#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_৩২(১)
#নন্দিনী_নীলা
দুইদিন গ্রামে কাটিয়ে তৃষ্ণা, জায়ান বাসায় এসে পৌঁছেছে। বকুল তৃষ্ণা’দের সাথে যাওয়ার জন্য অনেক জোরাজুরি করেছিল কিন্তু ওর মা যেতে দেয় নাই। তৃষ্ণা, জায়ান ও নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু বকুলের মা রাজি হয়নি। রাজি না হওয়ায় একমাত্র কারণ হলো ওদের এখন সরিষা নিতে হবে এই সময় মেয়ে চলে গেলে উনি একা কাজ করবে কি করে। মেয়ে থাকলে তো একটু সহায়তা হয়। ছেলে ছেলের বউ তো বাড়ি ফেলে চলে গেছে এখন বাড়ির সব কাজ উনা’কেই একা করতে হয়। তৃষ্ণা ও ব্যাপার’টা বুঝতে পেরে বোনকে বলেছে কয়েকদিন পরে উর্মির বিয়ে, তখন ওকে নিতে গাড়ি পাঠাবে ও যেন তখন যায় এখন না। বকুল গাল ফুলিয়ে চেয়েছিল শুধু। শহরে যাওয়ার কারণ এবার জোভান ছিল। অনেক দিন ধরেই তার কোন পাত্তা নাই। কত ভালবাসা না তখন দেখাই ছিল এখন সব ফুস হয়ে গেছে। এতো দিন হয়ে গেল তার খবর নাই। কিন্তু নিজেও যেতে পারল না। তাই মন খারাপ করে বসে আছে উঠানে।
” বকুল কইরে…” বকুলের মা ডাকছে।
” আম্মা কি হইছে? দেখ না বইসা রইছি। ডাকো ক্যান?”
” তেজ দেখাস কারে তুই। কাজে হাত লাগা। দেখস না সরিষা তুলতাছি তুই দেইখাও বইসা রইছিস উঠ কইতাছি।”
” দেখ আম্মা আমার ভাল লাগতাছে না তুমি করতে পারলে করো। নয়তো আব্বা রে ডাইকা আইনা করাও। আমারে ডাকবা না।”
” ঝাড়ুর বাড়ির খাইবার না চাইলে তাড়াতাড়ি আয়। কইছি না কয়দিন পর নিয়া যাইব তাও সং এঁর মতো বসে আছিস।”
” আমার আজকেই যাইতে মন চাইছিল তোমগো লিগা যাইতে পারলাম না। এই কয়ডা কাজ তুমি করবার পারবা না। আমারে লাগে সব কিছুতে। বুবুর নাগাল আমারো বিয়া হইয়া গেলে তুমি কি কাজ না কইরা খাইবা?”
” মাইয়া মানুষের এতো মুখে মুখে তর্ক করা লাগে না। তোর যা স্বভাব তুই দুইদিন ও শশুর বাড়ি টিকতে পারবি না। আমার তৃষ্ণা তো তোর মতো মুখে মুখে তর্ক করে না। শান্ত শিষ্ট আছিল তাই তো এতো বড়ো ঘরে বিয়া দিতে পারছি। সুখে সংসার করছে।”
বকুল ভেংচি কেটে ঝাড়ু হাতে নিল। অতঃপর কাজ করতে লাগল বাধ্য হয়ে।
_________________________
বাসায় আসতেই জায়ান আর আয়ানের মধ্যে তর্কাতর্কি লেগেছে। তৃষ্ণা দূরে দাঁড়িয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। বাসার প্রত্যেকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। আয়ান ক্রোধে ফেটে এগিয়ে এসে জায়ানের কলার চেপে ধরে বলল,,” তুই চক্রান্ত করে আমাকে জেলে পাঠাই ছিস। নিজে বউ নিয়ে ফুর্তি করে ঘুরে বেড়াস আর আমাকে ওই জেলে বন্দি করে রাখিস। তোর সব অত্যাচার সহ্য করেছি আর না। নিজে উল্লাস করবি আর আমি শুধু সাফার করব তাই না। আর না। এই আয়ান আর কিছু মুখ বুজে সহ্য করবে না।”
জায়ানের চোখ রাগে রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। সবাই জায়ানের মুখমন্ডল দেখে ভয়ে সিটিয়ে যায়। জেসমিন বেগম দৌড়ে এসে আয়ান কে টেনে সরিয়ে আনতে চায় জায়ানের থেকে কিন্তু আয়ানকে সরানো যাচ্ছে না। আয়ানের বাবা বাসায় নাই। দুইজন গার্ড এসে টেনে সরাতে যাবে জায়ান হাত উঁচু করে থামিয়ে দেয় তাদের। তারা মাথা নিচু করে সরে দাঁড়ায়।
হাত মুঠো করে এক ঘুসি মারে আয়ানের নাক বরাবর আর আয়ান ছিটকে ফ্লোরে পরে যায়। জায়ান আবারো এগিয়ে লাথি মারে পেটে। মুখে কোন কথাই বলে না। জেসমিন বেগম জাপ্টে ধরে ছেলেকে আটকায়।
” ওকে ছেড়ে দে বাবা। ও মরে যাবে। ওর শরীরের দিকে একবার তাকায় দেখ ছেলেটা জেল খেটে একটু খানি হয়ে গেছে আর মারিস না।”
” ওর সাহস কিভাবে হলো আমার দিকে আঙুল তোলার। আমার গায়ে হাত বাড়ায় কোন সাহসে? এক ঘুসি’তে মাটির সাথে মিশে যায় ও আসছে জায়ানের দিকে আঙুল তুলতে এতো স্পর্ধা।”
