গোধূলি বেলায় তুমি -শেষ পর্ব

#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#অন্তিম_পর্ব(১ম অংশ)
.
.
আদ্রিজাও চুপ থেকে সব কিছু অনুভব করছে। এতক্ষন যেই যন্ত্রণা তার বুকের মাঝে হচ্ছিল আভিয়ানকে এভাবে জড়িয়ে ধরে তা প্রশান্তিতে পরিনত হয়েছে। সিগ্ধ এক আবেশে তাদের দুই জনের শরীর ও মন সব কিছু জুড়িয়ে গেছে৷ কয়েক সেকেন্ডের জন্য তারা সব কিছু ভুলে গেছে। হারিয়ে গেছে দুইজন দুইজনেতে। বিভোর হয়ে আছে তারা একে অপরের মাঝে। আজকের এই মুহূর্তটা দুইজনের জন্যই অনেক প্রতিক্ষার। পূর্ণতা পেতে চলেছে একটা প্রবিত্র সম্পর্ক।যেখানে দুইজনের মাঝে নেই কোন মান- অভিমান,নেই কোন ভুল বুঝাবুঝি শুধু আছে ভালোবাসা।

কেটে গেছে দুই দিন। আভিয়ান সকাল সকাল রেডি হয়ে বাহিরে যাচ্ছে। রেডি হওয়া শেষে সে আদ্রিজাকে ডাক দেয়।কয়েকবার ডাক দেওয়ার পরে আদ্রিজা বিরক্ত হয়ে রুমে ঢুকে রাগী দৃষ্টিতে আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? সব কিছু তো গুছিয়ে রেখে গেছি।

হুমম।কিন্তু শুধু একটা জিনিসের কম ছিল। সেটা রাখতে ভুলে গেছো। আদ্রিজা মনে করার চেষ্টা করে বলে কি ভুলে গেছি?

আভিয়ান মুচকি হেসে বলে,,, এদিকে আসো দেখিয়ে দিচ্ছি। আদ্রিজা আভিয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আভিয়ান তার হাতে টান দিয়ে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। একহাতে তার কুমোর জড়িয়ে ধরে। তার কপালে গভীর ভাবে স্পর্শ করে।লজ্জায় আদ্রিজার মুখ পুরো লাল হয়ে যায়। সে এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। আভিয়ান তাকে দেখে আবারও মুচকি হাসে। তার কানে ফিসফিস করে বলে,, এভাবে লজ্জা পেলে তোমার মুখ একদম লাল টমেটোর মতো হয়ে যায় মন চায় খেয়ে ফেলি। তখন কিন্তু আমার কোন দোষ থাকবে না। বলে তার কুমোরে ধরে তাকে আরো নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আদ্রিজা যেন দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিই হারিয়ে ফেলেছে।আভিয়ান নেশাক্ত কন্ঠে বলে,,, বিয়ের এত দিন হয়ে গেছে এখনো তোমার লজ্জা ভাঙে নি। আজ চলো সবার আগে তোমার লজ্জা দূর করি,, কি বল্।আদ্রিজা আস্তে করে বলে,,,, অসভ্য একটা।

আভিয়ান দুষ্ট হেসে বলে,,, তোমার সাথে অসভ্যতামি করবো না তো কি অন্য মেয়ের সাথে করবো?

আদ্রিজা কপট রাগ দেখিয়ে বলে,,, যান তাই করেন গিয়ে। হাত- পা ভেঙে রেখে দিবো একদম। সাহস কত অন্য মেয়ের কথা বলে।

আভিয়ান তাকে ছেড়ে বলে,,, মজা করছিলাম। আমার পুরো পৃথিবীই এখন তুমি। তুমি ছাড়া এই আমার কোন অস্তিত্বই নেই। বিকেলে রেডি থাকবে। আজকে আমরা ঘুরতে যাবো।আসি বন্যা,,,,,

