#ক্যাসিনো ©কলমে_মায়া
#পর্ব_৩৮
শাহানা আর নিশান চোখ মেলে তাকিয়ে সামনে দেখে,, তারা একটা ঘরে রয়েছে, চেয়ারের সাথে তাদের হাত পা বাঁধা,,আর সেই ঘরে তারা একা নয়,আরো আছে অগনিত ছোট ছোট বাচ্চা,আর গুটি কয়েক,১৬_১৭ বছরের কিছু মেয়ে । ভয়ার্ত চেহারায় তারা সামনে বেঁধে রাখা দুই জন নর ও নারীর দিকে তাকিয়ে আছে। শাহানা নিজের চোখ বন্ধ করে আবার খুললো তার কাছে মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে হয়তো!! এখানে তারা আসলো কি ভাবে ?? তারা তো বাসায় যাচ্ছিল না??
নিশানের হৃদপিন্ড দ্রুত বেগে উঠা নামা করছে। মনে হয় তার হৃদপিন্ড শরীর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সে যা ভাবছে তা যদি হয় তাহলে,তো শাহানার কি হবে?? ও কি নিজেকে সামলাতে পারবে?? নিশানের মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পুলিশের কাছে রেকর্ডিং টা কাল কে দেওয়ার সাথে সাথে তাদের নিয়ে আসা হয়েছে। তার মানে সব জেনে গেছে তারা। তাহলে কি আর নিস্তার নেই তবে। শাহানা কে কি তারা মেরে ফেলবে?? নাহ কিছু তেই না। শাহানার কিছু হতে দেওয়া যাবে না। কিছু তেই না। নিশান মনে মনে নিজের অন্তিম মুহূর্তের কথা স্বরণ করছে। শাহানা নিশানের দিকে তাকিয়ে আতংকিত গলায় বলে,এটা আমরা কোথায় আছি নিশান? এটা কোন জায়গা? কি ভাবে আসলাম আমরা এখানে?? নিশান কোন জবাব দিচ্ছে না। ফ্যাল ফ্যাল করে শুধু শাহানার মুখের দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে আছে। নিশানের কপালে জুমে গেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। নিজের চোখের সামনে মা বাবা আর নির্জনীর চেহারা টা ভেসে উঠছে বার বার।
নিশান কে চুপ থাকতে দেখে ,শাহানা আরো ঘাবড়ে যায়। নিশান চুপ করে আছো কেন? শাহানা বাচ্চা আর এ মেয়ে গুলো কে দেখে তাদের কে বলতে থাকে। তোমরা কারা?? এখানে কেন তোমরা? কে বেঁধে রেখেছে তোমাদের?? বাচ্চা গুলো ভয়ে গুটিশুটি হয়ে আছে। আর মেয়ে গুলোর মধ্যে থেকে এক জন মেয়ে কান্না মাখা গলায় বলে,আপু আমাদের বাঁচান। আমাদের এখানে উঠিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তিন দিন যাবত এখানে আমরা বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ। শাহানা কিছুই বুঝতে পারছে না। মাথার ভিতরে সব কিছু যেন পেকে যাচ্ছে। শাহানা আগে তাদের কাছ থেকে নিজেদের ছাড়ানোর জন্য বলে যেন তারা তাদের বাঁধন খুলে দেয়। মেয়ে গুলো তাদের দেখালো তারা নিজেরাও বাঁধা। কিচ্ছু করার নাই।
তাদের কাছে থেকে এতো টুকু তারা জানতে পেরেছে যে কেউ তাদের কে এখানে উঠিয়ে নিয়ে বেঁধে রেখেছে। নিজের পরিবারের লোকজন তাদের জন্য চিন্তা করছে নিশ্চয়ই! বলেই কান্না করে দিচ্ছে। গত দিন দিন ধরে তাদের কে কোন খাবার দেওয়া হয়নি। কথায় কথায় মারধর করেছে। চিৎকার চেঁচামেচি না করার জন্য। বাচ্চা গুলো এতো টাই ভয় পেয়ে আছে যে তারা কিছুই বলছে না। হলদে আলোয় যত টুকু বুঝা যাচ্ছিল তাতে দেখা যাচ্ছে তাদের মুখে মারের স্পষ্ট দাগ। অনেক বার অনুরোধ করার পর বাচ্চা গুলোর মধ্যে থেকে একটি ছেলে ৮_৯ বছর হবে হয়তো। যে তারা গত ৫দিন যাবত এখানে আটকা রয়েছে। অনেক মেরেছে তাদের। হঠাৎ কিছু বাচ্চা ডুকরে কেঁদে উঠে আর বলতে থাকে তারা বাড়ি যাবে। মায়ের কাছে যেতে চায় তারা। বাচ্চা গুলোর কান্নায় শাহানার নিজের চোখে ও পানি এসে যায়। এখনো সে বুঝতে পারছে না কেন তাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এতটুকু সে ঠিকি পরিস্কার হয়েছে যে যা হচ্ছে তা ভালো হচ্ছে না।
