কিশোরী কন্যার প্রেমে পর্ব -২৬+২৭

#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২৬
.
মাঝরাস্তায় চলন্ত রিকশা থামিয়ে কয়েকজন ছেলে মিলে রিকশাওয়ালাকে পিটিয়ে জোর করে অর্ঘমাকে নিয়ে মাইক্রোতে উঠে চলে গেল। ঘটনাটা এতটাই দ্রুত ঘটল যে আশেপাশের লোকজনও ঠিকভাবে কিছু বুঝে উঠতে পারল না। যতক্ষণে বুঝতে পারল ততক্ষণে মাইক্রোটা তাদের চোখের আড়াল হয়ে গেছে। দিনে দুপুরে মাঝরাস্তা থেকে একটা যুবতী মেয়েকে অপহরণ? তৎক্ষণাৎ কয়েকজন লোক মিলে আলোচনা করে ব্যাপারটা পুলিশকে জানাল।
___
প্রায় অনেকক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে নীরদ। অর্ঘমার কোনো খবরই নেই। বেশ কয়েকবার কল দিয়ে ফেলেছে অর্ঘমার ফোনে। প্রথমবার অর্ঘমা রিসিভ করে ‘আসছি’ বললেও এরপরে প্রতিবারই নাম্বার বন্ধ বলছে। চিন্তায় এই শীতের মাঝেও নীরদের কপালে ঘামের রেখা দেখা গেল। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা রাস্তা এগিয়ে গিয়েছে কিন্তু তবুও অর্ঘমার কোনো দেখা নেই। তাই বাধ্য হয়ে এবার অভ্রকে কল করল।
-“হ্যালো, নীরদ!”
-“ভাই একটু বের হতে পারবে?”
-“কেন কী হয়েছে? অর্ঘমা ঠিক আছে তো?”
-“ভাই ওর জন্যই কল করেছি। ওর আজ আসার কথা ছিল আমার সাথে দেখা করতে। কথা হয়েছিল যে ও রিকশা নিয়ে আমার অফিস পর্যন্ত আসবে। তারপর আমরা দু’জন একসাথে ক্যাফেতে যাব। কিন্তু গত একঘন্টা যাবৎ অপেক্ষা করেও ওর কোনো খবর পাচ্ছি না। প্রথমে একবার ফোন করেছিলাম। তখন বলল রিকশায় আছে। এরপর যতবারই কল দিচ্ছি নাম্বার বন্ধ বলছে। চিন্তায় অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার। হাঁটতে হাঁটতে অলমোস্ট ওর ভার্সিটির সামনেই চলে এসেছি আমি। তাও ওর দেখা নেই। তুমি কী একটু বের হবে? আমার মাথা কাজ করছে না।”
-“আসছি আমি। তুই ভার্সিটির সামনেই দাঁড়া। আসিফ ওদের কল দিয়ে আসতে বল।”
কলে থাকা অবস্থায়ই একপ্রকার দৌড়ে বেরিয়ে গেল অভ্র। পেছন থেকে নিধির গলা ভেসে আসছে। সেদিকে এখন মননিবেশ করার বিন্দুমাত্র সময় নেই তার হাতে। তার কাছে এই মুহূর্তে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো অর্ঘমা। না জানি মেয়েটা কোথায় গেল? অভ্রর সারা শরীর চিন্তায় অবশ হয়ে আসতে লাগল।
___
বিবস্ত্র অবস্থায় অর্ঘমার নিথর দেহটা পড়ে আছে বিছানায়। সারা শরীরে অসংখ্য কামড় আর খামচির দাগ। ঘরে অন্য কারও উপস্থিতি নেই। বাইরের ঘর থেকে গানবাজনার আওয়াজ আসছে। সাউন্ড বক্সে ফুল সাউন্ডে গান ছেড়ে উল্লাসে মেতে আছে তারা। রক্তিম চোখজোড়া বন্ধ করে হাতে মদের গ্লাস নিয়ে মাতাল অবস্থায় বসে আছে শাকিল। তার বন্ধুরা নাচানাচি করছে অন্যান্য মেয়েদের সাথে। সবার অবস্থাই আউট অফ কন্ট্রোল। শাকিলের এক বন্ধু এসে তার পাশে বসে জড়ানো গলায় বলল,
-“দোস্ত ওই মেয়েটাকে নিয়ে আবারও একটু মজা করতে মন চাইছে।”
-“তো কর গিয়ে। না কে করেছে? আজ তো ওকে আনাই হয়েছে মজা করার জন্য।”
শাকিলের বন্ধু হু হা করে হেসে উঠে চলে গেল অর্ঘমাকে যে রুমে রাখা হয়েছে সেই রুমে। শাকিল নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে দেখল তার বন্ধু রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিল। সে আবারও মদের নেশায় মত্ত হয়ে গেল।