,,,,,,,,,,,,,,,

আভিয়ান আবারও সাফিনের কাছে চলে যায়। টানা তিন দিন কিছু না খাওয়ার ফলে ক্ষিদেয় ছটছট করছে সে। হাতের যন্ত্রণায় চোখ থেকে পানি পরছে। খুব পানি তৃষ্ণা পাচ্ছে তার। সে পানি পানি করে কান্ত স্বরে বলতে লাগলো। আভিয়ান তার লোককে ইশারায় পানি আনতে বললো। লোকটি স্টিলের একটি গ্রাসে পানি দিয়ে চলে গেলো৷ গ্রাসে পানি নিয়ে সাফিনের দিকে এগিয়ে দিল সে।সাফিন ব্যস্ত হয়ে গ্রাস নিতে গেলে আভিয়ান গ্রাস ছেড়ে দেয়। ফ্লোরে পানি পরে যায়। সে ফ্লোর থেকে পানি খাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে কিন্তু তার আগেই পানি গড়িয়ে যায়।সাফিনের অবস্থা দেখে আভিয়ান বিদ্রুপত্নক হেসে বলে,,, তোর মতো জানোয়ারকে পানি খাওয়াবো আমি তা তুই ভাবলি কি করে?? তোকে তো পারলে এখনি আমি গুলি করে মারতে পারি কিন্তু তা তোর জন্য অনেক সহজ মৃত্যু হবে। কিন্তু তুই এত সহজে মরতে পারবি না। তোকে আমি বাঁচিয়ে রাখবো। তোর এমন অবস্থা করবো যে তুই মরতে চাইবি কিন্তু পারবি না,,,,, আভিয়ানের দৃষ্টি ক্রোধ। আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে সাফিন সেদিনের ঘটনা মনে করে ঢোক গিললো। সে ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলো। সে বুঝতে পারলো আভিয়ান নিশ্চয়ই ঐ দিনের মতো হিংস্রাত্নক কিছু করবে। কিন্তু কি করবে তা বুঝতে পারছে না।

আভিয়ান আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,,কিছুক্ষন পরে পাঁচটি হিংস্র কুকুরকে রুমে ছেড়ে দিল। সাফিনের শরীরে এক টুকরো মাংস ছুঁড়ে দিয়ে লোকটা রুমের দরজা আটকিয়ে বেরিয়ে গেলো। ভয়ে সাফিনের আত্না কেঁপে উঠলো। কুকুর গুলো হিংস্রাত্নক ভাবে সাফিনের সারা শরীরে কামড় দিতে থাকে। ব্যাথায় সাফিন জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকে। সাফিনের চিৎকারের শব্দ শুনে তার মনের ভিতরে প্রশান্তিতে ভরে গেছে। দশ মিনিট পরে আভিয়ান তার লোককে বললো কুকুর গুলোকে আবারও আগের জায়গায় বেঁধে রাখতে। আভিয়ানের কথা মতো লোকগুলো তাই করে। আভিয়ান আবারও ভিতরে ঢুকে সাফিনের অবস্থা দেখে জোরে জোরে হাসে। সাফিনের সারা শরীরে কামড়ের দাগ। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পরছে।

সাফিন ব্যাথায় শরীরে লড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সে অনেক কষ্টে কুঁকড়িয়ে কুকড়িয়ে আভিয়ানের পায়ে ধরে বলে,,, আমাকে মেরে ফেল প্লিজ ।আমি আর পারছি না। নাহলে আমাকে ছেড়ে দে্।আমি কথা দিচ্ছি আমি আর কোন অন্যায় করবো না।

আভিয়ান মুচকি হেসে বলে,,, তুই কিছু করার মতো অবস্থায় থাকলে তো করবি। আর কিছু না বলে আভিয়ান রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সাফিন ব্যাথায় অজ্ঞান হয়ে যায়।

আভিয়ান রুম থেকে বেরিয়ে তার লোককে বলে,,, মাঝ রাতে একে গাড়িতে বসিয়ে হাইওয়েতে একা ছেড়ে দিতে।

,,,,,,,,,,,,,

বিকেলে আদ্রিজা রেডি হয়ে আভিয়ানের জন্য অপেক্ষা করছে। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে আদ্রিজা দ্রুত দরজা খোলে দেয়। আভিয়ানকে দেখেই বুঝা যায় সে অনেক কান্ত তাই আদ্রিজা তাকে রুমে গিয়ে ফ্রেস হতে বলে। আভিয়ান কিছু না বলে সুফা উপরে চলে যায়। আদ্রিজা দরজা লাগিয়ে তার পিছু পিছু যায়। আভিয়ান রুমে গিয়ে কোর্টটা খাটের উপরে রেখে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে। ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আদ্রিজা আভিয়ানকে দেখে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আভিয়ানকে অনেকটা সিগ্ধ লাগছে। চুল থেকে পানি গড়িয়ে পরছে। আভিয়ান আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বলে,,, এভাবে দূর থেকে নজর না দিয়ে কাছে এসে দেখলেই তো পারো। আমি তো অন্য কেউ নই আমি তো তোমারই। আদ্রিজা লজ্জায় নিজের চোখ সরিয়ে নেয়। আভিয়ান রেডি হয়ে বলে চলো যাওয়া যাক,,,,

