#কাঠপুতুল
#লেখনীতে-তানভীন শিলা
#পর্ব-৬
.(সারপ্রাইজ পার্ট)
.
সবার মেলোড্রামাতে পরশ বিরক্ত। ওর ইচ্ছা করতেছে একছুটে আমেরিকায় আবারো চলে যেতে কিন্তু সেটা তো আর করা যাবেনা। সবাই পরশকে নিয়ে একটু বেশিই ব্যস্ত থাকায় তার সাথে আসা দুজনকে যেনো দেখতেই পাচ্ছেনা। রুশানা বেগম দেখেন ১টা ছেলে আর ১টা মেয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে তাদের দিকে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে। রুশানা বেগম পরশকে উদ্দেশ্যে করে বলেন-
“পরশ তোর সাথে ওরা কে?”
“মা ও আন্বিষ (ছেলেটিকে দেখিয়ে) আর ও আশনি (মেয়েটিকে দেখিয়ে) আমার কলিগস্ আর ওরা ভাই-বোন।(টুইনস্)”
“ওহ্ আচ্ছা আচ্ছা। মিফতি এদিকে আয়। (মিফতি চট জলদী পরশের সামনে আসে।)”
পরশ নিজের সামনে দেখে ১টা বড় মেয়ে বাচ্চাদের ড্রেস পরে আছে। পরশের বিরক্তিতে যেন কেউ এক বালতি তিক্ততা ঢেলে দিলো। ২সেকেন্ডের বেশি সময় দেখেনি।
“পরশ ও মিফতি আমার চাচাতো বোনের মেয়ে। মনে আছেনা তোর? মৃদুলার সাথে ডিভোর্সের পরে মিফতির সাথেই তোর বিয়ে দিবো।”
“মা……. এটা অসম্ভব।”
“কেন অসম্ভব কেন? তুই তো বলেছিস মৃদুলাকে ডিভোর্স দিবি তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আর ও লন্ডন থেকে পড়াশোনা করছে তোর মতোই বাহিরে থাকে তাহলে সমস্যার কি আছে?
“বলেছি মৃদুলাকে ডিভোর্স দিবো কিন্তু তোমায় তো বলিনি কেউকে খুঁজে রাখতে আমার জন্য। আমি আমার ভালো বুঝি মা তাই নিজেই খুঁজে নিয়েছি। আমি আশনিকে বিয়ে করবো। আশনি আমার সাথে এজন্যই এসেছে।”
“কিন্তু আমি যে মিফতিকে বলছি তোর সাথে ওর বিয়ে দিবো।”
“আই ডোন্ট কেয়ার মা। আমি আশনিকেই বিয়ে করবো।”
পরশ রেগে নিজের রুমে চলে যায়। পরী আন্বিষ আর আশনিকে ওদের রুম দেখিয়ে দিয়ে বিশ্রাম করতে বলে। মৃদু দ্রুত রান্না শেষ করে নিজের রুমে চলে যায় যেনো পরশের সামনে না পরতে হয়। আর মিফতি? সে তো ন্যাকা কান্না করতেই ব্যস্ত রুশানা বেগমের সামনে।
“মনি তোমাকে মনি‘মা’ বলা আমার হলোনা গো। তোমার ছেলে তো তার বউ নিয়ে এসেছে।”(ন্যাকা কান্দুন্নি)
“পরশ মৃদুকে ডিভোর্স দিবে সেটাই আমার কাছে অনেক মিফতি। ও যাকেই বিয়ে করতে চাবে আমি বাঁধা দিতে পারবোনা। মৃদুকে বিয়ের আগে যা করেছিলো তা এখনো আমার মনে আছে। ইশ্ কি ভয়ংকর ছেলে আমার।”
“কেনো মনি কি এমন করেছিলো?”
