গোধূলী_বেলার_স্মৃতি পর্ব ৩৮+৩৯

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ৩৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

মাহির আহমেদ রুমে ঢুকতে-ই’ আমি কোণায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ি। মাহির চারপাশে চোখ বুলিয়ে রুমের আলমারির দিকে এগিয়ে গিয়ে,সবকিছু ছুড়ে ফেলে ঘাটাঘাটি শুরু করে দেয়। আমি লুকিয়ে তা দেখতে থাকি। মাহির আহমেদ সবকিছু ছুড়ে ফেলে দেয়। কিন্তু কোনো কিছু-ই’ খুঁজে পাচ্ছে নাহ। বিরক্ত হয়ে মাহির দেয়ালে পাঞ্চ করে বলে,
–“কুঞ্জের লেখা কিচ্ছু খুঁজে পাচ্ছি নাহ। যতটুকু সম্ভব এখানে-ই’ তো সবকিছু থাকার কথা। তার মানে কী রুদ্রিক সব প্রমাণ গুলো পেয়ে গেলো? ওহ শিট। ”

মাহির চেয়ারে বসে পড়ে ।

আমি কোনোরকম উঠে দাঁড়ালাম। মাহির আহমেদ অন্যদিকে ঘুড়ে আছেন। এই সুযোগে-ই’ আমাকে পালাতে হবে। কথাটি ভেবে আমি বাইরের দিকে খুব সাবধানতার সহকারে পা রাখতে-ই’ বেখায়ালিভাবে আমার হাত থেকে ফাইলগুলো নীচে পড়ে যায়। আমি আবারো নিজের জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ি।

হঠাৎ রুমে শব্দ হতে-ই’ মাহির ঘুরে তাঁকিয়ে দেখে কেউ নেই। কিসের শব্দ হলো? তারমানে কী রুমে কেউ আছে?

মাহির উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

—“কে এখানে?”

কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে মাহির এগিয়ে গেলো।

মাহির আহমেদ তো আমার দিকে-ই’ এগিয়ে আসছে। কী হবে এখন? হে আলাহ সাহায্য করো।

আমি আর কিছু না ভেবে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে বাহিরে চলে গেলাম।
কাজলকে হঠাৎ দেখে মাহির বুঝে গেছে কাজলের কাছে-ই’ সব প্রমাণ রয়েছে। তাই মাহিরও কাজলের পিছনে ছুটে যায়।

রুদ্রিক গাড়ি থেকে বেড়িয়ে যশোরের ভিআইপি হরোষ্টিক হোটেলের ভিতরে চলে যায়। কাউন্টারের সামনে আসতে-ই’ একজন মেয়ে মিস্টি হেঁসে বললেন,
–“জ্বী স্যার কি হেল্প লাগবে বলুন?”

রুদ্রিক নিজের কার্ডটা মহিলাটির দিকে এগিয়ে বললো,

—“আমি রাফসিন শেখ রুদ্রিক। এখুনি এই হোটেলের মেনেজার উদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করতে চাই। আমার কিছু ইনফরমেশন লাগবে।”

—“ওকে স্যার কিছুক্ষন ওয়েট করুন। আমি এখুনি স্যারকে ফোন করে দিচ্ছি। ”

মেয়েটি উদ্দিন সাহেবকে কল করে রুদ্রিকের কথা বলে। রুদ্রিকের কথা শুনে উদ্দিন সাহেব মেয়েটিকে রুদ্রিককে তার কেবিনে পাঠিয়ে দিতে বলে।

রুদ্রিক উদ্দিন সাহেবের কেবিনে ঢুকতে-ই’, উদ্দিন সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
—“আহা আমার কী সৌভাগ্য। আসো রুদ্রিক বাবা ভিতরে আসো। ”

রুদ্রিক সৌজন্যতা মূলক হাঁসি দিয়ে বললো,

—“কেমন আছেন আংকেল? ”

—“এইতো ভালো-ই’ আছি। তোমার বাবা তো এখন আমার খবর-ই’ রাখে নাহ। আমি যে তার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড তা বোধহয় সে ভূলে গেছে। আচ্ছা যা-ই’ হোক আগে তুমি কী খাবে বলো? ”

