#ক্যাসিনো ©লেখিকা_মায়া
#পর্ব_৩৬
শুনেছি আপনি অনেক ভালো ক্যাসিনো খেলতে পারেন?? একটা দান হয়ে যাক??
কি বলেন!!
নিশানের কোন ভাবান্তর হলো না। কিন্তু দেখে বুঝা যাচ্ছে। মরিয়মের এমন প্রস্তাবে সে খুব চমকেছে।
কিছু ক্ষন থম মেরে মরিয়ম কে ভালো করে দেখে বলে! মেয়ে মানুষের সাথে আমি ক্যাসিনো বোর্ডে যাই না। কেন যান না? ভয় পান? যদি মেয়ে মানুষের কাছে হেরে যান ?
হঠাৎ নিশান গলা ফাটিয়ে হাসতে হাসতে বলে। আমি শুধু একটা মেয়ের কাছে ভীতু ছিলাম। কিন্তু এখন আমার মৃত্যু দেখেও ভয় লাগে না। আর সামান্য হেরে যাওয়া নিয়ে ভয় পাবো?? হাস্যকর !!
মরিয়ম নিজের নজর ক্ষুধার্ত চিলের মতো করে সুচের ন্যায় চোখে তাকিয়ে বলে..
সেই মেয়ের নাম শাহানা ছিল,এম আই রাইট !
অনেক দিন পর কারো মুখে শাহানা নাম টা শুনে নিশানের বুক টা ছ্যাত করে উঠে। ফ্যাকাশে মুখ করে বলে… সে যায় হোক। এখানে আসার কারণ টা কি মেহমেত। সেটাও বউ কে সঙ্গে নিয়ে? মরিয়ম তখন একটা রহস্যময় মুচকি হাসি দিয়ে বলে, আসলে হয়েছে কি ভাইয়া.. আপনি তো এখনো আপনার বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে পরিচিত হোন নি সেই কারণেই একটু পরিচিত হওয়ার জন্য আসলাম। আর মেহমেতের থেকে শুনলাম যে আপনি খুব ভালো ক্যাসিনো খেলতে পারেন। তো আমার একটু সখ জাগলো যে আমি ও আপনার সাথে ক্যাসিনো খেলি। আসলে আমি কখনো এসব খেলিনি। তবে রুলেট খেলা সম্পর্কে আমি জানি নিয়ম গুলো। এটা খেলার জন্য আলাদা কোন নিয়ম কানুন শিখে আসতে হয় না। অনুমান ঠিক ঠাক করে শুধু নাম্বার সিলেক্ট করলেই হয়। আর ভাগ্য সহায় থাকলে জিতাও যায়। আর এই খেলা টা তেই তো আপনি আমার হাসব্যান্ড কে হারিয়ে আমাদের সয়সম্পত্তির মালিক নামে পরিচিত লাভ করেছেন। সেটাও নিজের ভুয়া পরিচয়ে?? কেন নিজের ভুয়া পরিচয় দিয়েছেন? নিশান তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে তা সেই সম্পত্তি কি আবার জুয়া খেলায় জিতে নিতে চাচ্ছেন?? মরিয়ম হাসার চেষ্টা করে বলে
ভাইয়া কি বলছেন এসব? আমি সম্পত্তি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য খেলতে চাচ্ছি না। আমি অন্য কিছু চাইবো আপনার থেকে। সেটা আপনাকে দিতে হবে বাই চান্স আমি যদি জিতে যায় তো!!
আর আমি যদি বলি আমি খেলবো না তাহলে। বোনের একটা আবদার ফেলে দিবেন আপনি?? নির্জনী যখন আপনাকে আবদার করতো তখন কি আপনি ফেলে দিতেন??