“আমার রুমে আয় আর জেনে নে এই ছেলের ভয়ংকর রূপ।”
রুশানা বেগমের সামনে বসে আছে মিফতি। উদ্দেশ্যে পরশ আর মৃদুলার বিয়ের কাহিনী জানাবে। রুশানা বেগম বলা শুরু করলেন-
“মৃদু আর পরীর এসএসসি পরীক্ষার শেষ দিন-ই আসে পরশ। ব্যাগ রেখেই পরীকে নিতে চলে যায়। পরীকে নিয়ে সুমেন বাড়িতে ফিরলেও পরশ ছিলোনা ওদের সাথে। প্রায় ৪ঘন্টা পর পরশ ফিরে আসে সাথে মৃদুকে বিদ্ধস্ত অবস্থায় নিয়ে। মৃদুর উপরে তখন ঘৃণা ছিলো তবুও ঐ অবস্থায় দেখে ভালোলাগেনি আমার। পরশকে জিজ্ঞাসা করতেই জানায় মৃদুলাকে বিয়ে করে নিয়ে আসছে। আমার রাগে শরীর কাঁপতেছিলো। আমি জিজ্ঞাসা করি কেন করলো এমন। তখন আমাকে ওর বিয়ের ঘটনা বলে।”
*সুমেন পরীকে নিয়ে বের হতেই মৃদুলাও বের হয় বাড়ির উদ্দেশ্যে। রাস্তার পাশে হাওয়াই মিঠাই দেখেতে পেয়ে মৃদু কিনে নেয়। সেটাই খেতে খেতে যাচ্ছিল মৃদুলা। পথিমধ্যে কিছু ছেলে মেয়েদের টিজ করতেছিলো। একটা ছেলে মৃদুর পথ আটকায়, মৃদুকে কিছু অশ্লীল কথা বলতেছিলো যেটা মৃদু সহ্য করতে না পেরে ‘ঠাসসসসস’ করে একটা চড় মারে ওর গালে। তখন ওর সাথে থাকা বাকী ছেলেগুলো ঘিরে ধরে মৃদুকে, যেটা দেখে মৃদু ঘাবড়ে যায়। মৃদু হাওয়াই মিঠাই খাওয়ায় এতটাই ব্যস্ত ছিলো যে বাকী ছেলেদের দিকে নজরই যায়নি। ছেলেগুলো টেনে নিয়ে যায় মৃদুকে পাশের একটা ঝোঁপে। মৃদু ছটফট করতে থাকে পালানোর জন্য কিন্তু এতোগুলো ছেলের সাথে পেরে উঠা কি সম্ভব?? ৬জন ছেলে ছিলো ওখানে। ৪জন মৃদুর চার হাত পা ধরে রাখে। একজন ঝাঁপিয়ে পরে মৃদুর উপরে কিন্তু ছেলেটা আর উঠে দাড়াতে পারেনা। টানাহেচড়ার কারণে মৃদু জ্ঞান হারায় তাই কিছুই দেখতে পারেনাই। পরশ মৃদুকে নিয়ে বাড়িতে আসার ২ঘন্টা পর পুলিশ আসে। আমরা সবাই ড্রইং রুমেই ছিলাম। পুলিশ জানায় ৬টা ছেলের লাশ পাওয়া গেছে। ৪টা ছেলের হাত-পা কাঁটা, একজনের মেইন পার্টসহ হাত-পা কাঁটা আর একজনের শুধু চোখ দুটো বের করা। ঐ রাস্তা দিয়ে পরশকেই শেষবার মৃদুলাকে নিয়ে আসতে দেখা গেছে আর কিছু গাড়িও কিন্তু গাড়িগুলোর সন্ধান শুরুর আগে পরশের কাছে আসে। পরশ কিছু জানে নাকি শুনতে আসেন তারা। পরশ জানায় সে কিছুই জানেনা। পুলিশ চলে যেতেই পরশ আমাদের জানায় ও নিজেই মেরেছে ছেলেগুলোকে। যাদের হাত-পা কাঁটা তারা মৃদুলাকে ধরে রেখেছিলো সেই ৪জন, যার মেইট পার্টসহ হাত-পা কাঁটা মৃদুর উপর ঝাপিয়ে পরেছিলো সে, আর যার চোখ বের করা ও মৃদুকে কষ্ট পেতে দেখতেছিলো। এসব শুনে আমরা কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতেই ছিলাম না। পরশ এমনও কিছু করতে পারে? বলার সময়ও ওর চোখে আমরা হিংস্রতা দেখতে পেয়েছিলাম। আমি জানতাম পরশ মৃদুলার জন্মের পর থেকেই ওকে কতটা ভালোবাসে। সেই ছোট্ট বাচ্চাটাকে বউ উপাধী দিয়েছিলো আর বলেছিলো ওকেই বিয়ে করবে। চার বছরের বাচ্চা ভেবে এড়িয়ে গিয়েছিলাম আমরা কিন্তু পরশ অনেক বেশিই পাগল ছিলো ওর জন্য। যখন রুনা মরার পরে পরশকে মৃদুর কাছ থেকে নিয়ে আসি সেদিন বলেছিলো মৃদুকে যেভাবেই হোকনা কেন ও-ই বিয়ে করবে। আমিও ভাবছিলাম দেশের বাহিরে পাঠায় দিবো আর ঝামেলা হবেনা। কিন্তু মৃদুতে যে কি আছে পরশ ব্যতিত কেউ বলতে পারবেনা। আর মৃদুলা কে এইবাড়িতে বিয়ে করেই নিয়ে এসেছে সে তাই মৃদুলা এ বাড়িতেই থাকবে এমনটা জানিয়ে দেয়। মৃদুলাকে আমরা মানি আর না মানি তাতে ওর বিন্দুমাত্র যায় আসেনা। মৃদু ওর বউ সেটাই সত্য। তাই আমিও বাধ্য হই মৃদুলাকে ছেলের বউ মানতে। পরশ আবারো চলে যায় আমেরিকায়। যাওয়ার পরে কি হয় জানিনা ১বছর পর জানায় মৃদুলাকে ডিভোর্স দিবে। আমিও সুযোগ পেয়ে যাই মৃদুলার উপরে রাগ আর ঘৃণা প্রকাশ করার। তখন থেকেই ওর উপরে অত্যাচার শুরু করি।”*
“পরশ মৃদুর জন্য এভাবে খুন করেছিলো মনি? তাহলে ডিভোর্স কেন দিবে? আমার মনে হচ্ছে পরশ অন্য কিছু ভাবতেছে, মৃদুলাকে এতো সহজে তোমার ছেলে ছাড়বেনা মনি তুমি দেখে নিও। তোমার এই ছেলেকে আমি নিজেই বিয়ে করবোনা গো, বিকেলেই পালাবো মানে চলে যাবো।(মিফতি বের হয়ে যায় রুশানা বেগমের ঘর থেকে।)
.
চলবে-
.
*