গোধূলি বেলায় তুমি পর্ব -১৬

#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_১৬

আভিয়ান শান্ত স্বরে বলে তা দেখা যাবে। তুমি রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পরো আমার আসতে দেরি হতে পারে। আমার একটা কাজ আছে। কোন প্রয়োজন হলে আমাকে কল দিও। রুমে গিয়ে আলমারি খোলে দেখো সেখানে তোমার জন্য নতুন ফোন আর সিম রাখা আছে। আর কিছু না বলে সে দ্রুত পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আদ্রিজা আভিয়ানের যাওয়ার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে,,,,,,,

কিছু একটা খেয়াল হতেই সে দ্রুত পায়ে বাড়ির বাহিরে পা বাড়ায়। বাড়ির গ্রেটের সামনে এসেই সে থমকে দাঁড়ায়। সে আশা করতে পারে নি আভিয়ান পুরো বাড়িতে গার্ড রেখেছে। আদ্রিজা বাড়ির বাইরে পা বাড়াতে নিলে,,, তারা তাকে আটকি বলে,,, সরি ম্যাম। আপনাকে আমরা বাড়ির বাহিরে যেতে দিতে পারবো না। স্যারে কড়া নির্দেশ। আপনি ভিতরে যান।
অনেকক্ষন তাদের বুঝিয়েও আদ্রিজার কোন লাভ হলো না। তাকে কোন ভাবেই বাড়ির বাইরে পা রাখতে দিল না। সে মন খারাপ নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। তখনকার আভিয়ানের কথা মনে হতেই সে দ্রুত রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো। আলমারি খোলে ফোন দেখতে পেয় তার ঠোঁটে হাসি ফোঁটে উঠলো। কিছু একটা ভেবে সে সাফিনকে কল করলো কিন্তু বরাবরই তার ফোন সুইচঅফ বললো। এখান থেকে যাওয়ার শেষ সুযোগটাও সে হারালো। মন খারাপ নিয়েই সে তার বাবাকে ফোন করলো। সে ফোন করার সাথে সাথেই তার বাবা ফোন রিসিভ করলো। যেন তার ফোন করারই অপেক্ষাতে ছিল। আদ্রিজা তার বাবাকে প্রথম থেকে সব খোলে বললো। আদ্রিজার কথা শুনে রাগে তার বাবার চোখ – মুখ লাল হয়ে গেছে। তিনি রেগে বলে,,, ওই আভিয়ানের সাহস হয় কি করে আবার আমার মেয়ের জীবনটা এভাবে নষ্ট করার।আগের বার ছেড়ে দিছি বলে এবারও ছেড়ে দিবো এমনটা নয়। তুই একটু অপেক্ষা করো আমি তোকে আজই নিয়ে যাবো। আর আভিয়ানকে জেলের ভাত খাওয়াবো।

তার বাবাকে উত্তেজিত হতে দেখে,,,, আদ্রিজা ব্যস্ত হয়ে বলে তুমি এত চিন্তা করো না। আমি ঠিক আছি। তোমাকে আগেই বলেছি শান্ত হয়ে শুধু আমার কথা শুনবে এখন তুমি কিছু করতে যাবে না। তাতে হিতে বিপরীত হবে। আমার আভিয়ানের সাথে কিছু বোঝাপড়া আছে।অনেক প্রশ্নের উত্তর আমি এখনো খুঁজে পাই নি। সেগুলো আমার চাই। তাই আমি কিছু দিন এখানেই থাকতে চাই। সময় এলে আমি নিজেই তোমাকে বললো কি করতে হবে,,,,,

তার বাবা গম্ভীর স্বরে বলে,,, এটা কখনোই সম্ভব নয়। তোকে কিছুতেই আমি সেই নরকে থাকতে দিতে পারবো না।

বাবা তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছো। আমার কথা শুনবে,,,,,

কিন্তু,,,,,,,

কোন কিন্তু নেই। এখন আমি যা বলছি তা শুনো,,,,

তার পরিবারের সাথে কথা বলা শেষ হলে আদ্রিজা পুরো বাড়ি ঘুরে দেখে। পুরো বাড়ির কোন রুমে তালা দেওয়া নেই কিন্তু একটি রুমে তালা দেওয়া। বিষয়টা তার কাছে সন্দেহজনক লাগছে। অনেক চেষ্টা করেও সে রুমের তালা না ভাঙতে পেরে হতাশ হয়। তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে কি আছে এই রুমে যে এত নিরাপত্তা দেওয়া এখানে,,,,,,,,

