ক্যাসিনো পর্ব -৫০+৫১+৫২

#ক্যাসিনো
#পর্ব_৫০
©লেখিকা_মায়া

মহুয়া এক ধ্যানে নিশানের দিকে তাকিয়ে আছে। তার পা অবশ হয়ে এসেছে। এক পা ও আর এগোতে পারছে না।
শাপলা মহুয়া কে আসতে দেখে,উঠে মহুয়ার কাছে গেল। তার পর একটু সরে নিয়ে গিয়ে ভালো করে বলল যে কেন তাকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে। অন্ধকার গলিতে যেতে হবে। মরিয়ম কে সাহায্য করার জন্য। ফোন দিয়ে শাপলা বলছে যে আজ অন্ধকার গলিতে মহুয়া সহ আরো দুই জন ছেলে যাবে। তাদের পছন্দ মত মেয়ে দিয়ে দিতে। আর ওখানে শাহানার মা শিরীন কে খুঁজে বের করতে হবে।
মহুয়া মনমরা মাথা নাড়ালো শুধু।

তার পর শাপলা মহুয়ার হাত ধরে মুচকি হেসে বলল,, আমাকে মনে পড়বে না তোর??
মহুয়া অবাক হয়ে বলে এটা আবার কেমন কথা বলছো খালা তুমি?? আমি কি এক বারের জন্য চলে যাচ্ছি যে এইভাবে বলছো??
হুমম!! এক বারের জন্যই যাচ্ছিস!!
মহুয়া চোখ বড় বড় করে বলে কি বলছো‌ কি এসব তুমি?? তুই ওদের সাথে যাবি আর আসবি না। নিজের মত বাঁচ। লালকুঠিরে অনেক সমস্যা হবে,,তাই বলবো তুই পালিয়ে গেছিস। কয়েক দিন তোকে খুঁজে বের করার নাটক হবে তার পর তুই একে বারে মুক্ত। বুঝেছিস?? যদি পারতাম সবাই কে একে বারে মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু এটা আমি করলে বড় বড় নেতারা আমাদের কাউকে জীবিত ছাড়বে না। মহুয়া শুধু অবাক চোখে শাপলার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
সে কিছু বলতে যাবে তখন শাপলা বলে,,আর কোন কথা নয়,,যাহ ওদের সাথে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
মহুয়ার চোখ ছলছল করছে,,খুশি হয়ে শাপলা কে জরিয়ে ধরে মহুয়া। তার কাছে এই প্রথম বার মনে হচ্ছে,, শাপলার মাঝেও ভালো মানুষ আছে। সারা জীবন তার কঠোর যে রূপ সবাই কে দেখিয়ে এসেছে সেটা শুধু পরিস্থিতির কারণে।

হয়তো কালো ব্যাবসা কিংবা নিষিদ্ধ কাজে জরিয়ে পড়া ব্যাক্তিবর্গ গন ও এক সময় অনুভব করে যে তারা যা করছে তা ভুল,হয়তো তারাও ফিরে আসতে চায় এসব কাজ থেকে,, কিন্তু তাদের দলনেতাদের ভয়ে তারা ফিরে আসতে পারে না। মৃত্যু কিংবা ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে ।

মহুয়ার চলে যাওয়ার পানে চেয়ে আছে শাপলা,,তার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। এই পানি খুশির নাকি দুঃখের শাপলা বুঝতে পারছে না। মহুয়া কে মুক্তি দিয়ে সে খুশি,, কিন্তু শাপলার এমন ভাগ্য না হওয়ার কারণে তার বুকের ভিতর কষ্টের অনুভূতি হচ্ছে। ইশ্ সেও যদি মুক্তি পেয়ে যেতো।

নিশান মহুয়ার দিকে তাকাতে পারছে না হয়তো সেদিন রাতের কারনে তার ভিতরে অপরাধ বোধ কাজ করছে।
কিন্তু মহুয়া ভেবে পাচ্ছে না,, নিশান কে দেখলে তার অনুভূতি গুলোরা পাখনা মেলে উড়তে চায় কেন?? কেন তার ভিতরে প্রেমের অনুভূতি গুলো মাথা চারা দিয়ে উঠতে চায়??
তার মত এক জন খারাপ মানুষদের তো ভালোবাসার স্বপ্ন দেখা পাপ।
নিশান কে দেখার পর থেকে তার মাঝে আফসোস জাগ্রত হয় কেন তার জীবন এতো অপবিত্র। আচ্ছা আল্লাহ কি মাফ করবেন আমায়?? আমি যে এতো বড় বড় পাপ কাজে লিপ্ত ছিলাম।

মরিয়ম দিকে মহুয়া তাকায়,,সময় পেলে মরিয়মের থেকে এই প্রশ্নের জবাব সে চাইবে। যে আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন কি না!!