হুংকার দিয়ে বলল জায়ান। আয়ানের নাক দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত ঝরছে। জায়ান রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। তৃষ্ণা আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে ঢোক গিলে। আয়ান হঠাৎ ওর দিকে তাকাল। এই অবস্থায় ও কেমন নোংরা চোখে শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে। তৃষ্ণা নিজের শাড়ির আঁচল টানতে টানতে রুমে চলে এলো।
জেসমিন বেগম ছেলেকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিল। লিয়াকে দিয়ে ফাস্ট এইড বক্স এনে নাকের রক্ত মুখে দিল। আয়ান শক্ত হয়ে বসে বলল,, ” দেখেছ কেমন পশুর মতো মারল ও আমায় মানুষ মনেই করে না। সবসময় নিজ স্বার্থে শুধু ইউজ করে আর সব ঝড় এনে আমার কাঁধে ফেলে। আর কিছু বলতে গেলেই এভাবে মারে। গায়ের জোর দেখায়। আমার কি গায়ের জোর নাই? চাইলে আমিও মারতে পারতাম কিন্তু ওকে আমি মারতে পারি না ও আমার ভাই। আমরা যমজ ভাই এটা ও ভুলে গেলেও আমি ভুলি না কখনো।”
জেসমিন বেগম কিছু বলল না।
আয়ান মনে মনে বলল,” গায়ের জোরে জায়ানের সাথে না পারলেও বুদ্ধির ক্ষেত্রে আমিই সেরা। আমার বুদ্ধির কাছে জায়ান তো শিশু।”
বলেই শয়তানি হাসি দিল।
____________________________
তৃষ্ণা আজ অনেক দিন পর সেই পাগলটার রুমে কাছে এসে উঁকি ঝুঁকি মারছে। বাইরে থেকে তালা দেওয়া তাই ভেতরে যাওয়ার সুযোগ নাই ও এটা ভেবেই এসেছে। বাইরে থেকেই রুমটা দেখতে। কিন্তু আজ ওর জন্য এক চমক রেডি ছিল এখানে। ও না আসলে জানতেই পারত না। আজ দরজা তালা দেওয়া নাই। তালা ঝুলিয়ে রাখা শুধু। মনে হয় তালা দিতে ভুলে গেছে। সেদিনের সেই ভয়াবহ কান্ডের কথা মনে হতেই ও ফিরে আসতে চায় কিন্তু আরেকবার ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছে’টাকেও দমাতে পারছে না।
এদিক ওদিক তাকিয়ে তৃষ্ণা দরজার ছিটকিড়িতে হাত দেয়।
ওর হাত পা কাঁপছে ভয়ে। তবুও সাহস দেখাতে ভুল করছে না। দরজাটা ঠাস করে খুলে নিজের গলা উঁচু করে মাথা ঢুকিয়ে উঁকি মারে। দেখতে পায় পাগলটা হাতে খাতা কলম নিয়ে কি যেন লিখছে। দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে লাল চোখ মেলে ওর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালে। চাহনি দেখেই তৃষ্ণার হৃদস্পন্দন কেঁপে উঠল। ও তাড়াতাড়ি দরজা থেকে মাথা সরিয়ে নেয়। আর দ্রুত দরজা আটকাতে যায়। ভয়ে ওর হাত অস্বাভাবিক মাত্রায় কাঁপছে।এদিকে পাগলটা ছুটে এসে দরজার ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে। তৃষ্ণা ভয়ে পিছিয়ে গেছে। দরজা না আটকে পালাতে যাবে তার আগেই পাগলটা ছুটে এসে তৃষ্ণার আঁচল টেনে ধরে। তৃষ্ণা হার্ট ফেল করবে এমন করে বুকে হাত দিয়ে থরথরিয়ে কাঁপছে। নিজেকে বকছে অনবরত কেন আসতে গেল এই বিপদে আজ আর রক্ষে নাই। এই পাগলের হাত থেকে তো নাই ই আর জায়ান জানলে কি করবে আল্লাহ তাআলা জানেন।
” ঐই মিষ্টি বউ আয় না আমার কাছে।”
তৃষ্ণা পাগলটার এতো সুন্দর কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে গেল। বিস্মিত নয়নে ফিরে তাকালো পাগলটার দিকে। পাগলটা গোল গোল চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও চাইতেই হাসল দাঁত বের করে। তৃষ্ণার বমি আসতে চাইল পাগলটার দাঁত কালো কুচকুচে হয়ে গেছে কত কাল ধরে দাঁত ব্রাশ করে না যে। মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ এসে নাকে লাগল। ও কথা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। পাগলটা ওর হাত ধরে চুমু দিয়ে বলল,,” কি সুন্দর আমার জায়ানের বউ। পরীর মতো বউ।”
তৃষ্ণা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে আজ হিংস্রতা দেখাচ্ছে না কেন? এতো সুন্দর করে কথা বলছে কেন? স্তব্ধ হয়ে চেয়ে আছে পাগলটার শান্ত চোখে দিকে। জায়ানের বউ জেনেই কি এতো সোহাগ করছে? জায়ানের প্রতি এই পাগলের এতো টান কেন?