রুদ্রিক এইবার কিছুটা তাড়া দিয়ে-ই’ বললো,

—“নাহ আংকেল আপাতত আমি কিচ্ছু খাবো নাহ। এখন শুধু আমার কিছু ইনফরমেশন লাগবে। ”

—“কিহ ইনফরমেশন লাগবে তোমার বলো? ”

________

সাদি ‘মায়া কুঞ্জ ‘ এসে দেখে সিথি এক কোণে গুটি-শুটি মেরে বসে আছে। সাদি সিথির পাশে বসে উঠে,

—“আর ইউ ওকে? ”

সিথি হঠাৎ করে সাদিকে জড়িয়ে ধরে কান্নার সুরে বলে,

—“সাদি ভাইয়া আমার না কিচ্ছু ভালো লাগছে নাহ। বড্ড কান্না পাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে ভীষন। আমি জানিনা কী করবো এখন? একদিকে ভাইয়ূ ফোন তুলছে নাহ,অন্যদিকে কাজলও যেনো কোথায় বেড়িয়ে গেলো। আমার সত্যি আজকে অসহায় লাগছে।”

সাদির কি হলো কে জানে? সাদি নিজেও সিথিকে জড়িয়ে ধরে, সিথিকে শান্ত করে নরম কন্ঠে বললো,

—“নিজেকে একদম অসহায় মনে করবে নাহ। একটা কথায় সবসময় মনে রাখবে তোমার সাদি সবসময় তোমার সবরকম বিপদে তোমার পাশে আছে। ”

—‘তোমার সাদি ‘ কথাটাতে ছোট্ট কিন্তু সিথির জন্যে বিশাল কিছু। সিথি সাদির বুকে একেবারে মিশে গিয়ে বলে উঠলো,

—“তুমি-ই’ তো আমার সব সাদি ভাইয়া। তুমি তো আমার সবথেকে বড় ভরসার জায়গা। ”

____________

ছুটকির চোখে জল দেখে তনয় ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,
–“ছুটকি তুমি এখানে কেন? তোমার চোখে জল-ই’ বা কেনো? মুছো তাড়াতাড়ি। ”

ছুটকি নিজের চোখের জলটুকু মুছতে গিয়েও মুছলো নাহ। বরং তয়নের দিকে অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললো,

—“আমার চোখের জলের প্রতিটি বিন্দু প্রতিটা অশ্রু তো আপনাকে ঘিরে-ই’ তনয় ভাই। তা কী আপনি বুঝতে পারেন? হয়তো পারেন তবুও অবুঝ হয়ে থাকে। ”

তনয় আবারো সিগারেট ঠোটে চেপে ধরে। যেনো ছুটকির কোনো কথা-ই’ সে শুনেনি।

তনয়কে চুপ থাকতে দেখে ছুটকি হতাশ হলো। সে হতাশার সুরে-ই’ বললো,

—“তনয় ভাই কিছু বলছি আমি৷ ”

তনয় সিগারেটের টাকা দোকানদারের হাতে গুজে দিয়ে, নিজের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছুটকির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

—“পড়াশোনা মন দিয়ে করো । এইসব বাচ্ছামি করার সময় এখন তোমার নয়। ”

তনয় এগিয়ে গেলো।

—“ভালোবাসি । আমি বাচ্ছামি করছি নাহ। ”

তনয় থেমে যায় । তবুও পিছনে ফিরেনা। এইসব ভালোবাসা তার কাছে এখন তুচ্ছ লাগে। সবকিছু-ই’ মিথ্যে।

তয়ন আবারো যেতে নিলে ছুটকি বলে উঠে,

—“আপনি আজকে চলে যাচ্ছেন তো তনয় ভাই? সমস্যা নেই। আমার ভালোবাসা সত্যি হলে আপনাকে এই ছুটকির দারপ্রান্তে এসে কোনো একদিন দাঁড়াতে-ই’ হবে। ”

কথাটি গিয়ে তনয়ের বুকে লাগে।

ছুটকি তার কান্না আটকানোর চেস্টা করছে কিন্তু পারছে নাহ। সে-ই’ কেঁদে-ই’ দিলো।

তনয় বাসে উঠে চলে গেলো। ছুটকি মুখে হাত দিয়ে চলে গেলো।

_______

শাড়ি নিয়ে-ই’ একপ্রকার দৌড়ে ছুটে চলেছি আমি।
মাহির আহমেদ আমার পিছনে গাড়ি নিয়ে আসছে।
আমার মাথা এখন ঠান্ডা করতে হবে, যে করে-ই’ হোক। হাতের সব ফাইলগুলো সবার আগে পুলিশ স্টেশনে জমা দিতে হবে।

