#কাঞ্জি
#পর্ব-২২
” সেটা সময় বলবে মামা।এখন আমরা যে অনুষ্ঠানের জন্য এসেছি সেটা করা যাক।”
“এক কাজেই দুই কাজ হওয়া অসম্ভব নয় কিন্তু।”
” সময় সাপেক্ষ ব্যাপার মামা।হতে পারে আগামীকাল সকালেই আপনাদের মতামত বদলে ফেলতে বাধ্য হবেন।কারোর অনুমতি না নিয়ে বিয়ে নামক একটা সারা জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ নয়।”
“ওয়াজিফার মতামত রয়েছে।”
“একা ওয়াজিফার মতামতে কি চলবে?”
“তুমি কি বলতে চাইছো?তোমার এই বিয়েতে অমত ছিল?”
“মতামত জানতে চেয়েছিলেন কেউ?”
কথাটা এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেল।শাহানারা স্টেজ থেকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।বর পক্ষের লোকজন এলো বলে।আবৃতির মাথাটা তখনো ঝিম ঝিম করছে। বলটা প্রথমে কপালে লেগে তারপর নাকে এসে লেগেছে। তবুও সে উঠে দাঁড়ালো।হাত বাড়িয়ে শাহরিয়ারের পাঞ্জাবীর হাতা শক্ত করে ধরে বলল,
“ও বাড়ির লোকজন আসতেছে মামা।আপনারা দুজন পরে কথা বলবেন না হয়।”
কথাটা ওয়াজিফার মামার উদ্দেশ্যে বললেও যেন স্পষ্ট নিষেধ ছিল শাহরিয়ারের প্রতি।বাধ্য প্রেমিকের মতো কথা মেনে নিলো শাহরিয়ার।তাদের দুজনকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চিন্তায় মুষড়ে গেল শাহরিয়ারের মা। আবৃতির চোখে মুখে একটা অধিকার বোধ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে, তার ছেলেটাও আশ্রয় দিচ্ছে সেই অধিকারকে।কিন্তু মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান নষ্ট করতে চাইলেন না ভদ্রমহিলা। তাই দাঁতে দাঁত চেপে সবটা সয়ে যাচ্ছেন।অপর দিকে শাহরিয়ার শক্ত হাতে আবৃতির হাত জড়িয়ে ধরে মায়ের দিকে চাইলো।এ যেন ছিল স্পষ্ট হুশিয়ারি। দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে দুজন মানুষ আজ চুপ করে থেকেও এক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলো কেবল শাহানারার বিয়েতে কোনো ঝামেলা করতে চায় না বলে।
একের পর এক গান এবং নাচে যখন পরিবেশ মুখরিত তখন শাহরিয়ার আবৃতির পাশের চেয়ারে বসে বলল,
“আমাদের মেয়ের বিয়ে এর থেকেও ধুমধামে দিব।তখনো কি আফসোস করবে এমন একটা হলুদ সন্ধ্যার জন্য?”
“আমাদের মেয়ে?”
“হুম।শুনো আমার পুরো এক হালি বাচ্চা চাই।পুরো এক হালি তবে ডিমের নয়। আমের। ”
“মানে?”
“মানে আমাদের পাঁচটা বাচ্চা হবে।”
“কেন?এরপর আমি মরে যাই আর আপনি আমার শোকে তাজমহল বানাবেন?”
