#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ৪৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ভোরের আলো মুখে পড়তেই আমি নিজেকে গাড়িতে আবিষ্কার করি। আমি তো নিজের বাড়িতে ছিলাম,গাড়িতে এলাম কীভাবে? আমার ভাবনার মাঝেই রুদ্রিক ড্রাইভ করতে করতে বলল,
–“ম্যাডাম আপনার ঘুম ভাঙলো তাহলে?”
রুদ্রিককে দেখে আমি আরেকদফা চমকে যাই। আমি চারপাশে তাঁকিয়ে দেখি আমরা থেকে ঢাকা থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছি।
ভোর হয়ে গেছে। পাখিরা তাদের নীড় ছেড়ে দুরপ্রান্তে পাড়ি জমাচ্ছে নতুন কোনো ঠিকানা পাওয়ার আশায়। ভোরের আলো চারদিকটাকে যেনো সৌন্দর্যকে তুলে ধরছে। আমি সবকিছু ভূলে গিয়ে নিজের চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে দিলাম। ভোরের নির্মল বাতাস আমার চুলগুলোকে বার বার ছুঁয়ে দিচ্ছে যা হয়তো রুদ্রিকের নজর ও কেড়ে নিয়ে নিয়েছে। কেননা রুদ্রিক ড্রাইভিং এর মাঝে মাঝে আমাকে আড়চোখে দেখে নিচ্ছে। যা আমার চোখ পড়েছে।
আমি মুখ বেঁকিয়ে চুলগুলো বাঁধতে নিলে, রুদ্রিক
গাড়ি থামিয়ে দিলো। রুদ্রিক ড্রাইভিং সিট থেকে বেড়িয়ে আমার পাশে এসে বসলো। আমি রুদ্রিকের থেকে দূরে সরে যেতে নিলে, রুদ্রিক হেঁচটা টান দিয়ে আমার চুলগুলো পুনরায় ছেড়ে দিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
—-“তুই জানিস জানেমান? আমার চোখ কত ঘুম?
কিন্তু তোর সৌন্দর্যের নেশার পড়ে গেলে ঘুম একেবারেই চলে যায়। আর তুই নিজের সৌন্দর্য ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়লি? সো ব্যাড। এখন যদি ড্রাইভ করতে গিয়ে, আমি ঘুমিয়ে যাই তখন কী হবে?
আমি রুদ্রিকের কিছুটা সরে এসে থমথমে গলায় বললাম,
—–“আমি তো নিজের বাড়িতে ছিলাম। এখানে কী করে এলাম?”
রুদ্রিক আড়মোড়া হয়ে বলল,
—“আমি নিয়ে এসেছি। তোকে ছাড়া রাত কাটছিলোই নাহ। তাই ভোরে গিয়েই তোকে কোলে তুলে আমার গাড়িতে নিয়ে আসি।”
—-“আমাকে কেনো নিয়ে এসেছেন? আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন এখন? ”
রুদ্রিক ঠোটে বাঁকা হাঁসি ঝুঁলিয়ে বলল,
—“তা সময় আসলে ঠিক দেখতে পাবে। ”
রুদ্রিক আমার হাত ধরে বাইরের দিকে নিয়ে গেলো।
জায়গাটা শহরের থেকে বেশ দূরে মনে হচ্ছে। নিজের পাশে রুদ্রিককে না দেখে আমি আমি আশে-পাশে তাঁকিয়ে দেখি, রুদ্রিক একটা স্টোল থেকে পানির বোতল কিনে নিয়ে মুখে পানির ছিটা দিচ্ছে। আমিও ভাবলাম সামনের দিখে যাবো,কিন্তু রুদ্রিক হাত নাড়িয়ে আমাকে আসতে বারণ করলো। তাই আমিও থেমে গেলাম। রুদ্রিক এগিয়ে এসে আমার পানির বোতল ধরিয়ে দিয়ে বলল,
–“এই অবস্হায় এতো হাটাহাটি করা ঠিক নয়। বেবীর ক্ষতি হতে পারে। ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম,
—-“তাই বুঝি? তাহলে আপনি আমাকে এখানে এতোদূর নিয়ে এসেছেন কেনো? ”
রুদ্রিক আমার মাথায় হাল্কা গাট্টা মেরে বলে,
—“তুই এখন বুঝবিনা। গেলেই বুঝতে পারবি।আচ্ছা
তুই আমাকে আপনি করে বলছিস কেন? ”
—-“আমি আপনার সাথে রাগ করেছি হুহ। ”
—-“বাবাহ এতো রাগ? আমার শুভ্ররাঙাপরীর? ”
আমি শ্বাস ফেলে দমে যাওয়া গলায় বললাম,
—“রাগ হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয় রুদ্রিক? তুমি বুঝতে পারছো? তোমার বুকে অন্য কাউকে দেখতে পেলে আমার কষ্ট হয় বুঝেছো? ”
কাজলের কথায় রুদ্রিক কাজলের দিকে তাঁকালো।
—“হুম আর কিছু? ”
আমি রুদ্রিকের শার্টের কলার চেপে ধরে বললাম,
—-“আজকে সহ্য করেছি রুদ্রিক, কিন্তু সবসময় আমি সহ্য করবো নাহ। তোমার বুকে শুধু আমি মাথা রাখতে পারবো। কেননা এইটা আমার অধিকার।
কথাটি বলে আমি গাড়িতে গিয়ে মুখ ঘোমড়া করে বসি পড়ি। রুদ্রিক মুচকি হাঁসল।
রুদ্রিকও গাড়িতে বসে আমার দিকে আচারের বাটি এগিয়ে দিলো। আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে রুদ্রিকের দিকে তাঁকাতেই, রুদ্রিক গাড়ির মিররের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
—“তোর মা অথার্ৎ আমার শ্বাশুড়ির মা দিয়েছেন। রাস্তায় তোর যদি বমি পায়। এসময় নাকি এইসব স্বাভাবিক তাই দিয়ে দিলো। ”
আমি আচার খাওয়া শুরু করে দিলাম। রুদ্রিক আমার দিকে তাঁকিয়ে ড্রাইভিং এ মন দিলো।
__________
গাড়ির ব্রেক মারতেই আমি কিছুটা ঝুঁকে গেলাম। আচার খেতে খেতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। খেয়াল নেই।
সামনের দিকে তাঁকাতে দেখি রুদ্রিক নেই। রুদ্রিক আবার কোথায় গেলো?
