রাত গভীর, শারীরিক মেলামেশা শেষে তুলির বুকের ওপর থেকে নেমে এসে এক গ্লাস পানি খেয়ে তুলির নগ্ন শরীর জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো শুভ। তুলির বুকের ঠিক মধ্যিখানে একটা চুমু খেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
কিছুক্ষণ চুপচাপ নীরবতা, তারপর তুলি ঘুরে শুভর মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে শুভর পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,– এতটা ভেঙে পড়লে চলবে শুভ! আমরা তো চেষ্টা করছি, হতাশ কেন হচ্ছ তুমি, দেখো সৃষ্টি কর্তার ইশারায় ঠিকই আমাদের সংসার আলোকিত করে একটা বাবু আসবে।
শুভ ঘুরে চিৎ হয়ে শুয়ে বললো,– আর কত অপেক্ষা! তুমি তো তোমার ক্যারিয়ারের শীর্ষে আছো, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ভালো স্যালারি, তুমি এখন প্রতিষ্ঠিত, তোমার এই সবকিছুকেই আমি শ্রদ্ধা করি। একটা মেয়েরও স্বপ্ন থাকতে পারে, প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে, তাই কখনও তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাইনি তুলি, কিন্তু তোমার ক্যারিয়ার আমাদের সংসার ফাঁকা করে রাখলো দ্যাখো।
তুলি কাপড় টেনে গায়ে জড়িয়ে শুভকে জড়িয়ে ধরে বললো,– শুভ, প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন থাকে, লক্ষ্য থাকে, কিন্তু বাস্তবতার কাছে হেরে গিয়ে অনেক মেয়ে থমকে যায়, আবার গুটিকয়েক ময়ে তাদের লক্ষ স্থির রেখে সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে ঠিকই সামনে এগিয়ে যায়, সফল হয়। আমিও তাদের একজন, তোমার খুশি হওয়া উচিৎ।
তুলির হাত ধরে টেনে মুখের কাছে এনে তুলির হাতে কয়েকটি চুমু খেয়ে হাতটা বুকে চেপে ধরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভ বললো,– দেখতে শুনতে, জ্ঞানে গুণে তুমি অতুলনীয় তুলি, আমি তোমার সবকিছুকেই ভালোবাসি এবং শ্রদ্ধা সন্মান করি। যত বড় অফিসারই হও তুমি, সবকিছুর বাইরে তুমি আমার মিষ্টি বউ। এই যে রাতের বেলায় যখন একান্ত কাছে আসো তখন গর্বে আমার বুকটা ফুলে ফেঁপে ওঠে, একথা ভেবে যে কতবড় অফিসার আমার কম্বলের নিচে, হা হা হা।
শুভর কথা শুনে তুলি হো হো করে হেসে উঠে শুভর ঠোঁট কামড়ে ধরে বললো,– একদম চুপ, পাজি একটা, তোমার কম্বলের নিচে আমি কোনো অফিসার নই, তোমার বউ, আর তুমি আমার স্বামী।
শুভ টান দিয়ে তুলিকে বুকের ওপর তুলে নিলো। তুলি শুভর গলায় একটা চুমু খেয়ে শুভর নাকে নাক ঘষে বললো,– ঐ কিউট জামাই, এত ভেঙে পড়লে চলবে! ইনজয় করো বেবি।
শুভ তুলিকে দু’হাতে শক্ত করে ধরে বুকের সাথে হালকা একটা চাপ দিয়ে হেসে ফেলে বললো,– ইনে আর জয় কোথায় বেবি, যে ইনজয় করবো! বাবা ডাকটাই শোনার ভাগ্য হলো না।
তুলি শুভর বুকের লোম হালকা টেনে দিয়ে বললো,– ইনে জয় নেই তাহলে! উপোস মারবো কিন্তু, তখন ইনের আশায় মিনমিন করলে কাজ হবেনা।
শুভ তুলির ঠোঁট দুটো ধরে একটা চাপ দিয়ে বললো,– ঠিক আছে আমি সোফায় গিয়ে শুই, আমার আসেপাশে যেন ঘুরঘুর করতে না দেখি।
তুলি শুভকে বালিশের সাথে চেপে ধরে বললো,– এক পা বাইরে দিয়ে দ্যাখো, তাহলে আজ ডবল ডিউটি করিয়ে মারবো বলে দিলাম।
শুভ তুলির গাল টেনে দিয়ে বললো,– আগে একটা বাবু তো উপহার দাও, তারপর শুধু ডিউটি নয়, ওভারটাইমও করবো প্রয়োজনে।
শুভ তুলির সুখের এই স্বর্গ যে কারণে অপূর্ণ সেটা হলো একটা বাচ্চা।
তুলিদের কলোনিতেই বাসা ছিল শুভদের, প্রায়ই দেখা হতো দুজনের, তুলি দেখতে যেমন সুন্দরী স্মার্ট, শুভ’ও সুদর্শন স্মার্ট। দুজনের প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল সেদিনই দুজনই দুজনের মনে দাগ কেটে যায়।