নিশানের ভিতর টা এক অদ্ভুত যন্ত্রনা আর এক উষ্ণ ব্যাথায় টনটন করে উঠলো। নিশান মনে মনে ভাবতে থাকে,
নির্জনী আমার ছোট বোন.. কত শখ কত আবদার ঐসব তো আমি পূরণ করতেই পারিনি। ওর কত ইচ্ছে অপূর্ন রয়ে গেছে। নিশানের ক্রোধ আর প্রতিশোধের আগুন আবার যেন দ্বিগুন ভাবে জ্বলে উঠলো।
শুকিয়ে যাওয়া ক্ষত গুলো আবার আলগা হয়ে মাথা চারা দিয়ে উঠতে চাচ্ছে। মূহুর্তেই নিশানের চোখ রাগে ক্ষোভে লাল হয়ে উঠে।
নিজের রাগ কে এক বড় নিঃশ্বাস নিয়ে কাবু করার চেষ্টা করলো। মাথা টা ঠান্ডা করতে হবে। তীরে এসে তরী সে ডুবতে দিতে পারে না রাগের বসে। নিজেকে যত টা পারে সংযত আর স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো সে।
মরিয়মের মুখের দিকে নজর করলো নিশান। তার বোন ও তো খুব সুন্দর চেহারার অধিকারী ছিলেন। গায়ের রং টা একটু চাপা হলেও মুখের গরন টা চোখে লাগার মত ছিল।
নির্জনী যদি ফর্সা হতো তাহলে নিশ্চয়ই মরিয়মের মত নূরানী আর মায়াবী চেহারার অধিকারী হতো। মরিয়মের মুখশ্রী অবলোকন করলো নিশান ভালো করে।
তার পর শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করলো।
আমার কি চান আমি দিয়ে দিবো ক্যাসিনো খেলার প্রয়োজন নেই। বলেন আপনি?
ইশ্ বোন কে কেও আপনি বলে? ভাইয়া প্লিজ আপনি নয় তুমি বললে বা তুই বললেও খুশি হবো। নিশান মুচকি হেসে বলল ইমোশনাল হেরাজমেন্ট করছেন?? মরিয়ম সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে বলে। ভালো মানুষরা খারাপের অভিনয় টা ঠিক ভাবে করতে পারলেও তাদের ভিতরের মনুষ্যত্ব আর ভালো মানুষ টা একে বারে মেরে ফেলতে তারা পারে না। আমি সেটাই করছি সেই ভালো মানুষ টা কে দেখতে চাচ্ছি।
আমি যা চাই তা খেলায় জিতে যাওয়ার পর না হয় বলি। আপনি যদি জিতে যান তো কি চান সেটা আগেই বলেন!!
বোর্ডে যাওয়া যাক। আমি ও যখন জিতে যাবো তখনি বলবো।
মেহমেত চুপচাপ তাকিয়ে দেখছে সব। অনেক দিন পর নিশান কে এমন স্বাভাবিক আচারন করতে দেখছে সে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন নিশান এবার অন্তত তাকে ভুল বুঝা থেকে মুক্তি দেয়। আমি জানি নিশানের কষ্টের কাছে তাকে যা সে কষ্ট দিয়েছে তা ১০০ তে ১০%
কেননা তার পরিবার তার স্ত্রী সব তার সাথে আছে। আর নিশানের আগে পিছে আমি ছাড়া কি আর কেউ আছে?? কোথায় কেউ নেই তো।
রুলেট বোর্ডে ছোট চাকায় ছোট একটা বল স্পিন করছে। এবারের গেমে তারা দুজনেই একটা করে অনুমান করবে বল টা কয় নাম্বারে পড়ে। সেটাও এক সাথে। নিশান এবার বেশ ঘাবড়ে আছে। কেন জানি না অনেক দিন পর ভীতি কাজ করছে তার ভিতরে। যদি অনুমান সঠিক না হয় । তো সে হেরে যাবে। আর মরিয়ম তার কাছে কি চাইবে তা নিয়ে বেশ কৌতুহল হয়ে আছে সে।
মরিয়ম ২৫ নাম্বার চয়েজ করে। আর নিশান ৫নাম্বার ।
বল স্পিন করা বন্ধ হয়ে যায়। আর নিশানের তীক্ষ্ণ নজর আর মস্তিষ্কের জন্য এবারো জিতে যায়। নিশান দাঁত বের করে হেসে উঠে। মরিয়মের তেমন কোন আগ্রহ নেই খেলায়। সে নিশানের জিতে যাওয়া টায় দেখতে চেয়েছিল। মরিয়মের দিকে চেয়ে নিশান বলে তাহলে আমি তো জিতে গেলাম। মরিয়ম হাততালি দিয়ে বলে। অসাধারণ মানতেই হয় আপনি অনেক ভালো খেলোয়াড়।
এখন কথা হচ্ছে আপনি আমার কাছে কি দাবি করবেন এখন??