আভিয়ান আর আদ্রিজা কার গিয়ে বেরিয়ে যায়। রাস্তায় অনেকবার আদ্রিজা জিজ্ঞেস করে আমরা কোথায় যাচ্ছি,,,,

আভিয়ান মুচকি হেসে বলে এখন বলা যাবে না,,, ইট’স সারপ্রাইজ। এখন বলা যাবে না। সময় হলে জানতে পারবে। আদ্রিজা রাগ করে আর আভিয়ানের দিকে তাকায় নি। বাহিরে তাকিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে থাকে। অনেকটা পথ আসার পরে বুঝতে পারে তারা কোথায় যাচ্ছে। খুশিতে তার চোখে পানি ছলছল করে উঠে।কতদিন পরে সে তার নিজের বাড়িতে আসছে। বাড়িতে আসতেই আভিয়ান গাড়ি থামায়। আদ্রিজা তার অপেক্ষা না করে দৌঁড়ে ভিতরে চলে যায়। আভিয়ান গাড়ি পার্ক করে মিষ্টি আর ফল নিয়ে ভিতরের দিকে যায়।

কলিং বেল বাজতেই আদ্রিজার মা দরজা খোলে দেয়। আদ্রিজাকে দেখা মাত্রই তার মা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আদ্রিজাও ওনাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষন পরে আদ্রিজা ওনাকে ছেড়ে বলে,,,, তুমি কাঁদছো কেন?এখন তো সব ঠিকই আছে। তুমি কাঁদবে না। বাবা আর ভাই কোথায়,,,,,

আদ্রিজার মা চোখের পানি মুছে বলে,,, আমি কাঁদছি কেন তা তুই এখন বুঝবি না। যখন নিজে মা হবি তখন বুঝবি। মার কথা শুনে আদ্রিজা লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বলে,,, থাক আর বলতে হবে না। বাবা আর ভাইকে ডাক দেও। আদ্রিজার মা সবাইকে ডাক দেয়। সবাই ওনার কথা শুনে বাহিরে বেরিয়ে আসে।

আভিয়ানকে ভিতরে ঢুকতে দেখেই আদ্রিজার বাবা ক্রোধের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। তিনি এখনো কিছুই জানেন না। তিনি গম্ভীর স্বরে বলেন,,,,তোমার সাহস কি করে হলো এই বাড়িতে ঢুকার।তোমাকে এখনি আমি পুলিশে দিবো। আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করে তার পরে তাকে জোর করে বিয়ে করার জন্য সারাজীবন তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াবো,,,,,,
…..#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#অন্তিম_পর্ব(শেষ অংশ)
.
.
আভিয়ানকে ভিতরে ঢুকতে দেখেই আদ্রিজার বাবা ক্রোধের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। তিনি এখনো কিছুই জানেন না। তিনি গম্ভীর স্বরে বলেন,,,,তোমার সাহস কি করে হলো এই বাড়িতে ঢুকার।তোমাকে এখনি আমি পুলিশে দিবো। আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করে তার পরে তাকে জোর করে বিয়ে করার জন্য সারাজীবন তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াবো,,,,,,

আভিয়ান মাথা নিচু করে শান্ত স্বরে বলে,,, আমি যা করেছি তার জন্য আপনি আমাকে যা শাস্তি দিবেন আমি তা মাথা পেতে নিবো। আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে ওনীও তাই বলতো আপনি যা বলছেন। কিন্তু আমার কথাটা আগে একটু শুনেন। এরপরে আপনি যা চাইবেন তাই হবে।

আদ্রিজার বাবা রাগে রুক্ষ কন্ঠে বলে,,, আমার কিছু শুনার নেই। তুমি কেমন তা আমার জানা আছে। তোমার মতো নিকৃষ্ট লোক আমি পৃথিবীতে দুইটা দেখি নি। তোমার মতো চরিত্রহীন কারো সাথে আমি আমার মেয়েকে কিছুতেই থাকতে দিবো না। তার জীবনটা আমি কিছুতেই নষ্ট হতে দিবো না।বেরিয়ে যাও বলছি,,,( রাগে চিৎকার করে)

