#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব-৫২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
কারো মৃদ্যু আর্তনাদ কানে আসতেই রুদ্রিক বিছানা ছেড়ে সোজা রুম থেকে বাইরে বেড়িয়ে দেখে, কাজল ড্রাইনিং টেবিলের চেয়ার বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে। রুদ্রিক কাজলকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখে কাজলের কাছে বলে উঠে,
‘জানেমান তুই এতো রাতে এখানে? তুই কী তাহলে চিৎকার করছিলি? তোর কি কোথাও কষ্ট হচ্ছে? বল আমাকে প্লিয। ‘
রুদ্রিককে এতোটা উত্তেজিত হতে দেখে কাজল পানির গ্লাস টা রেখে বললো,
‘আমার খুব পানির পিপাসা পেয়েছিলো। তাই এসেছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে মাথাটা খুব ব্যাথা করে উঠলো। তাই আর কি। ‘
কাজলের কথা শুনে রুদ্রিক ফুশ করে উঠে বললো,
‘আমাকে একবার ডাকলে কি হতো? এইভাবে উঠে আসতে তোকে কে বলেছে? সত্যি কাজল তুই বড্ড বেশি অবাধ্য হয়ে যাচ্ছিস। ‘
‘রাগ করছো কেন? জান? ‘
খানিকটা বেবিফেস করে ঠোট উল্টে কথাগুলো বললো কাজল।
‘এইযে এইসব বেবী ফেস করে লাভ নেই।আমি সত্যি তোর উপর রেগে আছি বুঝেছিস? ‘
কথাটি বলে রুদ্রিক কাজলকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে শুয়িয়ে দিয়ে বললো,
‘তোর মাথায় ব্যাথা করছে? ওকে আমি এখুনি সবাইকে ফোন করছি এন্ড ডক্টরসদেরকেও আমি ডেকে পাঠাচ্ছি। তোকে কষ্ট করে হসপিটালে যেতে হবেনা। একটু অপেক্ষা কর। আমি এখুনি আসছি। ‘
রুদ্রিক বেড়োতে নিলে কাজল রুদ্রিকের হাতটা ধরে বললো,
‘রুদ্রিক এখন কাউকে ডাকতে হবেনা। তুমি শুধু আমার কাছে আপাতত থাকো প্লিয। ‘
অনুনয়ের সুরে কথাটি কাজল বলতেই রুদ্রিক কাজলের পাশে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
‘আমি এখুনি আসছি। আমি ডক্টরদের কল করি। তোর অবস্হা দেখে আমার ভালো লাগছে নাহ কাজল। ‘
‘তুমি যা করার এখানেই করো কিন্তু কোথাও যেও নাহ রুদ্রিক। আমার কষ্ট হচ্ছে। এই মুহুর্তে তুমি আমাকে ছেড়ে যেও নাহ। ‘
আমার মাথাটা ক্রমশ ব্যাথায় যেনো ছিড়ে যাচ্ছে।
রুদ্রিক আমার হাত টা শক্ত করে ধরে বলে, ‘আমি কোথায় যাবো নাহ তোকে ছেড়ে। তুই শুধু একটু সহ্য কর। আমি এখুনি ডক্টরকে ফোন করছি। ‘
রুদ্রিক কাজলের হাত ধরেই ডক্টরকে ফোন করতে থাকে।
লাজুক, দিয়া ও সিথি জেগে ছিলো তাই রুদ্রিকের রুকে লাইট জ্বলতে দেখে তারাও চলে এসে পড়ে।
সিথি কাজলের অবস্হা দেখে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বলে,
‘কাজল তোর কী আবারোও কষ্ট হচ্ছে? কিসের কষ্ট হচ্ছে? ‘
কাজল ব্যাথায় দাঁত কামড়ে কোবোরকম বলে উঠে,