,,,,,,,,,,,,,,,,

অন্ধকার একটি রুমে হাত- পা চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পরে আছে সাফিন। হঠাৎ করে মুখে পানি দেওয়ায় সে ধরফরিয়ে উঠে সামনের দিকে তাকায়। সে ভালো করে তাকাতে পারছে না তার মাথাটা অনেক ভারি ভারি লাগছে। জ্ঞান ফিরতেই তার সেদিনের কথা মনে পরে যায়। আভিয়ানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরে মাঝ রাস্তায় এসে তার গাড়ির টায়ার পাঙ্কচার হয়ে যায়। রাগে বিরক্ত হয়ে সে গাড়ি থেকে নামে। রাস্তা পুরো ফাঁকা। আশেপাশে তেমন কোন মানুষ নেই। সে নেমে গাড়ির টায়ার দেখে বুঝতে পারে এটা কেউ ইচ্ছে করে করেছে। রাস্তায় তারকাঁটা ফেলে রাখা। মূহুর্তেই তার রাগ উঠে গেলো। সে গাড়ির টায়ারে জোরে লাঠি মেরে বললো,, অহ শিট। সে কিছু বুঝে উঠার আগেই কিছু লোক তার মুখে রুমাল চেপে ধরলো। আস্তে আস্তে তার চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হতে লাগলো। এরপরে তার আর কিছু মনে নেই,,,,,,,

চারপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে সে এখন কোথায় আছে। কিন্তু রুমটা পুরোপুরি অন্ধকার আচ্ছন্ন থাকায় সে কিছুই বুঝতে পারলো না। সামনের দিকে তাকিয়ে আবছা বুঝা যাচ্ছে কেউ পায়ের পা তুলে খুব আয়েশ করে বসে আছে। এক ধ্যানে তার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে। সে ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,, কে আপনি? আমাকে এখানে আটকে রেখেছেন কেন? কি চান আপনি আমার থেকে?

সাফিনের কথায় লোকটি বিকট আওয়াজ করে হেসে উঠলো। লোকটির হাসির আওয়াজ পুরো ঘর কেঁপে উঠলো।

লোকটি হাসি থামিয়ে বললো,,,, তোর মৃত্যু চাই। তোর মতো জানোয়ারের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। এটা বলে লোকটি আরো একটার বিদঘুটে হাসি দিলো।

সাফিন ভয়ে একটা ঢোক গিললো। এখন তার সাথে কি হতে পারে ভাবতেই তার আত্মা কেঁপে উঠলো।

লোকটি চেয়ার থেকে উঠে এসে সাফিনের গলা চেপে ধরে। যার ফলে সাফিনের দম বন্ধ হয়ে আসছে। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে যে কোন মুহূর্তে তার আত্মা তার শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। হঠাৎ করে রুমের লাইট জ্বলে উঠায় লোকটির মুখ তার কাছে স্পষ্ট হয়। লোকটিকে দেখে সাফিনের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে যায়। সে চিল্লিয়ে বলে,,,, তোর সাহস তো কম না তুই আমাকে কিডন্যাপ করেছিস! তিন বছর আগে কি হয়ে ছিল নিশ্চয়ই এখনো ভুলে যাস্ নি। তখন বেঁচে গিয়েছিলি কিন্তু এখন তোর বাঁচার আর কোন সুযোগ নেই,,,,,

লোকটি গম্ভীর স্বরে বলে,,, আগে নিজের অবস্থান তা দেখ। এখান থেকে আগে বেরিয়ে দেখা তার পরে আমার কথা ভাবিস্। তুই ভুলে যাস্ না আমি এখন আর আগের আভিয়ান নেই। এখন আমার ভিতরে তোদের মতো অমানুষদের জন্য কোন দয়া – মায়া নেই। যা আছে শুধুই নিষ্ঠুরতা। আজ তুই বুঝবি এই আভিয়ান ঠিক কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে। আজ তোর জন্য আমার বোন থাকতেও সে আমার পাশে নেই। আমার ভালোবাসার মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। তোকে আমি নিজের হাতে শাস্তি দিবো।তোকে এমন শাস্তি দিবো যাতে অন্য কেউ এই কাজ করার আগে হাজার বার ভাবে। কথা গুলো বলে আভিয়ান সাফিনের গলা ছেড়ে দেয়।

আভিয়ান গলা ছাড়তেই সাফিন কাশি দিয়ে উঠে। আভিয়ানের কথা শুনে সাফিনের চোখ – মুখে আবারও ভয় দেখা যায়। আভিয়ানের চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। যেখানে সে তার জন্য অসম্ভব ঘৃণা, রাগ আর প্রতিশোধ নেওয়ার তীব্র নেশা দেখতে পারছে। চোখ দুটো যেন হিংস্রতায় ভরা,,,,,

আভিয়ান দাঁতে দাঁত চেঁপে গম্ভীর স্বরে বলে,,, তুই আমার কাছের মানুষদের সাথে যা করেছিস্ আজ থেকে তার জন্য তুই ভয়ঙ্কর শাস্তি পাবি। তুই বারবার মৃত্যু ভিক্ষা চাইবি কিন্তু মরতে পারবি না। তিলে তিলে শেষ করবো আমি তোকে। এতদিনের জমিয়ে রাখা রাগ, ক্ষোভ, প্রতিশোধের আগুন তোকে তীব্র যন্ত্রণা দিয়ে মিটাবো।তুই প্রস্তুত হো,,,,,

এই বলে আভিয়ান বাঁকা হেসে তার লোককে হাতের ইশারায় কিছু নিয়ে আসতে বলে,,,,,,


..
.
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here