#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam
যুথি বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তা ধরে। গ’ন্তব্য তার স্বামীর বাড়ি।
পিছন থেকে যুথির দাদি তাকে অনবরত ডাকতে থাকে। যুথি পাত্তাই দেয় না সে বড় বড় হাটা দিয়ে এগিয়ে চলল।
যুথি ওরে যুথি,,,,,বু ও বু যাইসনা আমার কথাডা শোন বু!
যুথি দাদির ডাক শুনে দাড়িয়ে যায়।তারপর ঘুরে দাদির দিকে তাকায়। তার দাদি প্রায় দৌড়ে এসে যুথির কাছে থামে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,,,, এই বু’ই’ড়া বয়সেও তুই আমারে দৌড়ানি দেওয়াস বু।
উফফ দাদি দেখতে পাচ্ছো না একটা জায়গায় যাচ্ছি? তোমার পিছন ডাকতে হইলো? কি কইবা কও দেখি।
এমন কইরা যাইস না বু।মাইনষে কি কইবো? আমি নাত জামাইর সাথে কথা কই তুই যাইস না।
বাড়ি ফিরে যাও বুড়ি।আমাকে শ্বশুর বাড়ি যাওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না আল্লাহ চাইলে বিকেলেই আমি শ্বশুর বাড়ি থাকবো।
তর মাথাডা একেবারে গেছে ছে’রি যা করার কর কিছুই আমি আর বলমুনা। তারপর নিজের কাঁধ থেকে যুথির বোরখাটা নিয়ে যুথির হাতে দিয়ে চলে যেতে যেতে বলে এইবার যেইহানে যাওয়া যা তুই।
যুথি বোরখাটা দেখে জি’বে কামড় মারে। স্বামীর বাড়ি যাওয়ার তারায় বোরখা পরতে সে একদম ভুলে গেছে। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে রাস্তায়ও কোনো মানুষ আছে কিনা। রাস্তা এখন পুরাই ফাঁকা। তাই তারাতাড়ি বোরখাটা পরে ওড়না দিয়ে মুখে মুখোশ বেঁধে তারপর আবার হাটা দেয়।
যেতে যেতে দাদিকে উদ্দেশ্য করে বলে,, বুড়ি তুমি ভালো থাইকো।তোমার নাত জামাইরে নিয়া খুব শীঘ্রই আসবো।
যুথির দাদি ছলছল চোখে যুথির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়। মনে মনে ভাবে আজ যদি মেয়েটার বাবা মা জীবিত থাকতো কতো আয়োজন করে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি পাঠাতো। মেয়েটার ভাগ্য আসলেই সেই সুখ টা নেই।তাইতো নিজের স্বামীর বাড়িতে এই প্রথম পা রাখবে সেটা ও আবার একা একাই।নিজে ও টাকা পয়সা না থাকার জন্য মেয়েটাকে কিছু দিয়ে পাঠাতে পারলো না। খালি হাতে দুইটা পুরাতন জামা নিয়ে যেতে হচ্ছে।
———————————————
যুথির দাদি ছাড়া আর কেউ নেই। অনেক ছোট থাকতে বাবা মা পরপারে পাড়ি জমিয়েছে।দাদি কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। সবটুকু দিয়ে আগলে রেখেছে।
মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করে টাকা রোজগার করে দুইজনের সংসার চালিয়ে নিয়ে গেছে। একদিন যুথির দাদি যেই বাসায় কাজ করে ঐ বাসার মহিলা যুথির জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ছেলের বাড়ি বড় লোক।ছেলে বিদেশ থাকে।অনেক টাকা পয়সার মালিক কিন্তু ওরা গরিব ঘরের মেয়ে চায়।
যুথির দাদি দুইদিন সময় নিয়ে ভেবে রাজি হয়ে যায়। মেয়েটা তো সারাজীবন কষ্টই করে গেলো এই বাড়িতে নিশ্চই সুখে থাকবে। যুথিও দাদির উপর কোনো কথা বলেনি। এই মানুষ টা এতো বছর ধরে যুথি কে বুকে আগলে রেখেছে। তাই যা করার ভালো কিছুই করবে তার জন্য।
