#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)
#পর্ব_২৮
শাহানা আর নিশানের বিয়ে ঠিক ঠাক মত হয়ে যায়। খুব খুশি ছিল তারা দুজনেই, বিয়ের দিনের কোন ছবি তোলা হয়নি বলে, শাহানার ভিষন মন খারাপ হয়ে যায়। তখন স্টুডিও তে যাওয়ার বায়না ধরে সে, সেই দিন শাহানা ছবি উঠাই একটা, নিশানের সাথে ছবি তোলার আগেই তাদের ফোন আসে,যে তার মা অজ্ঞান হয়ে গেছে। পরবর্তী তে নিশান শাহানার সেই ছবিটি সব সময় নিজের কাছে রাখতো। শিরীন ভিষন ভাবে মানষিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কেন শিরীন এতো চাপ নেয়?? তা শাহানার মাথায় আসে না, কেন কি জন্য?? মায়ের সাথে খোলা ভাবে কথা পরা প্রয়োজন এ ব্যাপারে…ডাক্তার ফুল বেড রেস্ট দিয়েছে শিরীন কে। তাই তার দেখা শুনা করার জন্য এক জন নার্স কেও রাখা হয়। কিন্তু শিরীন ঔষধ, খাবার কোন টাই খেতে চায় না তার জন্য শাহানা দুই দিন ভার্সিটি তে যায়নি। এই দিকে শাহানা কে না দেখতে পেয়ে নিশানের কাহিল অবস্থা। অবশ্য ভার্সিটি তে তেমন কোন ইম্পর্টেন্ট ক্লাস নেই ৮দিন পর পরিক্ষা শুরু। তাই সবাই বাসায়, মেসে থেকেই পড়া শুনা চালিয়ে নিচ্ছে। শাহানা কে নিশান অনেক বার ফোন দেয় রাতে কিন্তু সে ফোন ধরছে না। শাহানার খুব দুঃচিন্তা হচ্ছে, হঠাৎ হলো টা কি ছেলেটার!!!
রাত প্রায় সাড়ে ১১টা বাজে, হঠাৎ বেলকনির কাছে ধপ করে শব্দ হয়… শাহানা জেগেই ছিল, সামনে পরিক্ষা বই হাতে ও ধরে দেখা হয়নি,তাই একটু বই নিয়ে বসেছে সে। এমন আওয়াজ পেয়ে উঠে দাঁড়ায় শাহানা।এতো রাতে বেলকনিতে কিসের শব্দ হলো??? শাহানা গুটিগুটি পায়ে বেলকনির পর্দা সরিয়ে তো হতবাক হয়ে যায়!! কালো চাদর পড়া এক জন লোক দাঁড়িয়ে আছে! শাহানা চোর বলে চিৎকার দিয়ে উঠে! তখনি মুখ চেপে ধরে সেই লোক টা। তার পর ফিসফিস করে বলে এই চিৎকার করো না আমি চোর নয়! শাহানা ভ্রু কুঁচকে বলে
নিশান তুমি এখানে এতো রাতে???
হুমম!! তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই চলে আসলাম! নিশান তুমি পাগল আর এই চোরের মত চাদর পড়েছো বলেই তো চোর মনে হচ্ছিল! আচ্ছা বাদ দাও ঘরের ভিতরে আসো!! আরে নাহ যাবো না আর এখনি চলে যাবো আমি। মেহমেত দাঁড়িয়ে আছে নিচে। তোমাকে শুধু এক বার দেখতে এসেছিলাম ,দেখেছি এখন যেতে হবে। পড়তে হবে গিয়ে… আর তুমি ও পড়তে বসো,,উফ বিদ্যা সাগর চুপ করবে তুমি?? আর এই মেহমেত কে ছাড়া এই বার ও আসোনি?? ভীতুর ডিম! দাঁড়াও আমি মেহমেত কে ফোন দেয়!
হ্যালো মেহমেত!! হায় হায় নববধু কি হলো ফোন দিলি যে! হুমম এখন সুন্দর করে মেসে ফিরে যাহ তুই..কিহ একা যাবো? নিশান যাবে না?? নাহ নিশান পরে যাবে তুই যাহ এখন! আরে আরে মনে তো নেই আমার তোরা বিয়ে করে নিয়েছিস আর তোদের তো ফাস্ট নাইট পালন করা হয়নি, গুড গুড বেস্ট অফ লাক!! অসভ্য গাধা,, ফোন রাখ আর মাস এখান থেকে..।।।।
আরে কি করলে তুমি এটা?? মেহমেত কে যেতে বললে কেন?? আমি এখন একা যাবো কি করে?? ওহহ হো নিশান এতো কথা বলো কেন চল ভিতরে আসো।
শাহানা হাত ধরে নিশান কে ঘরের ভিতরে নিয়ে যায়। কি হলো রেখে দিলে কেন আমায়?? বলছি তার আগে বল আমায় শাড়িতে কেমন লাগে?? নিশান মুচকি হেসে বলে অনেক সুন্দর লাগে। বিমোহিত হয়ে যাই আমি..। শাহানা হাস্যোজ্জল মুখ করে বলে তাহলে দাঁড়াও একটু আসছি আমি। শাহানা তার খাটের আলমারি থেকে ছাই রঙা শাড়ি বের করে ওয়াশরুমে চলে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পরে শাহানা বের হয়ে আসলো! শাহানা কে খুব সুন্দর লাগছে,ডানা কাটা ব্লাউজ পড়েছে আজ । নিশান মাথা টা নিচু করে নিল. শাহানা কাছে নিশানের চিবুক উঁচিয়ে বলে তোমার জন্য শাড়ি পড়লাম আর দেখছো মানে?? আজ আমাদের ফাস্ট নাইট । এ্যা শাহানা এটা ঠিক না তুমি বলেছিলে published না হওয়ার আগে আমাকে সবার সামনে পরিচয় করাবে না। আর আমি চাই ও না তুমি এটা করো। আমি তোমার যোগ্য হওয়ার পর তুমি পরিচয় দিও সেটাই আমি মন থেকে চাই। তার আগে এমন কোন কাজ করতে চাইবো না যদি এক্সেডেন্টলি অন্য ঘটনা ঘটে যায় আমার যোগ্যতা না হওয়ার আগে! তখন মুখ দেখাবে কি করে তুমি সমাজে! ব্যাস ৩টা বছর অপেক্ষা করো সব ঠিক করে আবার রানীর মত বিয়ে করে নিয়ে যাবো আমার বাড়ি। শাহানা ভ্রুকুটি করে বলে
এখনো আমাকে ছুঁয়ে ও দেখলে না আর বাচ্চা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছো হাহাহা। উফফ নিশান তুমি কেমন পুরুষ বলতো । বিয়ে করা বউ কেও না করে দিচ্ছো??? শাহানা এক চোখ মেরে সন্দেহের দৃষ্টিতে বলে এই তুমি কি সত্যি পুরুষ তো???? নিশান বোকামো মুখ করে বলে কিহ আজাইরা কথা বলো তুমি??