শাহানা হঠাৎ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে থাকে। কেউ কি আছো?? আমাদের বাঁচাও?? দয়া করে কেউ আমাদের সাহায্য করুন। নিশান শাহানা কে চুপ করতে বলে, চিৎকার করতে মানা করছে। নিশানের এমন কথায় শাহানা চোখ বড় বড় তাকিয়ে বলে, আমি চুপ করবো কেন?? শাহানা বুঝতে পারছো না তুমি এখানে আমাদের সাহায্য করার জন্য কেউ আসবে না। উল্টো ওরা জেনে যাবে আমাদের জ্ঞান ফিরে এসেছে আর এর পর কি হতে পারে তা হয়তো অকল্পনীয়। নিশান কি বলছো কি এসব তুমি? আমরা অজ্ঞান ছিলাম আর আমরা কোথায় আছি এটা ? ওরা কে?? এই বাচ্চা গুলো আর মেয়ে গুলোকে পাচার করার জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। আর আমরা এখানে কেউ সেফ নয়। এখানে আমাদের বেঁধে রেখেছে আর এতো গুলো ছেলে মেয়ে কে এক সাথে বেঁধে রেখে নিশ্চয়ই তারা অন্য কোথাও যায়নি।
শাহানার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। নিশান এসব কি করে জানে এই ছেলে মেয়ে গুলো কে পাচার করা হবে? বাচ্চা আর মেয়ে গুলো নিশানের শেষের কথায় প্রচন্ড ভয়ে জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। এই কয়েক দিন তারা শুধু জেনেছিল কিছু একটা তাদের সাথে হতে চলে ছিল। কিন্তু এখন তারা জানতে পারলো তাদের পাচার করার জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। আর তারা কখনো নিজের পরিবারের সাথে দেখা করতে পারবে না । পাচার করে তাদের সাথে কি করা হবে তার ভবিষ্যৎ ভেবে কান্নায় ভেংগে পড়ছে একেক জন। হঠাৎ ঘরের দরজা টা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো কয়েক জন দামড়া সাস্থ্যবান গুন্ডা টাইপ লোক,দেখেই বুঝা যাচ্ছে তারা কোন ভালো মানুষ নয়। একেক জনের হাতে রয়েছে মোটা মোটা বেত । ঘরে প্রবেশের সাথে ছেলে মেয়ে গুলো কে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে আর হুঙ্কার দিয়ে বলে চুপ করতে না হলে এখনি তাদের মেরে বালি চাপা দিবে।
ছেলে মেয়ে গুলোর কান্না আর আহাজারি তে পুরো ঘরে এক বিকট শব্দ তৈরি হচ্ছে যা এতোটাই ভয়াবহ যে শাহানার কান যেন ফেঁটে যাবে। নিশান গলা ফাটিয়ে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে জোরে জোরে বলে ,, তাদের না মারতে। ছেড়ে দিতে তাদের। কিন্তু কে শোনে কার কথা । এক সময় মারের চোটে সবাই মুখে হাত দিয়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের ফোপানোর আওয়াজ শাহানার অন্তর আত্মা কেঁপে তুলছে। শাহানা কি বলবে ভেবে পায় না। কিন্তু মনের মধ্যের ক্ষোভ বাইরে নিজের তেজ ওয়ালা গলায় প্রকাশ করতে থাকে আর বলে…
মানুষ কি আপনারা ?? মারছেন কেন ওদের ছেড়ে দেন ওদের। জানোয়ারদের মতো কেন ওদের উপর অত্যাচার করেছেন??
