খেসারত পর্ব ২

#খেসারত
#দ্বিতীয়_প্রহর
#Yasira_Abisha #Fatha

নিজের বাচ্চাটাকে এবরশন করে শান্তি লাগছিলো অনেক,, কারণ সে তো অবৈধ ছিলো,, মনে হচ্ছিলো একটা আস্ত বড় পাথর যেন আমার বুক থেকে কেউ নামিয়ে দিয়েছে,, আমার তো তার জন্য কোনো অনুভুতি কাজ করছিলো না,,
আচ্ছা?? অবিবাহিত অবস্থায় বাচ্চা পেটে আসলে মায়া লাগে?মনে হয় লাগে না,, আমার লাগে নি,, তখন সম্মানটাই আগে আসে,, মা বাবার কথা,, নিজের কথা এগুলোই তো মনে পরে,, যেই সন্তান কে দেখিনি,, তার জীবন না থাকলেও আমার কিছুই যাবে আসবেনা,, তা আমি ঠিক মতই বুঝতে পেরেছিলাম।

এইতো ঠিক ২ ঘন্টা আগের কথা,, নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় আবিষ্কার করি,,
যতটুকু মনে পরছে আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার বয়ফ্রেন্ড এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম,, করতে করতে একটা সময় মাথা ঘুরতে শুরু করে,,
হাত পা কাপছিলো যখন দেখি ও আসছে না,,
ঠিক কিছুক্ষণ পরে আমার কাধে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করতে পেরেছিলাম,, কিন্তু তখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছিলাম,, পেছনে ঘুরে তাকানোর মত শক্তি পাচ্ছিলাম না,, তার ওপরে রোদের তীর্যকতা,,
সব মিলে আমি সেই অবস্থায় রাস্তার মধ্যেই অচেতন হয়ে পরি,,
হসপিটালে জ্ঞান ফেরার পরে নার্স বললো,,
– কেমন লাগছে এখন?
– হুম ভালো,, আমাকে কে নিয়ে এসেছে?
– আপনার স্বামী ,,
বুঝতে পারলাম ও হয়তো এনেছে আমাকে, আর হাসপাতালে স্বামী বলেই পরিচয় দিয়েছে,,
-কোথায় উনি?
-বাইরেই আছে,,
-একুটু ডেকে দিবেন??
– দিচ্ছি
বলে নার্স চলে গেলো,,
ও ভিতরে এলো,,
-এবরশন করাতে হবে,,
– হ্যাঁ,, কেমন আছো তুমি?
– ভালো,, আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করবে না?
– ওহ হ্যাঁ তুমি সুস্থ হইসো এখন?
কথার ধরনটায় আমার খুব কষ্ট লাগলো,,
শরীর ভালো না লাগা স্বত্তেও বললাম
-হুম,,
-চলো তাহলে, ডাক্তার আসে এখনো আমি সব করে রাখসি।
এবরশন করতে গেলাম,,
একটা মধ্য বয়সী নার্স আমাকে বেশ কিছুক্ষন দেখলো তাকিয়ে,,
এর পর জিজ্ঞেস করলো,,
-আসলেই বাচ্চাটা ফেলে দিবেন?
আমি একটু চমকে উঠলাম,,
উনি আবারো বললেন,,
– বাচ্চা তো আল্লাহর রহমত,, আপনাদের মনে হচ্ছে প্রথম বাচ্চা এটা,, রাখতে পারতেন।
উনার কথা শুনে, ডাক্তার একটা ধমক দিয়ে বললো,
– এই খানে তোমার কাজ শেষ,, যাও।
সে কিছু না বলে চলে গেলো,,
আবরশন হয়ে গেলো,, আমার শরীরটা কাপছে,, কিন্তু মনটা হালকা হয়ে গেলো,, মাথার একটা বোঝা পরে গেসে এমন লাগছে,,
আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে একটা রিক্সা করে বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে গেলো,,
রাস্তায় কেউ কারো সাথে একটা কথা বললাম না,,