আমি আশ-পাশ ভালো করে পরোখ করে দেখি আমি এখন সেন্টমার্টিনে। রুদ্রিক আমাকে ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিনে নিয়ে আসলো কেনো? রুদ্রিককে দেখতে না পেয়ে আমার এখন খুব করে ভয় করছে। আমি গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালাম। এখন গোধূলীর বেলা। সেই ভোর বেলায় ঘুমিয়ে ছিলাম এখন গোধূলীর বেলাতে আমার ঘুম ভাঙলো।
আমি খেয়াল করে তাঁকিয়ে দেখি, দ্বীপের পাশে ছোট্ট ছোট্ট জাহাজ। তেমন লোক ও নেই।
একজন লোক জাহাজ থেকে এগিয়ে এসে বলল,
—“ম্যাম আপনি আসুন। ”
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
কিছু না ভেবে আমি উনার সাথে মাথা নাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম জাহাজের দিকে। ছোট খাটোর মধ্যে বেশ সুন্দর জাহাজ। সাদা পর্দা দ্বারা জাহাজের এক অংশে ডেকোরেট করা। আমার বুঝতে বাকি রইলো নাহ। রুদ্রিকের কান্ড এইসব। আমি সামনে আসতেই
দেখি দিয়া পিপি , লাজুক আংকেল, সিথি, সাদি ভাইয়া ও আছে।
দিয়া পিপি ও লাজুক আংকেলকে দেখে আমি বলে উঠলাম,
—-“তোমরা কবে এলে পিপি? তোমরা এলে অথচ আমি জানিনা? ”
দিয়া পিপি মুচকি হেঁসে বললেন,
—“সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তাই জানাতে পারিনি।”
আমি কিছুটা প্রশ্নের সুরেই বললাম,
—-“উনি কোথায়? ”
—“উনি টা কে রে কাজল? ভাইয়ূ? মানে ভাইয়ূকে খুঁজছিস তুই? ”
মুখ টিপে হেঁসে বলল কথাটি সিথি। সাদি ভাইয়ার সিথির সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
—-“আজ-কাল কাজলের চোখ শুধু আমাদের রুদ্রিককেই খুঁজে। ”
লাজুক আংকেল সাদি ভাইয়ার কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
—“আমারোও কিন্তু তাই মনে হচ্ছে। ”
দিয়া পিপি আলতো হেঁসে আমার দিকে তাঁকিয়ে বললেন,
—“সামনের দিকে যা কাজল। রুদ্রিক সামনেই আছে।”
পিপির কথা শুনে আমি আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলাম
সামনে এগোতেই গিটারের টুনটান শব্দ কানে আসলো। আমি সামনে তাঁকিয়ে দেখি,
রুদ্রিক গিটারে সুর তুলছে। আমাকে দেখে রুদ্রিক উঠে দাঁড়ালো।
আমি বলে উঠলাম,
—-“রুদ্রিক! ”
রুদ্রিক বাঁকা দাঁতের হাঁসি দিয়ে আমাকে পাশে বসতে বললো। আমিও পাশে বসে পড়লাম।
আমার দৃষ্টি সমুদ্রের নীল জলের দিকে। মনে হচ্ছে নীল জলের যেন বিছানানা। মাথার ওপরে গোধূলীর আলোর হাতছানি, পায়ের নিচে বালুকণার সুড়সুড়ি, তার মধ্যে সমুদ্রের মৃদু ঠান্ডা নোনা পানির মিশেলে দিব্যি গোধূলীর বেলার আরোহণ। সাথে হাল্কা গিটারের টুনটান শব্দ।
রুদ্রিক গিটার বাজাতে বাজাতে গাইতে লাগলো,
ঠিক এমন এভাবে
তুই থেকে যা স্বভাবে
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই
আর তুই ছাড়া গতি নেই
রুদ্রিক উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমিও মুচকি হেঁসে রুদ্রিকের হাত বাড়িয়ে দিলাম।
ছুঁয়ে দে আঙুল
ফুঁটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা
কথা দেয়া থাক