ওদের মধ্যে থেকে এক জন লোক রাগি রাগি চোখে শাহানার দিকে দৃষ্টি ফেরালো।
তার পর তাদের কাছে এসে বলল । এই কি বললি তুই?? জানোয়ার কাকে বললি?? মা* ঝি কোথাকার!
শাহানার রাগ দ্বিগুণ হয়ে যায়। জোরে শ্বাস নেয় সে মুখের উপর আবার বলতে থাকে.. কুত্তার বাচ্চা ছেড়ে দে ওদের, তোদের তো জানোয়ার ও বলা যাবে না । তোরা তার থেকেও অধম। নয়লে এমন ছোট ছোট বাচ্চাদের মারতে পারতিস না।
শাহানার কথায় ভিষন ভাবে চোটে যায় লোক টি । আর রাগের মাথায় শাহানার নরম গালে থাপ্পর মারে। ছিটকে পড়ে যায় সে। চেয়ার থেকে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে শাহানা। পাঁচ আঙুলের দাগ স্পষ্ট,লাল হয়ে আছে পুরো গাল। শাহানা এতো জোরে কখনো মার খেয়েছে বলে মনে হয় না। ঠোঁটের কোণে রক্ত বের হচ্ছে।
নিশান বুন্দি পাখির মতো ছটফট করতে থাকে। ছেলে গুলো কে বলে, শাহানা কে না মারতে মিনতি করে।
নিজের স্ত্রীর গায়ে অন্য কেউ হাত তুলেছে ভাবতেই নিশানের মগজে আগুন ধরে উঠছে। কিন্তু এখন তাদের কে প্রতিহত করার মতো তার কাছে শক্তি সামর্থ্য কোন টাই নেই। অনুরোধ ছাড়া।
সারা টা দিন কারণে অকারণে তাদের কে অত্যাচার করা হয়েছে। নিশান কেও ভিষন মেরেছে তারা। শাহানা এখন ও বুঝে উঠতে পারছে না কেন তাদের এখানে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। সবাই কত চিন্তা করছে তাদের জন্য। বাবা মা হয়তো এতক্ষণে পাগল প্রায় অবস্থা হয়েছে।
শাহানা আর নিশান কে সেই ঘরের এক কোণে বেঁধে রেখেছে। নিশান কি বলে শাহানা কে আস্বাস দিবে বুঝতে পারছে না।কিন্তু এখান থেকে বের হতে এটা ঠিকি বুঝতে পারছে। কিন্তু কিভাবে বের হবে। বের হওয়ার জন্য তো তাদের আগে বাঁধন মুক্তো হতে হবে।
আজ রাতে ছেলে মেয়ে গুলো কে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে। রাতে তাদের বস আসবে। যে এই কাজের মূল গোড়া। আর সাথে নিশানের সাথে দেখা করে যাবে। শাহানার মাথায় আসছে না নিশান এসবের মধ্যে জড়ালো কি ভাবে। নিশান কে এই বিষয়ে কিছু বলেও সন্তোষজনক জবাব সে দিল না। কেন জানি না এই প্রশ্ন শুনার পর নিশানের মুখের ভাব পরিবর্তন হয়ে কালো মেঘে ছেয়ে যায়। সাথে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বার বার চোখ লুকাচ্ছে সে। বাচ্চা গুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে ও শাহানার মস্তিষ্ক অন্যো কোন ভাবনায় যেতে পারছে। বাচ্চা আর মেয়ে গুলোকে মেরে আধামরা করে রেখেছে । শুকনো মুখ গুলো দেখে কেমন বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠছে। অজানা এক শত্রুতায় তারা এখন বন্দি ।
