#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২৮
.
ঘুম ভাঙতেই নীরদের গম্ভীর মুখখানা চোখে পড়ল অর্ঘমার। সে এখন সোফার সাথে হেলান দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। এই সোফাটা নীরদই আনিয়েছে নিজের থাকার জন্য। অর্ঘমা উঠে বসতে গেলে এক অসহ্য যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠল তার সারা শরীর। তবুও এগিয়ে এলো না নীরদ। নিজের হাত-পায়ের অবস্থা দেখে বিকেলের কথা মনে পড়ে গেল অর্ঘমার। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত বাজে প্রায় দেড়টা। নীরদ এসে বিছানার পাশের টেবিলের উপর থেকে খাবার, পানি আর ওষুধ রাখা ট্রে-টা নিয়ে অর্ঘমার সামনে বিছানায় রেখে মৌন অবস্থায় পুনরায় সোফায় গিয়ে বসল। অর্ঘমা বুঝল নীরদ রেগে আছে। সে চুপচাপ ট্রে-টা সরিয়ে রেখে হাত-পা গুটিয়ে, গায়ের কম্বলটা গলা অব্দি টেনে অপর পাশ ঘুরে শুয়ে পড়ল। চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল জল।
বিকেলে আয়নায় নিজেকে দেখে যেমন ঘৃণা হচ্ছিল তেমন অবাকও লাগছিল অর্ঘমার। তার চোখমুখ ভেঙে একাকার অবস্থা। শরীর একদম রোগা পাতলা হয়ে গেছে। চোখের নিচ দেবে গিয়ে কালি পড়ে গেছে। শুষ্ক ঠোঁটজোড়া ফেটে চৌচির। মাসখানেক নিজের অযত্নের ফলে তার এই অবস্থা। তাকে দেখতে অসম্ভব কুৎসিত লাগছে। এমন চেহারা দেখার পরও নীরদ কীভাবে পারছে তার এত খেয়াল রাখতে? এখনো তাকে ভালোবাসতে কীভাবে পারছে?
অর্ঘমা টের পেল তার শরীর থেকে কম্বল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। চোখ মেলে তাকানোর সাথে সাথেই নীরদ তার বাহু ধরে একটানে তাকে উঠিয়ে বসিয়েছে। ব্যথায় চোখমুখ কুঁচকে মৃদু আর্তনাদ করে উঠল সে। নীরদের চোখমুখ শক্ত। যেন দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগটাকে গিলে ফেলার চেষ্টা করছে। কোনো কথা না বলে ভাতের প্লেট নিয়ে এক লোকমা ভাত অর্ঘমার মুখের সামনে ধরল। নীরদকে একপলক দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিল অর্ঘমা। অর্থাৎ সে খাবে না। নীরদ চুপচাপ তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ অর্ঘমার দিকে। মিনিট দুয়েক পর হুট করে বা’হাত দ্বারা অর্ঘমার গাল চেপে ধরে ভাতের লোকমা মুখে পুরে দিতে গেলেই অর্ঘমা স্ব জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল হাতখানা। ফলে ভাতের লোকমা সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল। তৎক্ষনাৎ তার গাল চিনচিন করে উঠল। গালে হাত দিয়ে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকাল নীরদের দিকে। নীরদ তাকে থাপ্পড় মেরেছে? ব্যাপারটা যেন বিশ্বাস হতে চাইল না। পরক্ষণেই কাঁচের গ্লাসখানা মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলল নীরদ। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল গ্লাসটি। ভেসে এলো নীরদের রাগী গলার স্বর।