যুথির দাদি পাশের বাড়ি থেকে আরো দুইজন লোক নিয়ে ইরহানের বাড়িতে যায়।উনারা জানায় ফোনে বিয়ে পরানো হবে। তারিখ দিয়ে দেয় ঐ তারিখে গিয়ে ওরা বিয়ে করাবে। পরে ছেলে দেশে আনলে দুই একজন গিয়ে উঠিয়ে আনবে।
তারপর বিয়ে টা ফোনেই হয়।বিয়ের দিন শুধু এক পলকের৷ জন্য যুথি ইরহান কে দেখেছে তার ভাই ইশানের ফোনে। তাও এক পলকের জন্য একটু। ভালো করে সবার সামনে তাকিয়ে দেখতেও পারে নি। সেই সুদূর প্রবাসে থাকা লোকটাকে এক পলক দেখেই নিজের মনে জায়গা দিয়েছে। আর ইশান ও যুথির একটা ছবি ইরহান কে পাঠিয়ে ছিলো।
যুথির কাছে কোনো এন্ড্রয়েট ফোন নেই । একটা ছোট মোবাইল তার কাছে ঐটা দিয়েই ইরহানের সাথে কথা হতো। মন চাইতো ইরহান কে দেখতে কিন্তু কোনো উপায় ছিলো না।
—————————————
প্রায় আধা ঘন্টা একটানা হাঁটার জন্য হাঁপিয়ে ওঠে যুথি।তাই একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দুই মিনিট জিরিয়ে নেয়।আরো পনেরো মিনিটের মতো হাঁটতে হবে। টাকা থাকলে অটো দিয়ে শুধু পনেরো মিনিটের ও কম সময়ে পৌছে যেতো। কিন্তু টাকা নেই টাকা থাকলেও যুথি আসতো না হেঁটেই আসতো। দুইটা টাকার ও যে কি মূল্য সেটা যুথি খুব ভালো করে জানে। বিকেলের দিকে রাস্তা ঘাটে মানুষের আনাগোনা বেশি হয় তাই দ্রুত পা চালায় সে।
মিনিট পনেরো পর যুথি তার গন্তব্যে এসে পৌছায়। বাড়ির সামনে এসে চোখ বুলায় পুরো বাড়িটা তে।
একদিন এই পথ দিয়ে শহরে যাওয়ার সময় যুথির দাদি বলেছিলো,,, ওরে যুথি এইটাই নাত জামাইর বাড়ি।যুথি তখন এক পলক বাড়িটার দিকে তাকিয়ে ছিলো।এখনো মনে আছে সেই দিনের কথা। এক পলকের দেখায় চিনে আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি যুথির।যুথির মাথা আবার খুব ভালো এক পলকের দেখায় অনেক কিছু সে মনে রাখতে পারে । যেমনটা সে এখন এই একতালা বিশিষ্ট চারিদিকে ইটের দেওয়াল দেওয়া বাড়িটা চিনে ফেলেছে।
টিনের গেইট পেরিয়ে যুথি ধীর গতিতে বাড়ির উঠোনে প্রবেশ করে। চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখে বাড়িটা একটা ছাদ দেওয়া দালান ঘর ভিতরে কয়টা রুম আছে জানা নেই যুথির। তবে বেশ বড় সরোই বাড়িটা। গেইট দিয়ে ঢুকতে একটা ছোট ঘর ও চোখে পরলো।টিনের দো’চালা ঘর তবে বেশ পুরোনো । ধারণা করলো ভিতরে হয়তো দুইটা রুম।
আশেপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে সামনের দিকে এগুলো যুথি।বাড়িটা অনেক জায়গা নিয়ে করা হয়েছে। চারপাশে অনেক গাছগাছালি আছে। ঝোঁকের বসে তো এসে পরলো এখন চিন্তায় আছে ঘরে ঢুকা নিয়ে। এমন সময় যুথির পাশ দিয়ে একটা বাচ্চা যেতে দেখলো হাতে বল। হয়তো খেলতে গিয়ে এসে পরেছে নিতে এসেছে। তাছাড়া যুথির জানা মতে এ বাড়িতে কোনো বাচ্চা নেই।
যুথি বাচ্চাটাকে কাছে ডাকে।বাচ্চা টা যুথির ডাকে থেমে যুথির দিকে তাকায়।
কিছু বলবেন খালা?