গেলে যাবি চোখের বাইরে না
ছুঁয়ে দে আঙুল
ফুঁটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা
কথা দেয়া থাক
গেলে যাবি চোখের বাইরে না
সিথির দূরে দাঁড়িয়ে মুচকি হাঁসছে গাঁয়ে তার সবুজ রংয়ের শাড়ি। আজ তাকে অতিরিক্ত মাত্রায় সুন্দর লাগছে। সাদি সিথির হাত ধরে নিজের মুঠোয় নিয়ে বলল,
—“এইযে ম্যাডাম আপনি একটু কম হাঁসুন।আমার বড্ড প্রব্লেম হচ্ছে। ”
সিথি সাদির প্রশ্নে ভ্রু কুচকে তাঁকায়। যার অর্থ সাদির কথা সে কিছুই বুঝেনি।
—-“তোমার হাঁসির প্রতিটা প্রতিধ্বনি আমার হার্টব্রিটটাকে দ্বিগুন করে তুলছে। হয়তো প্রেমরোগে ধরেছে বলে। ”
সাদির কথায় সিথি লজ্জা পায়।
সাদি হাল্কা হেঁসে সিথির দিকে ঝুঁকে হাল্কা সুরে গাইতে থাকে,
—-“তোরই মতো কোনও একটা কেউ
কথা দিয়ে যায়, ছায়া হয়ে যায়
তোরই মতো কোনও একটা ঢেউ
ভাসিয়ে আমায় দূরে নিয়ে যায়।
দিয়া জাহাজের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পোজ দিচ্ছে আর সেল্ফি তুলছে। লাজুক দুর থেকে তাঁকিয়ে হাঁসছে। দিয়া হাত নাড়িয়ে লাজুককে কাছে ডাকছে সেল্ফি তুলে দিতে। লাজুক নিজের ক্যামেরটা নিয়ে দিয়ার কাছে চলে গেলো। লাজুক আসতেই দিয়া ভ্রু কুচকে বলল,
—“এইযে আমার পারসোনাল নাকবোচা ক্যামেরাম্যান এতো দেরী লাগে? ”
লাজুক চোখগুলো ছোট ছোট করে বলল,
—“এখন ক্যামেরা ম্যান ও হয়ে গেলাম। ”
দিয়া লাজুকের কাছে এসে লাজুকের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল,
—“হুম শুধু আমার পারসোনাল ক্যামেরাম্যান তাও সারাজীবনের জন্যে। ”
লাজুক সাদুরে গ্রহন করে বলল,
—“দিয়া ম্যাম সারাজীবনের জন্যে আপনার ক্যামেরাম্যান হওয়ার জন্যে আমি প্রস্তুত। ”
দিয়া হাঁসলো।
এদিকে,
রুদ্রিক আমাকে পিছনে ঘুড়িয়ে আমার ঘাড়ে আলতো করে চুমু খেয়ে আমার হাতে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে গাইতে থাকে,
-আটকে তোকে রাখতে চাইছি খুব
সকালে আমার, বিকেলে আমার
তুই ডাক না দিলে থাকবো আমি চুপ
দিনেতে আমার দুপুরে আমার
ঠিক এমন এভাবে
তুই থেকে যা স্বভাবে
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই
আর তুই ছাড়া গতি নেই
রুদ্রিকের গান থামিয়ে গেলো।
রুদ্রিকের গানের প্রতিটা কথা এতোটাই মহোনীয় যে
আমার দুচোখ ভরে উঠলো খুশির জলে।
মায়া কুঞ্জের মুসকানসহ সকল বাচ্ছারা এসে গানের সাথে তাল মিলিয়ে হাত তালি দিতে লাগলো। বাচ্ছাদের দেখে আমার মুখে হাঁসি ফুটে উঠে।
মুসকান আদো আদো গলায় বললো,
—“তালপ্রালাইত। ”
—-কিসের সারপ্রাইজ মুসু সোনা? ”
মুসকান ঠোট উল্টিয়ে বলল,
—-“কেনো তুমি জানোনা? নিউ বেবী আসতে তাল একটা ওয়েলকাম পার্টি লাগবে নাহ? তাই তো আমলা আজকে ওয়েলকাম পার্টি করবো। বাট তোমাল জন্যে তালপ্রাইত ছিলো। ”
মুসকানের পড়নে ছোট্ট বারবির ড্রেস। অনেক কিউট লাগছে ছোট্ট মুসকানকে।
রুদ্রিক মুসকানকে কোলে নিয়ে নিয়ে আলতো করে চুমু খায়। আমি মুসকানের গালদুটো টেনে বললাম,
—“বাবাহ আমার মুসু সোনাটাও আজকাল আমাকে সারপ্রাইজ দিচ্ছে। তোমার তো একটা গিফ্ট পাওয়ার দরকার। ”