রাত আটটায় তাদের সবাই কে খাবার দেওয়া শুকনো রুটি,আর একটি করে কলা। সবার হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। ক্ষুধার্ত হায়নার মতো এই শুকনো রুটি আর কলা খাচ্ছে সবাই। শাহানা আর নিশান কে ও হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। নিশান এবার একটা সুযোগ খুঁজবে, কি করে এখান থেকে বের হওয়া যায়। এতো ক্ষনে গুন্ডা গুলো কে সে গননা করে নিয়েছে। মোট ১২জন কে সে দেখেছে। বাইরের পরিবেশ সম্পর্কে তার ধারণা নেই। শুধু একা পালাতে চাইলে সম্ভব নয়। বাচ্চা গুলো আর মেয়েদের কে নিয়ে পালাতে হবে এখান থেকে। প্লান করতে হবে তাকে এখন। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না কত ক্ষন তাদের এভাবে বাঁধন খুলে রাখা হবে। হয়তো খাওয়া অব্দি। শাহানা রুটি গুলো ছুঁয়ে ও দেখলো না। নিশানের দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। নিশানের দৃষ্টিপাত শাহানার মখশ্রীর দিকে যেতেই এক সুষ্ক ব্যাথা সে বুকের ভিতর অনুভব করলো। শাহানার গাল টা এখনো ফুলে উঠে আছে। পাঁচ আঙুলের দাগ এখনো মিশে যায়নি। ঠোঁটের কোণের জমে থাকা রক্ত টা নিশান নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে ছুয়ে দিলো। নিশান কেও তারা এলোমেলো ভাবে কিল ঘুষি মেরেছে। লোক গুলো নিজেও জানে না। কেন এই দুজন কে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে।
নিশান শাহানার একটা হাত ধরে ভরসা দেয় চিন্তা করো না আমরা এখান থেকে অবশ্যই বের হওয়ার চেষ্টা করবো। একটু ধৈর্য ধরো। খেয়ে নাও রুটি টা। এতে আমরা বাঁধন খুলে রাখার জন্য কিছু টা সময় পাবো। শাহানা হালকা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
দুই জন লোক পাহারা দিচ্ছে তাদের। খাওয়া শেষ হলেই আবার তাদের হাত বেঁধে ফেলা হবে। নিশান পুরো ঘর টা পর্যবেক্ষণ করছে আর আস্তে আস্তে রুটি তে কামড় দিচ্ছে।
লোক গুলোর কাছে ছুড়ি দেখে সে,সেই ছুড়ি গুলো চেয়ারের উপর রেখেছে তারা আর চেয়ারের পাশে রেখেছে পানির বোতল, নিশান এক ফুন্দি আঁটলো যে করেই হোক সেই ছুড়ি থেকে তাকে একটা ছুড়ি নিতে হবে। নিশান মিছেমিছি কাশতে লাগলো,সে বুঝাতে চাইলো তাদের যে তার গলায় খাবার আটকিয়েছে। নিশানের কাশি দেখে সেই দুই লোকের মধ্যে এক জন লোক পানি নিয়ে গিয়ে খেতে বলল। নিশান আস্তে করে উঠে যায়। লোক গুলো বাচ্চাদের পানি দিচ্ছি। একে একে পানি খাচ্ছে আর অপর জন একটা একটা করে বাচ্চা গুলোর হাত বেঁধে দিচ্ছে। নিশান পানির বোতলে চুমুক দিয়ে। লোক গুলোর দিকে চোখ ফেরায়। তাদের নজর এখন নিশানের উপর না থাকায় সে টুপ করে একটা ছুড়ি নিজের কাছে লুকিয়ে নিয়ে শাহানার কাছে এসে তাকে পানির বোতল ধরিয়ে দেয়। নিশান সাবধানতার সাথে ছুড়ি টা মাটিতে রেখে তার উপর বসে পড়ে।
একে একে সবার হাত বাঁধা শেষ হলে শাহানা আর নিশানের হাত ও বাঁধলো তারা।