ছেলেটার খালা ডাকে যুথি আ’হা’ম্ম’ক হয়ে যায়। তারপর বলে আমি তোর কোন জনমের খালারে? আমার বয়স জানিস কতো?
নাহ্ জানিনা।দেখলে বলতে পারতাম ধারণা করে।কিন্তু আপনিতো মুখ ঢেকে রেখেছেন তাই বয়স বোঝা যায় না। দেখতে কেমন খালা খালা লাগছে।
ছেলেটাকে কয়েকটা কথা শোনাতে গিয়ে ও চুপ হয়ে যায় যুথি।এখন ঝামেলা করে লাভ নেই।যে জন্য ডেকেছে সেই কাজটা আগে সেরে নেওয়া যাক।
এই বাড়ির বড় ছেলে আছে না? ঐ যে বিদেশ থেকে যে দুই দিন আগে আসলো।উনাকে একটু ডেকে দে।
ইরহান ভাইয়ের কথা বলতেছেন?
যুথি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
উনিতো পুকুর পাড়ে বসে আছেন। ঐযে দেখা যাচ্ছে বলেই ছেলে টা হাত দিয়ে পুকুর পাড় দেখিয়ে দিল।
যুথি পুকুর পাড়ে এগিয়ে যেতে থাকে। ইরহানের পিঠটা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে গভীর ভাবনায় মগ্ন সে। যুথি কাছাকাছি গিয়ে পিছন থেকে ইরহানকে ডেকে উঠে,,,,,,
“ওও বোকা পুরুষ। ”
ইরহানের ভাবনার মাঝে হঠাৎ করে কারো কন্ঠ স্বর শুনে কিছু টা হকচকায়। তারপর পিছনে ঘুরে তাকায়। একটা বোরখা পরা মেয়ে দাড়িয়ে আছে চোখ গুলো ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না।ইরহান চেনার চেষ্টা করে। তারপর মাথায় আসে বোকা পুরুষ নামে একজন ই তাকে ডাকে সেটা হলো তার বউ যুথি।
ইরহান জানে না কেন তার বউ তাকে বোকা পুরুষ ডাকে।তবে মেয়েটার মুখে এই নাম টা শুনতে ও তার ভালো লাগে। ইরহানের আর বুঝতে বাকি নেই এটা যুথি।গলার স্বর শুনে ও চিনতে পারেনি কারণ ফোনের সাথে বাস্তবের গলার স্বর খুব একটা মিল পাওয়া যায় না।
যুথি?
যুথি মুখের মুখোশ টা খুলে ধপ করে ইরহানের পাশে গিয়ে বসে পরে। তারপর ইরহানের দিকে তাকিয়ে ইরহান কে দেখতে থাকে। ইরহান এতোটা স্বাস্থ্যবান ও না আবার এতোটা চিকন ও না একদম ঠিকঠাক। বসা অবস্থাতে বুঝতে পারলো লম্বা ও বেশ আছে। শ্যামবর্ণের পুরুষটির মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি কি যে ভালো লাগছে। হুট করে ইরহানের কথায় যুথির হুঁশ আসে।
তুমি এখন এখানে? দুপুরে না কথা হলো? জানালে না কেনো আসবে? একাই এসেছো? আমার না গিয়ে আনার কথা?
উফফ চুপ করেনতো বোকা পুরুষ। এতো প্রশ্ন একসাথে কেউ করে?