আজ শাকিলের কলিজা ঠান্ডা হয়েছে। বিগত চার বছর যাবৎ ভেতরে জ্বলতে থাকা আগুনটাকে থামিয়ে রেখেছিল। অপেক্ষায় ছিল একটা ভালো সুযোগের। আজ তা পেয়ে গেছে। সেদিন অর্ঘমার বাবা আর ভাইয়ের করা অপমান সে ভুলেনি। ভুলেনি নীরদের করা অপমানও। আর না ভুলেছে নীরদ আর নীরদের বন্ধুদের সেই মা’র। যার জন্য পুরো সাড়ে চারটা মাস লেগেছিল তার সুস্থ হতে। সেই থেকে অর্ঘমার প্রতি তার ভীষণ রাগ। রাগটা এতদিন মনের কুঠুরিতে পুষে রেখেছিল। অর্ঘমার দিকে তার নজর বরাবরই ছিল। এতদিন তাকে উড়তে দিয়েছে নিজের মন মতো। এখন ডানা ভাঙার সময় এসে গিয়েছিল বলে ভেঙে দিয়েছে। অর্ঘমাকে নিজের লোক দিয়ে তুলে এনে সকল বন্ধুরা মিলে মেয়েটার দেহটাকে খুবলে খেয়েছে। যেই পর্যন্ত না মন ভরবে সেই পর্যন্ত এভাবেই সবাই মিলে অর্ঘমার উপরে জোর চালাবে। এক ঢিলে সবগুলো পাখিকে সে মেরে ফেলেছে। অর্ঘমা, অর্ঘমার বাবা, অভ্র আর নীরদ সবাইকে একসাথে শিক্ষা দেওয়া গেছে ভেবে মাতাল অবস্থায়ই হাসতে লাগল শাকিল।

শাকিলকে এখন ছোঁয়ার সাহস কারও নেই। সে এখন রাজনীতিবিদ। বড় বড় নেতাদের সাথে তার ওঠাবসা। টাকা থাকলে কী না হয়? আইন, নিয়ম-কানুন এসব তাদের জন্য না। এসব তারা পকেটে নিয়ে ঘোরাঘুরি করে। ওসব তো শুধু সাধারণ জনতাদের জন্য। আজকে মূলত চার বছর আগের অপমানের বদলা নেওয়ার উপলক্ষেই এই সেলিব্রেশন চলছে তার ফার্ম হাউসে। মদ্যপান করার মুহূর্তে এক মেয়ে এসে তার গলায় হাত রাখতেই এক চুমুকে সবটুকু তরল নিজের গলায় ঢেলে মেয়েটাকে নিয়ে অন্য রুমে চলে গেল শাকিল। আজ সারারাত এসবই চলবে এখানে।
___
অর্ঘমা নিখোঁজ হওয়ার আজ তৃতীয় দিন। অর্ঘমার বাবা, অভ্র আর নিধির অবস্থা খুব খারাপ। সবথেকে খারাপ অবস্থা হয়েছে নীরদের। তার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। তিন দিনের ব্যবধানে চোখমুখ শুকিয়ে জঘন্য অবস্থা হয়ে গেছে। নির্ঘুম রাত পার করার জন্য চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে। পেটে একটা দানাপানিও পড়েনি অর্ঘমার চিন্তায়। মনে মনে বারবার নিজেকে দোষ দিচ্ছে। সে যদি অর্ঘমাকে একা একা বের হতে না বলতো তাহলে এমন কিছুই হত না। এটা নীরদের ধারণা। তার পরিবারের সবাইও গত দু’দিন যাবৎ অর্ঘমাদের বাসায়। সবারই টেনশনে মাথা নষ্ট হওয়ার জোগাড়।

মিনা বেগম বরাবরের মতোই নির্বিকার। তার এসবে কিছুই যায় আসে না। তিনি তার মতো বেশ আছেন। পায়ের উপর পা তুলে খাচ্ছেন। বাইরে গিয়ে স্বামীর কামানো টাকা উড়াচ্ছেন বান্ধবীদের নিয়ে। নিজের সকল শখ, আহ্লাদ পূরণ করছেন। এসবেই তিনি সময় পার করছেন। অন্যসব দিকে খেয়াল করার সময় কোথায় তার?