নিশান কিছু ক্ষন ভেবে বলে,যদি চেয়ে বসি তোমার স্বামীর জান টা আমি চাই। মেহমেত নিশানের কথায় ভরকে গেল। কিন্তু মরিয়ম স্থির মস্তিষ্ক এবার বুঝে উঠতে পারলো । নিশান তার ইমোশনাল হেরাজমেন্টে পড়ে গেছে। আপনি থেকে যখন তুমি তে চলে এসেছে তখন নিশানের কাছে থেকে এখন আসল কথা বের করা যাবে।
মরিয়ম শান্ত হয়ে বসে বলল । ভাই কখনো কি চাইবে যে তার বোন কে বিধবা দেখতে…!!
খুব ভালো কথা বলতে পারো কিন্তু তুমি। হুমম পারবো না। যতই হোক এখন আমি বিদ্যা সাগরের বোন বলে কথা। এমন পুরোনো কথা গুলো ঘাটলাচ্ছো কেন?? চাচ্ছো কি ??
মরিয়ম এবার নড়েচড়ে বসল। তার পর বলল। আমি জানতে যা তা হলো।
ক্যাসিনো গেম আপনি তো অনেক ভালোই খেলতে পারেন তাহলে জীবন ক্যাসিনো তে হেরে কি ভাবে গেলেন???
#ক্যাসিনো
©লেখিকা_মায়া
#পর্ব_৩৭
আপনার অতীত আমি জানতে চাই ভাইয়া!!
আমি জানতে চাই? কি দেখেছিলেন সেই পাহাড়ে?? কি হয়েছিল সেদিন যেদিন আপনাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নিশান বিস্মিত চোখে চেয়ে বলে,সব তো দেখছি মেহমেত বলেছে তোমায় , তাহলে এটা কি বলেনি যে সে কার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমাদের সাথে এমন ঘৃণিত কাজ করেছিল??
আপনি কিভাবে জানেন যে মেহমেত সেই সব কিলারের সাথে ছিলেন?
কে বলেছে আপনাকে? নিশান চেয়ার টেনে পায়ের উপর পা তুলে বসলো। তার পর ক্ষীণ স্বরে বলে,প্রথমত বলতে গেলে , এসবে মেহমেত সামিল ছিল এটা সত্য। আর শেষ কথা বলতে গেলে এটাই সত্যি মেহমেত আমাদের জীবন টাকে ধ্বংস করাই এক বড় অংশে জরিয়ে রয়েছে।
মরিয়ম এই বিষয়ে আর বেশি কথা না বলে, মূল কথায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। আচ্ছা মানলাম সব কিছু, এখন আমার আবদার আপনি আমায় বলবেন যে শুরু থেকে কি হয়েছিল সেদিন আপনাদের সাথে???