আর বিয়ে বসেছি কি বাপের বাড়ির ভাত খেতে? বাপের বাড়ির ভাত আর ভালো লাগছিলো না তাই জামাইর বাড়ি নিজে নিজে চলে এসেছি। আপনার অপেক্ষায় থাকলে এই জনমে আর সংসার করা হতো না।
কিন্ত,,,,,,,,,
কোনো কিন্তু নয়।পুরোটা রাস্তা হেঁটে এসেছি হাত পা ব্যাথা হয়ে গেছে। পরে না হয় সব বলবো আগে ঘরে নিয়ে চলুন।
ইরহান যুথির মুখের দিকে ভালো করে তাকায়।এই প্রথম সামনাসামনি দেখা।শুধু একটা ছবি ছিলো যুথির। প্রথম প্রথম ফোনে কথা বলতে কতো জড়তা কাজ করতো যুথির মাঝে। ধীরে ধীরে জড়তা কাটিয়েছে।অথচ এখন এমন ভাবে কথা বলছে যেনো সামনাসামনি কতোবার দেখা হয়েছে।
এইই বোকা পুরুষ সারাজীবন আমাকে দেখার সুযোগ পাবেন। এখন চলুন।
ইরহান আর কথা বাড়ায় না। সত্যি মেয়েটার মুখে ক্লান্তির ছাপ।পরে না হয় সব জেনে নিবে।তারপর যুথি কে নিয়ে বসার ঘরে ঢুকে ইরহান।সেখানে তাছলিমা বানু আর তার দুই পুত্র বধূ টিভি তে সিরিয়াল দেখছে।
হঠাৎ করেই যুথিকে দেখে সকলেই ভূ’ত দেখার মতো চমকায়।
যুথি মুখে হাসি ফুটিয়ে তাছলিমা বানুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তারপর হাত দিয়ে সালাম করার ভঙ্গিতে বলে উঠে,,,,,,,,,
“আসসালামু আলাইকুম নকল শ্বাশুড়ি আম্মা ।”
#চলবে,,,,,,,,,,,#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam
“আসসালামু আলাইকুম নকল শ্বাশুড়ি আম্মা।”
কথাটা বলে যুথির মুখে যতোটা হাসি আছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অ’বা’ক’ত্ব বসার ঘরে উপস্থিত থাকা সকলের মুখে।
তাছলিমা বানু ব্রু কোচকে ফেলে তারপর স’ন্দি’হা’ন গলায় বলে উঠে, নকল শ্বাশুড়ি আম্মা মানেে?
যুথি তার ছোট দুই জা এর দিকে তাকালো দুইজন ই কেমন দৃষ্টিতে যেনো তাকিয়ে আছে যুথির দিকে। চোখের ভাষা দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা যুথিকে একদম পছন্দ করছে না। তাতে যুথির কি ?
যুথি আবার শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,,, আপনি তো আসল না। ডু’প্লিকেট হিসাবে আমার শ্বশুর আব্বা নিয়ে এসেছে। তাই নকল বলছি।কিছু মনে করবেন না কেমন?
আমার খুব ভালো লেগেছে আমি এটা বলেই ডাকবো।কতো মাথা খাটিয়ে তারপর এই নামটা দিয়েছি জানেন? আমি ভালোবেসেই এই নামে ডাকবো।আপনি কিছু মনে করবেন না। মনে মনে বলল তুই মনে করলেও আমার কি?
ইমনের বউ লিমা বলে উঠে ছিঃ কি নাম এগুলো।
কিরে ইরহান তোর বউকে যে নিয়ে আসবি আমাদের বললি না তো।বাহ্ মাকে ছাড়াই দেখি এখন সব সিধান্ত নিতে পারিস। ওকে যে আনতে যাবি একবার বলেও গেলি না। আমি মানা করতাম নাকি আনতে?
ইরহান মায়ের মুখের দিকে তাকায় কি সুন্দর অভিনয় করে। ইরহান ও না জানার ভান করে থাকবে দেখবে কতো নিচে নামতে পারে এরা।
মা আসলে,,,,,
থাক আর কিছু বলতে হবে না। তোরা সবাই এখন বড় হয়ে গেছিস। মা কে আর কি প্রয়োজন? ভালো করেছিস।
আরে ন’কল আম্মা আপনার বড় ছেলের তো কোনো দোষ নেই। উনি জানতেন না৷ আমি যে আসবো। আপনাদের মতো এখনই জানলেন। আসলে শ্বশুর বাড়ির ভাত খাই না বলে পেট ভরছিলোনা।আপনারাতো আমাদের গরিব ঘরে যাবেন ও না আনার জন্য। আর আপনার ছেলের আশায় বসে থাকলে আমার সংসার করাই হতো না তাই নিজে নিজে চলে আসছি।
যুথির কথা শুনে তার দুই জা মুখ বাকিয়ে বলে,,,কেমন বে’হায়া মেয়ে মানুষ নিজের শ্বশুর বাড়িতে নিজেই এসে পরেছে তাও আবার প্রথমবার। আর আমাদের সময় কতো বরযাত্রী গিয়েছিলো জানো?