আচ্ছা আচ্ছা এতো রাগ করতে হবে না আমি মজা করছি শুধু! মজা নয় এটা বলেই শাহানা কে খাটে ফেলে দেয় নিশান…শাহানা চোখ বড় বড় করে তাকায়..
রাত চার টা বাজে.. আর আধা ঘন্টা পর ফজরের আজান দিবে! নিশান শাহানার উন্মুক্ত উদরে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। কয়েক ঘণ্টা আগের কথা মনে পড়তেই শাহানার সারা শরীর শিউরে উঠে। অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে যায় তার অঙ্গে। লজ্জায় নিজের দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেয় সে।
ফজরের আগ মুহূর্তে নিশান কে উঠিয়ে গোসল সেরে .. চুপিচুপি শাহানা নিশান কে নিয়ে মেসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শাহানা নিজে গাড়ি ড্রাইভ করছে। নিশান কখনো শাহানা কে গাড়ি তে ভার্সিটি যেতে দেখেনি আর আজ সোজা ড্রাইভ করছে। শাহানা লজ্জায় এখনো নিশানের দিকে দৃষ্টি গোচর করতে পারছে না। মনে হচ্ছে কোন অদৃশ্য কিছু তাকে লজ্জাবতীর রানী বানিয়ে দিয়েছে যেখানে আদেশ করা হয়েছে যেন নিজের স্বামীর দিকেও তাকানো অন্যায়।
নিশান বুঝতে পারছে শাহানার অবস্থা,তই মিটিমিটি হাসছে সে। ফজরের আজান দিয়েছে। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করে দিয়েছে.. এই সময় টাকে নিশান তার জীবনের সঙ্গে মিলাচ্ছে। তার জীবনের সূর্য কি উঁকি দিচ্ছে এখন। আল্লাহ তার জীবন এক রক্তিম সূর্য হিসেবে হয়তো শাহানা কে পাঠিয়েছে। এখন ভালোই ভালোই স্কলারশিপ টা পেলেই মাস্টার্স কোর্স টা কমপ্লিট করতে পারলেই তার পর নিশ্চই কোন ভালো চাকরি পেয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। তার পর এই মেয়েটা আর পরিবার কে ভালো রাখতে পারবে।
৫মাস কেটে গেছে। সব কিছুই বদলে গেছে, নিশান অনার্সে রেকর্ড করা রেজাল্ট করেছিল। মেহমেত নিজেও খুব ভালো রেজাল্ট করে,শাহানা টেনেটুনে পাস করেছে। তাতে নিশানের সে কি ক্ষোভ। শাহানা তখন মজা করে বলেছিল যে বিদ্যা সাগরের বউ কে যদি বিদ্যা সাগরী হতে হয় তাহলে বাচ্চা কাচ্চা কে দেখা শুনা করবে হুমম??
নিশানের স্বপ্ন স্কলারশিপ সে পেয়েছে.. শাহানার সেদিন গর্বে ছাতি চওড়া করে বলেছিল আমার বিদ্যা সাগর অনেক বড় হবে। কিন্তু নিশান বাইরের কোনো দেশে পড়তে যায়নি সে ঢাবিতেই মাস্টার্স কোর্স কমপ্লিট করবে। নিশান কখনোই চায়নি বাইরের কোনো দেশে পড়তে যেতে , সেদিন শাহানা কে হার্ট করার জন্যই কথা টা বলেছিল সে..যে বাইরের দেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাবে। সব কিছুই ঠিক ছিল.. কিন্তু সেই রাত???
মরিয়ম এতো ক্ষন নির্বাক শ্রোতার মত মেহমেতের বলা কথা গুলো শুনে যাচ্ছিল। এতো ক্ষন মরিয়মের মনে হচ্ছিল সব যেন তার চোখের সামনে হচ্ছিল। মেহমেতের হঠাৎ থেমে যাওয়ায়। কল্পানার প্রজেক্ট থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। এবং উত্তেজিত কন্ঠে বলে ..কি কিন্তু??? চুপ করে গেলে কেন বলো?? এতো ভালোবাসা ছিল তাদের মধ্যে। এতো আশা আকাঙ্ক্ষা কিভাবে ধুলিসাৎ হয়ে গেল?? বলো মেহমেত কি হয়েছিল সেই রাতে??
চলবে ______????
গঠন মূলক মন্তব্যের আশাবাদী 🙂