আদ্রিজা তার বাবার সামনে গিয়ে বলে,,, বাবা তুমি শান্ত হও। তুমি ভুল বুঝছো আরিয়ানকে। শুধু তুমি নও আমরা সবাই আভিয়ানকে ভুল বুঝেছিলাম।

আদ্রিহার বাবা গম্ভীর স্বরে বলে,,,, নিজের চোখের দেখা কি করে ভুল হতে পারে? যা হয়েছে সব নিজের চোখে দেখার পরে এখানে কোন ভুল থাকতে পারে না।

চোখের দেখায়ও মাঝে মাঝে ভুল থাকে। সব জানাই ঠিক হয় না। পরিস্থিতি মানুষকে অনেক সময় অনেক কিছু করতে বাধ্য করে।আভিয়ানও স্বীকার হয়েছে পরিস্থিতির। সে বাধ্য হয়েছে এমনটা করতে। আভিয়ান অনেক কিছু সহ্য করেছে জীবনে আমি তাকে আর কোন কষ্ট পেতে দিবো না। তুমি তাকে এভাবে অপমান করলে আমি আর কখনোই এখানে আসবো না। আর এখনি এখান থেকে চলে যাবো,,,,

আদ্রিজার বাবা গম্ভীর স্বরে বলে,,, কি হয়েছে আমি সব জানতে চাই?

আদ্রিজা ওনাদের সবকিছু খোলে বলে। সব কিছু শুনার পরে আদ্রিজার মা – বাবা আর ভাইয়ের চোখেও পানি চলে আসে। আভিয়ান একপাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।

আদ্রিজার বাবা গিয়ে আভিয়ানকে বলে,,, যা হয়ে গেছে তা তো আমি চেঞ্জ করতে পারবো না। জন্ম – মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তাতে মানুষের কোন হাত থাকে না। আমি তো তোমার বাবাকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না কিন্তু আজকের থেকে আদ্রিজা আর আয়ানের মতো তুমিও আমার সন্তান। আমাকে নিজের বাবার মতো মনে করতে পারবে না। আভিয়ান আদ্রিজার বাবাকে জড়িয়ে ধরে। তার মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠে। সে কান্না করতে করতে বলে,,, আমি কখনো ভাবতেই পারি নি বাবাকে আবার ফিরে পাবো।আজ আমি অনেক খুশি।

আদ্রিজার মা অভিমানী স্বরে বলে,,, আমি বুঝি কিছু না। আমাকে বুঝি মা ভাবা যায় না৷

আভিয়ান আদ্রিজার মার সামনে এসে বলে,,, এখন তো আপনারাই আমার সব। আজ আমি পরিপূর্ণ। বন্যার মতো একজনকে জীবনসঙ্গী পেয়েছি। বাবা- মাকে আবারও ফিরে পেয়েছি। আয়ানের মতো একজন ভাই পেয়েছি।

আজ একটি পরিবার পূর্ণ হয়েছে। সব বাঁধা পেরিয়ে সবাই এক হয়েছে।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

সময় বহমান।এই পৃথিবীতে কারো জন্যই কিছু থেমে থাকে না। একজন মানুষ না থাকলে অপর মানুষ ঠিক সেই মানুষের দায়িত্ব গুলো পালন করে নেয়। সময়ই সবচেয়ে বড় প্রতিশেধক। মানুষ সময়ের সাথে সাথে ঠিকই নিজেকে সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে পারে। এক সময় যাকে ছাড়া সে নিজেকে কল্পনা করতে পারে না বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সময়ের ব্যবধানে মানুষ তাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে শিখে নেয়। ভালো থাকার কারণ খুঁজে নেয়।

আজ আদ্রিজা আর আভিয়ানের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। জীবনে সুখের সময় হয়তো খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়। তাইতো আদ্রিজার কাছে এই একটা বছরকে একদিনের মতো মনে হচ্ছে।