সেসব কথা না হয় বাদ ই দিলাম তোমার দিকে একবার ভালো করে তাকাও ছিঃ ইয়াক কি নোংরা।
লিমার কথা শুনে যুথি নিজের দিকে তাকায় হেঁটে আসার দরুন পায়ে ময়লা লেগে আছে। তাছাড়া কালো বোরখায় একটু বেশি ই বোঝা যায় ময়লা।
তো কি হয়েছে একটু মাটি লেগেছে ঝাড়া দিলেই চলে যাবে।
কি নোংরা তুমি মেয়ে। আম্মা আর কাউকে পেলেন না বাড়ির বউ করার জন্য? শেষ মেষ কিনা এই ক্ষে’ত মার্কা মেয়েকে বাড়িতে আনতে হলো?
আমি ক্ষে’ত? তো ভালো তো সেই ক্ষে’ত এ ফসল উৎপাদন হলেই মুখে খাবার জোটে ভুলে যাইওনা গো তোমরা।আর আমার শরীরে মাটি দেখে ছিঃ ছিঃ করছো? তোমরা কি মরবে না?
তোমরা মরলে কি তোমাদের সিমেন্ট দিয়ে মাটি দিবে? হুু বলো বলো!
ইমন আর ইশানের বউ আর কিছু বলতে নিবে তার আগেই তাছলিমা বানু তাদের থামিয়ে দেয়। আহ্ কি শুরু করেছো তোমরা? চুপ থাকো।
ইরহান তোর বউকে তুই নিয়ে যা।
আহ্ আপনারে তো আমার চুমু খেতে মন চাচ্ছে নকল শ্বাশুড়ি আম্মা। আমি যে ক্লান্ত ঠিক বুঝেছেন।
ইরহান এতো সময় এদের কান্ড দেখে গেছে শুধু। তার ভাইয়ের বউরা কি রকম নাক ছি’ট’কা’চছে তার বউকে দেখে। ওদের কথার বিরুদ্ধে কিছু বলতে নিবে তার আগে যুথি নিজেই তাদের কথার উত্তর দিতে দেখে ইরহান আর কিছু বলে নি।ইরহান বুঝে গেছে বউ তার ঠোঁট কাটা স্বভাবের কাউকে যে ছেড়ে কথা বলবে না।
চলো যুথি হাত মুখ ধুয়ে নিবে।
যুথি ইরহানের কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তারপর ইরহান কে অনুসরণ করে তার পিছনে পিছনে যেতে থাকে। যেতে যেতে একবার ঘার ঘুড়িয়ে তার জা দের দিকে তাকায়। মুখ ভেংচি কেটে মনে মনে বলে উঠে,,, “এএএএএ ঢংগীদের ঢং দেখলে বাঁচি না। ”
ইরহান যুথি কে নিয়ে চলে গেলে ইমন আর ইশানের বউ শ্বাশুড়ি মায়ের উপর ক্ষি”প্ত হয়ে উঠে,,,,,
আমরাতো কিছু বলতে পারি না আম্মা আপনাকে। জোড়ে কথাই বলতে পারি না আপনার সাথে। আর এই দুই পয়সার ফ’কি’ন্নি কিরকম চে’টাং চে’টাং কথা বলে গেলো আপনি তো একটা টু শব্দ ও মুখ থেকে বের করলেন না আম্মা। আমরা এমন করলেতো আমাদের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলতেন সাথে বাপ মা কে ডেকে আনতেন।আর এখন আপনাকে নকল শাশুড়ী আম্মা বলে গেলো গায়ে লাগলো না? আমাদের ও কতো গুলো কথা শুনিয়ে গেলো।