আমি শুধু অবাক হলাম ওর আচরণে,,
এই ছেলেটা আমাকে ভালোবাসে না? ভালোবাসলে এরকম আচরণ কিভাবে করছে? ওর কি মায়া লাগেনা আমার জন্য??
তাহলে এত পাষাণের মত করছে কেন আমার সাথে??
আমি কি ওকে পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি না?
আমার ভালোবাসায় কি কোনো কমতি ছিলো?
আর দশজন মেয়ে প্রেম করতে গিয়ে যা না দেয় আমিতো তাও দিয়ে দিয়েছি,,
আমার সম্ভ্রম,, আমার সবই তো ওকে দিয়ে দিয়েছি আমি,,
আর কি বাকি আছে?
কোনো রকমে গোসল করে এসে শুয়ে পরলাম,,
মা আপু খেতে ডাকলো অনেক বার,,
আমি উঠে যাওয়ার মত শক্তি পাচ্ছিনা,,
ঘুমিয়ে পরলাম কখন নিজেও বলতে পারলাম না,,
জীবনটা অনেক বিষাক্ত হয়ে গেলো,, দিন যায় কিছুই ভালো লাগেনা,, মনে হয়েছিলো এবরশন করার পরে খুব ভালো লাগবে কিন্তু তা হয় নি,,
ও মাঝে মাঝে যোগাযোগ করতো,, আবার মন না চাইলে অনেক অনেক দিন করতো না,,
একটা সময় আমি চেষ্টা ছেড়ে দিলাম জোরপূর্বক যোগাযোগ করার,, ও চাইলে কথা বলতাম নক চাইলে বলতাম না,, দেখতে দেখতে ৪ বছর কেটে গেলো,, আমার আপুর এর মাঝে বিয়ে হয়ে গেলো,,
তার স্বামীরা দুই ভাই এক বোন বেশ উচ্চশিক্ষিত আর ভালো একটা পরিবারে আমার বোনের বিয়ে হলো,, সে বেশ সুখে আছে,, একটা পরীর মত মেয়েও হয়েছে আপুর।
আমার পরিবারে এখন বাবা মা আর আমি আছি,,

একদিন দুপুরে আপু আর দুলাভাই এসেছে বাবা দাওয়াত করেছিলেন,,
আমরা সবাই মিলে খাচ্ছি,,
তখন দুলাভাই বললেন,,
আমাকে দিয়ে তার ছোট ভাইকে বিয়ে করাতে চান,,
কথাটা শুনে আমার গলা দিয়ে আর খাবার নামছে না,,
বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখে একটা হাসি ফুটে উঠলো,, মার ও চেহারায় একই অভিব্যক্তি,,
বাবা জানতে চাইলেন তাদের বাসায় সবার আমাকে পছন্দ কি না?
আপু বললেন,,
সবাই পছন্দ করে আমাকে তারা চাইলে আমাদের আংটি সামনের শুক্রবারে পড়িয়ে কথা পাকা করে দিয়ে যাবে,,
আপু বাবা মা তারা আমাকে একটাবার কিছুই জিজ্ঞেস করলো না,,
দুলাভাই আমাকে জিজ্ঞেস করতে বলায় তারা বললো আমার জন্য তাদের মতামত সব,,
আমি একটা মিনিটের জন্য মুখে হাসি ফুটাতে পারলাম না,,
আপু দুলাভাই যাওয়ার পরে আমি ওকে ফোন দিলাম,
রিং বাজলো অনেকবার,,
কিছুক্ষন পরে বন্ধ করে দিলো ফোনটা,,
আমি খাটে বসে বসে কান্না করলাম,, আর ভাবছিলাম আগে জীবনটা ভালো ছিলো এখন কেমন যেন হয়ে গেছে,, আমি ওকে এখনো ভালোবাসি,, ও তো অন্য কারো সাথে নেই,, তাহলে সম্পর্কটা আর আগের মত নেই কেন? আমাদের মাধুর্যহীন সম্পর্ক কেন? হঠাৎ করেই আমি এমন কি করলাম যে ওর অপ্রিয় হয়ে গেলাম??
আমার সব তো ওকে আমি দিয়ে দিয়েছি এই অবস্থায় অন্য একজন পুরুষকে কিভাবে বিয়ে করবো? এতো সম্ভব না, আমার মনে তো ও ছিলো,, আছে,, আর হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে।
এমন সময় যদি ও ফোন না ধরে কি করবো আমি?
ও যদি ঠিক না থাকে তাহলে বাসায় কি করে ওর কথা বলবো?
সিদ্ধান্ত নিলাম কাল ওর বাসায় যাবো,,
সকালে ভার্সিটি না গিয়ে ওর বাসায় গেলাম,,
দারোয়ান বললো,, ও বাসায় নেই,,
ওর অফিসে চলে গেলাম গিয়ে দেখি ও সেখানেও নেই।
রিসিপশনের মেয়েটা বললো
-স্যার একটু পর আসবে। উনি মিটিং এ গেছেন এক কোম্পানির সাথে।

