কাঞ্জি পর্ব -২৩

#কাঞ্জি
#পর্ব-২৩
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

আবৃতির হাত থেকে কোকের গ্লাসটা কেড়ে নিয়ে শাহরিয়ার এক চুমুকে শেষ করে ফেলল।অদ্ভুত এই মেয়েটা। কারোর কার্বন বেভারেজও এলার্জি হতে পারে এটা আবৃতি কে না দেখলে কেউ জানবেও না।ইতিমধ্যে মেয়েটার কান চুলকানো শুরু করেছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শাহরিয়ার বলল,

“তবে তুমি এটা কেন খাচ্ছিলে?”

” যে গরম পড়েছে। না খেয়ে উপায় আছে?”

“দেখো পাখি তুমি যা ইচ্ছা করবে আমি মানবো কিন্তু শরীরের সাথে কোনো আপোষ নয়। তাছাড়া তোমাকে কোলে তুলে নিয়ে যাওয়াটা একটু কষ্টের।”

শেষের কথাগুলো অনেকটা ধীরে বলল শাহরিয়ার।আবৃতির সেই কথা শুনে চোখ ছানাবড়া। অনেক কষ্টে ঢোক গিলে নিয়ে সে প্রশ্ন করলো,

“আমি মোটা?”

“না এই তো ছোটো খাটো একটা বাচ্চা হাতি আরকি।”

“আমি হাতি?”

আবৃতির গলা ধরে এসেছে। তাকে কেউ কোনো দিন মোটা বলে নি। সে তো মোটার গোছেও যায় না তবে কেন?নাক চুলকাচ্ছে তার। চোখ দিয়ে প্রায় পানি চলেই এসেছে। এই পরিস্থিতিতে হো হো করে হেসে ফেলল শাহরিয়ার। আজ সকালে মায়ের সাথে এক দফা তর্ক হয়েছিল তার। তাই আবৃতিকে নিয়ে বেরিয়েছে ফ্ল্যাট দেখবে বলে। শাহরিয়ারের তো দেখাই আছে এখন কেবল আবৃতি নিজ হাতে গুছিয়ে নিবে। বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়িটা থামিয়ে আগে এক চামচ সিরাপ খাইয়ে দিলো আবৃতিকে। এলোপ্যাথিতে কাজ হচ্ছে না বলেই এই এলার্জির জন্য তাকে হোমিওপ্যাথি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল শাহরিয়ারের বন্ধু।কিন্তু ঔষধটা মারাত্মক তেঁতো।মুখে দিয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে রইল আবৃতি। উপরন্ত এটা খাওয়ার পর আবার পানি খাওয়া যাবে৷ মেয়েটাকে এই অবস্থায় দেখে ভীষণ মায়া হয় তার । একটা চকলেট ছিড়ে ওর মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,

“চকলেটে বাদাম আছে। তোমার ভালো লাগবে।”

আবৃতি কিছু বলল না কারণ ইতিমধ্যে তার পিঠ, গ্রীবা চুলকানো শুরু করেছে।যত দ্রুত সম্ভব ভিতরে যেতে হবে। ধারালো কিছু একটা লাগবে। লিফটে উঠার পর অস্থিরতা আরো বাড়লো তার। ফ্ল্যাটের ভিতরে প্রবেশ করে সে জিজ্ঞেস করলো,

“ওয়াশরুম?”

“ওদিকে।কিন্তু আবৃতি তুমি শরীরে পানি লাগিও না।এতে র‍্যাশ বাড়বে।”

“অসহ্য লাগছে।”

“বেডরুমে গিয়ে বিশ্রাম করো।আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।”

বেডরুমটা ঠিক যেন মনের মতো সাজানো হয়েছে। পুরো ঘরটায় একটা আদুরে আদুরে ভাব।তেমন আসবাব নেই।একটা পাশে ক্লোজেট যেটার পুরোটাই আয়না।অপর পাশে বিছানা। এখান থেকে বাইরের বারান্দা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।বারান্দায় কি ফুটেছে?ব্লু ডেইজি?কিন্তু বাইরে যাওয়া হলো না। এসি অন করে গায়ের ওড়না ফেলে টান টান হয়ে শুয়ে পড়লো সে। ঔষধ কাজ করা শুরু করেছে তবে।কিন্তু কখন ঘুমিয়েছে সেটা খেয়াল হলো না।ঘুম ভাংলো কিছু একটার খোঁচায়। ছোটো বাচ্চাদের নাড়ু করে দেওয়ার পর সদ্য গোজানো চুল।হাত দিয়ে সেসব সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আবৃতি কিন্তু ঘুম হালকা হতেই বুঝতে পারে এটা আর কেউ নয় শাহরিয়ারের মুখ। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে নিজেকে প্রেমিক পুরুষের বাহুতে দেখে।প্রেমিক পুরুষ? না তো।এযে তার বৈধ মানুষ। তার গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কখন এলেন?”