তৃষ্ণা ভয় কেটে গেছে পাগলটার ভালো আচরণ পেয়ে ও কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। পাগলটা ওকে নিয়ে নিজের রুমে এলো। রুমের অবস্থা এতো নোংরা যে ওর দম আটকে আসতে চাইল। কিন্তু তার সাথে ওর খারাপ ও লাগল। ইশ কি নোংরা জায়গায় উনি থাকেন। একটু পরিষ্কার করার মানুষ ও নাই। আহারে খুব মায়া লাগছে ওর। পাগলটার বিছানা পরিষ্কার ও একপাশে জড়োসড়ো হয়ে বসল।
পাগলটা মাথা চুলকে বলল,,” তুই তো খুব সুন্দর ঠিক আমার মতো।”
বলেই খিলখিলিয়ে হাসতে লাগল। তৃষ্ণা পাগলটার হাসির শব্দ ভয়ে ঘামতে লাগল। যতই ভালো আচরণ করুক তিনি পাগল তারে দেখে ওর ভয়টাই বেশি আসছে।
তৃষ্ণা উঠে চলে আসতে যাবে পাগলটা হাত টেনে ধরে বলল,,” যাইস না আমার সাথে থাক। তোর সাথে অনেক গল্প করব। কেউ আমার কাছে থাকে না গল্প করে না। আমার খুব কষ্ট হয়। ওইদিন তোরে মারছিলাম বলে চলে যাচ্ছিস তাই না?”
চোখ দিয়ে গলগলিয়ে পাগলটার জল পরছে তৃষ্ণা এমন অবস্থা দেখে নিজেও কান্না করে দিল। খুব বেশিই মায়া লাগছে পাগলটার জন্য। কি অসহায় আবদার করছে।
কিন্তু কেউ চলে আসে যদি। আর এখানে ওকে দেখে নেয়! কি হবে তখন?
#চলবে…..#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_৩৩(১)
#নন্দিনী_নীলা
বাসার একমাত্র মেয়ের বিয়ে।
আত্নীয় স্বজন দিয়ে বাসা ভরপুর। বাগানে বিশাল প্যান্ডেল সাজানো হচ্ছে। এতো আত্নীয় স্বজন আসছে যে কাউকেই তৃষ্ণা চিনেই না। সবার অপরিচিত মুখ। অদ্ভুত ভাবে তৃষ্ণা কে সবাই চিনে। তৃষ্ণাকে সবাই জায়ানের বউ বলে ডাকে। উর্মির নানু আসছে বয়স্ক মহিলা তিনি সারাদিন নাতবউ, নাতবউ বলে ডাকাডাকি করেন তৃষ্ণা কে। আগামীকাল উর্মির গায়ে হলুদ। আজকেই যেন বিয়ে বাড়ি এতো আত্নীয় স্বজন বাসায় এসেছে। তৃষ্ণার ভালোই লাগছে এতো মানুষের মাঝে। কার সাথে কি সম্পর্ক জানার জন্য ও এগিয়ে এগিয়ে থাকে। সবাই নিজ থেকেই তৃষ্ণা কে পরিচয় দিয়ে যায়।
তাদের প্রথম কথাই থাকে,,” এই তো আমাদের জায়ানের বউ। আমি তোমার খালা শাশুড়ি।”
এভাবে কে কি লাগে পরিচয় দেয়। ভালোই হয়েছে না হলে তো ও চিনতোই না।
তৃষ্ণা একটু পর পর দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে কারো অপেক্ষায়। আজ বকুলের আসার কথা। সাথে ভাই ও ভাবিকে ও বলা হয়েছে তারা শহরেই আছে কাল আসবে বলেছে। আব্বা মা আসবে না বাড়ি খালি রেখে।
তৃষ্ণাকে হঠাৎ ডাকল একজন মহিলা এটা হচ্ছে জায়ানের ফুপি। তার হাতে খাবারের প্লেট।
তৃষ্ণা কাঁচুমাচু মুখ করে এগিয়ে গেল। এই মহিলা ওকে একটুও পছন্দ করে না। আজ হঠাৎ ডাকছে কেন? আগেও তিনি এই বাসায় এসেছে তার দু’জন যমজ ছেলে মেয়ে নিয়ে।
তখনো তিনি ওকে এরিয়ে যেতো আর কেমন অদ্ভুত নজরে ওর দিকে তাকাতো।
তৃষ্ণা তার কাছে এসে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে শোনার জন্য কি বলতে ডাকল।
তার হাতের খাবারের প্লেট তৃষ্ণার হাতে দিয়ে বললেন তার ছেলেকে খাইয়ে দিতে। তৃষ্ণা হ্যা না কিছুই বলতে পারল না। তিনি বলেই ভেতরে চলে গেল অর্ডার করে। তার ছেলে কোথায়? কাকে খাওয়াবে।
তৃষ্ণা প্লেট হাতে নিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
চোখ দুটো তার ছেলেকে খুঁজচ্ছে।
বাগানের দিকে তার মেয়ে কে দেখে তৃষ্ণা বাইরে এলো। খাবারের প্লেট নিয়ে হাঁটতে কেমন জানি লাগছে এতো মানুষের মধ্যে।
” এই শোভা দাঁড়াও।”
শোভা ভাবি বলে দৌড়ে এলো।
” তোমার ভাই কই?”
” ভাবি আমার জন্য কি খাবার নিয়ে এসেছ?”