মহুয়া কে মরিয়ম নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। তাকে দেখে প্রথমে সবাই একটু অবাক হয়। আর তার থেকে বেশি অবাক হয় এটা জেনে যে এই মেয়ে নাকি মরিয়মের ভালো বান্ধবী।
এমন রং ঢং শাড়ি আর ভারি সাজের মেয়ে মরিয়মের বান্ধবী এইটা মানতে তাদের ভিষন কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মরিয়মের মুখের উপর কেউ কোন বাড়তি প্রশ্ন করলো না।

রাতে মেহমেত মহুয়া নিশান বের হলো অন্ধকার গলির উদ্দেশ্য।
ঢাকার ভিতরে হওয়ায় খুব একটা সময় লাগলো না সেখানে যেতে । মহুয়ার জন্য খুব একটা সমস্যা তাদের ভিতরে প্রবেশ করতে।
ভিতরে প্রবেশ করতেই মেহমেত আর নিশান স্তম্ভীত হয়ে যায়। এতো সুন্দর করে সাজানো গোছানো,,যেন দেশের বাইরের কোনো বড় রিসোর্টে গেছে তারা। চারদিকে ঝিকিমিকি লাইট জ্বলছে,, ছেলে মেয়ে গমগম করছে। ওয়েস্টার্ন ড্রেসে মেয়েগুলোর শরীরের সব রকম ভাঁজ সুস্পষ্ট। মেহমেত চোখ মুখ খিঁচিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মহুয়ার পিছনে পিছনে হাঁটছে। কিছু কিছু মহুয়ার কাছে আসছে এবং বিভিন্ন ভাবে তাকে ছুঁয়ে দেখছে। তাদের কথার ভাঁজ দেখে বুঝা যাচ্ছে মহুয়ার পরিচিত তারা। তাদের স্পর্শে মহুয়ার চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ দেখা যাচ্ছে। সে যে এটা পছন্দ করছে সেটাও সুস্পষ্ট। নিশান মহুয়ার হাত ধরে ছেলে গুলোর কাছ থেকে টেনে নিয়ে চলে আসে। নিশান শান্ত স্বরে বলে
uncomfortable feel করলে সোজাসুজি লোক দের বলে দিতে শিখো। নিশানের কথায়
মহুয়া নিশানের দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

মহুয়া ছোট বাচ্চাদের মত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।

নিশান আর মেহমেত কে নিয়ে যাওয়া হয় এক মোটাসোটা হৃষ্টপুষ্ট শরীরের লোকের কাছে। মহুয়া চুপিচুপি বলে, নির্মল সেন,,এই অন্ধকার গলির দেখাশোনা করে। বর্তমান এই লোকের কথায় পুরো অন্ধকার গলি চলে।
মেহমেত আর নিশান যা বুঝার বুঝে গেছে। এখন‌ তাদের নাটক শুরু।

মহুয়া কে দেখে সাদা রঙের শার্ট পড়া পান খাওয়া লাল টুকটুকে মুখে হে হে করে হাসতে আরম্ভ করেন। নিশান আর মেহমেত কে দেখে আদবের সাথে বসতে বলেন। কিছু ক্ষন কুশল বিনিময় করে,,টাকার বাজেট নিয়ে কথা বলতে থাকে নির্মল সেন। সব থেকে ভালো আইটেম নিতে গেলে রাত পার ১লক্ষ টাকা । আর এর থেকে আরো ভালো নিতে গেলে,আরো টাকা বাড়াতে হবে। এমন নির্মল সেন কথা বলছেন,,যেন তরকারির বাজারে তারা তরকারির দামাদামি করছে।
নিশান তখন চতুরতার সাথে বলে,,টাকা আমরা দিয়ে দিচ্ছি সমস্যা নেই। তবে সুন্দর মেয়ে হতে হবে এটা কিন্তু মাস্ট। আরে কি বলেন দাদা,,শাপলার পাঠানো কাস্টমার দের আমরা ঠকাতে পারি নাকি। আপনি এক দম চিন্তা করবেন না সাহেব। টাকার উপরেই আইটেম ভালো হবে। নিশান বাঁকা হাসলো। তখন মেহমেত দুই লক্ষ টাকার বান্ডিল বের করে সামনে থাকা কাঁচের টেবিলে রেখে দিল। নির্মল সেনের পান খাওয়া ঠোঁট নিমিষেই প্রশস্ত হয়ে যায়,,হেসে টাকা গুনতে আরম্ভ করে সে।
তার পর বলেন,,তাহলে আপনারা ঘরে চলে যান আইটেম আপনাদের পাঠিয়ে দিচ্ছি। মহুয়া আপনাদের নিয়ে যাবে সমস্যা নেই।
মহুয়া তখন ইতস্তত বোধ করে বলে,,আসলে দাদা, উনারা এখানে নতুন তো জায়গা নাকি অনেক ভালো লাগছে। তো তাই তারা একটু ঘুরে দেখতে চায়। তার পর নাহয় ঘরে যাবে তারা।
নির্মল সেন তাঁর সেই দাঁত বের করা হাসি দিয়ে বলে,,হ্যাঁ হ্যাঁ কেন নয় নিশ্চয়ই।
ঠিক আছে দাদা। হ্যাঁ নিয়ে যা ঘুরে ঘুরে দেখা সমস্যা নেই। আচ্ছা দাদা। মহুয়া নিশান আর মেহমেতের উদ্দেশ্য বলে, চলুন সাহেব।

চারপাশে যে রকম টাইট সিকিউরিটি তারা নিয়োজিত করেছে। তাতে বুঝা যাচ্ছে এখান থেকে কাক পক্ষি ও তাদের চোখের অগচরে বের হতে পারবে না।

মহুয়া কে মেহমেত জিঙ্গাসা করে এখন আমরা শিরীন কে কিভাবে খুজবো কিছু কি ভেবেছো।
তুমি তো এর আগেও এখানে বহুবার এসেছো। শিরীন নামের কাউকে কি এখানে দেখোনি?? মহুয়া ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,, আসলে এখানে শুধু কাজের জন্য নিয়ে আসা হতো। আর এখানে শত শত নারী আছে। এদের মাঝে সবার নাম জানা তো সম্ভব ছিল না। তবে এখানে নয়না নামের মেয়ের সাথে ভালো খাতির হয়ে যায়। সে এখান কার অনেক পুরোনো সদস্য। হয়তো সে জানে শিরীনের বিষয়ে কিছু। তার কাছেই যাচ্ছি এখন আমরা।