পুলিশকে জানানোর পরও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি অর্ঘমার। শুধু এতটুকুই জানা গেছে যে মাঝরাস্তা থেকে অর্ঘমাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছে কয়েকজন। রিকশাওয়ালার সাথেও কথা হয়েছে পুলিশের। তেমন কিছুই জানতে পারেন নি তারা। অর্ঘমাকে খোঁজার কোনো ক্লু নেই তাদের কাছে। তবুও তারা খুঁজে চলেছে। যদিও এটা তাদের মুখের কথা।

নীরদ আর অভ্রর ক্লোজ ফ্রেন্ডরা সবাই নিজেদের সাধ্য মতো চেষ্টা করছে অর্ঘমাকে খোঁজার। নিজেদের যত বড় বড় সোর্স ছিল সব কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করছে। তারাও এখনো পর্যন্ত কোনো ক্লু পায়নি। সবার মাথা থেকে শাকিলের কথা সরে গিয়েছে। এত টেনশনে এসবের খেয়াল থাকে নাকি?

আসিফের মাথায় শাকিলের নামটা আসলেও সে বারবার উড়িয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু তবুও বন্ধুর করুণ অবস্থা দেখে আর নিজের মনকে শান্ত করতে শাকিলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে এখন দ্বিধাদ্বন্দ ও চিন্তার মাঝে ডুবে আছে তার সারা শরীর ও মন। যা জেনেছে তাতে শাকিলের পক্ষে এমন একটা কাজ করা অসম্ভব কিছু না। অর্ঘমাদের বাসায় ঢুকে আসিফ চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসল। সেখানে অভ্র, নীরদ আর তাদের কিছু বন্ধুরা রয়েছে। আসিফ গলা ঝেড়ে বলল,
-“আমার কিছু কথা ছিল।”
সবার নজর এখন আসিফের দিকে। কপালে চিন্তার রেখাটা আরেকটু গভীর হলো তার। আমতা আমতা করে বলল,
-“আসলে আমার মাথায় একটা নাম ঘুরছে।”
-“কার?”
অভ্রর তীক্ষ্ণ আওয়াজে খানিকটা নড়েচড়ে বসল আসিফ। নীরদের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল,
-“শাকিল। আমার কেন যেন ওকেই সন্দেহ হচ্ছে। আর এই সন্দেহ কাটাতেই আমি ওর ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি। এখন সন্দেহ কমার বদলে উল্টো সন্দেহর পাশাপাশি চিন্তাটাও বেড়ে গেছে।”
-“কী জেনেছিস জলদি বল আসিফ। এটা আমার বোনের ব্যাপার। আমি আর পারছি না এভাবে বসে থাকতে। কিছু করতেও পারছি না। নিজেকে ঠিক কতটা অসহায় লাগছে বোঝাতে পারব না তোকে।”
-“শাকিল এখন রাজনীতিবিদ। বড় বড় সব নেতাদের সাথে তার ওঠাবসা। চরিত্রের কথা তো বললামই না আর। প্রতিদিন তার শয্যাসঙ্গীর জন্য নতুন নতুন মেয়ে লাগে। এখন আমার মনে হচ্ছে অর্ঘমাকে কিডন্যাপ করার পেছনে ওর হাত আছে। হয়তো পুরোনো রাগ মেটাতে। চার বছর আগের অপমানের বদলা নিতে এই কাজ করেছে। আর তাছাড়া ও জানে এখন কেউ ওর কিচ্ছু করতে পারবে না। তাই হয়তো এই সাহসটা দেখিয়েছে। এটা সম্পূর্ণ আমার অপিনিয়ন। আ’ম নট শিওর।”
সকলে চিন্তায় পড়ে গেল। নীরদের হাতের মুঠ ততক্ষণে শক্ত হয়ে গেছে। এখন তার ভেতরে ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা নেই। অর্ঘমাকে ছাড়া সে অচল। ঠিক এতটাই ভালোবেসেছে সে অর্ঘমাকে। শাকিলের নাম শুনতেই তার হাত ও কপালের রগ ফুলে নীল হয়ে উঠেছে মুহূর্তেই। চোখগুলো আগে থেকেই রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে। ফর্সা চেহারাটা পুরো লালচে হয়ে উঠল ধীরে ধীরে। শাকিলকে এখন সামনে পেলে বোধহয় লাশ ফেলে দিত তার।