‘মাথাটা হঠাৎ করেই প্রচন্ড ব্যাথা করছি। আমি জাস্ট সহ্য করতে পারছি নাহ। আমার মনে হয় ব্যাথায় মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। ‘
কাজলের কথা শুনে দিয়া ঘাবড়ে গিয়ে বলে,
‘রুদ্রিক আমার মনে হয় কাজলকে ডক্টরের কাছে এখুনি নিয়ে যেতে হবে। ‘
লাজুক ও মত পোষন করে বলে,
‘আমারোও তাই মনে হয় যে আমাদের এখন অপেক্ষা করলে চলবে নাহ। ‘
সিথি কাজলের পাশে কাজলকে আকড়ে ধরে আছে।
রুদ্রিক সায় দিয়ে বলে,
‘আমারোও তাই মনে হয়।ডক্টরকে কল করা হয়েছে। আমি দেখি কতদূর এসেছি। ‘
রুদ্রিক চলে যেতে নিলে কাজল ব্যাথায় চিৎকার করে রুদ্রিকের হাতজোড়া আকড়ে ধরে বলে,
‘রুদ্রিক তুমি অন্তত এখন কোথাও যেও নাহ। বুঝতে পারছো নাহ আমার এখন তোমাকে কতটা জরুরী। ‘
উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বলতেই কাজলের মাথা আবারোও ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো।
রুদ্রিক কাজলের গালে হাত দিয়ে ছলছলে চোখে তাঁকয়িে বললো,
‘তুই প্লিয উত্তেজিত হয়ে যাস নাহ। তোর মাথায় প্রেশার পড়ছে জানেমান একটু শান্ত হও। আমি এখানেই আছি। কোথাও যাবে নাহ তোর রুদ্রিক তোকে ছাড়া। ‘
দিয়া লাজুকের দিকে তাঁকিয়ে বললো,
‘লাজুক তুমি বরং দেরী করো নাহ। এখুনি গাড়ি বের করো। আমাদের এখুনি কাজলকে নিয়ে যেতে হবে। ‘
লাজুক আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো।
___________
এখন প্রায় বিকাল ৫টা। সকলা থেকে কাজলকে বিভিন্ন টেস্ট করানো হয়েছে। চেম্বারে বসে আছে রুদ্রিক, লাজুক ও সাদি।
ডক্টরের কাছে কাজলের রিপোর্ট। কাজলকে কেবিনে শিফ্ট করা হয়েছে। ডক্টর কিছুক্ষন রিপোর্টটার দিকে তাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
‘আমি সরি মিঃ রুদ্রিক। ‘
ডক্টরের এমন কথায় পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে গেলো। রুদ্রিক প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললো,
‘ডক্টর বিক্রম শেঠ আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন? পরিষ্কার করে বলুন। ‘
‘আপনার স্ত্রীর দীর্ঘদিন কোমায় থাকার জন্যে। মাথায় বেশ ড্যামেজ হয়ে গেছে। উনি যখন-তখন
ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যেতে পারে। হাতে সময় বড্ড কম। হয়তো আগামী ২ বা ১ ঘন্টাতেই উনি মারা যেতে পারে। হয়তো বা এখুনি। কখন কি হয়ে যাবে তা বলা যাচ্ছে নাহ। ‘
লাজুক ও সাদি যেনো এক মুহুর্তের জন্যে থমকে গেলো। দিয়া ও সিথি দরজার বাইরে থেকে এইসব কিছু শুনে মুখের ভাষাটুকুও হারিয়ে ফেললো।
রুদ্রিক নিরব থেকে হেঁসে উঠলো।
রুদ্রিকের হঠাৎ হেঁসে উঠায় সবাই অবাক!