তার পর সেই লোক গুলো ঘর থেকে বের হয়ে যায়। বাইরে থেকে আবার দরজা বন্ধ করে দেয়।
ওরা যাওয়ার পর নিশান ছুড়ি থেকে উঠে বসে। আর শাহানা কে বলে সেই ছুড়ি দিয়ে দরি টা কাঁটতে। শাহানা মুক্তি পাওয়ার এক ক্ষীন আশা দেখতে পেয়ে খুশি হয়। নিশান এর হাতের দরি সাবধানে কাটে সে। পরবর্তী তে শাহানার হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়।
শাহানা আর নিশান সেই বাচ্চা আর মেয়ে গুলোর কাছে যায়। আর তাদের ওই
চলবে _____???#ক্যাসিনো ©লেখিকা_মায়া
#পর্ব_৩৯
ছেলে মেয়ে গুলোর কাছে এসে নিশান তাদের বুঝালো,,আমরা চাইলেই এখান থেকে বের হতে পারি। কিন্তু বের হওয়ার জন্য আমাদের এক সাথে লড়তে হবে। আমরা সংখ্যায় তাদের থেকে কম নয়। ছোট ছোট হাত দিয়ে ও আমরা তাদের ঘায়েল করতে পারি। তোমরা বুঝতে পারছো আমি কি বলছি?? আমাদের এখান থেকে বের হতেই হতে হবে। মানুষ পারে না এমন কোন কাজ নেই। তোমরা ছোট বলে ভয় পেয়েও না। আমরা আছি তোমাদের সাথে। আমরা চাইলেই অবশ্যই ওদের প্রতিহত করতে পারবো। ছেলে মেয়ে গুলোর মনে নিশান অন্ধকার ঘরে প্রদীপের আলোর মত আশা জন্মে দিয়েছে। এক ক্ষীন আশা নিয়ে তারা নিজেদের মনোবল শক্ত করে বলে। আমরা এখান থেকে বের হতে চাই ভাইয়া। আমরা আমাদের পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। শাহানা তাদের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে। আমরা পারবো । আমি কথা দিচ্ছি তোমাদের এখান থেকে বের করবো।
সবাই বলে আমাদের কি করতে হবে বলেন শুধু এক বার। আমরা প্লান তৈরি করবো সমস্যা নেই। শুধু রাত টা একটু বাড়তে দাও তোমরা। এখন আমারা নিজের নিজের জায়গা বসে পড়ি। আর তারা যেন বুঝতে না পারে যে আমাদের বাঁধন মুক্তো আছে। আলগা করে এখন হাত টা বেঁধে ফেলো তোমরা। নিশানের কথা মত তারা নিজেদের হাত আলগা করে বেঁধে নেওয়ার জন্য একে অপরকে সাহায্য করলো।
রাত প্রায় সাড়ে ১২টা। এর মধ্যে খবর আসে আজ তাদের বস আসতে পারবে না। তাই নিশান ওরা কিছু টা সময় নিজের হাতে পেলো তারা। আল্লাহ ভরসা, এখন শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা। প্লান মোতাবেক,অর্ধ নিশি তে এক জন ছেলে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকবেন। আর বাকি সবাই দরজার পিছনে লুকিয়ে থাকবে, ঘরের ভিতরে থাকা কয়েক টা লাঠি হাতে নিয়ে। এবং কেউ দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে হামলা চালিয়ে দিবে। প্লান সুন্দর মতোই চললো। ঘরে প্রবেশ করলো তিন জন। তখনি পিছন থেকে সবাই তাদের ধরে ফেললো। সবার প্রথমে তাদের মুখ চেপে ধরা হয়। যেন কোন আওয়াজ না করতে পারে। তার পর নিশান আর শাহানা আর একটা মেয়ে মিলে সেই তিন