এসব চিন্তা ভাবনার মাঝেই অভ্রর সেলফোন বেজে উঠল সশব্দে। পুলিশ অফিসারের কল। দ্রুত রিসিভ করে ফোনটা কানে ধরল। বুকের ভেতরটা ভীষণভাবে কাঁপছে। অর্ঘমার হয়তো কোনো একটা খবর পাওয়া যাবে এই আশায় তার সারা শরীর কাঁপতে লাগল। ওপাশ থেকে অফিসার যা বলল তা শুনে অভ্র যেন নিজের বোধশক্তি হারিয়ে ফেলল। মলিন মুখশ্রী ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে উঠতে লাগল তার। নিঃশব্দে ফোনের লাইন কেটে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল কিছু সময়। চোখ ভরতি জল। নীরদের রক্তিম মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“হসপিটালে যেতে হবে আমাদের।”
সবার আতঙ্কিত চোখ এখন অভ্রর দিকে। কান্নাটা গিলে ফেলে অভ্র ভাঙা গলায় বলল,
-“অফিসার কল করেছিল। আমাদের হসপিটালে যেতে বলেছে। চলো।”
-“অর্ঘমাকে পাওয়া গেছে?”
শান্তস্বরে প্রশ্ন নীরদের। অভ্র তাকাল তার দিকে। নীরদের মন পড়ার ক্ষমতা তার নেই। অর্ঘমাকে নীরদ ঠিক কতটা চোখে হারায় সেটা তার অজানা নয়। মেয়েটা নিখোঁজ শুনে সবথেকে বেশি ভেঙে পড়েছে এই নীরদই। কিন্তু তার গলার স্বর এখনো এত বেশি শান্ত দেখে অভ্রর বুঝতে বাকি রইল না নীরদ কিছু একটা আন্দাজ করে ফেলেছে। নীরদের প্রশ্নের উত্তরে অভ্র কেবল মাথা নাড়াল। বাসার সকলকে জানিয়ে সবাই মিলে হসপিটালের উদ্দেশ্য বের হলো। সবারই মনের ভেতরটা খচখচ করছে। কোনো দুঃসংবাদ শুনতে হবে না তো? হসপিটালে কেন যেতে বলল অফিসার? অর্ঘমা ঠিক আছে তো?
___
হসপিটালের করিডোরে এতগুলো মানুষকে একসাথে দেখে সবাই ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে। ডাক্তার এত মানুষ দেখে অফিসারের দিকে তাকালেন। চোখের চশমাটা ঠিক করে মলিন মুখে বললেন,
-“পেশেন্টের পরিবারের যেকোন দু’জন আসুন আমার সাথে।”
নীরদ আগেই এগিয়ে গেল। তা দেখে অভ্রও গেল তার পেছনে। বাকিরা অপেক্ষায় রইল তাদের। ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে অভ্র, নীরদ আর অফিসার পাশাপাশি বসলেন। ডাক্তার নিজের চেয়ারে বসে আগে পানি পান করলেন। তার জন্যও বিষয়টা বলা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতি মাসে নাহলেও এমন একটা না একটা কেস আসেই হসপিটালে। নীরদ সবকিছু শুনতে প্রস্তুত এমন একটা দৃষ্টি ডাক্তারের দিকে নিক্ষেপ করে বসে আছে। প্রথমে অফিসার বললেন,
-“অর্ঘমাকে আমরা নিস্তেজ ভাবে ওর ভার্সিটির সামনের রাস্তায় পেয়েছি।”
নীরদ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বসল। তার ভেতরের শক্তি হুট করে যেন ফুরিয়ে আসতে লাগল। জিহ্ব দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নিল। হাত-পা কেমন যেন ঠান্ডা হয়ে আসছে। ডাক্তার এবার অত্যন্ত আফসোসের সুরে বললেন,
-“রেপ কেস। পেশেন্টকে গত তিনদিন কন্টিনিউয়াসলি টর্চার করা হয়েছে। কাজটা একজনের না। বেশ কয়েকজন মিলে করেছে। সারা শরীরে অসংখ্য দাগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জ্বলন্ত সিগারেট নেভানোর দাগও রয়েছে। ফিজিক্যালি এন্ড মেন্টালি দুইভাবেই পেশেন্টকে প্রচুর টর্চার করা হয়েছে। পালস রেট খুবই স্লো চলছে। তাকে আইসিইউতে চিকিৎসায় রাখা হয়েছে। আমরা শিওর ভাবে কিছুই বলতে পারছি না। পেশেন্ট যদি নিজে থেকে রেসপন্স না করে তাহলে আমাদের হাতে নেই কিছুই।”
ডাক্তারের কথা শেষ হতেই অভ্র ও নীরদ পাথরের মতো বসে রইল। কিছুক্ষণ বাদে নীরদ উঠে দাঁড়াল। বিনাবাক্যে চলে গেল কেবিন থেকে। বাইরে আসা মাত্রই পরিবারের সকলে প্রশ্ন শুনে তাদের দিকে একবার তাকিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল হসপিটাল থেকে। কেউ আটকাতে পারল না তাকে।
___
বাসায় এসে রুমের দরজা লাগিয়ে বিছানার পাশ ঘেঁষে ফ্লোরে বসে পড়ল নীরদ। দু’হাত হাঁটুর ওপরে রেখে চুপচাপ বসে রইল। পার হলো কিছু সময়। নীরদের চোখ বেয়ে একফোঁটা, দু’ফোঁটা করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল নিঃশব্দে। একটা সময় এসে আর চুপ থাকতে পারল না। মাথার চুল খামচে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। অর্ঘমার এমন অবস্থা মেনে নেওয়া তার কাছে মৃত্যুসম। বারবার তার মনে একটা কথাই আসছে—সে পারেনি অর্ঘমাকে রক্ষা করতে, পারেনি অর্ঘমার খেয়াল রাখতে। সে একজন ব্যর্থ প্রেমিক। তার জন্যই আজ অর্ঘমার এই অবস্থা। সে যদি অর্ঘমাকে একা আসতে না বলতো তাহলে হয়তো এমন কিছুই হতো না।