কথাটি বলে আমিও মুসুর গালে চুমু খেলাম। রুদ্রিক আমার কানের কাছে আস্তে করে বলে উঠলো,
—-“আমারও কিন্তু গিফ্ট পাওয়া বাকি। আমিই কিন্তু সব পার্টির আয়োজন করেছি। ”
আমি রুদ্রিকের বুকে মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে হেঁসে উঠি।
রুদ্রিক মুসকানকে নীচে নামিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
—-“ফাইনালি তুই হাঁসলি? বাবাহ আমার তো তোর অভিমান কাটাতেই এতো আয়োজন।”
—“মানে? ”
আমার প্রশ্নে জেনি হাঁসিমুখে এগিয়ে এসে বলল,
—“মানে টা আমি তোমাকে বলছি কাজল। ”
জেনিকে দেখে আমি কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেলাম। আমার আবারোও মনে পড়ে গেলো রুদ্রিকের বুকে কীভাবে জেনি লেপ্টে ছিলো।
জেনি আমার কাছে এসে কিছুটা অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে বললো,
—“আমি সত্যি দুঃখিত কাজল কালকের আচরনের জন্যে। আমি তো নিজের লাইফে একেবারে সব কিছু হারিয়ে ফেলেছিলাম নিজের পাপকর্মের জন্যে।
তোমার ক্ষতি করতে গিয়ে আমার সবকিছু হারিয়ে গিয়েছিলো আমার। রুদ্রিক আমাকে আমার শাস্তি দিয়েছে,কিন্তু রুদ্রিক আমার আর্থিক অবস্হা খারাপ দেখে আবারোও আমাকে আমার ক্যারিয়ার ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই আমি এতোটা ইমোশোনাল হয়ে পড়ে গিয়েছিলাম সরি অনস মোর। আমি নিজে দেখেছি রুদ্রিক ঠিক কতটা তোমাকে খুব ভালোবাসে। কাজল ওকে কখনো ভূল বুঝো নাহ। ”
জেনির কথা শুনে আমি কি বলবো বুঝতে পারছি নাহ। আমি শাড়ির আঁচলে মুখ গুজে জাহাজের কিনারে চলে গেলাম।
জেনি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে রুদ্রিকের দিকে তাঁকালো। রুদ্রিক বলল,
—“আমি ওইদিকটা দেখছি জেনি। তুমি থাকো কেমন? ”
আমি গোধূলীর আকাশের দিকে তাঁকিয়ে কেঁদে উঠলাম।
কাজলের চোখে জলের বিন্দু। রুদ্রিক কাজলের জলটুকু মুছিয়ে ওষ্টদ্ধয় দ্বারা কাজলের চোখে চুমু খেয়ে বলল,
—“একদম কাঁদবি নাহ। গোধূলীর লগানে শুভ্ররাঙাপরীদের কাঁদতে নেই। কেননা শুভ্ররাঙাপরীর মায়াবী চোখের ফোঁটায় গোধূলীর রঙ যে ধূসর রংহীন হয়ে উঠে। আমার শুভ্ররাঙাপরী কাঁদলে আমি কিন্তু সহ্য করবো নাহ।”
আমি রুদ্রিকের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
—“আমি সত্যি সরি রুদ্রিক।
—“ডোন্ট সরি। ”
আমি কান্নামিশ্রিত গলায় বললাম,
—-“আমি খুব বাজে রুদ্রিক। সেদিন রাগের মাথায় কত কথা বলে ফেলেছি। আমি আসলে খুব খারাপ। ”
আমার ঠোটে আঙুল দিয়ে রুদ্রিক থামিয়ে দিয়ে বলে,
—“হয়েছে আর কিচ্ছু শুনতে চাইনা। কে বলেছে তুই খারাপ। আমি তো জানি তুই আমার কতটা ভালোবাসিস। তুই আমার জীবনে আমাকে এতো বড় একটা খুশি এতো মূল্যবান বাবা হওয়ার অনুভুতিটুকু আমার দিচ্ছিস আমার আর কি চাই বল?”
রুদ্রিক আমাকে নিজের সাথে চেপে বলে গোধূলীর দিকে তাঁকিয়ে মিহি কন্ঠে আস্তে করে বলে উঠলেন,
“Now i can realised that
Life is such a beautiful… Very beatiful..