নয়নার কাছে যায় তারা। মহুয়া কে দেখে নয়না ভিষন খুশি হয়, মহুয়া কে জরিয়ে ধরে বলে,,কত দিন বাদ আসলি?? আমার কথা মনে পড়ে না তোর?? মাঝে মাঝে তো দেখা করার জন্য তো আসতে পারিস। মহুয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,, ইচ্ছে করলেই তো আর বের হওয়া যায় না । আচ্ছা বাদ দে ঐ সব কথা তোর সাথে আমার একটা জরুরী কথা আছে। তার পর মহুয়া শিরীনের বিষয়ে নয়না কে বলে,, শিরীন নাম টা শুনতেই সে টিপুনি কেটে বলে, আরে ঐ সেচ্ছাসেবীর কথা বলছিস?? কোন সেচ্ছাসেবী?? আরে ঐ যে আগের বার যখন এসেছিলি কাজের জন্য,,আর যার সাথে রাত কাটালি সে তোর শরীর কে ক্ষত সৃষ্টি করেছিল আর ঐ খালামুনি তোর শরীরে মলম লাগিয়ে দিয়েছিল?? মনে পড়ছে?? হাঁ ভালো খালা ??
উনি শিরীন। আচ্ছা আমি তাহলে উনার সাথে দেখা করে আসি!! উনি কোথায় আছেন এখন?? নিজের ঘরেই আছে,, কয়েক দিন থেকে ভিষন শরীর খারাপ তার । আচ্ছা তোর সাথে তাহলে পরে কথা বলছি আমি । আরে আমাকে বল কী দরকার। পড়ে বলবো এখন আসছি। মহুয়া দ্রুতপায়ে নিশান আর মেহমেতের কাছে যায়। নয়নার সাথে দেখা করার সময় তাদের কে ঘরের বাইরে রেখে যায় মহুয়া।

শাহানার মায়ের খোঁজ পাওয়া গেছে। নিশান উত্তেজিত হয়ে বলে কোথায়?? চলুন আমার সাথে। গার্ড দের চোখ ফাঁকি দিয়ে শিরীনের ঘরে প্রবেশ করে তারা। অসুস্থ শরীর নিয়ে শুয়ে আছে শিরীন। মেহমেত শিরীন কে দেখে চমকে যায়। সব চেয়ে সুন্দরী সেই নারীর কিনা আজ এই হাল,, চোখে মুখে বয়সের ছাপ পড়ে গেছে। চামড়া ও ঝুলে পড়েছে কিছু টা। চোখ মুখ শুকিয়ে যেন কংকাল প্রায়।
মেহমেত শিরীন কে আন্টি বলে ডাক দেয়। কারো ডাকের আওয়াজে, শিরীন চোখ মেলে তাকায়। চোখের সামনে মেহমেত কে দেখে ধরফরিয়ে উঠে বসে সে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে মেহমেত বাবা তুমি?? আন্টি কেমন আছেন?? বহুবছর পর পরিচিত কাউকে দেখে শিরীন আবেগে মেহমেত কে জরিয়ে ধরে। যে মানুষ টা মেহমেত কে এক সময় পছন্দ করতো না। সে কখনো শাহানার সাথে বাসায় দেখার করার অনুমতি দিতো না। সেই মানুষটা আজ তাকে জরিয়ে ধরেছে।

কিছু ক্ষন শিরীনের সাথে কথা বলে,মেহমেত নিশান কে দেখিয়ে বলে,,আন্টি নিশান??
নিশান!!! শাহানার খুনের দায়ে জেলে যাওয়া নিশান?? হ্যাঁ আন্টি। শিরীন উঠে দাঁড়ায় তার পর নিশানের কাছে গিয়ে গালে আলতো করে হাত দিয়ে বলে,, নির্দোষ কে দোষী বানিয়ে জেল থেকে মুক্তি পেলে কি ভাবে । সে অনেক কাহিনী আন্টি সে সব পড়ে হবে। তার আগে বলুন তো এখানে আমাদের পরিচিত আর কে আছে??

শিরীন একটু ভেবে বললেন। সোনালী!!
মেহমেত নিশান ভ্রু কুঁচকে বলে,,হ্যাঁ সোনালী নামের একটা মেয়ে আছে,,যে আমার জীবনে কাহিনী শুনে বলেছিল,,সে হয়তো আমাকে জানে আমার মত সেও পিশাচের হাতে বন্দি হয়ে এই নরক পুরীতে ঠাঁই হয়েছে। কিন্তু তার আসল পরিচয় সে এখনো দেয়নি আমায়। তবে মেহমেত ,নিশান, আর শাহানা কেও চিনে নাকি!! কোথায় সে এখন ?? নিশান তখন বলে
তার সাথে কি দেখা করে যাবে মা!!
তুমি আমাকে মা বললে?? নিশান চোখ নামিয়ে নিয়ে বলে,, বলুন না কোথায় আছে সেই মেয়েটা??
এখন কোন ঘরে আছে তা তো আমি বলতে পারছি না বাবা। অসুস্থতার কারণে বের হতে পারিনি আমি ৩দিন থেকে।

মহুয়া তখন বলে,, সমস্যা নেই। উপায় আছে চলুন আমার সাথে!!
আবার তারা নির্মল সেনের কাছে আসে আর সোনালীর সাথে দেখা করতে চায় তারা। যদি পছন্দ হয় তো এই মেয়েকে পার্টনার হিসেবে নিবে তারা।

নির্মল সেন,,এক জন লোক কে ডেকে সোনালী কে নিয়ে আসতে বলে!!
মেহমেত আর নিশান বসে আছে। নিশান ছটফট ছটফট করছে সেই মেয়েটি কে দেখার জন্য।