চলবে…#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২৭
.
সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর পার হয়েছে প্রায় একমাস। অর্ঘমাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে গতকাল। শারীরিক বা মানসিক কোনো দিক দিয়েই সে সুস্থ নয়। এই এতগুলো দিনে অর্ঘমার মুখ থেকে একটা টু শব্দও কেউ বের করতে পারেনি। নীরদ প্রতিদিন হসপিটালে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অর্ঘমার হাত ধরে তার পাশে বসে থেকেছে। বিভিন্ন মন ভুলানো কথা বলেছে। কিন্তু অর্ঘমা কী এত সহজে ভুলে এসব কথায়? অর্ঘমার মুখ থেকে কথা বের করার জন্য অভ্র আর নিধিও কম চেষ্টা করেনি। কিন্তু তারাও ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশ অফিসার দু’বার এসেছিলেন অর্ঘমার সাথে কথা বলতে। কিন্তু অর্ঘমার অবস্থা দেখে নীরদই তাকে আসতে বারণ করেছে। বলেছে অর্ঘমা যদি কিছু বলে তাহলে সে জানাবে। এর মধ্যে নীরদের বাসার সবাই বেশ কয়েকবার এসে দেখে গিয়েছে অর্ঘমাকে।

বর্তমানে অর্ঘমা ঘুমিয়ে আছে। তাকে জোর করে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়েছে নীরদ। ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলে অর্ঘমা এখন গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। নীরদ বসে আছে তার পাশে। পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তার মাথায়। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার মায়াময় মুখের দিকে। যে মায়াময় মুখটা ঢাকা পড়েছে অসংখ্য কামড় আর খামচির দাগের নিচে। কিন্তু তবুও নীরদের কাছে সেটা মায়াময় মুখ। তার ভালোবাসা এত ঠুনকো নয় যে এতটুকুতেই হারিয়ে যাবে। চেহারার কী? কয়েকদিন বাদে আবার ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মেয়েটার মনের ভেতরে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তার কী হবে? সেটা কীভাবে ঠিক হবে? অর্ঘমার এই নিস্তব্ধতা নীরদকে ঠিক কতটা পোড়াচ্ছে তার বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই অর্ঘমার। ধারণা থাকলে হয়তো সে চুপ থাকতে পারত না।

অভ্র রুমে ঢুকে এমন একটা দৃশ্য দেখে মুচকি হাসল। কিন্তু পরক্ষণেই তার হাসিটা মিলিয়ে গেল। অন্য চিন্তায় তার মনের ভেতরটা ছটফট করছে। নিঃশব্দে নীরদের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার কাঁধে হাত রাখল। পেছন ঘুরে তাকাল নীরদ। অভ্র তাকে ইশারা করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। অর্ঘমার গায়ের কম্বলটা ঠিকঠাক করে দিয়ে নীরদও গিয়ে দাঁড়াল অভ্রর পাশে।