আমি আবারো দৌড়ে ছুটতে লাগলাম। তখনি আমার সামনে একটি গাড়ি এসে আমাকে ধাক্কা দিলো। আমি ধপ করে মাটিতে পড়ে যাই। গাড়ি থেকে ইশানি ম্যাম বেড়িয়ে আসেন। ইশানি ম্যাম আমার কাছে এসে ফাইলগুলো হাতে নিয়ে বললেন,

—“এই ফাইলগুলো তুমি কোথায় পেলে? ”

ইশানি ম্যামের কথার মাঝে-ই’ পিছন দিয়ে মাহির আহমেদ এর গাড়ি এসে থামলো। এইবার কি হবে?

মাহির আহমেদ বেড়িয়ে এসে বাঁকা হেঁসে বললো,

—“একদম পার্ফেক্ট টাইমে এসেছো। ”

কথাটি বলে ইশানির থেকে ফাইলগুলো মাহির নিয়ে
তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

আমি আটকাতে গিয়েও পারলাম নাহ। ইশানি ম্যাম আমাকে শক্ত করে চেপে ধরেছে। এইবার কি হবে?
রুদ্রিক আমাকে এতো ভরসা করে একটা কাজ দিলো,কিন্তু আমি তা করতে পারলাম নাহ। আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।

ইশানি জানে সে ভূল করেছে,কিন্তু ইশানি বা কী করবে? এইসব প্রমাণের মাধ্যমে সকলের সামনে অতীত চলে আসবে, যার জন্য মাহিরের ক্ষতি হতে পারে। যা ইশানি কিছুতে-ই’ হতে দিতে পারেনা।

মাহির ইশানিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—“কালকে আমাকে যে করে-ই’ হোক কম্পানির পাউয়ার নিতে হবে। তার মাঝে এই কাজল বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে হবে। ওর ব্যবস্হা তুমি করে দিও। ”

ইশানি ম্যাম আমার হাত ধরে উঠাতে নিলে আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করতে-ই,’ উনি আমার হাত আরো জোড়ে চেপে ধরে মাহির আহমেদ এর দিকে তাঁকিয়ে বললেন,

—“তুমি কোনো চিন্তা করোনা মাহির। ”

__________

ভোরের আলো মুখে পড়তে-ই’ আমি সোজা হয়ে বসি। আমার হাত বেঁধে একটি অন্ধকার রুমে বন্ধ করে রেখে গেছে ইশানি শেখ ও মাহির আহমেদ।

আমি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিজের হাতের বাঁধন খুলার চেস্টা করলাম, খুললো নাহ। তাই আমি হাল্কা করে দরি দিয়ে ঘসতে শুরু করলাম। এতে খুব সহজে-ই’ আমার হাতের বাঁধন খুঁলে গেল। আমি নিজের শাড়ির আঁচল থেকে চিঠিটা বের করে নিলাম।
বুদ্ধি খাটিয়ে, কুঞ্জ পিপির লেখা চিঠিটা শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে রেখেছিলাম। যার মধ্যে স্পষ্ট লেখা রয়েছে কীভাবে কুঞ্জ পিপির আত্বহত্যার পিছনে মাহির আহমেদের হাত রয়েছে।

আমি উঠে দাঁড়িয়ে

তাড়াতাড়ি দরজার কাছে গেলাম। দরজা বন্ধ তাই জানালা দিয়ে-ই’ তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেলাম।

_____
সকাল সকাল করে-ই’ আফজাল শেখ, সিথি, সাদি,দিয়া ও লাজুক অফিসে পৌছে গিয়েছে।

কাজলের নাম্বার বন্ধ দেখে সিথির চিন্তার শেষ নেই।

মাহির ও ইশানি ও অফিসে প্রবেশ করে।

মাহির নিজের কোটাটা ঠিক করে আফজাল শেখের কাছে গিয়ে কটু গলায় বললো,

—“তা মিঃ আফজাল শেখ পুলিশ তো কিছু করতে পারলো নাহ। এখন কী হবে?