-“ফাজলামো করো আমার আমার সাথে তুমি? হ্যাঁ! আমাকে কী তোমার মানুষ বলে মনে হয় না? তুমি কী ভেবেছ, তুমি এমন করলে তোমার সাথে যা হয়েছে তা ঠিক হয়ে যাবে? নাকি যারা তোমার এই অবস্থা করেছে তারা শাস্তি পেয়ে যাবে? এসব কিচ্ছু হবে না। তোমার আশেপাশের মানুষগুলোর কথা একবারও ভেবেছ? যারা তোমাকে ভালোবাসে, তোমার ভালো চায় তাদের কথা ভেবেছ একবারও? তুমি এই যে নিজের অযত্ন করছ, নিজেকে আঘাত করছ এসবে সব থেকে বেশি কষ্ট তোমার আপনজনেরাই পাচ্ছে। কিন্তু সেসব তো তুমি ভাবছ না। নিজের জীবনটাকে শেষ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছ তুমি। কেন করছ এসব? তোমার বাবা, অভ্র ভাই, নিধি এদের কথা ভেবেছ একবারও? আমার কথা ভেবেছ একবারও? আমাদের জন্য কেন স্বাভাবিক হতে পারছ না তুমি? অন্তত আমার জন্য হলেও স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করো অর্ঘমা। আমার ধৈর্যের বাঁধ দিনদিন ভেঙে যাচ্ছে। তোমার এই নির্লিপ্ততা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। তোমার এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী আমি জানি। তাই বলে এভাবে শাস্তি দিচ্ছ? এর থেকে নিজ হাতে আমায় মেরে ফেলো তা-ও কষ্ট কম হবে আমার। এভাবে আর বাঁচতে পারছি না আমি। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে বুকে। আচ্ছা, আমি মরে গেলে শান্তি হবে তোমার? তখন কী একটু স্বাভাবিক হতে পারবে? তাহলে বলো, আমি তাই করছি। তবুও এভাবে থেকো না প্লিজ! আই বেগ অফ ইউ।”
সোফার ওপর থেকে ফোন নিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল নীরদ। অভ্র আর নিধি কাঁচ ভাঙার শব্দ শুনে ছুটে এসেছিল অর্ঘমার রুমের দিকে। কিন্তু নীরদের কথা শুনে তারা আর ভেতরে ঢোকেনি। দরজার বাহিরেই দাঁড়িয়ে ছিল। কারণ নীরদ একটা কথাও ভুল বলছে না। নীরদ বেরিয়ে যেতেই তারা রুমে ঢুকল। অর্ঘমা ফ্যালফ্যাল করে নীরদের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। কিছু মুহূর্ত পর ডুকরে কেঁদে উঠল সে। নিধি কিছু না বলে জড়িয়ে ধরল তাকে। ইশারায় অভ্রকে বলল নীরদকে দেখতে। অভ্রও বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে নিধির কথা মতো নীরদ কোথায় গেছে তা দেখার জন্য গেল। নিধির মনে হলো এখন অর্ঘমাকে একটু বুঝালে হয়তো বুঝবে মেয়েটা। তাই সে-ও অর্ঘমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে তাকে বুঝাতে লাগল। এতে যদি একটু স্বাভাবিক হয় মেয়েটা।
___
রাত পেড়িয়ে ভোর হলো। ঘড়িতে বাজে ছয়টা। অর্ঘমা কিছুক্ষণ হলো ঘুমিয়ে পড়েছে নিধির কোলে। এতক্ষণ যাবৎ ছটফট করছিল মেয়েটা নীরদের জন্য। রাতে নীরদের বলা কথা আর নিধির বুঝানো কাজে দিয়েছে বুঝতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল নিধি। কিন্তু মেয়েটা নীরদের সাথে কথা বলার জন্য পাগল হয়ে আছে। নিধি কল করেছিল বেশ কয়েকবার নীরদের ফোনে। কল তো নীরদ রিসিভ করেই নি উল্টো ফোনই সুইচ অফ করে দিয়েছে। তাই দেখে অর্ঘমার কান্নার বেগ দ্বিগুণ হারে বেড়ে গিয়েছিল। অভ্রও সারারাত বাসায় ফেরেনি। তার ফোনও বন্ধ বলছে। নীরদের বলে যাওয়া কথা শুনে নীরদের জন্য চিন্তায় মেয়েটার ঘাম ছুটে গেছে। নীরদ আবার সত্যি সত্যি নিজের ক্ষতি করে না বসে! এসব ভেবে সারারাত কান্নাকাটি করে একটু আগে অবশেষে ঘুমিয়েছে। অর্ঘমার মাথার নিচে বালিশ দিয়ে ঝটপট পুরো রুমটা গুছিয়ে ফেলল নিধি। এখন প্রায় সময় নীরদ এখানে থাকে বলে সে অন্য রুমে থাকে।