অন্ধকার আকাশ মেঘে ঢেকে আছে। তারার দেখা নেই বেশ কয়েকদিন যাবৎ। সেদিকে তাকিয়েই অভ্র বলল,
-“তারপর কী ভেবেছিস?”
-“কোন ব্যাপারে বলছ?”
-“তুই চাইলে এই বিয়েটা ভেঙে দিতে পারিস। কেউ কিচ্ছু বলবে না তোকে। পরিস্থিতিটা সবাই জানে।”
মৃদু হাসল নীরদ। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
-“তোমার কেন মনে হলো আমি বিয়েটা ভাঙতে চাই?”
-“এমন একটা ঘটনার পরও তুইও বিয়ে করতে চাস অর্ঘমাকে?”
-“না করার কী আছে? দোষ তো ওর না। দোষ আমার। আমার জন্যই আজ ওর এই অবস্থা।”
-“করুণা করতে চাইছিস ওকে?”
-“সেই সাধ্য আমার নেই ভাইয়া। অর্ঘমাকে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি। ওকে ছাড়া থাকতে পারব না। আর ভালোবাসায় করুণা করা সাজে না।”
-“তোর পরিবার এখনো মেনে নিবে অর্ঘমাকে?”
-“নিবে। আমি যদি খুশি থাকি তাহলে তারা না করার কে?”
-“অথচ তোর মা এসে বিয়ে ভেঙে দিয়ে গেছে আজ।”
বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকাল নীরদ। অভ্র সেই দৃষ্টি দেখে মলিন হাসল। সে-ও দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
-“আন্টি বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন। আর বলে গেছেন তোকে যেন বুঝাই এসব পাগলামি ছাড়তে। আশেপাশের সবাই এখন জানে অর্ঘমা ধর্ষিতা। এমন একজনকে তোর বউ করলে তিনি সমাজে মুখ দেখাতে পারবেন না। এখনই সবাই তাকে খোঁচা মেরে কথা বলে। তাই এই বিয়ে সম্ভব না।”
-“বিয়ে আমি অর্ঘমাকেই করব। যে যা-ই বলুক আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে নড়ছি না। আমি ওকে ওর শারীরিক সৌন্দর্য দেখে তো ভালোবাসি নি। তাহলে ও ধর্ষিতা কিনা সেটা কেন দেখতে যাব?”
-“তুই বুঝতে পারছিস না নীরদ।”
-“আমি সবই বুঝতে পারছি ভাইয়া। এই ব্যাপারে আর কোনো কথা হবে না। তুমি ভালো মতোই জানো আমি ওর জন্য ঠিক কতটা পাগল। তবুও তুমি কীভাবে আমাকে চলে যেতে বলছ ওর জীবন থেকে?”
-“পরিস্থিতি বিবেচনা করেই বলেছি।”
-“পরিস্থিতি আগে না তোমার বোন আগে? তোমার কী মনে হয় আমি চলে গেলে অর্ঘমা ভালো থাকবে? একদমই না। বরং এর থেকেও বেশি ভেঙে পড়বে। তাই বলছি এই ব্যাপারে আর কোনো কথা হবে না। অর্ঘমা একটু ঠিক হলেই আমি বিয়েটা সেরে ফেলব। কোনো অনুষ্ঠানের দরকার নেই। সংসার আমি করব, বাইরের মানুষজনরা করবে না যে তাদের কথা আমার শুনতে হবে।”
নিজের কথা শেষ করে হনহনিয়ে রুমে ঢুকে গেল নীরদ। গিয়ে বসল অর্ঘমার পাশে। ঘুমের মাঝে অর্ঘমার চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়ছে। তা দেখে আলতো হাতে সেই অশ্রু মুছে দিল নীরদ। আজকাল বেশিরভাগ সময়ই সে এখানে থাকে। তার চাকরিটাও সে স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছে। এভাবে রোজ রোজ ছুটি কাটালে তার চাকরি এমনিতেও টিকত না। অর্ঘমা আগে সুস্থ হোক তারপর নাহয় আবার চাকরি খোঁজা যাবে।
___
সময়টা তখন বিকেল। অর্ঘমা হাত-পা গুটিয়ে বিছানায় বসে তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। ওখান দিয়ে দেখা যাচ্ছে বাইরের মনোরম পরিবেশ। ছাদে যেতে ইচ্ছে করছে তার। বিগত প্রায় মাসখানেক যাবৎ সে ঘরে বসে আছে। নিজের রুম থেকেও বের হয়নি। মুখের সকল দাগ মিলিয়ে গেলেও হালকা দাগ রয়ে গেছে। শরীরের দাগগুলো এখনো আছে। আজ নীরদ আসেনি বাসায়। অর্ঘমারও সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। নিধি ভার্সিটি থেকে আসেনি। অভ্রও অফিসে। তার বাবা ব্যবসার কাজে বাইরে আছেন। মিনা বেগম পাশের রুমে আছেন হয়তো। অর্ঘমার এত বড় একটা দূর্ঘটনার কথা শোনার পরও একটি বারের জন্য তাকে দেখতে আসেননি মিনা বেগম। মানুষ এতটাও নির্দয় হয়?