অবশেষে,, ওয়েস্টার্ন ড্রেসে হাইহিল পড়া একটা মেয়ে গটগট করে হেঁটে আসছে তাদের দিকে। সামনে থাকা দুই জন ব্যাক্তিকে দেখে মেয়েটি সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ে। তার কাছে মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে,, এখানে তারা কিভাবে আসতে পারে?? এই দিকে নিশান আর মেহমেত বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে। তার কাছে বিশ্বাস হচ্ছে না,, সোনালী নামের মেয়েটা আর কেউ নয় নির্জনী। লাজুক লতার মতো মায়াবী চেহারার মেয়েটি যে মানুষের সামনে দাঁড়াতো এক হাত ঘোমটা দিয়ে সেই মেয়েটি,,এখন এই অবস্থায় এমন পোশাকে ?? এমন পরিস্থিতিতে??
নির্জনী ডুকরে কেঁদে উঠে,, নিশানের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে নির্জনী দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। তার ছোট সেই বোন আর সেই ছোট্ট নেই। এখন সে ২৬_২৭ বছরের এক জন আবেদনময়ী নারীতে রূপান্তরিত হয়েছে।
নিশান খুশি লাগছে এটা ভেবে নির্জনী বেঁচে আছে। আর তার ভিতর টা ছাই হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে তার বোন এক জন!!!Prostitute

নিশান এক পা এক পা করে বোনের সামনে যায়। চোখ মুখ শক্ত করে সে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু চোখের পানি তা বাধা মানছে না। নির্জনী করে জরিয়ে ধরে নিশান। নির্জনী এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।
#ক্যাসিনো
#পর্ব_৫১
©লেখিকা_মায়া

নিজের বোন কে এমন অবস্থায় দেখতে পারবে নিশান তা সে কল্পনাও করতে পারেনি। নির্জনী জীবিত এটা যেমন আনন্দের তেমনি তাকে নর্দমায় দেখা টা ও বেদনার।

নিশান নির্জনী কে কাঁদতে দেখে মেহমেত আর মহুয়ার চোখেও পানি এসে যায়।
কিন্তু তাদের মাঝে এক জন অখুশি এবং নির্মল সেন ভ্রু কুঁচকে তাদের পর্যবেক্ষন করছে।

অনেক ক্ষন যাবত তাদের ইমোশনাল টপিক দেখতে দেখতে bored হয়ে যায় নির্মল সেন। সে তখন গলা খাকারি দিয়ে বলে,,দাদা আপনারা কি এখানে কোন নাটক তৈরি করতে এসেছেন?? আপনাদের নাটক শেষ হয়ে গেলে আমি কি কোন কথা বলতে পারি?? আসলে হচ্ছে কি এখানে??

নিশান নিজের চোখ মুছে নেয়। তার পর নির্জনীর চোখের পানি মুছে দিয়ে মুচকি হেসে বলে,, অনেক কেঁদে ফেলেছিস আর না। আমার বোন কে আমি আর কাঁদতে দিবো না।
নির্মল সেন চোখ দুটো ছোট ছোট করে, সিরিয়াস হয়ে বলে,,এই যে মশাই সোনালী তোমার বোন হয় কি করে??
নিশান নিজের মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন করে বলে ওর নাম সোনালী নয় নির্জনী।
আর আপনি বসুন আপনার সাথে আমার ঠান্ডা মাথায় কিছু কথা আছে।

নির্মল সেন এক চোখের ভ্রু উঁচিয়ে বলে,,কি কথা ?? আমি এখান থেকে দুই জন কে নিয়ে যেতে চাই। আপনি কি কোন ডিল করতে চান ?? নাকি আমি ওদের সসম্মানে নিয়ে যেতে পারি?? এই যে দাদা!! পাগল মনে হচ্ছে আমাকে?? এখান থেকে কোন কাক পক্ষি ও যেতে পারে না আর তোমরা দুই জন মানুষ কে নিয়ে আসবে?? মাথার ব্রেন নষ্ট হয়ে গেছে?? অন্ধকার গলিতে আছো এটা। কোন হোটেলে নয়। এসেছো দৈহিক কামনা মিটাতে । টাকা দিয়েছো কাজ খতম করো আর এখান থেকে কেটে পড়ো। বুঝেছো?? মানুষ টা আমি খুব ভালো নয় হুঁ!! তাই যাও।

নির্মল সেনের এমন শান্ত হুমকি তে মেহমেত ঘাবড়ে গেলেও নিশান ঘাবড়ালো‌ না। সে সোফায় আরামে পায়ের উপর পা তুলে বসে। মেহমেত কেও বসতে বলে। তার পর মেহমেতের দিকে তাকিয়ে বলে,,আর শেষ কাজ করতে পারবি। নির্জনী আর শাহানার মাকে বের করতে টাকা দিতে পারবি??
মেহমেত নিশানের কথায় হেসে বলল,,জান ও হাজির তোর জন্য। শুধু টাকা কেন??