তুমি এসব জেনে কি করবে?? তোমার কি কাজ এসব জেনে?? আমি এটা জানার পর অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে চলেছি। প্লিজ এই আবদার টা ফেলবেন না?? নিশান নরম হলো, কেন জানি না মরিয়ম কে তাঁর নির্জনীর জন্য মন টা কেমন করছে। মরিয়ম কে কঠোর কিছু বলতে পারছে না। কত দিন পর তাকে কেউ ভাইয়া বলে ডেকেছে।গত ১০টা বছর পর কারো মুখে ভাইয়া ডাক শুনে বুকের ভিতর মুচড় দিয়ে উঠছে।
নিশানের চোখের সামনে পুরোনো কিছু স্মৃতি ভেসে বেড়াতে লাগল। মানুষ সুখের মূহুর্ত গুলো নিজের মস্তিষ্কে ধরে তো ঠিকি রাখে কিন্তু দিন দিন তা অল্প অল্প করে ভুলে যায় সব পরবর্তী তে মনে না করার জন্য। আর কষ্টের মূহুর্ত গুলো ও সুন্দর করে মস্তিষ্ক ধরে রাখে, সাথে ক্ষনে ক্ষনে তা মনে পড়তে থাকে,অল্প একটু আঘাতেও এর আগে কত ক্ষত সে পেয়েছে তা সব জরো করে অনুভব করতে চেষ্টা করে। তার কারনেই মানুষ ভাবে সুখের মূহুর্ত গুলো কম আর কষ্টের মূহুর্ত গুলো দীর্ঘ।
নিশান ধীর কন্ঠে বলতে থাকে, মেহমেতের সারপ্রাইজ টা সেই সময় এতোটাই ভালো লেগেছিল যে তা বলার ভাষা ছিল না। শাহানাকে একটা দিনের জন্যে সঙ্গী করে পাওয়া যেন নিজের ভাগ্য করে শুকরিয়া আদায় করতে ইচ্ছে করছিল। সাদা রঙের
জামা তে সাক্ষাত পরি পরি লাগছিল, শাহানা কে। মেহমেত তো চলে আসে,আর শাহানা বাড়ি টা ভালো করে দেখছিল। ৫বছর পর আবার এই বাসা তে আসা হয়েছে, স্কুলে থাকতে মেহমেতের সাথে প্রায় এখানে আসা হতো,আন্টির হাতের রান্না এতো ভালো লাগতো যে যখন মেহমেত দের বাসায় যখন শাহানা আসতো,না খেয়েই আসতো। যেন আন্টি জিজ্ঞেস করে খেয়েছে কিনা,আর শাহানা ফট করে হেসে বলে দেয়,নাহ খুব ক্ষুধা পেয়েছে তার। সব কিছু মনে করতেই শাহানা হেসে দেয়। নিশান শাহানার পিছনে পিছনে আসছে আর শাহানার মুখ পানে তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো চেয়ে রয়েছে। যেন বহুকালের দেখার তৃষ্ণা সে মিটাচ্ছে।
শাহানার সাথে ঐ একটা দিন যেন স্বপ্নের মতো প্রতি টা প্রহর কেটে গেছে।
নিশানের এমন হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে,শাহানা কিছু টা লজ্জা পায়, কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করে,ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,কি মহাশয় এভাবে কি দেখছো?? মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে খেয়ে ফেলছো??
নিশান হাবলার মত মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে আসলে তা নয়, শাহানা নিশানের আর একটু কাছে এসে দাড়িয়ে ফিসফিস করে তাহলে কি? নিশান তখন দুষ্টামি মাখা হাসি দিয়ে বলে,
আরে আমার বউ কে আমি দেখবো না তো কি অন্য মানুষ এসে দেখবে নাকি হুমম??