বিছানা ছেড়ে উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল অর্ঘমা। নিজেকে দেখল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। এতগুলো বছর যেই শরীরে অন্য কোনো পুরুষের স্পর্শ লাগতে দেয়নি, সেই শরীরটাকেই খুবলে খুবলে খেয়েছে ওই নর্দমার কীটগুলো। নোংরা করে দিয়েছে তার শরীরটাকে। কলঙ্কিত করেছে তাকে। এই মুখ নিয়ে বাইরে যাওয়ার সাহস তার নেই। পাছে পাড়া-প্রতিবেশিরা যদি কটুক্তি করে কিছু বলে ফেলল তখন? সইতে পারবে না অর্ঘমা। অতো শক্ত মনমানসিকতা তার কোনো কালেই ছিল না। এই ঘটনার পর তো একদমই ভেঙে পড়েছে। নিজের চেহারা দেখতে নিজেরই ঘেন্না লাগছে। তার চোখ ফেটে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।

চোখের পানি মুছে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মনে পড়ে গেল গতকাল রাতের কথা। নীরদ তাকে গতকাল অনেক বুঝিয়েছে। তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে পর্যন্ত! অর্ঘমার নীরবতা সে সহ্য করতে পারছে না। এসব বলার পরও অর্ঘমা নীরব ছিল। সেই রাগে নীরদ বেরিয়ে গেছে বাসা থেকে। আজ এখনো পর্যন্ত আসেনি ছেলেটা। ভীষণ অভিমান করেছে হয়তো। অর্ঘমা জানে নীরদ আসবে। সে শতভাগ নিশ্চিত।

নতুন ফোনটা অবহেলায় পড়ে আছে বিছানার একপাশে। এটা অভ্র এনে দিয়েছে। নতুন সিমও লাগিয়ে দিয়েছে। কিছু একটা ভেবে অর্ঘমা কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা তুলে নিল। ইতোমধ্যে সকল আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশি সবাই জেনে গেছে তার সাথে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনার কথা। অনেকে এসেও ছিল তাকে স্বান্তনা দিতে কিন্তু তাদের রুমে আসতে দেয়নি অভ্র বা নীরদ। এদের কাজই অন্যকে খোঁচানো। অর্ঘমার মনের অবস্থা এমনিতেই শোচনীয়। এদের কথা শুনে মেয়েটা পরে আরও বেশি ভেঙে পড়বে।

ফেসবুকে লগ ইন করা মাত্রই শত শত ম্যাসেজের ভিড় এসে জমা হলো ফোনে। অনেকে তাকে ট্যাগ দিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করেছে। সবই বসে বসে দেখল অর্ঘমা। স্বান্তনার নাম করে সবার সামনে তাকে একজন ধর্ষিতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সকলে। বড্ড হাসি পেল অর্ঘমার। সব দেখতে দেখতে একসময় জোরে জোরে হাসতে লাগল। হাসতে হাসতেই একসময় চিৎকার করে কেঁদে উঠল। তার চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে মিনা বেগম ছুটে এলেন। রুমের সামনে এসে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন। ভেতরে ঢুকলেন না। সেই ঘটনার পর আজ প্রথম অর্ঘমার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে পেলেন তিনি। তাই কিছুটা অবাক হয়েই ছুটে এসেছেন। মিনিট দুয়েক দাঁড়িয়ে থেকে আবারও নিজের রুমে চলে গেলেন।