কলোনির একটা ছেলে তুলির বান্ধবী রিয়াকে খুব বিরক্ত করতো, সেই ছেলেকে একটা দোকানে দেখে এসে তুলিকে বললো রিয়া, এও বললো যে সেই ছেলের গায়ে নীল সার্ট, লম্বাচওড়া। তুলি আবার একটু সাহসী টাইপ, প্রতিবাদী মেয়ে।
রিয়ার কথা শুনে বাসা থেকে বের হলো তুলি।
এদিকে রিয়াকে ডিস্টার্ব করা ছেলেটা দোকান থেকে চলে গেল, বাইক নিয়ে শুভ সেই দোকানে এসে হাজির, শুভর গায়েও নীল জামা। ব্যাস কেল্লা ফতে।
তুলি এসে পেছন থেকে শুভর সার্টের কলার ধরে বললো,– ঐ তোর এতবড় সাহস, আমার বান্ধবীকে ডিস্টার্ব করিস, ঠ্যাং ভেঙে হুইল চেয়ারে বসিয়ে মহল্লা ছাড়া করবো কিন্তু।
শুভ ঘুরে দাড়িয়ে বললো,– ঠ্যাং ভাঙা কি এতই সস্তা, দেখতে তো সুন্দরী, ব্যবহার দেখে মনে হয় খবিশের বস্তা।
এদিকে শুভকে দেখে টাশকি খেয়ে গেল তুলি, এত হ্যান্ডসাম একটা ছেলে তাও আবার বিরক্ত করছে রিয়াকে! সবই কপাল।
নিজেকে সামলে নিয়ে তুলি বললো,– খবিশের বস্তা মানে! বেশী বকবক করলে বাইক নিয়ে আর বাড়ি ফিরতে হবেনা, ধোলাই খেয়ে হাসপাতালে যেতে হবে বলে দিলাম।
শুভ তুলির মুখোমুখি দাড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,– বুঝলাম না এত সুন্দরী একটা মেয়ে এত ছ্যাচড়া স্বভাবের কেমনে হয়! আর আপনার কোন বান্ধবীকে আমি বিরক্ত করলাম, ওসব প্রেমটেমে আমার ইন্টারেস্ট নেই।
রিয়া দৌড়ে এসে তুলিকে বললো,– আরে তুলি ইনি সেই ছেলে না, অন্য কেউ।
তুলি জিভে কামড় দিলো।
শুভ তুলিকে বললো,– এই যে মিস, দেখতে তো পরি ফেল, মাথায় কি ঘিলু আছে না সব ইয়ে!
তুলি মেজাজ গরম করে শুভর কলার ধরে বললো,– মাথায় কি আছে জানিনা, বাইকে করে আমাকে বাসার সামনে দিয়ে আসুন, আপনারে আমার ভাল্লাগছে বস।
ব্যাস এভাবেই তুলি ও শুভর প্রেম হয়, তারপর বিয়ে। খুব সুখে যাচ্ছে দিন কিন্তু অসুখ একটাই সংসারের একটা বাচ্চা না আসা, ডাক্তারের রিপোর্ট অনুযায়ী সমস্যা তুলির, শুভর নয়।
যা-ই হোক এদিকে শুভর চোখে ঘুমঘুম ভাব, তুলি শুভকে টেনে তুলে শুভর ওপর ঝুকে পড়ে বললো,– জনাব আমার গিফট একশোটা চুমু, দেয়ার কথা মনে নেই? সেটা এখনও দেয়া বাকি, ওগুলো দিয়ে তারপর ঘুমাবেন।
শুভ গুনে গুনে তুলির শরীরে একশোটা চুমু খেল। তারপর তুলিকে বুকে জড়িয়ে বললো,– তোমার প্রতি ভালোবাসা আদর এক জনমে শেষ হবার নয় তুলি, তোমাকে ভালোবাসতে চাই হাজার জনম। তুমি প্রতিদিন আমার কাছে নতুন, প্রতি মূহুর্তে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা দ্বিগুণ হচ্ছে। এই একটি জনম বড় বেশি কম, তোমায় জড়িয়ে এভাবে বাঁচতে চাই লক্ষ জনম।
তুলি মিষ্টি হেসে শুভর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে বললো,– একটা মানুষ এতটা ভালোবাসতে পারে তোমাকে না পেলে বুঝতাম না। দিন দিন তোমার জন্য আরও পাগল হচ্ছি আমি। আমার ক্যারিয়ারে, আমার জীবনের স্রেষ্ঠ প্রাপ্তি তুমি।
শুভ তুলির গালে গাল ঘষে বললো,– এত পাম দিয়ো না, ফুলে ফেটে যাবো।
তুলি শুভর নাক চেপে দিয়ে বললো,– বেশি ফটফট করলে কিন্তু এখন আবার ডিউটি করিয়ে ছাড়বো মিস্টার।
দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো নিশ্চিন্তে, সুখে।
এই ঘুম শেষে সকালে যে ওদের জীবনে মারাত্মক এক ঝড় এসে দুজনকে দুই দিকে সরিয়ে দেবে, সেটা বুঝতে পারলে হয়তো ওরা না ঘুমিয়ে রাত কাটিয়ে দিতো।
এবার সকালের অপেক্ষায়…
চলবে…
গল্পঃ ক্যারিয়ার। ( প্রথম পর্ব )
লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।