But not without you…”
(এখন আমি বুঝতে পারছি। জীবনটা সুন্দর খুবই সুন্দর..। কিন্তু তোমাকে ছাড়া নাহ।)
কথাটি শুনে আমার চোখ থেকে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো….। উনি আমাকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন…।
এই মানুষটার প্রতিটা কথা এতোটা মায়া এতোটা মোহনীয় হয়ে থাকে যে নিজের চোখের পানি আটকানো হয়ে মুশকিল হয়।
তখনি পিছন থেকে সাদি ভাইয়া মুচকি হেঁসে বলে,
—“এইযে রুদ্রিক বাবু সবাই তোমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে তো। ”
সাদি ভাইয়ার কথা শুনে আমি রুদ্রিককে ছেড়ে দেই। রুদ্রিক ‘আমি আসছি ‘ কথাটি বলে সামনের দিকে যেতে নিলে, আমার পেটে হঠাৎ ব্যাথা করে উঠলো।
আমি জোড়ে ‘রুদ্রিক ‘ বলে চিৎকার করে বসে পড়লাম।
কাজলের চিৎকারে রুদ্রিক দৌড়ে কাজলের কাছে এসে বলল,
—“কাজল, কি হয়েছে তোর? কষ্ট হচ্ছে আমাকে বল? ”
আমি রুদ্রিকের শার্ট খামছে ধরে বললাম,
—-“আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি নাহ। আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। ”
বাকিরা ও চলে আসে।
আমি ব্যাথা আর সহ্য করতে পারছি নাহ। রুদ্রিক আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
—-“কাজল, তোর কি খুব কষ্ট হচ্ছে আমাকে বল?”
আমি ব্যাথায় কান্না করে দিয়ে বলি,
—“অনেক কষ্ট হচ্ছে রুদ্রিক। আমি বুঝতে পারছি নাহ হঠাৎ করে কিসের ব্যাথা শুরু হলো? ”
পিপি কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে বলে,
—“রুদ্রিক কাজলের অবস্হা বেশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় কাজলকে এখুনি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। ”
পিপির কথা শুনে রুদ্রিক সায়। এদিকে কাজল ব্যাথায় চিৎকার করে কাঁদছে। কাজলের এমন অবস্হা দেখে রুদ্রিকের দিশেহারা অবস্হা।#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ৪৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আমি ঠোট কামড়ে ব্যাথা সহ্য করছি। আমার অবস্হা ক্রমশ খারাপ হতে দেখে রুদ্রিক কিছু না ভেবে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির দিকে ছুটলো। পিছন পিছন বাকিরাও চলে আসলো। রুদ্রিক আমাকে গাড়িতে বসিয়ে লাজুক আংকেলের দিকে তাঁকিয়ে বলে,
–“কাজল আংকেল এবং দিয়া পিপি তোমরা বরং সেফলি বাচ্ছাদের পৌছে দিয়ে এসো এন্ড সাদি, সিথি তোরা আমার সাথে আয়। ”
লাজুক আংকেল সম্মতি জানিয়ে বলে,
—“তুমি চিন্তা করোনা রুদ্রিক। ”
দিয়া পিপি প্রশ্নের সুরে বললো,
—“সেন্টমার্টিনে তো ভালো কোনো হসপিটাল নাই। ”
রুদ্রিক কাজলের দিকে তাঁকিয়ে শুকনো গলায় বলে,
—“কাজলকে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। ”
—“কিন্তু অনেক দেরী হবে তো ভাইয়ূ ততখনে যদি…
সিথিকে থামিয়ে রুদ্রিক চিন্তা
রুদ্রিক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,
—-“কিচ্ছু হবে নাহ কাজলের। আমি আছি তো। আমি যথাসম্ভব দ্রুত ড্রাইভিং করার চেস্টা করবো। ”
লাজুক আংকেল ও দিয়া পিপি নিজেদের গাড়ি করে বেড়িয়ে যায়।
আমি ব্যাথায় ছটফট করে যাচ্ছি।রুদ্রিক আমার কাছে আসতেই আমি রুদ্রিকের হাত শক্ত করে ধরে বলি,
—-“আহহ রুদ্রিক আমাদের বেবীর আবার কিছু হয়নি তো? আমাদের বেবী ঠিক হয়ে যাবে তো?”