মেহমেত তখন চেকবই বের করে বলে,,,দাদা এমাউন্ট বলেন,,দুই জনে কত টাকা চাই তাদের মুক্তি দিতে?? নির্মল সেন শান্ত স্বরে বলে দুই জনে দুই কোটি!!
নির্মল সেনের ধারনা ছিল তারা হয়তো টাকা দিতে পারবে না।‌কিন্তু মেহমেত চেকবই এ সাইন করে নির্মল সেনের হাতে চেক টা দিলো। তার পর উনি ভ্রু কুঁচকে বলে,,ফেইক চেক!!
মেহমেত মুচকি হাসলো তার পর বললো ফেইক না দাদা,, আপনি বরং চেক নিয়ে এখনি ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে নিয়ে আসতে পারেন। আমরা এখানেই আছি আপনি না আসা পর্যন্ত।
নির্মল সেন চেক টা ভালো করে দেখে AHK কম্পানির চেক। মেহমেত খান!!
ফেইক নয়। নির্মল সেন চেক টা ফেরত দিলো মেহমেত কে। তার পর বলল ,,এখান থেকে আমি কোন এমাউন্টে কাউকে বের করছি না।
আর এদের মতো বে*** কে বের করে কি হবে?? কাজ করতে ইচ্ছে করলে চলে আসবে। বের করে নিয়ে যেয়ে কি নিজেরা ধান্দা করতে বসবে???

মেহমেতের মাথা গরম হয়ে যায় নির্মল সেনের এমন গালিতে। আর এই দিকে নিশান চোয়াল
শক্ত করে ব্লেজার থেকে গান বের করে নির্মল সেনের মাথায় ধরে। আর এক হাত দিয়ে তার নাক বরাবর ঘুষি মারে। আচমকা এমন আক্রমণে হতভম্ব হয়ে যায় নির্মল সেন। নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। গর্জে ওঠে নিশান বলে,,সালা জারজ,,কি করে আমার বোন কে তুই বে** বলিস?? গানের ভিতর ৬টা গুলি আছে!! একটা একটা করে তো সারা শরীরে বসিয়ে দিবো। ব্যাস তোর খেল খতম।
নিশানের এমন হট্টগোলে সব গার্ডরা ছুটে আসে। বিভিন্ন ঘর থেকে বের হয়ে আসে অনেক অনেক ছেলে মেয়ে। শিরীন নিজেও অসুস্থ শরীর নিয়ে বের হয়ে আসে।

গার্ডরা নিজেদের গুলি উঠিয়ে নিশান কে হুমকি দেয়। নিশান একটা গুলি ছুড়ে নির্মল সেনের হাতে লাগে। তার পর হুংকার দিয়ে বলে,, ওদের বন্দুক ফেলে দিতে বল! নাহলে পরবর্তী গুলি তোর কপাল বরাবর !! নির্মল সেন ভয়ে কুকড়ে যায়। সবাই কে বন্দুক নামিয়ে ফেলতে বলে,, নির্মল সেন কে দাঁড়াতে বলে,, এবং তার মাথায় বন্দুক তাক করেই। নির্জনী আর শিরীন কে সাথে আসতে বলে,, মহুয়া কে নিশান বলে তুমিও চলো,,আর মেহমেত শাহানার মাকে ভালো করে ধরে নিয়ে আয়।

নির্মল সেন কে দরজা পর্যন্ত নিয়ে আসে,, পিছন পিছন সমস্ত গার্ডরাও চলে আসে। সবাই কে নিশান গাড়িতে উঠতে বলে,, নিশান টাকার চেক টা নির্মল সেনের পকেটে ঢুকিয়ে দেয়। তার পিছনে দাঁড়িয়ে গার্ডদের পায়ের কাছে তিন টা গুলি ছোড়ে তারা ভয়ে দূরে সরে যায়। নির্মল সেন কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে চটজলদি গাড়িতে উঠে বসে নিশান। তার পর চিৎকার করে বলে,,আজ কের দিন টা ভুলে যেতে নাহলে পরের বার লাশ উদ্ধার করা হবে তোর।

নিশান নির্জনী কে এক হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে আছে। নির্জনী কাঁদছে। তার বাবা মায়ের জন্য কাঁদছে সে। শিরীন কেবল বুঝতে পারলো যে সোনালী নামের মেয়েটা আসলে নিশানের বোন ছিল।
শিরীন এখন কোথায় যাবে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না । মহুয়া শুধু এই সুন্দর মূহুর্ত টা কে উপভোগ করছে। কত বছর পর নিশানের আঁধার কালো জীবনে এক চিলতে আলো হয়ে নির্জনী কে পেয়েছে সে

মেহমেত নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
বাসায় সবাই কে নিয়ে যাওয়া হয়। শিরীন আর নির্জনী কে দেখে অবাক হয় মরিয়ম।

শিরীনের থেকে জানতে পারা যায়,,যে শাহানার মৃত্যুর প্রথম দিকে সে নিশানের বিরুদ্ধে ছিল। যে সত্যি হয়তো নিশান নিজেই খুনি। কিন্তু যখন অনিত তাদের বাসায় আসে তখন আফজালের সকল তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। যে আসল খুনি কে। ঘৃনা এসে গিছেলো ওদের উপরে। খুন করতে ইচ্ছে হচ্ছিল। ছুড়ি দিয়ে আঘাত করি অনিত কে। ক্ষেপে গিয়ে বন্দুক তোলে। আফজাল শরীফের জন্য হয়তো প্রানে বেঁচে গেছিলাম কিন্তু এই নরক পুরীতে রেখে যায়। শুধু মাত্র কষ্ট দেওয়ার জন্য। প্রতি টা মূহুর্তে আশা রাখতাম অনিতের আশায়। এবার ওকে পেলেই খুন করে ফেলবো। আফজাল শরীফ বেশ কয়েক বার এসেছিলেন। দুঃখ প্রকাশ করেছে। কেঁদেছে। কিন্তু সেদিন তার কান্না আমার কাছে উপহাস ছাড়া কিছুই মনে হয়নি। নিজের রক্ত কে সে মেরে ফেলেছে। আর নিজের বাবা কে যে মানুষ টা হত্যা করতে পারে তার কাছে নিজের মেয়ের খুন ও স্বাভাবিক।