শাহানা নিশানের চোখে চোখ রেখে বলে,ওহহ হো,,?? নিশান শাহানা নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে শাহানার হাত পিছন থেকে চেপে ধরে বলে,, হুমম তো!! তোমার সমস্যা হচ্ছে?? শাহানা টুপ করে নিশানের নাকে একটা চুমু দিয়ে বলে,এক দমি না আমি তো সব সময় চাই, আমার বিদ্যা সাগর ভীতু টা আমাকেই সারা ক্ষন দেখুক আর কাউকে নয়। নিশান হঠাৎ শাহানা কে কোলে উঠিয়ে নেয় তার পর বেড রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগে,,আর শাহানা ছুটাছুটি করে বলে,এই কি করছো? নামাও আমাকে, নিশান নামাও, নিশান বিরক্ত হয়ে বলে উফফ এতো নরাচরা কেন করছো সত্যি সত্যি কিন্তু নিচে ফেলে দিবো। শাহানা নিশানের কথা সিরিয়াস নিয়ে নেয়, নিশান যদি সত্যি ফেলে দেয় তাহলে নির্ঘাত তার কোমড় টা ভাঙবে। তাই নিশানের শার্ট টা খামচি দিয়ে ধরে বলে,এই নাহ আমি আর নড়বো না । নিশান হো হো করে হেসে ফেলে। সাহসী মেয়ে রাও ভয় পায় তাহলে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। নিশান আর শাহানার ভালোবাসা আর খুনসুটি ও বেড়ে যায়। শাহানা রান্না করেছে। নিশান সেই মুখে দেওয়ার সাথে সাথে মুখের রং পাল্টে যায়। চোখ মুখ খিঁচিয়ে রাখে। শাহানা ভয় ভয় জিজ্ঞেস করে খাবার কি ঠিক আছে?? নিশান হাসার চেষ্টা করে বলে হ্যাঁ অনেক ভালো হয়েছে। আর কি রান্না করেছো?? দাঁড়াও রান্না ঘর থেকে নিয়ে আসছি। চিংড়ি পোলাও রান্না করেছি। শাহানার প্রস্থান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিশান পানির গ্লাস মুখে পুরে নেয় পর পর তিন গ্লাস পানি পান করে সে। ঝালের চোটে জিভের অবস্থা নাজেহাল। মাথা ও ঝিম ধরে উঠেছে। শাহানা চিংড়ি পোলাও টা টেস্ট করে ওয়াক ওয়াক করে বেসিনের কাছে দৌড়ে যায়। এতো লবণ হয়েছে বাপরে,মুখ গলা সব তিতা হয়ে গেছে। তার এখন বুঝতে বাকি থাকে না। বাকি রান্নার অবস্থা ও খুব একটা ভালো নয়। শাহানা খেতে চাইলে নিশান নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। পরবর্তী তে রাগ দেখায় শাহানা তখন নিশান বলে অনেক ঝাল হয়েছে। খেতে পারবে না তুমি। অনেক ঝাল হয়েছে বুঝলাম কিন্তু না বলে খাচ্ছিলে কেন?? প্রথম বার বউয়ের হাতের রান্না,সেটাও সেই দুপুর থেকে এতো কষ্ট করে রান্না করেছে। না খেলে অপমান হয়ে যাবে না বল। শাহানা কড়া গলায় বলে,হাতি হয়ে যাবে,মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে তোমার গেছে তোমার দেখছো…? হুঁ দেখছি, তাহলে ঠোঁটের ছোঁয়া ঠিক করে দাও!! নিশান মুখ টিপে হাসছে।
অসভ্য একটা। এখন আমার ক্ষুধা লাগছে খাবো টা কি?? আমি রান্না করি দাঁড়াও..শাহানা উৎসুক হয়ে বলে,কিহ তুমি কি রান্না পারো?? নিশান মুচকি হেসে বলে টুকটাক পারি। মা যখন বাড়িতে থাকতো না তখন তো নির্জনী ছোট ছিল সেও তো রান্না পারতো না। তাই আস্তে আস্তে কিছু টা রান্না শিখেছিলাম। প্রথম বার রান্না করতে যেয়ে সব পুরে ফেলছিলাম। সে মায়ের কি রাগ 😁😁