সাফিন তার কাজের শাস্তি পেয়েছে৷ সে এখন তার কাজের জন্য অনুতপ্ত। সেদিন রাতে আভিয়ানের কথা মতো সাফিনকে হাইওয়ের পাশে রেখে আসা হয়। মানুষ তাকে রাস্তায় ওই অবস্থায় পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রায় তিন দিন পরে তার জ্ঞান ফিরে। ভয়ে সে তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। প্রায় সাত মাস চিকিৎসার পরে সে সুস্থ হয়৷ সুস্থ হয়ে সে সবার কাছে ক্ষমা চায়। আভিয়ানের কথায় সবাই তাকে ক্ষমা করে দেয়। নিজের সকল অন্যায়ের কথা সে পুলিশ বলে। সে এখন জেলে আছে,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,

বধূ সেজে বাসর ঘরে বসে আছে ইরা। আজকের এই রাত তার জীবনের অনেক প্রতিক্ষিত একটি রাত। সে ভাবতে পারছে না সে তার ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পেয়েছে। সাফিনের করা অন্যায় গুলো জানার পরে তার আর আয়ানের মাঝে অনেক ব্যবধান সৃষ্টি হয়। আয়ান তার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে। আদ্রিজা আর আভিয়ানের জন্যই আজ সে আয়ানকে নিজের করে পেয়েছে। মেয়েটার কাছে সে বড্ড ঋণী। তার ভাই এত কিছু করার পরেও তারা তার জীবনটা গুছিয়ে দিয়েছে। হঠাৎ করে দরজা খোলার আওয়াজে তার ভাবনায় ছেদ পরে। আয়ান ভিতরে ঢুকে দরজা বন্দ করে ইরার দিকে এগিয়ে আসে। আয়ানকে এভাবে আসতে দেখে ইরার হার্ট বিট দ্বিগুণ হয়ে গেছে। লজ্জা আর ভয়ে সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। আয়ান খাটের উপরে বসে ইরার ঘোমতা খোলে আস্তে করে ইরার কাঁপা কাঁপা হাত ধরে বলে,,,, আজ থেকে আমাদের নতুন জীবন শুরু হলো। আমাদের মাঝে আর কখনো পুরোনো কোন কথা আসবে না। দুইজন দুইজনের কাছে সব কিছু শেয়ার করবো। জীবনে পথ চলার পথে যত ঝড়ই আসুক না কেন আমি কখনোই তোমার হাত ছাড়বো না। তুমি আমার পাশে এভাবে সারাজীবন থাকবে তো,,,,,,

আয়ানের কথা শুনে ইরার চোখে অশ্রু এসে পরে। এতটা ভালোবাসা তার ভাগ্যে ছিল ভাবতেই মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেলো। সে আয়ানের হাত শক্ত করে ধরে বলে,,, আমি কখনো আপনার হাত ছাড়বো না। সারাজীবন আপনার পাশে থাকবো। অনেক ভালোবাসি আপনাকে। আপনাকে ছাড়া আমার জীবন অপূর্ণ। আপনি পূর্ণ করেছেন আমাকে। আমরা যে একে-অপরের পরিণয়ের পরিপুরক।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আদ্রিজা আজ অনেক খুশি। আজ তার ভাইয়ের জীবন পূর্ণতা পেয়েছে। পেয়েছে দুই মানুষের নিস্বার্থ ভালোবাসা তাদের ঠিকানা। ডেসিং টেবিলের সামনে এসে সে চিরুনি দিয়ে নিজের চুল আঁচড়াছে। হঠাৎ করে আভিয়ান তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার চুলে নিজের মুখ ঢুবিয়ে দেয়। আভিয়ানের এমন স্পর্শে আদ্রিজার সারাশরীর শিহরিত করে উঠে। তার হাত – পা যেন অবশ হয়ে আসে। আভিয়ান তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। আদ্রিজার কানের কাছে চুল গুজে দিয়ে আসতে করে বলে,,,, শুভ বিবাহবার্ষিকী প্রেয়সী।তাড়াতাড়ি এগুলো পড়ে বেরিয়ে আসো আজকে তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। আদ্রিজাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আভিয়ান বেরিয়ে যায়। আদ্রিজা সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে গিয়ে ওগুলো পরে আসে। হালকা সেজে বাহিরে বেরিয়ে আসে।

গ্রেটের কাছে আসতেই দেখে আভিয়ান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ড্রেসআপ দেখে বুঝা যাচ্ছে আমার সাথে মিলিয়ে পরেছেন। গাড় নীল রঙের শার্ট। সাথে ব্লাক বেজার, ম্যাচিংকরা প্যান্ট,হাতে ব্যান্ডেড ওয়াচ। সব মিলিয়ে আজকে আমি ওনার থেকে চোখ ফিরাতে পারছি না। অনেক স্মার্ট লাগছে ওনাকে।