“তুমি যখন ঝুলে ঝুলে ঘুমাচ্ছিলে।”

“আমি মোটেও ঝুলে ঘুমাইনি।”

“তোমাকে দেখে বোঝা যায় না তুমি এতো কথা বলতে পারো।”

“আপনাকে দেখেও বুঝা যায় না আপনি দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতে পারেন।”

“চার নৌকা অবধি অনুমতি আছে।”

আবৃতি কিছু না বলে চুপ রইল।শাহরিয়ারের হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে বসতে চাইলো এতে বন্ধন আরো দৃঢ় হলো।সে কিছুটা ধীর গলায় বলল,
“আমি যাকে চাইবো কেন কেউ তাকে চাইবে তার দোয়াতে?
আপনি আমার স্বপ্ন মানব কেন অন্য কেউ দেখবে আপনাকে তার স্বপ্নে?
আমি আপনার দায়িত্ব তবে অন্য কারোর দায়িত্ব কেন আপনার হবে?
আপনি আমার কেবল মাত্র আমার এজন্য যদি আমাকে হতে হয় পুরো পৃথিবীর সামনে বেহায়া, আমি হবো। এতে লজ্জা কীসের?”

আবৃতির গলায় কিছু একটা ছিল সেটা শাহরিয়ারের কেবল মন নয় স্পর্শ করলো মস্তিষ্ক। স্ত্রীর হাতে হাত রেখে অনুমতি বা অনুনয়ের সুরে জিজ্ঞেস করলো,

“মে আই?”

আবৃতির তিরতির করে কাঁপতে থাকা আঁখি পল্লব এবং অধরের কোণে লেপ্টে থাকা অল্প হাসির অনুমতি নিয়ে শুরু হলো নতুন এক ভালোবাসা পথচলা।যে পথ চলায় একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যাবে এক প্রেমিক যুগল সহস্রাধিক মাইল।

বিকেল বেলা শাহানারার বিয়ের অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হলো শাহরিয়ার এবং আবৃতি। তাদের দূর থেকে দেখে বিরক্ত বোধ করছিল শাহরিয়ারের মা।ভদ্র মহিলা পৃথিবীর অন্য যে কোনো মেয়েকে তার ছেলের বৌ করতে রাজি কিন্তু এই মেয়েকে নয়। কেন রাজি না তার কোনো যথেষ্ট কারণ নেই তার কাছে।কেবল রাজি না। এই মেয়ে ছাড়া রাস্তার কোনো এক মেয়ে নিয়ে এলেও সে রাজি। কেবল এই মেয়ে চাই না তার। সে ভেবেছে মেয়ের বিয়ের পর ওই শাহ পরাণ মাজারের সেই হুজুরের কাছে যাবে। যার থেকে পানি আর চিনি পড়া এনে খাইয়ে তার ভাইয়ের প্রেমের ভূত তাড়িয়েছিল।কবিরাজের এলেম আছে। কয়েকটা তাবিজ আর পানি পড়ায় বেশ কাজ হয়। ভালোয় ভালোয় আজকের অনুষ্ঠান মিটে গেলে আগামীকালকেই সে যাবে ওয়াজিফার মাকে নিয়ে।

ওয়াজিফা আবৃতির দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে রইল। শাহরিয়ারের সাথে মেলামেশাটা সে নিতে পারছে না।আবৃতির কাছাকাছি যেতেই বুঝতে পারলো দুজনের গা দিয়ে একই গন্ধ আসছে।তার মানে……

হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল তার। নারী না কি প্রলয়ঙ্কারী? সে কাজের বাহানায় আবৃতিকে ডেকে নিলো উপরের ফ্ল্যাটে। তার সাথে আগের মতোই ব্যবহার করলো।কেবল আবৃতি লিফটে থাকা অবস্থায় বাড়ির মেইন সুইচ বন্ধ করে দিলো।সবাই ভাবলো বিদ্যুৎ চলে গেছে।বাড়ির ভিতরে কাজ না থাকায় কেবল অন করা হলো অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত জেনারেটর।আর আবৃতি? তার ফোনটাও যে রয়ে গেছে শাহরিয়ারের কাছে।

চলবে( এডিট ছাড়া।অনেক দিন পর দিলাম।ফোন নষ্টের কারণে দিতে পারিনি।তাই যারা পড়েন রেসপন্স করবেন। বেশি বেশি রেসপন্স হলে আগামী পরশুই আবার নতুন পর্ব দিবো।)

#ছবিয়াল:ছবিপ্রতিচ্ছবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here