কথাটি বলে মাহির হু হা করে হেঁসে উঠলো।

সবাই দাঁত খিচে সহ্য করে আছে। সাদির ইচ্ছে করছে লোকটাকে মাটিতে পিষে ফেলতে।

আমি আজকে অফিসের পাউয়ার আমি নিয়ে-ই’ ছাড়বো। (মাহির বললো)

______

আমি যত দ্রুত সম্ভব দৌড়ে যাচ্ছি। অফিসে পৌছাতে-ই’ হবে। আমার ভাবনার মাঝে-ই’ আমার সামনে একটি গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি থেকে রুদ্রিক বেড়িয়ে এসে বললো,

—“কাজল তুই এখান কীভাবে? ”

রুদ্রিক খেয়াল করে দেখে কাজলের চোখ-মুখ শুকিয়ে গেছে একেবারে। কাজলকে দেখেও বেশ অসুস্হ লাগছে।

আমি জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম। রুদ্রিক আমাকে ঝাঁকিয়ে বললো,

—“আর ইউ ওকে? কাজল? ”

আমি রুদ্রিকের হাত ধরে বললাম,

—“আম ওকে রুদ্রিক ডোন্ট বি প্যানিকড। আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। ”

—“সব হবে তার আগে তোর রেস্টের এর প্রয়োজন। ”

—-“রুদ্রিক….

আমার কথার মাঝে-ই’ রুদ্রিক গম্ভীর সুরে বললো,

—“কাজল একদম কথা নয়।

রুদ্রিক আমার হাতে পানির বোতল ধরিয়ে দিলো।

আমি ঢগঢগ করে পানি খেয়ে নিলাম।

রুদ্রিক বলে উঠলো,

—“এখন তোমার যা বলার বলো। ”

আমি রুদ্রিককে সবকিছু খুলে বললাম। রুদ্রিক নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো। ইশানি শেখ ও মাহির আহমেদকে এর যোগ্য জবাব সে দিবে।

রুদ্রিক আমাকে তাড়া দিয়ে বললো,

—“এখন আমাদের তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে।
লেটস গো কাজল। ”

______________

আফজাল শেখ চেয়ারে বসে পড়লেন, তিনি বুঝতে পারছেন এইবার তার কম্পানি চলে যাবে।

মাহির পকেটে হাত গুজে বললো,

—“আপনারা শুধু শুধু অফিসে বসে আছেন কেন?
কোনো লাভ হবে নাহ। রুদ্রিক কিচ্ছু করতে পারবে নাহ। হাহ। এই শেখ গ্রুপ অফ কম্পানি এখন মাহির আহমেদের। ”

মাহির হেঁসে উঠে।

—-“মাহির আহমেদ স্বপ্ন দেখা ভালো,বাট
নিজের লেভেল অনুযায়ী স্বপ্ন দেখা উচিৎ। আফটার অল লাইফ একটা গেম। ”

কথাটি বলে রুদ্রিক প্রবেশ করে।#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি
#পর্ব-৩৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

রুদ্রিকের সাথে কাজলকে দেখে যেনো ইশানি ও মাহির শকড হয়ে গেলো। তারা এইসময় কাজলকে
আশা করেনি। তার মানে কী রুদ্রিক সবকিছু জেনে গেছে। মাহির ইশানির দিকে চোখগরম করে তাঁকায়। যার অর্থ কাজল এখানে এলো কীভাবে? ইশানিও তাজ্জব বনে গেছে। সে ও ঠিক বুঝতে পারছে নাহ। রুদ্রিক ও কাজলকে দেখে সবাই যেনো নিশ্চিন্ত হলো।

মাহির রুদ্রিকের দিকে তীক্ন দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললো,

—-“তোমরা এখানে এসে কী ভেবেছো? তোমরা কী ভেবেছো আজকে আমাকে এই কম্পানির পাউয়ার নিতে আটকে দিবে?”