___
পার হয়েছে দু’টো দিন। নীরদের দেখা নেই। বেহাল দশা অর্ঘমার। নীরদ নীরদ করে পাগল হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। নীরদের খোঁজ খবর না পেয়ে শেষে একপ্রকার বাধ্য হয়ে তার বাসায় ফোন দিয়েছিল। নীরদের খবর তো সে পায়ই নি, উল্টো নীরদের মায়ের কথায় তার ভারাক্রান্ত মন আরো ভারাক্রান্ত হয়েছে। ভদ্রমহিলা নিজের কথা দ্বারা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন অর্ঘমা এখন তার ছেলের যোগ্য নয়। এমন একজন মেয়েকে তিনি কখনো তার ছেলের বউ করবেন না। নীরদ অনেক ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করে। সে যেন নীরদের থেকে দূরে থাকে। এরপর থেকে আর কাঁদছে না অর্ঘমা। শুধু মনে মনে প্রার্থনা করছে নীরদ যেখানেই থাকুক না কেন, সে যেন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে।
নীরদ সেদিন সন্ধ্যার পর পরই এসে হাজির হলো অর্ঘমাদের বাসায়। সরাসরি এসে ঢুকল অর্ঘমার রুমে। অভ্র মৃদু হেসে রুমের দরজা চাপিয়ে চলে গেল। তার বোন স্বাভাবিক হচ্ছে দেখে তার খুশির অন্ত নেই। এখন নীরদের সাথে মান-অভিমানটা শেষ হলেই তার শান্তি। অবশ্য তার মাথায় আরও একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। নীরদের পরিবার! সেই ব্যাপারে নীরদের সাথে কথা হয়েছে তার। এখন দেখা যাক কী হয়।
___
অর্ঘমা নীরদকে দেখা মাত্রই উঠে দাঁড়াল। জলে টলমল করে উঠল তার চোখজোড়া। দৌড়ে গিয়ে জাপ্টে জড়িয়ে ধরল তাকে। এক মুহূর্তের জন্য ভুলে গেল নীরদের মায়ের বলা সকল কথা। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সে। কান্নার বেগ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল। সাথে জড়িয়ে ধরার বাঁধনও আরও শক্ত হলো। চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিল নীরদ। কি যে শান্তি লাগছে তার, বলার মতো না। কতগুলো দিন পর তার অর্ঘ তাকে জড়িয়ে ধরেছে। মেয়েটা স্বাভাবিক হচ্ছে বুঝতে পেরে নীরদের বন্ধ চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। দু’হাতে শক্ত করে অর্ঘমাকে জড়িয়ে ধরে তার মাথায় চুমু খেল। অর্ঘমা কান্নারত অবস্থায় নীরদের বুকে কিল মেরে বলল,
-“কোথায় ছিলেন আপনি এতদিন? কত চিন্তা হচ্ছিল আমার জানেন? আরেকটু হলে আমি মর….”
অর্ঘমার ঠোঁটে আঙুল রেখে তাকে চুপ করিয়ে দিল নীরদ। দু’হাতে তার মুখ ধরে বলল,
-“এমন কথা আর কখনো যেন না শুনি। আমি তোমায় বড্ড বেশি ভালোবাসি অর্ঘ। তুমি ভাবতেও পারবে না আমার ভালোবাসার পরিমাণ ঠিক কতটা। তোমার কষ্ট দেখলে আমার তার থেকে দ্বিগুণ কষ্ট হয়। মনে হয় নিজেকে শেষ করে ফেলতে। তাই প্লিজ, আর কখনো এমন কিছু করো না। এত সহজে ভেঙে পড়লে হবে, বলো? এখানে তো তোমার কোনো দোষ নেই। তবে তুমি কেন এভাবে ভেঙে পড়বে? দোষ যারা করেছে তারা মুখ লুকিয়ে চলবে। তুমি কেন মুখ লুকিয়ে ঘরে বসে থাকবে? ভয় পেয়ে লুকিয়ে না থেকে মানুষের কথার কঠোর জবাব আর অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ করে দেখো অনেক হালকা লাগবে। আমি সবসময়, সারাজীবন তোমার পাশে আছি।”
নীরদের বুকের কাছের শার্টের অংশ খামচে ধরে ফোপাঁতে লাগল অর্ঘমা। হাসল নীরদ। অনেকদিন পর তার হাসির দেখা মিলল। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সময় নিয়ে অর্ঘমার কপালে চুমু খেল। চুমু খেল তার দু’চোখের পাতায়ও। চোখ মেলে তাকাল অর্ঘমা। তার গাল দু’টো ভিজে গেছে চোখের জলে।
-“আমাকে ক্ষমা করবেন নীরদ। আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমি শুধু মেনে নিতে পারছিলাম না সেই দূর্ঘটনাটা। ওসব মনে পড়লেই আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না। মনে হয় কতগুলো নোংরা বিষাক্ত পোকা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে আমার ওপর। আম..আমি….”