তাছলিমা বানু তার দুই ছেলের বউদের কথা শুনে গর্জে উঠে চুপ করো তোমরা। আমি কি করবো না করবো তা কি তোমরা বলে দিবে? জ’বান টা একটু বেশি চলছে না তোমাদের? ভুলে যেও না কার সাথে কথা বলছো।আমার সাথে কথা বলার সময় মেপে মেপে কথা বলবে। উপরে উঠলে কি করে নিচে নামাতে হয় সেটা আমার ভালো করে জানা আছে। চুপচাপ নিজের কাজে যাও।
দুইজন শ্বাশুড়ির কথায় ভিতরে ভিতরে ফুসছে।তবুও মুখ দিয়ে কিছু বলল না।চলে যেতে নিলে শ্বাশুড়ির কথা শুনে আবার একটু থামে।
যুথি কে নিয়ে কেউ কোনো মজা করবে না বা অপমান করবে না। যাও এবার নিজেদের কাজে। আমি কি করবো সেটা আমি ভালো করেই জানি। আমার চুল গুলো বাতাসে পাকেনি।
ইমন ও ইশানের বউ চলে গেলে তাছলিমা বানু মনে মনে বলে ঐ গা’ই’য়্যা মূ’র্খ মেয়েটাই আমার তু’রু’পে’র তা’স।তোমাদের মাথায় এসব ঢুকবে না বড় লোকের আ’লা’লের ঘরের দু’লালিরা। এই মেয়েকে শুধু শুধু ইরহানের জীবনে জড়াই নি। এই তাছলিমা বানু কোনো কাঁচা কাজ করে না।
নিজের স্বা’র্থের জন্য এই মেয়েকেও সহ্য করে নিতে জানি। বলে মনে মনে হাসে তাছলিমা বানু।
——————————————
ইরহানের রুমে এসে বোরখা খুলে বাথরুমে ঢুকে হাত পা ধুয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে আসে যুথি। বাড়িটা বেশ রাজকীয় ভাবেই করেছে। গ্রামাঞ্চলের জন্য এই বাড়িটাই অনেক বেপার সেপার।আশে পাশের দুই তিন গ্রামে হাতে গোণা দুই একটা বাড়ি মনে হয় এমন আছে। ইরহানদের বাড়িটা আবার শহর থেকে কিছুটা কাছেই। প্রতি রুমে রুমে বাথরুম করেছে। যুথি কল পাড় খুজলে ইরহান বাথরুম দেখিয়ে দেয়।
বাথরুম থেকে বের হয়ে উড়না দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হয়ে আসে যুথি।তাকিয়ে দেখে ইরহান খাটের এক কোণে মাথা নিচে দিয়ে বসে আছে।
— এইই বোকা পুরুষ আপনি আমার বোকা পুরুষ তো? নাকি এয়ারপোর্ট থেকে বদল করে দিয়েছে?
— মানে?
— আমার বোকা পুরুষ তো এরকম গোমড়া মুখে থাকে না। সে সব সময় হাসি খুশি থাকতে পছন্দ করে। আর আপনি কিভাবে আছেন মুখ টা কে কেমন করে রেখেছেন।
— তোমার এইখানে আসা একদম উচিত হয় নি যুথি।
— যুথি হাত পা তুলে খাটের উপর উঠে বসে। কেন আমাকে ঐ বাড়িতে রেখে এইখানে আরেকটা বিয়ে করে বউ নিয়ে থাকতেন নাকি?
— ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে যার নিজে নিজে চলার বা এক বউয়ের দায়িত্ব নেওয়ার সামর্থ্য নাই তার আবার দ্বিতীয় বিয়ে।
যুথি ইরহানের মনের অবস্থাটা খুব ভালো করে জানে।তাও মজা করে তাকে একটু মন ভালো করতে চেয়েছিলো। বুঝে গেছে ইরহানকে এখন যাই বলুক মন ভালো হবে না। তাই চুপচাপ ইরহানের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়। তার বোকা পুরুষ টা কে দেখে আর মনে মনে কিছু ভাবে।
————————————————–
গ্রামের দিকে সাধারণত রাত আটটা বেজে যাওয়া মানেই অনেক রাত। সকলে এই সময় খেয়ে দেয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নেয়।
যুথি রুমে যে সেই ঢুকেছে আর রুমের বাইরে বের হয়নি।ইরহান অবশ্য ঐ সময়ই বেরিয়ে গেছে আর ফিরে আসেনি।
এখন রুমের বাইরে গিয়ে দেখে সকলেই খাওয়ার রুমে খেতে বসছে। যুথির ও প্রচুর খিদে পেয়েছে। কিন্তু ইরহান কই ইরহান কে রেখে একা খেতেও পারছে না। তাই চুপচাপ বসার ঘরে বসে। দেখতে পায় ইরহান বাড়িতে ঢুকছে। যুথি উঠে দাঁড়ায় ইরহানকে বলে হাত মুখ ধুয়ে আসতে খেতে বসবে।ইরহান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। কিছু সময় পর আসলে দুইজন ই এক সাথে খেতে বসে।
অন্যরা ও মাত্রই খাবার নিয়েছে খাওয়ার জন্য। ইমন আর ইশান তাদের বউদের নিয়ে এক পাশে বসেছে। ইরহান যুথিকে নিয়ে আরেক পাশে।
তাছলিমা বানু সাধারণত ছেলেদের সাথে খায় না।সবার খাওয়া শেষ হলে তারপর উনি খেতে বসেন। এটা সবসময় ই করেন তিনি।
অন্য দুই ছেলের প্লেটে দুইটা মাছের মাথা ও প্লেট ভর্তি করে মুরগির মাংস দিয়েছে এক সাথে।বউদের ও দিয়েছে। যুথি শুধু এদের খাবার খাওয়া দেখছে রা’ক্ষ’সের মতো খাচ্ছে সবগুলো মিলে।সবাই কে সব মাছ মাংস প্লেট ভরে দিয়ে যুথি ও ইরহানের কাছে বাটি নিয়ে আসে তাছলিমা বানু।
ইরহানের প্লেটের এক পাশে মাছের একটা লেজ ও মাংসের দুই টুকরো দেয়।
যুথির প্লেটে মাছের ঝুল আর একটুকরো মুরগির মাংস আর একটা আলু দিয়ে বলে আর নাই এটুকু দিয়েই খেয়ে নেও।
বলে চলে যায়।
ইরহান তার ভাই আর ভাইয়ের বউদের প্লেটের দিকে তাকায়। তারপর নিজের আর যুথির প্লেটের দিকে। মুরগির মাংস রান্না করা পাতিলের দিকে ও চোখ যায় ইরহানের।পাতিলে রাখা মাংস আরো তিনজন খেতে পারবে।
তাছলিমা বানু ভালো করে জানে বেশি কাঁটার জন্য ইরহান লেজ কি মাছের পেটের অংশ ছাড়া খেতে পারে না। তাও এটা উনি ইরহান কে দিলেন।
তাছলিমা বানুর কান্ডে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে যুথি।মুখ খুলে কিছু বলতে নিবে ইরহান বুঝতে পেরে হাত ধরে আঁটকে দেয়।মাথা নাড়িয়ে না করে কিছু বলার জন্য।
ইরহান তার প্লেটের মাংস যুথির প্লেটে তুলে দেয়।তারপর বলে তুমি খাও যুথি আমার একদম খিদে নেই। বলেই ইরহান উঠে চলে যায়।
ইরহানের চলে যাওয়া দেখে কেউ কিছু বলল না এরাতো খেতে ব্যস্ত। অথচ সব কিছু ইরহানের টাকায় আনা।ইমন, ইশান কোনো কাজই করে না।
যুথি ইরহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। লোকটার নাকি খিদে নেই সারাদিন যে ভালো করে কিছু খায়নি তা তো আর যুথির জানতে বাকি নেই।
#চলবে,,,,,,,,,,