আমার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
—“জানেমান সবসময় একটা কথা মনে রাখবি তোর ‘হাজবেন্ড’ সবসময় তোর সাথে আছে। তোর কিংবা আমাদের বেবীর কোনোপ্রকার ক্ষতি সে হতে দিবে।”
রুদ্রিকের কথা শুনে ব্যাথায় নিয়েই মাথাটা সিটে এলিয়ে দিলাম।রুদ্রিক ড্রাইভিং সিটে বসতে নিলে, সাদি ভাইয়া রুদ্রিককে থামিয়ে দিয়ে বলে,
—“আমার মনে হয় এখন তোর কাজলের কাছে থাকা উচিৎ। আমি যত দ্রুত সম্ভব ড্রাইভ করছি। ”
সিথিও সায় দিয়ে বলে, ‘হ্যা ভাইয়ূ তুমি কাজলর কাছে গিয়ে বসে পড়ো। ”
সাদি ড্রাইভিং সিটে এবং সিথি সাদির সাথে বসে পড়ে। সাদি ইঞ্জিন চালু করে দেয়।
রুদ্রিক আর কিছু না ভেবে আমার পাশে বসে আমার কাঁধটা নিজের কোলে করে রেখে বলে,
—-“কষ্ট হচ্ছে লক্ষিটি? ”
আমি স্লান হেঁসে রুদ্রিকের হাত জোড়া শক্ত করে ধরে বললাম,
—-“তুমি শুধু পাশে থাকো। কোনো কষ্টই আমার কাছে কষ্ট নাহ।”
রুদ্রিক কাজলের মাথায় আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে সাদিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“ফাষ্ট ড্রাইভ কর সাদি। ”
সাদি ভাইয়া গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেলে। আমার কষ্ট হলেও
রুদ্রিকের দিকে তাঁকিয়ে দাঁত কামড়ে ব্যাথাটুকু সহ্য করে নিলাম। রুদ্রিকের চোখ দিয়ে নোনাজল আমার হাতে টুপ করে পড়ে। আমি রুদ্রিককে শক্ত করে আকড়ে ধরি।
________
হসপিটালের কাছে সামনেই আসতেই রুদ্রিক তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে আমাকে কোলে তুলে নেয়। এতোক্ষন ব্যাথা সহ্য করতে পারলেও এখন আমার পক্ষে ব্যাথা সহ্য করতে পারছি নাহ। রুদ্রিক আমাকে হসপিটালে দিকে নিয়ে জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে বলে,
—–“কে কোথায় আছেন? আমার ওয়াইফ ব্যাথায় ছটফট করছে। ওয়াট দ্যা হেল। কেউ কি নেই? ”
রুদ্রিকের চিৎকার শুনে সকল ডক্টরসরা বেড়িয়ে এসে বলে,
—-“মিঃ শেখ আপনি? ”
রুদ্রিক অস্হির হয়ে বললো,।
—-আপনার আমার ওয়াইফকে একটু দেখুন। ওর অবস্হা ভালো মনে হচ্ছে। ”
ডক্টর কিছু নার্সকে বলে আমাকে কেবিনে নিয়ে যেতে। স্ট্রেচার আসতেই কয়েকজন ওয়ার্ডবয় আমাকে নিতে চাইলে, রুদ্রিক তাদের মানা করে আমাকে কোলে করে কেবিনের দিকে নিয়ে যায়।
রুদ্রিক কেবিনে আমাকে শুয়িয়ে দেয়। আমি ব্যাথায় কেঁদে ফেলি। আমার কান্না দেখে রুদ্রিক ও কেঁদে দেয়। রুদ্রিক আমাকে কাছে আসতে চাইলে, ডক্টর রুদ্রিকে বারণ করে বলে,
—“মিঃ শেখ আপনি আপাতত বাইরে যান। ”
রুদ্রিক আমার হাত আকড়ে ধরে বলে,
—“নাহ আমি যাবো নাহ। আপনি দেখছেন নাহ আমার কাজল কতটা কষ্টতা পাচ্ছে আমার কাজলের সাথেই থাকবো। এই অবস্হায় আমি কীভাবে যাবো? আপনি যা করার করুন আমার সামনেই করুন। ”
ডক্টর সাহেবা বুঝলেন এই ছেলেকে বুঝিয়ে লাভ নেই। তিনি যথাসম্ভব দ্রুত কাজলের চেকাপ শুরু করলেন। কিছু একটা ভেবে তিনি বলে উঠলেন,
—-“আমার মনে হয় এখুনি আমাদের বেবীর ডেলিভারি করতে হবে। ”
আমি ও রুদ্রিক কথা শুনে চমকে যাই। রুদ্রিক বলে উঠে,
—“কিন্তু ডক্টর কাজলের সময় তো আরো ২মাস পরে। ”
ডক্টর মাথা নাড়িয়ে বললেন,
—-“আমিও তো তা বুঝতে পারছি, কিন্তু আপনার ওয়াইফের এখুনি পানি ছেড়ে দিচ্ছে। আমাদের যত তাড়াতাড়ি সিজারি করতে হবে। যদিও টাইমের আগে সিজারে করাটা রিস্কি কিন্তু এখন না করলে
নাহলে বেবীর ক্ষতি হতে পারে। ”
বেবীর কথা শুনে এইবার আমার চিন্তা হতে লাগলো।
রুদ্রিক আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,
—“একদম ভয় পাবিনা কাজল আমি আছি কিন্তু ওকে। ”
আমি রুদ্রিকের হাতে চুমু খেয়ে বললাম,
—-“তুমি আছো রুদ্রিক তাই আমার কোনো ভয় নেই।
তুমি আছে তে।
আমাদের বেবী ঠিক সুস্হ হয়ে জন্ম নিবে আল্লাহর রহমতে। ”
কথাটি বলে আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। আমাকে স্ট্রেচারে করে ও.টিতে নিয়ে আসলো।
ও.টির বাইরে পাইচারি করে যাচ্ছে রুদ্রিক। যদিও তার বড্ড চিন্তা হচ্ছে। সিথি ও সাদি রুদ্রিককে সামলাচ্ছে। রুদ্রিকের অবস্হা নাজেহাল। টাইমের আগে সিজার হচ্ছে এখন যদি বাচ্ছা কিংবা কাজলের ক্ষতি হয় তাহলে? রুদ্রিক আর কিছু ভাবতে পারছে নাহ।
দিয়া ও লাজুক ও চলে আসে ততক্ষনে। দিয়া এসে বলে,
—“কাজলের বাবা-মা আমাকে ফোন করছেন। উনাদের বড্ড চিন্তা হচ্ছে। আমি আপাতত আসতে বারণ করেছি। ”
দিয়ার কথা শুনে সিথি বললো,
—-“ঠিক করেছো। বাবা-মা ও বড্ড চিন্তা করছে। আমিও আসতে বারণ করেছি। এই অবস্হায় মা-বাবার না আসাই ভালো। ”
রুদ্রিক মাথা নিচু করে বসে আছে। সাদি রুদ্রিকের কাঁধে হাত রেখে বলে,
—“চিন্তা করিস নাহ রুদ্রিক। সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহ আছে আমাদের সাথে। ”
রুদ্রিক মলিন হাঁসি দিয়ে বলে,
—“আই হোপ সো!”