ডুকরে কেঁদে উঠল অর্ঘমা। জল এলো নীরদের চোখেও। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অর্ঘমার বলা কথা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল নীরদের। চোখজোড়া যেন ক্রমশই রক্তিম বর্ণ ধারণ করতে লাগল।
-“আমি এখনো এসব মেনে নিতে পারছি না। আমার কী দোষ ছিল? ওরা কেন করল আমার সাথে এমন? ওই শা..শাকিল আর ওর বন্ধুরা….”
কান্নার বেগ বাড়ল অর্ঘমার। চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল তার সাথে ঘটে যাওয়া কয়েকদিনের নরক যন্ত্রণা। সব পুনরায় মনে পড়তেই ভয়ে ঘেমে উঠল তার সারা শরীর। হুট করেই সে কেমন যেন করতে লাগল। নীরদ প্রথমে বুঝল না কিছু। পরক্ষণেই ডাক্তারের বলা কথাগুলো মনে পড়তেই বুঝতে পারল সেই ঘটনা মনে পড়ায় অর্ঘমা ভয়ের কারণে এমন করছে। সে কী করবে বুঝতে পারল না। অর্ঘমার গালে হাত রেখে কয়েকবার তার নাম ধরে ডাকল। স্বাভাবিক হতে বলল তাকে। অভয় দিল। আস্তে আস্তে শান্ত হতে লাগল অর্ঘমা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়তে লাগল সে। নীরদ তার গালে হাত রেখে বলল,
-“কিচ্ছু হয়নি। ওকে? সব ঠিক আছে। শান্ত হও। ওরা কেউ আর কখনো আসতে পারবে না তোমার কাছে। আর ওদের প্রাপ্য শাস্তি ওরা পাবে। ভয়ের কিচ্ছু নেই অর্ঘ। দেখো, তাকাও আমার দিকে।”
অর্ঘমা চোখ মেলল। অশ্রুসিক্ত চোখে তাকাল নীরদের দিকে। নীরদ তার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,
-“সব ঠিক আছে। কিচ্ছু হয়নি। হুম?”
মাথা নেড়ে সায় দিল অর্ঘমা। নীরদের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুঁজে দাঁড়িয়ে রইল নীরবে।
চলবে…#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২৯
.
শাকিলের বিরুদ্ধে থানায় কেস করেছে অর্ঘমা। তাকে সাহস জুগিয়েছে নীরদ। কিন্তু কেস করেও কোনো লাভ হলো না। অফিসার কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না এই কেসে। উল্টো ডায়েরি করার সময় অর্ঘমাকে অনেক আপত্তিকর প্রশ্ন করছিলেন থানার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মাঝে মাঝে অশ্লীল ভঙ্গিতে হাসছিলেন। অর্ঘমার কান্না পাচ্ছিল প্রচন্ড কিন্তু সে কাঁদেনি। কারণ পাশেই বসেছিল নীরদ। নীরদ কোনো কথা না বলে চুপচাপ অফিসারের প্রশ্নগুলো শুনছিল। অর্ঘমাকে দেখে অফিসারের চোখে জেগে ওঠা লালসা তার চোখ এড়ায়নি। সে আর এক মুহূর্তও দেরি করল না। অর্ঘমাকে নিয়ে চটজলদি বেরিয়ে পড়ল থানা থেকে। সারা রাস্তায় কোনো কথা হলো না দু’জনের মাঝে। অর্ঘমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে আবারও বেরিয়ে পড়ল নীরদ।
___
রাত বাজে প্রায় সাড়ে দশটা। নীরদের খবর নেই সারাদিন। কোথায় যে গিয়েছে ছেলেটা কে জানে! অভ্রও বাসায় আসেনি এখনো। নিধি পড়াশোনা করছে নিজের রুমে। ভার্সিটিতে পরীক্ষা চলছে। অর্ঘমা এই সেমিস্টার ড্রপ দিবে ভেবেছে। নীরদ বা অভ্রও এতে আপত্তি করেনি।