আমি বসে অপেক্ষা করতে শুরু করলাম,,
এখন ওর ব্যাবসা অনেক বড় হয়ে গেছে ব্যাস্ত থাকে বুঝি তারপরেও মন মানতে চায় না,, সব আগের মত করে পেতে চাই।
প্রায় ঘন্টা খানিক পরে ও এলো,,
আমাকে দেখে কেবিনে নিয়ে গেলো,,
আমি রুমে ঢুকে ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম,,
কাদতে কাদতে বললাম,
আপু ভাই রিশাদ ভাইয়ের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে,,
ও শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,,
-তুমি কি চাও?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-তুমি জানো না?
-তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই
-আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না,, তুমি আমাকে বিয়ে না করলে আমি মরে যাবো।
– বাসা থেকে বিয়ের ডেইট ফিক্স করেছে?
-আগামী শুক্রবার তারা আংটি পড়িয়ে যেতে চাচ্ছে।
-তুমি বাসায় যাও।
ওর কথায় অনেক অপমান লাগলো,,
তারপরেও বেহায়ার মত জিজ্ঞেস করলাম,,
– কি করবো এখন?
– বাসায় যাও।
– আমি বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করলাম,
সে আমাকে ছাড়িয়ে বললো,,
-বিয়ে করবা আর কি করবা?
আমি আর একটা কথাও বললাম না,,
কান্না করতে করত্ব বাড়ি ফিরে এলাম,,
এসে দরজা লাগিয়ে বসে রইলাম কখন সন্ধ্যা হয়ে এলো আমি বুঝতেই পারলাম না,,
মা দরজায় নক করে বললো,,
রিশাদ ভাই এসেছেন,, আমার সাথে দেখা করার জন্য,,
আমি আমার স্বতিত্ব হারিয়ে ফেলেছি,, এরপর যদি কাউকে বিয়ে করি তাতে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে,, একজন কে ধোকা দেওয়া হবে,, আবার সেই পরিবারের সাথে আমার বোনের সংসার জড়িয়ে আছে,, এসব ভেবে একটা কঠিন পদক্ষেপ নিলাম,,
রিশাদ ভাইকে জানিয়ে দিবো আমার ব্যাপারে সব।
আজ এই মুহুর্তেই তাকে সবটা বলে দিবো,,
মা কে জিজ্ঞেস করলাম রিশাদ ভাই কোথায়
উনি কোথায় মা বললেন ছাদে গিয়েছেন,,
ছাদে যাওয়ার জন্য ঘরের মেইন গেইট খুলতেই আমি যা দেখলাম,, তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না,,
সাথে সাথে যেন দু পা পেছনে চলে গেলাম আমি,,

(চলবে..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here