জনের মাথায় জোরে আঘাত করে। আঘাতের চোটে তারা মাটিতে নুইয়ে পড়ে। কথা বলার শক্তি টুকু তারা পাচ্ছে না। এলি মাঝে আরো দুই তিন টা আঘাত করে মাথায়। মাথায় এতো জোরে জোরে আঘাতের কারণে তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। নিশান আর শাহানা সামনে যায় তার পর বাইরে তাকিয়ে পরিবেশ যাচাই করে। নিশান যত টুকু দেখতে ফেলো তাতে দেখা যাচ্ছে। ৬জন পাহাড়া দিচ্ছিলো। আর বাকি ৬জন ঘুমিয়ে রয়েছে।
আর বর্তমান,,তিন জন ঘায়েল। আর বাকি তিন জন কে ঘায়েল করতে হবে। তারা আবার দরজার পিছনে লুকিয়ে পড়লো। কারন এখন যদি এই তিন বাইরে না যায় তো বাকি তিন জনের মধ্যে থেকে কেউ দেখতে আসবে যে,তারা এখনো ফিরে যায়নি কেন। এবং তাই হলো আবার দুই জন দেখতে আসে এবং ঘরে প্রবেশ করার সাথে সাথে তাদের কেও একই ভাবে আঘাত করে অজ্ঞান করে দেওয়া হয়। এর পর নিশান বাইরে বের হয় পা টিপে টিপে যায়। আর এক জন হাতে সিগারেট নিয়ে উল্টো দিকে হয়ে হাতে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিশান সেই লোক টির মাথায় জোরে আঘাত করে আর শাহানা সাথে সাথে নিজের উরনা দিয়ে সেই লোকটির মুখ চেপে ধরে। যেনো গুঙ্গানির আওয়াজ টাও বাইরে না বের হয়। তার পর পা টিপে টিপে ঘুমিয়ে থাকা লোকদের সবার হাত পা বেঁধে ফেলা হলো।
এবং নিশান বাকি সবার কাছে গিয়ে এখনি বের হতে বলে। তাদের জ্ঞান না ফেরার আগেই এখান থেকে বের হতে হবে। সব বাচ্চা দের নিয়ে সাবধানতার সাথে মেইন গেইট অব্দি যায় তারা। কিন্তু যেয়ে দেখে অনেক বড় এক তালা ঝুলছে গেইটে। বাচ্চা রা সবাই ভীতু নজরে নিশানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তাদের চাহনি স্পষ্ট বলছে, এখন তালার চাবি কি ভাবে পাবে তারা। শাহানা সমেত বাচ্চাদের কে গেইটে অপেক্ষা করতে বলে নিশান আর সে গিয়ে চাবি খুঁজে নিয়ে আসবে। কিন্তু নিশান কে একা ছাড়তে নারাজ শাহানা সে নিজেও যেতে চায়। শাহানা কে ভরসা দিয়ে বলে, চিন্তা করো না আমি এখনি আসবো। তুমি একটু অপেক্ষা করো। ভয় পেয়েও না আমি আছি।
নিশান চলে যায়। আশে পাশে চাবি খুঁজে পাওয়া গেল না। হঠাৎ মনে হলো ১২জনের মাঝে কারো পকেটে চাবি টা নেয় তো। ইয়া আল্লাহ তাহলে কি করে হবে এখন। নিশান ভাবছে অজ্ঞান লোক দের পকেটে খোঁজ করে যদি পাওয়া যায় তো আল্লাহর রহমত। আর যদি বাকি জেগে লোক দের পকেটে থাকে?? তাহলে খোঁজতে গেলেই তো তারা জেগে যাবে।