রুদ্রিক হেঁসেই বললো,
‘ডক্টর আপনি মজা করছেন তাইনা? ‘
‘আমাকে দেখে আপনার কি মনে হয়? আমি এখন মজা করার মুডে আছি মিঃ রুদ্রিক? আপনার ওয়াইফের হাতে সময় নেই। তিনি যখন -তখন মারা যেতে পারেন। এই কথাটা বুঝুন প্লিয। ‘
ক্ষিপ্ত গলায় কথাগুলো বললো ডক্টর। ডক্টরের কথায় নিজের চোয়াল শক্ত করে রুদ্রিক উঠে দাঁড়িয়ে ডক্টরের নাক বরারব ঘুষি দেয়। সবাই এসে রুদ্রিককে আটকতে চাইলেও পারেনা।
‘হাও ডেয়ার ইউ ব্লাডি! আমার কাজল মারা যাবে মানে টা কি? এই কথা নিজের মুখে আনার সাহস কী করে হয়? কিচ্ছু হবে নাহ আমার কাজলের কিচ্ছু নাহ। আমি দেশ-বিদেশের বেস্ট ডক্টরদের দিয়ে আমার কাজলের চিকিৎসা করাবো। তবুও কিচ্ছু হতে দিবো নাহ কাজলের। ‘
‘কিচ্ছু হবেনা আমার কাজলের। কিচ্ছু হবেনা। ‘
বিড়বিড় করে কথাটি বলে রুদ্রিক একপ্রকার ছুটেই কাজলের কেবিনে ঢুকে পড়ে। কাজল অপরপাশে ঘুড়ে ছিলো। রুদ্রিক এসেছে বুঝতে পেরে সে তাঁকিয়ে দেখে রুদ্রিকের উষ্কখুষ্ক চুল। চোখগুলো লাল হয়ে গেছে। কাজল রুদ্রিককে হাত দিয়ে কাছে ডাকে। সঙ্গে সঙ্গে রুদ্রিক কাজলের কাছে গিয়ে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
‘খুব কষ্ট হচ্ছে জানেমান? ‘
‘আগে তুমি নিজের দিকে তাঁকাও। কি করেছো একদিনে নিজের অবস্হা। দাঁড়িগুলো বেশ বড় হয়ে গেছে। মুখে কিন্তু আগের মতো বাঁকা দাঁতের হাঁসিও নেই। এইরকম চলতে থাকলে কিন্তু রাফসিন শেখ রুদ্রিকের উপর আর কেউ ক্রাশ খাবেনা। তখন জিএফ পাবে কোথায়?রাফসিন শেখ রুদ্রিককে তখন কেউ পাত্তা দিবে নাহ তখন কি হবে? বেশ হবে। আমার তো ভাবতেই হাঁসি পাচ্ছে। কিন্তু এই দৃশ্য দেখার জন্যে
থাকবো নাহ আমি তখন….
রুদ্রিক কাজলের মুখ চেপে বলে,
‘একদম এইসব বলবি নাহ। একদম মেরে ফেলবো। তুই আমাকে চিনিস নাহ কাজল। বড্ড বেশি কথা বলছিস আজকাল। আমি দেশ বিদেশের সব নামি দামি ডক্টরদের ডাকবো কিচ্ছু হবেনা তোর। ‘
রুদ্রিকের কথা শুনে না হেঁসে পারলো নাহ কাজল। কাজল শুকনো হাঁসি দিয়ে বললো,
‘রুদ্রিক আল্লাহ প্রতিটা মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। এই ভাগ্যকে কেউ বদলাতে পারেনা। ভাগ্য নিজেও পারেনা। ‘
রুদ্রিক এইবার কেঁদেই দিলো। সিথি, দিয়া, লাজুক ও সাদি প্রবেশ করলো। জেসমিন শেখ ও কুহুকে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঢুকলো।
কাজল এইবার সাদিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘সাদি ভাইয়া তুমি একটু এই ছিচকাদুনে লোকটা সামলাও তো। এই লোকটার জন্যে আমার মেয়েটাও কেঁদে দিচ্ছে। কই দেখি আমার মেয়েটাকে আমার কলে দিন মা। ‘
জেসমিন শেখ কাজলের কোলে তার মেয়েকে দিয়ে দিলো। ছোট্ট মেয়েটা কেঁদে দিচ্ছে। কাজল তার মেয়েকে পরম মমতায় আগলে রাখলো। আজ তাদের ভাগ্যটা এমন হলো কেন? তাদের একটি ছোট্ট সংসার হলে কী খুব দোষ হতো?