” তোমার মা খাবার তো তোমার ভাইয়ের জন্য পাঠাল। তোমার ও কি খিদে পেয়েছে?”
” হ্যা অনেক।”
” আচ্ছা দুজনকেই খাইয়ে দেব। শোভন কোথায়? ওকে নিয়ে আসো ডেকে তারপর।”
” আচ্ছা।”
দৌড়ে চলে গেল। তৃষ্ণা এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে বসল। গায়ে হলুদের স্টেজ সাজানো হচ্ছে তৃষ্ণা তাকিয়ে দেখছে। কি সুন্দর হচ্ছে সাজানো। হঠাৎ একটা ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিল। তৃষ্ণা চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলল। ছেলেটা ওকে পটানোর চেষ্টা করছে।
তৃষ্ণা উঠে চলে আসতে যাবে শোভন আর শোভা চলে আসে।
শোভন তৃষ্ণা কে দেখে বলে,,” আমি তোমার কাছে খাব না। তুমি পঁচা আম্মু বলেছে।”
তৃষ্ণা চোখ ছলছল করে উঠল।
শোভা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,” ভাবি কত সুন্দর। কত ভালো, তুই পঁচা কেন বললি?”
শোভন বলল,,” আম্মু পঁচা বলেছে। আমি খাব না পঁচা মানুষের হাতে।”
শোভা রাগী চোখে শোভনের দিকে তাকিয়ে বলল,,” আম্মু মিথ্যা বলেছে। ভাবিকে তুই পঁচা বলবি না।”
” তোর ভালো লাগে তুই খা আমি খাব না।”
বলেই দৌড়ে শোভন চলে গেল বাসার ভেতরে। শোভা শোভন কে বকছে।
তৃষ্ণা বলল,,” তোমার মা তো আমাকে পঁচা বলেছে তাও তুমি আমায় ভালো বললে যে।”
” আমার কাছে তো তোমায় অনেক ভালো লাগে। আম্মু তোমায় পঁচা কেন বলে?”
” জানি না।”
” ভাবি তুমি কেঁদো না আমাকে খাইয়ে দাও।”
” ছোট হলে কি হবে তুমি তো একটা পাকা বুড়ি।”
” আমি তো ছোট না আমি ফাইভে পড়ি।”
তৃষ্ণা শোভা কে খাইয়ে দিল।
শোভনের কথায় মনটা খারাপ হয়ে গেছিল। শোভার আচরণে ততটাই ভালো লেগেছে।
বকুল আসলো সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে। গতবার এসে কেমন নিস্তব্ধ পরিবেশ পেয়েছিল এবার পেল হইহুল্ল পরিবেশ। এতো আত্নীয় স্বজন তাদের চালচলন, পোশাক দেখে ও চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে। কাউকে ও চেনে না পরিচিত কাউকে দেখছেও না। চোখ ভরা বিষ্ময় নিয়ে ও ভেতরে এলো। তৃষ্ণার রুমে এসে তৃষ্ণা কে পেল না। তৃষ্ণা গেছে জায়ানের নানুর কাছে।
বকুল তৃষ্ণা কে না পেয়ে জোভান কে খুঁজতে লাগল। দুজনের কাউকেই পাচ্ছে না।
মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে তখনি ওর পাশ দিয়ে আয়ান যাচ্ছিল বকুল জায়ান ভেবে দুলাভাই বলে ডেকে উঠে।
আয়ান বিরক্তিকর চোখে পেছনে ঘুরে তাকায়। বকুল কে দেখে ও চমকে উঠে।
” দুলাভাই বুবু কই?”
আয়ান বুঝে গেছে বকুল ওকে জায়ান ভাবছে ও এদিক ওদিক তাকিয়ে মনে মনে শয়তানি হাসি হাসে। মুখে বলল,” তোমার বুবুকে তো আমিও খুঁজছি। আসো দু’জনে মিলে খুঁজি। তুমি কখন আসলে?”
” এইমাত্র আসলাম। পরিচিত কাউকে দেখছি না। কত মেহমান আসছে আপনাদের।”
” আচ্ছা চলো ওদিকটায় দেখি।”
বলেই আয়ান এগিয়ে বকুলের হাত ধরে নিল। বকুল চমকে হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। দুলাভাই তো কখনো ওকে স্পর্শ করে না। দূরত্ব রেখে কথা বলে আজ এমন করছে কেন?
বকুলকে নিয়ে আয়ান নিরিবিলি জায়গায় চলে এসেছে। বকুলের মাথা থেকে আয়ানের কথা বেরিয়ে গেছে ও চারপাশে তাকিয়ে বলল,,” এখানে তো কেউ নাই। বুবু কই দুলাভাই?”
আয়ান বকুলের হাত শক্ত করে চেপে ধরে এক টানে বকুল কে সামনে এনে দাড় করালো।
বকুল ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল।
” কি করছেন দুলাভাই ছাড়ুন?”