আচ্ছা নিশান, আমি যখন তোমার সাথে থাকবো তখন তো আমাকেই রান্না করতে হবে। আমি তো মায়ের কাছে এই রকম রান্না করি উনিও কি আমায় বকবেন?? নিশান ঠোঁট প্রশস্ত করে বলে, শাশুড়ি কে তো বিয়ের আগেই দেখেছো ,তেমন খাচ্চর মহিলা কি মনে হয়েছিল আমার মা কে?? শাহানা বাচ্চা দের মতো মাথা ঝাকিয়ে বলে ,এক দমি না। তোমার পুরো পরিবার খাঁটি মাটির মানুষ। শাহানা উৎসুক হয়ে বলে আমাদের ও ছোট একটা বাড়ি হবে তাই না নিশান!! ইনশাআল্লাহ আল্লাহ যদি চান তো অবশ্যই!! মা বাবা আর নির্জনী দের সাথে থাকতে পারবো। নিশান মাথা দুলিয়ে বলে হ্যাঁ আর সাথে থাকবে ডজন খানেক বাচ্চা। শাহানা চোখ বড় বড় করে বলে,ডজন খানেক বাচ্চা তোমার দেখবে কে শুনি?? কে দেখবে তুমি দেখবে বাচ্চা কে তো মাকেই সামলাতে হবে তাই না?? হুমম বলেছে তোমায়,ডজন খানেক বাচ্চা নেওয়ার শখ তোমার হয়েছে তাই তুমিই দেখা শুনা করবে তাদের। একটা ডান হাতে একটা বাম হাতে,একটা কাঁধে একটা পিঠে। এভাবে ঝুলিয়ে নিয়ে থাকবে। নিশান শাহানা কে জরিয়ে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে, ঠিক আছে ঠিক আছে, তুমি আমার সাথে থাকলে সব হবে। শাহানা চোখ টিপে বলে রান্না তে মাঝে মাঝে হেল্প কিন্তু করতে হবে!! হুমম তা করবো।কিন্তু ডিল কি করে ছিলি , বিয়ের পর সুন্দর রান্না করে খাওয়াবে। আমি শিখেছি তো। মিস্টেক হয়ে গেছে। এবার থেকে রোজ প্রাক্টিস করবো পাক্কা প্রমিস। আচ্ছা সমস্যা নেই।
সারা টা দিন অনেক সুন্দর কেটে গেছে। নিশান আর শাহানার ভালোবাসা আরো গাঢ় হয়ে উঠেছে। রাত সাড়ে ৮টা। বাইরে সিঁড়ি তে বসে আছে নিশান আর শাহানা। এক হাতে শাহানা কে জরিয়ে রেখেছে সে। আর শাহানা মাথা টা এলিয়ে দিয়ে আছে নিশানের কাঁধে। শাহানার মন টা খারাপ হয়ে যায়। কিছু ক্ষন পর মেহমেত আসবে তাদের নিতে,, নিশান কে ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। মন টা চাচ্ছে সারা জীবন তার কাছে থেকে যাই। কিন্তু কিছু করার নেই। নিশান প্রতিষ্ঠিত না হওয়া অবদি অপেক্ষা তাকে করতেই হবে। অবশ্যই সে চায় না, নিশান কে কেউ তার যোগ্য নয় বলে অপমান করুক। মেহমেত রাতের খাবার খেতে চেয়েছে বলে, নিশান আর শাহানা দুজনেই মিলে সব গ্রামের বাঙালি আইটেম গুলো রান্না করেছে।
মেহমেতের অপেক্ষা করতে করতে, ৯টা বাজতে চলল কিন্তু তার কোন খবর নেই এখনো। বেশ কয়েক বার ফোন দিলো নিশান কিন্তু ফোন কেউ তুলছে না। হঠাৎ একটা মেসেজ আসে নিশানের ফোনে,মেহমেতের নাম্বার থেকে,সরি দোস্ত তোদের নিতে চাইতে পারলাম না। জরুরী একটা কাজে আটকা পড়েছি। আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো তোরা চলে আসিস।।
নিশান আর শাহানা মেসেজ টা পড়ে আগা গোড়া কিছুই বুঝতে পারলো না। নিশান বলে উঠলো মেহমেতের আবার কি কাজ পড়ে গেল?? কি জানি হয়তো,(শাহানা)
মেসেজ পাওয়ার ১০মিনিট পর একটা কালো রঙের গাড়ি এসে পৌঁছায় তাদের গেটে। নিশান আর শাহানা কে খাবারের টাইম টা ও না দিয়ে বেরিয়ে পড়ে তারা। গাড়ি টা দেখে শাহানা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। মেহমেতদের তো কোন কালো রঙের গাড়ি ছিল না! এটা কাদের গাড়ি নতুন নিয়েছে নাকি??
কিন্তু মেহমেতের ড্রাইভার টা খুব তাড়া দিয়ে বলে,মেডাম তারাতারি একটু উঠে বসেন। আপনাদের রেখে আসার পর আমাদের কিছু কাজ রয়েছে!! শাহানা আর নিশান গাড়িতে উঠে বসে,শাহানা চোখ ছোট ছোট করে বলে,সবাই কি আজ বিশেষ কাজ ওয়ালা হয়েছে না কি??
