খেলাঘরে তুমি আমি পর্ব -০৬

#খেলাঘরে_তুমি_আমি
পর্ব—০৬
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—ছেলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে তাই তো,খুব চিন্তা হচ্ছে বুঝি নিজের ছেলের জন্য?

দোয়া আমার মুখ থেকে কথাটা টেনে নিজে থেকে বলে উঠলো।আমি হতবাক হয়ে গেলাম তার কথা শুনে।আমার যে ছেলে আছে,আর আমি তার জন্যেই টেনশন করছি সে জানলো কিকরে সেটা,এটা জানা তো দোয়ার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়!

—এই ওয়েট ওয়েট।কি বললেন আপনি আমি আমার ছেলের জন্য টেনশন করছি।আপনি কিকরে জানলেন আমার ছেলে আছে?

—এটা না হয় সাসপেন্স হিসেবেই থাকুক।ছেলের জন্য টেনশন করেছেন এটা ঠিক কিনা আগে বলুন।

—আপনি আগে বলুন আমার ছেলে আছে এটা কিকরে জানলেন আপনি?না আমি আপনাকে আজকের আগে চিনতাম।না আমি আপনাকে আমার ব্যক্তিগত কোনো কথা বলেছি।তাহলে কিকরে জানলেন আপনি আমার ছেলে আছে?

আমার কথা শুনে দোয়া হো হো করে হেসে উঠলো।ওর এই বিরক্তিকর হাসি আমার মেজাজ আরও বেশী বিগড়ে দিচ্ছে।

—প্লিজ বি সিরিয়াস।আমি নিশ্চয়ই হাসার মতো কোনো প্রশ্ন করিনি আপনাকে।

—হাসার মতো প্রশ্ন করেননি তো কি করেছেন,আমার ওপরে এতো হোম্বিতোম্বি করার আগে নিজের ফোনের ওয়ালপেপারের দিকে চেয়ে দেখুন।

আমি ফোনের ওয়ালপেপারের দিকে তাকিয়ে দেখি রিসালাতের ছবিটা স্ক্রিনের ওপরে ভেসে আছে।

—এবার বুঝলেন তো,কেনো হেসেছি আমি।আর আপনিও না,পুরো বাচ্চাদের মতো করছেন।

—সে না হয় বুঝলাম,কিন্তু এটা যে আমার ছেলে সেটা কি কোথাও লেখা ছিলো?

—আমি জাস্ট গেস করেছি।আর দেখুন মিলেও গেলো।আপনার ছেলেটা পুরো কিউটের একটা ডিব্বা।নিশ্চয়ই আপনার ওয়াইফের মতো হয়েছে দেখতে?

—হুমমম,ও দেখতে ওর মায়ের মতোই অনেকটা।আমার কোনো কিছুই পায়নি।

—আপনার ওয়াইফও খুব সুন্দরী তাহলে বলতে হয়…

—হ্যাঁ।ছিলো একসময়ে..

—ছিলো মানে,এখন কি আর নেই?এটা আবার কেমন কথা,তার মানে এখন আর তাকে সুন্দরী মনে হয় না আপনার।আসলে সব পুরুষরাই এমন।বৌ’দের প্রথম প্রথম সবার কাছে বিশ্বসুন্দরী মনে হয় কিন্তু পরে…

–ওহ,শাট আপ।আপনি নিজের মুখটা প্লিজ বন্ধ রাখবেন?

—কেনো সত্যি কথা বললাম বলে?

—আমার ওয়াইফ আর বেঁচে নেই।ছেলে জন্মের সময়ে একটা দূর্ঘটনায় ও মা রা যায়।বুঝতে পেরেছেন এবার?

দোয়া আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।তারপর কোনো কথা না বলে চায়ের কাপদুটো নিয়ে কিচেনের দিকে চলে যায়।আমি সোফা থেকে উঠে গিয়ে ড্রয়িংরুমের কাচের জানলার পাশে দাঁড়ালাম।বৃষ্টি এখনো পুরোপুরি থামেনি,বাইরে বিদুৎ চমকাচ্ছে।জানালাটা খুলে দিতেই বৃষ্টির ফোটা ছিটকে এসে আমার গায়ের ওপরে পড়তে লাগলো।এখনও স্পষ্ট মনে আছে এমন একটা বৃষ্টিস্নাত দিনে আমার আর মিথিলার বিয়ে হয়েছিলো।আমাদের ফুলসজ্জার রাতের আবহাওয়াটা আজকের সাথে সম্পূর্ণ সাদৃশ্যপূর্ণ।আর সেই রাতেই রিসালাত এসেছিলো আমাদের ভেতরে।আমার আর মিথিলার প্রথম প্রণয়ের ফসল রিসালাত।এই কারণেই ওর প্রতি হয়তো আমার স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশী দূর্বলতা।