অর্ঘমা কান্না করতে করতে হাতের ফোনটা ছুঁড়ে মারল ড্রেসিং টেবিলের দিকে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটা ভেঙে কাচগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল চারপাশে। জোরে চিৎকার করে হাঁটু মুড়ে ফ্লোরে বসে পড়ল সে। নখ দিয়ে নিজের সারা শরীরে পাগলের মতো আঁচড় কাটতে লাগল। যেন কোনো বিষাক্ত কিছু তার শরীরে ছেড়ে দিয়েছে কেউ।
কিছুক্ষণ পর ঝড়ের বেগে নীরদ এসে ঢুকল তার রুমে। ফ্লোরে বসে তাকে জড়িয়ে ধরল। তবুও থামল না অর্ঘমা। তাকে থামাতে না পেরে তার দু’হাত শক্ত করে চেপে ধরে তাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইল। অর্ঘমা ছোটার জন্য অনেক চেষ্টা করেও পারল না। কাঁদতে কাঁদতে একসময় সেভাবেই ঢলে পড়ল সে নীরদের বুকে। নীরদ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিল। তার বন্ধ চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রুবিন্দু।

এখনো শরীর কাঁপছে নীরদের। হাত-পা কিছুটা ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভব করছে। একটু আগে মিনা বেগমের কল পেয়ে সে ছুটে এসেছে। ভাগ্যিস বাসার কাছেই ছিল। নাহলে আজ অর্ঘমা নিশ্চিত কোনো একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলত। অর্ঘমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় তার বুকের মধ্যে চেপে বসেছে কিছুদিন যাবৎ। তার বাসা থেকে তার মা-বাবা চাপ দিচ্ছে অর্ঘমার থেকে দূরে থাকার জন্য। অর্ঘমার ব্যাপারে এখন তার সামনে নুসরাত হ্যাঁ-ও বলছে না আবার না-ও বলছে না। কিন্তু তবুও বোনের ভাবসাব দেখে নীরদ বুঝতে পারে তার বোনও তার বাবা-মায়ের পক্ষকেই সমর্থন করছে। ইদানিং নীরদ খেয়াল করেছে নুসরাত তার সামনে সবসময় নিজের ননদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকে। এতে নুসরাতের মনোভাব বুঝতে সমস্যা হয় না নীরদের। নুসরাত চাচ্ছে নিজের ননদকে নীরদের গলায় ঝুলাতে। কিন্তু সব বুঝেও নীরদ নির্লিপ্ত থাকে।

অর্ঘমাকে কোলে তুলে বিছানায় ঠিকভাবে শুইয়ে দিয়ে তার গায়ে কম্বল টেনে দিল। অর্ঘমার মুখের দাগ গুলো প্রায় মিলিয়েই গিয়েছিল কিন্তু আজ নিজেকে আঘাত করে পুনরায় দাগ বসিয়ে ফেলেছে মেয়েটা। নীরদ অসন্তোষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অর্ঘমার শুঁকনো মুখের দিকে। ক্ষত স্থানগুলো থেকে হালকা হালকা রক্ত ঝরছে। স্যাভলন নিয়ে এসে অর্ঘমার পাশে বসল নীরদ। ক্ষতস্থান গুলোতে স্যাভলন লাগিয়ে দিল। অর্ঘমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অর্ঘমার একটা হাত নিজের এক হাতের মাঝে তুলে নিয়ে চোখ বন্ধ করে কপাল ঠেকিয়ে বলল,
-“তুমি আমায় একটুও ভালোবাসো না অর্ঘ। যদি বাসতে তাহলে বুঝতে তোমার নির্লিপ্ততা আমায় কতটা কষ্ট দেয়। আজ তোমার সাথে যা হয়েছে এর জন্য তুমি যতটা না কষ্ট পাচ্ছ, তার থেকেও কয়েকগুণ বেশি কষ্ট আমি পাচ্ছি। নিজের ভালোবাসার মানুষের এই অবস্থা ক’জনই বা মেনে নিতে পারে? আমিও পারছি না। তোমার এই অবস্থার জন্য দায়ী আমি। তুমি আমায় শাস্তি দাও। তবুও নিজেকে এভাবে কষ্ট দিয়ো না, আঘাত করো না। তোমার শরীরের প্রতিটা আঘাত আমার মনকে বারংবার ক্ষত-বিক্ষত করে। এসব যদি তুমি জানতে তাহলে কখনো নিজেকে কষ্ট দিতে না। তুমি কী তবে এভাবেই আমাকে শাস্তি দিচ্ছ? এতটা কঠিন? এর থেকে যদি আমায় মৃত্যুদন্ড দিতে তা-ও বোধহয় কষ্ট কম হতো।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here