরে কবে

– সময় হলে

– আচ্ছা বাই।

ফোন কেটে বাইরে গেলাম । অনেক দিন হলো আম্মু আব্বুর সাথে আড্ডা দেওয়া হয় না ।

বাইরে এসে দেখি আব্বু আম্মু নীলাদ্রি সবাই বসে আছে । আমিও গেলাম তাদের কাছে । আমায় দেখে নীলাদ্রি উঠে চলে যেতে লাগলো

– নীলাদ্রি কই যাস

– রান্না ঘরে আম্মু

– কেন? তুই কি এই বারির চাকর?

– না মানে

– চুপচাপ বসে থাক। তুই এই বাড়ির বউ। এই বাড়ির মেয়ে । এমন চুপচাপ থাকিস কেন সবসময় ।

– আসলে

– আসলে কি ? আগের মতো হাসি মুখে থাকবি। এখন তো তোর স্বামী ও আসছে ।

– আচ্ছা ঠিক আছে আমি সবার জন্য চা করে নিয়ে আসছি ।

– তাড়াতাড়ি আয় ।

– হুম ।

– কি রে সুমন তুই চুপ করে আছিস কেন?

– না এমনি । তোমরা তো কথা বলছো তাই কিছু বললাম না ।

– বস। দারিয়ে আছিস কেন

– বসছি ।

– তো এতদিন কি করলি?

– কিছু না ।

– কিছু না মানে ? এতো দিন কিছু কাজ করিস নি?

– ওহ হ্যা। করছি তো

– কি কাজ করছিস

কি বলবো ? যেটা করি সেটা বলা যাবে না । অন্য কিছু বলতে হবে ।

– আমি একটা রেস্টুরেন্টের ওয়েটার এর কাজ করতাম

– ওহহ। কাজ করতি?

– না মানে এখনো করি। ছুটি নিয়ে আসছি। আবার যাবো ।

– কোথায় সেটা ?

– ঢাকায়।

– আম্মু তোমাদের চা।

– সবাইকে দে

– তোমার চা

সবাইকে চা দিয়ে আমার কাছে এসে

– আমি খাবো না

– নীলাদ্রি অনেক ভালো চা করে খেয়ে দেখ

– দরকার নেই আমার । তোমরা দেখো।

– এমন হয়ে গেলি কেন তুই

– কেমন হলাম আমি আবার

– আগে যখন নীলাদ্রি কোনো ভুল করতো আমি যদি বকতে যেতাম তাহলে তুই বলতি আম্মু কিছু বুঝে না একটু ভুল করতেই পারে তার জন্য কি বকতে হবে

আমি কিছু বলছি না । মাথা নিচু করে শুধু শুনছি । কারণ এখানে বলার মতো কোনো ভাষা আমার নেই । অনেক ভালোবাসতাম তো। বাসতাম না এখনো বাসি।

– যখন ও তোকে অপমান করতো তখন তুই আমাদের সামনে এসে বলতি। আমি যদি কিছু বলতে চাইতাম তাহলে বলতি ছাড়ো না আম্মু ভালোবাসার মানুষ এমন করবে না তো কি বাইরের কেউ এসে অপমান করবে ? ভালেবাসার মানুষের অপমানেও ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে । আর যখন ও তোকে ছোটলোক বলে গালি দিতো তখন তুই কি বলতি?

– অনেক ভালোবাসি আমি নীলাদ্রি কে আম্মু । এটাই তো তাই নয় কি?

– হুম ।

– হ্যা। আমি ভালোবাসতাম আর এখনো ভালোবাসি। ওকে মনের যে জায়গা টাতে রেখেছি সেখানে আর কাউকে রাখতে পারবো না। জীবনে কখনো কেউ সেই জায়গা টা ওর কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। আগে যেমন ভালোবাসতাম এখনো তেমনি বাসি আর ভবিষ্যৎ এ ও বাসবো।

নীলাদ্রি মাথা নিচু করে কথা গুলো শুনছে আর কাঁদছে । ওর কান্নার শব্দ স্পষ্ট আমার কানে আসছে ।

– তাহলে ওর সাথে এমন ব্যবহার করছিস কেন?

– পারি না যে আমি । আমি সত্যি পারি না আম্মু । জানো আমি যখন বাসায় ফিরলাম তখন রাস্তায় ভেবে রেখেছি গিয়ে আম্মু আব্বুর সাথে অনেক মজা করবো অনেক দিন পর দেখা হবে সময় টা কেমন হবে। আমি একটি বারের জন্য ভাবিনি যে নীলাদ্রি কে দেখবো ।কিন্তু এসে নীলাদ্রি কে দেখে আমি অনেক অবাক হয়ে গেলাম । এরপর যখন জানতে পারলাম এই পরীর মতো মিষ্টি মেয়েটা আমার তখন আমি আরো অবাক হয়ে যাই । যানো আম্মু আম্মু আমার তখন অনেক ইচ্ছে করছিল নীলাদ্রি কে বুকে জরিয়ে নিতে । কিন্তু যখনি জড়িয়ে নিতে যাবো ঠিক তখনি মনে পড়ে ওর কথা গুলো । যেগুলো আমি আজও ভুলতে পারি নি । মনে পড়ে ওর অহংকার করার কথা । শুধু ওর বাবার অনেক টাকা আছে বলে ও কতো কিছু আমায় বলছে ।

– এখন তো ও এমন নয়। অনেক বদলে গেছে ও। তাহলে এখন কেনো দূরে ঠেলে দিচ্ছিস।

– আমি কাউকে দূরে ঠেলে দেই নি ।

– তাহলে এসব কি?