বেলের শব্দ শুনতেই অর্ঘমা দৌড়ে গেল দরজা খুলতে। কিন্তু দরজা খুলে সে নিরাশ হলো। নীরদ নয় বরং অভ্র এসেছে। ভাইকে দেখে জোর করে হাসার চেষ্টা করল অর্ঘমা। অভ্রও হেসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলল,
-“সবসময় এভাবেই হাসিখুশি থাকবি। বিগত দিনগুলোতে তোর মুখে এই হাসিটা আমি বড্ড মিস করেছি।”
কোনো জবাব দিল না অর্ঘমা। তাবে তার মুখের হাসিটা চওড়া হলো। কিছুর শব্দ পেয়ে অভ্রর পেছনে তাকিয়ে দেখে নীরদ আসছে সিঁড়ি বেয়ে। তার হাতে একটা কার্টন। তাকে দেখেই অভ্র তার কাঁধ জড়িয়ে ধরল। নীরদ পাশ ফিরে অর্ঘমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। সেজন্য আসতে পারিনি। তুমি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করেছ?”
অর্ঘমা ভদ্র বাচ্চাদের মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। নীরদ মুচকি হেসে বলল,
-“গুড গার্ল। তুমি ঘরে যাও। আমি আসছি একটু পরে।”
নীরদের কথা মেনে চুপচাপ চলে গেল অর্ঘমা। নীরদ অভ্রকে নিয়ে অভ্রর রুমে গেল। তার কিছু কথা আছে অভ্রর সাথে।
___
নীরদ যখন অর্ঘমার ঘরে এলো তখন অর্ঘমা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল জানালার সামনে। নীরদ পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরতেই ভয়ে আঁতকে উঠল অর্ঘমা। ঘাড় ঘুরিয়ে নীরদকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। ভয়ের কারণে তার হৃদপিণ্ড খুব জোরে ধুকপুক করছে। নীরদ বুঝল ব্যাপারটা, কিন্তু কিছু বলল না। অর্ঘমার মাথার একপাশে চুমু খেয়ে বলল,
-“বাসায় দিয়ে যাওয়ার পর সারাদিন কী কী করেছ?”
আস্তেধীরে অর্ঘমা বলা শুরু করল,
-“কিছুক্ষণ বিশ্রাম করেছি, গোসল করেছি, খাওয়া-দাওয়া করেছি, একটু ঘুমিয়ে ছিলাম। বিকালে ঘুম থেকে উঠে বসেছিলাম কিছুক্ষণ। নিধি আসার পর ওর সাথে টুকটাক কথাবার্তা হয়েছে। তারপর থেকে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম আপনার অপেক্ষায়।”
-“মিস করছিলে আমায়?”
-“হুঁ।”
-“এখন থেকে বাসায় একা থাকলে যাতে আর বোর না হও তাই তোমার জন্য একজন সঙ্গী এনেছি।”
অর্ঘমা অবুঝ দৃষ্টিতে তাকাল নীরদের পানে। নীরদ মৃদু হেসে অর্ঘমার চোখের পাতায় চুমু খেয়ে তার হাত ধরে অভ্রর রুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগল। দরজার সামনে এসে তার চোখজোড়া হাত দিয়ে ঢেকে তাকে নিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকল। অর্ঘমাকে বিছানায় বসিয়ে চোখ খুলতে বারণ করল। কোলের উপর নরম তুলতুলে কিছুর আভাস পেয়ে চট করে চোখ মেলল অর্ঘমা। দু’চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল কোলের দিকে। নীরদ হেসে বলল,
-“আমি জানি বিড়াল তুমি পছন্দ করো কিন্তু একটু ভয়ও পাও। তাই কখনো কাছে যাও না। কিন্তু এই বিড়াল ছানা তোমাকে কিচ্ছু করবে না। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ওকে?”
-“কিন্তু!”