নিশান আর মেহমেত যখন বললেন যে আফজাল শরীফ আসলে মারা গেছেন। তার ক্যান্সার হয়েছিল। আর কয়েক দিন আগেই সে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে।
শিরীন কিছু ক্ষন থম মেরে বসে থাকলেন। তার পর চোখের কোণের জমে থাকা পানি টা মুছলেন। এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। যেন সব কষ্ট তার দীর্ঘশ্বাস চিড়ে বের করে দিবে। যতই হোক স্বামী।

নির্জনীর বিষয় টা জানতে চাইলে সে বলে,,মা বাবাকে নিজের চোখের সামনে মা বাবাকে খুন হতে দেখেছি। অনিত আর তাদের কিছু লোক জন যায় । কারন আব্বা তার শেষ সম্বল টুকু বিক্রি করে। অনেক কষ্টে উকিলের ফিস জমা দেয়। ভাইয়া কে বের করার আপ্রান চেষ্টা করে আব্বা। তার এই বাড়াবাড়ি তে অনিত আসে আমাদের গ্রামের বাড়িতে।‌আর বাবা কে ওয়ার্নিং দেওয়া হয় কিন্তু আব্বা শুনেননি। উকিল কে নিয়ে সে কোর্টে যায়। কিন্তু তারা আব্বার উকিল কে সুযোগ দেয়নি। আর তখন এটা নিয়ে উকিল নিজেই মামলা করেন। তাই তাকেও মেরে ফেলা হয়। আর ঐ রাতে তারা আসে। আব্বাকে অনেক মারধর করে। আশেপাশের কেউ সাহায্য করতে আসেনি। আর শেষমেষ বলে,, আমাকে যদি তারা দিয়ে দেয় তাহলে নাকি ভাইয়া কে ছেড়ে দিবে। আর মা বাবা রাজি হয় না। ভাইয়া কে বের করার জন্য নিজেকে বলি দিয়ে দেয়। তাদের সাথে যেতে রাজি হয়। কিন্তু আব্বা আম্মা কেউ আমাকে ছাড়তে নারাজ।
আর আব্বা তখন চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। আম্মা আহাজারি করে কাঁদতে থাকে। তখন অনিত আমার হাত ধরে থাকে। আর তাদের লোকেরা আমার মা বাবার গলা টিপে মেরে ফেলে। নিজের চোখের সামনে মা বাবাকে মরতে দেখেছি। আমি মনে হয় সেদিন আর এই দুনিয়া তে ছিলাম না। জানোয়ার পিশাচ। আমার মা বাবাকে দরি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে দেয়। সুন্দর খুন‌ হয়ে গেল আ/ত্মহ/ত্যা।

চলবে _____????#ক্যাসিনো
#পর্ব_৫২
©লেখিকা_মায়া

নির্জনীর চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ। নিজের বাবা মায়ের মৃত্যু স্বচোখে দেখেছে এতো বছর নরক যন্ত্রনা সহ্য করেছে।
তার পর ও চোখে পানি নেই তার। যেন এই চোখে তার কান্নার জন্য এখন নয়,,হয়তো বা তার চোখের পানি কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে গেছে। নাকি অধিক শোকে পাথর সে।

কিন্তু নিশানের গাল গরিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। ছোট বোনের এমন হাল তার সহ্য হচ্ছে না । এতোদিন ভাবতাম শুধু কষ্ট আমি একাই সহ্য করছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার থেকে নির্জনীর বয়স অনেক কম ছিল মাত্র ১৭বছর বয়সে মেয়েটার উপর দিয়ে কত কত ঝড় ঝাপটা গেছে। অথচ সে এতো নিশ্চুপ কি করে আছে???

নির্জনী শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
তার বুক চিরে আসা দীর্ঘশ্বাসে ছিল রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়া প্রতিশোধের প্রতিক্ষা।

_____________

আদালত থেকে যে সময় মরিয়ম কে দেওয়া হয়েছিল তার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আজ আদালতে মরিয়মের সাক্ষ্য প্রমান হাজির করার সময় চলে এসেছে। কেস টা যতটা জটিল ভেবেছিল,, ঠিক ততটাও জটিল মনে হয়নি মরিয়ম কে। শুধু একটু পরিশ্রম দরকার ছিল। তবে সব থেকে বড় প্রমান তো আফজাল শরীফ নিজেই দিয়ে গেছেন। তার দ্বারা এই পাপের সাম্রাজ্যের ধ্বংস একাই করা যাবে। কিন্তু নিশান কে নির্দোষ প্রমাণিত করার জন্য সব সাক্ষী দের দরকার। যারা নিশানের নামে মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছেন।

এরি মধ্যে ঘটে গেছে এক ঘটনা। গত কাল রাতে মরিয়মের ফোনে আননোন নাম্বারে হুমকি ওয়ালা মেসেজ এসেছে। তা দেখে মরিয়ম কিছু টা ঘাবড়ে যায়। কাউকে কিছু বলেনি সে। কিন্তু মধ্যে রাতে আবার আননোন নাম্বার থেকে কল আসে । মরিয়ম রিসিভ করে এবং এক ভারি কন্ঠ ওয়ালা ব্যাক্তি অপর পাশ থেকে ঝাঁঝালো কন্ঠে হুমকি দেয় মরিয়ম কে যেন কাল সে এই কেইস টা না লড়ে। এবং অনেক টাকার অফার ও করা হয়েছে তাকে। যেন সমস্ত প্রমান তাদের দিয়ে দেওয়া হয়।তখন মরিয়ম তিক্ত গলায় জবাব দেয় যে সে এক পা ও পিছু হটবে না এই কেইস থেকে । যা করার করতে পারেন। তখন লোকটি পরিবারের ক্ষতি করার কথাও উঠাই। কিন্তু মরিয়ম ভয় পায়না। সে ভীতি সংকোচ বোধ সব পিছনে লুকিয়ে বলে,,সাহস থাকলে আমার পরিবারের কালো ক্ষতি কেন হাত দিয়ে দেখান। সব কয়টা কে জেল হাজতে সঠিক শাস্তি না দেওয়া অব্দি আমি থামবো না। কিছুতেই না।