_______
প্রায় ৩ ঘন্টা পর,
অপরাশের থিয়াটারে বাচ্ছার কান্না আসতেই আমি পাশে তাঁকিয়ে দেখে নার্স হাঁসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে তোয়েলা মোড়োনো আমার ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে।
আমি নার্সের দিকে তাঁকাতেই সে হাঁসিমুখে আমার বাচ্ছাকে আমাকে কোলে দিয়ে বলে,
—-“অভিনন্দন ম্যাম আপনার মেয়ে হয়েছে। ”
মেয়ে কথাটি শুনে আমি হাঁসলাম। তোয়েলা জড়ানো আমার ছোট্ট পরীকে কোলে দেতেই আমি কান্না করে দিয়ে, আমার পরীকে সাদোরে চুমু খাই। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া।
আল্লাহ যে আমাদের সংসারের বরকত আমাদের মেয়েকে পাঠিয়েছে। আমার কেনো যেনো চোখ মেলে তাঁকাতে কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে ঘুমের চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। ডক্টর ম্যাম আমার অবস্হা বুঝতে পেরে আমার মেয়েকে আস্তে করে নিয়ে বলে,
—-“কাজল, তুমি আপাতড ঘুমাও। ”
—“কিন্তু আমার হাজবেন্ড? ”
আমার প্রশ্নে ডক্টর মুচকি হেঁসে বললেন,
—” তিনি বাইরেই আছেন। তোমার উপর দিয়ে অনেক স্ট্রেজ গিয়েছে তাই তুমি আপাতত ঘুমাও। ”
______
অপরাশের থিয়েটারের বাইরে থেকে বাচ্ছার কান্নার শব্দ শুনে সকলের মুখে হাঁসি ফুটে উঠে।
—–“কংগ্রাচুল্যাশন মিঃ রুদ্রিক। আপনার মেয়ে হয়েছে। ”
‘মেয়ে’ হয়েছে কথাটি শুনে সকলে একসাথে বলে উঠে,
—“আলহামদুলিল্লাহ! ”
ডক্টর হাঁসিমুখে বেড়িয়ে আসেন। রুদ্রিক ডক্টরের কাছে গিয়ে বলে,
—-“আমার কাজল? আমার বেবী কেমন আছে? আমার কাজল ঠিক আছে তো? ”
ডক্টর মুখের মাস্কটা খুলে বলে,
—“মা এবং বাচ্ছা দুজনেই আপাতত ঠিক আছে।
ডেটের আগে ডেলিভারি হয়ে যাওয়াতে আমরা কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু এখন সব ঠিক আছে। আপনার বেবীকে আমরা কয়েকটা দিন ওভজারবেশনে রাখবো। আসলে ২মাস আগেই হয়ে গিয়েছে তো। তাছাড়া তেমন একটা সমস্যা নেই। ”
সিথি কিছুটা আগ বাড়িয়ে বললো,
—-“আমরা বেবী এন্ড কাজলের সাথে দেখা করতে পারবো? ”
ডক্টর মুচকি হেঁসে বললো,
—-“অবশ্যই। বাবা ও বেবী দুজনকেই৷ কেবিনে শিফট করা হয়েছে।
আমরা মিসেস কাজলকে আপাতত ইঞ্জেকশন পুশ করে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি। অনেক স্ট্রেজ গিয়েছে তার উপর। ”
ডক্টরের কথা শুনে সবাই কেবিনে গিয়ে দেখে কাজল ঘুমাচ্ছে। পাশে ছোট্ট পরী ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা নাড়িয়ে যাচ্ছে। রুদ্রিক আলতো করে নিজের বেবীকে ছুয়ে দেখে। আস্ত একটা হুরপরী যেনো নেমে এসেছে।
ইসস কি সুন্দর অনুভুতি। নিজের সন্তানের ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা যেনো রুদ্রিককে তার কাছে ডাকছে। রুদ্রিক তার মেয়ের হাতে চুমু খেয়ে বলে,
—-“এইতো আমার মা। তোমার বাবা এসে গেছে। ”
রুদ্রিক নিজের মেয়েকে দেখে কেঁদে উঠে। সত্যি বাবা হওয়ার অনুভুতিটা পৃথিবীর শ্রেষ্ট অনুভুতি।
—-“ভাইয়ু আমাকে বেবীটা দে প্লিয়। ”
সিথির আবদার শুনে রুদ্রিক সিথির কোলে বাচ্ছাটা দিয়ে দেয়। সিথি বাচ্ছাটার দিকে তাঁকিয়ে বলে,
—-“একদম কাজলের মতো গোলাপের মতো টকটকে লাল দুটো ইসস। শুধু ছুতে ইচ্ছে করে। ”