রুদ্রিক নিজের ব্লাক সানগ্লাস্টা খুলে, কিছুটা শান্ত গলায় বলে,
—“মাহির আহমেদ আমি কিছুক্ষন আগে একটা কথা বলেছিলাম। লাইফে ইজ আ গেম। এই গেমে প্রতিটা ধাপে টুইস্ট থাকে। এইবার আপনি দেখবেন রাফসিন শেখ রুদ্রিকের গেমের আসল টুইস্ট। প্রমাণগুলো পুড়িয়ে ফেললেই কী এতো সহজে অতীতের সব সত্য লুকানো যায় না। সো বি কেয়ারফুল। ”

রুদ্রিকের কথা শুনে ইশানি শেখ ও মাহির আহমেদ কুলকুল করে ঘামতে থাকে।

রুদ্রিক তাদের দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললো,

—“এখুনি ঘামছেন কেনো? এখনো তো অনেক কিছু বলার বাকি। ”

ইশানি ম্যাম ও মাহির আহমেদের অবস্হা বুঝতে পেরে আমি তাদের দিকে মুঁচকি হেঁসে বললাম,

—” এমন সময়ে আমাকে বোধহয় আপনারা আশা করেনিনি তাইনা? আহা ভূল টাইমে এসে গেছি আমরা রুদ্রিক। ”

আমার কথার প্রতিউত্তরে রুদ্রিক ও কিছুটা ঠাট্টার সুরে বললো,

—“একদম ঠিক বলেছিস কাজল, মাহির আহমেদ এবং ইশানি শেখ আমাদের এই মূহুর্তে একদম এক্সপেক্ট করেনি। তারা তো ভেবেছিলো খুব সহজেই আজকেই তারা শেখ গ্রুপ অফ কম্পানির পাউয়ার নিয়ে নিবে। বাট আমরা এসে বোধহয় সব প্ল্যানের বারোটা বাজালাম।
রাফসিন শেখ রুদ্রিক ও তার ওয়াইফ কাজলরেখা শেখ থাকতে এই কম্পানির পাউয়ার আপনি কীভাবে নিবেন? সবকিছু এতোটা সহজ? ”

সাদি ভাইয়া এইবার মুখ খুলে বললেন,

—“রুদ্রিক তুই কোথায় ছিলিস?”

সিথি আমার কাছে এসে বললো,

—“কাজল তোকেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছিলো নাহ। জানিস কতটা চিন্তায় ছিলাম আমি। সারাদিন কোথায় ছিলিস তুই? ”

আমি ইশানি ম্যামকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

—“ইশানি ম্যাম হয়তো ভালো করে বলতে পারবে। কেননা উনিই তো আমাকে সারারাত বদ্ধ ঘরে আমাকে আটকিয়ে রেখেছিলো।”

—-“কিন্তু ইশানি আপাই কেনো করেছিলো? ”

দিয়া পিপির প্রশ্নে বড় সাহেব ক্ষিপ্ত গলায় বললেন,

—“ইশানির মতো মানুষের কোনো বিশ্বাস নেই। ও নিজের স্বার্থের জন্যে সবকিছু করতে পারে।”

ইশানি শেখ কি বলবে বুঝতে পারছে না।

লাজুক বলে উঠলো,

—“রুদ্রিক তোমরা কিছু প্রমাণের কথা বলছিলি। কিসের প্রমাণ ছিলো? ”

রুদ্রিক ইশারা করে আমাকে চিঠিটা দিতে বলে। আমি রুদ্রিকের দিকে চিঠিটা দিয়ে বললাম,

—“এই চিঠিটা কুঞ্জ পিপির লেখা। যাতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে কে তার সন্তানের পিতা এবং কে তাকে আত্বহত্যা করার জন্যে প্রতিনিয়ত বাধ্য করেছে। ”

আমার কথা শুনে বড় সাহেব কান্নামিশ্রিত গলায় বললেন,

—“রুদ্রিক তো তার ফুপিয়াম্মুর মৃত্যুর জন্যে আমাকে এবং জেসমিনকে দায়ী করে। যদিও আমাদের ও দোষ ছিলো, কিন্তু সেসময় আমাদের ও মাথা ঠিক ছিলো নাহ। কুঞ্জ কিছুতে-ই’ তার সন্তানের বাবার নাম বলছিলো নাহ। তার মধ্যে আবার সে সন্তানকে এভোয়েডও করতে চাইছিলো নাহ। তাই আমরা তখন হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে কুঞ্জের প্রতি অমানবিক আচরণ করে ফেলেছিলাম। ”