“তাজমহল নয়, তোমার জন্য শাহ্ মহল বানাবো।আর কই জানো? এই যে আমার হৃদয়ে।”
আবৃতি কিছু না বলে চুপচাপ স্টেজের দিকে তাকিয়ে রইল।তারা সব কাজিন একত্রে বসেছে।আবৃতি বসেছে কোণার দিকের শেষ চেয়ারে।সেখানে মাঝে মধ্যে এসে বসছে শাহরিয়ার আবার উঠে দায়িত্ব পালন করছে।ছবি তোলার সময় হলে সবাই একত্রে দাঁড়ালো। ঠিক সেই সময় শাহরিয়ারের মা একটা কাজে ডাক দিলো আবৃতিকে।বাধ্য মেয়ের মতো নেমে যেতেই শুরু হলো ক্যামেরা ম্যানের একের পর এক ক্লিক। আলোর ঝলকানিতে যেন চারপাশে বন্যা বইছে। গোটা কয়েক ছবি তোলার পর বিষয়টা বুঝতে পারে শাহরিয়ার।কিছুটা রাগ নিয়েই সে নেমে যায় স্টেজ থেকে।
সবার খাওয়া দাওয়ার তদারকি ছেলেদের থাকলেও ও বাড়ি থেকে কিছু মেয়ে এসেছে যাদের খাওয়ার দায়িত্ব পড়েছে আবৃতির উপর।তাদের খাবার বেড়ে দেওয়ার সময় একজন বয়স্ক মহিলা খুটিয়ে নাটিয়ে সব জিজ্ঞেস করলো তাকে। বাবা নেই জেনে ভীষণ আফসোস ও করলেন।খাবার শেষে ভদ্র মহিলাকে দেখা গেল শাহানারার মা এবং রত্না বেগমের সাথে।তিনি ভণিতা না করেই নিজের ছোটো নাতীর জন্য চাইলেন আবৃতিকে।আপত্তি না থাকলে আগামীকালই উঠিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন।তার ছোটো নাতী এসব আয়োজন করে বিয়ে পছন্দ করে না, তাছাড়া যেহেতু বাবা নেই তাই তারাও আর কোনো চাহিদা রাখবে না।শাহরিয়ারের মা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।এই বিয়েতে সবচেয়ে আগ্রহ দেখালেন তিনি।যেন এই মুহুর্তেই বিয়ে দিয়ে দিবেন। রত্না বেগম এমন গদগদ ব্যবহারের কারণ বেশ বুঝতে পেরেছেন।ছেলের এমনিতে কোনো সমস্যা নেই কেবল ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিয়েছিল।আপাতত সে সম্পূর্ণ সুস্থ।এই কথাও লুকালেন না ভদ্রমহিলা। কিন্তু এটা জানার পর রত্না বেগম না করলেন। তিনি বললেন,
“আমি আমার মেয়েকে সারা জীবন কাটার উপর হাটিয়েছি।আগামীকালও হাঁটাবো কিন্তু জনম ভরের দুঃখ দিবো না। ওর বাবা নেই বলে আমি ওকে পানিতে ভাসাবো না।”
“পানিতে কই ভাসাবেন? স্ত্রীর দোয়ায় অনেক রহমত।স্বামীকে সুস্থ করে তুলতে পারবে।”
“আর যদি আপনাদের ছেলে মরে যায়?তখনো দোষ পড়বে আমার মেয়ের।তখন বলবেন এই মেয়ে অলক্ষী৷ নিজের বাপ কে খেয়েছে এরপর স্বামীকে খেল।তাছাড়া আমি এতো কথা বলছিই বা কেন?আমি বিয়েতে রাজী নই।”
“কোটি টাকার সম্পত্তি আমার নাতীর।”
“স্বামীর সোহাগ তার চেয়েও দামী।”
শাহানা বেগম বুঝানোর চেষ্টা করেও কিছু করতে পারলেন না। রত্না বেগম চলে গেছেন অনুষ্ঠান ছেড়েই।অপর দিকে আবৃতি শাহানারার হাতে মেহেদী লাগাতে বসবে কিন্তু মায়ের ডাকে চলে গেল। দাদা সাহেব ফিরেছেন৷ সবটা জেনে সে শাহরিয়ারকে নিজ রুমে ডাকলেন।হলুদের অনুষ্ঠান ততক্ষণে শেষ হয়েছে।
“তুমি আবৃতিকে আমার কাছে দান হিসেবে চেয়েছো আমি কিন্তু দিয়েছি।তুমি কি ওকে দেখে রাখতে পেরেছো?ওর বিয়ের কথা চলছে আর কে বলছে জানো? তোমার মা বলছে।তুমি কি এখনো অপেক্ষা করবে? অপর দিকে তোমার মা চাইছে তোমার সাথে ওয়াজিফার বিয়ে।এই ত্রিকোণমিতি কথায় গিয়ে দাঁড়াবে একবার ভেবেছো?”
“আগামীকালটা কেটে গেলেই সব বলবো আমি।”
“তার আগেই তোমার সচেতন হওয়া প্রয়োজন শাহ্।তুমি এই মুহুর্তে এর একটা সমাধান করবে।কি করবে সেটা তুমিই ভালো জানো।”
দাদার রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে থাকা তার বাবার উদ্দেশ্যে শাহরিয়ার বলল,
“বাবা আজ আপনাকে একজন কে বেছে নিতে হবে।আবৃতি না কি ওয়াজিফা।একটা কথা মাথায় রাখবেন,একজন কে বেছে নিলে আপনি আপনার ছেলেকে সব সময় পাবেন কিন্তু অপর জনকে বেছে নিলে পুরো জীবনের জন্য আপনার ছেলেকে হারাবেন।সিদ্ধান্ত আপনার এবং আমি এই মুহুর্তে আপনার সিদ্ধান্ত জানতে চাই।”
চলবে(এডিট ছাড়া।যারা পড়েন রেসপন্স করবেন।)
#ছবিয়াল:thhridoygraphy