একটু পরে আমি আমার কাঁধে কারোর স্পর্শ অনুভব করলাম।পেছন ফিরে দেখি দোয়া দাঁড়িয়ে আছে।

—একি,আপনি এখানে…?
আমি প্রশ্ন করলাম।

—না জেনে আপনাকে হার্ট করার জন্য দুঃখিত।দেখুন আমায় বাইরে থেকে দেখতে যেমন মনে হয় আমি মানুষটা কিন্তু অন্যরকম।অন্যের কষ্টটা ভাগ করে নেওয়ার মতো একটা অনুভূতি সৃষ্টিকর্তা আমায় দিয়েছেন।

—আরে আপনি শুধু শুধু দুঃখ প্রকাশ কেনো করছেন।আপনি আপনার কোনো কথায় কিছুই মনে করিনি।

—তাহলে এইভাবে মন খারাপ করে বসে আছেন যে?বাই দ্যা ওয়ে আপনার নামটা কিন্তু এখনো জানাই হলো না আমার।

—আমি অর্ণব জামান।আর আমি আপনার কারণে মন খারাপ করি নি,নিজেকে কোনো কারণে দোষী ভাবার কারণ নেই।

—ওহহহ,বুঝেছি নিশ্চয়ই ওয়াইফের কথা মনে পড়ছে।দেখুন আমি আপনার ওয়াইফের কথা তুলে মনটা খারাপ করে দিলাম,সেক্ষেত্রে দোষটা কিন্তু আমারই।

–ভারী অদ্ভুত মানুষ তো আপনি,বলেছি তো আপনার কোনো দোষ নেই,তারপরেও তার দায় নিজের ঘাড়ে কেনো নিচ্ছেন।আর এটা এমন কোনো ব্যপার নয়।আমার মৃত স্ত্রীর কথা এরকম মাঝে মধ্যেই মনে পড়ে।ইন ফ্যাক্ট আমি কখনো ভুলতেই পারি না ওকে।

—হুমমম,সেটাই স্বাভাবিক।

আমার দুজনের কথার পর্ব শেষ না হতেই বৃষ্টি নিজের পাট চুকিয়ে নিয়েছে।এখন আর বাইরের বৃষ্টির ফোঁটা জানালা দিয়ে এসে আমার গায়ের ওপর পড়ছে না।দোয়াকে বললাম

—এই দেখুন,বৃষ্টি থেমে গেছে।এখন বাসায় যেতে হবে আমায়,আমার বাচ্চা জানি না কি করছে এখন।

—আপনার কি মাথা খারাপ,এখন কয়টা বাজে দেখেছেন।রাত এগারোটা।এতো রাতে কিকরে বাসায় যাবেন আপনি,আর তাছাড়া যেকোনো সময় আবারো বৃষ্টি নামতে পারে।

—এতো কিছু ভাবলে চলবে না আমায়,আমাকে বাসায় যেতে হবে।আমার বাচ্চা একলা আছে।

—একলা কোথায় আছে,আপনার বাড়ির অন্যান্য লোকজন কি কেউ নেই বাসায়?

—সেটাই তো আরো বেশী ভয়ের কারণ।

—মানে,আপনার কথা বুঝলাম না ঠিক।

—এতো কিছু বুঝতে হবে না আপনাকে।আমাকে এক্ষুণি বেরোতে হবে,ব্যাস।

এই বলে আমি বেলকনি থেকে বেরিয়ে আসলাম ঠিক তখন ফোনটা বেজে উঠলো।যা ভয় পেয়েছিলাম তাই,এবার পারমিতাকে কি জবাব দেবো আমি।যাই হোক ফোনটা রিসিভ করলাম।

—অর্ণব,তুমি কোথায়?এতোক্ষণ ধরে ট্রাই করে যাচ্ছি তোমায়,ফোন বন্ধ করে রেখেছিলে কেনো?