কথাটি বলে আফজাল শেখ কেঁদে উঠে।

দিয়া আফজাল শেখকে ধরে বলে,

—“তুমি একটু শান্ত হও ভাইয়ূ। ”

আমি মাহির আহমেদের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,

—-“এই লোকটাই হলো কুঞ্জ পিপির সন্তানের বাবা। কুঞ্জ পিপি দিনের পর দিন ঠকিয়েছে এই লোকটাই।”

ইশানি ও রুদ্রিক ছাড়া বাকি সবাই কথাটি শুনে থম মেরে রইলো।

রুদ্রিক চিঠিটাকে শক্ত করে চেপে ধরে। মাহির থমথমে গলায় বললো,

—“এইসব কি ছাইপাশ লেখা রয়েছে। এতে কীভাবে প্রমাণ হয় আমি কুঞ্জের সন্তানের বাবা ছিলাম? দেখো গিয়ে কত পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে শেষে আমাকে ফাঁসানোর জন্যে এইসব চিঠি লিখে গেছে। চরিত্রহীন মেয়ে-ছেলে একটা। ”

রুদ্রিক কথাটি শুনেই রাগে মাহিরের নাকে জোড়ে ঘুষি দেয়। মাহির ছিটকে পড়ে যায়। রুদ্রিক নিজের শার্টের ফ্লড করে মাহিরের পেটে লাত্থি দিতে দিতে বললো,

—“তোর সাহস কী করে হলো? আমার ফুপিয়াম্মুকে চরিত্রহীন বলেছিস তুই? তোর যে জিহব্বা দিয়ে ‘ চরিত্রহীন ‘ শব্দটি উচ্চারণ করেছিস, সেই জিহব্বা আমি টেনে ছিড়ে ফেলবো। ”

রুদ্রিক ইচ্ছামতো মাহিরকে ঘুষি দিচ্ছে। মাহির ব্যাথায় আর্তনাদ করছে।

—-” রুদ্রিক কি করছিস কী মাহির তো মরে-ই’ যাবে.

ইশানি ম্যাম কথাটি বলে এগোতে নিলে আমি উনার হাত ধরে বলললাম,

—“ওই লোকটার জন্যে আর কত নীচে নামবেন আপনি ইশানি ম্যাম? ভালোবাসাতে আপনি এতোটা অন্ধ হয়ে গেলেন? কীভাবে? ”

আমাদের কথার মাঝেই পুলিশ চলে আসে। অফিসার এসে কোনরকম রুদ্রিককে আটকিয়ে বলে,

—“কি করছেন কী মিঃ রুদ্রিক। আইন নিজের হাতে এইভাবে তুলে নিবেন নাহ। ”

রুদ্রিক জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। রাগে যেনো তার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। মাহিরকে খুন করে ফেলতে পারলে সে শান্ত হতো।

মাহির কোনরকম উঠে দাঁড়িয়ে অফিসের কাছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে গিয়ে বললো,

—“দেখুন অফিসার কীভাবে আমার উপর মিথ্যে দায়ভার দিয়ে দিচ্ছে। কিসব চিঠি দিয়ে বলছে আমি নাকি কুঞ্জের আত্বহত্যার পিছনে দায়ী। এইসব চিঠি বানানো যায়, হাতের লেখা নকল করে। ”

রুদ্রিক উচ্চস্বরে হেঁসে উঠে।

মাহির অবাক হয় রুদ্রিকের কান্ডে। রুদ্রিক খানিক্টা হেঁসেই’ বললো,

—“আমি যশোরে গিয়ে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে এসেছি। ”

পুলিশ এগিয়ে এসে বলল,

—“মাহির আহমেদ আপনি যশোরের হোটলে প্রায় সময় মিস কুঞ্জের সাথে বসবাস করতেন। সবাই তাকে আপনার স্ত্রী বলেই জানতো। রিসেপশনিস্টের কাছে আপনার এবং মিস কুঞ্জের সাইন ও রয়েছে।”

মাহির ও ইশানি থমকে যায়।

রুদ্রিক মাহিরের কাছে গিয়ে মাহিরের শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বললো,