আভিয়ান গ্রেটের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে তার বন্যার জন্য। আদ্রিজাকে আসতে দেখে তার চোখের পলক পরছে না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আদ্রিজা ধীরে ধীরে আভিয়ানের দিকে এগিয়ে আসছে। আদ্রিজা কাছে আসছে আর আভিয়ানের হার্ট জোরে জোরে বিট করছে।এই একটা মেয়েকে সে অনেক ভালোবাসে। তার কাছে ভালোবাসা মানেই আদ্রিজা।প্রতিদিন নতুন করে প্রেমে পরে সে তার শ্যামবতীর।

বার বার প্রেমে পরে তার মায়াবতীর চোখের। গাড় নীল রঙের সিল্কের শাড়ী, সাথে পাড়ের সাথে মিলিয়ে গোল্ডেন চুড়ি, চোখে গাড় করে কাজল দেওয়া, মুখে হালকা মেকাপ, খোলা চুলে বেলি ফুলের মালা ঝুলানো, অপূর্ব লাগছে তাকে। চাঁদের আলোতে তাকে আরও অনেক বেশি মায়াবী লাগছে।

আদ্রিজা আভিয়ানের সামনে এসে বলে কোথায় যাবেন?আভিয়ান এখনো যেন ঘোরের মাঝেই আছে,,,, সে কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিজার দিকে। আভিয়ানের এভাবে তাকানোতে আদ্রিজার অস্বস্তি হচ্ছে। সে একটু জোরেই বলে,,, কি হলো, আমরা কোথায় যাচ্ছি?? আভিয়ানের এতক্ষনে হুশ আসে। সে গাড়িতে উঠতে উঠতে বলে,,,, সারপ্রাইজ এখন বলা যাবে না। গেলেই দেখতে পারবে,,,,

আদ্রিজা কিছু বলে না। বাধ্য মেয়ের মতো আভিয়ানের পিছু পিছু গিয়ে তার পাশের সিটে বসে।

আভিয়ান গাড়ি থেকে নেমে আদ্রিজাকে গাড়ি থেকে নামায়। আদ্রিজা গাড়ি থেকে নেমে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,,, আমরা কোথায় এসেছি?

চারিদিকে বড় বড় গাছের সারি, অনেকটা জঙ্গল বলা চলে, মাঝে মাঝে কুকুর আর শিয়াল ডাকছে। দূর- দূরান্তে কোন বাড়ি নেই। ঝি ঝি পোকা ডাকছে, কেমন যেন লোম হর্ষক পরিবেশ। চাঁদের আলোয় চারিদিকটা আবছা দেখা যাচ্ছে।

আভিয়ান মুচকি হেসে বলে,,,, আমি তো আছি। এত ভয় পাচ্ছো কেন? বিশ্বাস করো না আমাকে।

নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস আপনাকে করি।

তবে আসো আমার সাথে,,,,,,

আদ্রিজা আভিয়ানের হাত ধরে তার সাথে যেতে থাকে। প্রায় আধা ঘন্টা হাঁটার পরে তারা একটি নদীর সামনে এসে দাঁড়ায়। চাঁদের আলোতে পানি চিকচিক করছে। নদীর পাড়েই নৌকা থামানো। বেলি ফুল আর হারিকেন দিয়ে সুন্দর করে নৌকাটা সাজানো। আদ্রিজার খুশিতে চোখে পানি এসে গেছে।এইটা তার জন্য সবচেয়ে বেস্ট সারপ্রাইজ।

আভিয়ান মুচকি হেসে বলে,,, কেমন লাগলো সারপ্রাইজ? তোমার পছন্দ হয়েছে?