-“কোনো কিন্তু না। হাত বুলিয়ে দেখো ওর গায়ে।”
-“ভয় করছে।”
-“আরে বাবা, কোনো ভয় নেই। তুমি হাত বুলিয়ে তো দেখো।”
-“যদি কামড় দেয়?”
-“তোমার কোলেই তো বসে আছে। কামড় দিয়েছে কী? দেয়নি তো! তাহলে ভয় কীসের? কিচ্ছু করবে না। হাত বুলিয়ে দেখো তুমি।”
পাশ থেকে অভ্র আর নিধিও বলছে বিড়াল ছানাটিকে কোলে নিতে। অর্ঘমা কাঁপা কাঁপা হাতে আস্তে করে এক আঙুল দিয়ে প্রথমে স্পর্শ করল বিড়াল ছানাটির শরীরে। সাথে সাথেই ছানাটি মিউ মিউ করে উঠল। ভয়ে তৎক্ষণাৎ পিছিয়ে গেল অর্ঘমা। হেসে উঠল সকলে। নীরদ একপ্রকার জোর করে ছানাটিকে অর্ঘমার হাতে দিল। প্রথমে ভয় পেলেও পরে যখন দেখল ছানাটি কিছু বলছে না, উল্টো তার হাতে মাথা ঘষছে তখন ভয় কিছুটা কেটে গেল অর্ঘমার। সে একহাতে ছানাটিকে কোলে নিয়ে অন্য হাত দিয়ে আদর করতে লাগল। নীরদ খুব খুশি হলো অর্ঘমাকে বিড়াল ছানাটির সাথে খুশি দেখে। মৃদু হেসে বলল,
-“হ্যাপি বার্থডে মাই লাভ।”
চমকে উঠল অর্ঘমা। আজ তার জন্মদিন! মনে মনে হিসাব কষে দেখল। আসলেই আজ তার জন্মদিন। অথচ তার মনেই ছিল না। পাশ থেকে অভ্র আর নিধি দু’জনকে টিয করে বলল,
-“মাই লা..ভ!”
কিছুটা শব্দ করেই হেসে ফেলল নীরদ। লজ্জায় লাল হলো অর্ঘমা। তা দেখে আরও হাসল সকলে। অভ্র আর নিধিও তাকে জড়িয়ে ধরে উইশ করল। কিছুক্ষণ পর নিধি কেক হাতে উপস্থিত হলো। পর পর দু’টো কেক দেখে একটুও অবাক হলো না অর্ঘমা। কারণ সে জানে একটা কেক অভ্র এনেছে আর অন্যটা নীরদ এনেছে। এমনটাই হয়ে আসছে বিগত কয়েক বছর ধরে।
___
ব্যালকনির সামনে জানালায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্ঘমা। বাইরে মেঘের গর্জনের পাশাপাশি অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। একটু আগে অব্দিও বৃষ্টি পড়ার কোনো নাম নিশানা ছিল না। হুট করে এই বৃষ্টির আগমের কী কারণ কে জানে! বৃষ্টির সাথে সমান বেগে হালকা ঠান্ডা বাতাসও বইছে। জানালার সাথে দেয়ালের ওপর বিড়াল ছানাটি লেজ গুটিয়ে বসে জিহ্ব দ্বারা নিজের হাত লেহন করছে। নীরদ এসে পেছন থেকে অর্ঘমাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে নিল। বিষয়টাতে বড্ড অবাক হলো অর্ঘমা। আগে নীরদ কাছেই আসতে চাইত না সহজে আর এখন সুযোগ পেলে কাছে আসা হাতছাড়া করে না। এত পরিবর্তনের কারণ কী? কোনোভাবে কী নীরদ তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে আছে? হয়তো। কারণ নীরদের পরিবার তো সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা অর্ঘমাকে মানবে না। অর্ঘমার চুল ঠিক করতে করতে নীরদ বলল,
-“আমার কণ্ঠ তোমাকে আকর্ষণ করে বলে তুমি সবসময় আমার কণ্ঠে গান শুনতে চাইতে। কিন্তু আমি কখনো শোনাইনি, লজ্জা লাগত বলে। ভাবছি আজ শোনাবো।”
-“হঠাৎ?”