” আমি তোর দুলাভাই না। আমি আয়ান।”
বকুল সেই রাতে কথা মনে করতেই ভয়ে ঘামতে লাগল। দুলাভাই কে চিনতে ও আবার ভুল করল। এই লোকটা তো ভাল না খারাপ, প্রচুর খারাপ। ও ভয়ে কান্না করে দিল।
” ছাড়ুন আমাকে। আমি বুবুর কাছে যাব।”
আয়ান বকুলের চুলের মুঠি টেনে ধরে বলল,,” তোর বোনের জন্য আমার অনেক শাস্তি পেতে হয়েছে। শুধু মাত্র একটু ছুঁয়ে ছিলাম বলে। আজ তার শোধ তুলব তোকে দিয়ে।
বলেই আয়ান বকুল কে টেনে পাশের রুমে সজোরে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে দিল। বকুল চিৎকার করে বুবু বলে ডাকছে।
আয়ান দরজা শব্দ করে আটকে দিল ভেতরে ঢুকে।
বাইরে মানুষের চেঁচামেচির গান বাজনার জন্য বকুলের আর্তনাদ কারো কানে এসে পৌঁছাল না।
আনন্দ করতে এসে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে হবে বকুল কল্পনা ও করতে পারেনি। বদ্ধ ঘরে বকুলের চিৎকার এ রুমটা কেঁপে কেঁপে উঠল। আয়ান অমানুষিক নির্যাতন করল মেয়েটার উপর।
_______________________________
” বকুলের তো আজকেই আসার কথা ছিল ও কেন আসলো না বলেন তো।”
জায়ান কিছু বলল না।
” আজকেই তো গাড়ি পাঠালেন তাহলে..।”
” ওরা ফিরে এসেছে বকুল নিজেই নাকি আসবে না বলেছে।”
” ওইদিন নিয়ে আসিনি তাই রাগ করেছে বোধহয়।”
” হতে পারে।”
তৃষ্ণা মুখ গোমড়া করে বসে আছে। বোনের জন্য ওর অন্তর জ্বলে যাচ্ছে। কত অভিমান করেছে বোনটা। চাইলে তো ও এখন যেয়ে রাগ ভাঙাতে পারবে না। জায়ান তৃষ্ণার গালে হাত রেখে বলল,,” মন খারাপের করো না।”
” আমার কষ্ট হচ্ছে। বকুল রাগ করেছে আমার উপর।”
” এখন তো নিয়েও যেতে পারব না। এই পরিস্থিতিতে।”
” হ্যা। কিন্তু ওর এতো অভিমান মানতে পারছি না। ও তো এখানে আসার জন্য পাগল আর আজ সুযোগ পেয়েও আসলো না কেন?”
জায়ান তৃষ্ণার হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেয়ে বলল,,” উফ জান একটু হাসো তো।”
তৃষ্ণা অবাক গলায় বলল,,” এখন আমার মন খারাপ। আমি বোনের জন্য কষ্ট পাচ্ছি আপনি হাসতে বলছেন?”
জায়ান বলল,,” হ্যা হাসতে বলছি। বিকজ তোমার মুখ মলিন থাকলে আমার বুকে ব্যথা করে। আজ অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। ক্লান্ত লাগছে, মাথা ব্যথা করছে। এই অবস্থায় তোমার মুখটা এমন দেখলে আমার কষ্ট হয়। দিন শেষে আমি তোমার মুখে হাসি দেখতে চাই। যেই হাসি আমার সমস্ত ক্লান্ত দূর করে দিবে। তাই আমার সামনে মুখ গোমড়া করে থাকবে না। তোমার মুখের হাসি আমার সুখের উপায়।”
তৃষ্ণা জোর করে মলিন মুখে হাসি টেনে বলল,,,” আপনার জন্য আমি সব করতে পারি। আপনি আমার ভাল থাকার কারণ। আমার একমাত্র ভরসাস্থল।”
“তুমি টেনশন করো না। শালিকার রাগ ভাঙাতে বিয়ে শেষ হোক গ্রামে যাব আমরা।”
তৃষ্ণা উত্তেজিত গলায় বলল,,” সত্যি?”
” ইয়েস মহারানী।”
_____________________________
তৃষ্ণার ভাই ভাবি হলুদের দিন আসবে বলেও আসলো না। তৃষ্ণা সবার এমন কাজে স্তব্ধ হয়ে গেল।
বিয়ের আনন্দ করছে সবাই তৃষ্ণার মনটা বিষন্নতা ভরা।
” ভাবি আসব?”
জোভান নক করল দরজায়।
তৃষ্ণা উঠে দাঁড়িয়ে আসার অনুমতি দিল।
“ভাবি তোমার বাবা বাড়ি থেকে কেউ আসলো না?”
” না আসলো না তো। বকুল রাগ করে আসলো না। আর ভাই ভাবি রাজি হয়ে ও আসলো না কেন জানি না।”
” বকুল রাগ করেছে কেন?”
” আমরা গ্রামে গিয়েছিলাম তখন আসার জন্য অনেক জোরাজুরি করছিল। কাজ ছিল বাড়ি তাই আনিনি। সেই অভিমান এখনো পুষিয়ে রেখেছে।”
” ভাবি আমি কি একবার যাব?”