—ফোন বন্ধ করে কেনো রাখবো,নেটওয়ার্ক কাজ করছিলো না হয়তো,বাইরের আবহাওয়া কেমন দেখতেই তো পাচ্ছো।

—আচ্ছা তুমি কোথায় এখন,সেটা তো বলবে?

—আমি আছি,একজনের বাসায়…

—কার বাসায়,কি বলছো কি তুমি?

—পরে বলছি সব,আগে বলো রিসালাত কি করছে,ও কান্নাকাটি করছে না তো?

–হ্যাঁ,কান্নাকাটি তো করছিলো।এই কিছুক্ষণ হলো ঘুমিয়ে পড়েছে।

—যাক,ওর খেয়াল রেখো তুমি।আমি এক্ষুণি বাসায় ফিরছি।

—অর্ণব,তুমি এতো রাতে বাসায় কিকরে ফিরবে?ক’টা বাজে খেয়াল করেছো?

—তাহলে কি করবো এখন?

—আচ্ছা তুমি কোথায় আছো সেটা তো বললে না!

—আমি একটা বন্ধুর বাসায় এসেছি।অবশ্য ও যেতে দিতে চাইছে না এতো রাতে ঝড়বৃষ্টির ভেতরে।
বাধ্য হয়ে পারমিতাকে মিথ্যে বলতে হলো।এইসময়ে আমি কোনো মেয়ের সাথে আছি এটা পারমিতা বা মা কেউ ভালোভাবে নেবে না।

—তোমার আবার কোন বন্ধু…যাই হোক তুমি একটা কাজ করো,সকাল সকাল চলে এসো।এতো রাতে বাইরে বেরোতে হবে না।

—তুমিও বলছো…এই কথা?

—হুমমম।

পারমিতা ফোনটা রেখে দিলো।ইতিমধ্যে আবার ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হলো।

—কে ছিলো ফোনে…আর কি বললো?
দোয়া পেছন থেকে আমায় প্রশ্ন করে।

—আমার নতুন ওয়াইফ,পারমিতা।ও একই কথা বলছে আপনার মতো,

দোয়া আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও আমি আবারও বিয়ে করেছি এটা জানতে পারাই ওর অবাক হওয়ার কারণ বেশ ভালোই বুঝতে পারলাম।

—ঠিক আছে।আমি আপনার বিছানা রেডি করে দিচ্ছি,এসে ঘুমিয়ে পড়ুন।

দোয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমার জন্য বিছানা রেডি করতে চলে যায়।ওর সামনে ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেলাম আমি।না,জানি মনে মনে কি ভাবছে।স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে আরেকটা বিয়ে করা কি সত্যিই অন্যায়?এতে কি সত্যিই আগের স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা কমে যায়?কই আমার তো এমনটা মনে হয় নি কখনো।আমি বিয়েটা করেছিলাম শুধু আমার বাচ্চার জন্য আর বাবা মায়ের জোরাজুরিতে।এর বাইরে আর কোনো মোহ ছিলো না আমার।কিন্তু সেটা কিকরে বুঝাই জান্নাতকে।কি দায় পড়েছে, এমনিতেই এই রাতটা তার সাথে আমার শেষ সাক্ষাৎ।জানিনা এরপর আর কোনোদিন দেখা হবে কিনা।

একটু পরে দোয়া আমায় ডাক দিলো,আমি গিয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়লাম।দোয়া ওর রুমের দিকে চলে যায়।ঘরের লাইটটা অফ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।এরপর আর কিছু মনে নেই আমার।


রাত বারোটার দিকে দোয়ার কাছে একটা ফোনকল আসে।ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা কন্ঠ ভেসে আসলো।

—যা বলেছিলাম,ঠিকঠাক করতে পেরেছো তো?

—হ্যাঁ,পারমিতা ম্যাম।আমি আপনার হাসবেন্ডকে কথার জালে ভুলিয়ে নিজের বাসায় নিয়ে এসেছি।

—গুড জব।সেটা আমি অর্ণবের কথা শুনেই বুঝতে পেরেছি।খুব ভালো কাজ করেছো তুমি!

চলবে…..
আগামী পর্ব লিখে রেখেছি।এই পোস্ট 1K+ রিয়েক্ট কমপ্লিট হলেই আপলোড করে দেবো।তাই দ্রুত পেতে সবাই দ্রুত রেসপন্স করুন।ধন্যবাদ।💙😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here