—“রাফসিন শেখ রুদ্রিক আসলে তা তা তোর কল্পনার বাইরে। ”

আফজাল শেখ কোনোরকম উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

—-“আমাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলো, রুদ্রিক। ”

রুদ্রিক এইবার শুরু থেকে বলা শুরু করে যা কুঞ্জ তার ডাইরিতে লিখে গিয়েছিলো।

রুদ্রিকের ভাষ্যমতে কুঞ্জ তার ডাইরিতে লিখে গিয়েছিলো,

মাহিরের সাথে তার পরিচয় যশোরের একটি ভার্সিটিতে হয়। কুঞ্জ যশোরের ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতো।
মাহির সেখানে এমনি ঘুরতে গিয়েছিলো। কুঞ্জকে প্রথম দেখাতেই মাহিরের পছন্দ হয়ে যায়। সে কুঞ্জকে প্রপোজও করে বসে। কুঞ্জ তা এক্সপেক্টও করে ফেলে। মাহিরের তখন তার স্ত্রীর সাথে ঝামালা হচ্ছিলো বলে, সে কুঞ্জকে ব্যবহার করতে শুরু করে। মাহির জানে কুঞ্জ ইশানির বোন কিন্তু কুঞ্জ জানতো নাহ মাহির বিবাহিত এবং তার-ই’ বোনের স্বামী।

রুদ্রিক আবারোও বলে উঠে,

—“মাহির লোক টা ফুপিয়াম্মির.মিব্রেনওয়াশ এমনভাবে করছিলো যার কারণে, সে নিজের সর্বোচ্চ বিলিয়ে দিয়েছিলো। ফুপিয়াম্মুর তখন আবেগের বয়স ছিলো। ভালোবেসে ভূলকেও সঠিক মনে করতো। তার সুযোগ নিয়েছে মাহির আহমেদ। ফুপিয়াম্মু যখন তার সন্তানের কথায় মাহিরকে জানায়,তখন মাহির তা অস্বীকার করে এবং প্রতিনিয়ত মানষিক অত্যাচার করতো,যার ফলে ফুপিয়াম্মু আত্বহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছিলো সেদিন।”

—-“ইশানি আপাই কী প্রথম থেকে সব জানতো? ”

দিয়ার প্রশ্নে রুদ্রিক বললো,

—“নাহ, ফুপিয়াম্মু মারা যাওয়ার পর ইশানি শেখ তা জানতে পারেন। তিনিও মাহির আহমেদের ভালোবাসায়ে এতোটা অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে,নিজের বোনের খুনিকে বাঁচানোর জন্যে সর্বোচ্চ চেস্টা করেছে। এমনকি ডির্ভোসের একটা নাটক করে মাহির আহমেদকে এইসবের থেকে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছে, যেনো মাহিরের প্রতি কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহ না হয়। ”

আফজাল শেখ আর কিছু সহ্য করতে পারছে নাহ। তিনি চেয়ারে বসে পড়েন। এতো কিছু হয়ে গেছে অতীতে।

পুলিশ অফিসার এইবার মাহিরের দিকে বন্ধুক তাঁক করে বলে,

—“আপনি যে মিস কুঞ্জকে আত্বহত্যার জন্যে প্রলোচন দেখিয়েছেন,তার প্রমানও মিঃ রুদ্রিক আমাদের দিয়েছেন। আপনার ও মিস কুঞ্জের ফোনআলাপের রেকর্ড মিস কুঞ্জের ফোনে ছিলো। যা মিঃ রুদ্রিক সংগ্রহ করেছেন। সো ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট মিঃ আহমেদ। তা ছাড়াও শেখ গ্রুপ অফ কম্পানির পাউয়ার প্রতারণা করে নিতে চেয়েছেন। তাই আপনার ও ইশানি শেখের নামে ফ্রড কেস করা হয়েছে। ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট মিঃ আহমেদ।”

মাহির এইবার সব দিক দিয়ে ফেঁসে গেছে। সে বুঝতে পারছে নাহ, এইবার সে কী করবে?

আমি এগিয়ে এসে বললাম,

—“আপনি এইবার কোথাও পালাতে পারবেন নাহ মিঃ আহমেদ। ”

তখনি ফায়ারিং করে। গুলির শব্দ কানে আসতেই…..

চলবে কী?

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here