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
কাজলের চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। সে দ্রুত মুছে ফেললো। রুদ্রিকের সামনে সে কাঁদবে নাহ তাহলে তো রুদ্রিককও ভেঙ্গে পড়বে। কাজল মেয়েটাকে কোলে নিয়ে রুদ্রিকের কপালে চুমু খেয়ে চোখের জলটু্ুকু মুছিয়ে বললো,
‘আমাদের মেয়েটা কাঁদছে রুদ্রিক। আমি না থাকলে তো তোমাকেই ওকে আগলে রাখতে হবে রুদ্রিক তাইনা? ‘
‘এমন তো কথা ছিলো নাহ কাজল। পারবো নাহ তো আমি। তোকে ছাড়া রুদ্রিক কিচ্ছু না। কেন বুঝিস নাহ? ”
‘ওইযে ভাগ্য। ভাগ্যের উপর কারো জোড় থাকেনা।
আমাদের ভাগ্যকে মেনেই নিতে হবে। হয়তো ভাগ্য আমাদের জন্যে অন্য কিছু ঠিক রেখছিলো।
নিজেকে শক্ত করো রুদ্রিক। মানুষের জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে শক্ত হয়ে থাকতে হয়। তোমাকেও আমাদের মেয়ের জন্যে শক্ত হতে হবে। তুমি এখন একজন মেয়ের বাবা।’
সিথি মুখ চেপে কেঁদে বললো,
‘কাজল তুই থাম প্লিয। ভাইয়ূ কিন্তু সহ্য করতে পারছে নাহ। ‘
রুদ্রিক নিশ্চুপ থেকে গেলো। সে কিছুই বললো নাহ।
কাজল বুঝতে পারছে রুদ্রিক চিৎকার করে কাঁদতে চাইছে তবুও সে এখন একদম চুপ হয়ে রয়েছে। যেনো তার মুখে আজ কোনো বাক্য নেই।
কাজল গোধূলীর আকাশটা দিকে আনমনে তাঁকালো। এই গোধূলীর ফিকেশে আকাশ জুড়ে আজ শুধুই বিরহের চিহ্ন। আকাশে নেই কোনো আবিরমাখানো রং। গোধূলীর আকাশটি এতোটা ফিকে হয়ে গেলো কেন?হয়তো আজকে প্রকৃতিও বুঝে গেছে কাজল ও রুদ্রিক আলাদা হয়ে যাবে কেন?
কাজল রুদ্রিকের দিকে তাঁকিয়ে নিজের ডাইরিটা এগিয়ে দিলো। রুদ্রিক তাঁকিয়ে দেখে ‘গোধূলী বেলার স্মৃতি ‘ নামক সেই ডাইরি।
রুদ্রিক কাজলের দিকে ছলছলে দৃষ্টিতে তাঁকাতেই, কাজল বললো,
‘রুদ্রিক জীবনটা বড্ড ছোট যে। এই জীবনে কে কীভাবে আলাদা হয়ে যায় তা কেউ আগে থেকে কেউ বলতে পারেনা। আমাদের ভালোবাসার পথটাও হয়তো এই পর্যন্ত ছিলো। আমাদের পথচলা এই পর্যন্তই ছিলো। জীবনের সব চাওয়া পূরন হয়না।
একটা অনুরোধ রাখবে? আমাদের মেয়েটাকে দেখে রেখো। ‘
‘আমি তোকে কি করে ছাড়া বাঁচবো রে কাজল? ‘
রুদ্রিকের প্রশ্নে কাজল গোধূলীর বেলার দিকে তাঁকিয়ে বলে,
‘রুদ্রিক গোধূলীর বেলা পড়ে গেছে। এই গোধূলীর বেলাকে ঘিড়ে আমাদের কতটা স্মৃতি। আমরা আলাদা হয়ে গেলেও, আমাদের ভালোবাসার প্রতিটা মূহুর্তের স্মৃতি হয়ে থাকবে এই গোধূলীর বেলা। রুদ্রিক এবং কাজলের ভালোবাসা অপূর্নতায় নিজের পূর্নতা খুঁজে পাবে এই গোধূলীর বেলা। ‘
কথাটি বলে কাজল ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আমার মাথা প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে। আমি মাথা ধরতেই রুদ্রিক ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বলে,
‘বড্ড ভালোবাসিরে জানেমান তোকে। তোকে আমার বুকের মাঝের কলিজায় ঢুকিয়ে রাখবো। কোথায় যেতে দিবো নাহ। কোথাও নাহ। ‘
কথাটি বলে রুদ্রিক কাজলের কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একেঁ দেয়।
—-‘ভালোবাসি আমার ছোটসাহেবকে বড্ড ভালোবাসি। আমি তোমার মাঝে সর্বদা বিরাজমান থাকবো হয়তো কোনো গোধূলীর _বেলার _স্মৃতি হয়ে।’