” না না তার দরকার নাই। উনি বলেছেন, বিয়ের ঝামেলা মিটে গেলে আমায় নিয়ে গ্রামে যাবে।”
” আমি যাই না ভাবি।”
” না ভাই।”
” আচ্ছা তোমাদের সাথে আমাকেও নিও। এখন বোনের বিয়ে তাই তোমার কথা মেনে নিলাম।”
__________________________
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছে সবাই একে একে হলুদ ছুঁয়ে দিচ্ছে উর্মিকে। উর্মিকে আজ হলুদ পরী লাগছে একদম।
তৃষ্ণা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। তৃষ্ণা একটা হলুদ লেহেঙ্গা পরেছে। এই ড্রেসটা পছন্দ করেছে জায়ান। জায়ান আর তৃষ্ণা এক সাথে উর্মিকে হলুদ ছুঁয়ে দেয়। উর্মি তৃষ্ণাকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিল। জায়ান এতো মানুষের মাঝে তৃষ্ণাকে বসিয়ে রাখতে চাইছিল না কিন্তু বোনের জন্য রাজি হলো।
তৃষ্ণা উর্মির পাশে বসে আছে।
বর পক্ষের লোকজন মজা করে উর্মির সাথে তৃষ্ণাকেও হলুদ দিতে চাইছে, মজা করে মিষ্টি খাওয়াতে চাইছে। তৃষ্ণা না না করে পিছিয়ে যাচ্ছে শুধু।
মেয়েরা করেছে সেটা মানা যায়। হঠাৎ
আরিফের এক ফ্রেন্ড উর্মিকে হলুদ দিতে হাত এগিয়ে নেয়। তার ঠোঁটে দুষ্টু হাসি।
সে নিচু স্বরে বলে উঠে তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে,,” আপনাকে কেউ দিতে পারে নাই হলুদ তাই খুব খুশি হচ্ছেন তাই না বেয়াইন। এই দেখেন আমি দিয়ে দিলাম।”
তৃষ্ণা চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে আছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই উর্মির দিকে বাড়ানো হাত ফট করেই তৃষ্ণার গালে ছুঁইয়ে হলুদ লাগিয়ে দেয়। তৃষ্ণা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। উর্মি নিজেও চমকে উঠেছে ওর ভাই কেমন ও জানে। এদিকে স্টেজে তৃষ্ণাকে রেখে জায়ান নিচে থেকে লক্ষ্য রাখছিল সবকিছু হঠাৎ করে এই কান্ড দেখে ও হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে উঠে। রাগে ওর কপালের রগ ফুলে উঠে সঙ্গে সঙ্গে। তৃষ্ণা গালে হাত রেখে মুছতে মুছতে নেমে আসে।
অন্য পর পুরুষ ওর গালে হলুদ লাগিয়েছে এতে ওর নিজেরই রাগ লাগছে। কেমন বেয়াদব ছেলে। কেমন করে উর্মি আপুর জায়গায় আমায় হলুদ লাগিয়ে দিল। বিড়বিড় করছে তৃষ্ণা।
” আমার ভাবিকে হলুদ দিলেন কেন।কাজটা ঠিক করেন নি!”
” বলেন কি! আপনার ভাবি?”
” হ্যা আমার ভাবি। আমার ভাই এসব পছন্দ করে না। এমন মজা আর করবেন না।”
” উনি বিবাহিত দেখে মনেই হয়না। সরি আমি ভেবেছি অবিবাহিত তাই একটু মজা করছিলাম।”
” ইটস ওকে। আর এমন না জেনে মজা করতে যাবেন না।”
উর্মি কে হলুদ লাগিয়ে ছেলেটা নিচে নেমে এলো।ঝড়ের গতিতে জায়ান ছেলেটার সামনে এসে দাঁড়ায়। আচমকা কাউকে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে ছেলেটা পিছিয়ে গিয়ে বলল,,” আরে ভাই চোখে দেখেন না সামনে এসে দাঁড়ান কেন?”
#চলবে…..#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_৩৩(২)
#নন্দিনী_নীলা
তৃষ্ণা ভেতরে গিয়ে গাল থেকে হলুদ মুছে নিল। রাগ হচ্ছে ওর কিন্তু দেখাতে পারছে না। আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখল মেকাপ উঠে গেছে। ও অপর গাল থেকে ও মুছে নিল। তারপর বেরিয়ে এলো রুম থেকে। বাসা এখন ফাঁকা মোটামুটি। হইচই হচ্ছে বাগানে। এদিকে ছোট বাচ্চারা খেলাধুলা করছে।
তৃষ্ণা সিঁড়ি দিয়ে নামছে হঠাৎ পেছন থেকে দৌড় আর চিৎকার এর আওয়াজ শুনে তৃষ্ণা ঘাবড়ে যায়।
চমকে পেছনে তাকাতে যাবে কেউ ঝড়ের গতিতে দৌড়ে আসে। এলোমেলো পা ফেলে সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে যায়। তার শরীরের সাথে ধাক্কা খেয়ে তৃষ্ণা মেঝেতে পরে যায়। তৃষ্ণা মেঝেতে বসে হতবিহ্বল চোখে তাকায় সামনে।
বিস্মিত স্বরে বিড়বিড় করে,” হায় আল্লাহ,এই পাগলটা বাইরে আসলো কি করে?”