-“মনে হলো তোমার ইচ্ছেটা পূরণ করা উচিত। কারণ আমি চাই না তোমার জীবনে কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ থাকুক।”
কথাগুলো বলেই নীরদ ব্যালকনিতে গিয়ে অর্ঘমার সামনের জানালার পাশ ঘেঁষে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। হাতের গিটারটা দেখিয়ে বলল,
-“স্টুডেন্ট লাইফের গিটার। কলেজে থাকতে কিনেছিলাম। তখন বন্ধুদের সাথে প্রায় প্রায়ই গান গাওয়া হত। ভার্সিটি লাইফেও গেয়েছি কিন্তু কম।”
অর্ঘমা কিছু না বলে অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে নীরদের কণ্ঠে গান শোনার অপেক্ষায়। হালকা কেশে নীরদ বলল,
-“গান শুনে একদম হাসবে না ওকে? খারাপ হতেই পারে তাই বলে হেসে আমাকে লজ্জা দিবে না।”
মৃদু হেসে অর্ঘমা বলল,
-“আচ্ছা, হাসব না।”
গলা ঝেড়ে নিল নীরদ। গিটারে টুংটাং শব্দ তুলে দেখে নিল তার গিটার বাজানোর স্কিল ঠিক আছে কিনা। কয়েকবার চেক করে নিয়ে অর্ঘমার দিকে তাকিয়ে হেসে গিটারে সুর তুলল।
তোর মন খারাপের দেশে
যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে
তোর মনটা ভালো করে
দেবো অনেক ভালোবেসে
ও, তোর মন খারাপের দেশে
যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে
তোর মনটা ভালো করে
দেবো অনেক ভালোবেসে
ডাকলে কাছে আসিস
পারলে একটু হাসিস
বুকটা রাখিস পেতে
ভালোবাসা নিতে
সব অভিমান ভেঙে দেবো
তোর কাছে এসে
তোর মন খারাপের দেশে
যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে
তোর মনটা ভালো করে
দেবো অনেক ভালোবেসে
নীরদ গান গাওয়ার পুরোটা সময় তাকিয়ে ছিল অর্ঘমার দিকে। অর্ঘমার চোখজোড়া ছলছল করছে। সে অন্যদিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে চোখ মুছে নিল। তার যে মন খারাপ সেটা যে নীরদ বুঝে গিয়েছে তা বুঝতে বাকি রইল না। আজকাল সে চেয়েও পারে না মন ভালো রাখতে। আশেপাশের মানুষজন সারাক্ষণ আনাগোনা করতেই থাকে তার মন খারাপ করিয়ে দেওয়ার জন্য। আরও তার সাথে যা ঘটেছে এই ঘটনা অবশ্যই ভুলার মতো নয়। অর্ঘমা খুব করে চেষ্টা করছে চোখের জল আটকানোর, কিন্তু সে পারছে না। হাতের বাহুতে টান লাগতেই সামনে তাকানোর সাথে সাথেই কারো প্রশস্ত বুকের সাথে মিশে গেল সে। এটা নীরদের বুক বুঝতে পেরে এবার কিছুটা শব্দ করেই কেঁদে ফেলল। নীরদ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল তাকে। তার চোখ থেকেও কয়েক ফোঁটা অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়ল। সেই সাথে মনে মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল সে।
___
অর্ঘমাকে ঘুম পাড়িয়ে দরজা চাপিয়ে নীরদ গেল অভ্রর রুমে। কিন্তু অভ্র তার রুমে নেই। কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে নীরদ আশেপাশে তাকিয়ে অভ্রর নম্বরে কল দিল। প্রথমবার রিসিভ হলো না। দ্বিতীয়বার কল দিতেই দু’বার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে কল রিসিভ করল অভ্র।
-“হ্যাঁ, নীরদ, বল।”
অভ্রর কণ্ঠস্বর কিছুটা অস্বাভাবিক শোনাচ্ছে। গলা ঝেড়ে নিয়ে নীরদ বলল,
-“আমি তোমার রুমে বসে আছি। কিছু কথা ছিল। রুমে আসো একটু।”
-“আসছি।”
কল কেটে গেল ওপাশ থেকে। নীরদ ফোন পকেটে ঢুকিয়ে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। অর্ঘমাকে ঘুম পাড়াতে খুব একটা কষ্ট হয়নি আজ। মেয়েটা তার বুক মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে একাই ঘুমিয়ে গিয়েছিল। নীরদ তাকে ঠিকঠাক ভাবে শুইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে এসেছে।
অভ্র এলো মিনিট দশেক পরে। চুল ঠিক করতে করতে রুমে ঢুকে জিজ্ঞেস করল,
-“কী হয়েছে?”