কথাটি বলে কাজল পরম শান্তিতে রুদ্রিকের বুকের মাঝে নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়।
কাজলের কোনো রেসপন্স না পেয়ে রুদ্রিক তাঁকিয়ে দেখে কাজলের চোখ বন্ধ হয়ে গেছে। কাজল রুদ্রিকের গালে হাত দিয়ে বলে,
‘এই কাজল চোখ খোল বলছি? তুই চোখ খুলছিস না কেন? এই সিথি এই সাদি দেখ কাজল চোখ খুলছে নাহ। ‘
সিথি কুহুকে কোলে নিয়ে কাঁদছে। সাদি ধপ করে বসে পড়ে কাজল ও রুদ্রিকের এমন পরিনতি সে আশা করেনি। দিয়া জেসমিন শেখকে জড়িয়ে কাঁদছে।
কাজলের মা হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এসে নিজের মেয়েকে মৃত্যু দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। কাজলের বাবা শোকে পাথর হয়ে বসে আছে।
ছুটকি তার বাবাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।
রুদ্রিক উঠে এসে সাদিকে ধাক্কিয়ে বলে,
‘কি হলো সবাই কাঁদছে কেন? আমার কাজল ই বা চোখ খুলছে না কেন? ‘,
‘কাজল আর বেঁচে নেই রুদ্রিক। ‘
কাঁদতে কাঁদতে কথাটি বললো সাদি।
রুদ্রিক সাদির কলার চেপে বললো,
‘তুই মিথ্যে বলছিস। ‘
রুদ্রিক মাটিতে বসে পড়লো। তার দৃষ্টি শুধু কাজলের দিকে। বাতাসে যেনো একটি গান খুব ভেঁসে আসছে।
তেরে জানে কা গাম
Naর না আনে কা গাম
ফির জামনে কা গাম
কেয়া কারেইন?
রাহ দেখে নজর
রাত ভর জাগ কর
পার তেরি তো খবর না মাইল
বহোত আয়ে গাই ইয়াদিনে
মাগার ইশ বার বার তুমি হানা আনা
ইরাদে ফির সে জানে কে না লানা
তুম হি আনা
_____
তুম আওগে মুঝে মিলনে
খবর ইয়ে ভী তুম হি লানা
বহোত আয়ে গাই ইয়াদিনে
মাগর ইস বার তুমি হৈ আনা
রুদ্রিক কাজলকে আবারো বুকের মাঝে নিয়ে বলে,
‘আমার কাজলের কিচ্ছু হয়নি। কিচ্ছু না। সবাই মিথ্যুক হুহ। ‘
রুদ্রিকের অবস্হা দেখে ডক্টরদের সকলের চোখেও জল।
‘এই কাজল তুই কি উঠবি নাহ? দেখ আমার কিন্তু ভালো লাগছে নাহ বুঝেছিস? আচ্ছা তুই নাহ আমাকে ভালোবাসিস। তাহলে উঠছিস না কেন? ‘
রুদ্রিকের কথা কানে পৌঁছালো নাহ কাজলের। পৌঁছাবে কীভাবে মৃত্যু মানুষ কী কথা বলতে পারে?
রুদ্রিক নিশ্চুপ থেকে নিজের চোখের জলটুকু মুছে বলল,
‘তুই উঠবি নাহ তাইতো? তুই কী ভেবেছিস? আমাকে ছেড়ে তুই চলে যেতে পারবি? উহু এতো সোজা নাহ?
একটা কথা মনে রাখ যেদিন এই পৃথিবীতে কাজল থাকবে না, সেদিন রুদ্রিকের অস্তিত্বও পৃথিবীতে থাকবে নাহ। কেননা রুদ্রিক ও কাজল একে-অপরের পরিপূরক।
আমি বলেছিলাম নাহ তোর পিছে পিছে চলে আসবো। তবুও তোকে আলাদা করবো নাহ নিজের থেকে। ভালোবাসিরে শুভ্ররাঙাপরী। ‘
রুদ্রিক কাজলের কপালে চুমু খেয়ে নিজের বুকের সাথে কাজলকে মিশিয়ে ফেললো। রুদ্রিকের চোখ আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসছে। রুদ্রিক চোখে নেমে আসছে ঘন অন্ধকার। সেই অন্ধকারকে ভেদ করে কাজল সেই শুভ্র রংয়ের শাড়ি পড়ে, রুদ্রিকের দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। কাজলের পায়ে রুদ্রিকের দেওয়া সেই সোনার নুপুর জোড়া।
রুদ্রিকও কাজলের হাত আকড়ে ধরে হাঁটতে লাগলো। আজকে দুজনের পথটা অজানা থাকুক দোষ কী তাতে?