দিয়া বলে,
—“নাকগুলো দেখ? একেবারে রুদ্রিকের মতো খাড়া। যে কেউ দেখে বলবে এই পুচিটা আমাদের রুদ্রিকের মেয়ে। আচ্ছা নিউ বেবীর সাথে একটা সেল্ফি তুলা হবেনা? ”
সাদি বলল,
—-“এইবার কিন্ত আমিও সেল্ফি তে থাকবো। আমার বন্ধুর মেয়ে বলে কথা। আমার ছোট্ট ভাতিজি। ”
দিয়া লাজুকের হাতে ক্যামেরা দিয়ে বলে,
—“নাকবোঁচা এ্যাসিস্টেন্ট তুমি তুলে দাও। তুমি এখানে সব থেকে লম্বা। ”
—“জু হুকুম। ”
কথাটি বলে লাজুক সেল্ফি তুলা শুরু করে দেয়।
রুদ্রিক কাজলের পাশে বসে কাজলের হাত ধরে কান্নামিশ্রিত গলায় বলে,
—“জানিস তুই ঘুমাচ্ছিস, কিন্তু তোকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম নাহ কাজল। থ্যাংকস আ লট কাজল। ধন্যবাদ এতো সুন্দর সর্গীয় অনুভুতির সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যে।
এই অনুভুতিটুকু আমি সত্যি প্রকাশ করতে ব্যর্থ। ভালোবাসিরে বড্ড ভালোবাসি তোকে কাজল। ”
রুদ্রিক কাজলের কপালে চুমু খায়। রুদ্রিকের চোখ থেকে বিন্দু জলের কণা কাজলের হাতে টুপ করে গড়িয়ে পড়ে। উহু এইতো সুখের জল। বড্ড সুখের।
________
সকালের মিষ্টি আলো জানালা দিয়ে রুদ্রিকের মুখে পড়তেই রুদ্রিক আড়মোড়া হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। সারারাত সে বেবী এবং কাজলের জন্যে কেবিনের চেয়ারেই বসেই দুজনকে দেখছিলো।দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলো কে জানে? যদিও সিথি থাকতে চেয়েছিলে কিন্তু রুদ্রিক সবাইকে পাঠিয়ে দিয়েছে। রুদ্রিক ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখে প্রায় সাড়ে ৮টা বাজে। কিছুক্ষন পর সকলেই চলে আসবে নিউ বেবীকে দেখতে। রুদ্রিক তার সদ্য সন্তান ও স্ত্রীর দিকে তাঁকালো। এইবার তার সংসারটা সম্পুর্ন হলো। কথাটি ভেবে রুদ্রিক মুচকি হাঁসলো। তখনি একজন নার্স কেবিনে প্রবেশ করে বললেন,
—-“স্যার আপনি এইবার কেন্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিন। কালকে রাত থেকে আপনি তো কিছুই খাননি।
—-“কিন্তু….
রুদ্রিকের কথার মাঝেই নার্স বললেন,
—-“আমি আছি স্যার আপনি নিশ্চিন্তে যান।”
রুদ্রিক সায় দিয়ে কাজলের দিকে তাঁকিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
রুদ্রিক চলে যেতেই আরেকজন নার্স এসে বললো,
—“উনি সত্যি বড্ড কেয়ারিং হাজবেন্ড। নিজের বউকে যথেষ্ট ভালোবাসে। ”
—“হুম তা ঠিক। ”
—“আচ্ছা শুন তুই একটা কাজ কর আমার সাথে আয়।”
—“কেন? ”
—“ডক্টর তোকে ডাকছে। ”
—“আচ্ছা চল। ”
নার্সরা চলে যেতেই একজন বোরখা পরিহিতা মহিলা লুকিয়ে প্রবেশ করে।
__
অন্যদিকে,
রুদ্রিক কেন্টিনের কাছে আসতেই তার ফোন বেজে
উঠে। রুদ্রিক তাঁকিয়ে দেখে ‘পুলিশ স্টেশন ‘ থেকে ফোন এসেছে। রুদ্রিক ফোন রিসিভ করে এমন কিছু শুনে যা শুনে তার মাথা হ্যাং হয়ে যায়।
______
আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি পাশের ছোট্ট বেডে আমার বেবী নেই। নিজের বেবীকে না দেখে আমি চিল্লিয়ে নার্সকে ডাক দেই। নার্সরা ডাক শুনে এসে বলে,
—-“কি হয়েছে ম্যাম? ”
আমি বেডের দিকে তাঁকিয়ে ভয়ার্থ বলি,
—-“আমার বেবী কোথায়? ”
নার্সরাও অবাক হয়ে বলে,
—“বেবী তো এখানেই ছিলো। কোথায় গেলো? ”