গুমোট অনুভুতি পর্ব ৪৯+৫০

গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_ ৪৯

সবকিছু জানার পর সবাই যেনো স্তব্ধ হয়ে আছে! কতোগুলো সত্যের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের, সবাই নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে, সায়ান মাথা নিচু করে বসে আছে। ঠিক এমন সময় কেউ একজন দৌঁড়ে সেখানে আসলো আর চন্দ্রিকাকে জড়িয়ে ধরলো। সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, সায়ান দেখেই বুঝতে পারলো এটা শাহেদ। ও তাকিয়ে দেখলো শাহেদের হাত থেকে রক্ত পড়ছে, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত,এরমানে চন্দ্রিকার গায়ে লেগে থাকা রক্ত শাহেদের! সায়ান প্রশ্ন করে উঠলো

“এই অবস্থা কেনো তোমাদের?এতো আহত কি করে হলে তুমি?”

চন্দ্রিকা মুখ খুলে বললো

“শাহেদ এই এন্টিডোরের কথা প্রথম শুনে, তারপর আমাকে বলে এই ব্যাপারে। আমি বুঝতে পারি যেহেতু এই এক্সপেরিমেন্টাল ড্রাগ আর এন্টিডোর সামাদ খানের কাছে এরমানে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করবে। আমার দ্বারা তোমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে তাই আর ক্ষতি করতে চাইনা আর না চাই অন্যকেউ করুক। তাই ওকে বলি এন্টিডোর কোন ভাবে নিয়ে আসতে আর ও তাই করে কিন্তু শেষমুহুর্তে ধরা পড়ে যায়। আমি তখন সেই বাড়ির সামনেই ছিলাম, তাই দুজনে মিলে পালিয়ে আসি। তারপর আমরা লুকিয়ে পড়ি, যেখানে লুকিয়ে ছিলাম তা মেইন রোড থেকে অনেক দূরে ছিলো। তাই তাদের ডিস্ট্রেক্ট করার জন্য ও তাদের সামনে যায় আর আমি এন্টিডোর নিয়ে চলে আসি।সেখানেই ও এইভাবে ইঞ্জুরড হয়”

সায়ান ওদের দিকে তাকিয়ে বুঝলো ওরা মিথ্যে বলছে না, সত্যি বলতে সায়ান এই মুহুর্তে ওদের প্রতি কৃতজ্ঞ!কিন্তু সামাদ খানের সাথে শাহেদের সম্পর্ক বুঝতে পারছে না, ও বলেই ফেললো

“সামাদ খান কি হয় তোমার? তুমি তার বাড়িতে ছিলে কেনো? ”

“আমার বাবা হয় তাই ছেলে হিসেবে তার বাড়িতে থাকা অস্বাভাবিক নয়!”

তারপর চন্দ্রিকার দিকে তাকিয়ে বললো

“আর ইউ ওকে?কোথাও লাগে নি তো?”

চন্দ্রিকা মাথা নাড়িয়ে না বললো,ও শাহেদকে নিয়ে হাটা ধরলে সায়ান পেছন থেকে বললো

“সামাদ খান তো চন্দ্রিকার বাবা তাহলে তোমার বাবা কি করে?”

“চন্দ্রির বায়োলজিক্যাল ফাদার আর আমার নামমাত্র! তার তখনি আমার কথা মনে পড়ে যখন দরকার হয়, বলতে পারো আমি তার পোষা কুকুর। ছোট থেকে পেলে বড় করেছে বলে বহুদিন তার খারাপ কাজে জড়িত ছিলাম কিন্তু আপাদত নেই। সে হয়তো জানেই না আমি বেঁচে আছি তা! এনিওয়ে সে তোমাকে মারার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে, সে নিজের স্ত্রী মানে চন্দ্রির সৎমাকে মেরেই ফেলেছিলো প্রায় একদিন। অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন তিনি, সাবধানে থেকো তার থেকে”

” তুমি তার মানে তার বায়োলজিক্যাল সন্তান নও, ওয়েট…তোমার নাম শাহেদ! তুমি…”

সায়ান দ্রুত এগিয়ে গিয়ে শাহেদের কলার চেপে ধরলো আর সেটা সরিয়ে দেখতে লাগলো। হ্যা একটা চেইন আছে কিন্তু রুপোর! ও সেটা টেনে বের করে আনলো আর প্লাটিনামের লকেট দেখতে পেলো যাতে লিখা “শাহেদ জামান”।সায়ান দুইকদম পিছিয়ে গেলো আর কাঁপা স্বরে বললো

“ত্ তুমি…তুমি শাহেদ জামান! শাহিন আঙ্কেলের ছেলে!আমার খালাতো ভাই!”