আল্লাহর অশেষ রহমতে ঘরের ভিতরের অজ্ঞান হয়ে থাকা লোকের পকেট থেকে চাবি টা পাওয়া যায়। নিশান পা টিপে টিপে এগিয়ে যায় মেইন দরজার সামনে। তখনি পিছন থেকে এক জোড়া শক্ত হাত নিশান কে আঁকরে ধরে । নিশান ভয়ার্ত চেহারায় পিছনে তাকিয়ে দেখে। অন্য একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে। যাকে সে এর আগে দেখিনি। কিছু বুঝে উঠার আগেই। লোক টি চিৎকার করে বলে সবাই কে উঠতে। আর এখানে আসতে সবাই পালিয়ে যাচ্ছে। শাহানা আর বাকি বাচ্চা গুলো ও চিৎকার শুনতে পায়। এই দিকে ঘুমিয়ে থাকা গুন্ডা গুলো ও জেগে যায় আর নিজেদের এভাবে বাঁধা দেখে তারা ঘাবড়ে এবং বেশ ভয় পায়। যদি আজ ওরা পালিয়ে যায় তো তাদের বসের হাতে নির্ঘাত মৃত্যু তাদের। নিজের বাঁধন খুলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে তারা। আশেপাশে অন্য দুই জন কে অজ্ঞান পড়ে থাকতে দেখে। খুব রেগে উঠে তারা।
শাহানা আর বাকি ছেলে মেয়ে গুলো দৌড়ে এসে দেখে নিশান আর ঐ লোক টা মিলে ধস্তাধস্তি করছে। নিশানের নাক বরাবর এক ঘুষি মারে লোক টি। এই দিকে নিশান বেহাল হয়ে পড়েছে। নিশান মাটিতে পড়ে যায়। শাহানা একটা লাঠি দিয়ে যেই আঘাত করতে যাবে তখনই লোক টা লাঠি টা ধরে ফেলে। আর শাহানা কে কষে একটা থাপ্পর মারে। থাপ্পরের বেগ সইতে না পেরে ছিটকে পড়ে যায় শাহানা। চোখ মুখ খিঁচিয়ে রাখে প্রচন্ড ব্যাথায়। লোক টার মাইর দেখে এতো ক্ষনে যে জোশ ছিল ছেলে মেয়েদের ভিতরে তা ক্রমশ কমে আসতে শুরু করে। আর সবাই ভয়ে কুকড়ে যায়। লোক টা নিজের বন্দুক বের করে ঘরের ছাদের দিকে একটা গুলি ছোড়ে। ছেলে মেয়ে গুলো ভয়ে নিচে বসে পড়ে।
ঝংকার গলায় ফোঁস ফোঁস করে বলতে থাকে। এক পা কেউ নরালে এখানেই মেরে পুঁতে রাখবো। এখান থেকে বের হওয়ার ক্ষমতা দেখাতে আসিস না তোরা। কেউ জান নিয়ে ফিরে যেতে পারবি না।
ডুকরে কেঁদে উঠে ছেলে মেয়ে গুলো।
লোক টা হনহন করে যেয়ে বাকি লোক গুলোর বাঁধন খুলে দেয়। এবং রাগে গজগজ করতে করতে লোক গুলো এসে ছেলে মেয়ে গুলো কে মারতে মারতে আবার ঘরের ভিতরে নিয়ে চলে যায়।
একেক জনের ভীতু চোখ শাহানা আর নিশানের উপর দিচ্ছে। সব আশা তাদের শেষ। নিশান আস্তে করে উঠে। শাহানা কে তুলতে গেলে দুই জন লোক এসে। তাদের আবার মারতে থাকে। শাহানার গালে অসংখ্য থাপ্পরের দাগ। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তার শরীরের দাগ বসে গেছে হয়তো। নিশান কে লাথি ঘুষি দেয় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা নিশানের। শাহানা কে আবার মারতে গেলে। নিশান হাত জোর করে মারতে না করে আর শাহানা মাটিতে পড়ে রয়েছে। নিশান শাহানার কাছে যায়। শাহানার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। নিশান শাহানা কে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে। চোখের জল বিসর্জন দিতে থাকে। এ কোন বিপদের মুখে পড়লো তারা। এখান থেকে কি বেঁচে ফিরতে পারবে তারা। নিশানের খুব আফসোস হচ্ছে,, কেন সে গেছিল সেই পাহাড়ে। এমন এক ভিডিও রেকর্ডিং হয়ে