– ও নিজেই নিজের দূরত্ব তৈরি করছে

– কিন্তু তুই তো পারতি দূরত্ব টা কমিয়ে নেওয়ার জন্য

– আমি কেন? দোষ তো আমি করি নি। আর হ্যা তোমার আমায় যে কারণ টার জন্য বাসা থেকে তাড়িয়ে দিছলে

– থাক বলতে হবে না। আমরা সব জানি

– কি জানো তোমরা? কিছু জানো না । যদি জেনে খাকো তাহলে বলোতো আমার মনের ভিতর দিয়ে কি ঝড় বয়ে গেছে সেই সময় ?

সবাই চুপচাপ। কেউ কোনো কথা বলছে না ।

– চুপ হয়ে গেলে কেন? বলো। জানি বলতে পারবে না । জানো তখন এতোটা কষ্ট পাই নি যখন ও আমায় কারণ টা বললো। কিন্তু তখন কষ্ট পাইছি যখন আমার বিশ্বাস টা শুধুমাত্র একটা ছলনার কাছে একটা মিথ্যের কাছে হেরে গেল ।

আম্মু কাঁদছে । আব্বু ও কোনো কথা বলছে না ।

– আমি ভাবতাম সারা পৃথিবী তে যদি সব চেয়ে বড় ঝড় হয় তবুও আমার মাথার উপর বাবা ছাদ হয়ে থাকবে । কিন্তু না আমি কি পেলাম ? বড় ঝড় তো দূরের কথা সামান্য একটা মিথ্যে ঝড়ে আমার সেই ছাদ ভেঙে তছনছ হয়ে গেল । জানো আব্বু আমি আমার বন্ধু দের বলতাম। আমি যদি কোনো খারাপ কাজ করিও তবুও আব্বু আমার মুখ থেকে না শুনে কোনো কথা বলবে না আর বিশ্বাস ও করবে না। আমার সব বিপদে আমার পরিবার আমার পাশে থাকবে । কিন্তু দেখো আব্বু আমার বিশ্বাস আত্নবিশ্বাস সব কেমন বালুচর করে দিলো এই মেয়েটা। তাকে বুকে কিভাবে জড়িয়ে নিবো বলো। যার একটা মিথ্যে কথায় তুমি আমায় যাকে তুমি বলতে জীবনের থেকে বেশি ভালবাসো সেই তাকেই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে।

কথা গুলো বলতে বলতে আমার প চোখে পানি চলে আসলো। হয়তো আরো কিছু বলতাম কিন্তু বললাম না । যখন দেখলাম আব্বুর চোখও ভিজে গেছে তখন থেমে গেলাম ।

– যাই হোক । তোমার হয়তো তোমাদের ছেলের থেকে বেশি বিশ্বাসী সন্তান পাইছো তাই আমায় বিশ্বাস করতে পারো নি। আর বিশ্বাস করতেও হবে না। থাকবো না আমি । আমি চলে যাবো । কিন্তু গতবার খালি হাতে চলে গেছিলাম এবার সাথে একটা পরীকে নিয়ে যাবো যাকে দেখে আমি আমার সব কষ্ট ভুলে থাকতে পারবো ।

কথাগুলো বলে আমি অধরা কে নিয়ে রুমে চলে আসলাম । একটু পরে নীলাদ্রি ও রুমে আসলো । কান্না করছে এখনো।

– মামনি তুমি তোমার দাদুর কাছে যাও তো।

– কেন আম্মু

– যাও। আম্মু বাপির সাথে কথা বলবে

– ওহহ বাপি লাগ করছে তাই ভাব কলবে

– হ্যা মা।

– আচ্ছা আম্মু । বাপি তুমি আম্মুল সাথে লাগ কলো না। তালাতালি ভাব কলবে কিন্তু ।

– আচ্ছা আম্মু ।

– তুমি যাও এখন মামনি।

অধরা চলে গেল । আমিও ঘুরে দারালাম ।

– ওকে পাঠিয়ে দিলে কেন?

কোনো কথা না বলে সোজা এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো।

– এই ছাড়ো বলছি

– না।

– তোকে ছাড়তে বলছি

– প্লিজ এমন করো না ।

– ছাড়বি নাকি ধাক্কা দিবো

– দাও তবুও ছাড়বো না

– মারবো কিন্তু

– মারো। তবুও একটু আমায় জড়িয়ে ধরো প্লিজ

কি করবো কিছু ভেবে পচ্ছি না। পারছি না সরাতে পারছি না শক্ত করে জড়িয়ে নিতে .. ভালোবাসা বলছে টেনে নিতে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু রাগ বলছে তাকে আরো দূরে ঠেলে দিতে । এ কোন দোটানায় পড়লাম আমি । এখন রাগ কে জিতিয়ে দূরে সরিয়ে দিবো নাকি ভালোবাসাকে জিতিয়ে শক্ত করে বাহুডোরে জড়িয়ে নিবো……….
…………..
………….
…………
………..
……….
………
……..
…….
……
…..
….

..
.
To be continue

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here