গাড়ি চলতে থাকে,,শাহানা নিশানের এক হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। আর বাইরের দিকে তাকিয়ে রাতের রাস্তা দেখছে। হঠাৎ শাহানা বুঝতে পারে, তাদের কে অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শাহানা কড়া গলায় বলে,এই মামা কোন রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এটা ?? আমাদের বাসার রাস্তা তো এটা না?? ড্রাইভার আমতা আমতা করে বলে,ঐ আসলে মেডাম মেইন রাস্তায় ভিষন ট্রাফিক জ্যাম,তাই অপজিট রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জ্যামে আটকা পড়লে ২_৩ ঘন্টায় নিস্তার নেই। আমার আবার একটা কাজ আছে তাই তারাতারি যাওয়ার চেষ্টা করছি। চিন্তা করবেন না এই রাস্তা দিয়েও বাসায় পৌঁছাতে পারবেন। শাহানা চিন্তায় পড়ে গেল। এই রাস্তা দিয়ে তো শহরের বাইরে যাওয়া হয় , তাহলে বাসায় কি ভাবে পৌঁছাবে তারা। তার পর কিছু না ভেবে আর মনে মনে বলে,হয়তো কোন রাস্তা আছে সে জানে না। ড্রাইভার মামা তো ভুল ভাল রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাবে না। শাহানা চিন্তা মুক্ত হয়ে নিশানের দিকে তাকালো। নিশান চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে আছে। শাহানা নিশানের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,চলে যাচ্ছি তো!! আমায় মিস করবে না?? নিশান, চোখ না খুলেই মুচকি হেসে বলে,, নাহ করবো না। শাহানা কিছু টা রাগ মিশ্রত কন্ঠে বলে,কিহ মিস করবে না?? কেন করবে না?? আমায় এক দম মনে পড়বে না তোমার?? নিশান শাহানার রেগে যাওয়া দেখে ভিষন মজা পায় তার পর বলে ,,নাহ তোমায় আমার মনে পড়ে না। শাহানা নিশানের জবাব শুনে, অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। নিশান মিটিমিটি হাসছে। শাহানার কাঁধে মাথা দিয়ে বলে, তুমি তো আমার পাশে সব সময় আছো মনে কেন পড়তে যাবে তোমায়?? মনে তাদের পড়ডে যারা দূরে থাকে। তুমি তো আমার থেকে দূরে নেই। হুমম হয়েছে হয়েছে, এখন ফাঁপর দিতে আসছে। চাই না তোমার ফাঁপর।
তাদের কথার মাঝে,ড্রাইভার মামা,গাড়ি টা থামিয়ে দিয়ে বলে, আমি একটু টয়লেট থেকে আসছি। তারা ঠিক আছে বলে দেয়। ড্রাইভার চলে যেয়ে কিছু ক্ষন পর আবার ফিরে আসে হাতে দুইটা কোল্ড ড্রিঙ্কস নিয়ে।
আপনারা এটা খেতে থাকেন। আমি একটু সেরেই আসছি। শাহানা কোল্ড ড্রিঙ্কস টা হাতে নেয়। তার নিজের ও খুব পিপাসা পেয়েছিল। ড্রিংকস টা খাওয়ার ৫মিনিট পর মাথা টা কেমন ভাড়ি হয়ে আসে। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যায়। শাহানা আর নিশান গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।
আর যখন তাদের জ্ঞান ফিরে, তখন তারা সামনে যা দেখে তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না তারা!!!
চলবে ______????
চলবে _____?????
আজ গল্প লেখার কোন ইচ্ছেই ছিলো না তবুও
অনেক ব্যস্ততার মাঝেও ছোট করে লিখেছি।
দয়া করে কেউ অনেক ছোট হয়েছে বলে কষ্ট নিবেন না। ইনশাআল্লাহ আগামী কাল বড় পর্ব লেখার চেষ্টা করবো।