“হোয়াট ননসেন্স!তোমার আমার মাঝে একটাই সম্পর্ক ছিলো তা হলো শত্রুতার যদিও এখন তোমাকে আমি আর শত্রু ভাবিনা।সেদিন রুশির সাথে ইচ্ছে করেই ওমনটা করেছি যাতে বুঝতে পারো নিজের ভালোবাসাকে অন্যের কাছে দেখলে কেমন লাগে! আর আমি শাহেদ জামান নই, শাহেদ নওয়াজ। এটা জাস্ট আমার সাথে ছোট বেলা থেকে ছিলো তাই খুলিনি।”

“আম নট লায়িং, তুমি আমার খালাত ভাই সম্পর্কে আর রুশির ভাই!তোমার বয়স বিশ বছর তাইনা?”

“তুমি কি করে জানলে?”

“কারণ রুশির বয়সও বিশ বছর এন্ড ইউ গাইজ আর টুইন। এই ওদের দেখতে পাচ্ছো! তারা তোমার বাবা মা সাথে রুশিরও। তোমাদের জন্মের পর সামাদ খান তোমাদের নিয়ে যায়, তোমাকে স্বার্থের জন্য রেখে দেয় কিন্তু রুশিকে মেরে ফেলতে বলে কিন্তু ও ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে। তোমাদের বাবা মা অনেক খুঁজেছে দুজনকে, এই জন্যই তুমি আর রুশি অনেকটা একই রকম দেখতে! আমি সেদিন এটা বুঝতে পারলেও চোখের ভুল ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিলাম”

সায়ান শাহেদেকে একে একে সব বললো। শাহেদ এই সবকিছু বিশ্বাস করতে পারছেনা, কিন্তু সায়ানের এভাবে বানিয়ে বলারও কোন কারণ নেই। এরমানে সামনের এই দুজন ওর বাবা মা আর ওই রুশি নামক মেয়েটি ওর আপন বোন?শাহেদের ভাবনার মাঝেই কেউ একজন ওর গালে হাত দিলো, অশ্রু সিক্ত নয়নে প্রিয়ানা তাকিয়ে আছে তার ছেলের দিকে,দুটো ছেলে মেয়েকে বিশ বছর পর খুঁজে পেয়েছে কিন্তু এভাবে? একজন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আর আরেকজন আহত!উনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো

“তুই আসলেই আমার ছেলে? আমার শাহেদ?”

সায়ান মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলতে বললো, শাহেদও তাই করলো! এই নারী ওর মা?আর উনি ওর বাবা। ওরও বাবা-মা আছে!সত্যিকারের বাবা-মা!ও হুট করে জড়িয়ে ধরলো তাকে,ও কোন অনাথ নয় আর না কারো দয়া বেঁচে থাকবে আর। ওর বাবা-মা আছে এখন!ওর নিজের বাবা-মা!

প্রিয়ানা পরম যত্নে শাহেদের বেন্ডেজ করতে লাগলো, আর শাহেদ চুপচাপ বসে রইলো। সবাই যেনো অনেকগুলো সত্য গ্রহন করার চেষ্টা মশগুল!

________________________

প্রায় তিনঘণ্টা পর অপারেশন থিয়েটরের দরজা খুললো, এতোক্ষন রুশির চিৎকার আর কান্না সায়ান নিতে পারছিলো না। মা হওয়া বড্ড কষ্টের তেমন প্রাপ্তিরও।রুশি হয়তো সব ভুলে যাবে একসময় যখন নিজের বাচ্চাকে প্রথম কোলে নিবে! সায়ান দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই নার্স একটা বাচ্চাকে নিয়ে বের হলো আর মুচকি হেসে বললো

“কনগ্রাজুলেশন মিস্টার খান! আপনার ঘরে জান্নাত এসেছে। আপনি কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন!”