লোকটি আরো হুমকি দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে ফোন কেটে দেয়। মরিয়ম মেহমেত আর মিহির ঘুমন্ত মুখ টার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু ক্ষন। সে তার পরিবার কে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বুঝতে পারছে সে। কারো কোন ক্ষতি করার আগেই সব সামলাতে হবে। কেইস টা এতো সন্তর্পনে হ্যান্ডেল করার পর ও ক্রিমিনাল দের কাছে খবর পৌঁছে গেছে। এখন তাদের সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে আফজাল শরীফের দেওয়া প্রমান গুলো কে সেফ রাখতে হবে। মরিয়ম তখন আলমারির সিন্দুক থেকে ফাইল এবং আরো প্রমানদি নিয়ে সে স্টোর রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়। স্টোর রুমের পুরোনো একটা কাঠের বাক্সে মরিয়ম ফাইল টা রেখে দিল।

তার পর সকাল হতেই জানা যায়। বাসায় কেউ রাতে এসেছিল। সবার ঘরের জিনিষ পত্র এলোমেলো বিশেষ করে মরিয়মের ঘরের। মরিয়ম যা আন্দাজ করেছিল তাই হয়েছে। সে দ্রুত চলে যায় স্টোর রুমে‌। ফাইল টা পেয়ে মরিয়ম শান্তির নিশ্বাস ফেলে।

আদালতের উদ্দেশ্য নিশান মরিয়ম মেহমেত এবং বাড়ির আরো সদস্য ছিলেন সাথে মহুয়া নিজেও। শুধু নির্জনী বাদে। নির্জনীকে নিশান বাসায় রেখে এসেছে। সে আর নির্জনী কে নিয়ে রিস্ক নিতে চায় না।

রাস্তাতেও এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। তাদের গাড়িটা কে একটুর জন্য বেঁচে গেছে এক্সিডেন্ট হওয়ার হাত থেকে। সব কিছু নিয়ে মরিয়ম কে বেশ চিন্তিত দেখা যাচ্ছে।

আদালতে পৌঁছে,, অর্ধেক সাক্ষীই আসেননি। তাদের ফোন ও বন্ধ বলছে। আর বাকি যারা এসেছে তারাও সাক্ষী দিতে ভয় পাচ্ছে কারন রাতে নাকি সবার ফোনে মেসেজ এসেছে যেন এই কেইস আমরা সাহায্য না করি। মরিয়ম এবার ভেঙে পড়তে লাগলো যেন। কিন্তু সে হাল ছাড়লো না। কঠোর মুখে বলল সে,,যদি সত্যি বলতে আপনারা ভয় পান তো এখান থেকে চলে যান। প্রয়োজন পড়বে না হয়তো আপনাদের। সত্যি বলতে যারা ভয় পায় তাদের ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকায় ভালো। নিজের স্বার্থে যারা নিদোর্ষ কে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন তাদের থেকে আমি সত্যি টা আশা করেছিলাম এটাই আমার ভুল ছিল।
যান আপনারা।

মরিয়মের কথায় সবাই মাথা নিচু করে নিল। মরিয়ম জেনে বুঝে তাদের আত্মসম্মানে আঘাত করেছে। কারন প্রতি টা মানুষের কাছেই সব থেকে জরুরি জিনিস হলো সেল্ফ রেসপেক্ট।

মরিয়মের কথায় কাজ হলো। সবাই সাক্ষী দিতে প্রস্তুত। যা হবে দেখা যাবে।

আদালতের কাজ শুরু হলো। মরিয়ম সংকোচ বোধ না করে অতি সাহসের সাথে যুক্তি এবং তথ্য প্রমান ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সে প্রমানিত করেছে যে নিশান নির্দোষ।
এবং,এই দেশে, শিশু ও নারী পাচারের সাথে সাথে ড্রাগসের ও কারবার করা বিভিন্ন নেতাদের চক্রান্তে নিশান কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। আর সব ছেয়ে আফসোসের বিষয় হলো,,শাহানা নিশানের স্ত্রী ছিলেন। আর তাকে হত্যার সময় তার বাবা আফজাল শরীফ নিজে ছিলেন। অথচ কি সুন্দর নাটক করেছিলেন তিনি।

পাপ কাজ বাপ কেও ছাড়ে না তাই আফজাল শরীফ কেও ছাড়েনি। সে যে পাপ করেছিলেন তার শাস্তি সে দুনিয়াতে তো পেয়েছেই। সাথে যাদের জন্য এতো জঘন্য কাজে লিপ্ত ছিল। দিন শেষে তারাই তাকে একা ফেলে দিয়েছিল। তার এই শেষ সময়ে একাকিত্বে কাটানো সময় টায় জাহান্নামের এক খন্ড শাস্তি ছিল ।