যায় তারা ক্যামারায় যার জন্য আজ এতো বড় বিপদে আছে তারা। নিশান ভাবতে থাকে,মেহমেতের ড্রাইভার তাদের এখানে নিয়ে এসেছে এটা নিশ্চিত। তাহলে কি মেহমেত নিজ ইচ্ছায় তাদের এই তাদের কাছে ধরিয়ে দিয়েছে সে। নিশান নিজের পকেটে হাত দেয়। ফোন টা তো পকেটেই ছিল। নিশান ফোন টা খোঁজে পেলো না। রাগে নিশানের শরীর থরথর করে কাপছে। হুংকার দিয়ে লোক গুলোর উদ্দেশ্য বলে। কেন ধরে নিয়ে এসেছেন আমাদের কি ক্ষতি করেছি আমরা আপনাদের। ছেড়ে দেন সবাই কে। ঐ বাচ্চা গুলো কে কেন এভাবে ধরে রেখেছেন। আপনাদের নিজেদের ও তো বাচ্চা আছে। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তত ছেড়ে দেন ওদের। ওদের পরিবার চিন্তা করছে। দয়া করে ছেড়ে দেন।
আর যদি ছেড়ে না দেয় তো কি করবি তোরা?? নিশান মাটিতে ধপ করে বসে পড়ে। বুক চিরে তার কান্না আসছে।
নিশান আর শাহানা কে তাদের সামনেই ফেলে রাখা হয়েছে। তাদের বস কে কল দিয়েছে তারা । সকালের মধ্যেই চলে আসবে। নিশান ভাবছে কে তাদের বস?? পাহাড়ে যাকে খুন করতে দেখেছিল সে নয় তো??
শাহানার দিকে দৃষ্টি গোচর করে শুকনো একটা ঢোক গিলে সে।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। নিশান আর শাহানা কারো চোখে ঘুম নেই।
হঠাৎ মেইন গেইট খোলার আওয়াজ পাওয়া যায়। সকালের আলো ঘরে প্রবেশ করছে। নিশান আর শাহানা সামনে তাকিয়ে আছে। তাদের বস এসেছে। আবছা আলোয় স্পষ্ট কিছু বুঝা যাচ্ছে না। নিশানের বুকের ধুকপুকানি বেড়ে চলেছে। অজানা এক ভয়ে ক্ষনে ক্ষনে চুপসে যাচ্ছে। আচ্ছা এই মানুষ টা কি শাহানার ও ক্ষতি করবে?? শাহানা তো তার নিজের রক্ত। এই লোক কি ইচ্ছে করে শাহানা সমেত আমাকে ধরিয়ে নিয়ে এসেছে।
পুলিশের কাছেও কি এখন জনগণ নিরাপদ নয়। তার জলজ্যান্ত প্রমাণ সামনে। যার কাছে নিশান এই রেকর্ড টা দিয়ে কেস টা গোপনে দেখতে বলেছিল। সেই পুলিশ অফিসার ক। ক্রিমিনালের সাথে রয়েছে।
নিশানের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। সামনে থাকা কয়েক জন কে দেখে। আর এই দিকে শাহানার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে। সামনে থাকা ব্যাক্তিটি কে দেখে। তার চোখ ভুল দেখছে। এটা সত্যি হতে পারে না। কিছু তেই পারে না। এতো ক্ষন সে আঘাতের জন্য কষ্টে কাতরাচ্ছিল। আর এখন মনে হচ্ছে,তার সেই কষ্ট অতি নগণ্য ছিল। এখন যেই যন্ত্রনা তার ভিতরে হানা দিচ্ছে। এতে তার কাছে মনে হচ্ছে। এই দৃশ্য দেখার চেয়ে তার মৃত্যু ভালো।
শাহানা কাঁপা কাঁপা গলায় অস্ফুট স্বরে বলে।
আব্বু তুমি……______!!!!
চলবে______????
গঠন মূলক মন্তব্যের আশাবাদী 🙂
বিঃ দ্রঃ গল্প টা আমি আরো অনেক খানি লেখছিলাম। কিন্তু একটা কল আসার কারণে গল্প টা সেভ করতে যেয়ে কেটে গেছে 😔