সায়ান স্থির দৃষ্টিতে তাকালো ওর সন্তানের দিকে,ও বাবা হয়ে গেছে!আজ থেকে কেউ আধো আধো শব্দে ওকে বাবাই বলবে,ওর হাত ধরে হাটবে ওর সাথে খেলবে! নার্স ওর কোলে বাচ্চা দিতে গেলে ও নিতে যেয়েও নিলো না,ওর ভয় করছে, এতো ছোট আর নরম শরীর। সায়ান না নেওয়াতে সামু জলদি করে নিয়ে নিলো। অদ্ভুত ভাবে বাচ্চাটি শান্ত ভাবে চেয়ে আছে সায়ানের দিকে, কি মায়া এই মুখখানিতে!রুশি হয়তো ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে নাহয় এই ছোট্ট প্রাণ পৃথিবীর মুখ দেখতো না, সায়ান নিজের সুখের কথা ভেবে নিজের সন্তানকেই হয়তো হারাতো। ও বাচ্চাটির কপালে চুমো খেয়ে বললো

“আম স্যরি!তোমার বাবাইটা বড্ড পচা মা”

তারপর ডক্টর বেরুতেই সায়ান তার কাছে চুটে গেলো,ওর বুক কাঁপছে!কি বলবে ডাক্তার?ও কাঁপা গলায় বলে উঠলো

“মিস্টার খান আপনার ওয়াইফের অবস্থা ভালো না,আমরা যতোটা না ভেবেছি সিচুয়েশন তার থেকেও ক্রিটিকাল! যে এন্টিডোর এনেছে তাতে আমরা ব্লিডিং বন্ধ করতে পেরেছে কিন্তু এতে কিছু সাইড ইফেক্ট ছিলো! আমরা বাহাত্তর ঘন্টার আগে কিছু বলতে পারছি না, আপাদত উনি ঠিক আছেন কিন্তু কতক্ষন ঠিক থাকবেন তার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারছিনা। অনেকগুলো সম্ভাবনা হতে পারে,এন্টিডোর স্পেশিয়ালি ব্রেইনে ইফেক্ট করেছে তাই সে কোমায় চলে যেতে পারে, বা তার সকল স্মৃতি মুছে যেতে পারে কিংবা আংশিক!আর যদি ব্রেইন এই চাপ সহ্য করতে না পারে তবে…”

সায়ান রেগে ডাক্তারের কলার চেপে ধরলো

“কি বলতে চাইছেন আপনি?আমার রুশির কিছু এই হসপিটালের সবকিছু জালিয়ে দিবো আমি। আই ওয়ান্ট হার সেফ এট এনি কস্ট!আপনার যা দরকার আমি তা দিবো জাস্ট কিউর হার প্লিজ”

“কিছু কিছু জিনিস ডাক্তারদের হাতে থাকে না,আগেই বলেছি ড্রাগটা এনিমেল ড্রাগ ছিলো তাই তার সন্তানকে বাঁচাতে আমরা এনিমেল এন্টিডোর ইউজ করেছে এবং পরে আপনাদের আনা এন্টিডোর যার সাইড ইফেক্ট রয়েছে।আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, বাকিটা আল্লাহর হাতে!”

সায়ান দৌঁড়ে ঢুকে গেলো কেবিনে আর রুশির দিকে তাকিয়ে দেখলো ও অজ্ঞান অবস্থায় আছে। ও সেখানে গিয়ে নিচে বসে রুশির হাত চেপে ধরে বললো

“প্লিজ কাম ব্যাক!আমি শ্বাস নিতে পারছিনা তোমাকে ছাড়া,প্লিজ এভাবে মেরো না আমায়। আমি পারবো না তোমায় ছাড়া থাকতে!”
গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৫০

সায়ান রুশির হাত ধরে বিড়বিড় করতে লাগলো, বারবার রুশিকে ওকে ছেড়ে না যাওয়ার অনুরোধ করতে লাগলো!হঠাৎ করে সায়ান নিজের হাতে শক্ত কিছু অনুভব করলো, ওর হাতের বন্ধনী শক্ত হয়ে উঠেছে। ও দ্রুত অশ্রুসিক্ত চোখে সেদিকে তাকালো, রুশির হাত ওর হাতকে খুব শক্ত করে ধরে আছে!ও রুশির মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো রুশি ওর দিকে তাকিয়ে আছে, ও উঠে দ্রুত রুশিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো আর বলতে লাগলো

“আমি জানতাম তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না, তুমি ফিরে আসবে আমি জানতাম!আমি কখনো তোমাকে চোখের আড়াল করতে চাইনা,তুমি আমাকে ফেলে চলে যাওয়ার চিন্তাও করবে না আর। মনে রেখো আজকের এই অনুরোধই শেষ ছিলো তোমার।এরপর আর আমি কিছুই শুনবো না!”

সায়ানের কথা রুশির কানে গিয়েছি কিনা সায়ান বুঝতে পারলো না, রুশি ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে, হাতের বন্ধন ধীরেধীরে শক্ত করছে। এর মানে রুশি কিছুতে ভয় পাচ্ছে, সায়ান রুশির মাথায় হাত রেখে ওকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলো, রুশি দুর্বল কন্ঠে বললো

“ডাক্তারের কথা আমি শুনেছি সায়ান! আমি যদি কোমায় না যাই তবে সবচেয়ে বেশি চান্স আমি তোমাকে ভুলে যাবো! আমি তোমাকে ভুলতে চাইনা,আমাদের কাটানো প্রতিটি মুহুর্ত আমার কাছে স্পেশাল! আমি সেই মুহুর্তগুলো ভুলতে চাইনা,আমি তোমাকে ভুলে গিয়ে কি করে থাকবো?আমি তোমাকে ছাড়া কি করে থাকবো, তুমি কিছু করোনা সায়ান! কিছু একটা করো, তুমিতো সব ঠিক করে দাও। এটাও ঠিক করে দাওনা প্লিজ!আমি তোমাকে ভুলতে চাইনা!এর চেয়ে তো আমার মরে যাওয়াই ভালো ছিলো!”

“সব ঠিক হয়ে যাবে রুশি!প্লিজ রিলাক্স,তুমি শান্ত হও। আমি ডাক্তার ডাকছি, সব ঠিক হয়ে যাবে”

সায়ানের কথায় রুশি হাতের বন্ধন আরো শক্ত করে ফেললো যেনো ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। সায়ানও জড়িয়ে ধরে রাখছে। দুজনেই কাঁদছে,রুশি সায়ানকে ভুলে যাবে এটা সায়ান নিজেও মানতে পারবে না। অনেক কষ্ট রুশিকে নিজের করে পেয়েছে, ওর সাথে সময় কাটানোর পুর্বেই ওদের সকল স্মৃতিগুলো রুশি ভুলে যাবে, এটা মানবে কি করে ও। রুশি ওকে ভুলে যাবে!রুশির কাছে ও একদম অপরিচিত হয়ে যাবে?সায়ান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রুশিকে কিন্তু রুশির বন্ধন ধীরেধীরে আলগা হয়ে গেলো। সায়ান বুঝতে পেরে আলতো করে ডাকলো

“রুশি! রুশি!প্লিজ কথা বলো আমার সাথে।আমার খুব ভয় করছে প্লিজ”

কিন্তু রুশির পক্ষ থেকে কোন সাড়াশব্দ এলো, সায়ান রুশিকে ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে তাকালো।রুশি চোখ বন্ধ করে আছে, সায়ান কয়েকবার ডেকেও যখন কোন সাড়া পেলো না তখন ডাক্তার ডাকতে শুরু করলো। মুহুর্তেই কেবিনে সবাই এলো সাথে ডাক্তারও!
ইনান সায়ানকে কোন মত সরালো সেখান থেকে কিন্তু সামলাতে পারছে না ওকে। সায়ান পাগলামো শুরু করে দিয়েছে, বিড়বিড় করে বলছে

“ও ক্ কথা বলছে না, ওকে উঠতে বল না প্লিজ!আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ওকে ছাড়া।কিছু তো কর প্লিজ!”

ইনান বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না,কিভাবে শান্তনা দেবে তার ভাষা নেই। মনের কোথাও একটা এখনো আছে রুশি তাই ওর হৃদয়ও পুড়ছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। কি অধিকারে রুশির জন্য কিছু বলবে?সায়ানের মতো হয়তো না তবে খারাপ তো ওরও লাগছে,চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ‘রুশি প্লিজ উঠো, তুমি এভাবে ছেড়ে যেও না। অন্তত তোমায় ছাড়া আমাদের এই পাগলটা বাঁচবে না’
কিন্তু ওইযে অধিকার! সেটাই তো নেই, বলবে কি করে?সায়ানকে শক্ত করে ধরে বাইরে নিয়ে এসেছে ইনান,ওকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সায়ান ছুটে গিয়ে ওটির দরজায় লাথি মারা শুরু করলো,আর চিল্লাতে থাকতো। একসময় ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লো, সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। প্রিয়ানা মাঝেমাঝে কেঁদে উঠছে, শাহেদ মাথা নিচু করে বসে আছে।সামু ছোট বাচ্চাটিকে নিয়ে বাইরে আছে হসপিটালের পরিবেশ পুরো থমথমে!

প্রায় আধঘণ্টা পর ডাক্তার বের হলো,সায়ান দুর্বল শরীরে উঠে দাঁড়ালো আর ডাক্তারের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, ডাক্তার দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো

“পেইশেন্ট এখন আউট অফ ডেঞ্জার!তার ফিজিক্যাল কোন ইঞ্জুরি নেই আর মৃত্যুর ঝুঁকিও নেই।”

ডাক্তারের কথা সায়ান যেনো প্রান ফিরে পেলো সবাই, যাক রুশির আর কোন ঝুঁকি নেই। শি ইজ ফাইন।কিন্তু বলে না খুব তাড়াতাড়ি খুশি হয়ে গেলে খুশিটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়।ডাক্তারের পরের কথা শুনে সায়ান স্তব্ধ হয়ে গেলো

“কিন্তু ওনার মাথায় খুব বেশি চাপ পড়েছে,আমি এইটারই ভয় পাচ্ছিলাম আর তাই হলো। পেইশেন্টকে এইসময় স্ট্রেসফ্রি রাখতে হয় কিন্তু উনি প্রচণ্ড স্ট্রেসে ছিলো তাই সেটার ইফেক্ট মাথায় পড়েছে। আমি আপাদত কিছু বলতে পারছিনা তবে উনি কিছুদিন বেজিটেবল অবস্থায় থাকবেন। তবে যখন নিজের হুশে ফিরে আসবেন তখন সবেচেয়ে বড় সম্ভাবনা হচ্ছে এমনিজায় ইফেক্ট হওয়ার। হয়তো উনি উনার স্মৃতির কিছু অংশ হারিয়ে ফেলবে কিংবা পুরোটা!মনে রাখবেন তাকে কিছুতেই স্ট্রেস দেয়া যাবে না কিংবা আগের কিছু মনে করানোর ট্রাই করানো যাবে না।এতে পেইশেন্টের অনেক ক্ষতি হতে পারে এমনকি মস্তিষ্কের কার্যক্রম বন্ধও হয়ে যেতে পারে মানে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না”

সায়ান নিচে বসে পড়লো, ওর সাথে কেনো এমন হয়?এই পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতে কেনো ওর আর রুশির সাথে এমন হতে হবে?কেনো ওরা এতো চেষ্টা করেও সুখে থাকতে পারলো না?হোয়াই?
সায়ানের পাশে এসে সামু দাঁড়ালো তারপর ওকে বললো

“ভাই তুই এভাবে ভেঙে পড়লে কি চলবে?তুই এখন একা নস,তোমার একটা মেয়ে আছে!তুই এমন হলে ওকে কে সামলাবে?আর রুশি একদম ঠিক আছে, সব ঠিক হয়ে যাবে!তোর বাচ্চাকে একটু কোলে নে, ও কাঁদছে ভাই!”

সায়ান বাচ্চার কান্নার শব্দে উঠে দাঁড়ায় আর আলতো করে ওকে কোলে নেয়!তারপর কান্না থামানোর জন্য হাটতে থাকে,এটা ওটা বলতে শুরু করে কান্না থামানোর জন্য। আর বাচ্চাটি খুব দ্রুত থেমেও যায়!সবাই অবাক হয়ে সায়ানকে দেখছে, এতো তাড়াতাড়ি পরিবর্তন! সায়ান সবার দিকে তাকিয়ে বললো

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? বাবা হিসেবে আমার মেয়েকে তো আমাকেই সামলাতে হবে তাইনা?আমার রুশি বেঁচে আছে!এটাই যথেষ্ট আমার জন্য!তাই সবাই এভাবে মুখ ফুলিয়ে থাকবে না বলে দিলাম”

সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো, সায়ান নিজে থেকে বুঝে গেছে মানে ভালো হয়েছে। যাইহোক না কেনো সায়ানের স্বাভাবিক থাকা জরুরী,তাহলে রুশিও হয়তো একদিন ঠিক হয়ে যাবে। আশা করা ছাড়া এখন আর কোন উপায় নেই,আশায় আশায় আজীবন কাটানো যায় কিন্তু আশা ছাড়া বাঁচা যায়না। সায়ানের জন্য হয়তো এটাই যথেষ্ট যে রুশি নিঃশ্বাস নিচ্ছে, বেঁচে আছে!আর সায়ান এই আশায় বেঁচে আছে রুশি একদিন উঠবে, কথা বলবে, হাসবে আর সবকিছু আগের মতো হয়ে যাবে!

#চলবে

( হ্যাপি রিডিং💜)
#চলবে
(স্যরি ফর বিং লেট😥)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here