সকল কিছু তথ্য সাক্ষীতে নিশান কে নির্দোষ প্রমাণিত করতে মরিয়ম পেরেছে।
আইন আবার কি করবে আদালত নিশানের কাছে মাফ চেয়েছে। এবং তাকে ক্ষতি পূরণ ও দিতে চেয়েছে। নিশান তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,,যদি তার পরিবার এবং শাহানা কে ফিরিয়ে দিতে পারে এবং ১০ বছরের
প্রতি দিনের কষ্ট গুলোর প্রতিদান যদি আদালত এই আইন দিতে পারে তবেই যেন আমাকে ক্ষতি পূরণ দিতে আসে তারা ।
নিশান আদালত থেকে হনহন করে বেরিয়ে আসে। সারা দেশে আবারও ব্রেকিং নিউজ। ১০ বছর আগের সেই ঢাবির রেকর্ড করা ছাত্র আসলে নির্দোষ ছিল। সে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিল। এসব ব্রেকিং নিউজে নিশানের কোন ভাবান্তর নেই। তবে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে অনিত এবং এই দেশের বিভিন্ন নেতা বড় বড় ব্যাবসায়ী যারা এই কুৎসিত কাজের সাথে জড়িত তাদের পুলিশ Rab বাহিনী সবাই মিলে তাদের আটক করার অনুমতি প্রদান করা হয়।

দেশে প্রতি নিয়ত হট্টগোল সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের বড় বড় নেতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। অনিত সহ আরো কিছু লোক দেশের বাইরে রয়েছে তাদের দেশের আদালত থেকে অন্য দেশে আবেদন করা হয়েছে যেন অতি শীঘ্রই ঐ সব লোক দের পুলিশ কাস্টেডি তে নিয়ে এসে দেশে ফেরত দেওয়া হয়।

বেশ কিছুদিন আরো কেঁটে যায়। মহুয়া এখন মরিয়মের সাথেই থাকে। তাকে যে শাপলা ছেড়ে দিয়েছে তা শুনে মরিয়ম ভিষন খুশি হয়। তখন মহুয়া মনমরা হয়ে জিজ্ঞেস করে আচ্ছা মরিয়ম আপা ,, আল্লাহ কি আমায় ক্ষমা করবেন?? আমি যদি এখন আপনার মত পর্দা নামাজ এবং ঈমানের সাথে থাকতে চাই তাহলে উনি কি আমায় মাফ করে দিবেন?? মহুয়া যখন কথা গুলো বলছিল তখন তার চোখ ছলছল করছিল হয়তো এখনি বাঁধ ভেঙে পানি পড়বে। তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো মরিয়মের দিকে চেয়ে থাকে।

তখন মরিয়ম মুচকি হেসে জবাব দেয়

إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِه وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَاءُ‎
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী (শির্ক) করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন।’’[1]
শির্ক ছাড়া অন্যান্য কাবীরা গুনাহগুলো মাফ পেতে সাধারণত তাওবাহ্ করার দরকার হয়। কিন্তু সগীরা গুনাহ মাফের জন্য সবসময় তাওবার প্রয়োজন হয় না। দৈনন্দিন কিছু ‘আমলের মাধ্যমে এসব ছোট-খাট গুনাহগুলো মাফ হয়ে যায়। তাই কাবীরা গুনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকলে সগীরা গুনাহগুলো আল্লাহ মাফ করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন,
إِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا‎
‘‘তোমরা যদি নিষেধকৃত কাবীরা গুনাহগুলো বা গুরুতর/বড় পাপসমূহ পরিহার করো তাহলে আমরা তোমাদের (ছোট) লঘুতর পাপগুলোকে মোচন করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবো।’’[2]

আল্লাহ তার সাথে অংশীদারি করা ছাড়া সকল গুনাহ মাফ করে দিতে চেয়েছেন। কারন আল্লাহ রহমত ছাড়া আমরা অচল। আর আল্লাহ যদি চান তো তুমি ও এখন থেকে পাক্কা ইমানদার হতে পারো।

মহুয়া তখন সিজদায় পড়ে যায়। আর বার বার বলতে থাকে,, আলহামদুলিল্লাহ,
ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ,, আল্লাহ মহান। উনি ছাড়া যে আমরা দিশেহারা।

পরবর্তী তে মরিয়ম মহুয়া কে একটা ছোট লাইব্রেরী করার জন্য সাহায্য করেন। যেন সে পর্দার সহীত নিজে সাবলম্বী হতে পারে।

আরো এক সপ্তাহ কেটে যায় তখন অনিচ কে পুলিশ দেশে নিয়ে আসে। এবং আজ তাকে আদালতে হাজির করা হবে। মরিয়ম সহ মেহমেত নিশান এবং মহুয়া ও যায় আদালতে।

এই দিকে নুর মোহাম্মদ নিজের কাজে অটুট ছিল এতো দিন। তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল সেই হত্যার কেইস নিয়ে। কিন্তু হঠাৎ দেশের এমন হট্টগোলে মরিয়মের এমন কার্যকলাপ দেখে নূর মোহাম্মদের অনেক খটকা লাগে। মেহমেত খুনি নয়। আর এতো দিন যাদের কে সাধারণ মানুষ বলে আসা হয়েছিল তারা আসলে কালো ব্যাবসায়ীর সাথে জড়িত ছিল। আর সব যোগসূত্রে যেন নিশানের সাথে হওয়া অন্যায় টা মিলে যাচ্ছে। নূর মোহাম্মদ নিজেও নিশান কে নিয়ে অনেক ঘাটাঘাটি করে। পরিশেষে সব যেন নিশানের উপর ইঙ্গিত দিতে ইচ্ছে করছে যে কোন খানে নিশান নয় তো খুনি??

চলবে _____????
চলবে_____????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here