নীরদ পেছন ঘুরে অভ্রর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
-“নিজেকে যখন কন্ট্রোলই করতে পারছ না তখন বিয়ে কেন করে নিচ্ছ না?”
দুটো শুঁকনো কাশি দিয়ে গলা ঝেড়ে নিল অভ্র। চুলে আঙুল চালাতে চালাতে কিছুটা বোকাসুলভ হাসল। নীরদও পাল্টা হেসে বলল,
-“দেখো আবার বেশি কিছু করতে যেয়ো না। আন্টি দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। তাই বলছি এত কষ্ট না করে এর থেকে বিয়ে করে ফেলো নিধিকে।”
-“মাকে নিয়েই তো যত ভয়। দেখি কিছুদিনের মধ্যেই বাসায় জানাব ওর ব্যাপারটা। মা কী বলবে জানি না। তবে বিয়ে তো আমি ওকেই করছি এটা শিওর থাক।”
-“আচ্ছা।”
-“এবার বল কী বলবি।”
নীরদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-“আমার মনে হচ্ছে এখন আর দেরি করা ঠিক হবে না।”
-“কোন ব্যাপারে?”
-“অর্ঘমা আর আমার বিয়ের ব্যাপারে বলছি।”
অভ্র চিন্তিত হয়ে বলল,
-“কিন্তু তোর পরিবার?”
-“তুমি তোমার পরিবারের জন্য নিধিকে ছাড়বে? না তো! তাহলে আমার পরিবারের জন্য আমি অর্ঘমাকে ছেড়ে দিব ভাবাটা বোকামি না?”
-“পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নে নীরদ। এভাবে হুটহাট কোনো সিদ্ধান্ত নিস না। তোর সারাজীবনের ব্যাপার এটা।”
-“সিদ্ধান্ত তো আমি বহু আগেই নিয়েছিলাম। যখন প্রথম অর্ঘমাকে দেখেছিলাম, তখনই। এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার সাধ্য এখন আমারও নেই।”
-“তাহলে এখন কী করতে চাচ্ছিস?”
-“অর্ঘমাকে এখানে রাখা যাবে না। আশেপাশের পরিবেশ ওর জন্য এখন আর সেইফ না। দূর্ঘটনার জন্য এমনিতেই অর্ঘমা ডিপ্রেশনে ভুগছে। ওকে কিছুটা বের করতে পেরেছি এই ডিপ্রেশন থেকে। কিন্তু এখানে থাকলে আশেপাশের লোকজনের কটু কথা ওকে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে শুনতে হবে। তখন নিজেকে সামলাতে পারবে না ও। পরে আবারও ডিপ্রেশনে ডুবে যাবে। আর ডিপ্রেশনের কারণে যদি নিজের কোনো ক্ষতি করে বসে তাহলে? এজন্য আমি ওকে এখান থেকে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে চাইছি।”
অভ্র নীরদের বলা কথাগুলো ভেবে দেখল। ভুল কিছু বলেনি নীরদ। তবুও একটা কিন্তু থেকেই যায়।
-“এক্সাক্টলি করতে কী চাচ্ছিস সেটা বল।”
-“আমি অর্ঘমাকে বিয়ে করে, ওকে নিয়ে দেশের বাইরে চলে যেতে চাইছি। যাতে আশেপাশের কোনো বিষাক্ততা ওকে ছুঁতে না পারে।”
অভ্র কিছু বলল না। চুপচাপ বসে পড়ল বিছানার একপাশে। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অনেক কিছু ভাবছে। তার ভাবনার মাঝেই নীরদ তার হাত ধরে আশ্বাস দিয়ে বলল,
-“আমার ওপর বিশ্বাস রাখো ভাইয়া। আমি ওর খেয়াল রাখব।”
এই কথাটাই যেন শুনতে চাইছিল অভ্র। নীরদের কাঁধে হাত রেখে সম্মতি দিল সে।
চলবে….