রুদ্রিকের সারাশব্দ না পেয়ে সাদি রুদ্রিকের কাছে গিয়ে রুদ্রিককে মৃদ্যু ধাক্কা দিতেই রুদ্রিক কাজলের বুকে গিয়ে পড়ে যায়। সাদি চিৎকার করে বলে,
‘ডক্টর রুদ্রিকক অজ্ঞান হয়ে গেছে। ‘
ডক্টর এগিয়ে এসে দেখে রুদ্রিকের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এসেছে। হাতের পার্লস নেই বললেই চলে। তাহলে কি রুদ্রিক ও? কুহু হু হু করে কেঁদে উঠলো।হয়তো ছোট্ট বাচ্ছাটিও জেনে গেছে সব।
_________________
গাঁয়ে শুভ্র রংয়ের শাড়ি জড়িয়ে একজন তরুনী হেঁটে চলেছে হাতে তার ‘গোধূলীর বেলার_স্মৃতি ‘ নামক ডাইরি। কবরের সামনে আসতেই তার চোখ বেঁয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ে। কেননা পাশা-পাশি দুই কবরে তার বাবা-মা শুয়ে আছে। আজ তার বাবা-মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনটির কথা মনে পড়লেই মেয়েটির বুকে ফেটে কান্না আসে। হ্যা মেয়েটি আর কেউ নয় বরং রুদ্রিক ও কাজলের ভালোবাসার অংশ তাদের মেয়ে কুহু। কুহু এখন ১৮ বছরের তরুনী। এখন সে বিদেশে পড়াশোনা করে। প্রতিবছর বাবা-মায়ের মৃত্যুবার্ষিকিতে সে বাংলাদেশে এসে কবর জিয়ারত করে যায়। গালদুটো একদম কাজলের মতো গোলাপি। নাক একদম রুদ্রিকের মতো হয়েছে।
তার চোখ থেকে দুফোটো জল গড়িয়ে পড়ে। সে দ্রুত তা মুছে বলে,
‘তোমরা বড্ড স্বার্থপর। বড্ড হুহ। আমাকে একা ফেলে রেখে দুজনে দিব্বি শান্তিতে ঘুমিয়ে আছো। মা তো স্বার্থপর ছিলোই বাবা আরো বড় স্বার্থপর। ‘
কুহু হু হু করে কেঁদে উঠে।
হ্যা সেদিন নিজের ভালোবাসার মানুষকে মৃত্যু অবস্হায় দেখে রুদ্রিক সহ্য করতে না পেরে, সে হার্টঅ্যাটাক করে মারা যায়। কুহুকে একা রেখে। কুহু সেদিন সত্যি বাবা-মাকে হারিয়ে একা হয়ে গিয়েছিলো।
কেউ কেউ তার নিজের ভালোবাসার মানুষটির মৃত্যু সহ্য করতে পারেনা। যেমনটি সেদিন রুদ্রিক ও পারেনি।
রুদ্রিক তার কথা রেখেছিলো। একসাথে তাঁরা বাঁচতে পারেনি কিন্তু সেদিন একসাথে দুজনেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিলো। রুদ্রিক ও কাজলকে সেদিন একসাথে কবরে দাফন করা হয়।
ইহকালে একসাথে না থাকলেও পরকালে গিয়ে হয়তো তারা একসাথে থাকতে পারবে।
কুহু একপলক সেই ডাইরিটা বের করে। ডাইরিটাতে গোধূলীকে ঘিড়ে কাজল -রুদ্রিক ও তাদেরভালোবাসার প্রতিটা মুহুর্তটাকে তুলে ধরেছে। কুহু গোধূলীর বেলার দিকে তাঁকায়। আজকেও গোধূলীট বেলা পড়েছে। গোধূলী তার রংয়ে পুরো প্রকৃতিতে এক অপরুপ রুপে সাঁজিয়ে তুলেছে।
আজ রুদ্রিক ও কাজল নেই তো কি হয়েছে? গোধূলীর বেলা সর্বদা রুদ্রজলের ভালোবাসার স্মৃতি হয়ে থাকবে। আজ রুদ্রিক ও কাজল পৃথিবীতে নেই,কিন্তু গোধূলীর বেলা তাদের ভালোবাসাকে সবসময় বাঁচিয়ে রাখবে।
কুহু তার বাবা-মায়ের দিকে তাঁকিয়ে বললো,
‘বাবা-মা তোমরা আজ আমার সাথে নেই। কিন্তু তোমরা একসাথে আছো। এইটাই অনেক। এইভাবেই সবসময় একসাথে থেকো কেমন? আজ বরং আসি।’
কুহু আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো নাহ বরং সে দ্রুততার সাথে হাঁটতে থাকলো। হয়তো সেখানে বেশিক্ষন থাকলে সে আবারোও কাঁন্নাকাটি করে ভেঁঙ্গে পড়তো। রুদ্রিক কিংবা কাজলের তো কষ্ট হতো তাইনা? নিজের মেয়েকে কষ্টে দেখে। তাই কুহু সেখানে আর থাকলো নাহ।
গোধূলীর বেলাতে কুহু রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছে। ডাইরিতে আপনমনেই সে একটি কবিতা লিখে ফেললো,
গোধূলীর রংমহলের সংমিশ্রনে রুদ্রজলের দুটো হৃদয়ে ভালোবাসার মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিলো।
রুদ্রিক ও কাজলের অস্তিত্ব না থাকলেও তাদের
ভালোবাসাটা হয়ে থাকুক না গোধূলী বেলার স্মৃতি হয়ে। ❤️ দোষ কী তাতে?