তৃষ্ণা সিঁড়ির হান্ডেল ধরে উঠে দাঁড়ায়। বাচ্চা গুলো ও ভয়ার্ত তাকিয়ে আছে।
উনার পরনে একটা ম্যাক্সি আর গায়ে কোন ওরনা নাই। চুল গুলো জট হয়ে এলো মেলো হয়ে মুখ অর্ধেক ডেকে আছে। এই চুল কত বছর ধরে আঁচড়ানো হয় না কে জানে। তৃষ্ণা পাগলকে থামাতে যাবে এদিকে পাগল চিল্লাচিল্লি করে বাসার বাইরে চলে গেল গার্ড আটকাতে গেলে কামড় খামচে দেয়। তাই তারা ও এগিয়ে আসতে পারছে না। কারণ তারা আঘাত করতে পারবে না। এদিকে পাগলের কামড়, খামচি খেতেও কেউ চায় না।
তৃষ্ণা লেহেঙ্গার ওরনা ঠিক করে কাঁধে হাত চেপে বাইরে আসে। ধাক্কা খেয়ে পরে কাঁধে ব্যথা পেয়েছে। তাই হাত দিয়ে আলতো চাপ দিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে বাইরে এসে আরো বিচ্ছিরি অবস্থা। পাগলটা সবাইকেই নাজেহাল করে ছাড়ছে। জায়ান আশেপাশে নাই। সব আত্নীয় স্বজন তামাশা দেখছে। গার্ডরা তাকে ভেতরে নেওয়া জন্য টানাটানি করছে। কাজের মহিলারা এগিয়ে এসে ধরলেই তাদের চুল টেনে দিচ্ছে। ভয়ে তারা দূরে সরে যাচ্ছে।
তৃষ্ণা উর্মির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। উর্মি ভয়ে তৃষ্ণার হাত চেপে ধরে বলল,” ভাবি ভাইয়া কোথায়?”
” জানি না।”
” ভাইয়াকে খোঁজ প্লিজ না হলে অনেক ঝামেলা হয়ে যাবে।”
” হুম তুমি ভয় পেয়ো না আমি দেখছি।”
তৃষ্ণা নেমে আসে এদিকে পাগলটা দৌড়ে স্টেজে উঠে যায়। উর্মি ভয়ে ছুটে নেমে আসে। পাগলটা মিষ্টি খেতে লাগে টপটপ করে। খুব মজা করে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে কত দিনের খাওয়ার শখ আজ মিটল।
জায়ান কোথাও নাই লোকটা হঠাৎ কোথায় হাওয়া হয়ে গেল?
কোমরে হাত রেখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে! তখনি একটা হাত টেনে তৃষ্ণা কে বাগানের একটা স্টোর রুমে নিয়ে আসে আর পেছনে থেকে কোমর জড়িয়ে ধরে।
” কি মিসেস আমাকে খুঁজচ্ছ?” কানের কাছে জায়ানের ফিসফিসানি জড়ানো কন্ঠ আসে।
” এখানে কি করছেন আপনি? ওইদিকে কি হচ্ছে জানেন?”
” শুধু জানি নাকি লাইভ ও দেখছি।”
” মানে?”
“তুমি ও দেখ।”
জায়ান তৃষ্ণাকে জানালা দিয়ে দেখায় পাগলটা হলুদের বাটি নিয়ে সবার গায়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে সবাই দৌড়ে পালাচ্ছে।
” সব দেখেও আপনি এখানে শান্ত হয়ে আছেন? তাকে থামাবেন না?”
” নাহ।”
” আজ উর্মির গায়ে হলুদ সব নষ্ট করে দিচ্ছে সবাই ভয় পাচ্ছে।”
” তো আমার কি?”
তৃষ্ণা জায়ানের হাত পেট থেকে সরিয়ে ওর দিকে ঘুরে বলল,,” পাগলটা শুধু আপনার কথা শুনে কেন?”
” তাকেই জিজ্ঞেস কর।”
” পাগলটা আপনার কি হয়? না মানে আমার কি হয় জানি না তো তাই জানতে ইচ্ছে করছে।”
” তোমার হাজব্যান্ডের গর্ভধারণী মা।”
তৃষ্ণা হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছে। ও স্তব্ধ হয়ে গেছে। এই পাগলটা জায়ানের মা হতে পারে ও কল্পনাতেও ভাবেনি। জায়ানের দৃষ্টি স্বাভাবিক। ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিল। এদিকে তৃষ্ণার অবস্থা করুন। ও নির্বাক হয়ে গেছে কথা বলতে পারছে না। পাগল বলে সম্বোধন করতো সব সময় আর সেই ব্যক্তি কিনা ওর স্বামীর মা ওর শাশুড়ি ও লজ্জা মাথা নিচু করে ফেলল। মাথার মধ্যে এখন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন গুলো করতে পারছে না। করলেও উত্তর ও পাবে না। কিন্তু খুব যে জানতে ইচ্ছে করছে। জায়ানের মা পাগলটা হলে জেসমিন মা কে?
সেতো জায়ান কে পাগলের মতো ভালবাসে মা ডাক শুনতে ছটফট করে। সৎ মা এতো ভাল হয়? ভুলেও তাকে আমার সৎ মা মনে হয় নি। এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
এই পাগলটা মা হলে সে তো সৎ মাই হয়।
সব ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
জায়ান হঠাৎ তৃষ্ণা কে পাঁজকোলে তুলে নিল। তৃষ্ণার সমস্ত চিন্তায় ভাটা পরল। ও চমকে জায়ানের গলা জড়িয়ে ধরল। জায়ান তৃষ্ণাকে নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে উপরে নিজেদের রুমে চলে এলো।
” কি করছেন? এখানে এলেন কেন? উনাকে থামাবেন চলেন।”
জায়ান তৃষ্ণার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,” সম্বোধন চেঞ্জ করে ফেললে। পাগল কে পাগল বলেছ এতে দোষের কি আমি নিজেও তো পাগলই বলি।”
” না মানে আমি কল্পনা ও করিনি উনি আপনার মা হতে পারে। আসলে আমি ভাবতেই পারিনি জেসমিন মা আপনার আসল মা না!”
” ওদিকটা তোমার শশুর আর শাশুড়ি আছে উনারাই সব সামলে নিবে। আমাকে প্রয়োজন নাই। আর আয়ান আছেই তো।আমরা বরঞ্চ একটু প্রেম করি।”
” মানে…”
” জায়ান তৃষ্ণাকে বিছানায় বসিয়ে দরজা লক করে লাইট নিভিয়ে দেয়। অন্ধকারে বিছানায় গিয়ে বসে। তৃষ্ণা জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,” এই অবস্থায় ঘুমাবেন? পোশাক পরিবর্তন করে আসি। এই ভারি লেহেঙ্গা পরে ঘুমানো যাবে না।”
জায়ান তৃষ্ণার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে,,” হুশশ, চুপ করো।”
তৃষ্ণা থমকে চুপ করে যায়।
জায়ান মোমবাতি জ্বালিয়ে তৃষ্ণার সামনে ধরে বলল,,” তোমার রুপের বাহার মোমবাতির আলোয় দেখব বলে এতো কাহিনী করলাম। আর তুমি বোকা বউটা আমার বোকাই রয়ে গেলে।”
তৃষ্ণা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল। জায়ান মোমবাতি ট্রি টেবিলের উপর রেখে এক হাত বাড়িয়ে তৃষ্ণার গালে ছুঁইয়ে দিল। তৃষ্ণা লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু ফট করেই চোখ তুলে তাকালো জায়ানের চোখের দিকে।
” কি লাগালেন ভেজা লাগছে!”
জায়ান অপর গালেও লাগিয়ে দিয়ে বলল,,” হলুদ লাগিয়ে দিলাম আমার বউকে। অন্য কেউ কেন লাগাবে? এই গাল, চোখ, ঠোঁট, নাক, কপাল, সম্পূর্ণ মানুষটাই আমার তার সব জায়গায় সব কিছু লাগবো ছুবো শুধু আমি।”
তৃষ্ণা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ভাবছে জায়ান দেখে ফেলেছিল নাকি ওই ছেলের হলুদ দেওয়াটা।
তৃষ্ণা কিছু বলতে যাবে জায়ান আবার বলে,,” আমাকে ও লাগিয়ে দাও।”
” কিভাবে আমি তো হলুদ আনি নাই।”
” তোমার গাল থেকে লাগিয়ে দাও।”
” কিভাবে?” অবাক গলায় বলল।
জায়ান তৃষ্ণার দিকে নিজের গাল এগিয়ে নিয়ে বলল,,” দাও নিজের গাল থেকে হলুদ লাগিয়ে।”
তৃষ্ণা বুঝতে পারছে না জায়ানের ইঙ্গিত। ও চুপ করে তাকিয়ে আছে জায়ানের গালের দিকে।
জায়ান তৃষ্ণার গালে নিজেই গাল ঘষে হলুদ লাগিয়ে দেয়। তৃষ্ণা এতোক্ষণ ইঙ্গিত বুঝে ও লজ্জা পেয়ে লাজুক হাসতে লাগল।
_______________________________
জেসমিন বেগম সবার সামনে লিলির গালে ঠাস করে চর মারলেন। লিলি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। উর্মি ভয়ে রুমে চলে গেছে। জোভান ফোন কানে ধরে আয়ানের নাম্বারে ট্রাই করছে। অদ্ভুত ভাবে তিনি গতকাল বিকালে থেকে মিসিং। আজ সারাদিন বাসায় আসে নাই।তাই তাকে খোঁজার দায়িত্ব পরেছে জোভানের উপর। কারণ আয়ানের কোন ব্যাপারে জায়ান থাকতে চায় না। তাই তাকে এই ব্যাপারে জানানো হয়নি।
পাগলটা কে রুমে আবার বন্দি করা হয়েছে। এই কাজ করেছে অনেক কষ্টে সবাই মিলে শেষে আয়ানের বদলে জোভান ঘুমের ইনজেকশন দেয়। তারপর তাকে রুমে নেওয়া হয়। গায়ে হলুদের মজাটাই নষ্ট হয়ে গেছে। সবাই যার যার রুমে চলে গেছে। আনন্দ উল্লাস করার শখ সবার মিটে গেছে পাগলের পাগলামী দেখে।
” তোর জন্য আজ ওই পাগল বাইরে আসার সাহস পেয়েছে। আর আমার মেয়ের হলুদে ঝামেলা করার সুযোগ পেয়েছে আজ তোর….”
জোভান মায়ের কাছে এসে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,,” উফফ মা ছাড়ো তো। আয়ান ভাইয়ার ফোন অফ দেখাচ্ছে। আমাকে দয়া করে মাফ করো আমি তার খোঁজ নিতে পারব না।”
বলেই জোভান চলে গেল।
সাদিকুর রহমান কপালে হাত রেখে বসে আছে সোফায়।
জেসমিন বেগম তার পাশে বসে বললেন,,” আয়ান কোথায়?”
” জানি না!”
” সত্যি?”
” তোমাকে মিথ্যে বলে আমার লাভ কি?”
” আচ্ছা। ওর খোঁজ করো। হঠাৎ হঠাৎ উধাও হয় কেন?”
” আমাকে জিজ্ঞেস না করে ওকেই জিজ্ঞেস করিও।”
” তুমি কপালে হাত রেখে ওর কথা ভাবছ?”
সাদিকুর রহমান উঠে গম্ভীর মুখশ্রী করে চলে গেলেন।
#চলবে……