আদ্রিজা খুশিতে আভিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,,, হুমম।আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। আমি সব সময় এমন একটা রাতের কল্পনা করতাম। নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে এমন একটা রাত কাটাতে চাইতাম। কখনো ভাবতে পারি নি আমার এই চাওয়াটা সত্যি হবে। আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো আপনি,,,,অনেক অনেক ভালোবাসি আপনাকে।

আভিয়ান তাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।আমার বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ তুমি। তুমি ছাড়া এই আমি জীবিত লাশ ছাড়া আর কিছুই না। পরে আদ্রিজাকে ছেড়ে সে গিয়ে নৌকায় উঠে। নিজে নৌকায় উঠে আদ্রিজার দিকে তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে এসো। আদ্রিজা আভিয়ানের হাত ধরে নৌকায় উঠে আসে।

আদ্রিজা নৌকার এক কোনায় এসে বসে পানি পা ঝুলিয়ে রাখে। মাঝে মাঝে বেলি ফুল গুলো ছুঁয়ে দেখে, ফুলের ঘ্রান সে মুহিত হচ্ছে। সে আভিয়ানকে বলে আমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আভিয়ান নেশাক্ত কন্ঠে বলে,,, তোমার সব স্বপ্ন পূরণের দ্বায়িত্ব আমার। পরে আদ্রিজার কপালে ভালোবাসা পরশ এঁকে দেয়। আদ্রিজা পরম আবেশে নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়। লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে যায়। সে আবার সেদিকে মন দেয়,,,,

একটা গান গাইবে।তোমার গান শুনতে অনেক মন চাইছে,,,,,

আভিয়ানের কথা শুনে আদ্রিজা তার চোখের দিকে তাকায়। ওনার চোখের নিজের জন্য অজস্র ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি। আমার ভেতরটা প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছে। এর থেকে বেশি আমার আর কিছুই চাই না। আদ্রিজা আর বেশিক্ষন আভিয়ানের চোখের দিকে তাকাতে পারলো না। সে জানে এই চোখেই তার সর্বনাশ। সে অন্য দিকে ফিরে গান গাওয়া শুরু করলো,,,,,,,,

বলতে চেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয় না হ্নদয়
কতটা তোমায় ভালবাসি…
চলতে গিয়ে মনে হয়
দুরত্ব কিছু নয়
তোমারি কাছেই ফিরে আসি
তুমি তুমি তুমি শুধু এই মনের
আনাচে কানাচে….
সত্যি বলোনা কেউ কি প্রেম হিনা
কখনো বাঁচে…..
তুমি তুমি তুমি শুধু এই মনের
আনাচে কানাচে….
সত্যি বলোনা কেউ কি প্রেম হিনা
কখনো বাঁচে…..
বলতে চেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয় না হ্নদয়
কতটা তোমায় ভালবাসি

–“মেঘের খামে আজ তোমার নামে
উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দিলাম
পড়ে নিয়ো,তুমি মিলিয়ে নিয়ো
খুব যতনে তা লিখে ছিলাম..
মেঘের খামে আজ তোমার নামে
উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দিলাম
পড়ে নিয়ো,তুমি মিলিয়ে নিয়ো
খুব যতনে তা লিখে ছিলাম..
ও-চায় পেতে আরো মন
পেয়েও এতো কাছে…
বলতে চেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয় না হ্নদয়
কতটা তোমায় ভালবাসি..

শেষের কলিটা তার দুই জনে একসাথে গাইলো,,,,,

–“মন অল্পতে-প্রিয় গল্পতে
কল্পনায় স্বপ্ন আঁকে…
ভুল ত্রুটি আবেগী খুনসুটি
সারাক্ষন তোমায় ছুঁয়ে রাখে
মন অল্পতে-প্রিয় গল্পতে
কল্পনায় স্বপ্ন আঁকে…
ভুল ত্রুটি আবেগী খুনসুটি
সারাক্ষন তোমায় ছুঁয়ে রাখে
ও-চায় পেতে আরো মন
পেয়েও এতো কাছে…
বলতে চেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয় না হ্নদয়
কতটা তোমায় ভালবাসি”

চাঁদের আলোতে দুইজন ভালোবাসার মানুষ একে অপরকে আঁকড়ে ধরে আছে৷প্রকৃতি সাক্ষী হয়ে আছে দুইজন মানুষের এই ভালোবাসায়। পূর্ণতা পেয়েছে একটি পবিত্র সম্পর্ক৷ প্রনয়ের এই সম্পর্ক অনেক বাঁধা পেরিয়ে আবদ্ধ হতে পেরেছে পরিণয়ের পবিত্র বন্ধনে। আজ এই পূর্নিমার চাঁদ, নিস্তব্ধ পরিবেশ, পানির আওয়াজ সব কিছু এই ভালোবাসার শাক্ষী।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here