।।সমাপ্ত।।🖤
(নীচের কথাগুলো দয়া করে পড়ুন। প্লিয)
আমি জানি গল্পের স্যাড এন্ডিং দেওয়ায় অনেকেই আমার উপর রেগে যাবেন গালাগালিও করতে পারেন,কিন্তু আমার কথাটি একটিবার শুনে তারপর একটু বিবেচনা করে দেখুন। আমি আশা করবো আমার কথা না শুনেই আমার পাঠকেরা হুদাই চিল্লাচিল্লি করবে নাহ।
রুদ্রিক ও কাজল অর্থাৎ রুদ্রজল জুটিটার ভালোবাসাটাকেই তুলে ধরানোর জন্যে আমি স্যাড এন্ডিং দিয়েছি। আপ্নারা আমাকে অনেকবার বলেছেন গল্পে হ্যাপি এন্ডিং দিতে। কিন্তু দেখুন সব হ্যাপি এন্ডিংয়ে কিন্তু গল্পের স্বার্থকতা পাওয়া যায়না। আমি যেহুতু গল্পের লেখিকা সুতরাং আমিই নিশ্চই ভেবেছিন্তে এন্ডিং দিয়েছি। রুদ্রিক ও কাজল মারা যাওয়ার পরেও তাদের ভালোবাসাটা সবর্দা গোধূলীর বেলা স্মৃতি হয়ে থাকবে। এইটাই গল্পের মূল সারমর্ম।
সব ভালোবাসার উদাহরণ ভিন্ন রকম হয়। এই গল্পের হ্যাপি এন্ডিং দিলে গল্পের মানের স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যেতো নাহ
কিংবা রুদ্রজলের যে একটা স্পেশাল ভালোবাসা রয়েছে সেইটা প্রকাশ পেতো নাহ। সব হ্যাপি এন্ডিং এ গল্প পূর্নতা পায়না । কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্যাড এন্ডিংও গল্পের পূর্নতা পায়। আমি জানি আমার পাঠকেরা রুদ্রজল জুটিকে ভালোবাসে তাই আমি কিন্তু তাদের আলাদা করেনি। তারা বেঁচে না থেকেও একসাথে আছে। ব্যাস এইটুকুই বলার ছিলো। এখন আপ্নারা এন্ডিংকে কিভাবে এক্সেপ্ট করবেন তা আপনারা জানেন। তাছাড়াও গল্পটার পাশে ছিলো (Unexpected story) তাই কিছুটা Unexpected ভাবেই শেষ হলো। পরীক্ষার মাঝে গল্পটা লিখিছি। জানিনা কতটুকু ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি, কিন্তু চেস্টা করেছি।
তো এতোদিন ধৈর্য্য নিয়ে গল্পটাকে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। জানিনা আমার আগামী গল্পে আপনারা পাশে থাকবেন কিনা বাট তবুও আমি নতুন কিছু নিয়ে আসার চেস্টা করবো।
ততদিন ভালো থাকুক সুস্হ থাকুক আল্লাহ হাফেজ।
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি।