গোধূলি বেলায় তুমি পর্ব -১৪

#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_১৪

আদ্রিজার এখন রাগ উঠে যায়,,, সে রাগে চিল্লিয়েই বলে,,, আপনারা ছেলেরা আমাকে পেয়েছেনটা কি? আমি কি খেলার পুতুল যে মন চাইলো খেলবেন আর মন চাইলো না ছোঁড়ে ফেলে দিবেন। একজন এক বছর আমার সাথে প্রেম করে বলে আমাকে কখনোই নাকি ভালোবাসে নি। যা ছিল সব কিছুই অভিনয়। আর আপনি বলছেন আমাকে ভালোবাসেন। বিয়ে করতে চান?? কি করে বলতে পারেন এগুলো আপনারা। মেয়েদের মন নিয়ে খেলতে কেন এত ভালোবাসেন? আন্সার মি,,,,,,

সাফিন শান্ত স্বরে বলে,,,, আমি কোন মিথ্যা বলছি না, আর না তোমার মন নিয়ে খেলতে এসেছি। পৃথিবীতে সব মানুষ এক হয় না। একজন বিশ্বাসঘাতকটা করেছে বলে সবাই তাই করবে এমনটা কিন্তু নয়। আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি। আমি তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি তা তোমার কল্পনারও বাহিরে। শুধু তোমার খুশির জন্য আভিয়ানের সাথে আমি তোমার বিয়েটা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ যখন কোন বাঁধা রইল না তাই আমি তোমাকে সব কিছু জানিয়ে দিলাম।এখন সিদ্ধান্ত শুধুই তোমার। আমি তোমাকে বিন্দু পরিমাণ জোর করবো না। আমি জানি এখন তোমার পক্ষে নতুন করে আবার কাউকে বিশ্বাস করা বা ভালোবাসা এত সহজ নয়। তুমি সময় নাও। আমি তোমার জন্য আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি আছি। তুমি শুধু একটি বারের জন্য আমাকে সুযোগ দাও। আমি কথা দিচ্ছি তোমার চোখে কখনো পানি আসতে দিবো না। নিজের সবটা দিয়ে তোমাকে আমি আগলে রাখবো।

আদ্রিজা নিজেকে সামলিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে,,, আমি পারবো না আপনাকে বিশ্বাস করতে বা ভালোবাসতে। আমি কাউকে দ্বিতীয় বার আর সুযোগ দিবো না আমার ভালোবাসা আর অনুভূতির সাথে খেলার। আমি আপনাকে কোন সুযোগ দিতে পারবো না। আমাকে আর কেউ বিরক্ত করবে না, আমি একা থাকতে চাই,,,,,,
আর কিছু না বলে আদ্রিজা রুমের ভিতরে চলে যায়।

সাফিন অসহায়ের দৃষ্টিতে আদ্রিজার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার চোখের কোনায় পানি ছলছল করছে।

আদ্রিজার বাবা সাফিনের কাঁধে হাত রাখতেই সে চমকে সেদিকে তাকায়। সে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,,, সরি আঙ্কেল। এমন একটা দিনে এইসব কিছু বলার জন্য। আমার উচিত ছিল একজন বন্ধুর মতো আদ্রিজার পাশে থাকা। তাকে এইসব থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করা।আসলে আমি খুব স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম তাই এমনটা করে ফেলেছি।

সাফিন আরো কিছু বলতে নিলে আদ্রিজার বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,,,, আদ্রিজাকে একটু সময় দাও। মেয়েটার সাথে এত কিছু হয়ে গেছে তা সে এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নি। তোমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তবে তুমি ঠিক তাকে পাবে। শুধু এখন একটু ধৈর্য ধরো।

জ্বি আঙ্কেল।

,,,,,,,,,,,,,,,,,

আভিয়ান নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। পরিস্থিরির কাছে আজ সে বড্ড নিরুপায়। তার এখন নিজের উপরই ঘৃণা হচ্ছে। সে কি করে পারলো একটা মেয়েকে এত বাজে কথা গুলো বলতে। খুব রাগ হচ্ছে তার নিজের উপর। তার বুকের ভিতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সে কি করতে পারে বুঝতে পারছে না। রাগে তার চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে আছে।

খুব দ্রুত ড্রাইব করে আভিয়ান বাড়িতে চলে আসলো। রুমে ঢুকেই সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। আজ নিজেকে তার বড্ড কান্ত বলে মনে হচ্ছে । কোন রকম রুমে ঢুকে বিছানায় এসে সে শুয়ে পড়লো। এখন তার অস্থিরতা কমার বদলে আরোও বেড়ে গেলো। তার চোখের সামনে শুধু আদ্রিজার বিষন্ন চেহারা ভেসে উঠছে। তার অশ্রুভেজা চোখের কথা মনে হচ্ছে। যতোই সে চাচ্ছে এইসব ভুলে যেতে কিন্তু উল্টো তার এইসব আরোও বেশি মনে হচ্ছে । আজ সে আদ্রিজাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছে। হারিয়ে ফেলেছে তার বিশ্বাস, ভালোবাসা। আদ্রিজাকে হারিয়ে তার বুকের ভিতরে তীব্র ব্যাথ্যা অনুভব হচ্ছে। সে বুঝতে পারছে না এখন তার কি করা উচিত। কি করলে সে মুক্তি পাবে এই যন্ত্রণা থেকে? তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

,,,,,,,,,,,,,,,

একদিন হয়ে গেছে আভিয়ান তার রুম থেকে বের হয়নি। সেখানের থেকে আসার পরে শুধু সিগারেট আর মদ ছাড়া কিছু খায় নি। যদিও সে কখনো নেশা করে না কিন্তু আজ নিজের শান্ত করার জন্য সব কষ্ট ভুলার জন্য এই নেশাটা যেন তার বড্ড প্রয়োজন। মানুষ বলে নেশা করলে নাকি সব ভুলে থাকা যায়। কই আমি তো পারছি না কোন কিছু ভুলতে। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না।

আভিয়ানের রুমের দরজা ভিতর থেকে লক করা ছিল না। শুধু দরজাটা ভিতর থেকে লাগানো ছিল। অবন্তী ভয়ে ভয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। আভিয়ান বিছানার উপরে চিত হয়ে কপালের উপর এক হাত রেখে শুয়ে আছে। সে কাঁপা গলায় বললো,,,, ভাইয়া খাবে চলো। কালকে থেকে তুমি কিছুই খাও নি,,,,,

কারো আওয়াজ শুনে আভিয়ান কপাল থেকে হাত সরিয়ে সামনে তাকায়। সামনে নিজের ছোট বোনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার কষ্টের পরিমাণটা আরোও অনেক বেড়ে যায়।সে গম্ভীর স্বরে বললো ক্ষিদে নেই। তুই এখন যা,,,,,,

আভিয়ানের এমন গম্ভীর কন্ঠ শুনে অবন্তী আরোও কেঁপে উঠে। সে ভয়ে ভয়ে আবারও বললো,,,, এভাবে চলতে থাকলে তুমি বাঁচতে পারবে না। প্লিজ আমার কথা শুনো।

অবন্তীর কথা শুনে আভিয়ান শুয়া থেকে উঠে বসে। আভিয়ান উঠে বসতেই অবন্তী তার দিকে এক পলক তাকিয়ে কেঁপে উঠলো। এক দিনেই নিজের কি হাল করেছে। চিনা যাচ্ছে না তাকে। চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে আছে। সারা ঘরে মদের বোতল আর সিগারেটর ছাই পড়ে আছে। দেখে পাগল বলে মনে হচ্ছে,,,,,,

আভিয়ান বিরক্ত হয়ে বলে,,, তুই যা এখন এখান থেকে। আমাকে একদম বিরক্ত করবি না। আমাকে একটু একা থাকতে দে,,,,,,

আভিয়ানের কথা শুনে অবন্তী স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার পা যেন অবশ হয়ে আসছে। অবন্তীকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,,,, আভিয়ান ধমক দিয়ে বলে,,, তোকে যেতে বলছি তো। তুই যাচ্ছিস্ না কেন?

অবন্তী সেখানে আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে দৌঁড়ে নিজের রুমে এসে দরজা লক করে ফ্লোরে বসে পরে। সে তার নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। যে ভাইয়া কোন জিনিস তার চাওয়ার আগেই তার হাতে এনে দিতো। যে তাকে সবচেয়ে বেশি আদর করতো আজ সেই ভাইয়া তাকে ধমক দিয়ে কথা বলেছে।এটা সে একদম মেনে নিতে পারছে না। তার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। এই সব কিছুর জন্য সে নিজেকে দোষ দিতে থাকে। আজ একটা ভুল তার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে, সাথে তার নিজের ভাইয়েরও। জীবনে সে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে ভুল মানুষকে বিশ্বাস করে তাকে ভালোবেসে। যার জন্য সে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে। নিজের কষ্ট সে মেনে নিতে পেরেছে কিন্তু কোন অন্যায় করা ছাড়াও নিজের ভাইকে এভাবে শেষ হতে দেখা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না। নিজেকে তার বড্ড অপরাধী বলে মনে হচ্ছে,,,,,,

অবন্তী হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। কোনটা করা ঠিক হবে কোনটা করা ভুল হবে তা সে ভাবতে পারছে না। তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে,,, সব দোষ তার। সবকিছু তার জন্যই হয়েছে। এইসব কিছু থেকে সেই সবাইকে মুক্তি দিতে পারে। যত সমস্যা তো শুধুই তার জন্য, তাই সেই যদি না থাকে তবে তো কোন সমস্যাই থাকলো না।

..
.
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here